![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বাংলাদেশ। বিশ্বের ইতিহাসে সর্বশ্রেষ্ঠ জাতি হিসেবে খ্যাত বাঙালি জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত দেশ আমাদের বাংলাদেশ। এদেশটি আপনার, আমার, আমাদের সকলের। আর আমরা; এদেশের বাঙালিরা, প্রতিনিধিত্ব করছি বিশ্বে অনন্য সুজলা, সুফলা, শস্য, শ্যামলা রাজসিক এ দেশটিকে। সমাজবদ্ধ জীবন যাপনের ধারাবাহিকতায় নগরসভ্যতা বিকাশের সাথে সাথে নগর-রাজ্য-রাষ্ট্র, নেতা-নেতৃত্ব, নাগরিক-শাসক, রাজা-প্রজা প্রভৃতির পত্তন এবং ক্রমে ক্রমে রাষ্ট্র ব্যবস্থা জটিল থেকে জটিলতর হবার সাথে সাথে সঠিকভাবে রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য গ্রাম থেকে ক্রমে নগরসভ্যতা পত্তনের ধারাবাহিকতাতেই রাজনীতির সূত্রপাত, উদ্ভব ও বিকাশ। বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের নগরায়ণ এবং নগরসভ্যতার সমান্তরালে থেকে কয়েক হাজার বছর আগেই আমরা আমাদের নগরসভ্যতার সূচনা করেছি, যার হাত ধরে আমাদের দেশে আমরা আমাদের উন্নত রাজনীতির চর্চার পাশাপাশি দেশে-বিদেশে আমাদের প্রভাব বলয় সফলভাবে স্থাপন করতে পেরেছি দ্রুততা, দক্ষতা, সাহসিকতা এবং রাজসিক মানসিকতা ও মনোবল নিয়ে। আমরা খিস্টপূর্ব সময়ে (খ্রি.পূ. ৪৫০-খ্রি.পূ. ১৫০) বর্তমান নরসিংদী জেলায় অবস্থিত প্রাচীন ‘উয়ারী-বটেশ্বর (প্রাচীন গঙ্গাঋদ্ধি বা গঙ্গারিডাই)’ নামক দুর্গ এবং বাণিজ্য নগরী, বর্তমান বগুড়া জেলায় অবস্থিত ‘মহাস্থানগড় বা পূ-্রনগরী’ নামে খ্যাত দুর্গ এবং বাণিজ্য নগরী এবং বর্তমান পঞ্চগড় জেলায় অবস্থিত ভারতীয় উপমহাদেশের সর্ববৃহৎ দুর্গনগরী ‘ভিতরগড়’ এর নির্মাণ করে ভারতীয় উপমহাদেশসহ পূর্ব এশিয়া এবং রোমান সা¤্রাজ্যের সাথে বাণিজ্য সম্পর্ক স্থাপন করেছিলাম। প্রাচীন বাংলাদেশের একাংশ গঙ্গারিডাই এর বীরত্বগাঁথা এবং বিশাল হস্তীবাহিনীর ভয়ে ভীত হয়ে খ্রীস্টপূর্ব সময়েই আলেকজান্ডার তার শক্তিশালী বাহিনী নিয়ে প্রাচীন ভারতের এ অংশে অভিযান পরিচালনা করবার সাহস প্রদর্শন করেন নি। সৈন্যদের প্রবল বাধার মুখে নিজ সা¤্রাজ্যে ফিরে যাবার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিলেন উল্টো পথে। খ্রিস্টপূর্ব সময়কাল থেকে শুধু রাজনীতির রাজকীয় চর্চা নয়, খ্রিস্টিয় সাত থেকে নয় শতক এবং আরো পরে এগারো শতক পর্যন্ত সময়ে আমরা বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গের বরেন্দ্র, পূ-্র অঞ্চল, পূর্ববঙ্গের সমতট অঞ্চল, দক্ষিণ এবং মধ্যবঙ্গের বঙ্গ অঞ্চলে শিক্ষা, জ্ঞান-বিজ্ঞান-দর্শন, চিকিৎসা, শাস্ত্র প্রভৃতি চর্চার জন্য গড়ে তুলেছি আবাসিক সুবিধাসম্বলিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ‘বিহার’ বা পৃথিবীর সর্বপ্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। এমনকি দূরবর্তী অঞ্চল ভারতের বর্তমান বিহার প্রদেশ এবং সন্নিহিত অঞ্চলে নালন্দাসহ বেশ কিছু বিহার স্থাপন করা হয় বাঙালি পাল শাসকদের পৃষ্ঠপোষকতায়। আমাদের দেশের প-িত অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান, শীলভদ্র প্রমুখ দেশের গ-ি পেরিয়ে সুদূর নেপাল, তিব্বত, চীন দেশে ছড়িয়েছেন জ্ঞানের আলো; যেখানে চীন প্রসঙ্গে উল্লেখ করতে যেয়ে ইসলাম ধর্মের প্রচারক মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) পর্যন্ত উল্লেখ করেছেন, “জ্ঞানার্জনের জন্য প্রয়োজনে সুদূর চীন দেশে যাও”।
আত্মপরিচয় দেবার শুরুতে আমাদের আর একটি দিকের উল্লেখ করতে চাই। আর সেটা হলো জাতি হিসেবে আমাদের পরিচয়। বেশির ভাগ মানুষ এবং অনেক গবেষক আমাদের পরিচয় প্রদান করার ক্ষেত্রে উল্লেখ করেন, আমরা জাতি হিসেবে সংকর। আমাদের পরিচিতি তাদের কাছে সংকর জাতি হিসাবে। আমরা প্রত্যাখান করি সে ধরনের দাবি। আমরা বাঙালি জাতি। যে বাঙালিরা নদীবহুল বাংলাদেশের অনুকূল ভৌগোলিক অবস্থান, উর্বর ভূমি আর সমৃদ্ধ প্রাকৃতিক সম্পদকে কাজে লাগিয়ে এদেশে সোনা ফলাতো সুপ্রাচীনকাল থেকেই। আমাদের ধান, আমাদের সোনালী আঁশ, আমাদের রেশম, আমাদের মসলিন, আমাদের জামদানি একদিকে যেমন আমাদের শক্ত অর্থনৈতিক ভিত্তি দিয়েছিল তেমনি সে শক্ত অর্থনীতির হাত ধরেই আমাদের গ্রামীণ কৃষি সমাজ, আমাদের গ্রামীণ উৎসব-পার্বন, আমাদের নগর, নাগরিক উৎসব-পার্বন, আমাদের নাগরিক কোলাহল আর সামগ্রিক সাংস্কৃতিক আবহ তৈরি হয়েছিল, যার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছিল বিশ্বময়। আমাদের সেসব সম্পদ আর সংস্কৃতিকে আবিষ্কার, অনুসন্ধান আর অর্জন করবার জন্যই সারা বিশ্ব থেকে মানুষ ছুটে এসছে আমাদের পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, ব্রহ্মপুত্র, শীতলক্ষা, ইছামতি বিধৌত বঙ্গভূমিতে। কখেনো সুদূর রোম থেকে বণিক, পরিব্রাজকরা, কখনো চৈনিক, মোঙ্গল, হুণ সম্প্রদায়, কখনো ভারতের অন্যান্য অংশের মৌর্য-গুপ্ত, কখনো শুঙ্গ, কুষাণ বা সেন আবার কখনো মধ্যপ্রাচ্য থেকে মুগল-আফগান-পাঠানরা, আবার কখনো ইউরোপ থেকে পর্তুগীজ, ডাচ কিংবা ইংরেজরা। সবশেষে পাকি বর্বররা। কেবল ইংরেজ আর পাকিস্তানিরা ছাড়া আর সবাই আমাদের আলো হাওয়ায় আর সমৃদ্ধ অর্থনীতি আর সংস্কৃতির মোহে আমাদের সংস্কৃতিকে আঁকড়ে ধরে থেকে গিয়েছিল এখানে। সংস্কৃতি তার আপন নিয়মেই নিজের আলো ছড়িয়ে অন্যকে সমৃদ্ধ করে, পাশাপাশি চারপাশের সংস্কৃতিকে নিজের সাথে মিথস্ক্রিয়া ঘটিয়ে নিজেকে সমৃদ্ধ করে নেয়। এখানে যারাই এসেছে, যারাই আমাদের সাথে মিশেছে, শুরু থেকেই আমাদের বৃহত্তর বাঙালি জনগোষ্ঠীর সাথে সংমিশ্রিত হয়ে আর সবাইকেও বাঙালি করে তুলেছে। অন্যদিকে ইংরেজ বা পাকিস্তানিরা আমাদের সম্পদ ভোগ করবার জন্য এখান থেকে যতভাবে সম্ভব আমাদের সম্পদ পাচার করেছে তাদের দেশে। আমাদের সম্পদ আমাদের সংস্কৃতির ভাগ। এ সম্পদ লুণ্ঠন করে বরং তাদের জাতীয়তাবাদ সংকর রূপ পরিগ্রহ করেছে, আমরা নই। আমরা শুরুতে বাঙালি ছিলাম, আজো বাঙালি আছি, অনন্তকাল বাঙালি থাকবো। বরং পশ্চিমা বিশ্বের দিকে তাকালে, আমেরিকা, কানাডা, ইউরোপ, আফ্রিকা বা অস্ট্রেলিয়ার দিকে তাকালে বোঝা যায়, কারা সংকর আর কারা নিজেদের স্বকীয়তাকে ধরে রেখেছে আজবধি।
সমৃদ্ধ সংস্কৃতি আর উন্নত জ্ঞান বিজ্ঞানের চর্চার কেন্দ্র আমাদের এ বঙ্গভূমি এভাবেই বিশ্বে অনন্য এবং আমাদের মাথাকে সবসময়ের জন্য করেছে চির উন্নত; যার প্রতিফলন ঘটেছিল ৭১ এ আমাদের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধেও। আমাদের জাতীয় কবির ভাষায় বলতে হয় ‘চির উন্নত মম শির’। প্রাচীন রাজনীতির মতই বর্তমান বাংলাদেশের রাজনীতির সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়ে আছে রাজকীয় কর্মযজ্ঞ। ‘বাংলাদেশ জাগ্রত জনতা’ বাংলাদেশের জন্য আপনাদেরকে সঙ্গে নিয়ে রাজনীতি করবে সে বিশাল কর্মযজ্ঞ সম্পাদনের জন্যই। সময়ের ধারাবাহিকতায় প্রাচীনকালের সমৃদ্ধ ঐতিহ্য এবং সমৃদ্ধ অর্থনৈতিক অবস্থা থেকে বর্তমান সময়ে সাময়িকভাবে অনেকটা পিছিয়ে পড়া আমাদের গর্বের বাংলাদেশের কল্যাণের জন্য, দেশটাকে অর্থনৈতিক এবং শিক্ষাগত দিক থেকে এগিয়ে নেবার জন্য, নৈতিকতার চর্চাকে প্রখর করবার জন্য, দেশের জনসাধারণ এবং প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরো গতিশীল এবং অনেক দূর এগিয়ে নেবার লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট রূপরেখা প্রদান করবার জন্য বাংলাদেশ জাগ্রত জনতার রাজনীতির মঞ্চে অধিষ্ঠান।
বাংলাদেশের শক্তি এদেশের মেহনতি জনগণ। শক্তিশালী এ জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণে মেহনতি জনগণকে নেতৃত্ব প্রদানের জন্য বাংলাদেশ জাগ্রত জনতার আগমন আপনাদের সামনে। বাংলাদেশের শক্তি এবং প্রেরণা আমাদের নারীরা, যারা একাধারে মাতা, কন্যা, সহধর্মিণী, ভগ্নী এবং অন্যান্য বহুমুখী প্রতিভা এবং ভূমিকায় একদিকে আমাদের প্রেরণা দান করে, অন্যদিকে নিজ দায়িত্বে ঘরে-বাইরে দক্ষ হাতে গ্রহণ করে সেসব পরিচালনার ভার। আমরা আমাদের সেইসব জাগ্রত নারীর কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। বাংলাদেশের ক্ষেতে খামারে কঠোর পরিশ্রম করে সবুজ সোনালী শস্য ফলিয়ে দেশের মানুষের অন্নসংস্থান আর অর্থকরী ফসল উৎপাদন করে নিজেদের শক্তির প্রমাণ রেখে আসছে বাংলাদেশের কৃষক। কঠোর পরিশ্রমী এ শক্তিশালী জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণে রাজনীতির মাঠে সক্রিয় রয়েছে বাংলাদেশ জাগ্রত জনতা। বাংলাদেশের বস্ত্রখাতে কঠোর শ্রম এবং দক্ষতা প্রদান করে দেশকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বৈদেশিক অর্থ সংস্থানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে আমাদের দেশের দক্ষ পোশাক শিল্পীরা। পোশাক খাতের সেসব শিল্পী বাংলাদেশ জাগ্রত জনতার পথ চলার সঙ্গী। বাংলাদেশকে চির জাগরুক রাখতে এখানে শিল্প-সংস্কৃতির চর্চাকারী প্রতিটি বাঙালি এ ক্ষেত্রটিতে চির জাগ্রত। বাংলাদেশের জাগ্রত সেসব শিল্পী সহযোগে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেবে বাংলাদেশ জাগ্রত জনতা। বাংলাদেশের শিক্ষিত জনগোষ্ঠী, শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিবর্গ, শিক্ষা প্রদানকারী শিক্ষকবৃন্দ, শিক্ষিত চাকরিজীবি শ্রেণি আমাদের দেশের গর্ব; যারা দেশকে এগিয়ে নেবার ক্ষেত্রে শিক্ষা নামক বড়ো একটি মাধ্যম ব্যবহার করে আসছেন। বাংলাদেশের অর্থনীতিকে গতিশীল রেখেছেন আমাদের বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যবসায়ীরা। যাদের বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক কার্যক্রম আমাদেরকে বিশ্বকাতারে সমান্তরাল গতিধারায় চলবার সাহস দিচ্ছে, আমরা কৃতার্থ তাদের প্রতি। আমাদের তরুণ, প্রতিভাধর যুবক আর মেধাবী শিক্ষার্থীরা আমাদের উৎসাহ; আগামী বাংলাদেশের রূপকার। আমরা আমাদের সেই সব জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণে সৃষ্ট বাংলাদেশ জাগ্রত জনতা। সব মিলিয়ে বাংলার আপামর জনগণ জাগ্রত আর বাংলাদেশ জাগ্রত জনতার মূল চালিকাশক্তি। চূড়ান্তভাবে বাংলাদেশের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে এগিয়ে নিতে এবং জাগ্রত করতে রাজনীতি করতে এসেছে বাংলাদেশ জাগ্রত জনতা।
এত্তো বড়ো অর্জনের ভাগীদার বাঙালিদের জন্য এ মুহূর্তে একটু ভিন্ন প্রেক্ষাপটের অবতারণাকে অনেক বেশি মাত্রায় প্রাসঙ্গিক মনে করছি আমরা। আমাদের প্রাচীন গর্ব আর ঐতিহ্য থেকে বর্তমান সময়ে আমরা বেশ অনেকটা সরে যেয়ে পিছিয়ে গিয়েছি অনেকখানি। আপনাদেরকে জানাতে চাই, বাংলার পুরানো ঐতিহ্যকে ফিরিয়ে আনবার জন্যই বাংলাদেশের রাজনীতির অঙ্গনে পদার্পণ করেছে বাংলাদেশ জাগ্রত জনতা। বর্তমান বাংলাদেশ সমসাময়িক অর্থনৈতিক বিশ্বের তুলনায় অনেকটা পিছিয়ে। এখানে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বিশ্বের অন্যান্য দেশের জনগোষ্ঠীর তুলনায় অনেক বেশি। বাংলাদেশের জনগণ শিক্ষাগত যোগ্যতায় সমান্তরাল বিশ্বের তুলনায় বেশ অনেকখানি পিছিয়ে। বাংলাদেশের জনগোষ্ঠী এবং শিশুদের একটি বড়ো অংশ প্রবলভাবে পুষ্টি সমস্যায় আক্রান্ত। এখানে জননিরাপত্তা অনেক কম। নারীরাও আমাদের দেশে অনেক বেশি সহিংসতা, নির্যাতন, নিপীড়ন এবং নিগ্রহের স্বীকার। পাশাপাশি কিশোর-কিশোরী এবং শিশুরাও প্রবলভাবে সহিংসতার স্বীকার হয়ে থাকে। আমাদের শহরগুলো অনেক বেশি মাত্রায় অপরিচ্ছন্ন। দেশের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে প্রবলভাবে বিদ্যমান রয়েছে অব্যবস্থাপনা, অদক্ষতা এবং সুষ্ঠু পরিকল্পনার অভাব। প্রাকৃতিক দুর্যোগের পাশাপাশি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রেও রয়েছে নানামুখী সীমাবদ্ধতা আর সঙ্কট। আমাদের জনসংখ্যার সমান্তরালে সরকারি বা বেসরকারি পর্যায়ে চাকরি করবার জন্য পদবি ও আসনসংখ্যা অনেক কম। বিভিন্ন উন্নয়ন বা উৎপাদনমুখী প্রকল্পের ঘাটতি রয়েছে আমাদের প্রচলিত সমাজ কাঠামো ও অর্থ ব্যবস্থায়। বাংলাদেশে বেকারত্বের হার অনেক বেশি। বিভিন্ন উদ্যোগ ও প্রয়াসে সম্মিলিত জনঅংশগ্রহণ এবং সমবায় কার্যক্রমের স্বল্পতা রয়েছে আমাদের দেশে। দেশে স্বদেশি বিনিয়োগের সংখ্যা এবং সামর্থ্য অনেক কম; পাশাপাশি দেশীয় বিনিয়োগকে উৎসাহিত করবার চেয়ে বিদেশি বিনিয়োগকে উৎসাহিত করবার প্রবণতা অনেক বেশি এবং বর্তমানে বিদেশি বিনিয়োগের কারণে আমাদের দেশে বৃদ্ধি পাচ্ছে পরনির্ভরতার হার। সাম্প্রতিক সময়ে অনেক বেশি পরিমাণ সহিংস কর্মকা- সংঘটিত হচ্ছে আমাদের দেশে। হত্যা, অপহরণ, ডাকাতি, চুরি, লুট, ধর্ষণ আর একটি বড়ো রকমের সামাজিক সমস্যা। বিভিন্ন ধরনের রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাসেবা বঞ্চিত জনগণের সংখ্যাও অনেক বেশি। চিকিৎসকের সংখ্যা সন্তোষজনক হারে বৃদ্ধি পেতে থাকলেও মানসম্পন্ন এবং ভালো মানের চিকিৎসক স্বল্পতা আছে আমাদের। ভুল চিকিৎসার কারণে রোগী ভোগান্তি এমনকি মৃত্যুবরণ করবার ব্যাপারটিও প্রায়শ ঘটে থাকে আমাদের দেশে। এর পাশাপাশি চিকিৎসা ব্যয়ের পরিমাণও অনেক বেশি; এবং এ ব্যয় দিনকে দিন বেড়ে চলেছে আকাশ ছোঁওয়া গতিতে। চিকিৎসা শুরুর পূর্বে একগাদা পরীক্ষার মুখোমুখি হওয়া এখন চিকিৎসাক্ষেত্রে হয়ে গিয়েছে একটি নিয়মিত অনুষ্ঠা, তা লাগুক বা না লাগুক। কয়েকটি ব্যতিক্রম ছাড়া বেশিরভাগ ক্ষেত্রে খাদ্যগ্রহণের ক্ষেত্রে ভেজাল, নকল বা স্বাস্থ্যহানীকর সংরক্ষণ উপাদান মিশ্রিত খাদ্যদ্রব্যের প্রাপ্যতা এখন হয়ে পড়েছে প্রায় নিয়মিত একটি ঘটনা। পারস্পরিক বিশ্বাস কমে গিয়ে একে অপরের সম্পর্কে তৈরি হতে চলেছে বিরোধ, সমস্যা এবং নানা ধরনের টানাপড়েন। দেশের বর্তমান রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিদ্যমান রয়েছে চরম বিরোধ। কথা-বার্তা, সভা-সমাবেশ, প্রতিটি ক্ষেত্রে সরকারি এবং বিরোধী দলগুলো একে অন্যের মু-ুপাত করে দোষ-ত্রুটি বর্ণনা করতে ব্যস্ত। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পারস্পরিক আস্থাহীনতা প্রবল। রাজনীতির সফলতা হিসেবে রাজপথ দখলে রাখা, হরতাল-অবরোধ করে জনগণকে ক্ষতিগ্রস্ত করে হরতালের ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ন্ত্রণ করতে সরকারের ব্যর্থতাকে রাজনৈতিক জয় হিসেবে দেখা; অন্যদিকে হরতালকারী দলকে লাঠিপেটা করে বা কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে বা জলকামান ব্যবহার করে বা রাবার বুলেট ছুঁড়ে রাজপথ থেকে হঠিয়ে দাবিয়ে রাখাকে সরকারি দল মনে করে হরতালের বিরুদ্ধে একটি বড়ো সফলতা হিসেবে। সরকার বা বিরোধী দল কাউকেই দেখা যায়না হরতালের কারণটিকে সামনে নিয়ে এসে আলোচনার টেবিলে বসতে। যেকোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে সরকার নিজের দাবিতে অটল থাকে; অন্যদিকে সরকারি সিদ্ধান্ত পছন্দ না হলে কিংবা পছন্দনীয় হলেও সেটিকে অপছন্দনীয় সিদ্ধান্ত হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে হরতাল আহবান বিরোধী দলগুলোর নিত্যকার অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। সরকার দলীয় সংসদ সদস্য, প্রতিমন্ত্রী, মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী বা সরকার সমর্থক দলের নেতা-কর্মীরা তাদের দলীয় আলোচনা, বক্তব্য বা রাষ্ট্রীয় এবং জাতীয় অনুষ্ঠানগুলোতে বিরোধী দলগুলোকে তুলো-ধূনো করতে ছাড়েন না। অন্যদিকে একই ধরনের বক্তব্য এবং কর্মকা-ে সমান পারদর্শিতা প্রদান করে সরকারের বাইরে থাকা এবং বিরোধী দলের নেতা নেতৃবৃন্দ। এক একটি রাজনৈতিক দল মানেই যেন ভিন্ন ভিন্ন মেরুতে অবস্থান করা এক একটি কেন্দ্র।
আমাদের দেশে প্রাতিষ্ঠানিক গণতন্ত্র চর্চা নব্বই এর দশকে শুরু হবার পর থেকে দেখতে দেখতে অতিক্রম করে ফেলেছে চব্বিশ বছর এবং আগামি বছর পালিত হবে গণতন্ত্র চর্চার রজতজয়ন্তী। এ সময়পর্বে আমরা ক্ষমতার পালা বদল হতে দেখেছি প্রধান দুটি দল বা সে দুটি দলের নেতৃত্বে গঠিত জোটগুলোর মধ্যে: একটি বর্তমানে সরকার গঠনকারী চার দলীয় জোটের প্রধান দল আওয়ামী লীগ; অন্যটি বর্তমান বিশ দলীয় জোটভুক্ত প্রধান দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বা বিএনপি। প্রথম পর্বে ১৯৯১-৯৬ সালে এককভাবে কোনো দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন না করায় বিএনপি-জামাত জোট সংখ্যাগরিষ্ঠ সংসদীয় আসনপ্রাপ্ত দল হিসেবে সরকার গঠন করে। এ সরকারের সময়পর্বে বিরোধী দল হিসেবে আওয়ামী লীগ দিনের পর দিন সংসদ থেকে ওয়ার্ক আউট করবার পাশাপাশি শেষপর্বে টানা সংসদ বর্জন করে। হরতাল আহবান করে দিনের পর দিন, মাসের পর মাস। পূর্বেই আলোচিত হয়েছে, আমাদের দেশে হরতাল পালন মানে বিরোধী দলের পক্ষ থেকে জ্বালাও, পোড়াও, ভাঙচুর, হামলা, মারামারি; আর সরকারি দলের পক্ষ থেকে বিরোধী দলের উপর পাল্টা আঘাত, নির্যাতন, নিপীড়ন, গ্রেফতার এবং মামলা। বিরোধী দলীয় আন্দোলনের মুখে সেসময়ের সরকার তড়িঘড়ি করে নির্বাচনের আয়োজন করে এককভাবে কেবলমাত্র তাদের জোটের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করে। তবে প্রবল আন্দোলনের মুখে ১৫ দিন ক্ষমতায় থেকে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হয় এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার নামক মধ্যবর্তী বা অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করে। এ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আয়োজনে এবং মধ্যস্থতায় নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সংখ্যাগরিষ্ঠ সংসদীয় আসন লাভ করার মাধ্যমে গঠিত হয় ১৯৯৬-২০০১ সময়পর্বের আওয়ামী লীগ সরকার। আওয়ামী লীগ সরকারের প্রায় পুরো সময়জুড়ে বিএনপি এবং সহযোগী দলসমূহ সহযোগে গঠিত জোট সংসদের বাইরে অবস্থান করেছে। বিনা কারণে এবং ছোটো খাটো অভিযোগ উত্থাপন করে দিনের পর দিন সংসদ থেকে ওয়ার্ক আউট করে অনুপস্থিত থেকেছে সংসদের অধিবেশনগুলোতে। আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে সময়ে সময়ে হরতাল আহবান এবং সরকারের শেষের দিকে একই চরিত্রের লাগাতার হরতাল, অবরোধ, অসহযোগ, ভাঙচুর, জ্বালাও, পোড়াও এবং মাড়ামাড়ি করেছে। আর সরকারি দল হিসেবে আওয়ামী লীগ সারম্বরে ঘোষণা দিয়েছে এর পর কখনো বিরোধী দলে গেলে তারা হরতাল ঘোষণা করবেনা কস্মিনকালেও। এভাবেই আন্দোলন, সংগ্রাম, আঘাত, পাল্টা আঘাত এবং বিরতিহীন হরতালের ফলশ্রুতিতে একইভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মধ্যস্থতায় ভরাডুবি হয় আওয়ামী লিগের এবং বিএনপি এবং তাদের জোট সরকার গঠন করে ২০০১-২০০৬ সময়পর্বের মেয়াদে। এ মেয়াদে আমাদেরকে আবারো দেখতে হয়েছিল আওয়ামী লিগের হরতাল এবং অবরোধ কার্যক্রম। মেয়াদ শেষ হবার পর সে জোট তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কছে ক্ষমতা হস্তান্তরের পর ২০০৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার মাঠে সেনাবাহিনীর সেনাক্যাম্প এ সেনা অফিসার এবং ছাত্রদের মধ্যে বিরোধ এবং মারামারির সূত্র ধরে সারাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে তীব্র আন্দোলন, বিক্ষোভ এবং সমান্তরালে দেশব্যাপী জনরোশ এর সূচনার মুখে জরুরী অবস্থার ঘোষণা, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের গ্রেফতার ও অকথ্য নির্যাতন, দেশের বড়ো দুই দলের নেতৃকে বন্দী এবং অন্যান্য নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার কার্যক্রমের পর ২০০৭-২০০৯ পর্যন্ত নতুন কাঠামোর তত্ত্বাবধায়ক সরকার নামে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। বন্ধ হয় বড়ো দুটি রাজনৈতিক দলের কার্যক্রম। এ দফায় রাজনৈতিক দল নয়, দেশের রাজনীতিকদের মধ্যে শুরু হয় নতুন মাত্রার মতবিরোধ, সৃষ্টি হয় বিভিন্ন শ্রেণির: একটি শ্রেণি হয়ে পড়ে নিশ্চুপ; অন্য আর একটি শ্রেণির উদ্ভব হয় সংস্কারবাদী হিসেবে। নাশকতাকারী, হঠকারী স্বভাবের লোকজন এবং সন্ত্রাসীরা গা ঢাকা দেয়। সামরিক তিন বাহিনী, র্যাব, পুলিশ সহযোগে যৌথ বাহিনীর মাধ্যমে শুরু হয় অভিযান এবং শুদ্ধিকরণ: অপারেশন ক্লিন হার্ট। শুরু হয় রাজনীতির মঞ্চে নতুন মেরুকরণ। চেষ্টা শুরু হয় নতুন নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, অন্যান্য উপদেষ্টাম-লী, সেসময়কার সেনাপ্রধান এবং পদস্থ ব্যক্তিরা চেষ্টা তদ্বির চালাতে থাকে নোবেল জয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনুসকে প্রধান করে একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের। সেসময় রাজনৈতিক কর্মকা- হয়ে পড়ে একদম স্থবির। তবে মানতে হবে সেসময় সামরিক বাহিনী এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উদ্যোগ প্রভৃতি কারণে দেশে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রিত হয়েছিল, দুর্নীতির মাত্রা হ্রাস পেয়েছিল, অফিসগুলোতে কাজের ক্ষেত্রে কমে গিয়েছিল দীর্ঘসূত্রীতা, অপরাধ প্রবণতা কমেছিল, অপরাধী এবং সন্ত্রাসীরা গা ঢাকা দেওয়াতে সন্ত্রাসী কর্মকা- কমে গিয়েছিল, দ্রব্য মূল্য বৃদ্ধি পেলেও সাধারণ জনমানসে ছিল স্বস্তি এবং নিরাপত্তার ছাপ। ছিল জননিরাপত্তা এবং জনমনে শান্তি।
তবে ছিলনা রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে গণতন্ত্রের চর্চা। গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিক চর্চা না হলেও আমরা সবসময়ের আশাবাদী বাঙালিরা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য দিন গুনেছি। অপেক্ষা করেছি পেছনের সব ভুল ভ্রান্তি সংশোধন করে আমরা করবো গণতন্ত্রের চর্চা, সুস্থ ধারার রাজনীতি, গড়ে তুলতে সক্ষম হবো দুর্নীতিমুক্ত সমাজ, প্রাতিষ্ঠানিক কার্যাদী সম্পাদনের ক্ষেত্রে দূর হবে সবধরনের দীর্ঘসূত্রীতা, অনৈতিক এবং অনাকাঙ্খিত অর্থের লেনদেন। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে তৈরি হবে সহমর্মীতা, সহনশীলতা এবং পারস্পরিক আস্থা। সমাজ হবে কোন্দলমুক্ত। জননিরাপত্তার পাশাপাশি আমাদের সমাজ, ব্যক্তি, রাজনৈতিক দল এবং ধর্মীয় সম্প্রদায়গুলোর মধ্যে থাকবে সম্প্রীতির বন্ধন।
দ্বিতীয় মেয়াদের এ গণতন্ত্রে ২০০৯ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আবারো বিজয়ী হয় আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন চার দলীয় জোট। লাভ করে অনেক অনেক সংসদীয় আসন, যেটি দুই তৃতীয়াংশের চেয়েও অনেক বেশি। ২০০৯-২০১৪ মেয়াদের এ সরকারের সুযোগ ছিল দেশ থেকে দুর্নীতির আমূল মূলোৎপাটন এবং দেশকে অর্থনৈতিক এবং সামাজিকভাবে অনেক দূর এগিয়ে নেয়ার। শিক্ষাকে মাঠ পর্যায়ের শেকড় পর্যন্ত ছড়িয়ে দেয়ার সুযোগ ছিল অবারিত। চাকরির নিয়োগক্ষেত্রে দুর্নীতি আর তদ্বির-সুপারিশ দূর করে নিরপেক্ষতা এবং স্বচ্ছতা সৃষ্টি করা ছিল খুব সহজ। আমরা বিভিন্ন সময়ে দেশের যেসব সমস্যার কথা উল্লেখ করেছি, একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে সরকার গঠন করলে এক বা দুই মেয়াদে এর সিংহভাগ দূর করা সম্ভব ছিল। সম্ভব ছিল সরকারের যুগান্তকারী কর্মকা-ের মাধ্যমে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের সমর্থন লাভ। কাঙিখত সফলতা অর্জন করতে না পারলেও এ সরকারের উল্লেখযোগ্য কিছু অর্জনও উল্লেখ করার মতো। বিশেষ করে বিদ্যুত খাতে উৎপাদন বৃদ্ধি এবং গ্রাম পর্যায়ে বিদ্যুৎ সংযোগ স্থাপন। রাজধানী ঢাকায় দুটি প্রধানতম ফ্লাই ওভার নির্মাণ করে যান চলাচলে বিঘœতা দূর করা। দেশে বেশ কিছু সরকারি এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন প্রদান, বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের সূচনা, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধি এবং এ ধরনের আরো কিছু কিছু। তবে এ উন্নয়ন প্রত্যাশিত হার বা মাত্রাকে ছুঁতে পারেনি; যেমনটি সম্ভব ছিল। বিপরীত দিকে, পূর্বের অভিজ্ঞতাগুলোর সাথে সঙ্গতি রেখে একই ধরনের চরিত্র নিয়ে চলমান থেকেছে বিরোধী দলগুলোর সরকারের সব ধরনের কর্মকা-ের বিরোধিতা, সমালোচনা, হরতাল, ভাঙচুর আর অবরোধ কার্যক্রম।
এ ধরনের দলীয় পারস্পরিক বিরোধ, বিরোধী দলের গ্রহণযোগ্য বা তুলনামূলক কম গ্রহণযোগ্য কোনো দাবির তোয়াক্কা না করা, একরকম জোড় করে এবং জনমতকে তোয়াক্কা না করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিল, পদ্মাসেতু নির্মাণ সংশ্লিষ্ট দীর্ঘসূত্রীতা এবং দুর্নীতি, বিভিন্ন সরকারি ব্যাংক এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কতিপয় অসৎ ব্যক্তি কর্তৃক বড়ো বড়ো আর্থিক কেলেঙ্কারি, বিরোধী দলের প্রতি দমন-পীড়নমূলক কার্যক্রম, এবং সর্বশেষ বর্তমানে দেশের অন্যতম প্রধান একটি বড়ো দল এবং তাদের জোটের অংশগ্রহণ ছাড়া এবং এতোদিন ধরে হয়ে আসা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন নির্বাচন পরিচালনা না করে বিদ্যমান সরকারের অধীনে ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয়বারের নির্বাচনের মাধ্যমে প্রায় ভোটারবিহীন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও তাদের জোটের পুনরায় সরকার গঠন ছিল পুরোপুরিই অস্বচ্ছ, পক্ষপাতপুষ্ট এবং একনায়োকচিত ধরনের। ধৈর্য, আলোচনার লেশমাত্র ইচ্ছা না থাকবার মানসিকতার পাশাপাশি স্পষ্টভাবে বিদ্যমান ছিল ক্ষমতায় পুনঃঅধিষ্ঠানের একটি তীব্র লালসা (শব্দটি প্রয়োগের জন্য ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি)। তবে এটির দায় এককভাবে আওয়ামী লিগের নয়, এ দায়ভার গ্রহণ করতে হবে বিএনপিকেও।
অনাকাঙ্খিত সত্য, দ্বিতীয় মেয়াদের গণতন্ত্রের সূচনা (২০০৯-বর্তমান) আমাদের আশা এবং আকাঙ্খাকে পূর্ণতা দিতে পারেনি। জনগণের প্রাপ্তির মধ্যে থেকে গিয়েছে বিশাল এবং বিপুল অপূর্ণতা। বিস্তারিত ব্যাখ্যার প্রয়োজন নেই। আপনার এবং আপনাদের জীবনাচরণের দৈনন্দিন অভিজ্ঞতাই আপনার কাছে আমাদের বক্তব্যের ব্যাখ্যা দাঁড় করাবে। আপনাদের সুন্দর ভবিষ্যতের জন্যই আপনাদেরকে আহবান জানাই দেশকে এগিয়ে নেবার জন্য একটু ভাববার জন্য, একটু একটু করে পরিকল্পনা করবার জন্য। সে পরিকল্পনাগুলোকে একটি ছোট্ট নোট খাতায় লিপিবদ্ধ করবার জন্য। আর সময়ে সময়ে সুযোগ পেলেই সেসব চিন্তা ও পরিকল্পনা আমাদের সাথে ভাগাভাগি করবার জন্য। পাশাপাশি আমাদের প্রতিষ্ঠিত ‘বাংলাদেশ জাগ্রত জনতা’ নামের রাজনৈতিক দলটিকে জানবার জন্য এবং আমাদেরকে সমর্থন দেবার জন্য। আর জনসমর্থন আদায়ের জন্য বাংলাদেশ জাগ্রত জনতাও আপনাদের সামনে উপস্থাপন করবে সম্পূর্ণ নতুন ধারার রাজনৈতিক চর্চা।
সংক্ষেপে আলোকপাত করা হলো আমাদের সাম্প্রতিক সময়ের আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক অবস্থার প্রতি। আমাদের আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক অবস্থাকে প্রভাবিত করে এমন একটু ভিন্ন প্রসঙ্গে আলোকপাত করে আমরা আপনাদেরকে আমাদের ভবিষ্যত করণীয় জানাতে চাই। আগের অনুচ্ছেদগুলোতে আলোচিত আমাদের জন্য রেখে যাওয়া উপহার হিসেবে আমাদের পূর্ব পুরুষদের কীর্তি এবং ইতিহাসের মতোই তাবৎ বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় আমাদের দেশ একটি অনন্য বৈচিত্র্যপূর্ণ উপহার পেয়েছে প্রকৃতির কাছ থেকে। একমাত্র আমাদের বাংলাদেশে আমরা দেখি বৈচিত্র্যময় ষড়ঋতু। যে ছয়টি ঋতু আবার বারো মাসে বিভক্ত হয়ে অনন্য করেছে আমাদের প্রকৃতিকে। বর্ষার বৃষ্টি আর নদীবাহিত পলি সঞ্চিত হয়ে আমাদের জমিকে করে তোলে উর্বর, কৃষক ফলায় সর্বোৎকৃষ্ট শস্যদানা, ছাড়ায় আমাদের সোনালী আঁশ। অন্যন্য ঋতুতে সময়ে সময়ে এখানে ফলে ঋতুভিত্তিক অন্যান্য ফল-ফলাদি, সবজি ও অন্যান্য ফসল।
নদী-মাতৃক দেশ বাংলাদেশ। নদীবাহিত পলি উর্বর করে আমাদের কৃষি জমিকে। ক্ষেত্র তৈরি করে ভালো মানের প্রচুর পরিমাণ ফসল ফলাবার। তারপরও বর্ষাকালে কখনো কখনো উচ্চ বৃষ্টিপাত, নদীসমূহের নাব্যতা হ্রাস, নদী ভাঙন, নদীগুলোর ভারতীয় অংশে বাঁধ দেবার ফলে এবং সেসব বাঁধে সঞ্চিত পানি বৃদ্ধি পেলে বাঁধ খুলে দেবার ফলে আমাদের নদীগুলোতে আকস্মিকভাবে স্বাভাবিকের চেয়ে উঁচু মাত্রার পানি প্রবাহ এবং ফল হিসেবে নদীর দুকূল প্লাবিত হয়ে নদীর পাড় বা সুরক্ষা বাঁধ ভেঙ্গে প্লাবিত হয় বিস্তীর্ণ মাঠ, ঘাট, বসত বাড়ি, হাট-বাজার এবং গ্রামের পর গ্রাম বা শহরের বিভিন্ন অংশ। আটকে পড়ে মানুষ, গৃহপালিত পশু। বন্ধ হয়ে যায় স্কুল, কলেজ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান। চলাচলের স্বাভাবিক পথ হয়ে পড়ে অচল। দেখা দেয় থাকা-খাওয়ার সঙ্কট। ছড়ায় বিভিন্ন পানিবাহিত রোগ। হয় প্রাণহানি। পাশাপাশি হয় ব্যাপক পরিমাণ ফসল আর সম্পদের ক্ষয়-ক্ষতি।
উল্লিখিত প্রাকৃতিক আশীর্বাদ আর দুর্যোগের সহাবস্থানের পাশে আর একটি উল্লেখযোগ্য দিক হলো আমাদের প্রাকৃতিক অবস্থান। উত্তরের হিমালয়, দক্ষিণের বঙ্গোপসাগর, পশ্চিমে অবস্থিত ভারতের রাজমহলের উঁচু পার্বত্য এলাকা এবং গঙ্গা নদী উপত্যকার গাঙ্গেয় সমভূমি আর পূর্ব দিকের পার্বত্য এলাকা বেষ্টন করে রেখেছে আমাদের বাংলাদেশকে। আর গ্রীষ্মম-লে অবস্থান করলেও ভৌগোলিক এ অবস্থান আমাদের প্রকৃতিকে করেছে নাতিশীতোষ্ণ, আবাসযোগ্য, সহনশীল, সুজলা, সুফলা। পার্বত্য অঞ্চল থেকে নেমে এসেছে অসংখ্য নদ-নদী এবং তাদের উপনদী আর শাখা-প্রশাখা। বাংলাদেশকে করেছে উর্বর ও বাসযোগ্য। তারপরও আমাদের স্বাভাবিক জীবনযাপনের উপর হুমকী হিসেবে যে ব্যাপারটি ক্রিয়াশীল, সেটি হলো ভূকম্পন প্রবণ এলাকায় আমাদের দেশের অবস্থান। পুরো দেশ এবং রাজধানী ভূকম্পনজনিত ভয়াবহ ক্ষয়-ক্ষতির আশঙ্কামুক্ত নয় মোটেও। আর মোটামুটি মানের বা শক্ত মাত্রার যেকোনো ভূমিকম্পে আমরা সম্মুখীন হবো ভয়াবহ মুহূর্ত, চরম ক্ষতি আর সংকটের।
দক্ষিণের বঙ্গোপসাগর আমাদের প্রকৃতিকে প্রভাবিত এবং নিয়ন্ত্রণ করছে অনেক বেশি। অনুকূল পারিবেশিক অবস্থার জন্য ভারত মহাসাগরের অংশ আমাদের বঙ্গোপসাগর পুরো বাংলাদেশের পরম বন্ধু। আমাদের জাতীয় মাছ ইলিশের যোগানদার। এখানে আবিষ্কৃত হয়েছে বেশ কিছু গ্যাস ব্লক। বিশ্ববাণিজ্যে অংশগ্রহণ করবার একটি উপযুক্ত উন্মুক্ত ক্ষেত্র আর পথ খুলে দিয়েছে বাংলার বঙ্গোপসাগর। আমাদের সামগ্রিক পরিবেশ আর অর্থনীতিতে রয়েছে এর বিরাট একটি প্রভাব। তারপরও কখনো কখনো ভারত মহাসাগরে নি¤œচাপজনিত কারণে সৃষ্ট ঝড়, জলোচ্ছাস, টর্নেডো, ঘূর্ণিঝড় ল--ভ- করে দিয়ে যায় আমাদের গ্রাম-শহর-বনভূমি-ফসলের ক্ষেত। ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের মাধ্যমে ঘটে ব্যাপক প্রাণহানি।
উপকূলীয় অংশে লবণাক্ততার কারণে সময়ে সময়ে আমাদের বিভিন্ন কৃষি প্রকল্প ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে। আবার পাহাড়ী অঞ্চলে ভূমিধ্বস বা ভাঙ্গনের ফলে হয় আবাস, প্রাণ ও সম্পদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি। এসব সমস্যার কথা উল্লেখ করা হলো এ কারণেই যে, আর সবার মতো আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি; যেখানেই সমস্যা, সেখানেই রয়েছে সমাধান। আর বাংলাদেশ জাগ্রত জনতা তার কর্মকা-ের প্রতিটি ধাপে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সমাধান করে যাবে সেসব সমস্যার। আমরা আপনাদেরকে জানাতে চাই বাঙালি জাতীয়তাবাদী শক্তি হিসেবে আমরা আপনাদেরকে সঙ্গে নিয়ে কি করতে যাচ্ছি আমাদের দেশের জন্য, আমাদের দেশের জনগণের জন্য, আপনাদের জন্য, বাংলাদেশের ভবিষ্যতের জন্য।
আমাদের বর্তমান আলেখ্য জনসমর্থন আদায়ে বাংলাদেশ জাগ্রত জনতার কার্যাবলী তুলে ধরবার প্রচেষ্টা। আসুন পরিচিত হোন আমাদের নীতি, দর্শন, আদর্শ আর বর্তমান-ভবিষ্যত মিলিয়ে ক্রিয়াশীল এবং ভবিষ্যতে করণীয় বিভিন্ন কার্যাবলীর সাথে।
রাজনৈতিক দল পরিচালনা
আমাদের দলীয় নীতি, দর্শন আর আদর্শের ভিত্তি হিসেবে থাকা বিষয়গুলো হলো: ১) গণতন্ত্র, ২) সাম্যবাদ, ৩) কট্টর বাঙালি জাতীয়তাবাদ, ৪) মানবতাবাদ, ৫) মত প্রকাশের পরিপূর্ণ স্বাধীনতা, ৬) নারী-পুরুষ সমানাধিকার, ৭) নারী ও শিশু স্বাধীনতা, ৮) জননিরাপত্তা ৯) ধর্ম নিরপেক্ষতা, ১০) অহিংসা, ১১) নৈতিকতা-সততা-সত্যবাদিতা, ১২) কাঠোর শ্রম এবং ব্রতচারীতা, ১৩) ইসলামী-পুঁজিবাদী-সমাজতান্ত্রিক মিশ্র অর্থব্যবস্থা, ১৪) ন্যায়বিচার, ১৫) স্বদেশি ভাবধারাপুষ্ট মানসিকতা, এবং ১৬) শিশুশ্রমমুক্ত শ্রমব্যবস্থা।
আমাদের রাজনৈতিক দলটি পরিচালিত হবে সম্পূর্ণভাবে গণতান্ত্রিক ধারায়। দল পরিচালনার মূল দায়িত্বে থাকবেন দলীয় সংগঠকগণ। যারা দেশের জনসাধারণের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করবার পাশাপাশি দলীয় কর্মকা- পরিচালনার জন্য একাধারে বিভিন্ন পর্যায়ের পদভিত্তিক নেতৃত্বের ভার গ্রহণ করবেন। দলে নারী-পুরুষের অংশগ্রহণ এবং অবস্থান হবে সমান অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে এবং নারী-পুরুষে কোনো পার্থক্য বা বৈষম্য থাকবেনা আমাদের দলে। সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং প্রদানের ক্ষেত্রে একই সাথে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতকে প্রধান্য দেবার পাশাপাশি আলাদা আলাদা প্রতিটি মতকে সমান গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা হবে। এক্ষেত্রে সংখ্যাগরিষ্ঠ বা সংখ্যালঘিষ্ঠ জনসমর্থন নয়; বিবেচনা করা হবে জনমতের গ্রহণযোগ্যতা এবং যৌক্তিকতাকে। দলীয় গঠনতন্ত্রে গণতন্ত্রের পাশাপাশি থাকবে সাম্যবাদ, যার মাধ্যমে সমাজে প্রতিষ্ঠা করা হবে সমতা। সবার অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য অধিকার এবং প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা হবে সমানভাবে। উঁচু-নিচু, জাত-পাতের স্থান নেই আমাদের দলীয় নেতৃত্ব, সংগঠক, কর্মী, সমর্থক বা আমাদেরকে সমর্থন প্রদান না করা বাংলাদেশের যেকোনো নাগরিকের ক্ষেত্রে। অর্থব্যবস্থায় প্রয়োজনানুযায়ী মিশ্র অর্থব্যবস্থার সম্মিলন ঘটানো হবে। দলটি হবে অহিংস। একইসাথে গৌতম বুদ্ধ, হযরত মুহাম্মদ (সাঃ), মহাত্মা গান্ধী এবং মার্টিন লুথার কিং এর আদর্শগুলোকে সম্মিলিত করে শান্তিবাদী আদর্শের অহিংস মতাদর্শের। আমরা যেকোনো ধরনের সাম্প্রদায়িকতা, ধর্মীয় গোড়ামীর উর্ধ্বে থেকে ধর্ম নিরপেক্ষ মূল্যবোধের রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা করতে চলেছি। আমরা বাঙালি জাতীয়তাবাদের ধারক এবং আমাদের জীবনাচারণ এবং রাজনৈতিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক প্রতিটি কর্মক্ষেত্রে এবং কাজে-কর্মে স্বদেশি নীতি আদর্শের প্রতিফলন ঘটিয়ে থাকি। আমাদের দলীয় কর্মকা-ে এবং দলীয় সহযোগিতায় নির্মূল করা হবে যেকোনো ধরনের শিশুশ্রম।
দল পরিচালনার জন্য পর্যায়ক্রমিক তিনটি স্তর থাকবে আমাদের দলে। তবে কোনো স্তর আলাদা আলাদাভাবে একটির চেয়ে অন্যটি শক্তিশালী বা উঁচু-নিচু হবেনা, এগুলোর সমন্নিত অংশগ্রহণেই পরিচালিত হবে পুরো দল। স্তরগুলোকে নিচে আলাদা আলাদাভাবে তুলে ধরা হলো।
ক) পরামর্শক পর্ষদ
দলীয় কার্যক্রম পরিচালনার জন্য দলের একটি পরামর্শক পর্ষদ থাকবে। এ পর্ষদে থাকবেন বিভিন্ন বিষয় এবং সেক্টরে বিশেষজ্ঞ দেশের প্রতিথযশা, বিজ্ঞ, দক্ষ মনীষি, বিদ্যান, বিদুষী এবং অভিজ্ঞ ব্যক্তিরা। আমরা যেকোনো কাজ, কার্যক্রম এবং সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে পরামর্শক পর্ষদের পরামর্শ গ্রহণ করার পাশাপাশি তাদের সাথে আলোচনা করবো।
খ) প্রশাসনিক এবং প্রাতিষ্ঠানিক তদারকি ও পরিচালনা পর্ষদ
পরামর্শক পরিষদের পাশাপাশি থাকবে একটি প্রশাসনিক এবং প্রাতিষ্ঠানিক তদারকি ও পরিচালনা পর্ষদ। যারা দল পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা প্রদান করবেন।
গ) সাংগঠনিক কাঠামোভিত্তিক পরিচালনা পর্ষদ
তৃতীয় পর্যায়ে থাকবে সাংগঠনিক কাঠামোর একটি পরিচালনা পর্ষদ। এ পর্ষদ থেকে নির্বাচন করা হবে দলের নেতা-কর্মীদের। সংগঠকদের সাংগঠনিক কাঠামোর মধ্যে থাকবে সভাপতি, সহসভাপতি, সম্পাদক, সাধারণ সম্পাদক, সহ সাধারণ সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদক, সংগঠক, কর্মী এবং এধরনের বিভিন্ন পদ। নেতৃত্বের গুণ, কর্মদক্ষতা, যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা, প্রাতিষ্ঠানিক বা অপ্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যবহারিক শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং জনগ্রহণযোগ্যতার ভিত্তিতে প্রাথমিক মনোনয়নের পর গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচনের মাধ্যমে সাংগঠনিক পদগুলোর জন্য নেতা নির্বাচন করা হবে। প্রতিটি পদের মেয়াদ হবে চার বছর। চার বছর পর পর দলীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। দলীয় প্রধানসহ কোনো পদেই একজন ব্যক্তি পর পর দুমেয়াদের বেশি অবস্থান করবেন না। একই পদে তৃতীয় মেয়াদে নির্বাচিত হতে হলে তাকে অপেক্ষা করতে হবে অন্তর্বর্তীকালীন আর একটি মেয়াদের কমিটির ক্রান্তিকাল পর্যন্ত।
প্রয়োজনানুসারে এবং কর্মদক্ষতা বিবেচনায় সাংগঠনিক কাঠামোর ব্যক্তিগণ প্রশাসনিক এবং প্রাতিষ্ঠানিক তদারকি ও পরিচালনা পর্ষদ এর সদস্যপদ লাভ করবেন পর্যায়ক্রমিকভাবে সর্বসম্মতির ভিত্তিতে।
দলীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং প্রদানের জন্য সাংগঠনিক কাঠামোর নেতৃত্ব এবং প্রশাসনিক এবং প্রাতিষ্ঠানিক তদারকি ও পরিচালনা পর্ষদ এর সদস্যরা জনসমর্থন এবং গ্রহণযোগ্যতা ও যোগ্যতা বিচারে পরামর্শক পরিষদের সাথে আলোচনা করে দল পরিচালনা এবং দলীয় সিদ্ধান্তসমূহ বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয় কার্যক্রম সম্পাদন করবেন।
এ তিন পর্যায়ের সাংগঠনিক কাঠামো যেমন থাকবে জাতীয় পর্যায়ে, তেমনভাবে প্রতিটি বিভাগীয়, জেলা এবং উপজেলা পর্যায়েও এধরনের গঠনতন্ত্র অনুসরণ করে একটি সমন্বিত কার্যকরী নেতৃত্ব বলয় তৈরি করা হবে, যেটি পুরো দেশে একটি সমন্নিত নেতৃত্বের শাখা-প্রশাখা বা জাল তৈরি করবে।
নিশ্চয়তা প্রদান করছি, আমাদের দলীয় প্রতিটি ব্যক্তির মধ্যে থাকবে সহমর্মীতা এবং সহযোগী মনোভাব। আমাদের দলে থাকবেনা কোনো দলীয় কোন্দল বা অন্তর্কলহ। কারণ আমরা সম্মিলিত সিদ্ধান্তকে গ্রহণ করি এবং বিচ্ছিন্ন যেকোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতিকে আমরা সম্মিলিতভাবে ধৈর্যের সাথে এবং নমনীয়ভাবে সমাধান করতে সক্ষম।
দলীয় প্রচার, প্রচারণা, কার্যক্রম এবং সামগ্রিক বিষয়াবলী সম্পাদনের জন্য নেতৃত্বের পদভিত্তিক ক্রম অনুসরণ করা হবে এবং নেতা, নেতৃত্ব, সংগঠক এবং সমর্থকরা একযোগে সম্মিলিত এবং সমন্বিতভাবে কাজ করবেন; দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে নির্দেশনা প্রদান করবেন এবং প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ করবেন মাঠ পর্যায় থেকে শুরু করে প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায় পর্যন্ত প্রতিটি ক্ষেত্রে।
দলীয় প্রচার-প্রচারণা
আমাদের দলীয় প্রচার ও প্রচারণা কার্যক্রম পরিচালিত হবে একই সাথে শহর-বন্দর, নগর, গ্রাম, গঞ্জ, হাট-বাজার, পথ-মাঠ-ঘাট সবখানে। আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশের কয়েক বছর, মাস, সপ্তাহ এবং দিন আগে থেকে আমরা আমাদের আগমনী বার্তা জানান দিয়ে সময়ে সময়ে বিজ্ঞাপন প্রচার করবো দেশের প্রধান প্রধান দৈনিকগুলোতে। আত্মপ্রকাশের দিন আমরা আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আমাদের আত্মপ্রকাশের জানান দেবো। আমরা কারা, আমাদের আদর্শ কী, আমরা কেন রাজনীতি করবার জন্য সক্রিয় হয়েছি, আমরা কী করতে চাই, আমরা কাদের জন্য কাজ করতে চাই সেসবের বিস্তারিত জানান দেবার পাশাপাশি আমাদের পরিচিতিপত্র এবং মেনিফেস্টো জনসম্মুখে প্রচার ও বিলি করা হবে ছোটো ছোটো পুস্তকাকারে এবং একই সাথে আমাদের লিখিত ও প্রকাশিত বই বিতরণ এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে বিক্রি করবার মাধ্যমে।
আমরা সভা সমাবেশ করবো মাঠ, সভা অনুষ্ঠান করবার উপযোগী পার্ক এবং সভাস্থলে। আমাদের বিভিন্ন পর্যায়ের প্রতিনিধিরা মতবিনিময় করবেন আমাদের সাধারণ জনগোষ্ঠীর সাথে বিভিন্ন জন পরিবহণ যেমন ট্রেন, বাস, লঞ্চসহ বিভিন্ন গণপরিবহণ এবং পরিবহণ স্টেশনগুলোতে; দোকান-পাট-বিপণিকেন্দ্রে, হাট-বাজার-মেলা প্রভৃতি স্থানে; এবং অন্যান্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে। তবে কখনোই জনচলাচলে বিঘœ বা মানুষজনের সমস্যা সৃষ্টি করে আমাদের প্রচারণা চালানো হবেনা; আমরা কথার ছলে, আড্ডার মাধ্যমে এক, এক থেকে দশ, দশ থেকে একশ, এভাবে ক্রমান্বয়ে ছড়িয়ে যাবো সহ¯্রজনের হাত ধরে পুরো বাংলাদেশ এবং বিশ্বে।
বিভিন্ন লিফলেট, ছোটো পুস্তক, বই-পত্র, জার্নাল, ম্যাগাজিন, পত্রিকা প্রকাশ করে আমাদের কথা জানানো হবে সব পর্যায়ের জনগণের কাছে। পর্যায়ক্রমে দৈনিক পত্রিকা প্রকাশ করে সংবাদ প্রচারের পাশাপাশি আমাদের মতাদর্শ ও কথা পৌঁছে দেয়া হবে সবার কাছে। আরো পরে আমরা রেডিও এবং টেলিভিশনের মতো মাধ্যমগুলোর রেজিস্ট্রেশন গ্রহণ করে স্যাটেলাইট সম্প্রচার মাধ্যমকে ব্যবহার করে আমাদের জানান দেবো সব্বাইকে।
দল পরিচালনা এবং দলীয় কর্মকা- সম্পাদনের জন্য অর্থসংস্থান
রাজনৈতিক দল পরিচালনার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি দিক অর্থসংস্থান। একটি দল পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় পরিমাণ অর্থসংস্থান করতে আমরা এ মুহূর্তের উদ্যোক্তারা বিভিন্ন ধরনের অর্থ উপার্জনশীল প্রকল্প গ্রহণ করেছি; এবং ২০১৭ সালে দল গঠন অর্থাৎ প্রতিষ্ঠার আগ পর্যন্ত আরো বেশ কিছু উৎপাদনশীল প্রকল্প গ্রহণ করা হবে দেশের বিভিন্ন জেলার গ্রাম এবং শহরগুলোতে। যে প্রকল্পগুলোর মূল চালিকাশক্তি হবেন আমাদের গ্রামগুলোর প্রান্তিক কৃষক, সাধারণ কাতারে থাকা জনগোষ্ঠী আর আগ্রহী অন্যান্য যেকোনো আর্থ-সামাজিক অবস্থানের ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা প্রতিষ্ঠান। তারা একদিকে যুক্ত থাকবেন উৎপাদনের সাথে; পাশাপাশি এসব উৎপাদনের সাথে সাথে তাদের বিনিয়োগকৃত জমি এবং শ্রমের অনুপাতে বর্তমানের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি পরিমাণ অর্থ উপার্জন করবেন আমাদের সাথে থাকা সংশ্লিষ্ট জনেরা। ২০১৭-২০২০ সালের মধ্যে আমাদের সমন্নিত প্রকল্পগুলোর মাধ্যমে আমরা ২-৪-৬ কোটি বা আরো বেশি পরিমাণ অর্থ উপার্জন করতে সক্ষম হবো এবং আরো পরে পুরো দেশে বিভিন্ন প্রকল্প ছড়িয়ে দেবার মাধ্যমে দল পরিচালনার জন্য আনুপাতিক হারে প্রয়োজনীয় পরিমাণ আরো বেশি পরিমাণ অর্থ উপার্জন সম্ভব হবে আমাদের পক্ষে।
পর্যায়ক্রমে ২০২০-২০৩০ সালের মধ্যে আমরা ব্যাংক, বীমা, বিভিন্ন ধরনের সমবায় প্রতিষ্ঠানসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলবো, যেগুলো কর্মসংস্থান এর ব্যবস্থার পাশাপাশি আমাদের দলীয় উপার্জনকে সমৃদ্ধ করবে আরো বেশি।
২০১৭-২০২৭ সালের মধ্যে আমরা দেশের প্রতিটি জেলা এবং উপজেলা শহরে দলীয় কার্যালয় স্থাপন করবো। দলীয় কার্যালয়ের জন্য প্রতিষ্ঠিত ভবনগুলোর বিভিন্ন কক্ষে একাধারে দলীয় কার্যালয়, বাংলাদেশ জাগ্রত জনতার মাধ্যমে বিনামূল্যে প্রদানের জন্য সমাজসেবামূলক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, বয়স্ক ও শিশু শিক্ষাকেন্দ্র, চিকিৎসাকেন্দ্র, বিনামূল্যে বিতরণের জন্য ডিসপেনসারি পরিচালনার পাশাপাশি ভবনের অবশিষ্ট অংশ ব্যাবসায়িক উদ্দেশ্যে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অফিস বরাদ্দ এবং বিপণিকেন্দ্র হিসেবে ভাড়া প্রদান করা হবে। এসব ভবনে আমাদের উৎপাদনমুখী প্রকল্প থেকে উৎপাদিত বিভিন্ন পণ্য এবং আমাদের কৃষকদের উৎপাদিত পণ্য আমাদের দলের নেতা-কর্মী-সমর্থকদের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত চেইন শপের মাধ্যমে বিক্রি করা হবে। বিভিন্ন অর্থ উপার্জনকারী প্রকল্পের পাশাপাশি আমাদের কর্মী-সমর্থক-সংগঠকদের মাধ্যমে আমরা জেলাভিত্তক এবং উপজেলাভিত্তিক বাঙালি ঐতিহ্যের সুস্বাদু, মানসম্মত এবং স্বল্পমূল্যের খাবার দোকান পরিচালনা করবো।
এভাবেই বিভিন্ন মাধ্যম থেকে আমরা দল পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় এবং সামাজিক বিভিন্ন জনসেবামূলক উন্নয়ন প্রকল্প পরিচালনার জন্য আরো অতিরিক্ত পরিমাণ অর্থ উপার্জন করবো।
আমরা আমাদেরকে সমর্থনকারী এবং আমাদের জন্য আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছেন এমন সমর্থ এবং ইচ্ছুক ব্যক্তিগণের নিকট থেকে শুভানুধ্যায়ী এবং সুহৃদ তহবিল গঠনের আহ্বান করছি, যেটি দল পরিচালনার ক্ষেত্রে আমাদের প্রাথমিক তহবিল গঠনে ভূমিকা রাখবার পাশাপাশি আমাদের দলের সাথে জনসম্পৃক্ততা তৈরি করবে।
নেতা-কর্মীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি
আমাদের তারুণ্যনির্ভর দলীয় নেতা-কর্মীদের সবাই হবেন উচ্চশিক্ষিত, যাদের মধ্যে থাকবে পাবলিক, জাতীয় এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে সর্বোচ্চ পর্যায়ের শিক্ষাগত যোগ্যতা অর্জনকারী মেধাবী নেতৃত্ব। আমাদের সব নেতার ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা হবে ¯œাতকোত্তর। আর শিক্ষাগত যোগ্যতার এ পর্যায়ের পর দলীয় উদ্যোগে সবার জন্য গবেষণা অভিজ্ঞতা বৃদ্ধির জন্য নিজ নিজ শিক্ষাগত ক্ষেত্রে বিভিন্ন গবেষণা প্রকল্পে সম্পৃক্ত করা, এমফিল, পিএইচডি এবং পোস্ট ডক্টরাল ডিগ্রি অর্জন করতে উদ্বুদ্ধ করার পাশাপাশি সব ধরনের সহযোগিতা প্রদান করা হবে। ২০১৭ সাল থেকে এসব উচ্চশিক্ষা গবেষণার জন্য দলীয় অর্থায়নে বৃত্তি প্রদানের মাধ্যমে নেতাকর্মীদের দেশের এবং আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়া-লেখার সুযোগ করে দেওয়া হবে।
দেশের আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক কিংবা চিকিৎসা, বিজ্ঞান-শিক্ষা-গবেষণা প্রতিটি সেক্টরে কাজের অভিজ্ঞতা বৃদ্ধি করানোর জন্য এবং কর্মদক্ষতা বৃদ্ধির জন্য বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় এবং গবেষণাকেন্দ্রগুলোতে পর্যায়ক্রমে প্রতিটি নেতা-কর্মীকে প্রেরণ করা হবে। দেশে বিভিন্ন প্রকল্প প্রণয়ন করে সেসব প্রকল্পে নেতা-কর্মীদের সরাসরি অংশগ্রহণ করিয়ে কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি করা হবে। গড়ে তোলা হবে সিদ্ধান্ত গ্রহণে সিদ্ধহস্ত।
অলীক স্বপ্ন নয়; কারণ বাংলাদেশ জাগ্রত জনতা সৃষ্টি হচ্ছে তরুণ উচ্চ শিক্ষিত গবেষকদের হাত ধরে। আমরা পারবো, যারা বাংলাদেশকে বদলে দিতে দৃঢ় প্রত্যয়ী। আমরা দেশের উচ্চশিক্ষায় নিয়োজিত শিক্ষকম-লী, গবেষক এবং বিদেশি আন্তর্জাতিক মানের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষকতা করা বাংলাদেশের শিক্ষক-গবেষকদের আহবান জানাচ্ছি আমাদের দিকে আপনাদের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবার। দেশের এবং প্রবাসী উচ্চশিক্ষার প্রতি নিবেদিত অর্থ-বিত্তশালী জনগোষ্ঠীর প্রতি আহবান আমাদের প্রয়াসে আপনাদের হাত সম্প্রসারিত করার।
জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ
নির্ধারিত সময় অনুসরণ করে এগুলে পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০১৪ এর পর ২০১৯, ক্রমানুসারে ২০২৪ ও ২০২৯ এ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবার কথা আমাদের দেশে। পরিকল্পনা অনুযায়ী আমরা ২০২৯ সালের জাতীয় নির্বাচনে দেশের সবগুলো আসনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করবো। প্রেক্ষাপট ভিন্ন হলে, আমাদের দল সাংগঠনিক এবং দলীয় কর্মকা- সুচারুভাবে সম্পন্ন করতে সক্ষম হলে; সাংগঠিক ভিত্তি কাঙ্খিত সময়ের আগে প্রয়োজনীয় আত্মবিশ্বাস এবং যোগ্যতা অর্জন করলে; দলীয় কার্যক্রম সফলতার সাথে এগিয়ে চললে এবং জনগণ চাইলে আরো আগে ২০২৪ এর জাতীয় নির্বাচনেও অংশগ্রহণ করবার আত্মবিশ্বাস রাখি আমরা এবং প্রয়োজনে জনমত বিবেচনায় আমরা সে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করবো।
দলীয় মনোনয়ন
দলীয় মনোনয়নের ক্ষেত্রে আমরা গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচনী প্রার্থী ঠিক করবার জন্য ভোটাভুটির মাধ্যমে আমাদের প্রার্থী নির্বাচন করবো। প্রার্থীর প্রার্থীতা নির্ধারণের জন্য ভোটাভুটির আগে প্রার্থীর অভিজ্ঞতা, শিক্ষাগত যোগ্যতা, কর্মদক্ষতাসহ বিভিন্ন মানদ- নির্ধারণ করে নম্বর প্রদান করা হবে। আগেই বলা হয়েছে, আমাদের সব প্রার্থীর সর্বনি¤œ শিক্ষাগত যোগ্যতা হবে ¯œাতকোত্তর এবং একই সাথে তারা হবেন মেধাবী। তবে কৃষক, শ্রমিক বা অন্যান্য কম শিক্ষাগত যোগ্যতার নেতার ক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নয়; প্রার্থীর নেতৃত্ব, সততা, মানবতাবোধ, প্রায়োগিক-ব্যবহারিক শিক্ষা, অভিজ্ঞতা, কর্ম দক্ষতা, গ্রহণযোগ্যতা এবং জনসমর্থন বিবেচনায় প্রার্থীর প্রার্থীতা মূল্যায়ণ করা হবে।
আমরা নিশ্চিত করছি, আমাদের মনোনীত প্রার্থী হবেন উচ্চশিক্ষিত, সৎ, নিরপেক্ষ, পরিশ্রমী, ধর্মনিরপেক্ষ, মানবতাবাদী এবং গণমানুষের কাছাকাছি থাকা ব্যক্তি; যিনি একই সাথে দেশের প্রতি নিবেদিতপ্রাণ পরীক্ষিত দেশপ্রেমিক।
দলীয়ভাবে গৃহীত বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক উদ্যোগ
লেখার শুরতে আমরা দেশের বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক সমস্যার কথা উল্লেখ করেছি। একটি দেশে প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দলের প্রধানতম উদ্দেশ্যই হলো রাজনৈতিক কর্মসূচীর মাধ্যমে জনসমর্থন আদায়ের মাধ্যমে রাষ্ট্রক্ষমতায় আরোহণ এবং দেশের উন্নয়ন কর্মকা-ে সরাসরি অংশগ্রহণ। আমরা বাংলাদেশ জাগ্রত জনতা রাজনীতি করতে এসেছি। আমরা আমাদের রাজনৈতিক কর্মসূচীর মাধ্যমে জনসমর্থন আদায় করবো। আমাদের উদ্দেশ্য রাষ্ট্র ক্ষমতায় আরোহণ। আমাদের উদ্দেশ্য বাংলাদেশের উন্নয়ন। তবে বাংলাদেশের প্রচলিত রাজনৈতিক ধারায় যা কিছু ঘটছে, আমরা তার কোনোটিই করবোনা। সরকার যেধরনের অদূরদর্শীতা, অদক্ষতার স্বাক্ষর রেখে অনিয়মতান্ত্রিক কর্মকা- পরিচালনা করছে বা দেশকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার ক্ষেত্রে যেসব ব্যর্থতার স্বাক্ষর রাখছে সেটিকে আমরা দূর করে দেবো ক্ষমতারোহণের শুরু থেকেই। দেশ পাবে সম্পূর্ণ ভিন্ন ধারার গতিশীল একটি সরকার।
শুরুতেই যেহেতু সরকার গঠন নয়; কেবল রাজনৈতিক দল, সেক্ষেত্রে দৃঢ়তার সাথে জানান দিতে চাই আমরা কখনোই হরতাল, অবরোধ বা সরকার এবং দেশ বিরোধী কর্মকা- এক মুহূর্তের জন্য করবোনা। আমরা অহিংস। আমরা কথাবর্তায় সাহসী এবং দৃঢ় তবে কোনো ক্রমেই রুঢ় নই। তাই রাজনৈতিক হীন মানসিকতায় বা অন্য কোনো উদ্দেশ্যে আমাদের বিরুদ্ধে গৃহীত কোনো দমন-পীড়ন বা গ্রেপ্তারসহ অন্যান্য নেতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলেও আমরা সহিংসতা প্রদর্শন এমনকি রুঢ় ভাষায় কথা পর্যন্ত বলবোনা। আমরা রাজপথ বন্ধ করে মিছিল মিটিং করবোনা। আমরা সভা সমাবেশ করবো মাঠে, সমাবেশস্থলে। আমাদের দলীয় কর্মকা-ে কখনোই জনমানুষের সমস্যা করে কোনো কর্মসূচী পালন করা হবেনা। আমাদের প্রতিবাদের ভাষা আমাদের সম্মিলিত কণ্ঠস্বর। আমাদের প্রতিবাদী ভাষা আমাদের সাহসী উচ্চারণ। আমাদের প্রতিবাদী ভাষা, যে অন্যায় করা হয়েছে, সেটি না করে আসলে কি করা উচিত ছিল সেই কাজটি হাতে কলমে করে দেখিয়ে দেবার মাধ্যমে চোখে আঙ্গুল দিয়ে বুঝিয়ে দেয়া আমরা আলাদা, আমরা আর সবার মতো নই, আমরা জাগ্রত, আমরা সাহসী, আমরা ভেঙে নুয়ে পড়িনা, আমরা কখনো পরাজিত হইনা। সরকারবিরোধী কোনো বক্তব্য তুলে ধরতে হলে আমরা সরকারকে স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেবো তারা কি ভুল করেছে এবং কি কাজটি করা উচিত ছিল সেটির স্থলে।
জনগণকে বলবার জন্য, জনগণকে পথ প্রদর্শনের জন্য, জনগণকে উৎপাদনমুখী লাভজনক প্রকল্পে অংশগ্রহণ করাবার জন্য আমাদের অনেক কথা বলবার আছে। তাই সরকারের দোষ-ত্রুটি আর খুঁত বর্ণনা করে সময় ক্ষেপণ করা আমাদের কাজ নয়। সরকার ভুল করলে আমরা সেটির উল্লেখ করে সঠিক পথটি বাতলে দেবো। আর সরকারের নিন্দা করবার চেয়ে বরং সরকারের প্রশংসনীয় কাজের প্রশংসাই করবো আমরা, সরকারকে এটি শেখাতে আপনারা বিরোধী দলকেও প্রসংশা করুন, বিরোধী দলের ভালো মতামতটিকে গ্রহণ করুন এবং দেশটাকে সম্মিলিতভাবে ভালো অবস্থানে নিয়ে চলুন।
গ্রাম উন্নয়ন বিভিন্ন প্রকল্পসমূহ
আমাদের বিশ্বাস, আমাদের রাজনৈতিক কর্মকা-, সামাজিক উদ্যোগ, জনসম্পৃক্ততা, উন্নয়নমূলক কর্মকা- আর কর্মযজ্ঞ আমাদের গ্রহণযোগ্যতা তৈরি করবে জনমানসে। পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে, আমরা বিভিন্ন অর্থনৈতিক এবং উৎপাদনশীল প্রকল্প গ্রহণ করেছি। আর প্রকল্পগুলো বেশ অর্থ উৎপাদনশীল। আর আমাদের এ উৎপাদক শ্রেণিটি আমাদের গ্রামগুলোতে থাকা প্রান্তিক কৃষকেরা। ছোটো ছোটো কিছু উদাহরণ আর অল্প বিস্তর পরিসংখ্যান উপস্থাপন করছি সকলের জ্ঞাতার্থে। আমরা অর্থ উপার্জনের দিকেও জোড় দিচ্ছি। কারণটি খুব পরিষ্কার। প্রথমত, আমরা অতিরিক্ত অর্থ উপর্জনের পথ বাতলে দিতে চাই। দ্বিতীয়ত, আমরা পরিশ্রম করে সৎ এবং সহজ পথে অতিরিক্ত অর্থ উপার্জনের পথ বাতলে দিয়ে দুর্নীতিমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে চাই। তৃতীয়ত, সেসব প্রকল্পে আমাদের অংশীদারিত্বের মাধ্যমে আমরাও আমাদের ব্যক্তিগত উপার্জনকে সহজ-সাবলিল করবার পাশাপাশি দল পরিচালনার জন্য অর্থ সংস্থান করতে চাই।
কীভাবে? একটি উদ্যোগের কথা বলছি। আকৃতিতে অনেক বেশি ক্ষুদ্র। আমাদের একজনের এক বিঘার কিছু কম (২৫শতাংশ) পরিমাণ জমিতে ১০০টি দারুচিনি মশলার গাছ রোপণ করা হয়েছে ২০১৩ সালে। ২০১৫ সালের মধ্যে মোট এক একর বা তিন বিঘা পরিমাণ জমিতে লাগানো হবে আরো ৪০০টি দারুচিনি গাছ। সব মিলিয়ে ৫০০টি গাছ। ২০১৭ সালে প্রথম বারে রোপিত প্রতিটি গাছ থেকে পাতা আর ছাল মিলিয়ে ৪ মাস পর পর বছরে তিন বার ১,০০০.০০ টাকা করে প্রতি বছর ৩,০০০.০০ (তিনহাজার) টাকার মশলা বিক্রি করা সম্ভব হবে। সব মিলিয়ে বছরে ১০০ গাছ থেকে ৩০০০.০০দ্ধ১০০ = ৩,০০,০০০.০০ (তিন লক্ষ) টাকার মশলা ২৫ শতাংশ জমি থেকে। ২০১৮ সালে মোট চার বিঘা জমি থেকে ৩,০০০.০০দ্ধ৫০০ = ১৫,০০,০০০.০০ (পনের লক্ষ) টাকার মশলা। ২০১৯ সালে, পঞ্চম বছরে প্রতি গাছ থেকে গড়ে ৩,৫০০.০০ টাকা হারে ১৭,৫০,০০০.০০ (সতের লক্ষ পঞ্চাশ হাজার); ২০২০ সালে, সমপরিমাণ জমি থেকে ষষ্ঠ বছরে ৪,০০০.০০ টাকা হারে ২০,০০,০০০.০০ (বিশ লক্ষ); ২০২১ সালে, সপ্তম বছরে ৫,০০০.০০ টাকা হারে ২৫,০০,০০০.০০ (পঁচিশ লক্ষ) টাকা এবং ক্রমান্বয়ে আরো বৃদ্ধি (সবগুলো হিসাব করা হয়েছে বর্তমান সময়ের মূল্যে; ৪-৫ বছর পর টাকার মূল্যমান আরো বাড়বে)। প্রকল্পটি বাংলাদেশের সর্বোত্তর জেলা পঞ্চগড়ের উত্তরের উপজেলা তেঁতুলিয়ার একটি প্রত্যন্ত গ্রাম কালারামজোত এ।
বাংলাদেশের কোনো কৃষি প্রকল্প থেকে এতো বেশি পরিমাণ অর্থ উপার্জন সম্ভব হয়নি এখন পর্যন্ত; এমনকি সবচেয়ে অর্থকরী ফসল চা থেকেও অনেক বেশি লাভজনক এ প্রকল্পটি। আমরা পর্যায়ক্রমে দেশের সব অঞ্চলে ছড়িয়ে দেবো দারুচিনি মশলাসহ অন্যান্য মশলা চাষ প্রকল্প। বর্তমানে বিশ্বে একমাত্র শ্রীলঙ্কা গোটা বিশ্বে সবচেয়ে বেশি দারুচিনি রপ্তানি করছে এবং বিশ্বের ৮৫% রপ্তানি তাদের দখলে। এর পরের অবস্থানটি ভারতের কেরালা রাজ্যের। কৃষিপ্রধান বাংলাদেশ খুব সহজে দেশিয় বাজারের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজারে নিজেদের মশলা বাণিজ্য সম্প্রসারণ করতে পারবে এ ধরনের প্রকল্পের মাধ্যমে।
আপনাদের প্রতি প্রশ্ন, আমরা পারবো না?
আর একটি পরিসংখ্যানগত উদাহরণ। সে গ্রামের দশ জন প্রান্তিক কৃষক, যাদের কারো জমির পরিমাণ ১.৫ (দের) বিঘা; কারো ২.০ (দুই) বিঘা। ২ বিঘা জমির মালিক একজন কৃষকের প্রতি মাসে উপার্জন ৬,০০০.০০ (ছয় হাজার) টাকা। ২ বিঘা জমিতে ধান উৎপাদিত হয় প্রতি বিঘায় ৩০ মণ করে মোট ৬০ মণ। সময় লাগে চার মাস। বছরে দুই ফসল। সব মিলিয়ে আট মাসে ১২০ মণ ধান। দাম ১২০দ্ধ৮০০.০০ = ৯৬,০০০.০০ (ছিয়ানব্বই হাজার) টাকা। জমি চাষ, সার, কীটনাশক, শ্রমিক মজুরী সব মিলিয়ে উৎপাদন খরচ মোট আয়ের অর্ধেক, ৪৮,০০০.০০ (আটচল্লিশ হাজার) টাকা। বাকি অর্ধেক পরিমাণ টাকায় আট মাসের মোট উপার্জন ৪৮,০০০.০০ (আটচল্লিশ হাজার) টাকা। প্রতি মাসে ৬,০০০.০০ (ছয় হাজার) টাকা।
সবমিলিয়ে দশজন কৃষকের মোট জমির পরিমাণ ১৫ (পনের) বিঘা। এদের কারও এককভাবে বা সম্মিলিতভাবে অর্থ বিনিয়োগের সামর্থ্য নেই।
ক) আমরা এ দশজন কৃষককে একত্রিত করে তাদের জমিগুলোকে সমন্নিত করে তিন বিঘা জমিতে আমাদের আর সে দশ জন কৃষকের অংশগ্রহণে সম্মিলিত শ্রমকে কাজে লাগিয়ে একটি পুকুর খনন করিয়ে নেবো। এ পুকুরে চাষ করা হবে দেশি প্রজাতির কই, মাগুর, শোল, শিং, টাকি, পুঁটি প্রভৃতি মাছ। চার মাস পর পর সেই পুকুর থেকে ১,৪০,০০০.০০ (এক লক্ষ চল্লিশ হাজার) টাকার মাছ বিক্রি করলে প্রতি জন কৃষক মাসে আয় করবে ৩,৫০০.০০ (তিন হাজার পাঁচশ) টাকা।
খ) দুই বিঘা জমির মধ্যে এক বিঘা জমিতে বাঁশের মাচা করে পাঁচ তলাবিশিষ্ট একটি দেশি প্রজাতির মুরগির খামার স্থাপন করা হবে। প্রতি তলায় ১,০০০ করে মোট ৫,০০০ দেশি মুরগি। অন্য এক বিঘা জমিতে মুরগির খাবার হিসেবে ধান, গম, ভুট্টা, ছোলা চাষ করা হবে। সপ্তাহে একদিন করে মাসে চারদিন উপজেলা পশু হাসপাতালের ডাক্তারের সহযোগিতা গ্রহণ করা হবে। মুরগির সুস্থতার জন্য প্রয়োজনীয় পরিমাণ ওষুধ, ভেক্সিন, টিকা প্রভৃতির ব্যবস্থা করা হবে। চার মাস পর পর বিক্রি করলে প্রতিটি মুরগি ১৫০.০০ টাকা দরে ৫,০০০দ্ধ১৫০.০০ = ৭,৫০,০০০.০০ (সাত লক্ষ পঞ্চাশ হাজার) টাকা। প্রতি মাসে এক এক জন কৃষক উপার্জন করবে গড়ে ১৮,৭৫০.০০ (আঠার হাজার সাতশ পঞ্চাশ) টাকা।
গ) চার বিঘা জমিতে স্থাপন করা হবে উন্নত প্রজাতির গরুর খামার। যে গরুগুলো বছরজুড়ে দিনে ২০ লিটার করে দুধ দেয়। এক বিঘা জমিতে নির্মাণ করা হবে গরু থাকবার জন্য আবাস। বাকি তিন বিঘা জমিতে দশ দিন ব্যবধানে প্রতি বিঘা জমিতে নেপিয়ার ঘাস লাগানো হবে যেগুলো কাটবার দশ দিন পর আবার কাটবার উপযোগী হয়। এখান থেকে গরুর খাবার জোগাড় করা হবে। দশটি গরু প্রতিদিন ২০ লিটার হারে ২০০ লিটার দুধ এবং মাসে ৪,০০০ লিটার দুধ উৎপাদন করবে। ৪,০০০ লিটার দুধের দাম হবে ৪,০০০দ্ধ৫০.০০ = ২,০০,০০০.০০ (দুই লক্ষ) টাকা। প্রতি কৃষকের প্রতি মাসে আয় ২০,০০০ (বিশ হাজার) টাকা।
ঘ) অবশিষ্ট ৬ বিঘা জমিতে রোপণ করা হবে ৭৫০টি দারুচিনি গাছ। তিন বছর পর থেকে যেখান থেকে বাৎসরিক গড় উপার্জন ৩০,০০,০০০.০০ (ত্রিশ লক্ষ) টাকা; প্রতি মাসে ২,৫০,০০০.০০ (দুই লক্ষ পঞ্চাশ হাজার) টাকা। প্রতিজন কৃষকের মাসের উপার্জন এ খাতে ২৫,০০০.০০ (পঁচিশ হাজার) টাকা।
ঙ) গাছগুলো তিন বছর পার করলে ৬ফুট দূরত্বে রোপিত গাছগুলো চা বাগানের জন্য ছায়া অর্থাৎ শেড হিসেবে কাজ করবে এবং দ্বিতীয় বছরে সে ৬ (ছয়) বিঘা জমিতে চা বাগান রোপণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। পঞ্চম বছর থেকে শুরু হবে চা উৎপাদন। ৬(ছয়) বিঘা অর্থাৎ ২(দুই) একর চা বাগান থেকে উত্তরবঙ্গে এখন প্রায় ১,৫০,০০০.০০-২,০০,০০০.০০ (দের-দুই লক্ষ) টাকা আয় হচ্ছে প্রতি মাসে। অর্থাৎ প্রতি মাসে দশ জনের চা চাষ বাবদ অতিরিক্ত উপার্জন ১৫,০০০.০০ (পনের হাজার) টাকা।
সব মিলিয়ে ১৫ বিঘা জমি থেকে সমন্নিত উপার্জন এর ফলে এক এক জন কৃষকের সামগ্রিক আয় ৩,৫০০.০০+১৮,৭৫০.০০+২০,০০০.০০+২৫,০০০.০০+১৫,০০০.০০ = ৮২,২৫০.০০ (বিরাশি হাজার দুইশত পঞ্চাশ) টাকা। এ অর্থকে সমান তিন ভাগে ভাগ করে উৎপাদন ব্যয় হিসেবে এক তৃতীয়াংশ, কৃষকের উপাজর্ন বা মুনাফা হিসেবে এক তৃতীয়াংশ এবং বিনিয়োগকারীর উপার্জন বা মুনাফা হিসেবে এক তৃতীয়াংশ নির্ধারণ করা হলে প্রতিটি কৃষকের মাসিক উপার্জন হয় ২৭,৪১৬.৬০ (সাতাশ হাজার চারশ ষোল দশমিক ছয়) টাকা এবং বিনিয়োগকারী হিসেবে আমাদের দলীয় উপার্জন হবে ২৭,৪১৬.৬০দ্ধ১০.০০ = ২,৭৪,১৬৬.০০ (দুই লক্ষ চুয়াত্তর হাজার একশ ছেষট্টি) টাকা। এ অর্থের অর্ধেক ১,৩৭,০৮৩.০০ (এক লক্ষ সাইত্রিশ হাজার তিরাশি) টাকা আমরা রাখবো পরবর্তী বিনিয়োগের জন্য; আর বাকি অর্ধেক ১,৩৭,০৮৩.০০ টাকা জমা হবে আমাদের রাজনৈতিক দলের সম্মিলিত তহবিলে।
আমাদের সেইসব কৃষকদের সহধর্মিণী আছেন ১০জন। শক্ত হাতে যারা ধরে রেখেছেন তাদের নিজ নিজ সংসারের হাল। সে হাতগুলোকেও একটু ব্যবহার করতে চাই আমরা। লোকশিল্প আর লোকঐতিহ্যের আতুরঘর আমাদের গ্রামগুলো। আমাদের সেইসব নারীদের একটু প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে নকশীকাঁথা, বাঁশ, বেত, পাট দিয়ে তৈরি বিভিন্ন লোকশিল্পের নিদর্শন, লোকজ শিল্পবস্তু তৈরি করিয়ে নিয়ে আমাদের সহায়তায় পৌঁছে দেয়া হবে আমাদের দেশের সৌখিন সংগ্রাহকদের হাতে, আমাদের ঐতিহ্যপ্রেমী পরিবারগুলোতে এবং পর্যায়ক্রমে পুরো বিশ্বে। এখান থেকে অর্জিত অর্থও সমান ভাগে ভাগ করে নেবে আমাদের কৃষক পরিবারগুলো।
তাদের সন্তানরা? হ্যাঁ, তাদেরকে পাঠানো হবে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে। তাদের নিজেদের অর্জিত উপার্জন দিয়ে। পুরোপুরি সমর্থ না হলে আমরা তো আছিই। সন্তানকে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করবার জন্য যে ধরনের সহযোগিতা আর সমর্থন দরকার, তার সবটুকুই আমরা দেবো আমাদের দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মদের ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের দায়িত্ব গ্রহণ করবার মতো উপযুক্ত নাগরিকে পরিণত করার জন্য।
আমরা আর কি করবো? তাকিয়ে তাকিয়ে দেখবো আমাদের চোখের সামনে ঘটতে থাকা পরিবর্তনগুলো। পাশাপাশি একটা-দুটা কাজ করবো। শেখাবো বর্জ্য ব্যবস্থাপনা। গ্রামের প্রান্তে, যেখানে লোক সমাগম কম, সেখানে জমা করা হবে বসতবাড়ির সবধরনের আবর্জনাগুলো। বিভিন্ন চেম্বার তৈরি করে এমনভাবে বর্জ্য জমা করা হবে, যাতে দুর্গন্ধ না ছড়ায়। চারপাশে নানা প্রজাতির ফলজ, বনজ, ঔষধি বৃক্ষ রোপণ করে জায়গাটিকে করা হবে দৃষ্টিনন্দন, পরিবেশবান্ধব। এসব বর্জ্য আর আমাদের গবাদি পশু চাষ প্রকল্পের গোবর একত্রিত করে বায়োগ্যাস আর সার তৈরি করে পুরো গ্রামটিকে একটি আদর্শ গ্রাম এ পরিণত করা হবে। গ্রামটি হবে অন্য যেকোনো গ্রামের মধ্যে দেখতে সবচেয়ে সুন্দর আদর্শ গ্রাম, সবচেয়ে সম্ভ্রান্ত গ্রাম। আর আমাদের নেতা-কর্মীরা, আর স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমাদের এ ধরনের প্রকল্পে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়া স্বেচ্ছাসেবক শিক্ষার্থীরা সেই গ্রামে পরিচালনা করবে একটি বয়স্ক ও শিশুশিক্ষাকেন্দ্র। যার প্রধান উদ্দেশ্যই থাকবে মানুষ-জনকে সচেতন করা, প্রাথমিক শিক্ষায় শিক্ষিত করা, দেশের প্রচলিত আইন কানুন সম্বন্ধে ধারনা দেয়া, নারীর মর্যাদা আর নিরাপত্তা বৃদ্ধির কৌশল শেখানো, বিভিন্ন খেলা-ধূলায় ছেলে-মেয়ে আর নারী-পুরুষের সম্মিলিত অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে সামাজিক আড়ষ্টতা আর দূরত্ব হ্রাস করা, কুসংস্কার দূর করা, পরিচ্ছন্নতা শেখানো, স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি, পুষ্টিজ্ঞান শেখানো প্রভৃতি। এটা শুধু একটা গ্রামের চিত্র নয়। আমরা ছড়িয়ে যাবো গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে। পর্যায়ক্রমে দেশের ৮৫-৮৬,০০০ অর্থাৎ সবগুলো গ্রামে।
এটি গেল একটি উদাহরণ। এরকম আরো বিভিন্ন প্রকল্প আমাদের বাস্তবায়নাধীন আছে। প্রতিনিয়ত নতুন নতুন প্রকল্পের পরিকল্পনা এবং সেসব শুরু করবার কার্যক্রমও আছে চলমান, নিরন্তর। আমাদের দেশটাকে এগিয়ে নেবার জন্য, মানুষ-জনকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অর্থ উপার্জনশীল মানুষে পরিণত করবার জন্য, পর্যায়ক্রমে এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে এবং প্রতিটি জেলায় এধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করে আমাদের কৃষকদের এবং গ্রামগুলোর চেহারা আমূল পাল্টে দেওয়া হবে। পরিবর্তন আনা হবে জনগণের আর্থ-সামাজিক অবস্থায়।
সম্মিলিত আর সমন্নিত উদ্যোগের সবচেয়ে বড়ো শক্তি হলো অনেকগুলো মেহনতি হাত আর একাধিক মাথা। বাংলাদেশের সব প্রান্তের, সব জায়গার, সব কাতারের জনতার অংশগ্রহণে সৃষ্ট বাংলাদেশ জাগ্রত জনতা এভাবেই এগিয়ে নেবে দেশের সাধারণ-অসাধারণ কাতারে থাকা সব জনতাকে। আপনারা সঙ্গ দিন। সাহস দিন। সমর্থন দিন। আপনারা আপনাদের পরিশ্রমী হাতগুলো বাড়িয়ে দিন আমাদের দিকে, আমরা সমৃদ্ধ মাথা উঁচু একটি জাতি উপহার দেবো আপনাদেরকে।
বর্জ্য ব্যবস্থাপনা
গ্রামগুলোতে কীভাবে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করা হবে, তার আলোকপাত সংক্ষেপে করা হয়েছে। এখন আসি শহর-নগর-রাজধানীর বর্জ্য ব্যবস্থাপনার প্রসঙ্গে। রাজনৈতিক দলগুলোকে রাজনীতি করা এবং রাষ্ট্র পরিচালনা করা শেখানোও এর আর একটি উদ্দেশ্য। তবে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই অনেক লোকবল নেই আমাদের। তবে দৃঢ় বিশ্বাস, সমর্থক থাকবে অনেক বেশি। যে সমর্থকদের আমরা বলবোনা আসো আমাদের পেছনে দাঁড়িয়ে রাজপথ দখল করো, আসো আমাদের রাজনৈতিক সমাবেশকে লোকে-লোকারণ্যে পরিণত করো। আমাদের উদ্দেশ্য মানুষ-জনকে সহজ জীবনাচারণ শেখানো এবং এক একটি উদ্যোগের সাথে সংশ্লিষ্ট এবং সম্পৃক্ত করে দেওয়া। সংযোগ ঘটানো একটি প্রকল্পের সাথে আর একটি প্রকল্পের। গবেষকের গবেষণা কাজ এবং তার ফলাফলকে বৃহত্তর পরিসরে ব্যবহার করা। আমরা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের একজন শিক্ষককে চিনি এবং তার কর্মকা-ের ব্যাপারে খোঁজ-খবর রাখি। বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি খুব সুন্দর একটি বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রকল্প শুরু করেছেন। পুরো বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বর্জ্যগুলো দিনের নির্দিষ্ট সময়ে সংগ্রহ করে ক্যাম্পাসের প্রান্তে লোক সমাগম নেই এমন একটি নির্দিষ্ট জায়গায় নির্ধারিত আধারে বর্জ্য জমিয়ে বায়োগ্যাস উৎপাদন এবং বর্জ্যরে উচ্ছিষ্ট অবশিষ্টাংশ সার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। আমরা প্রত্যেকটি জেলা এবং উপজেলা শহরে এধরনের প্রকল্প সৃষ্টি করতে এবং এর সাথে আগ্রহী উদ্যোক্তাদের সম্পৃক্ত করতে সহায়তা প্রদান করবো। এতে বর্জ্যরে ব্যবস্থাপনা হবে, পরিবেশ দুষণ কমবে, নগরের সৌন্দর্য বাড়বে, প্রকল্পের আশপাশের ঘর-বাড়িতে বায়োগ্যাস সংযোগ দেয়া সম্ভব হবে, কৃষকেরা সহজে প্রাকৃতিক সার সংগ্রহ ও ব্যবহার করতে পারবে এবং অল্প বিস্তর কর্মসংস্থানের সৃষ্টির পাশাপাশি অর্থ উপার্জনের পথ তৈরি হবে।
রাজধানী ঢাকা বা দেশের অন্যান্য বিভাগীয় শহরগুলোতে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য সিটি কর্পোরেশন দায়িত্বপ্রাপ্ত। নগরীকে সুন্দর, পরিচ্ছন্ন, ব্যবহারোপযোগি, স্বাস্থ্যকর এবং বাসযোগ্য রাখতে হলে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচনায় রাখতে হবে। ভালো বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কার্যকর থাকলে বিশ্বে বসবাসের নগরী হিসেবে ঢাকার অবস্থান আর যেখানেই হোক না বা কেন, তলানিতে থাকতোনা। সিটি কর্পোরেশন সরকারি প্রতিষ্ঠান এবং কাজ করবার জন্য এখানে লোকবলের স্বল্পতা থাকবার কথা নয়। লোকবল কম থাকলেও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য রাজধানী বা অন্যান্য বিভাগীয় নগরীগুলোতে যে পরিমাণ ভাসমান লোক আছে, তাদেরকে খ-কালীন হিসেবে কাজে লাগিয়ে এখানকার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করা খুব কঠিন কাজ নয় কখনোই। ঢাকায় বসবাসকারী এখানকার বাসিন্দা প্রতিটি নাগরিকের অন্তত একটা বাজে অভিজ্ঞতা থাকাটা এখন দৈনিক একটা অভ্যেসে পরিণত হয়েছে। আর সেটি হচ্ছে নগরীর প্রধান প্রধান ব্যস্ততম সড়কের পাশে জমে থাকা আবর্জনার স্তুপ; ফল হিসেবে তীব্র দুর্গন্ধ। রোজ সকালে আর বিকালে অফিস যাবার বা ফেরার পথে, বাচ্চাদের স্কুলে যাওয়া আর ফেরার পথে, হাট-বাজার-সদাই করবার জন্য পথ দিয়ে যাবার সময় তীব্র, উৎকট গন্ধে দম বন্ধ হয়ে যাবার উপক্রম বা বমিভাব আসা এমন অভিজ্ঞতা হয়নি, এমন নাগরিক সম্ভবত একটিও নেই। সংশ্লিষ্ট দ্বিতীয় আর একটি বাজে অভিজ্ঞতা হলো রাস্তা-ঘাটে রিক্সা-বাস-প্রাইভেট কার, যে বাহনেই চলুন না কেন, হঠাৎ করে আবর্জনাবাহী একটা গাড়ি বা ট্রাক ওভারটেক করলেই ব্যাস, ঢাকার যে ট্রাফিক জ্যাম, তাতে করে প্রায় পুরোটা সময় নাক-মুখ চেপে চলতে হয়; ভাগ্য খুব ভালো না থাকলে। আবার সেসব আবর্জনাবাহী বাহন থেকে অল্প অল্প আবর্জনা প্রায় পুরো রাস্তাব্যাপী একটি সরল রেখায় পড়তে পড়তে নিজের চিহ্ন রেখে এগিয়ে যায়। আবর্জনা সংশ্লিষ্ট তৃতীয় অভিজ্ঞতাটিও পীড়াদায়ক। আবর্জনাগুলো চূড়ান্তভাবে জমা করা হয়, রাজধানীর প্রবেশমুখের ডানে বা বামে খোলা কোনো মাঠ বা খালের মধ্যে। দেশের প্রধান নগরীতে প্রবেশের ঠিক আগ মুহূর্তে রাজধানী স্বাগত জানায় উৎকট এক গন্ধ দিয়ে। দেশের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, আমলা, সিটি কর্পোরেশনের মেয়ররা কাঁচ ঢাকা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত গাড়ি চেপে সে উটকো গন্ধ পাননা, কিন্তু আমরা সাধারণ জনগণরা? দেশটাতো সমানভাবে আমাদেরও। আমরা এরকম বাজে অভিজ্ঞতার মুখোমুখী হবো কেন?
আমরা ক্ষমতারোহণ করলে আমাদের রাজধানীকে তিলোত্তমা নগরী হিসেবে গড়ে তুলবো। সেটা সুদূর ভবিষ্যতের কথা। তবে রাষ্ট্র ক্ষমতায় বসার আগেও আমরা এ নগরীটিকে সুন্দর বাসযোগ্য রাখতে পারি। এর জন্য আমাদের, এখানকার নাগরিকদের হতে হবে একটু সচেতন। আর আমরা বেসরকারি উদ্যোগে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুকরণে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রকল্প গ্রহণ করতে আগ্রহী প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তি বা উদ্যোক্তা গোষ্ঠীকে/দের উৎসাহিত করবো নগরীকে সুন্দর, দূষণমুক্ত, বাসযোগ্য রাখতে। প্রয়োজনে আমাদের সাথে সংশ্লিষ্ট নেতা-কর্মী বা সমর্থক যে কাউকেও আমরা এ প্রকল্প তৈরি করে দেবো; যাতে আমাদের উদ্দ্যেশ্যও হাসিল হয়, পাশাপাশি সংশ্লিষ্টজনের আয় উপার্জনের ব্যবস্থাও হয়।
গণ-গ্রন্থাগার স্থাপন ও বইপড়া কর্মসূচী
আমাদের দলীয় উদ্যোগে, দলের নেতা-কর্মীদের উদ্যোগে বা সমর্থক বা অসমর্থক আগ্রহী যেকোনো ব্যক্তির মাধ্যমে আমরা গণ-গ্রন্থাগার স্থাপন করবো প্রতিটি জেলা এবং উপজেলা শহরে। বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের আদলে আমরা আমাদের বইপড়া কর্মসূচীকে ছড়িয়ে দেবো গ্রাম, ইউনিয়ন, উপজেলা এবং জেলা পর্যায়ে। পাশাপাশি আমরা বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রকে অনুরোধ করবো তাদের অভিজ্ঞতা দিয়ে আমাদের প্রকল্পে সহায়তা প্রদানের। আমরাও সমানভাবে তাদের বই পড়া কর্মসূচীতে যদি তাদের কোনো ধরনের সহযোগিতা প্রয়োজন হয়, এগিয়ে দেবো আমাদের সহযোগিতার হাত।
ব্রতচারী আন্দোলন
সামাজিকভাবে একজন মানুষ বা একটি সামাজিক গোষ্ঠীকে এগিয়ে নেবার জন্য, সমাজে সুস্থ-সাবলিল জীবন যাপনের জন্য, সমাজের মানুষের মধ্যে সম্প্রীতি স্থাপনের জন্য, ব্যায়াম ও খেলা-ধূলার সুন্দর ব্যবস্থা করে মানসিক ও শারীরিক বিকাশের জন্য, নারী-পুরুষের মধ্যকার সুসম্পর্ক স্থাপন এবং নারীর সম্মান বৃদ্ধির জন্য, মানুষকে নির্দিষ্ট ব্রতে ব্রতী করে কাজে মনোযোগী করবার এবং গতিশীলতা আনবার জন্য, বৃক্ষ রোপণ, বিভিন্ন সামাজিক উদ্যোগ গ্রহণ করে আর্থিকভাবে লাভবান হবার জন্য নির্দিষ্ট কিছু ব্রত মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিয়ে দলগতভাবে সমাজকে এগিয়ে নেবার জন্য ব্রতচারী আন্দোলন একটি অসাধারণ সামাজিক উদ্যোগ। ব্রিটিশ সময়পর্বে বেশ জনপ্রিয় এবং সফল এ ব্রতচারী আন্দোলনটিকে বর্তমানে ছায়ানট ছড়িয়ে দিচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং সামাজিক প্রতিষ্ঠানে। আমরা ছায়ানটকে অনুরোধ করবো আমাদেরকেও তাদের এ আন্দোলনে সহায়তা আর দীক্ষা দিতে। একইভাবে আমরাও তাদের দিকে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেবো একদিকে ব্রতচারী আন্দেলনকে দেশব্যাপী ছড়িয়ে দিতে এবং প্রয়োজনীয় পরিমাণ প্রাতিষ্ঠানিক এবং লোকজ সহায়তা প্রদান করতে। পর্যায়ক্রমে তাদের ছায়ানটের সমান্তরালে সমাজকে এগিয়ে নেবার জন্য আমরাও সারা দেশে ছড়িয়ে দেবো এ আন্দোলন।
স্বদেশি আন্দোলন
আমরা মাছে-ভাতে বাঙালি। আমাদের বাংলাদেশ আর এখানকার উৎপাদক শ্রেণি; আমরা অনেক ভালো মানের পণ্য উৎপাদন করি। আমাদের খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা এ পাঁচটি মৌলিক চাহিদার পাশাপাশি অন্যান্য প্রাসঙ্গিক চাহিদাগুলো পূরণ করবার জন্য আমাদের দেশিয় অর্থাৎ স্বদেশি পণ্য উৎপাদকরাই যথেষ্ঠ। আমাদের কৃষকেরা ফলায় সোনার ফসল। আমাদের আছে খদ্দর, টাঙ্গাইল শাড়ি, জামদানি, রাজশাহীর সিল্ক, মিরপুরের বেনারসি পল্লীর কাপড়, কুষ্টিয়া, সিরাজগঞ্জ, পাবনার তাঁত, মণিপুরী কাপড়, চাকমা জনগোষ্ঠীর তৈরি কাপড়, মান্দি জনগোষ্ঠীর তৈরি কাপড়সহ অন্যান্য অঞ্চলের হাতে বোণা কাপড় আর বিশাল বিস্তৃত গার্মেন্টস খাত। নির্মাণ উপকরণের প্রায় সবগুলো উপাদান আমরা আমাদের দেশেই উৎপাদন করে থাকি, শিক্ষায় অনেক এগিয়ে গিয়েছি আমরা, পাশাপাশি আমাদের সমাজ, সংস্কৃতি, পরিবেশ- সবকিছুর মধ্যে আছে শিক্ষা সংশ্লিষ্ট বিবিধ উপকরণ, আমাদের শিক্ষার্থী, শিক্ষক, গবেষকরা এখন নিজেরাই যথেষ্ঠ দক্ষতা অর্জন করে তৈরি হয়েছে নিজের দেশকে গঠনের জন্য। শিক্ষা সংশ্লিষ্ট খাতে অগ্রগতির জন্য উচ্চশিক্ষায় শিক্ষার্থী ও গবেষকদের বৃত্তি প্রদান করে বিদেশে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণে প্রেরণ করে দক্ষ ও অভিজ্ঞ জনশক্তিতে রূপান্তরিত করবার মাধ্যমে আমরা আমাদের দেশকে এগিয়ে নেবো আরো অনেক দূর। চিকিৎসা ক্ষেত্রে কিছুটা দুর্বলতা থাকলেও আমাদের চিকিৎসকরাই তো আমাদের চিকিৎসা প্রদান করছেন। এ সেক্টরেও আমাদের বৈদেশিক নির্ভরতা দিন দিন কমছে। বৈদেশিক নির্ভরতা কমানোর জন্য আমাদের সহযোগিতায় আরো বেশি পরিমাণ চিকিৎসককে উন্নত প্রশিক্ষণ আর শিক্ষার জন্য বিদেশি ভালো মানের প্রতিষ্ঠানগুলোতে বৃত্তি প্রদান করে উচ্চশিক্ষার জন্য প্রেরণ করা হবে। অন্যান্য সেক্টরেও আমাদের আছে নানা ধরনের বহুমুখী দক্ষতা। আমাদের কাঁসা-পিতল শিল্প, লোকশিল্প, লোকজ ঐতিহ্য, কারুকাজ, হাতের কাজ অনেক বেশি মানসম্পন্ন এবং আমাদের দেশে এখন নির্মিত হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের ইলেকট্রনিক্স পণ্য। দৈনন্দিন ব্যবহার্য বিবিধ পণ্যদ্রব্য এখন আমরা নিজেরাই উৎপাদন করি, যেগুলো মান এবং উৎকর্ষতায়ও সেরা। আমরা আমাদের স্বদেশি আন্দোলনের মাধ্যমে আমাদের নিজেদের উৎপাদনের উপর নির্ভরতা বাড়াবো, পাশাপাশি আমাদের পণ্যের মান বিশ্ব পর্যায়ে উন্নীত করবার পাশাপাশি সেগুলোকে সাধারণ জনগণের ক্রয়সীমার মধ্যে রাখতে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা আর সমর্থন প্রদান করবো; আমরা আমাদের দেশের পণ্য ব্যবহার করবো; আমাদের দেশের পণ্য ব্যবহার করতে আমাদের জনগণকে উৎসাহিত করবো। আমাদের পণ্য আমরা বিদেশে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জন করে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধি করবো।
সত্যাগ্রহ আন্দোলন
আমরা ফিরিয়ে আনবো পুরানো কতগুলো সামাজিক আন্দোলনকে। দেশের মানুষের মধ্যে আত্মনির্ভরশীলতা, সততা, একে অপরের উপর বিশ্বাস, সহমর্মিতা, সহযোগিতার মনোভাব, নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গী, আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধির জন্য সত্যাগ্রহ আন্দোলন এর সূচনা করা হবে। আমদের অতিমাত্রায় প্রয়োজন ঘুষ-দুর্নীতির প্রবণতা থেকে বের হয়ে আসা। আমাদের কর্মক্ষেত্রে নথি চালা-চালিতে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গী আর মানসিকতার কারণে সৃষ্টি হয় দীর্ঘসূত্রীতা। আমাদের কর্মক্ষেত্রে আমরা সময়ক্ষেপণ করি অনেক বেশি। কর্মক্ষেত্রে আমাদের গাফিলতির কারণে লেগে যায় কাজে জট। যার যে কাজ সেটা না করে আমরা অন্যের পেছনে সময়ক্ষেপণ করি অনেক বেশি। সরকারি ইউনিয়ন পরিষদ থেকে শুরু করে সচিবালয় বা মন্ত্রিপরিষদ বা বেসকারি ও প্রাইভেট সেক্টরে আমাদের কর্মক্ষেত্রে জবাবদিহিতা প্রায় নেই বললেই চলে।
আমাদের সমাজে আমরা নারীদের মূল্যায়ন করে থাকি অনেক কম। দেশে নারী, কিশোরী, শিশু নির্যাতনের হার অনেক বেশি। এখানে যৌন নির্যাতন, ধর্ষণ, শ্লীলতাহানি, শারীরিক আঘাত, ইভটিজিং, এসিড সন্ত্রাস, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন এর হার আশংকাজনক পরিমাণে বেশি। আমাদের দেশে সন্ত্রাসী কার্যক্রম, অপহরণ, গুম, হত্যা, ব্ল্যাক মেইলিং এর সংখ্যাও বেড়ে গিয়েছে আশংকাজনক হারে। জননিরাপত্তা অনেক কম। একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ ক্রমে নি¤œগামী।
আমাদের রাজনৈতিক দলসহ অন্যান্য নানাক্ষেত্রে দায়িত্বশীলরা, যাদের পক্ষে সম্ভব ছিল সঠিকভাবে নির্দিষ্ট কাজ করা এবং কার্যোদ্ধার করা তাদের প্রায় সকলেই আজ কথাসর্বস্ব। কাজ না করে কথা বলা হয় অনেক বেশি। আমাদের দেশের সাধারণ মানুষজন কার্যোদ্ধার করতে যেয়ে নানা ধরনের জটিলতা আর দীর্ঘসূত্রীতার মুখোমুখী হবার কারণে প্রায় সবার মধ্যে কার্যোদ্ধার করার ক্ষেত্রে প্রথমেই কাজ করে ‘কাজটি করবার জন্য কার সুপারিশ দরকার, কতো টাকা উৎকোচ দিতে হবে অথবা নিয়মের তোয়াক্কা না করে কিভাবে সহজে কাজটি সম্পন্ন করা যায়’-এ ধরনের বিষয়গুলো। চাকরি পাবার ক্ষেত্রে কাজ করে সুপারিশকারীর অনুসন্ধান, উৎকোচ প্রদানের জন্য নির্দিষ্ট ব্যক্তিটির খোঁজ প্রভৃতি। মানুষ-জন হর হামেশা লঙ্ঘন করেন আইন-কানুন। রাস্তা পার হবার জন্য তাড়াহুড়ো করে ট্রাফিক আইন না মেনে রাস্তা পার হওয়া, ফুট ওভার ব্রিজ থাকবার পরও সেটি ব্যবহার না করে ফুট ওভার ব্রিজ এর নিচ দিয়ে রাস্তা পাড় হওয়া, রেল ক্রসিং এর সময় প্রতিবন্ধকতা না মেনে তাড়াহুড়ো করে সেটি পার হওয়া, বাসে উঠবার সময় বিপদ জেনেও দৌঁড়ে বাসে ওঠা, দাঁড়িয়ে দড়জায় ঝুলে বাসে যাতায়াত করা প্রভৃতি হয়ে গিয়েছে নৈমিত্তক সাধারণ স্বাভাবিক ঘটনা। মানুষ-জন ধূমপান করেন প্রকাশ্যে, লোকসমাগমপূর্ণ স্থানে। আইন অমান্য করা হয় প্রতি পদে।
কার্যোদ্ধার করা বা সফল হবার এমন নিরন্তর নেতিবাচক প্রচেষ্টাগুলোর কারণ আমাদের কারোরই অজানা নয়। কোথায়, কেন, কীভাবে ঘটছে তাও আমাদের অজানা নয়। সবচেয়ে বড়ো কথা, বলা কথা বা কাজগুলো আমি না করলে, হয়তো অন্য কেউ সে একই পন্থা অবলম্বন করে গ্রহণ করবে সে সুযোগ। যোগ্যতার খুব বেশি মূল্যায়ন হয়না আমাদের দেশে, মূল্যায়ন হয় তাদের, যারা পেছনের দড়জাটি ব্যবহার করতে পারে সফলভাবে। আমরা জানি রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য সবচেয়ে দক্ষ, অভিজ্ঞ এবং মেধা তালিকায় সামনের কাতারে থাকা প্রার্থী বা ব্যক্তিটিই সবচেয়ে বেশি যোগ্যতার প্রমাণ রাখতে সক্ষম কর্মক্ষেত্রে, যে ব্যক্তিটিকে কাজে লাগিয়ে সবচেয়ে বেশি লাভবান হতো রাষ্ট্র এবং স্বভাবতই দেশের জনগণ। নিয়োগপ্রক্রিয়ায় দুর্নীতি, রাজনৈতিক দরকষাকষি, সুপারিশ, ছাত্র রাজনীতির পুরস্কার প্রভৃতি কারণে এক্ষেত্রে লাভবান হচ্ছে কতিপয় ব্যক্তি, শ্রেণি বা গোষ্ঠী; যারা একদিকে তৈরি করছে আমাদের সবার মধ্যে দুর্নীতি প্রবণতা, অন্যদিকে দেশকে করছে চূড়ান্ত মাত্রায় ক্ষতিগ্রস্ত।
এসব কিছু দূর করবার জন্যই আমরা সত্যাগ্রহ আন্দোলনের সূচনা করবো। মানুষের মনন আর মানসে তৈরি করবো পরিবর্তন আর সততার বোধ। মানুষ-জনকে সম্মিলিত করে সে সম্মিলিত শক্তির মাধ্যমে বন্ধ করা হবে দুর্নীতি, বা যেকোনো ধরনের সামাজিক অনিয়ম এবং নিরাপত্তাহীনতা। আমাদের সম্মিলিত শক্তি হবে বিপদগ্রস্ততার জায়গা থেকে আমাদের নারীদের শক্তি আর নির্ভরতা। আমাদের নারীরা হবে আত্মনির্ভরশীল।
ঘুষ-দুর্নীতি, অতিরিক্ত অর্থ উপার্জনের জন্য নেতিবাচক কর্মকা- থেকে বেরিয়ে সৎপথে অনেক বেশি অর্থ উপার্জনের সুযোগ তো আমরা তৈরি করেই রাখছি। সহজভাবে, সমন্নিত সমবায় উদ্যোগের মাধ্যমে আপনারা উপার্জন করতে পারবেন প্রয়োজনীয় পরিমাণ অর্থ। প্রয়োজন হবেনা দুর্নীতির যেকোনো ধরণের বলয়ে অবস্থান করার।
বৃক্ষরোপণ কর্মসূচী
আমরা দেশব্যাপী গাছ লাগাবো। বিভিন্ন ফলজ, বনজ এবং ঔষধি। প্রচুর পরিমাণে, ব্যাপক-বিস্তৃত জায়গাজুড়ে। আমাদের জনগণ, গ্রামের কৃষক, মজুর, গৃহস্থ, সম্ভ্রান্ত লোকজনের বসতবাড়ির আশ-পাশ, কৃষি বা পতিত জমি, মফস্বল শহর, ছেটো-বড়ো জেলা শহর, বা অন্যান্য নগরগুলোর বাসাবাড়ীর আশ-পাশ, খোলা বা ফাঁকা জায়গা, বড়ো বড়ো বিভাগীয় শহর, সিটি কর্পোরেশন, রাজধানীর যেসব স্থানেই সম্ভব গাছ লাগাতে সবাইকে উৎসাহিত করা হবে। আমাদের নেতা-কর্মী, সংগঠক, সমর্থক সবাইকে তাদের মোট জমির ২৫ শতাংশ স্থানে বৃক্ষ রোপণ করবার পরামর্শ দেবার পাশাপাশি দলীয়ভাবে সহযোগিতা ও নির্দেশনা প্রদান করে আমাদের গৃহীত অন্যান্য প্রকল্প ও প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে গাছ লাগাতে সহায়তা প্রদান করা হবে। আমাদের যেকোনো অবকাঠামোর জন্য নির্বাচিত স্থানের ২৫ শতাংশ জায়গায় গাছ লাগানো হবে।
নগর ও গ্রাম পরিকল্পনা
আমরা আমাদের গ্রাম আর শহরগুলোকে গড়ে তুলতে চাই সৌন্দর্যে তিলোত্তমা আর ছবির মতো অপরূপ আর সাজানো-গোছানো হিসেবে। এর জন্য আমাদের থাকবে বিভিন্ন উন্নয়ন পরিকল্পনা, পাশাপাশি নগর-অঞ্চল পরিকল্পনাবিদ, পুরাকৌশল প্রকৌশলী, স্থপতি, ভূগোল ও পরিবেশবিদ, ভূতাত্ত্বিক, ঐতিহাসিক, নৃতাত্ত্বিক, প্রতœতাত্ত্বিক, মনস্তাত্ত্বিক সমন্বয়ে গঠিত বিশেষজ্ঞ দল আমাদের উন্নয়ন পরিকল্পনা আর প্রকল্প প্রণয়নে সহযোগিতা করবেন। গ্রাম ও শহরের পরিচ্ছন্নতার কথা আমরা আলোচনা করেছি। বৃক্ষ রোপণের কথাও আলোচিত হয়েছে। দুটি প্রকল্পের মাধ্যমেই যেকোনো স্থান, গ্রাম বা নগরকে সুন্দরভাবে উপস্থাপনের পাশাপাশি পরিবেশবান্ধব ও বাসোপযোগি করে গড়ে তোলা সম্ভব।
যেকোনো স্থানের সুন্দর বাসযোগ্য বাসস্থান হিসেবে ব্যবহৃত হবার জন্য কয়েকটি আবশ্যকীয় বৈশিষ্ট্য থাকা আবশ্যক। এধরনের বৈশিষ্ট্য প্রদানের জন্য বাংলাদেশ জাগ্রত জনতা সক্রিয়ভাবে কাজ করে যাবে রাজনীতির মঞ্চে দাঁড়িয়ে।
প্রথম বৈশিষ্ট্য, চলাচলের জন্য প্রয়োজনীয় পরিমাণ সড়ক। এক্ষেত্রে সরলরেখায় এবং আড়াআড়িভাবে পরিকল্পিত সড়ক নেটওয়ার্ক গুরুত্বপূর্ণ। সেটি না হলেও বিদ্যমান সড়ক ব্যবস্থায় যান চলাচলের জন্য কোনো ট্রাফিক সিগন্যাল ছাড়া বিরতিহীন ব্যবস্থা একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। আমরা বিভিন্ন ট্রাফিক ক্রসিং অর্থাৎ চৌরাস্তা বা একাধিক রাস্তার মিলনস্থলে কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতা ছাড়া অবিরাম যান চলাচলের একটি বিস্তারিত অবকাঠামোগত ভূমি পরিকল্পনা প্রণয়ন করবো।
দ্বিতীয় বৈশিষ্ট্য, সড়কের পাশাপাশি আর একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো জনচলাচলের জন্য পর্যাপ্ত খোলা জায়গাসম্বলিত, সৌন্দর্যম-িত, পরিবেশবান্ধব নিরাপদ ফুটপাথ, যেগুলো দোকান বা অন্য যেকোনো ধরনের বাণিজ্যের জন্য ব্যবহৃত বা দখলকৃত নয়। আমরা দেশের প্রতিটি ফুটপাথকে সে বৈশিষ্ট্য দান করার পরিকল্পনা প্রণয়ন করবো।
তৃতীয় বৈশিষ্ট্য, শিক্ষার্থীদের পড়া-লেখার জন্য সুষ্ঠু পরিবেশ, পর্যাপ্ত ভালো মানের শিক্ষক সম্বলিত পর্যাপ্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে পর্যাপ্ত খোলা জায়গা। দেশের জন্য প্রয়োজনীয় এবং কার্যকরী উন্নতমানের শিক্ষা পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হবে।
চতুর্থ বৈশিষ্ট্য, দৈনন্দ্যিন খাদ্য-বস্ত্র-বাসস্থান-শিক্ষা-চিকিৎসা সম্পর্কিত পণ্য এবং অন্যান্য নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য পরিচ্ছন্ন, জল নিষ্কাষণ সুবিধা সম্বলিত, ফরমালিন, বিষাক্ত এবং ভেজাল উপাদানমুক্ত পর্যাপ্ত হাট-বাজার। জনস্বার্থে প্রত্যেকটি পণ্যের দাম নির্দিষ্ট করে দেয়া, যাতে কিনবার সময় কোনো ক্রেতার বাড়তি সময় নষ্ট না হয়, কোনো রকম হেনস্থা হতে না হয় এবং ক্রেতা যাতে কোনোভাবেই না ঠকেন। এক্ষেত্রে মূল্য নির্ধারণে বিক্রেতাদের লাভের দিকটিও বিবেচনা করা। বাংলাদেশ জাগ্রত জনতা হাট, বাজার, গ্রাম, গঞ্জে ব্যাপক প্রচারণা চালিয়ে সব ধরনের অব্যবস্থাপনা দূর করতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করবে।
পঞ্চম বৈশিষ্ট্য, পর্যাপ্ত চিকিৎসা সুবিধা সম্বলিত চিকিৎসাসেবা কেন্দ্র এবং প্রয়োজনীয় ঔষধ প্রাপ্তির নিশ্চয়তা। আমরা আমাদের সাধ্যমত বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা এবং গরীবদের মাঝে ঔষধ বিতরণ করবো।
ষষ্ঠ বৈশিষ্ট্য, নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তা এবং নিরাপত্তাজনিত যেকোনো আশংকা থেকে মুক্ত আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক পরিবেশ। প্রতিটি অঞ্চল তথা পাড়া, মহল্লা এবং ওয়ার্ডে বাংলাদেশ জাগ্রত জনতার একটি সামাজিক নিরাপত্তা কমিটি থাকবে, যারা এলাকার সাবাইকে সংগঠিত করার মাধ্যমে নিরাপত্তা বলয় রচনা করবে।
সপ্তম বৈশিষ্ট্য, ধর্ম পালন তথা উপাসনার জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক এবং অসাধারণ সৌন্দর্যম-িত ও বিশ্বে অনন্য স্থাপত্যিক বৈশিষ্ট্যের পর্যাপ্ত মসজিদ, মন্দির, প্যাগোডা, চার্চ এবং অন্যান্য উপাসনালয়। আমরা আমাদের সাধ্যমত বেসরকারি উদ্যোগে সেসব অবকাঠামো নির্মাণ করবো। সরকার গঠন করলে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় অবকাঠামো নির্মাণকাজে সহায়তা প্রদান করা হবে।
অষ্টম বৈশিষ্ট্য, হাঁটবার এবং ব্যায়াম করবার জন্য পর্যাপ্ত গাছ-পালাসমৃদ্ধ মাঠ, পার্কসহ বিভিন্ন খোলা স্থান। এ ধরনের স্থান তৈরির জন্য বাংলাদেশ জাগ্রত জনতা দেশের জনগণকে বিভিন্ন ধরনের পরামর্শগত সহায়তা প্রদান করবে। তাছাড়া সরকার গঠন করা হলে প্রতিটি ইউনিয়ন পর্যায়ে সেসবের ব্যবস্থা করা হবে।
নবম বৈশিষ্ট্য, চলাচল অর্থাৎ এক স্থান থেকে আর এক স্থানে গমনাগমনের জন্য প্রতিটি রুটে নির্দিষ্ট সময় পর পর পর্যাপ্ত পাবলিক পরিবহণ। গাড়িতে ওঠার জন্য নির্দিষ্ট স্টপেজ। সারিবদ্ধভাবে গাড়িতে উঠবার ব্যবস্থা। পাবলিক পরিবহণে পর্যাপ্ত সংখ্যক বসার সিট এর ব্যবস্থা, যাতে দাঁড়িয়ে যাতায়াত না করা হয়। নগরগুলোতে যান চলাচলের গতি নির্দিষ্ট করে দেয়া, যাতে সড়ক দুর্ঘটনা না ঘটে। পরিবহণ চালকদের ট্রাফিক আইন মেনে চলতে শেখানো এবং ট্রাফিক আইন ও সিগন্যাল মানার নিশ্চিন্ততা বিধান। এক্ষেত্রে দেশের সব ধরনের প্রতিষ্ঠানকে বাংলাদেশ জাগ্রত জনতা প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদান করবে। সরকার গঠন করলে নিশ্চিতভাবে এ খাতে উন্নয়ন ঘটানো হবে।
দশম বৈশিষ্ট্য, পরিচ্ছন্ন নগর। বাংলাদেশ জাগ্রত জনতার সম্ভাব্য কার্যক্রম পূর্বেই আলোচনা করা হয়েছে। সরকার গঠন করলে সব অঞ্চলের জনগণকে সাথে নিয়ে আমরা আমাদের নিজেদের স্থান পরিচ্চন্ন রাখবো।
একাদশ বৈশিষ্ট্য, নগরিতে বসবাসকারী এবং এখানে ঘুরতে আসা যে কারো জন্য বিনোদনের পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা।
দ্বাদশ বৈশিষ্ট্য, রাজনৈতিক সভা, সমাবেশ, মিটিং বা সামাজিক-সাংস্কৃতিক কর্মকা- সম্পাদন, মেলার আয়োজন এবং এ ধরনের অন্যান্য কার্য সম্পাদনের জন্য প্রয়োজনীয় এবং পর্যাপ্ত জায়গা সম্বলিত মাঠ। আমরা কখনোই জনগনের কাজে বা চলাচলে বিঘœ ঘটিয়ে কোনো সভা সমাবেশ করবোনা। সভা-সমাবেশ, মিছিল-মিটিং করা হবে মাঠে। সরকার গঠন করলে সভা-সমাবেশ করবার জন্য নির্দিষ্ট স্থান নির্ধারণ করে দেয়া হবে।
ত্রয়োদশ বৈশিষ্ট্য, নগরির ঐতিহাসিক, প্রতœতাত্ত্বিক এবং ঐতিহ্যম-িত স্থানসমূহের সংরক্ষণ এবং ব্যবস্থাপনা। পাশাপাশি জনগণের পরিদর্শনের জন্য এগুলোকে সবার জন্য উন্মুক্ত করা। আমরা আমাদের নিজস্ব উদ্যোগে এ ধরনের ব্যবস্থাপনা এবং পরিদর্শনের স্থানসমূহকে দর্শকদের পরিদর্শনের জন্য উপযুক্ত স্থান হিসেবে গড়ে তুলতে সহায়তা প্রদান করবো।
চতুর্দশ বৈশিষ্ট্য, প্রয়োজন এবং সামর্থ্য অনুযায়ী পর্যাপ্ত সংখ্যক জাদুঘর, চিড়িয়াখানা, বোটানিকাল গার্ডেন, শিশুপার্ক, দর্শনীয় স্থান, সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান, সামাজিক প্রতিষ্ঠান, জনসেবামূলক প্রতিষ্ঠান এর উপস্থিতি। আমরা আমাদের উদ্যোগে বেসরকারি এসব স্থাপনা নির্মাণ করবো। সরকার গঠন করা হলে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় এসব পরিচালনা করা হবে, পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোগকে উৎসাহিত করা হবে।
পঞ্চদশ বৈশিষ্ট্য, যেকোনো স্থানের স্থানিক সৌন্দর্য। নগরির রাস্তার মোড়গুলোতে বিভিন্ন ঐতিহাসিক, গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, ইতিহাস, ঘটনার সাথে জড়িত ঘটনার ছোটো-বড়ো স্থাপত্য, ভাস্কর্য, ম্যূরাল নির্মাণ। বিভিন্ন স্থাপত্য এবং অবকাঠামোর দেয়াল এবং প্রাচীরে টেরাকোটার অলঙ্করণ, শিল্পকর্ম, চিত্রশিল্প প্রভৃতি স্থাপন বা অঙ্কণ। নগরীগুলোতে অসাধারণ, অনন্য এবং প্রয়োজন অনুযায়ী বৃহৎ আকারের স্থাপত্য। আমাদের মাধ্যমে বেসরকারি উদ্যোগে উল্লিখিত শিল্পকর্মগুলো স্থাপন করা হবে। সরকার গঠন করলে এ ব্যাপারে পর্যাপ্ত সহযোগিতা প্রদান করা হবে।
ষষ্ঠদশ বৈশিষ্ট্য, গ্রাম বা নগরির আশপাশে বা উপর দিয়ে প্রবাহিত নদী ও খালগুলোর জল নিষ্কাশণ ব্যবস্থাকে গতিশীল রাখা যাতে এসব নদী পথে পর্যাপ্ত পানি পরিবাহিত হয়। প্রাকৃতিক নদ-নদী ও খাল-বিলের বাইরে কৃত্রিম খাল-বিল ও জলাশয় থাকা; যাতে একদিকে গ্রাম বা নগরির জল নিষ্কাশন ঠিক থাকে অন্য দিকে সেসব স্থানের জনগণের জন্য মাছ চাষ করে মাছের সরবরাহ নিশ্চিত করবার পাশাপাশি নিরবিচ্ছিন্ন করা যায়।
সপ্তদশ বৈশিষ্ট্য, উন্নত জল নিষ্কাশন ব্যবস্থা। বিশুদ্ধ পানীয় জল সরবরাহ নিশ্চিত করবার পাশাপাশি দূষিত এবং ব্যবহৃত জল নির্গত হবার সুষ্ঠু ব্যবস্থা। আমরা এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করবো।
অষ্টাদশ বৈশিষ্ট্য, বন্যা ব্যবস্থাপনা। বর্ষা, অতিবৃষ্টি, নদীর অতিরিক্ত জলপ্রবাহ বা জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে যাতে কোনো স্থান বন্যাক্রান্ত না হয় সে ধরনের নগর ব্যবস্থাপনা। বিশেষজ্ঞ সমন্বয়ে গঠিত প্যানেলের মাধ্যমে বাংলাদেশ জাগ্রত জনতা এ বিষয়ে সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদান করবে।
উনবিংশ বৈশিষ্ট্য, প্রতিটি গ্রাম বা নগরির উন্নত নিরাপত্তা ব্যবস্থা। যেকোনো ধরনের প্রাকৃতিক দুর্ঘটনা, যেমন ভূমিকম্প, ভূমিধ্বস, ভবন ধ্বস কিংবা অগ্নিকা- বা অন্য যেকোনো দুর্ঘটনা থেকে তাৎক্ষণিকভাবে উদ্ধার অভিযান চালানোর মতো পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত লোকবল এবং অবকাঠামো ও প্রযুক্তিগত সুযোগ-সুবিধা। আমরা বেসরকারি উদ্যোগে জনসেবমূলক কর্মসূচীর অংশ হিসেবে সবাইকে দুর্ঘটনা মোকাবিলা এবং উদ্ধার অভিযান পরিচালনার প্রশিক্ষণ প্রদান করবো। সরকার গঠন করলে ১৮ বছর বয়সী সবাইকে বাধ্যতামূলকভাবে উদ্ধারকার্যে অংশগ্রহণের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
আমাদের দেশে উল্লিখিত সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত কোনো গ্রাম এবং নগর নেই। আমরা আমাদের রাজনৈতিক দলের মাধ্যমে সে ধরনের গ্রাম ও নগর পরিকল্পনা প্রনয়ন করবো। পাশাপাশি মানুষ-জনকে উদ্বুদ্ধ করবো নিজেদের স্থানকে নিজেদের উদ্যোগে সৌন্দর্যম-িত, সুআবাসযোগ্য এবং উল্লিখিত বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন গ্রাম বা নগর হিসেবে গড়ে তুলতে।
আমাদের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান
রাজনৈতিক দল হিসেবে আমাদের বেশ কিছু অঙ্গ প্রতিষ্ঠান থাকবে। সেসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে আমরা আমাদের শিক্ষা, গবেষণা, উন্নয়ন, সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং অর্থনৈতিক কর্মকা-কে এগিয়ে নেবো; পাশাপাশি ছড়িয়ে দেবো সবার মাঝে। এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে একইসাথে কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করা হবে। এসব প্রতিষ্ঠানকে অর্থ উপার্জনশীল প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত করা হবে। এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সমাজসেবামূলক কর্মকা- সম্পাদন করা হবে। এসব প্রতিষ্ঠানে সম্পৃক্ত করা হবে গবেষক, শিক্ষক এবং বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের। এসব উদ্যোগের মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে মূলত নি¤œলিখিত প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালনা করা হবে: ১) অর্থনীতি ও উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান, ২) বিজ্ঞান গবেষণা পরিষদ, ৩) সামাজিক বিজ্ঞান গবেষণা পরিষদ, ৪) সামাজিক গবেষণা পরিষদ, ৫) ইতিহাস ঐতিহ্য সংস্কৃতি গবেষণা পরিষদ, ৬) শিল্প গবেষণা পরিষদ প্রভৃতি।
আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে গৃহীত উন্নয়ন কর্মকা- এবং উন্নয়ন পরিকল্পনা
আমাদের কিশোর-কিশোরী এবং তরুণ-তরুণীরা সঠিক গাইড লাইন, অবসর বিনোদন কাটানোর জন্য সময়স্বল্পতা বা সুযোগের অভাব, পাঠ্যক্রম বহির্ভুত সহশিক্ষা কার্যক্রমের অভাব, ক্রিড়া-সংস্কৃতি-শিক্ষা-বিজ্ঞানভিত্তিক সংগঠনের স্বল্পতা, স্বেচ্ছাসেবামূলক কর্মকা-ে অংশগ্রহণের সুযোগের অভাবের কারণে অনেকসময় বিপদগামী হয়ে পড়ছে বা সৃষ্টিশীল মানসীকতা থেকে অনেক দূরে অবস্থান করে সময়ক্ষেপন করছে। এর জন্য আমরা সৃষ্টি করবো বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক-ক্রিড়া-শিক্ষামূলক সংগঠন। শিক্ষার্থীদের জন্য সহশিক্ষা কার্যক্রমের বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবামূলক কর্মকা-ের সাথে সম্পৃক্ত করে তাদের মধ্যে মানবতাবোধ, আত্মবিশ্বাস, কর্মকুশলতা এবং স্বনির্ভরতা তৈরি করা হবে। তৈরি করা হবে বৃহত্তর পরিসরে মেশার সুযোগ, যারা ভবিষ্যতে নিজের দক্ষতা আর যোগ্যতা অনুযায়ী দেশকে নেতৃত্ব দেবে নিজ নিজ অবস্থান থেকে।
দুস্থ সহায়ক ফাউন্ডেশন
আমাদের উদ্যোগে ‘দুস্থ সহায়ক ফাউন্ডেশন’ নামক একটি সামাজিক সেবা ফাউন্ডেশন পরিচালনা করা হবে। এ ফাউন্ডেশনটির ‘দুস্থ সহায়ক তহবিল’ নামে একটি এফডিআর এবং একটি সাধারণ তহবিল গঠন করা হবে; যার মাধ্যমে দুঃস্থদের মাঝে বিভিন্ন ধরনের সেবা কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।
এ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ঢাকা বা অন্যান্য জেলার পথশিশু এবং সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের জন্য একটি নৈশ স্কুল পরিচালনা করা হবে।
ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে বেশ কয়েকটি পুনর্বাসন কেন্দ্রও প্রতিষ্ঠা করে বিশেষ করে পথ শিশু, দেহপোপজীবিনি, হিজরা, বয়স্ক, ভিক্ষুক, ভাসমান-ভবঘুরে মানুষ এবং শিশু শ্রমিকদের বিভিন্ন বিকল্প পেশায় অংশগ্রহণের জন্য প্রশিক্ষণ প্রদান এবং মনস্তাত্ত্বিকদের মাধ্যমে কাউন্সেলিং প্রদান করা হবে এবং পর্যায়ক্রমে সুস্থ স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা হবে।
বাংলাদেশ জাগ্রত জনতা এভাবেই একই সাথে দেশের আর্থ-সামাজিক বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করে দেশের সামগ্রিক সমাজে নিজেদের শক্ত অবস্থান তৈরির পাশাপাশি নিজেদের রাজনৈতিক নীতি-দর্শন-আদর্শ জনসম্মুখে প্রচার করবে তার বিশাল বিস্তৃত নেটওয়ার্কের মাধ্যমে; যে নেটওয়ার্ক তৈরি হবে সমাজের নিচু তলা থেকে উঁচু তলা, অশিক্ষিত থেকে শুরু করে শিক্ষিত এবং গবেষক পর্যায়, বিত্তহীন থেকে শুরু করে বিত্তবান, আশাহত থেকে শুরু করে তীব্র আশাবাদী আর স্বপ্নাচারী প্রতিটি আলাদা আলাদা ব্যক্তি কিংবা গোষ্ঠী বা আরো বিস্তৃত পরিসরে যেকোনো আকারের সংগঠনের সাথে। আমরা রাজনীতির মঞ্চে রাজনীতি করতে এসেছি, বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক দলগুলোকে মিত্রতার বন্ধনে আবদ্ধ করতে। দেশে বাঙালি জাতীয়তাবাদ প্রতিষ্ঠা করতে। দেশে গণতন্ত্রের স্থায়ী ভিত্তি রচনা করতে, দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করতে এবং একতাবদ্ধ জাতি নির্মাণ করতে। বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ সহযোগে আমরা সৃষ্টি হয়েছি বাংলাদেশ জাগ্রত জনতা; পাশাপাশি বাংলার প্রতিটি মানুষকে জাগ্রত করতে আমরা বাংলাদেশ জাগ্রত জনতা আজগে আপনাদের সামনে নিজেদের আত্মপ্রকাশের জানান দিচ্ছে। ঘোষণা দিচ্ছে আত্মপ্রকাশের। আপনাদের সামনে আমরা আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছি ২০১৭ সালে। যোগ দিন, সঙ্গ দিন, সমর্থন দিন। আমাদের বিজয় সুনিশ্চিত। জয় বাংলা।
২| ০৯ ই মে, ২০১৫ বিকাল ৫:১৮
চাঁদগাজী বলেছেন:
"বিশ্বের ইতিহাসে সর্বশ্রেষ্ঠ জাতি হিসেবে খ্যাত বাঙালি জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত দেশ আমাদের বাংলাদেশ। "
-সর্বশ্রেষ্ঠ জাতি?
আপনি কি এখনো হাসপাতালে?
৩| ০৯ ই মে, ২০১৫ রাত ৮:৫১
ইমরান আশফাক বলেছেন: আপনার বক্তব্য সংক্ষেপ করে আবারও পোস্ট দেন। আমি তো এত বড় পোস্ট পড়তে পড়তে মাঝপথে ক্ষান্ত দিয়েছি। বেশীরভাগ ভিজিটারদের এত বড় পোস্ট পড়ার সময় থাকে না (প্যারা ছাড়া)। প্রয়োজন হলে কয়েকটা পর্বে ভাগ করে নিয়েন।
©somewhere in net ltd.
১|
০৯ ই মে, ২০১৫ বিকাল ৫:১৬
চাঁদগাজী বলেছেন:
আপনি কম্প্যুটার পেলেন কোথায়?