![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সাল ২০০৬। সবে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছি। ভর্তির ১-২ বছর পর থেকেই শুনতাম অমুক বড় ভাই অমুক দেশে চলে গেছে স্কলারশিপ নিয়ে। তখন একটি কথা নিয়ে খুব লেখালেখি হত—সেটা হলো ব্রেইন ড্রেইন। প্রথম প্রথম বুঝতাম না জিনিসটা কী
কিছুদিন পর বুঝতে পারলাম, এই যে বড় ভাইরা বিদেশে স্কলারশিপ নিয়ে চলে যায় আর আসে না, এটাই হলো ব্রেইন ড্রেইন—খাঁটি বাংলায় বললে মেধা পাচার। তখন ঐ বড় ভাইদের উপর খুব রাগ হত। মনে হতো, আরে ভাই, আপনারা এমন কেন? আপনারা দেশের সম্পদ, আপনারা বিদেশে গিয়ে আর আসেন না কেন? দেশের প্রতি কি আপনাদের কোনো দায়িত্ববোধ নেই? কোনো দেশপ্রেম নেই?
মাঝেমাঝেই শুনি অমুক বাংলাদেশি অমুক দেশে অমুক যুগান্তকারী কাজ করেছে। ভাবতাম, ওই লোকটাই যদি ওই কাজটা দেশে করতো, কতই না ভালো হতো! দেশের কত উপকার হতো! বিদেশিরা তার ওই কাজের জন্য আমাদের দেশে আসত, দেশটা উন্নত হতো।
ওই বড় ভাইদের প্রতি এমনই একটি নেতিবাচক ধারণা নিয়েই বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডি পার হলাম।
একদিন জানতে পারলাম, আমারই এক কাছের বন্ধু—সে আমার দেখা চরম মেধাবীদের একজন—বিদেশে যাচ্ছে স্কলারশিপ নিয়ে। শুনে তাকে ফোন করে ব্রেইন ড্রেইন নিয়ে অনেক উপদেশ দিলাম।
সে আমাকে সেদিন বলেছিল,
“দোস্ত, তুই যা বলছিস, আমি ও সেটাই বিশ্বাস করি। আমি পিএইচডি শেষ করে দেশে ফিরে আসব, দেশেই ভালো কিছু করার চেষ্টা করব।”
সে বায়োটেকনোলজির তখনকার (এখনও) সবচেয়ে ভালো বিষয় CRISPR-Cas9 এর উপর পিএইচডি করতে গিয়েছিল।
সে ফিরে এসেছে। বয়স তখন তার ২৯। ফিরে এসে সে ১ বছর অনেক চেষ্টা করলো কোনো ভালো একটা জায়গায় ঢোকার। কিন্তু জীবিকার তাগিদে বাধ্য হয়ে সে একটা ব্যাংকে ক্যাশিয়ার-এর চাকরিতে ঢুকে টাকার নোটের উপর CRISPR-Cas9 প্রয়োগ করছে—দেখা যাক, যদি সেখানেই ভালো কিছু হয়!
অথচ, ওর থেকে অনেক কম মেধাবী, ওর থেকে বেশি বেতনে ভালো পজিশনে চাকরি করছে।
এমন আরো একজন আছে—যে দেশপ্রেমের ঠেলায় ফিরে এসে এখন টেরিটরি সেলস অফিসার হিসেবে জীবিকা নির্বাহ করছে। খুঁজলে হয়তো আরো অনেক এমন “পাগল” পাওয়া যাবে।
মাঝে মাঝে বন্ধুটার সাথে যখন কথা হয়, সে আক্ষেপ করে বলে,
“কেন যে ফিরলাম রে! ওখানেই সুযোগ ছিল, ভালো চাকরি করার, সেটেল হওয়ার। শুধু শুধু দেশপ্রেমের ঠেলায় ব্যাংকে মানুষের টাকা গুনে বেড়াচ্ছি!”
কিছুদিন আগে আমার আরেকটা পাগলের সাথে দেখা হয়েছে। সেও বিদেশ থেকে ফিরেছে—দেশে ভালো কিছু করবে বলে। তার সাথে যখন আড্ডা দিই, তার স্বপ্নগুলো শুনি, তখন মনে হয়—আমার যদি অর্থ বা ক্ষমতা থাকত (দুটির কোনোটাই আমার নাই), তাহলে ছেলেটার স্বপ্ন পূরণের জন্য সাহায্য করতাম। সে যদি সুযোগ পায়, দেশের জন্য ভালো কিছু করবে—আমার বিশ্বাস।
পাগলটার সাথে বসে যখন কথা বলি, মাঝে মাঝে আমি বলি,
“ভাই, তোমার বয়স কম, মেধা আছে—পারলে ভাই, বিদেশে গিয়ে সেটেল হও। এখানে তুমি কিছু করতে পারবে কিনা সন্দেহ আছে।”
এই কথা বলতে বাকি, আমাকে শুলে চড়াতে দেরি করে না! আর এই লেখাটা যদি পাগলটা পড়ে, তাহলে সামনে যেদিন দেখা হবে, নিশ্চিত আমাকে রিমান্ডে নেবে, আর শুল তো ফ্রি!
তবুও, ভাই,
তোমাদের মেধা আছে, ভালো কিছু করার স্বপ্ন আছে—তাহলে ভাই, পারলে বিদেশে গিয়ে চেষ্টা করে দেখো।
এদেশে ৩০ পেরোলেই তুমি অকেজো (এখন সম্ভবত ৩২)।
আর এদেশের মানুষ গবেষক বা শিক্ষকের চেয়ে মন্ত্রণালয়ের পিয়ন বা পুলিশের হাবিলদার কে বেশি সম্মান করে।
আর বেসরকারি চাকরি—সে তুমি যত বড় চাকরিই করো না কেন—যেকোনো সরকারি চাকরিজীবীর চেয়ে তোমার সম্মান কম।
আর ভাগ্যক্রমে তুমি যদি কিছু একটা ভালো করেই ফেলো, তাহলে দেখবে সেই জিনিসটা আর তোমার নামে থাকছে না—সেই সাফল্য থেকে তোমার নাম পার্মানেন্টলি কিভাবে মুছে ফেলা যায়, নিজের নাম কিভাবে জুড়ে দেওয়া যায়—এরকম বুদ্ধির লোকের অভাব নেই।
ওহ, উদ্যোক্তা হবা?
স্যান্ডেলের তলা পরিষ্কার হয়ে যাবে, মাগার যত অনুমতি আর সার্টিফিকেট লাগবে, সেটা পেতে পেতে তোমার পুঁজি তো যাবেই, বয়সও যাবে!
(মামা, চাচা, খালু—নিজের বা কেনা থাকলে ভিন্ন কথা)
তবে হ্যাঁ,
পেটে দু’কলম বিদ্যে থাকলে কিছু না কিছু করে পেট চালিয়ে নিতে পারবে।
----------দেখো, যা ভালো মনে করো।---------
©somewhere in net ltd.