![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
জ্ঞান যেখানে সীমাবদ্ধ, বুদ্ধি যেখানে আড়ষ্ট, মুক্তি সেখানে অসম্ভব
বাঙালি জাতির স্বপ্ন-সাধনা স্বাধীনতা অর্জন কোনো আকস্মিক ঘটনা নয়, বরং তা দীর্ঘ ত্যাগ-তিতিক্ষার ফল। ১৯৪৭ সালের দেশবিভাগের পর থেকেই বাঙালির স্বাধীনতার আশার বীজ রোপিত হয়। রাজা যায়, রাজা আসে, কিন্তু প্রজাদের দুঃখের পরিসমাপ্তি ঘটে না। ঠিক তেমনিভাবে ব্রিটিশরাজ চলে গেলেও নতুন রাজা হয়ে আসে পাকিস্তানিরা । যে আশা-আকাঙ্ক্ষা নিযে পাকিস্তান রাষ্টের জন্ম হয়েছিল তার সবই উবে যেতে সময় খুব বেশিদিন লাগেনি। অল্পদিনেই পশ্মিম পাকিস্তানিদের ঘৃণ্য মানসিকতা পরিষ্কার হয়ে যেতে থাকে বাঙালির কাছে। বাঙালির ভাষা ও সংস্তৃতিকে ধ্বংস করার যে অপরিণামদর্শী উদ্যোগ তারা নিয়েছিল তাই হয়ে দাঁড়িয়েছিল তাদের জন্য বিষফোঁড়া । ইসলামি আদর্শের কথা বলে বাংলা নববর্ষ পালনে বাঁধা দেয়া তাদের জন্য কোনো সুফল বয়ে আনেনি, বরং তা বাঙালিকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার অনুপ্রেরণা দিয়েছে। আলী জিন্নাহ, খাজা নাজিমউদ্দিন যখন দম্ভ নিয়ে বলেছে উর্দূই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা তখন আমরা আরও বেশি সঙ্ঘবদ্ধ হয়েছি। এখান থেকেই সম্ভবত বাঙালি জাতীয়তাবাদের সূচনা যা ক্রমেই বিস্তার লাভ করেছে। ভাষার জন্য জীবন দিয়েছে এমন জাতি পৃথিবীতে দ্বিতীয়টি আর নেই। বাঙালি বুকের তাজা রক্তে রাজপথ রঞ্জিত করে ছিনিয়ে আনে মায়ের ভাষা । ৫৪'র যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে মুসলিম লীগের ভরাডুবি হয়। কিন্তু ফজলুল হকের মন্ত্রিসভা বেশিদিন টিকলো না। ৫৮' সালে সামরিক শাসন জারি করে বাঙালিকে, বাঙালির সংগ্রামকে স্তিমিত করার চেষ্টা করা হলো। ৬২'র শিক্ষা আন্দোলন হলো, ৬৬'তে ছয়দফা ঘোষণা করা হলো, আগরতলা ষড়যন্ত্র হলো, বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করা হলো। কিন্তু পাকিস্তানিদের ভুল ছিল- তারা জানত না রাত যত গভীর হয় প্রভাত ততো নিকটে আসে। বাঙালির উপর জুলুম নির্যাতন যতো বাড়তে থাকে বাাঙালির প্রাণের প্রদীপের উজ্জ্বলতাও ততো বাড়তে থাকে- এ যেন আগুনে ঘি ঢেলে দেওয়া। ৬৯' এ গণঅভ্যুত্থান হলো, ৭০' এ নির্বাচন হলো। আওয়ামীলীগ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেও পাকিস্তানিরা ক্ষমতা হস্তান্তরে এগিয়ে আসছিল না, উল্টো ষড়যন্ত্র করছিল ক্ষমতা নিজেদের হাতে রাখার । ৭ মার্চের ভাষণ বাঙালি নতুন উদ্যম পেল। ২৫ মার্চ দিবাগত রাতে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া হয়। গ্রেফতারের পূর্বেই বঙ্গবন্ধু দিয়ে যান স্বাধীনতার ঘোষণা। এরপর এম, এ হান্নান ও জিয়াউর রহমানের মাধ্যমে তা ছড়িয়ে পড়লে বাঙালিও বুঝে যায় এবার সশশ্ত্র সংগ্রাম করতে হবে। যুদ্ধ শুরুর মুহূর্তে পাকিস্তানিদের সাথে বাঙালির যুদ্ধকে হাতির সাথে পিঁপড়ার যুদ্ধের মতো মনে হলেও ক্রমেই পাকিরাই পিঁপড়াতে পরিণত হয়। মুজিবের অমর বাণী --আমরা যখন মরতে শিখেছি তখন কেউ আমাদের দাবায়ে রাখতে পারবে না। এই বাণী সত্যে পরিণত হয় ১৬ ডিসেম্বর। বাঙালির এই যে অর্জন তা তাদের ঐক্যবদ্ধতার ও সাহসিকতার জন্যই সম্ভব হয়েছে যার সূচনা হয়েছিল বাংলা নববর্ষ পালন ও ভাষার দাবির মাধ্যমে।
©somewhere in net ltd.