নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

রাজনীতি

চির উন্নত মম শির

হিমরাজ ব্লগ

চির উন্নত মম শির

হিমরাজ ব্লগ › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাংলাদেশ জাগ্রত জনতা: রাজনৈতিক ভাবনা, দর্শন ও মতাদর্শ

২৭ শে জুন, ২০১৪ বিকাল ৪:৫০

একটি রাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠিত যেকোনো রাজনৈতিক দল এবং তাদের সামগ্রিক কর্মকাণ্ড সে রাষ্ট্রের মানুষের আশা আকাঙ্খার প্রতীক এবং প্রকাশ হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। একটি দেশের ইতিহাস, সংস্কৃতি, কৃষ্টি, কলা, দর্শন, ভাবধারা, আদর্শ প্রতিফলিত হয় রাজনৈতিক দল এবং এর সাথে সংশ্লিষ্ট সকলের সামগ্রিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে। দেশের জনগণের চাওয়া পাওয়া প্রতিফলিত হয় রাজনৈতিক দলের মাধ্যমে এবং সেসকল চাওয়া পাওয়া অর্জন সম্ভবপর করে তোলে রাজনৈতিক দল, জনগণকে সঙ্গে নিয়ে, তাদেরকে একত্রিত করে, সর্বসম্মুখে সেসব তুলে ধরে, কখনো জোর গলায় আওয়াজ তুলে, কখনো আন্দোলন-সংগ্রাম করে, কখনো বিপ্লব-বিদ্রোহের মাধ্যমে। যেমনটি যখন প্রয়োজন। যুগে যুগে, কালে কালে বিশ্বব্যাপী রাজনৈতিক দলসমূহ তাদের মাধ্যমে সংগঠিত ও সংঘটিত কর্মসূচী ও কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে ঘটিয়েছে বিপ্লব, করেছে বিদ্রোহ-আন্দোলন-সংগ্রাম, এনেছে স্বাধীনতা, দিয়েছে অধিকার, অর্জন করেছে স্বাধিকার। যেকোনো দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে রাজনৈতিক দল এবং রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে সরকার গঠন ও পরিচালনা সে দেশের স্বকীয়তা, স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্বের ধারক, বাহক ও প্রতীক হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সরকারি দল হিসেবে যেকোনো রাজনৈতিক দলের মাধ্যমেই একটি দেশের অর্থনীতি, শিক্ষা ব্যবস্থা, আইন-কানুন, ব্যবসা-বাণিজ্য, রাজনীতি, স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্রনীতি, সামরিক ব্যবস্থা, সমাজ, সংস্কৃতি এবং দেশের জনগণ প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা পেয়ে পরিচালিত হয়ে থাকে। রাজনৈতিক দলের হাত ধরে গঠিত সরকারের সফলতা বা ব্যর্থতার ফলাফল হিসেবে বিশ্বের সমান্তরালে একটি দেশ হয় এগোয় অথবা পিছিয়ে পড়ে। সে অর্থে একটি জাতির ভাগ্যোন্নয়নের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকে যেকোনো রাজনৈতিক দলের অবস্থান ও ভূমিকা।

আমরা বাঙালি। বিশ্বের ইতিহাসে অনন্য বৈশিষ্ট্যের সাহসী, আত্মমর্যাদাশীল, কর্মঠ, বুদ্ধিদীপ্ত, ধৈর্যশীল, মেধাবী, সৎ এবং অহিংস মানসিকতার প্রমাণ আমরা রেখে আসছি যুগ যুগ ধরে। কয়েক শতক ও সহস্রাব্দের ধারাবাহিকতায় আমরা এদেশে নিজেদের উন্নত সভ্যতা নির্মাণ করেছি পুরো বিশ্বের সমান্তরালে বেশ কয়েক হাজার বছর আগেই। আমাদের দেশের ভৌগোলিক অবস্থান, অনুকূল পারিবেশিক অবস্থাকে কাজে লাগিয়ে আমরা যেমন এখানে নগরকেন্দ্রীক সভ্যতা গড়ে তুলেছি; তেমনিভাবে এখানকার অনুকূল ভৌগোলিক আর্থ-সামাজকি-রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক সমৃদ্ধ অবস্থার কারণে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে মানুষজন কালে কালে এ অঞ্চলে এসেছে, এখানে এসে এ অঞ্চলে বসতি নির্মাণ করেছে। কখনো বসতি স্থাপনকারী হিসেবে, কখনো শ্রমিক হিসেবে, কখনো বণিক হিসেবে, আবার কখনো কখনো শাসক হিসেবে। নিজের ঐশ্বর্যকে উজার করে ঢেলে দিয়ে সবাইকে আমাদের বাংলাদেশ ভূখণ্ড সবসময় দিয়ে গেছে অফুরন্তভাবে তার রত্নভাণ্ডার। আর এ রত্নভাণ্ডারে এসে এখানকার আতিথেয়তায় এবং এখানকার অনুকূল পরিবেশে স্থায়ী আবাস গড়ে থেকে গিয়েছে এখানে। আপন করে নিয়েছে এখানকার সংস্কৃতিকে। আবার বাহির থেকে নিয়ে আসা সংস্কৃতি দিয়ে সমৃদ্ধ করেছে আমাদের সংস্কৃতিকে। কেবল ব্রিটিশ আর পাকিস্তানি শাসনামলে এখানকার সম্পদ পাচার হয়েছে খুব বেশি পরিমাণ। তারপরও আনুমানিক দুশো-সোয়াদুশো বছরকালব্যাপী সে শাসনামলেও বাংলাদেশ এবং বাঙালি সংস্কৃতি সমৃদ্ধ হয়েছে। মানতে হবে এসময়েই পদ্ধতগিতভাবে বিজ্ঞান, ইতিহাস, প্রত্নতত্ত্ব, নৃতত্ত্ব, ভূগোল, সংস্কৃতি এবং সাহিত্য চর্চা শুরু হয়েছে; বিভিন্নভাবে, কখনো তাদের মাধ্যমে যাতে করে এ উপমহাদেশের ইতিহাস-সংস্কৃতিকে পুরোপুরি আত্মস্থ করার মাধ্যমে এখানে তাদের শাসনকে পোক্ত করা যায়, কখনো যৌথ অংশগ্রহণে, আবার কখনো আমাদের প্রথিতযশাদের মাধ্যমে, যারা এগিয়ে নিয়ে গিয়েছে আমাদের জ্ঞান বিজ্ঞানের চর্চাকে। পাশাপাশি আমরা পরিচিত এবং সমৃদ্ধ হয়েছি পর, অপর, নিপীড়ন, নিষ্পেষণ, উঁচু, নিচু, জাত-পাত, শোষণ, দাঙ্গা, জাতিগত বিদ্বেষ, বিপ্লব, বিদ্রোহ, আন্দোলন, সংগ্রাম, স্বাধীকার, স্বদেশ, মুক্তি, স্বাধীনতা এবং এ ধরনের আরো বিভিন্ন ধরনের কনসপ্টে, প্রক্রিয়া, কর্মকাণ্ড, কর্মযজ্ঞ এবং কার্যকরণ সম্বন্ধে যেগুলো একইসাথে অভিজ্ঞ এবং সমৃদ্ধ করেছে অন্যদেরকেও।

কয়েক হাজার বছর ধরে বাংলার আদি বসতি স্থাপনকারী জনগোষ্ঠী, এখানে বসবাসকারী আদিবাসীগোষ্ঠী, বাংলার সনাতন ধর্মাবলম্বী, এখানকার ভূমিজ সন্তান বা বাংলার বাহির থেকে আসা হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, জৈন, মুসলমান জনগোষ্ঠী; বহির্দেশীয় মৌর্য, শুঙ্গ, কুষাণ, গুপ্ত, সেন; বা দেশীয় পাল, চন্দ্র, বর্ম, খড়গ, রাত, নাথ, দেব; কিংবা বহির্দেশীয় সুলতানী, মুগল, পাঠান, ওলন্দাজ, পর্তুগীজ, ব্রিটিশ, পাকিস্তানী বা ভারতীয় উপমহাদেশভত্তিকি রাজবংশ এবং/বা শাসক এবং বণিক বা ঔপনিবেশিক জনগোষ্ঠী এবং তাদের সামগ্রিক সংস্কৃতির সম্মিলিতি রূপ আমাদের বাঙালি সংস্কৃতি আর বর্তমানে আমাদের বাংলাদেশ ভূখণ্ডে স্থায়ীভাবে বসবাসকারী এবং জন্মসূত্রের মাধ্যমে নাগরিকত্ব লাভ করা জনগোষ্ঠীর সবাই মিলে আমরা বাঙালি, যারা বিশ্বের বুকে একটি সমৃদ্ধ এবং অনন্য সংস্কৃতির ধারক ও বাহক।

সাহসী, ব্যতিক্রমী, দেশ গঠনে প্রতিশ্রুতিশীল মানসিকতা ও আদর্শ ধারনকারী রাজনৈতিক দল ‘বাংলাদেশ জাগ্রত জনতা’। বাঙালি জাতীয়তাবাদের আদর্শপুষ্ট রাজনৈতিক দল হিসেবে আস্থা রাখার মতো একটি রাজনৈতিক দল এটি। আমাদের দেশে বসবাসকারী প্রতিটি বাঙালিকে, প্রতিটি মানুষকে আত্মবিশ্বাস প্রদানের জন্য এবং তাদের সাথে পরচিয় করিয়ে দেবার জন্যই আমাদের রাজনৈতিক দলের আদর্শ জনসম্মুখে তুলে ধরবার প্রয়োজন মনে করছি আমরা। আমাদের রাজনৈতিক আদর্শ আপনাকে উদ্বুদ্ধ করবে আমাদের সাথে সম্পৃক্ত হবার জন্য। সবচেয়ে বড় কথা আমরা আপনাদেরই সন্তান, ভ্রাতা, ভগ্নী এবং আত্মীয়। আপনারা এবং আমরা সহযোগে যেমন আমরা সবাই বাঙালি; ঠিক একইভাবে আমরা চির জাগ্রত, বাংলাদেশের জাগ্রত জনতা। যাদের রাজনৈতিক দলের নাম ‘বাংলাদেশ জাগ্রত জনতা’।

কেন আমাদের আত্মবিশ্বাস অর্জন করতে হবে? কি জন্য বাঙালিদের জন্য প্রয়োজন এমন একটি রাজনৈতিক দল; যেটি দেশটির আমূল আর্থ-সামাজকি-সাংস্কৃতিক পরিবর্তন ঘটাতে চায়? কেন এবং কোন কোন ক্ষেত্রে পরিবর্তন প্রয়োজন? কেন বলা হয়ে থাকে, বাঙালি অধ্যুষিত বাংলাদেশ এর প্রতিটি ক্ষেত্রে সামগ্রিক উন্নয়ন প্রয়োজন?

আমরা নেতিবাচক মানসিকতার নই; আমরা নেতিবাচক কথা বলতে চাইনা। তবে রুঢ় বাস্তবতা হলো, আমাদের দেশের নেতৃত্ব আজ তথাকথিত ক্ষমতালিপ্সু, স্বল্পশিক্ষিত, পরিবারকেন্দ্রীক, দুর্নীতিপরায়ণ, এবং একই সাথে ভীরু ও সহিংস মানসিকতার নেতা-নেত্রী নামক জনগোষ্ঠীর হাতে জিম্মি। বর্তমান সময়ে আমাদের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর নিরাপত্তাহীনতা বা নিরাপত্তাজনিত ভীতি, উপার্জনের অভাব বা অর্থর ঘাটতি, প্রাথমিক থেকে শুরু করে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত শিক্ষা ব্যবস্থার প্রতিটি স্তরে ক্রমাবনতি, নিম্ন জীবনযাত্রার মান, জীবনযাত্রা নির্বাহের উচ্চ ব্যয়, খাদ্য, বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসা, বাসস্থান এবং যাতায়াতের ক্ষেত্রে নানা ধরনের এবং নানামুখী সুবিধাহীনতা, উচ্চব্যয়, এবং প্রয়োজনীয় ও নূন্যতম সুযোগ-সুবিধা ভোগ করবার ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের বাধাগ্রস্ততা, দীর্ঘসূত্রীতাসহ নানামুখী সমস্যা, প্রয়োজনীয় যেকোনো দ্রব্যসামগ্রী ব্যবহারের ক্ষেত্রে নকল ও ভেজাল পণ্য প্রাপ্তির সমূহ সম্ভাবনা, খাদ্য সামগ্রীতে কীটনাশক ও স্বাস্থ্যহানিকর উপাদানের ব্যপক ব্যবহার সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশের আপামর বাঙালি জনগোষ্ঠীকে যেমন একদিকে বীতশ্রদ্ধ করে তুলেছে, তেমনি দিয়েছে সুস্থ জীবনযাপনের নিশ্চয়তার ঘাটতি, নানামুখী স্বাস্থ্যহানি ঘটবার মতো সম্ভাবনা, আস্থাহীনতা, আত্মবিশ্বাসের অভাব, নিরাপত্তাহীনতা, এবং যুগের পর যুগ একই ধরনের নিপীড়নমূলক শাসনকে মেনে নেবার প্রবণতা, দেশে পরিবর্তন আসা সুদূর পরাহত এবং ভাগ্যের নিয়তি হিসেবে এদেশে বেঁচে থাকাকে একটি অভিশাপ মনে করা, এবং সুযোগ পেলে বা সুযোগ থাকলে পরবাসী হবার মানসিকতা। বিস্তারিত বলবার প্রয়োজন নেই; বহুবধি, নানামুখী সমস্যা আমাদের, আপনাদের সবার ঝুলিতে এত্তো বেশিবার ঘটেছে, এত্তো বেশি বিব্রত করেছে; আমরা সবাই ওয়াকিবহাল আমাদের সমস্যাগুলো সম্বন্ধে।

আর সমস্যা নয়, এখন প্রয়োজন সমাধানের। সজাগ হবার। সাহসী হবার। আর এ সমাধানের নেতৃত্ব দেবেন আপনারা, আমরা হবো আপনাদের সহযাত্রী। গ্রহণ করবো সহযোগী নেতৃত্বের ভার। আমরা নেতৃত্ব দিতে জানি। আমাদের উপর আস্থা রাখতে পারেন অবিচল। আমাদেরকে জানুন। আমাদের আদর্শকে জানুন, আমাদের কৃত কর্মকাণ্ড এবং ভবিষ্যতে গ্রহণ করা হবে এমন কর্মপরিকল্পনার সাথে পরিচিত হোন। এখানে আমরা আমাদের রাজনৈতিক মতাদর্শকে আপনাদের সামনে তুলে ধরবো; জানাবো কেনো আপনারা আমাদেরকে সানন্দে বরণ করে নিতে পারেন সামনে থেকে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেবার জন্য।

আমাদের আদর্শ আর মূলনীতির ভিত্তি হিসেবে পালনীয় এবং ক্রিয়াশীল দর্শনগুলো হলো:
ক) কট্টর বাঙালি জাতীয়তাবাদ।
খ) অহিংসা।
গ) উচ্চশিক্ষা (সু এবং/বা স্বশিক্ষা)।
ঘ) প্রগতিশীলতা।
ঙ) ধর্মনিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গী।
চ) বিজ্ঞানমনস্কতা।
ছ) দুর্নীতিবিরোধী দৃষ্টিভঙ্গী।
জ) গণতন্ত্র ও সাম্যবাদ।
ঝ) প্রগতিশীল অর্থব্যবস্থা (ইসলামী-পুঁজিবাদী-সমাজতান্ত্রিক ভাবধারাপুষ্ট)।
ঞ) নারী-পুরুষ সমানাধিকার।
ট) পরম সহিষ্ণুতা এবং পরমত সহিষ্ণুতা।
ঠ) মানবতাবাদ ।
ড) গতি।
ঢ) সমবায়নির্ভর সমন্নিত কার্যক্রম।
ণ) কর্ম উদ্যোগ।


ক) কট্টর বাঙালি জাতীয়তাবাদ।
বাঙালি জাতীয়তাবাদ আমাদের প্রথম এবং প্রধানতম ভিত্তি। আমরা বাঙালি জাতীয়তাবাদের ধারক ও বাহক। হাজার বছর ধরে গড়ে ওঠা বাংলা ভূখণ্ডের মানুষের সংস্কৃতির ধারক আমরা বর্তমান বাংলাদেশে বসবাসকারী প্রতিটি জনগোষ্ঠীই বাঙালি। আমরা কট্টর বাঙালি জাতীয়তাবাদের আদর্শে দীক্ষিত। আমাদের আছে সমৃদ্ধ ইতিহাস, উন্নত সংস্কৃতি। দেশের মানুষের মধ্যে বাঙালি জাতীয়তাবাদের চেতনা জাগ্রত করবার পাশাপাশি আমরা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দেবো বাঙালির গৌরব গাথা। জাতীয়তাবাদের ক্ষেত্রে দ্বিধাবিভক্তির যেকোনো ধরনের রাজনীতি এবং অপপ্রয়াসকে আমরা রূখে দেবো আমাদের জাতীয়তাবাদী শক্তিকে কাজে লাগিয়ে; গায়ের জোরে নয়, তথাকথিত আন্দোলন-সংগ্রাম করে নয়, মানুষের দ্বারে দ্বারে যেয়ে বাঙালির মহত্ব গাথা শুনিয়ে জনগণকে জানানো হবে বাঙালি জাতীয়তাবাদের আদর্শ। যে বীরত্বপূর্ণ মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বীর বাঙালি বাংলাদেশকে স্বাধীন করেছে, সে স্বাধীনতার স্বাদকে পুরোদমে আস্বাদনের সব ধরনের ব্যবস্থা করবো আমরা স্বাধীন বাংলাদেশে জন্ম নেয়া বাঙালিরা। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ এবং স্বাধীনতাকে পূর্ণতা দান করবার ব্রত নিয়ে আমরা নতুন প্রজন্মের মুক্তিযোদ্ধা।

খ) অহিংসা।
আমরা অহিংস মানসিকতার। অহিংসা আমাদের অন্যতম ভিত্তি এবং প্রধানতম আদর্শ। আমরা সহিংসতার বিরুদ্ধে, যেকোনো ধরনের সহিংস কর্মকাণ্ডের ঘোর বিরোধী। আমাদের কর্মকাণ্ড অহিংস এবং আমরা শান্তিবাদী। আমরা বিনয়ী, সদালাপী। আমরা যেকোনো ধরনের প্রতিবাদের ভাষা হিসেবে কখনোই সহিংসতা প্রকাশ করবোনা। আমরা প্রতিবাদ জানাবো অহিংসভাবে; আমাদের মতামত স্পষ্টভাবে জনসম্মুখে তুলে ধরে সত্য এবং ন্যায়কে জনসম্মুখে প্রকাশ করা হবে, প্রচার করা হবে। আমরা বিশ্বাস করি যেকোনো কৃত কর্ম ফলাফল প্রদান করে এবং আমরা আমাদের কাজের মাধ্যমে আমাদের উদ্দেশ্য অর্জন করতে ত্বড়িতকর্মা। যেকোনো ধরনের সহিংস আচরণকে প্রতিরোধ করা হবে সম্মলিতিভাবে হাতে হাত ধরে একসাথে। সবচেয়ে বড়ো কথা, আমাদের উপর সহিংস আক্রমণ হলেও আমরা প্রত্যুত্তর হিসেবে সহিংসতা প্রকাশ করবোনা কখনো। আমরা কখনো হরতাল, অবরোধ করবোনা।

গ) উচ্চশিক্ষা (সু এবং/বা স্বশিক্ষা)।
শিক্ষা আমাদের আদর্শের আর একটি উল্লখেযোগ্য ভিত্তি। আমাদের রাজনৈতিক দলের নেতা কর্মীরা সবাই উচ্চশিক্ষিত এবং/বা স্ব স্ব ক্ষেত্রে দক্ষ এবং স্ব/সুশিক্ষিত। আমরা দেশে শিক্ষার প্রসারে বদ্ধপরিকর। আমাদের রাজনৈতিক দলের উদ্যোগে এবং রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত উদ্যোক্তা ব্যক্তিবর্গের সহায়তায় দেশের প্রতিটি উপজেলায় স্থাপন করা হবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ক্রমে প্রতিটি ইউনিয়নে এবং আরো পরে প্রতিটি ওয়ার্ডে আমরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করবো। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা প্রসারের জন্য এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বাইরে প্রতিটি গ্রামে বয়স্ক এবং নারী শিক্ষা এবং সচেতনতামূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা হবে। আমরা পড়ালেখাকে ছড়িয়ে দেবার জন্য এবং সবার জন্য শিক্ষার সুযোগকে উন্মুক্ত করবার জন্য গণগ্রন্থাগার স্থাপন করবো, পাশাপাশি বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের আদলে বই পড়ার সুযোগ করে দেবো সব বয়সী মানুষের জন্য। দলীয় খরচে আমরা আমাদের সম্ভাবনাময়, মেধাবী শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ভালো মানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উচ্চ শিক্ষা অর্জন করে দক্ষ জনশক্তি হিসেবে পরিণত করে দেশে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবার মতো জনগোষ্ঠীতে পরিণত করবার জন্য শিক্ষা বৃত্তি প্রদান করবো। আমরা যেকোনো ধরনের নিয়োগ প্রক্রিয়া এবং আত্মীকরণের ক্ষেত্রে উচ্চশিক্ষাকে প্রাধান্য দেবার পাশাপাশি কর্মদক্ষতা এবং ভালো ফলাফলের ভিত্তিতে সামগ্রিক পারঙ্গমতাকে বিশেষভাবে বিবেচনা করে থাকি।

ঘ) প্রগতিশীলতা।
আমরা প্রগতিশীল মানসিকতার। আমরা আলোকতি। যেকোনো ধরনের নেতিবাচক মানসিকতা, নেতিবাচক ভাবনা, নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের ঘোর বিরোধী আমরা। আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যেতে বদ্ধপরিকর। আমরা সবাইকে নিয়ে এগিয়ে যেতে চাই। আনতে চাই দেশ এবং দেশের জনগণের জন্য সোনালি সুদিন। আমরা দেশের মানুষকে প্রায়োগিক এবং লাভজনক খাতগুলো দেখিয়ে দিয়ে ক্ষুদ্র বা বৃহৎ উদ্যোগ গ্রহণে প্রয়োজনীয় মতামত, সুপারশি এবং সহযোগিতা প্রদান করি। আমরা মানুষকে দক্ষ কর্মীতে পরিণত করে থাকি। আমরা আমাদের সাধারণ জনগণকে শারীরকি ও মানসিক শ্রম প্রদান করে প্রয়োজনীয় পরিমাণ এবং ক্রমে উদ্বৃত্ত অর্থ উপার্জনের পথ বাতলে দিই, যেটি মানুষকে আত্মবিশ্বাসী করে তোলে, মানুষের শক্ত অর্থনৈতিক ভিত্তি গড়ে দেয়, অসৎ এবং দুর্নীতিপরায়ণ মানসিকতা থেকে সরে আসতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে এবং সমাজে সমতা প্রতিষ্ঠায় এবং সহমর্মিতা গঠনে সহযোগিতা প্রদান করে। আমাদের প্রগতিশীল কর্মকুশলতায় আমাদের দেশের কিশোর, যুব ও তরুণ সমাজকে মাদকাসক্তি, সহিংস আচরণ, বখাটপেনা, সময়ক্ষেপণ, ইভটিজিং এবং সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড থেকে সরে আসতে সবধরনের সহায়ক সহায়তা প্রদান করবো। মানুষকে সচেতন করবার জন্য আমাদের রাজনৈতিক দলে একটি বিশেষ উইং সক্রিয় ভূমিকা পালন করবে। আমরা কথা বলা, প্রচার প্রচারণার ক্ষেত্রে এবং/বা প্রসঙ্গক্রমে বিরোধী মনোভাব প্রকাশের ক্ষেত্রেও ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গী প্রদান করে থাকি। কোনো নেতিবাচক কর্মকাণ্ড বা সিদ্ধান্ত সম্বন্ধে মতামত প্রকাশের জন্য সরাসরি সেটিকে উড়িয়ে দিয়ে নেতিবাচক কথা বলে বা নেতিবাচক বিশেষণ ব্যবহার করে কর্তাকে তুলাধুনা না করে আমরা বিষয়টির প্রতি ইঙ্গিত প্রকাশপূর্বক ইতিবাচক কী ধরনের কর্মসূচী বা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যেতো সেটির প্রতি জোর দিই।

একটি উদাহরণ দিলে বিষয়টি পরিষ্কার হবে। সাধারণভাবে সরকারের একটি কাজের প্রতিবাদ হিসেবে আমাদের দেশে প্রচলতি নিয়মটি হলো সেটির প্রতিবাদ করা তীব্র ভাষায়। বলা হয়ে থাকে, “এ সরকার দুর্নীতিবাজ। ফ্যাসিবাদী সরকারের হত্যা-গুম-ধ্বংসের রাজনীতির কারণে দেশের মানুষের জান-মালের নিরাপত্তা নেই। মানুষ আজ পথে বের হতে পারছেনা, সহজভাবে স্বাভাবকি কাজ করতে পারছেনা। দেশে আজ বিভিষিকাময় পরিস্থিতি। দেশে চলছে প্রধানমন্ত্রীর একনায়কতন্ত্র। এ সরকারের ক্ষমতায় থাকবার অধিকার নেই, আমরা সরকারকে পদত্যাগের আহবান করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা অর্পণ করে নতুন নির্বাচনের জোর দাবী জানাচ্ছি; না হলে জনগণকে সাথে নিয়ে টেনে হিঁচড়ে ক্ষমতার গদি থেকে নামিয়ে আনবো আমরা। জনগণ আপনাদেরকে উৎখাত করবে। সেদিন আপনাদেরকে বাঁচানোর কেউ থাকবনো, আপনারা পালাবার পথ পাবেন না। সময় থাকতে জনগণের দাবি মেনে নিন।” যে অভিযোগগুলো করা হলো তার সিংহভাগই বর্তমান প্রেক্ষাপটে সত্য। আমরা বক্তব্য প্রদান করলে বলতাম, “দেশে বর্তমানে যে ধরনের দুর্নীতি, হত্যাকাণ্ড, গুম, আর জনগণের জান-মালের ক্ষতিসাধন হচ্ছে তা কখনোই কাম্য নয়। প্রতিটি জীবনের মূল্য আমাদের কাছে অপরিসীম। জনগণের জীবনের যেকোনো ধরনের সুরক্ষা দান করবার দায়িত্ব সরকারের। সরকারকে আহবান জানাই দ্রুত পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটানোর। আমরা বিরোধী দল হিসেবে আমাদের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিচ্ছি। জনগণকে জানাতে চাই, আপনারা সাহসী হোন, সাবধানী হোন, আমাদের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করুন। আমরা আপনাদের পাশে আছি। আমাদের হাতকে শক্ত করুন। আগামী নির্বাচনে আমরা আপনাদের মনোনয়ন পেয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন লাভ করে সরকার গঠন করে দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করবো।”

ঙ) ধর্মনিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গী।
‘মানুষের জীবনে ধর্মের ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ’ এ বিষয়টি আর সবার মতো আমরা সর্বাগ্রে বিশ্বাস করি। দেশে শান্তিপূর্ণভাবে এবং স্বাধীনভাবে নিজ নিজ ধর্ম পালনের সবধরনের ব্যবস্থা ও আয়োজন করে দেবার পক্ষে আমরা। আমরা ধর্মনিরপেক্ষ মানসিকতার এবং সব ধর্ম পালনের এবং প্রচারের ব্যবস্থা করে দেবো আমরা। ধর্ম সুরক্ষিত আছে এবং কেউ ধর্মের ক্ষতি করতে পারে বলে আমরা মনে করিনা। কারো কোনো ধরনের প্রচার বা অপপ্রচারে শঙ্কিত হবার কোনো কারণ নেই; নিজের বুদ্ধিমত্তা আর যুক্তিবোধকে জাগ্রত রাখুন আপনার যেকোনো ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণের র্পূবে। তারপরও যদি কারো কোনো ধরনের আশঙ্কা থাকে, আমরা বলতে চাই আপনাদের দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হতে হবেনা, প্রাতিষ্ঠানিকভাবে আপনাদের ধর্মের সুরক্ষা বিধানের দায়িত্ব আমাদের। যেকোনো ধরনের ধর্মীয় সহিংসতার বিরুদ্ধে আমরা। ধর্মীয় যে কোনো ধরনের উষ্কানির মাধ্যমে সহিংসতা বা হানাহানি করবার জন্য অস্থিতিশীল ও ভীতিকর পরস্থিতিরি জন্ম দেয়া হলে আমরা সেটিকে রুখে দেবো সম্মলিতি শান্তিপূর্ণ প্রতিরোধের মাধ্যমে। ধর্ম প্রেমের বাণী প্রচার করে। ধর্ম শান্তির কথা বলে। ধর্ম সঠিক পথ অনুসরণ করবার কথা বলে। ধর্ম সম্প্রীতি স্থাপনের কথা বলে। সব ধর্মে অন্য ধর্মকে শ্রদ্ধা করবার কথা বলা হয়েছে। বলা হয়েছে, “তোমার ধর্ম তোমার কাছে আমার ধর্ম আমার কাছে”। আপনারা যারা ধর্ম পালন করতে চান, নিশ্চিন্তে পালন করুন ধর্ম। ধর্ম পালন করতে যেয়ে মাঠে নামতে হবনো আপনাদের। ধর্ম চর্চা করুন আপনাদের মসজিদ, মন্দির, গির্জা, প্যাগোডা আর নিজ নিজ উপাসনালয়ে। রাজনৈতিক দল হিসেবে আপনাদের অধিকার আদায়ে আমরা মাঠে সক্রিয় আছি। আপনারা আপনাদের সমস্যাগুলো জানান আমাদের। আমরা সমাধান করবো আপনাদের সমস্যা।

চ) বিজ্ঞানমনস্কতা।
আমরা বিজ্ঞানমনস্ক। আমাদের রাজনৈতিক আদর্শ ও কর্মকাণ্ড বিজ্ঞানভত্তিকি। আমরা দেশের উন্নয়নে বিজ্ঞানের প্রয়োগকে সর্বোচ্চ মাত্রায় ব্যবহারের পক্ষপাতি। আমরা আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাকেও বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিনির্ভর করবার পক্ষে। দেশের উচ্চমাধ্যমিক শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা কার্যক্রমে কোনো আলাদা ভাগ না রেখে সবগুলো বিষয়কে অন্তর্ভুক্ত করে মানবকি, বাণজ্যি এবং বিজ্ঞান বিভাগগুলোকে একীভূত করে একটি সমন্নিত পাঠ্যক্রমের মাধ্যমে পাঠ দান করা হবে। উচ্চশিক্ষা এবং বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে কে কোন বিষয় নিয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে চায়। বিজ্ঞান বিষয়ে অধ্যয়ণকারী শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকদের উচ্চতর প্রশক্ষিণ এবং উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য উন্নত বিশ্বে বৃত্তির ব্যবস্থা করে তাদেরকে সেসব দেশে প্রেরণ করা হবে। আমরা আমাদের দলীয় কর্মকাণ্ডকে সহজ করবার জন্য প্রযুক্তির সংমশ্রিণ ঘটাবো আমাদের রাজনৈতিক দলের সাথে। প্রযুক্তি ব্যবহার করে নতুন নতুন আবিষ্কারকে উৎসাহ প্রদান করা হবে। বিশ্বের সমান্তরালে আমরা বাংলাদেশকেও এগিয়ে নেবো প্রযুক্তিখাতে। পাশাপাশি লাগসই এবং দেশিয় প্রযুক্তি ব্যবহার করে উদ্ভাবন করা হবে যেকোনো ধরনের কঠিন কাজকে সহজসাধ্য করবার জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি। দেশের প্রথিতযশা সম্ভাবনাময় এবং প্রতিষ্ঠিত বিজ্ঞানী এবং তাদের আবিষ্কারগুলোকে একত্রিত করা, প্রযুক্তিখাতে সহায়তা প্রদান আর অর্থসংস্থান করবো আমরা। কম্পিউটার, সফটওয়্যার, বিভিন্ন সফটওয়্যার এপ্লিকেশন, আইটি প্রভৃতি ক্ষেত্রে যুগান্তকারী গতিশীলতা আনবার জন্য সবধরনের সহযোগিতা প্রদান করা হবে আমাদের রাজনৈতিক দল থেকে এবং সরকার গঠন করলে এ খাতে প্রদান করা হবে সর্বোচ্চ প্রাধান্য। প্রতিটি স্তরে আমরা আমাদের জনগণকে প্রযুক্তির সাথে একীভূত করে গড়ে তুলতে চাই দক্ষ জনশক্তি হিসেবে, যাদের নিত্যসঙ্গী হবে উন্নত এবং লাগসই প্রযুক্তি। প্রসঙ্গক্রমে উল্লখ্যে যে, প্রযুক্তি এবং বিজ্ঞানকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব প্রদান করা হবে, তবে এটিও নিশ্চিত করা হচ্ছে, জ্ঞানের প্রতিটি শাখা আমাদের কাছে সমান গুরুত্বর্পূণ এবং বাণিজ্য এবং মানবিক বিষয়ের চর্চার ক্ষেত্রেও আমরা সমান গুরুত্ব প্রদান করবো।

ছ) দুর্নীতিবিরোধী দৃষ্টিভঙ্গী।
আমরা আমাদের কর্মকাণ্ডের প্রতিটি স্তরে যেকোনো ধরনের দুর্নীতিবিরোধী মানসিকতার। আমরা কঠোর পরিশ্রমী এবং কঠোর পরিশ্রম করে কাজের মাধ্যমে আমাদের যেকোনো উদ্দেশ্যকে আদায় করতে চাই। আমরা বিশ্বাস করি কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে কাজ এবং কাজের ফলাফল হিসেবে আমাদের লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব। এ কারণে কোনো কিছু অর্জনে দুর্নীতির আশ্রয় গ্রহণে আমরা কখনোই বিশ্বাস করিনা এবং এধরনের মানসিকতা আমাদের মননে জাগ্রত হয়না। পাশাপাশি আমাদের সবাই প্রয়োজনীয় পরিমাণ অর্থ উপার্জন এবং সংস্থান করতে সক্ষম এবং অন্যকেও অর্থ উপার্জনক্ষম করে গড়ে তুলতে বিশেষভাবে পারঙ্গম। এ জন্য দুর্নীতির যেকোনো ধরনের মানসিকতা আমাদের নেই এবং আমরা দুর্নীতি দূর করার ক্ষেত্রে উপযুক্ত মাধ্যম হিসেবে বিশেষ ভূমিকা পালন করতে সক্ষম। দুর্নীতি প্রবণতার কারণগুলো আমরা খুব ভালোভাবে ওয়াকিবহাল। আমরা দুর্নীতিগ্রস্ততার কারণগুলোকে ধরে ধরে সেগুলোর মূলোৎপাটন করবো। আমাদের জনগণের নিত্য চাহিদাগুলো পূরণের জন্য যে অর্থ স্বল্পতা এবং আত্মবিশ্বাস বা সামর্থ এর অভাবে কোনো কিছু অর্জন করবার ক্ষেত্রে যে অক্ষমতা বা ব্যর্থতা সেগুলোকে দূর করে দেবো আমরা। আমরা আত্মবিশ্বাস তৈরি করি প্রকৃত মেধা এবং শ্রমকে কাজে লাগিয়ে মেধা আর শ্রমের মূল্যায়ণ করবার মাধ্যমে। আমাদের সাথে সংশ্লিষ্টরা হবেন আথির্কভাবে স্বচ্ছল এবং আমরা আমাদের সবাইকে একে অপরের সাথে সম্পৃক্ত করে সমবায় বা সবার অংশগ্রহণে একের ক্ষতিকে দশের অংশগ্রহণের মাধ্যমে সমাধান করি। আর এভাবে আমরা যেমন দুর্নীতিগ্রস্ততার বাইরে, ঠিক একইভাবে সবাইকে অর্থনৈতিক এবং সামাজিকভাবে সমৃদ্ধ এবং আত্মবিশ্বাসী করে গড়ে তুলবার মাধ্যমে করা হবে দুর্নীতির মূলোৎপাটন।

জ) গণতন্ত্র ও সাম্যবাদ।
আমরা আমাদের সামগ্রিক কর্মকাণ্ড, কার্যক্রম, সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রভৃতি প্রতিটি ক্ষেত্রে শতভাগ গণতান্ত্রিক। আমাদের নেতৃত্ব নির্বাচন, দলীয় প্রধানসহ অন্যান্য পদে পদায়ন পুরোপুরি গণতান্ত্রিক এবং সর্বোচ্চ জনসর্মথনের ভিত্তিতে যেকোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হয়। প্রতিটি ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ গণসমর্থনের পাশাপাশি যেকোনো কর্মকাণ্ডে জনঅংশগ্রহণ শতভাগ নিশ্চিত করতে আমরা বদ্ধপরিকর। আমাদের দলীয় প্রধানসহ অন্যান্য পদের মেয়াদ চার বছর মেয়াদী এবং কোনো ব্যক্তি একই পদে পর পর দুই মেয়াদের বেশি না থাকবার বিধান রাখা হয়েছে আমাদের গঠনতন্ত্রে।

আমরা সাম্যবাদী। ‘সকলের জন্য সমতা’ আমাদের অন্যতম মূলনীতি। আমরা নারী-পুরুষ, ধনী-গরীব, উঁচু-নিচু, আশরাফ-আতরাফ, ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, শুদ্র, জাত-পাত, শিয়া-সুন্নী সবধরনের বিভেদ দূর করে মানবতা এবং সবার উপর মানুষ সত্য এই ধারনাকে প্রতিষ্ঠিত করবো। আমরা সবাইকে সমান সুবিধা প্রদান করবো। আমরা সবার জন্য সব ধরনের সুযোগসুবিধাকে সমানভাবে বন্টন করে সাম্যবাদ প্রতিষ্ঠা করবো।

আমরা যেমন গণতন্ত্রী আর সাম্যবাদী, তেমনিভাবে সমন্নিত জনমতের উপর আমাদের আস্থা এবং সমর্থন পুরোভাগে। একজন একজন করে সংগঠিত জনগণের প্রতিটি জনকে আমরা শ্রদ্ধা করি, বিশ্বাস করি। আমরা যেমন সমষ্টির উপর আস্থাশীল, ঠিক তেমনি আলাদা আলাদা প্রতিটি ব্যক্তিতেও আমাদের সমান আস্থা। গণতন্ত্রী হবার পাশাপাশি আমরা শিক্ষিত, সৎ, যুক্তিবাদী, অবিচল। আলাদা আলাদা করে সবার মান রাখার মাধ্যমেই আমরা সবার মান রাখবো, সবার চাওয়াগুলোকে পূর্ণতা দেবো। কথাটা এজন্য বলা হলো, সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের বাইরে যেয়ে ‘সূর্যের চারদিকে পৃথিবী আর অন্য গ্রহগুলো ঘূর্ণায়মান’ এমন মত প্রচার করতে যেয়ে খ্রিস্টপূর্ব সময়ে চার্চ, প্রশাসনসহ জনরোষে পড়তে হয়েছিল একজন এরিসটারকাসকে। দৃঢ়ভাবে বলতে চাই, আমরা যেমন জনমতকে প্রধান্য দেবো, একইভাবে প্রয়োজনবোধে একজন বা সংখ্যালঘিষ্ঠের যৌক্তিক, গ্রহণযোগ্য মতামতকেও গ্রহণ করবো আমরা।

ঝ) প্রগতিশীল অর্থব্যবস্থা (ইসলামী-পুঁজিবাদী-সমাজতান্ত্রিক ভাবধারাপুষ্ট)।
আমাদের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড এবং সামগ্রিক অর্থব্যবস্থা প্রয়োজনমাফিকভাবে ইসলামী-পুঁজিবাদী-সমাজতান্ত্রিক ভাবধারাপুষ্ট। অর্থনৈতিক মুক্তি এবং অর্থের সুষম বণ্টন ও জনগণকে প্রয়োজনীয় পরিমাণ অর্থ উপার্জনের সব ধরনের সুযোগ করে দেবো আমরা। আমাদের রাজনৈতিক ব্যয় নির্বাহের জন্যও আমাদের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে বেশ কিছু লাভজনক অর্থনৈতিক প্রকল্প। আমরা আমাদের উৎপাদন এবং লভ্যাংশ সঠিকভাবে ব্যবহার এবং বণ্টনের ক্ষেত্রে সবসময় স্বচ্ছতা এবং সুষম বণ্টনের বিষয়টির প্রতি প্রাধান্য দিয়ে থাকি। আমাদের অর্থব্যবস্থা পরিচালতি হয়ে থাকে ইসলামী-পুঁজিবাদী-সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থার আলোকে। পাশাপাশি আমরা অর্থনীতি এবং অর্থব্যবস্থা সর্ম্পকে প্রচলিত ভুল ধারনাগুলো দূর করবার ক্ষেত্রে সোচ্চার এবং অর্থনীতি সংশ্লিষ্ট প্রতিটি ব্যক্তিকে এ প্রচারণায় যুক্ত করতে নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছি।

তবে দৃঢ়ভাবে জানান দিতে চাই, আমরা ইসলামী মৌলবাদী নই, আমরা পুঁজিবাদী নই, আমরা সমাজতন্ত্রী নই। আমাদের এ তিনটি ভাবধারার যেকোনো একটির অনুসারী এধরনের মনে করবার প্রয়োজন নেই। কিংবা কারও এ ধরনের প্রচার চালাবারও দরকার নেই। আমরা জানাতে চাই বাংলাদেশের সামগ্রিক উন্নয়ন আমাদের লক্ষ্য; আর এক্ষেত্রে নতুন কোনো মতাদর্শের দল হিসেবে আমাদেরকে বিবেচনা করতে পারেন, যাদের উদ্দেশ্য বাংলাদেশের মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি এবং সমৃদ্ধ বাংলাদেশ। আর সেটি অর্জন করতে যে যে অর্থনৈতিক পন্থা অবলম্বন প্রয়োজন হবে, আমরা সেটিই গ্রহণ করবো।

ঞ) নারী-পুরুষ সমানাধিকার।
আমরা বাংলাদেশের জনগণ সর্বাগ্রে মানুষ এবং তারপর নারী, পুরুষ কিংবা উভলিঙ্গজন (হিজরা)। আমাদের দেশে আমরা নারী-পুরুষ-হিজরায় কোনো বিভাজন করিনা। আমরা সমানাধিকারে বিশ্বাস করি। আর দৃঢ়ভাবে জানাতে চাই মানুষের মর্যাদা প্রতিষ্ঠা আমাদের অন্যতম লক্ষ্য। আমাদের কাছে সমগ্র বাঙালির পাশাপাশি আলাদা আলাদাভাবে প্রতিটি জন সমান মর্যাদার এবং আলাদা আলাদাভাবে সবার সম্মান রক্ষা করবার ব্রত নিয়েছি আমরা। আমাদের সামগ্রিক কর্মকাণ্ড মানবতাকে এগিয়ে নেবার জন্য। আমাদের গৃহীত কর্মসূচী এবং আগামী কর্মকাণ্ডগুলোও মানুষ-জনকে করবে আত্মবিশ্বাসী, দেবে সমাজে সম্মানজনক অবস্থান। মানুষ হিসেবে আমাদের জনগোষ্ঠীকে তিনটি জিনিসে আমরা সমৃদ্ধ করে গড়ে তুলবো। প্রথমত, শিক্ষিত এবং উচ্চশিক্ষিত জনগোষ্ঠী তৈরি করে শিক্ষার প্রসার (কেবল পাঠ্য বইভত্তিকি শিক্ষা নয়, আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা সবার জন্য, সব বয়সীদের জন্য- প্রত্যক্ষ, ব্যবহারিক, প্রয়োগিক এবং লাগসই, আমরা হাতে কলমে সবাইকে শিক্ষা প্রদান করে শিক্ষিত করে তুলবো); দ্বিতীয়ত, অতিরক্তি ও উদ্বৃত্ত অর্থ উপার্জনের সুযোগ করে দেবার মাধ্যমে সমৃদ্ধ অর্থনীতি; তৃতীয়ত, বহুমুখী কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার মাধ্যমে মানুষকে কর্মঠ করে গড়ে তুলে সবধরনের কাজের উপযোগী কর্মক্ষম করে গড়ে তুলে সব কাজের প্রতি শ্রদ্ধাশীল একটি জনগোষ্ঠী। সমন্নিত ফল হিসেবে তীব্র আত্মবিশ্বাস, আত্মমর্যাদা ও আত্মসম্মান। আমাদের তাঁরাই সমাজে নারী পুরুষে সমানাধিকার প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে আসবেন সর্বাগ্রে, পাশে থাকবো আমরা।

ট) পরম সহিষ্ণুতা, পরমত সহিষ্ণুতা।
আমরা কঠোরভাবে সহিষ্ণু এবং পরমতসহিষ্ণু। আমাদের যেকোনো সিদ্ধান্ত এবং কর্মকাণ্ড গভীর চিন্তার প্রকাশ এবং প্রতিটি ক্ষেত্রে আমরা যথেষ্ঠ সময় প্রদান করে ধৈর্য ধারন করে কাজ করে থাকি। আমাদের সবাই পরম সহিষ্ণুতার অধিকারী এবং ধীর-স্থিরভাবে আমরা সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে বদ্ধপরিকর। অন্যমত বা ভিন্নমতকে আমরা শ্রদ্ধা করি। গ্রহণযোগ্য, যৌক্তিক এবং ভালো ফলাফল অর্জন করবার মতো হলে যেকোনো মতকে আমরা গ্রহণ করি অবলীলায়। এমনকি আমাদের বিরোধী দল থেকে কোনো প্রস্তাবনা এলে এবং গ্রহণযোগ্য ও যুগোপযোগী হলে আমরা সেটিকেও গ্রহণ করি অবলীলায়। আমরা সকলের মতকে শ্রদ্ধা করি। লক্ষ্য হাসিল আর উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য প্রতিটি মতকে আমরা গ্রহণ করবো, বিবেচনা করবো এবং এগুলোকে সমন্নিত করে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য একটি বা প্রয়োজনে সবগুলো মতকে আমরা কাজে লাগাবো। আমাদের ভুল কোনো সিদ্ধান্ত বা দুর্বল সিদ্ধান্তের বিপরীতে যেকোনো পরামর্শ বা আমাদের গৃহীত সিদ্ধান্তের চেয়ে আরো উন্নত কোনো পরামর্শ এলে আমরা সানন্দে ভুল সংশোধন করে সেটিকে গ্রহণ করি। আপনাদের উপর আমাদের আস্থা রয়েছে শতভাগ। তবে এটিও বলতে চাই, আমাদের গৃহীত সিদ্ধান্ত এবং কাজের উপর আস্থা রাখতে পারেন আপনারা এবং আমরা যুগোপযোগী নেতৃত্ব আপনাদের উপহার দিতে সক্ষম হবো, এ আত্মবিশ্বাস রয়েছে আমাদের। আর এ আত্মবিশ্বাসের মূল ভিত্তিই হচ্ছেন আপনারা। আপনাদেরকে পেয়েই আমরা বাংলাদেশের জাগ্রত জনতা।

ঠ) মানবতাবাদ।
আমরা অনেক বেশি মানবিক। মানুষের মর্যাদা আমাদের কাছে সর্বাগ্রে। একক এবং সামষ্টিক প্রতিটি ক্ষেত্রে আমরা সবার প্রাপ্য সম্মান প্রদান করতে এবং সেটিকে চির জাগরুক রাখতে বদ্ধপরিকর। আমরা অহিংস নীতির। আমরা শান্তিবাদী। আমাদের অন্যতম লক্ষ্য দেশ এবং বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা। আমরা আমাদের দেশের প্রতিটি মানুষের অধিকার আদায়ে সদা সোচ্চার। বাঙালি জাতীয়তাবাদের ধারক হিসেবে আমরা বিশ্বে বাঙালির গৌরবকে প্রতিষ্ঠিত করবো, বাঙালি স্বকীয়তাকে বিশ্বে ছড়িয়ে দিয়ে। আমরা বাঙালির গৌরব, সাহসীকতা, অর্জন আর সুদীর্ঘ বীরত্বপূর্ণ গৌরবদীপ্ত ইতিহাস আর সংস্কৃতির জন্য গর্বিত, অহংকারী। এর সাথে সাথে আমরা বিনয়ী। আমরা নম্র। আমরা সৎ, আমরা সাহসী, আমরা আত্মবিশ্বাসী, আমরা আত্মসম্মানী। আর এটাই আমাদের বাঙালি জাতীয়তাবাদের অলঙ্কার। আমাদের শৌর্য-বীর্য, সাহস, শক্তির সাথে সাথে সততা, ধৈর্য, বিনয় আমাদেরকে বানিয়েছে মানব কল্যাণী আর মানবতাবাদী হিসেবে বিশ্বের বুকে অনন্য এক জাতি হিসেবে।

আমরা রাজনীতির মঞ্চে এসেছি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে। আমরা রাজনীতি করতে এসেছি বাঙালির গৌরব এবং ঐতিহ্যকে পুরো বিশ্বে ছড়িয়ে দিতে। আমরা চাই বাংলাদেশের মানুষের সমৃদ্ধি, চাই বাংলাদেশের শক্ত অর্থনৈতিক ভিত্তি। আমরা আমাদের দেশের মানুষের মানবিকতাবোধ এবং মানবিক গুণাবলী নিয়ে গর্ব করি। আমাদের দেশের মানুষের আতিথেয়তা, অতিথিপরায়ণতা, বন্ধুসুলভ আচরণ আর মানসিকতা, অন্যের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবার প্রবণতা, নিজের ভালর আগে অন্যের ভালর জন্য এগিয়ে যাওয়া, এমনকি নিজের ভালর সম্ভাবনা ত্যাগ করে অন্যের জন্য সহযোগিতা এবং সেবার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার মানসিকতা বিশ্বে অনন্য। আমাদের আছে প্রত্যক্ষ উদাহরণ: ‘আমাদের দেশে বন্যা, ঝড়, জলোচ্ছাশ, ঘূর্ণিঝড় বা সিডর, আইলার মতো নিম্নচাপজনিত মহাদুর্যোগ, লঞ্চডুবি বা সড়ক বা রেল পথে দুর্ঘটনা, রানা প্লাজার ধ্বংসযজ্ঞের মতো দুর্যোগ/দুর্ঘটনা’ - সবখানে এগিয়ে গেছে আমাদের দেশের মানুষগুলো। যাদেরকে আর সবাই বলে সাধারণ জনগণ বা জনসাধারণ। আমরা বলি, ‘জাগ্রত জনতা’। বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ এ মানবিক গুণগুলো ধারন করে। আমাদের শেখার জায়গা আমাদের জনগণ। আমাদের জনগণের কাছ থেকে আমরা এটাই শিখেছি। আমরা এ মানবকিতাটাকেই ধারন করি।

বর্তমান বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে বিদ্যমান যুদ্ধাবস্থা, একতার অভাব, জাতিবিদ্বেষ, অস্থিতিশীলতা, আন্তঃদেশীয় বা আন্তঃমহাদেশীয় যুদ্ধ-বিগ্রহ, শক্তিশালী রাষ্ট্র কর্তৃক দুর্বল রাষ্ট্রের উপর আরোপিত বিভিন্ন অনাচার এবং আক্রমণ, বড়, অর্থনৈতিকভাবে, সামরিক এবং যুদ্ধাস্ত্রের দিক থেকে শক্তিশালী রাষ্ট্র কর্তৃক পিছিয়ে থাকা রাষ্ট্রগুলোর উপর দাদাগিরি, কোনো কোনো অঞ্চলে কট্টর মৌলবাদী মানসিকতা এবং এর ফলশ্রুতিতে বিভিন্ন ধরনের বিচ্ছিন্নতাবাদী, উগ্রগোষ্ঠীর জন্ম ও তাদের সন্ত্রাসী এবং জননিরাপত্তাহানিকর কার্যক্রম, অস্ত্রের ঝনঝনানি, আরববিশ্বের অস্থিতিশীলতা, সিরিয়ার একনায়কতন্ত্র, আফ্রিকার মিশর, বা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর রাজনীতিতে সামরিক বাহিনীর তৎপরতা, পূর্ব এশিয়ায় চীন, জাপান, দুই কোরিয়া এবং আমেরিকার মধ্যকার তৈরি বৈরি সামরিক-অর্থনৈতিক সম্পর্ক, মধ্যপ্রাচ্য, আফগানিস্তান বা দক্ষিণ আফ্রিকার উগ্র মৌলবাদী গোষ্ঠী, লাতিন আমেরিকার মাদক বাণিজ্য বা সন্ত্রাসী গোষ্ঠী, ইসরায়েল-ফিলিস্তিন এ চলমান মানবিক বিপর্যয়, ইরাক, লিবিয়া, সিরিয়ার প্রায় পঙ্গু বর্তমান আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক অবস্থা, আমেরিকা বা ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিশ্বব্যাপী সামরকি ও অর্থনৈতিক হস্তক্ষেপ পুরো বিশ্বে মানবিক বিপর্যয় এবং মানবিকতার অভাবকে নির্দেশ করছে প্রকটভাবে। আমাদের ভারতীয় উপমহাদেশ বা দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক রাজনীতিতে আফগানিস্তানে বিদ্যমান কট্টর মৌলবাদী শক্তির উত্থানজনিত কারণে সৃষ্ট তালেবান, সাধারণ আফগান এবং আমেরিকা এবং মিত্র দেশসমূহের বহুমুখী অংশগ্রহণে বিদ্যমান এবং চলমান অস্থিতিশীলতা, পাকিস্তানের জাতিগত বিদ্বেষ, ধর্মীয় অস্থিতিশীলতা, কাশ্মির সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান-চীন সীমান্ত বিরোধ, ভারতের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, শ্রীলঙ্কার তামিল সমস্যা, নেপালের মাওবাদী আন্দোলনজনিত অস্থিতিশীলতা, মায়ানমারের সামরিক জান্তা বা সাম্প্রতিক সময়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধ জনগোষ্ঠী কর্তৃক সংখ্যালঘু মুসলমানদের উপর সহিংসতা বা মায়ানমার সামরিক বা সরকারি বাহিনী কর্তৃক মায়ানমারের সাধারণ জনগণের উপর নির্যাতন, আরাকানী জনগোষ্ঠীর উপর আক্রমণ এবং ফল হিসেবে বাংলাদেশ সীমান্তে উদ্বাস্তু সমস্যা বিশ্বব্যাপী মানবিক বিপর্যয়কে মনে করিয়ে দেয়।

আমরা, বাংলাদেশের বাঙালিরা অনেক এবং অনেক ভালো আছি আমাদের সমান্তরাল বিশ্বের তুলনায়। আমরা উল্লিখিত মানবিক বিপর্যয়গুলোর একটিও অনুভব করছিনা, আমরা অস্থিতিশীল বিশ্বের রাজনৈতিক কোন্দলের বাইরে অনেক ভালো আছি। আমরা একত্রিত থাকলে, আমরা একতাবদ্ধ হলে, আমরা দেশের মঙ্গল প্রত্যাশা করলে, আমরা আমাদের নিজেদের এবং আমাদের সবার সমৃদ্ধ আগামী আনতে চাইলে, আমাদের উপর আস্থা অর্জন করে আত্মবিশ্বাসী হতে পারলে আমরা আমাদেরকে নেতৃত্ব দেবার পাশাপাশি বিশ্বের বুকে আমাদের পুরনো অবস্থানকে ফিরিয়ে আনতে পারবো, পারবো বিশ্বকে নেতৃত্ব দিতে। পারবো অস্থিতিশীল বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে।

তবে! সবকিছুর মাঝখানে মনে করিয়ে দিতে চাই। দৃঢ়ভাবে বলছি, আমরা আত্মতুষ্টিতে ভুগছিনা। আমরা আমাদের বর্তমান সম্বন্ধে ওয়াকিবহাল। আমাদেরও সমস্যা আছে, আমরাও আমাদের নিজেদের মধ্যে মারামারি, হানাহানি করছি। এখানে ঘটছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং রাজনৈতিক জনসভায় অমানবিক বোমা হামলা, কোথাও কোথাও সিরিজ বোমা হামলা এবং ফল হিসেবে করুণ মৃত্যু আর হতাহতের ঘটনা, রক্তপাত। মৌলবাদী এবং ধর্মভিত্তিকি রাজনীতির নামে বোমাবাজি এবং জননিরাপত্তা হানিকর পরিকল্পিত বিচ্ছিন্ন আক্রমণ। ঘটছে অপহরণ, হত্যা, খুন, গুম, লুটতরাজ। চলছে প্রতিহিংসার রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজনীতি। প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে অর্থনৈতিক দুর্নীতি এবং অর্থ ও পণ্যের অবৈধ লেনদেন। বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে দেশের নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের অন্যায় কার্যক্রম বা অন্যায়ভাবে অযাচিত ও অবৈধ শক্তির প্রয়োগ। দৃঢ়ভাবে কাজ করছে হঠকারিতা, অন্যকে ঠকানো, প্রায় প্রতিটি পণ্যের বাণিজ্য এবং বিপণনে নকল, ক্ষতিকর, ভেজাল বা জাল পণ্যের বহুল মিশ্রণ আর ব্যবহার। জীবনযাপনের প্রতিটি ক্ষেত্রে চলছে অস্থিতিশীলতা, ভীতি, নিরাপত্তাহীনতা, ঝুঁকি, সংকোচ।

সবাইকে জানাতে চাই, বর্তমানের এ অনিয়মগুলোকে দূর করে আমাদের প্রাণের বাংলাদেশ পুনর্গঠনের জন্যই আমরা রাজনীতি করতে এসেছি। আমরা পারবো। আপনার কাজ আমাদের উপর আস্থা স্থাপন।

ড) গতি।
বাংলাদেশ জাগ্রত জনতা, এর সাথে সম্পৃক্ত প্রতিটি নেতা-নেত্রী, কর্মী, সংগঠক, সমর্থক চূড়ান্ত মাত্রায় দ্রুতগতিসম্পন্ন। আমরা দ্রুতগতিতে হাঁটি, যে গতিতে হাঁটেন আমাদের পোশাক কর্মীরা। গতি আমাদের চলার কৌশল। তবে আমরা তাড়াহুড়ো করিনা। আমরা জানি এবং বিশ্বাস করি, “স্লো এন্ড স্টিডি উইনস দ্যা রেস”। আমরা এসেছি, জয় করতে, সফল হতে, দীর্ঘমেয়াদী লাগসই প্রতিস্থাপন দাঁড় করাতে।

ঢ) সমবায়নির্ভর সমন্নিত কার্যক্রম।
আমরা আমাদের প্রতিটি কাজের ক্ষেত্রে সমবায় বা দলনির্ভর। আমরা যেকোনো কাজ করি দলীয়ভাবে। আমরা একের বোঝা বহন করি দশজন মিলে। জাগ্রত জনতার অন্যতম ভিত্তি সব্বাইকে একত্রিত করে সমবায়নির্ভর কার্যক্রম, সম্মিলিত অংশগ্রহণ এবং সমন্নিত কার্যক্রম।

ণ) কর্ম উদ্যোগ।
বিভিন্ন ধরনের কর্ম উদ্যোগ এর সূচনাকে বাংলাদেশ জাগ্রত জনতার আর একটি স্তম্ভ বা পরিচয় হিসেবে উল্লেখ করা যেতে পারে। আমরা বিশ্বাস করি কাজ, কাজ এবং কাজ এ । আর আমাদের কাজের ক্ষেত্র হিসেবে আমরা সময়ে সময়ে নিজেদের সরাসরি অংশগ্রহণে, অন্য আর সবাইকে সম্পৃক্ত করার মাধ্যমে বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করে থাকি। পাশাপাশি, শুরু করবার জন্য আগ্রহী সবাইকে এবং অন্যান্যদের মাঝে আগ্রহ তৈরি করে বিভিন্ন প্রকল্প শুরু এবং বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান করে থাকি। আমাদের চলমান এবং ভবিষ্যতে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পগুলোর মধ্যে আছে ‘মশলা চাষ প্রকল্প’, ‘গবাদি পশু (গরু, মহিষ, ছাগল) লালন পালন, দুধ এবং দুধজাত পণ্য উৎপাদন’, ‘ধানের তুষের তেল উৎপাদন’, ‘মাছ চাষ’, ‘মুরগি পালন এবং ডিম উৎপাদন’, ‘কৃষি’, ‘চা চাষ’, ‘বিশুদ্ধ পানি’, ‘বাঁশ-বেত চাষ এবং বাঁশ- বেতজাত পণ্য তৈরি’, ‘পাট চাষ এবং পাটজাত পণ্যদ্রব্য তৈরি’, ‘কাগজ উৎপাদন, কাগজের বাক্স এবং অন্যান্য উপকরণ তৈরি’, ‘বিভিন্ন শিল্প উপকরণের কাঁচামাল এবং শিল্প উপকরণ নির্মাণ/উৎপাদন’, ‘কাঠের বিভিন্ন শিল্পপণ্য, বিভিন্ন ধরনের আসবাবপত্র নির্মাণ’, ‘গ্রামীণ নারীদের মাধ্যমে নকশীকাঁথা, বিভিন্ন ধরনের হস্তশিল্প, কারুপণ্য এবং পোষাক তৈরি’, ‘উৎপাদিত পণ্যের বিপণন, খাবার দোকান, বিভিন্ন খাদ্য পণ্য বিপণন, চেইন ও সুপার শপ স্থাপন’, ‘বিভিন্ন ধরনের শিল্প ও কলকারখানা’, ‘বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা’, ‘ব্যাংক’, ‘বীমা’, ‘পরিবহন বাণিজ্য’, ‘শিক্ষা’, ‘হেরিটেজ সচেতনতা কার্যক্রম’, ‘পর্যটন’, প্রভৃতি প্রকল্প। সবগুলো উদ্যোগ একাধকি মানুষ-জন সহযোগে সমবায়নির্ভর; আর আমাদের এ প্রকল্পগুলোর প্রধানতম লক্ষ্য প্রান্তিক, স্বল্প আয় এবং নিম্ন জীবন যাত্রার মানুষের অর্থনৈতিক শক্ত ভিত্তি তৈরি করা। পাশাপাশি সবার অংশগ্রহণকে নিশ্চিত করে আমাদের বর্তমান সমাজের আর্থ-সামাজিক অবস্থার আমূল পরিবর্তন ঘটানো। এ প্রকল্পগুলোতে একসাথে অনেকগুলো মানুষ, অনেকগুলো পরিবার সম্পৃক্ত হয়ে একদিকে ব্যক্তিগত উপার্জনকে নিরাপদ এবং বৃদ্ধি করে, অন্যদিকে পরিবারগুলোকে করে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ এবং দারিদ্র্য বিমোচন। আমাদের গৃহীত এধরনের উদ্যোগ ও প্রকল্পগুলো দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার আমূল পরিবর্তন আনতে সক্ষম (আমাদের অন্য কিস্তির লেখায় এধরনের উদ্যোগ এবং এর মাধ্যমে কৃত পরিবর্তন এবং বিকাশের বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে)।

সবশেষে বলতে চাই, বর্তমানের বেশিরভাগ ‘কথা সর্বস্ব রাজনৈতিক দল’ এর মতো শুধু কথা শোনাবার জন্য আমরা রাজনীতি করতে আসিনি। ২০১৭ সালে আমাদের আত্মপ্রকাশ ঘটবে সারম্বরে। আমরা প্রস্তুত হচ্ছি। আমরা আমাদের প্রচারণা চালাচ্ছি। আমরা আপনাদেরকে প্রস্তুত করছি। আমরা আমাদের জানান দিচ্ছি আপনাদের সামনে। সাথে শিখছি। আমাদের বিজয় সুনিশ্চিত। আপনাদের পাশে পথ চলার সঙ্গী হয়ে আমরা সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলব। বিশ্বের বুকে আমরা হবো গর্বিত। ‘সমৃদ্ধ বাংলাদেশ’ এর জাগ্রত জনতা হিসেবে।

জয় বাংলা।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে জুন, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:২৬

হিমরাজ ব্লগ বলেছেন: অনবধানবশত কিছু বানান এ ভুল থাকতে পারে। ভুল বানানের জন্য আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি। আমাদেরকে জানুন। আমাদের সাথে যোগ দিন।

বিজয় সুনিশ্চিত। জয় বাংলা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.