![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
খুব সহজ কথা বলছি আমরা। উচ্চাভিলাষী কঠিন কথা নয়, পুরনো সহজিয়া কথাকেই আমরা বলবো ঘুরিয়ে ফিরিয়ে একটু নতুন করে। আমাদের মন, মনন এবং চেতনাকে জাগ্রত করতে। আমরা জানাতে চাই, আমরা ফুরিয়ে যাইনি। আসুন আমরা আমাদের সমস্যাগুলোকে একটু একবদ্ধ করি। আমরা এগিয়ে যেতে চাই। আর এগিয়ে যাবার জন্য একদিকে যেমন আমাদের হাতকে করতে হবে শক্তিশালী, তেমনি একতাবদ্ধ হয়ে সম্পন্ন করতে হবে কাজগুলোকে সাফল্যমণ্ডিত করতে। অন্যদিকে সমস্যাগুলোকে চিহ্নিত করে, সমস্যাগুলোর কারণ এবং একটা একটা করে সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসতে হবে। সমস্যা থাকবে; পাশাপাশি প্রতিটি সমস্যার সমাধানও আছে। একার পক্ষে আমাদের জন্য অসাধ্য সাধন অনেকটা কঠিন মনে হতে পারে। তবে সকলের সম্মিলিত অংশগ্রহণে সমস্যা সমাধান করা সম্ভব, খুব সম্ভব। পাশাপাশি আমাদের সামনে এমন নজির-ও আছে; যেখানে দেখা যায় এককভাবেই অনেকেই অসাধ্য সাধন করতে খুব পারঙ্গম। আমরা সব ধরনের চেষ্টা চালিয়ে যেতে চাই। আমাদের প্রধানতম উদ্দেশ্যই হচ্ছে দেশকে এগিয়ে নেওয়া, সমৃদ্ধ অর্থনীতির একটি দেশ গড়ে তোলা এবং প্রতিটি জনগণকে সেই সমৃদ্ধির সুফল উপভোগ করবার সুযোগ করে দেয়া।
এজন্য আমাদের অন্যতম প্রধান কাজ আমাদের বিদ্যমান সমস্যগুলোকে চিহ্নিত করা। আমাদের সবাই কম বেশি আমাদের সমস্যাগুলো সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। আমরা আমাদের এ সবগুলো সমস্যাকে একিভুত করতে চাই। সমস্যা চিহ্নিতকরণের পাশাপাশি সমস্যাগুলোর করণগুলোও জানতে চাই। আমরা আমাদের বিদ্যমান সমস্যগুলোর সমাধান করবো। সমস্যা কখনো স্থায়ীভাবে বিদ্যমান থাকতে পারেনা। প্রথমেই আমরা আমাদের সমস্যা এবং সেসবের কারণগুলোকে উপলব্ধি করবো।
১. শুরুতে সামগ্রিক একটা ধারণা নেয়া যাক। প্রথমেই আসি আমাদের মৌলিক চাহিদাগুলো নিয়ে। খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা-এ পাঁচটি মৌলিক চাহিদা আমাদের জীবন-যাপনের সাথে ওতোপ্রোতোভাবে জড়িয়ে আছে। দিনান্ত এবং অহর্নিশ আমরা কাজ করে যাচ্ছি আমাদের মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণের জন্য। আর এটি করতে যেয়ে প্রতিনিয়ত আমরা এসব অর্জন করবার জন্য দৈনন্দিন নানা ধরনের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছি; পাশাপাশি আছে এসব চাহিদার বহুবিধ ও বহুমুখী ঘাটতি। আমাদের দেশের অর্থনৈতিক সূচকে প্রবৃদ্ধি ঘটছে; আবার কখনো কখনো এ সূচকে ঋণাত্মক অগ্রগতিও দৃশ্যমান। আমাদের মাথাপিছু আয়ের পরিমাণও ক্রমান্বয়ে বাড়ছে; তবে এক্ষেত্রে সমস্যাটি হলো এ প্রবৃদ্ধি বা মাথাপিছু আয়ের উপযোগিতা সমভাবে সবার কছে একইভাবে উপলব্ধ নয়, আমদের দেশে যেমন একদিকে সৃষ্টি হয়েছে প্রচুর অর্থ-সম্পদের অধিকারী একটি গোষ্ঠী, তেমনি অন্য প্রান্তে রয়েছে স্বল্প অর্থ উপার্জনকারী একটি বৃহত্তর জনগোষ্ঠী। অর্থনৈতিক এ অসমতাটিই আমাদের প্রধানতম একটি সমস্যা।
আর একটা কথা বলতে চাই। একসময় আমাদের দেশে টাকায় এক মণ চাল পাওয়া যেতো। মনে হতে পারে কী সমৃদ্ধ অর্থনীতিই না ছিল সেসময়। ইতিহাস বই এ আর অনেক গবেষকের মতে সেসময় আমাদের দেশে ছিল সমৃদ্ধ অর্থনীতি, ছিলনা কোনো ধরনের অভাব-অনটন। তবে কখনো ভেবে দেখেছেন কি? এই এক টাকা উপার্জন করতে কী পরিমাণ শ্রম দিতে হতো বা কতো দিন লাগতো। আর সে এক টাকা সেসময়ে কতোজনই বা উপার্জন করতো? দেশের সিংহভাগ মানুষ, না কি কেউ কেউ? অবশ্যই চিত্রটি এখনকার থেকে খুব বেশি ভিন্ন ছিলনা। আমাদের সমাজে শ্রেণিভেদ, উঁচু-নিচু, ধনী-দরিদ্র এবং অর্থনৈতিক বৈষম্যের ইতিহাসটি অনেক প্রাচীন এবং ক্রমপ্রবাহমানভাবে এখন পর্যন্ত ক্রিয়াশীল।
আপনাদের বেশিরভাগের বর্তমান দৈনন্দিন অভিজ্ঞতার কথা স্মরণ করিয়ে দিতে চাই; অবশ্যই আপনি মাসের নিয়মিত খাদ্যসংস্থাপনের সাথে সাথে নির্ধারিত কিছু দিনে খুব ভালো পানাহার করতে সক্ষম, পাশাপাশি কোনো কোনো মাসে আপনার নিজের এবং স্ত্রী, সন্তান, পরিজনদের জন্য তাদের পরিধেয় নতুন পোষাক কেনেন, প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবার নিশ্চয়তা বিধান করেন, আপনার নিজের বাড়ি বা ভাড়া বাসায় স্বচ্ছন্দ্যে বসবাস করছেন, সন্তানাদির পড়ালেখার ব্যবস্থা করছেন, বই-খাতা-পত্র এবং স্কুল এবং গৃহশিক্ষকের বেতন প্রদান করছেন। আবার এধরনের অভিজ্ঞতাও আছে যেখানে মাসের সুনির্দিষ্ট সময়ে বা মাসের শেষের দিকে আপনাকে পড়তে হয় অর্থ সংকটে, অনেক সময় ইচ্ছে থাকা স্বত্বেও নিজের বা স্ত্রী-সন্তানদের আগ্রহ থাকলেও বাজারের পছন্দের মাছ, মাংস বা অন্যান্য খাবার কিনতে কখনো কখনো হিমশিম খান। এর সাথে রয়েছে উচ্চ মূল্যের কারণে হেনস্থা, ভালো মানের, টাটকা বাজারের অনিশ্চয়তা এবং এর সাথে নকল, ভেজাল বা বিষাক্ত সংরক্ষণ উপাদান মিশ্রিত বিষাক্ত এবং স্বাস্থ্য হানিকর উপকরণের সমন্বয়ে সৃষ্ট নানা ধরনের ভোগান্তি। এটা আমরা মধ্যবিত্ত জীবন যাপনকারী সাধারন জনগোষ্ঠীর অভিজ্ঞতা।
এর বাইরে আমাদের বিপুল সংখ্যক নিম্ন জীবনযাত্রার জনগোষ্ঠী আছেন, যারা উল্লিখিত পরিসেবাগুলোর সিকি ভাগও উপভোগ করতে পারেন না। এ জনগোষ্ঠীর মধ্যে আছেন, বিভিন্ন সরকারি, বেসরকারি, আধা সরকারি, প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে কর্মরত নিম্ন শ্রেণির পেশাজীবি, সামারিক, আধা সামরিক এবং বেসামরিক প্রতিষ্ঠানে কর্মরত নিচের দিকে অবস্থিত সদস্যগণ, কৃষিজীবি, শ্রমিক-মজুর, গার্মেন্টস কর্মী, রিক্সাওয়ালা, পরিবহণ শ্রমিক, ক্ষুদ্র ব্যাবসায়ী, ফুটপাথের বিক্রেতা, মৃৎ বা এধরনের হস্তশিল্পের সাথে জড়িত জনগোষ্ঠী, দেহপোপজীবিনি, গৃহহীন এবং খোলা আকাশের নিচে বসবাসকারী বিশাল সংখ্যক জনগোষ্ঠী, হিজরা, ভিক্ষুক জনগোষ্ঠীসহ বিপুল সংখ্যক জনগোষ্ঠী।
২. খাদ্য এবং পুষ্টি সমস্যা আমাদের আর একটি প্রধানতম সমস্যা। আমাদের দেশের বিপুল সংখ্যক শিশু প্রয়োজনীয় পুষ্টিকর খাবার বা নির্দিষ্ট মাত্রার পুষ্টি লাভ করতে পারেনা। আমাদের ১ বছর বয়স থেকে শুরু করে ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত সংখ্যাগরিষ্ঠ শিশুই পুষ্টির অভাবে উপযুক্ত শারীরিক গঠন লাভ করতে ব্যর্থ হয়। প্যারাসাইটিক ভিভিন্ন রোগসহ পুষ্টিজনিত এবং দুর্বলতা সংশ্লিষ্ট নানা ধরনের অসুখের শিকার হয় আমাদের শিশুরা। মানসম্মত এবং পুষ্টিকর খাবারের অভাবে অপুষ্টিজনিত রোগ প্রতিরোধ শক্তি কম থাকার কারণে এ বয়সী শিশুদের বেশিরভাগ শিশুই নানাভাবে ধুঁকে থাকে।
৩. বস্ত্রখাতে আমরা অনেক এগিয়ে গিয়েছি। আমাদের রপ্তানী বাণিজ্যে বস্ত্রখাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। তবে এ খাতে কাজ করা পোষাক শ্রমিকদের শ্রমের তুলনায় পারিশ্রমিক এবং বেতনে আছে ব্যপক অসমতা, ব্যবধান এবং প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম, এককথায় বিলো স্ট্যান্ডার্ড। তাকিয়ে দেখুন, পেষাকশিল্পে নিয়োজিত কোন কর্মীটির পরিধেয় পোষাক দেখতে কেমন?
রপ্তানিকৃত বস্ত্রের বাইরে আমাদের বিপণী বিতানগুলোর পোষাকের উচ্চমূল্য আমাদের আর একটি বড় সমস্যা। ঢাকা শহরের ফুটপাথে অনেক কম মূল্যে পোষাক কেনা গেলেও আমাদের দেশে অনেক মানুষ ভালো এবং নতুন, এমনকি সেসব কম মূল্যের নৈমিত্তিক ব্যবহার্য পোষাক-আশাক ক্রয় করতে পারেনা।
৪. কৃষি উৎপাদন আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। কৃষি জমিতে এক ফসলের জায়গায় এখন তিন ফসলও ফলানো হচ্ছে। তারপরও সার, কৃষি উপকরণ, বীজ, সংরক্ষণ ব্যবস্থা, পরিবহণ প্রভৃতির উচ্চ মূল্যের কারণে কৃষকরা কৃষি উৎপাদন থেকে খুব বেশি লাভবান হতে পারছেন না। পাশাপাশি রাজনৈতিক হরতাল, অবরোধ, সংঘর্ষ প্রভৃতি কারণে কৃষি পণ্য পরিবহণে ব্যর্থ হয়ে একদিকে কৃষকরা পাচ্ছেন না দাম, অন্যদিকে এসব ফসল নষ্ট হয়ে এবং পচে যেয়ে কৃষকদের মানসিক কষ্টেরও কারণ হয়ে উঠছে। আবার ব্যাবসায়ীদের বিভিন্ন ধরনের সিন্ডিকেটের কারণে একদিকে কৃষকরা হয়ে পড়ছে অসহায়, যার প্রভাব পড়ছে সাধারণ ক্রেতাদের উপরও।
কৃষি পণ্যে ব্যপক হারে কীটনাশক ব্যবহার, ব্যাবসায়ীদের উচ্চ মুনাফার আগ্রহের কারণে আমরা বিষাক্ত রাসায়ণিক সংযুক্ত এবং ফরমালিন বা এ জাতীয় স্বাস্থ্যহানিকর উপাদান সমৃদ্ধ ভেজাল খাবার খেতে বাধ্য হচ্ছি এবং ফলশ্রুতিতে বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে ভূগছে দেশের মানুষ।
৫. শিক্ষা ক্ষেত্রে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ। তারপরও এ ক্ষেত্রটিতেও বেশ কিছু অসঙ্গতি পরিলক্ষিত। প্রথমত, আমরা আমাদের দেশের জন্য প্রয়োজনীয় এবং উপযোগী শিক্ষা কাঠামো বা কোর্স কারিকুলাম তৈরি করতে পেরেছি কি? প্রশ্নটি সবার প্রতি। দ্বিতীয়ত, আমাদের মতো দেশে যেখানে কারিগরি শিক্ষার উপর গুরত্বারোপের প্রয়োজন সেখানে আমরা তাত্ত্বিক বিষয়ে অনেক বেশি জোড় প্রদান করেছি কারিগরি শিক্ষার উপযোগি অবকাঠামো, কোর্স কারিকুলাম, শিক্ষক বা সেক্টর তৈরি না করে।
প্রাথমিক শিক্ষা খাতের অন্যতম দুর্বলতা মানসম্মত শিক্ষকের অভাব। শিক্ষকের যোগ্যতা নারী শিক্ষকদের ক্ষেত্রে এসএসসি এবং পুরুষদের জন্য এইচএসসি নির্ধারণ একটি প্রধানতম ত্রুটি। দ্বিতীয় ত্রুটিটি হলো শিক্ষকদের মানসম্মত প্রশিক্ষণের অভাব। আর একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা অনুন্নত বেতন কাঠামো এবং প্রাথমিক শিক্ষকদের সরকারি স্কেলে তৃতীয় শ্রেণির পদমর্যাদা; যেটি অবশ্যই হওয়া উচিৎ ছিল প্রথম শ্রেণি পদমর্যাদার, প্রয়োজনে স্বতন্ত্র্য ও আলাদা বেতন কাঠামো বা শ্রেণি প্রদান করা যেতে পারতো। প্রাথমিক স্কুলের অবকাঠামোর স্বল্পতা, ক্লাসরুমের অভাব, ভাঙা স্কুল ঘর, গাছতলায় বা খোলা মাঠে ক্লাসের আয়োজন প্রথমিক শিক্ষা খাতটিকে ব্যহত ও ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাতেও রয়েছে অনেক সমস্যা। একটি বড় সমস্যার মধ্যে রয়েছে প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক পর্যায়ে ড্রপ আউট। প্রাথমিকের মতো মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষকদের মধ্যেও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকের অভাব রয়েছে। অভাব রয়েছে ল্যাবরেটরিসহ প্রযুক্তিগত শিক্ষা প্রদানের পর্যাপ্ত ব্যবস্থার অভাব। শ্রেণিকক্ষ শিক্ষার বাইরে প্রায় সব শিক্ষার্থীকে স্কুল শিক্ষকদের কাছে প্রাইভেট পড়তে হয়; এটিকে একটি বড় ত্রুটি হিসেবে দেখা যেতে পারে। মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষকদের বেতন কাঠামোও অপর্যাপ্ত এবং সরকারি পদমর্যাদার দ্বিতীয় শ্রেণির স্থলে এ পর্যায়ের পদমর্যাদাকেও প্রথম শ্রেণিতে পদায়ন দেওয়া উচিত।
উচ্চ মাধ্যমিক কলেজগুলোও একই ধরনের অবকাঠামোগত সমস্যাক্রান্ত এবং এ পর্যায়েও রয়েছে শিক্ষক স্বল্পতা। ডিগ্রি বা অনার্স পর্যায়ের কলেজগুলোতে বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষক স্বল্পতা একই রকম এবং এ শিক্ষকদেরও প্রশিক্ষণের কোনো ব্যবস্থা নেই। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত এ কলেজগুলোর শিক্ষার মান ভয়াবহ রকম খারাপ এবং বেশিরভাগ কলেজেই ক্লাস এবং অন্যান্য শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে ক্লাস না হবার মতো দুর্বলতা প্রত্যক্ষভাবে বিদ্যমান রয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় এবং স্নাতক পর্যায়ের মেডিকেল, প্রকৌশল ও অন্যান্য পাবলিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর পাঠ্য ও অন্যান্য ব্যবস্থাসমূহের মধ্যেও আছে নানামুখী সমস্যা। প্রথমত, শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার স্থলে পৃথক পৃথক ভর্তি ব্যবস্থার কারণে শিক্ষার্থীদের গণ ভোগান্তি এবং ফলশ্রুতিতে অবিভাবকদের অতিরিক্ত ব্যয়। দ্বিতীয়ত, বিষয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে ভোগান্তি। পূর্বেই যেমনটি বলা হয়েছে, এ পর্যায়ে প্রযুক্তিগত, ব্যবহারিক এবং কারিগরি শিক্ষা কারিকুলামের তুলনায় তাত্ত্বিক কোর্সের অধিক্য। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়েও তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর মধ্যকার সাধারণ বৈশিষ্ট্য হিসেবে মেধার দিকটিকে প্রাধান্য না দিয়ে বেশ কিছু ক্ষেত্রে লেজুরবৃত্তিকে প্রাধাণ্য দিয়ে ফলাফলকে প্রভাবিত করা হয় এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রেও প্রবলভাবে ছাত্র রাজনীতি, সমসাময়িক ক্ষমতাশীল দলের আনুকূল্য, সুপারিশ, রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা, এবং অপ্রদর্শিত মোটা অঙ্কের অর্থের লেনদেনের মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ প্রদান করা হয়।
বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো মানসম্মত গবেষণাকর্ম সম্পাদন, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশ, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অনুষ্ঠিত সেমিনার, সিম্পোজিয়াম বা বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন এবং সমাজে সেগুলোর বাস্তব প্রয়োগ না করবার কারণে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে একদিকে যেমন পিছিয়ে রয়েছে, তেমনি গুরুত্বপূর্ণ পারস্পরিক গবেষণা প্রকল্প গড়ে তুলতে পারেনি। ফলে সম্ভাবনা থাকা স্বত্ত্বেও বিশ্বের প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর তালিকায় স্থান করে নিতে ব্যর্থ হয়েছে। এছাড়া বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে আন্তঃযোগাযোগ, ছাত্র এক্সচেঞ্জ বা বিনিময় প্রোগ্রাম, যুক্ত গবেষণা প্রকল্প না করার কারণে এখানকার ছাত্র এবং গবেষকরা আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডল এবং উন্নত অবকাঠামো, গবেষণাগার এবং ভালো মানের শিক্ষক-গবেষকদের সান্নিধ্যে আসতে পারেনা। ফলে ভালো মানের গবেষক এবং শিক্ষক তৈরিতে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ব্যর্থ হয়।
সরকারও উন্নত বিশ্বের সরকার বা ভালো মানের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষাবৃত্তি প্রদান করে বা পারস্পরিক শিক্ষা/গবেষক বিনিময় চুক্তি করে সেসব দেশ থেকে আরো বেশি পরিমাণ শিক্ষা বৃত্তি ব্যবস্থা করার ক্ষেত্রে ব্যর্থতার পরিচয় রেখেছে। পাশ্ববর্তী ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, নেপাল এ ক্ষেত্রে অনেক বেশি সফলতার পরিচয় রেখেছে এবং প্রাসঙ্গিকভাবে তারা তাদের শিক্ষা, বিজ্ঞান, এবং প্রযুক্তিক্ষেত্রেও অনেক বেশি এগিয়ে গিয়েছে।
৬. শিক্ষা কার্যক্রম সমাপ্তীর পর যেকোনো শিক্ষার্থীর প্রথম রূপান্তর হয় প্রথমত চাকুরিপ্রার্থী হিসেবে এবং এরপর চাকুরিজীবিতে। তবে আমাদের দেশে প্রকটভাবে এ ক্ষেত্রটি অনেক বেশি মাত্রায় দুর্নীতিগ্রস্ত এবং কয়েকটি ব্যতিক্রম ছাড়া বর্তমান সময়ে বেশিরভাগের অভিজ্ঞতায় চাকুরি প্রাপ্তির ক্ষেত্রে হয় সুপারিশ বা অপ্রদর্শিত মোটা অঙ্কের অর্থ লেনদেনের বিষয়টি প্রকটভাবে ক্রিয়াশীল থাকে। আর একটি চোখে পড়ার মতো বিষয় হলো চাকুরি প্রদানের ক্ষেত্রে প্রকৃত মেধা এবং অভিজ্ঞতার অবমূল্যায়ণ করে ছাত্ররাজনীতির পুরষ্কার হিসেবে অপেক্ষাকৃত কম মেধাবী এবং পেছনের সারির ছাত্রদের নিয়োগ প্রদান।
৭. এখনো হাজার হাজার মানুষ আমাদের দেশে গৃহহীন। দেশে বাস্তুহারা জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বাড়ছে। ফুটপাথ, খোলা আকাশের নিচে, বিভিন্ন বাস, রেল স্টেশন বা নদীঘাটে বসবাস করে সংখ্যায় অনেক বেশি মানুষ। গৃহ নির্মাণের উপযোগি জমি, গৃহ নির্মাণ সামগ্রী, ফ্ল্যাট, এপার্টমেন্টসহ যে কোনো আবাসনের মূল্য ক্রমে বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং জনগণের ক্রয়সীমার বাইরে চলে যাচ্ছে। সমান্তরালে বেড়েছে এবং বাড়ছে বাড়ি ভাড়া।
৮. উন্নত চিকিৎসা সেবার অভাব আর একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা। বিশেষ করে প্রত্যন্ত এবং দূরবর্তী জেলা এবং উপজেলাগুলোতে ডাক্তার স্বল্পতা, কিংবা ডাক্তারদের দায়িত্বে অবহেলা একটি বড় সমস্যা। বিসিএস এর মাধ্যমে সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত দূরবর্তী এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলে নিয়োগপ্রাপ্ত বেশিরভাগ চিকিৎসক প্রথমেই চেষ্টায় থাকে কর্মস্থল পরিবর্তন অর্থাৎ ট্রান্সফারের। অনেক এধরনের ডাক্তারের সাথে আমাদের কথা হয়েছে, যাদের ভাষ্যে জানা গিয়েছে, পারস্পরিক যোগসাজোশের মাধ্যমে তারা সপ্তাহে তিন বা চারদিন দায়িত্ব পালন করে অন্যান্য দিন হাসপাতালে অনুপস্থিত থেকে একে অপরকে প্রক্সি দেয় আর দূরবর্তী উন্নত জেলা শহরগুলোর ক্লিনিকগুলোতে চিকিৎসা সেবা প্রদান করে অর্থ উপার্জন করতে।
আপনার এবং আমাদের বেশিরভাগের অভিজ্ঞতায় আছে চিকিৎসাসেবার উচ্চ মূল্য, ভুল বা নি¤œমানের চিকিৎসা, চিকিৎসা এবং ওষুধের উচ্চ মূল্যের ব্যয় নির্বাহের দুঃশ্চিন্তা, চিকিৎসাসেবা লাভে দীর্ঘসূত্রীতা, দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসা, এবং পরিচিতজনের সুষ্ঠু চিকিৎসার জন্য নানা পদে, নানা ভাবে হেনস্থা হবার অভিজ্ঞতা।
আর একটি বড় সমস্যা হলো প্রতিবেশী এবং বিশ্বের অন্যান্য উন্নত দেশের ডাক্তারদের তুলনায় রোগ নির্ণয়, চিকিৎসা প্রদান প্রভৃতি ক্ষেত্রে আমাদের দেশের ডাক্তারদেও কম দক্ষতা। এর কারণ হিসেবে মেডিকেল কলেজগুলোতে উন্নত চিকিৎসাশাস্ত্র অধ্যয়ণের সহায়ক উপকরণ এবং শিক্ষকদের কম দক্ষতাকে চিহ্নিত করা যেতে পারে। সরকারী হাসপাতালগুলোতে ভালো মানের চিকিৎসাসেবা লাভে ব্যর্থ হয়ে প্রাইভেট হাসপাতাল এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে উচ্চ মূল্যে চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করতে হয়। অনেকে পয়সার অভাবে চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করতে ব্যর্থ হয়ে ধুঁকে ধুঁকে মৃত্যু বরণ করে আবার অনেকে ভুল চিকিৎসার স্বীকার হয়। অনেক রোগী আছেন, যারা দেশের চিকিৎসা পরিসেবায় ভুল চিকিৎসার স্বীকার হয়ে, কিংবা দীর্ঘদিন চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করে সুস্থ না হবার কারণে পাশ্ববর্তী দেশ ভারতে অল্প খরচে, স্বল্প ওষুধে এবং অল্প সময়ে সুস্থ হয়ে দেশে ফিরে এসেছেন। এধরনের আস্থাহীনতা, দুর্বল চিকিৎসা ব্যবস্থার উত্তরণ চাই আমরা।
চিকিৎসা সম্পর্কিত মিশ্র অভিজ্ঞতা আমাদের। এখানে আমরা এমন চিকিৎসকদের চিনি, যারা নিজের চিকিৎসাসবার গুণে দেশ এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সমানভাবে প্রতিথযশা। দেশের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অনেক ডাক্তার আছেন, যারা স্বল্প মূল্যে জনসেবার ব্রত নিয়ে হাজার হাজার মানুষের সেবা প্রদান করে আসছেন বছরের পর বছর। আবার এমন এমন অধ্যাপক চিকিৎসকও আছেন, সরকারি হাসপাতালে যাদের চিকিৎসা সেবা পাওয়া দুষ্কর; এমনকি প্রাইভেট চেম্বারেও তাঁদের সিরিয়ালের জন্য অপেক্ষা করতে হয় মাসের পর মাস। পাশাপাশি তাঁদের ভিজিটও আকাশ ছোঁয়া। এর সাথে আছে ভুল চিকিৎসার শিকার হওয়া বা রোগ নির্ণয় করতে না পারার হেনস্থা। আমরা এমন চিকিৎসকের কথাও জানি সুযোগ লাভ করে ইউক্রেন থেকে মেডিকেল পড়া শেষ করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে ইন্টার্নি করা সদ্য যোগ দেয়া চিকিৎসকের কথা, যিনি নিজ আত্মবিশ্বাসে বলেন দেশের অনেক অনেক নামী-দামী অধ্যাপক চিকিৎসকের চেয়েও দক্ষতার সাথে তার চিকিৎসা প্রদানের কথা।
৯. জনসংখ্যার সমান্তরালে পরিবহণ সংখ্যা বাড়লেও এ সেক্টরে রয়েছে অনেক অনেক সমস্যা। প্রথমত, মানসম্মত পাবলিক পরিবহণের অভাব; দ্বিতীয়ত, সব জায়গায় গমনাগমনের জন্য ভালো রোড নেটওয়ার্কের স্বল্পতা; তৃতীয়ত, পরিবহণ সংশ্লিষ্ট জ্বালানীর উচ্চ মূল্য; চতুর্থত, উচ্চ পরিবহণ ব্যয়; পঞ্চমত, পরিবহণ দুর্ঘটনা এবং পাশাপাশি জীবন ও সম্পদের হানি; ষষ্ঠত, পরিবহণ ব্যাবসার সাথে জড়িত মালিক, ড্রাইভার, শ্রমিক ও অন্যান্যদের নিম্ন জীবন যাত্রার মান এবং নিরাপত্তাহীনতা এবং সর্বপোরী পরিবহণ ক্ষেত্রে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ইন্সিওরেন্স না করা।
১০. রাজনৈতিক অনৈক্য, হানাহানি, পারস্পরিক বিরোধ, সাম্প্রদায়িক রাজনীতি, ক্ষমতার দ্বন্দ্ব, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শ প্রভৃতির কারণে রাজনৈতিক সহিংসতার স্বীকার হয়ে একদিকে রাজনৈতিক নেতা, কর্মী, সংগঠক সমর্থক এবং অন্যদিকে সাধারণ জনগণ নির্বিচারে প্রাণ হারানোর মতো ঘটনা ঘটেছে আমাদের দেশে । আমাদের কাছে প্রতিটি প্রাণ মূল্যবান। একটি প্রাণের মৃত্যু কিংবা একজন উপার্জনকারী ব্যক্তির শারিরিক বৈকল্য একটি পরিবারকে পথে বসানোর জন্য যথেষ্ঠ। রাজনৈতিক কারণে জননিরাপত্তার বিঘ্নতা একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা।
১১. রাজনৈতিক কারণ ছাড়াও বিভিন্ন সময়ে পারস্পরিক বিরোধ বা অন্য কোনো কারণে জননিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে। পাশাপাশি হত্যা, অঙ্গহানি, লুট, চুড়ি, ডাকাতি, ছিনতাই, পকেটমার, শ্লিলতাহানী, অগ্নিসংযোগ, সংঘর্ষ, অপহরণ, প্রতারণা, মানব পাচার, হামলা-পাল্টা হামলা, সংখ্যালঘুদের উপর হামলা প্রভৃতি জন নিরাপত্তাজনিত সমস্যা আমাদেরকে ব্যতিব্যস্ত রাখছে ক্রমাগত।
১২. কিশোর, যুবক, বা পরিণত বয়সের মানুষদের মাঝে মাদকের বিস্তার আর একটি বড়ো সমস্যা।
১৩. আর একটি প্রকট সমস্যার উল্লেখ করতে চাই, যেটি থেকে বের হয়ে আসা একান্ত জরুরী। এটি কর্মক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের কাজের ক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রিতা। তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি যারা বিভিন্ন কর্মস্থলে বিভিন্ন পদে কর্মরত আছি এবং যারা বিভিন্ন সময়ে যেকোনো কাজের জন্য কখনো না কখনো বিভিন্ন দপ্তরে ধরনা দিয়েছি। চাকুরি গ্রহণ, চাকুরির পদোন্নতি, পদায়ন, পেস্কেল, ট্রান্সফার, শিক্ষা মার্কসীট বা সার্টিফিকেট সংগ্রহ, সংশোধন, মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেট সংগ্রহ, পেনশন, টাকা উত্তোলন, ঋণ গ্রহণ, বিভিন্ন প্রকল্প প্রস্তাব পাস, টেন্ডার, বিল পাস/সংগ্রহ, পাসপোর্ট সংগ্রহ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি, বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ, বিশেষ করে যেসব বিষয়ে আর্থিক সংশ্লিষ্টতা রয়েছে, যেখানে স্বার্থ জড়িত সেসব ক্ষেত্রে আপনাদের ব্যতিক্রম কিছু অভিজ্ঞতার বাইরে কম বেশি সবার অভিজ্ঞতায় রয়েছে প্রথমত দীর্ঘসূত্রিতা এবং পর্যায়ক্রমে প্রদর্শিত বা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অপ্রদর্শিত অর্থ লেনদেনের মতো অভিজ্ঞতা। আপনার বৈধ প্রাপ্যতাকেও সমস্যাগ্রস্ত করে দিনের পর দিন ফেলে রাখা হয়েছে ফাইল কিংবা আপনাকে সময়ে সময়ে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ব্যাতিশ্রদ্ধ করে সবশেষে অর্থ প্রদানে বাধ্য করা হয়েছে। এ ধরনের দুর্গতি এবং অপদস্থতার শিকার আপনি হননি, হলফ করে বলতে পারি এমন মানুষ আমাদের সামনে আপনি দাড় করাতে পারবেননা।
এখন ছোট্ট করে আসি এসব সমস্যার কারণ অনুসন্ধান করতে। এ কিস্তিতে এ সম্বন্ধে বিস্তারিত আলোচনা করা হবেনা। পরের কিস্তিতে আমরা আমাদের সবধরনের সমস্যার কারণ বিস্তারিতভাবে আলোচনা করে সেসবের সমাধানের কথা বলবো। দৃঢ়ভাবে বলতে চাই আমরা সামাজিক প্রতিটি মানুষ রাজনীতির অংশ, আমাদের কেউই রাজনীতির বাইরে নয়। একই সাথে আমাদের প্রতিটি কর্মকাণ্ড অর্থনৈতিক। বিশ্বের কোনো কিছুকেই আপনি অর্থনীতি আর রাজনীতির বাইরে রাখতে পারবেন না। আমাদের প্রতিটি কর্মকাণ্ড অর্থ সংশ্লিষ্ট আর উল্লিখিত সবগুলো সমস্যার সাথে আনুসঙ্গিক বিভিন্ন সমস্যার সাথে জড়িয়ে আছে অর্থনৈতিক কারণ।
মানুষ সমস্যাগ্রস্ত হয় অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতার কারণে। পাশাপাশি রয়েছে আরো কতগুলো কারণ। একটু খেয়াল করুন, একজন মানুষের দারিদ্র্যতা, স্বল্প অর্থ, কর্মহীনতা, স্বীকৃতির অভাব, আত্মবিশ্বাসের অভাব, সফলতার অভাব, মতের অমিল, অন্যের মতামতকে মেনে না নেবার প্রবণতা, নিজের মতকে প্রাধান্য দেওয়া, নিজের মতামত গ্রহণযোগ্য না হওয়া, ন্যয্য প্রাপ্যতা অনুসারে প্রাপ্য সুবিধা না পাওয়া নানাভাবে সমস্যাগ্রস্ত করে তুলে আমাদেরকে। একটু নিজের অভিজ্ঞতার সাথে মিলিয়ে দেখুন। আপনার রাগ, ক্ষোভ, কৃত অপরাধের কারণগুলো। আমাদের কে চায় সেধে অন্যায় করতে। আপনাকে বলছি, আপনার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় রয়েছে অসংখ্য ভালো কাজ। পাশাপাশি আমরা নিশ্চিত, আপনি কখনোই অন্যায় করেন নি, এমন দাবীও আপনি করতে পারবেন না। একটু খেয়াল করে দেখুন, আন্ডারলাইন করা কোনো না কোনো কারণে আপনি ছোটো হোক, বড় হোক কোনো না কোনো ধরনের অন্যায্য কাজ করেছেন।
যত মত ততো পথ। একই কাজ দশভাবে সম্পাদন করা সম্ভব। হতে পারে আমার মতামত গ্রহণযোগ্য হলোনা; আমাদের মূল উদ্দেশ্য কি? কাজটিকে সুচারুভাবে সম্পাদন। হ্যাঁ, হয়তো আপনার বাতলানো পথে কাজটি সহজে সম্পাদন করা যেতো, তাই বলে কি একটু ছাড় দেবার মানসিকতা গ্রহণ করা যায় না? শুধু আপনাকে বলছিনা, যিনি আপনার মতকে প্রধান্য দেয়নি, তাকেও বলছি একটু ছাড় দিলে খুব বেশি ক্ষতি নেই। আবার এমনও হতে পারে দুটো বা একাধিক মতামতকে প্রাধাণ্য দিয়ে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য মতামতটিকে গ্রহণ বা সবগুলো মতামত গ্রহণ করে একটি নতুন উপায় বের করে আমরা সবার সম্মিলিত অংশগ্রহণকে নিশ্চিত করে একটি কাজকে সফলভাবে সম্পাদন করতে পারি।
আপনাদেরকে বলছি, আমরা রাজনীতি করতে এসেছি আপনাদের জন্য, আপনাদের কাজকে সহজসাধ্য করবার জন্য, সবাইকে একতাবদ্ধ করে সবার সম্মিলিত অংশগ্রহণকে নিশ্চিত করে দেশকে এগিয়ে নেবার জন্য। আমরা বিশ্বাস করি আমরা এমন একটি বাংলাদেশ নির্মাণ করবো, যেখানে উল্লিখিত সমস্যাগুলোর কোনোটিই থাকবেনা। এমরা এমন একটি বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেবো, যেটি নের্তৃত্ব দেবে বিশ্বকে। আমরা পুরনো সে কথাটিকেই প্রতিষ্ঠিত করতে চাই, “বাংলা আজ যেটা ভাবে, ভারতবর্ষ সেটি ভাবে আগামী কাল”। দৃঢ়ভাবে বলতে চাই ‘আমাদের বাংলাদেশ আজ যেটি ভাববে বা আজ যেটি করবে বিশ্ব সেটিকে ভাববে বা সম্পাদন করবে আগামীকাল’।
আমাদের হাতকে শক্তিশালী করুন। যোগ দিন ‘বাংলাদেশ জাগ্রত জনতা’ দলে।
বিজয় সুনিশ্চিত।
জয় বাংলা।
©somewhere in net ltd.