নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

হৃদয় আহমেদ

Hridoy Ahmed

স্বপ্ন দেখি একদিন সিনেমা বানাবো। সিনেমাতে বাঁচবো, সিনেমাতে মরবো।

Hridoy Ahmed › বিস্তারিত পোস্টঃ

টোবা টেক সিং এবং একটি মানচিত্র ভাগ করার গল্প

২৩ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ৮:১৯





::Movie: Toba Tek Singh (2018)

:: Direction: Ketan Mehta

::Cast: Pankaj Kapur, Vinay Pathak, Gaurav Dwivedi, Nand Kishore Pant And Others

::Genre: Drama, History

::Country : India

::Language : Hindi


::Imdb : 7.5/10
:: Personal : 9/10




::প্লটঃ অবিভক্ত ভারতের অন্যতম প্রাচীন মানসিক আশ্রয়স্থল, ভারত-পাকিস্তান বিভাজনের ঠিক আগে ঘঠে যাওয়া গল্প এটি। লাহোরে অবস্থিত এই মানসিক আশ্রয়স্থলে থাকেন, মুসলিম, হিন্দু এবং শিখ ধর্মসহ বিভিন্ন ধর্ম এবং বর্ণের মানসিকভাবে অসুস্থ মানুষ। মানসিক আশ্রয়স্থলে থাকা প্রত্যেকটা পাগলেরই ছিলো কোনো না কোনো গল্প কিন্তু এখানে থাকা বিজন সিংয়ের কাহিনী সম্পূর্ণ আলাদা ছিলো। টোবা টেক সিং নামের একটি এলাকা থেকে এই মানষিক আশ্রয়স্থলে এসেছিলো বিজন সিং, তাই বিজন সিং কে সবাই টোবা টেক সিং নামেই ডাকে। টোবা টেক সিং, গত দশ বছর ধরে এই আশ্রয়স্থলে আছে কিন্তু গত দশ বছরের মধ্যে কখনো সে কোনো যায়গায় বসে নি। সবসময় দাড়ানো অবস্থায় থাকে এমনকি গত দশ বছরে কখনোই তাকে কেউ ঘুমাতে দেখেনি। ১৯৪৭ সালে হঠাৎ দেশে দাঙ্গা শুরু হয়। একদিকে মুসলিমরা মারছে হিন্দুদের অন্যদিকে হিন্দুরা মারছে মুসলিমদের। বাচ্চা থেকে বুড়ো কেউই এই দাঙ্গার থেকে বাঁচতে পারছে না। এরই মধ্যে মুহাম্মাদ আলী জিন্নাহর দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে, ব্রিটিশ ভারতের তৎকালীন গভর্নর মানচিত্রের উপর দাগ একে ব্রিটিশ ভারতকে ভাগ করে হিন্দুস্তান আর পাকিস্তান নামে দুটি দেশ বানিয়ে দেয়। ১৪ এবং ১৫ ই আগষ্ট স্বাধীন হয় দুটি দেশ। শুরু হয় আলাদাভাবে দুটি দেশের স্বাধীন যাত্রা।
এরই মধ্যে ১৯৫০ সালে ঠিক হয় যে দুই দেশে থাকা পাগলদেরও ভাগাভাগি করা হবে।
সব পাগল স্বাধীনতার মানে খুঁজতে থাকে।
সবাই খুঁজতে থাকে তাদের দেশ কোনটা।
বিজন সিং আশ্রয়স্থলের সবাইকে জিজ্ঞেস করতে থাকে যে, তার টোবা টেক সিং এলাকা কোন দেশে পড়েছে।
পাগলদের কি আদৌ ভাগাভাগি করতে পারবে?
তারা কি তাদের বর্তমান আবাস্থল ছেড়ে যেতে চাইবে?
আর টোবা টেক সিং পাকিস্তানে পড়েছে নাকি ভারতে?

::ডিরেকশনঃ কেতন মেহতা একজন অসাধারণ নির্মাতা সেটা আমরা প্রায় সবাই জানি। উনি সর্দার, মঙ্গল পান্ডে এবং মাঝি দ্য মাউন্টেন ম্যান এর মতো অনবদ্য সিনেমার নির্মাতা। কেতন মেহতা ৪৭ এর দেশভাগ নিয়ে অনেক কাজই করেছেন, তাই এই সিনেমাটা নির্মাণ করা তার জন্য চ্যালেঞ্জিং কিছু না। কিন্তু তবুও সাদাত হাসান মান্টোর 'টোবা টেক সিং' গল্পটার অনূভুতি, শিক্ষা, দর্শনটা ধরা এত্ত সহজও ছিলো না হইতো।
তবে, কেতন মেহতা গল্পটার প্রত্যেকটা বিষয় সুক্ষ্মভাবে উপস্থাপন করতে সক্ষম হয়েছে।

::গল্প, চিত্রনাট্য এবং সংলাপঃ সিনেমার গল্পটি নেওয়া হয়েছে সাদাত হাসান মান্টো'র 'টোবা টেক সিং' নামের গল্পটি থেকে। সাদাত হাসান মান্টোকে যারা চিনেন বা তার বই/গল্প যারা পড়েছেন তারা জানেন যে মান্টো কি পরিমাণ সমাজ বাস্তবতা, দেশভাগের দুর্দশা, চিন্তা চেতনা তার লেখায় ফুটিয়ে তুলে।
দেশভাগ নিয়ে তার যতগুলো সেরা লেখা আছে, তার মধ্যে 'টোবা টেক সিং' একটি।

সিনেমাটির চিত্রনাট্য এবং সংলাপ লিখেছেন কেতন মেহতা এবং উদিৎ চন্দ্র।
চিত্রনাট্য যথেষ্ট ভালো, আপনি যতই দেখবেন ততই সিনেমাটার চিত্রনাট্য আপনাকে গভীরে টেনে নিবে।
সংলাপের কথা বললে বলতে হবে যে, হৃদয়স্পর্শী এবং বাস্তবিকতা।
সিনেমার গল্প যেমন বাস্তবতার কথা বলে তেমনি সিনেমার প্রত্যেকটা সংলাপ বাস্তবতার বহিঃপ্রকাশ ঘটায়। কিছু কিছু সংলাপ সরাসরি বুকে গিয়ে বিঁধে যায়।

::অভিনয়ঃ সিনেমাতে টোবা টেক সিং চরিত্রে অভিনয় করেছে পঙ্কজ কাপুর এবং সাদাত হাসান চরিত্রে অভিনয় করেছে বিনয় পাঠক।
টোবাটেক সিং এর চরিত্রে পঙ্কজ কাপুর অনবদ্য অভিনয় করেছেন, তার অভিনয় দেখে আপনি মুগ্ধ হতে বাধ্য। অন্যদিকে বিনয় পাঠক এর অভিনয় দুর্দান্ত, সিনেমায় তার চরিত্রটা অন্য ধরনের এক মুগ্ধতা তৈরি করেছে।
অন্যান্য চরিত্রে অভিনয় করা সবাই-ই যথেষ্ট ভালো কাজ করেছে।

::সঙ্গীতঃ সিনেমার সঙ্গীত পরিচালনা এবং আবহ সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন অনুরাগ সাইকিয়া।
তার তৈরি করা গানগুলো হৃদয়স্পর্শী এবং আবেগীত করে তুলে।
তার সাথে সিনেমার আবহ সঙ্গীত অসাধারণ।

::সিনেমাটোগ্রাফিঃ রক্তিম চন্দ্রালের করা সিনেমাটোগ্রাফির কাজ সত্যিই মুগ্ধ করেছে। সিনেমার প্রত্যেকটা শট যেন প্রত্যেকটা গল্প মনে হচ্ছিলো।

::এডিটিংঃ উদিৎ চন্দ্রাল এবং শাইলেশ গুপ্তার সম্পাদনা বেশ শার্প। সিনেমার দৈর্ঘ্যও একদম ঠিকঠাক, দর্শকদের বোরিং হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

::মন্তব্যঃ টোবা টেক সিং সিনেমাটি সত্যিকার অর্থেই মুগ্ধ করার মতো একটি সিনেমা। যা আপনাকে অনেকগুলো প্রশ্নের মুখে ফেলে দিবে।
স্বাধীনতা কি?
আমরা কেমন স্বাধীনতা চাই?
একটি মানচিত্রকে কলমের দাগ দিয়ে ধর্মের উপর ভিত্তি করে আলাদা করে দিক এইটা কি তখনকার মানুষ আদৌ ছেয়েছিলো?
যে স্বাধীনতা আমাদের ভাগ করে দেয়, যে স্বাধীনতা আমাদের দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য করে সেই স্বাধীনতার কি দরকার ছিলো?
এমন অনেক প্রশ্নের মুখামুখি হতে আপনাকে সিনেমাটি দেখলে।
সিনেমাটিতে ১৯৪৭ সালের তৎকালীন দাঙ্গার কিছু ফুটেজ দেখানো হয়েছে, যা দেখে সত্যিই আপনার মনে হবে যে 'এইটা স্বাধীনতা'?
কিছু কিছু সংলাপ এবং দৃশ্য দেখে আপনি কাঁদতে বাধ্য।
আর শেষের সিনটা নিয়ে কি বলবো?
আপনারাই দেখে নিয়েন।
সিনেমাটা স্ট্রিমিং ফ্ল্যাটফর্ম জি ফাইভ এবং ইউটিউবে এভেইলেভল আছে।
সময় থাকলে এখনই দেখে নিতে পারেন সিনেমাটি।
আশা করি ভালো সময় কাটবে।


#StayHome
#StaySafe

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.