নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যে মানুষ জীবনের মূল্য দিতে জানে, জীবন কখনো তাকে নিরাশ করে না।

জীবন আল্লাহর দেয়া শ্রেষ্ঠ উপহার। তুমি তার মূল্য দেও, সেও তোমাকে মূল্য দিবে।

হাইড্রোজেন

কিছু বলার নাই।

হাইড্রোজেন › বিস্তারিত পোস্টঃ

সময় নির্ণয়ক যন্ত্র (ঘড়ি) এবং সময় নির্ণয় পদ্ধতির বিবর্তনের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস ( অতীত - বর্তমান )

৩১ শে মে, ২০১৫ বিকাল ৪:১৪

সময় কি? আধুনিক যুগ বিজ্ঞানের স্বর্ণ যুগ । তারপরেও আধুনিক বিজ্ঞানের কোটি টাকার প্রশ্ন কি এই সময় । আসলেকি সময় বলে কিছু আছে, নাকি সম্পূর্ণটাই বিভ্রম ? যেহেতু আমাদের আজকের বিষয় সময় মাপার যন্ত্র বা পদ্ধতির সংক্ষিপ্ত ইতিহাস , তাই ঐদিকে আজ আর যাচ্ছি না। পরে সময়করে সবাই মিলে একদিন আলোচনায় বসা যাবে ।
হাজার হাজার বছর ধরে মানুষ সময় জানার জন্য বিভিন্ন ধরনের যন্ত্র ব্যাবহার করে আসছে । প্রাচীন মিশরীও সভ্যতা যখন থেকে রাত এবং দিনকে ১২ ঘণ্টায় ভাগ করেছিল তখন থেকেই মানুষ সময় নির্ণয়ক যন্ত্র ব্যাবহার করা শুরু করে । তখন সময় নির্ণয় হতো দিনে সূর্যের আলো এবং রাতে নক্ষত্রকে একক ধরে । সেই সূর্যের আলো এবং নক্ষত্রকে পরিবর্তন করে বর্তমান সময়ে সেই একক দখল করে নিয়েছে অ্যাটম । আমি আমার এই লিখার মাধ্যমে সময় মাপার জন্য সূর্যের রশ্মি থেকে অ্যাটম পর্যন্ত সময় নির্ণয়ক যন্ত্রের বিবর্তনকে তুলে আনার চেষ্টা করবো ।

প্রাচীন সভ্যতায় সময় নির্ণয়ক যন্ত্র এবং পদ্ধতিঃ

প্রাচীন যুগে মানুষ যখন সভ্যতার ছোঁয়া পেতে শুরু করেছিল, তখন থেকেই মানুষ সময়ের গুরুত্ব এবং তা সঠিকভাবে নির্ণয়ের প্রয়োজনীয়তা বোধ করে। তাই বিভিন্ন বিজ্ঞানী , জ্যোতিষী এবং সমাজ প্রধান সকলে মিলিতভাবে সময় সঠিকভাবে নির্ণয় করার জন্য কাজ শুরু করিছিল । সময় নির্ণয় পদ্ধতি নিয়ে প্রাচীন মিশর , প্রাচীন গ্রীস এবং প্রাচীন রোম সভ্যতার অনেক পুরাতন নিদর্শন এবং দলিল পাওয়া গেছে ।
প্রাচীন সভ্যতার শুরুর এবং মধ্যম সময়ে মানুষ সময় নির্ণয়ের জন্য পরিবেশের উপর নির্ভর ছিল । প্রাচীন যুগের শেষের দিকে ওয়াটার ক্লক বা পানি দ্বারা চালিত ঘড়ির প্রচলন শুরু হয় । প্রাচীন সভ্যতায় সময় নির্ণয়ের কয়েকটি পদ্ধতি নিচে সংক্ষেপে দেয়া হলঃ

১। মিসরীয় সভ্যতায়ঃ

প্রাচীন মিসরীয় সভ্যতা প্রায় ৩৫০০ B.C. তে গড়ে উঠেছিল । তখন সময় নির্ণয়ের একমাত্র অবলম্বন ছিল সূর্যের আলো । তারা দিনকে ১২ ভাগে ভাগ করে একটা কাঠির ছায়ার ঘূর্ণন গতির উপর নির্ভর করে সময় নির্ণয় করত । এই পদ্ধতিকে সানডায়াল পদ্ধতি নামে উল্লেখ করা হয় । সানডায়াল পদ্ধতি তখন খুব কার্যকর ভুমিকা পালন করেছিল । কিন্তু সমস্যা দেখাদেয় রাতের আঁধারে এবং মেঘলা দিনে সময় নির্ণয় করা নিয়ে । সে কারনে জ্যোতিষীরা রাতের আকাশে চাঁদ এবং নক্ষত্রের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে বিকল্প আরেকটি পদ্ধতির সুচনা করেছিল । পদ্ধতিটি অনেকটাই ছিল এই রকম... একটা গোলাকার বোলের মাঝে কয়েকটি ছিদ্র করে একটি নির্দিষ্ট ছিদ্র একটি নির্দিষ্ট নক্ষত্র বরাবর ধরা হত । অন্য ছিদ্রগুলো দিয়ে নির্দিষ্ট কয়েকটি নক্ষত্রের অবস্থান থেকে সময় নির্ণয় করা যেত । এই পদ্ধতির কথা উল্লেখ রয়েছে ১৬ শতকে উদ্ধার করা প্রাচীন পাণ্ডুলিপিতে ।


প্রাচীন সভ্যতার শেষের দিকে এই মিসরীয়রাই ওয়াটার ক্লকের প্রচলন শুরু করেছিল ।


২। গ্রীস সভ্যতায়ঃ

প্রাচীন গ্রীস সভ্যতায় ওয়াটার ক্লক বা clepsydrae –এর ব্যাবহার প্রচুর পরিমানে বৃদ্ধি করে বিখ্যাত বিজ্ঞানী প্লটো। বিজ্ঞানী প্লটো নিজেও অ্যালার্ম সহ ওয়াটার ক্লক আবিষ্কার করেন ।
প্লটোর অ্যালার্ম ঘড়িটি তৈরি করা হয়েছিল চারটি ছোট ছোট চৌবাচ্চা এবং কয়েকটি সীসার বলের সাহায্যে। চৌবাচ্চাগুলোর আয়তন ছিল সমান । একটি ছোট নলের মাধ্যমে পানি একটি চৌবাচ্চা থেকে অন্য চৌবাচ্চায় প্রবাহিত হত । একটি নির্দিষ্ট সময়ে পানি এক চৌবাচ্চা থেকে পরেরটিতে স্থানান্তরিত হত । এইভাবে তিন নাম্বার চৌবাচ্চার সাথে যুক্ত ছিল একটি বাঁশি। দুইনাম্বার চৌবাচ্চা থেকে পানি যতক্ষণ তিন নাম্বার চৌবাচ্চায় প্রবাহিত হত , ততোক্ষণ বাজতে থাকতো অ্যালার্ম । আর এই বাঁশির আওয়াজেই ঘুম ভাঙ্গত বিজ্ঞানী প্লটোর ছাত্রদের । পরে সীসার বল যুক্ত করে অ্যালার্মের তীব্রতা বৃদ্ধি করা হয়েছিল ।
প্লটোর অ্যালার্ম ঘড়ি

ওয়াটার ক্লকের সাহায্যে সানডায়াল থেকে আরো অনেক বেশি সঠিকভাবে সময়ের হিসাব রাখা যেত এমনকি রাতেও । কিন্তু দীর্ঘ সময় ব্যাবহার করার ফলে সময়ের হিসাবে তারতম্য দেখা দিত। সে কারনে পরবর্তী সময়ে ওয়াটার ক্লকে আরো পরিবর্তন আনা হয়েছিল । ৩২৫ B.C.-তে ওয়াটার ক্লকে ঘণ্টা মাপার দণ্ড যোগ করা হয় যার সাহায্যে ওয়াটার ক্লক আরও সুনির্দিষ্ট এবং সুক্ষ মান প্রদর্শনে সক্ষম হয়।


যদিও প্রাচীন গ্রীসে ওয়াটার ক্লকের অনেক উন্নতি সাধন করা সম্ভব হয়েছিল তার পরেও মানুষ সানডায়াল ব্যাবহার করত । থিওডোসিস নামে এক জ্যোতির্বিজ্ঞানী এমন একটি সানডায়াল আবিষ্কার করেন যার সাহায্যে পৃথিবীর সব জায়গায় সঠিকভাবে সময় মাপা যেত বলে ধারনা করা হয়।

৩। পারস্য সভ্যতায়ঃ

প্রাচীন ইরানে ওয়াটার কল্ক ব্যাবহার হত কৃষি কাজে এবং ঋতুর হিসাব রাখার জন্য । তাদের ওয়াটার কল্ক ছিল প্রাচীন গ্রীস সভ্যতায় ব্যবহৃত ওয়াটার ক্লকের থেকে ভিন্ন । সে সময়ে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা বছরের বড় দিন ও ছোট দিন নির্ণয়ে সমর্থ হয়েছিল । বছরকে বিভিন্ন ঋতুতে বিভক্ত করা হয়েছি পারস্য শাসন আমলেই।
Feenzan নামে এক প্রকার ওয়াটার ক্লকের ব্যাবহারের কথা জানা যায় তখন যা বর্তমান সময়ের ঘড়ির মতন সুনির্দিষ্ট সময় দেখাতো। একটি গামলার মধ্যে পানি নিয়ে তার উপর তামার তৈরি একটি ছোট বাটি রাখা হত । বাটির নিচে একটি সুক্ষ ছিদ্র ছিল । ছিদ্র দিয়ে পানি এসে বাটি গামলার মধ্যে ডুবিয়ে দিত । একজন সুদক্ষ বেক্তি যাকে khaneh fenjaan বলা হত, তিনি বাটি সম্পূর্ণ ভাবে গামলার পানিতে ডুবে যাওয়ার সময় রেকর্ড করে রাখতেন ।


সময় নির্ণয়ক যন্ত্রের প্রাচীন যোগ থেকে আধুনিক যুগে পদার্পণঃ

প্রাচীন যুগের মতন সময় নির্ণয়ক যন্ত্র বা ঘড়ি আর সূর্যের আলো কিংবা রাতের নক্ষত্রের উপর নির্ভর করে নেই । এখন মধ্যাকর্ষণ শক্তি , স্প্রিং অথবা বিদ্যুতের সাহায্যেও ঘড়ি তৈরি করা হয় । ১৪ শতকের দিকে মেকানিক্যাল ঘড়ি সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পরে । বর্তমান সময়ে অ্যাটমিক ঘড়ির সাহায্যেও সময়কে মাপা হয় ।

নিচে আরও কিছু ঘড়ির বর্ণনা দেয়া হল

১। মোমবাতি ঘরিঃ

প্রাচীন চীনে মোমবাতি ঘড়ি ব্যাবহারের কথা উল্লেখ রয়েছে । ৫২০ সালে You Jianfu এর লিখা একটি কবিতায় এই ঘড়ির বর্ণনা দেয়া আছে ।
রাজা আলফ্রেডের আমলে সর্বপ্রথম এই ঘড়ির প্রচলন শুরু হয় । মোমবাতি ঘড়িতে ১২ ইঞ্চি লম্বা ৬ টি মোমবাতি পাশাপাশি রাখা হয় । প্রত্যেকটি মোমবাতি সমান পুরত্তের হয় এবং তাদের গায়ে প্রতি ১ ইঞ্চি অন্তর অন্তর দাগ কাঁটা থাকতো । প্রতিটি মোমবাতি চার ঘণ্টা জ্বলত। তাই মোমবাতির গায়ে কাঁটা প্রতিটি দাগ ২০ মিনিট প্রদর্শন করত ।


২। সানডায়াল ( আধুনিক ভার্সন )

মুসলিম বিজ্ঞানী আবুল হাসান ১৩৭১ সালে ত্রিকোণমিতি এবং জ্যামিতির সুত্র প্রয়োগ করে সানডায়ালের আধুনিক ভার্সন সংস্করণ করেন । যে অঞ্চলে পুরোনো সানডায়াল ঘড়িগুলো তৈরি হয়েছিল, মিশর আর ব্যবিলন- এগুলো কিন্তু একই অঞ্চলে। আর এই অঞ্চলের অবস্থানের কারণে সূর্যঘড়ির ছায়া দিনের সাথে ক্রমাগত পশ্চিম থেকে উত্তর হয়ে পূর্বদিকে সরে যেত। অর্থাৎ, দিন যতো গড়িয়ে রাতের দিকে যেত, ছায়াও ততো পশ্চিম দিক থেকে উত্তর দিক হয়ে পূর্ব দিকে যেত। সেখান থেকেই ঘড়ির কাঁটার দিকের ব্যাপারটা এসেছে। আবুল হাসান সর্বপ্রথম সানডায়ালে একটি কাঁটা নির্দিষ্ট কোনে স্থাপন করেন যার সাহায্যে ঘণ্টা মিনিট নির্ণয় করা যেত ।


৩। অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ঘড়ি

১১ শতকে চিনের জ্যোতির্বিজ্ঞানী হরলজিস এবং মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার সু সং একত্রে কাজ করে পানি চালিত একটি অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ঘড়ি তৈরি করেন তাদের শহরের কেন্দ্রে স্থাপন করার জন্য ।
১২০৬ সালে মুসলমান জ্যোতির্বিজ্ঞানী আল – জাহেরি নামাজ এবং রোজার সময় সঠিক ভাবে নির্ণয় করার জন্য পানি চালিত অন্য একটি অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ঘড়ি তৈরি করেন যাতে একবার পানি পূর্ণ করে দিলে ঘড়ি অনেকদিন এমনকি এক বছরও চলত ।


৪। বালি ঘড়ি

শুরুর দিকে বালি ঘড়ির ব্যাবহার সাধারন মানুষের মাঝে খুব কম লক্ষ করা গিয়েছিল । ১১ শতকে সাগরে ভাসমান নাবিকদের কাজের সুবিধার জন্য এই বালু ঘড়ি তৈরি করা হয়েছিল । নাবিকগণ আস্তে আস্তে সারা পৃথিবীতে এই বালু ঘড়ির জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি করায় । ইউরোপ এবং আমেরিকা মহাদেশে ১৬ শতকে বালু ঘড়ি অধিক জনপ্রিয় হয়ে উঠে, এবং সর্বত্র এর ব্যাবহার লক্ষ করা গিয়েছে ।



মেকানিক্যাল ঘড়িঃ

সময়ের সাথে সাথে মানুষ মেকানিক্যাল ঘড়ি তৈরি করতে সক্ষম হয় । এই ঘড়ি পূর্বের যে কোন ঘড়ি অপেক্ষা সঠিক সময় প্রদর্শনে সক্ষম । ম্যাডিভাল যুগে খ্রিষ্টান পাদ্রিগণ তাদের প্রতিদিনের প্রার্থনার জন্য একটি ঘড়ির প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন । ৯৯৬ সালে পোপ সিল্ভারস্টার ২ সর্বপ্রথম গিয়ার এবং পানি ব্যাবহার করে মেকানিক্যাল ঘড়ি তৈরি করেছিলেন ।
নিচে বিভিন্ন ধরনের মেকানিক্যাল ঘড়ির সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেয়া হলঃ

১। মেকানিক্যাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ঘড়ি

১৪৬২ সালে Prague Astronomical Clock নামে একটি ঘড়ি তৈরি করা হয় যার মধ্যে বিভিন্ন সাইজের গিয়ার বক্স সংযুক্ত করা হয়েছিল । এই ঘড়িতে সর্বপ্রথম ঘণ্টা , মিনিট এবং সেকেন্ডের কাঁটা সুক্ষ ভাবে ব্যাবহার করা হয় ।


২। দোলক ঘড়ি

১৫৮০ সালে বিজ্ঞানী গেলেলিও দোলক আবিষ্কার করেন ।তখন তিনি দোলকের দোলনকালকে কাজে লাগিয়ে সর্ব প্রথম দোলক ঘড়ির থিওরি দাড় করান । তার থিওরিকে কাজে লাগিয়ে ডাচ বিজ্ঞানী সি.হাইজেন্স সর্বপ্রথম দোলক ঘড়ি তৈরি করেন ।
১৬৭৩ সালে ওলন্দাজ গণিতবিদ, পদার্থবিজ্ঞানী এবং জ্যোতির্বিদ ক্রিশ্চিয়ান হাইগেনস একটি ঘড়ি তৈরি করেন যা হলো দোলক ঘড়ির একটি উন্নততর সংস্করণ। দোলক ঘড়ির বব বৃত্তীয় বক্রপথে দোলে। এজন্য এই ঘড়ির দোলন-কম্পাঙ্ক তার দোলন-বিস্তারের উপর নির্ভরশীল হয়ে থাকে। যত বেশী বিস্তারে দুলতে দেয়া হয়, কেন্দ্রে ফেরত আসতে ববের তত বেশী সময় লাগে।
ববটি যদি একটি সাইক্লয়েডীয় বক্রপথে দুলতো, তাহলে আর এই সমস্যাটি থাকতো না। কারণ সাইক্লয়েডের বৈশিষ্ট্য হলো, এর উপরকার যেকোন দুটি বিন্দু হতে মহাকর্ষের প্রভাবে কেন্দ্রে গড়িয়ে আসতে কোন বস্তুর একই পরিমাণ সময় লাগে। ক্রিশ্চিয়ান হাইগেনস সমুদ্র-সমতলে নিখুঁতভাবে দ্রাঘিমাংশ পরিমাপ করার প্রয়োজনে এমন একটি দোলক ঘড়ি তৈরি করেন যার ববটি একটি সাইক্লয়েডীয় বক্রপথে দোলে। তাঁর নামানুসারে এই ঘড়ির নাম দেয়া হয় হাইগেনের ঘড়ি। তিনি ববটিকে সূক্ষ্ম সুতার সাহায্যে ঝুলিয়ে দেন এবং দোলন নিয়ন্ত্রণের জন্য সুতাকে কেন্দ্রে রেখে দুই পাশে দুইটি সাইক্লয়েড আকৃতির দন্ড সংযোজন করেন। ফলে দোলনের সময় যেকোন পাশে ববটি যখন কেন্দ্র থেকে দূরে সরতে থাকে, সুতাটি একটু একটু করে সাইক্লয়েড আকৃতির দন্ডের সংস্পর্শে আসতে থাকে, যার দরুন ববের অনুসৃত গতিপথটি হয় সাইক্লয়েডীয়।


৩। পকেট ঘড়ি

১৬৭৫ সালে ক্রিশ্চিয়ান হাইগেনস এবং রবার্ট হোক সর্বপ্রথম পকেট ঘড়ি তৈরি করেন । এই ঘড়িতে একটি প্যাঁচানো স্প্রিং ব্যাবহার করা হয় । তৈরি করার পর পর সারা পৃথিবীতে এই পকেট ঘড়ি ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জনে সামর্থ্য হয় এবং সর্বস্তরে ব্যাবহার শুরু করা হয়।


৪। হাত ঘড়ি

১৫৭১ সালে Robert Dudley সর্বপ্রথম ইংল্যান্ডের রানি এলিজাবেথ – ১ কে একটি হাতঘরি উপহার দেন । প্রথম দিকে হাতঘরি ছিল শুধুমাত্র মেয়েদের ব্যাবহার করার জন্য । ছেলেদের জন্য পকেট ঘড়ি । তাছাড়া মিলিটারি সৈন্যদেরও হাতঘড়ি ব্যাবহার করার ডকুমেন্ট পাওয়া যায় ।
সর্বপ্রথম কে হাত ঘড়ি আবিষ্কার করেন তার সঠিক ডকুমেন্ট পাওয়া যায়নি । তবে অনেকেই বলেন আর্কিমিডিস প্রথম হাতে ঘড়ি পরিধান করেন । এই কথার সত্যতা যাচাই সম্ভব হয়নি ।


৫। বৈদ্যুতিক বা ব্যাটারি চালিত ঘরিঃ

১৮১৪ সালে Sir Francis Ronalds লন্ডনে সর্বপ্রথম ব্যাটারি চালিত ঘরির প্যাটার্ন তৈরি করেন । ১৮৪১ সালে আলেকজেন্দার বেইন এবং জন বারউইচ সর্ব প্রথম ব্যাটারি চালিত দোলক ঘড়ি প্রস্তুত করেন ।


৬। এটমিক ঘড়িঃ

এটমিক ঘড়ি হল সবচেয়ে সঠিক এবং সুক্ষ ভাবে সময় নির্ণয় করার যন্ত্র । এই ঘড়ির সাহায্যে এক সেকেন্ডের কয়েক লক্ষ ভাগের এক ভাগও মাপা সম্ভব ।
১৮৭৯ সালে লর্ড কেল্ভিন সর্ব প্রথম এটমিক ঘড়ি ব্যাবহারের প্রস্তাব দেন । ১৯৪৯ সালে এটমের কম্পন মাপার যন্ত্র আবিষ্কৃত হয় আমেরিকায় । তখন থেকেই বিজ্ঞানীরা ঘড়ি তৈরি করার জন্য বিভিন্ন অ্যাটম নিয়ে কাজ করতে থাকে।
১৯৫৫ সালে সিজিয়াম ১৩৩ পরমাণুর কম্পন্নের সাহায্যে প্রথম ঘড়ি তৈরি করা হয় ।
এটমিক ঘড়ির ক্ষেত্রে সেকেন্ডের সংজ্ঞা হল "শূন্য কেলভিন তাপমাত্রায় একটি অনুত্তেজিত সিজিয়াম ১৩৩ পরমাণুর ৯,১৯২,৬৩১,৭৭০ টি স্পন্দন সম্পন্ন করতে যে সময় লাগে তাকে ১ সেকেন্ড বলে।"
বর্তমানে হাইড্রোজেন এবং রুবিডিয়াম পরমাণু নিয়েও কাজ করা হচ্ছে আরও সুক্ষ ভাবে সময় মাপার জন্য ।


বর্তমান পৃথিবীকে একক ভাবে যে শাসন করে যাচ্ছে তার নাম সময় । সে কারনে সভ্যতার পরিবর্তনের সাথে সাথে পরিবর্তন হয়েছে সময় নির্ণয়ের পদ্ধতির এবং পরিবর্তন এসেছে সময় নির্ণয়ক যন্ত্রের। সামনে এই যন্ত্রের আরও অনেক উন্নতি সাধন হবে এই প্রত্যাশায় লিখা এখানেই শেষ করলাম ।
ধন্যবাদ।

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ৩১ শে মে, ২০১৫ বিকাল ৫:০৪

*কুনোব্যাঙ* বলেছেন: সুন্দর পোষ্ট। তবে সময় কি? পৃথিবীর গতির ভগ্নাংশ মাত্র নাকি পরমাণুর তরঙ্গ নাকি অন্য কিছু! নাকি সময় বলে আদতে কিছু নাই, সময় আসলে মিডিয়ার সৃষ্টি

২| ৩১ শে মে, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৩২

হাইড্রোজেন বলেছেন: ভাইয়া, সময় কি - এইটা এক রহস্যময় প্রশ্ন ।
মনেহয় সময় একটা কাল্পনিক মাত্রা .।।। 8-|

৩| ৩১ শে মে, ২০১৫ রাত ৮:০৮

নক্‌শী কাঁথার মাঠ বলেছেন: ১৯৫৫ সালে শূন্য কেলভিন তাপমাত্রায় একটি অনুত্তেজিত সিজিয়াম ১৩৩ পরমাণুর ৯,১৯২,৬৩১,৭৭০ টি স্পন্দন হিসাব করলো কি করে সেটা একটা বিস্ময়।

৪| ৩১ শে মে, ২০১৫ রাত ৮:৩৩

হাইড্রোজেন বলেছেন: আসলেই বিস্ময় .।। সবচেয়ে বড় বিস্ময় হল, সেকেন্ডের সংজ্ঞা মতে প্রতি সেকেন্ডকে তাহলে ৯,১৯২,৬৩১,৭৭০ বার ভাগ করা যাবে। তাহলে বর্তমান সময়ের অথবা মুহূর্তের স্থায়িত্বকাল কতক্ষণ? সবই তাইলে অতীত আর ভবিষ্যৎ।। আসলেই বিস্ময় .।।
তবে যদি জানার আগ্রহ থাকে The Illusion of Time documentary টা দেখবেন.।। আশাকরি ভাল লাগবে.।.।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.