![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমার অফিসের কলিগের সাথে নানা বিষয়ে আলোচনা হয়। তার সাথে এই আলোচনার সূত্রপাতটি হলো অনেকটা এরকম, তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, আপনি এরকম বিগ্রায় গেলেন কেন?
আমি প্রথমে প্রসঙ্গটা বুঝি নাই। আমি বিগ্রায় গেলাম কেমন করে? আমি তো খেটে খাওয়া আর দশটা ছেলের মত চালিয়ে নিচ্ছি। তিনি বললেন, না মানে এই যে আপনি লিবারেল চিন্তা করেন, নারী অধিকার নিয়ে কথা বলেন, ধর্মের গোড়ামীর বিরুদ্ধে বিনা-বাক্য ব্যায়ে দাঁড়িয়ে যান, এসব কেন হলো?
প্রশ্নটা আমাকে শৈশবের অনেক দূরের কোন দিনে নিয়ে গেল। আমি জন্মেছিলাম লিবিয়ার এক সমুদ্র সৈকতের পাড়ের গ্রামে। আরবীদের মধ্যে আমার জন্ম ছিল। তবু আমি কখনই তাদের সাথে সেই অর্থে মিশি নাই। আমার মেশার মানুষ ছিল লিবিয়ার বাঙ্গালিরা আর আমার আপণ পরিবার।
সে সময়টাতে বাঙ্গালিদের মধ্যে সবথেকে বেশি কথা হতো বাংলাদেশকে নিয়ে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা নিয়ে। আমি দেখতাম লিবিয়ানরা ভারতীয়, বাঙালি আর পাকিস্তানিদের নির্বিশেষে "পাকিস্তানি" বলে সম্বোধন করত। আর বাঙ্গালিকে যদি পাকিস্তানি বলা হত তাহলে বাঙ্গালিরা গোয়ারতুমি শুরু করত। তারা পুলিশের মুখের উপর বলত, "আই এম বাংলাদেশি, নট এ পাকিস্তানি"।
তো এক লিবিয়ান পুলিশকে বাস্টার্ড গালি দিয়ে এক বাঙালি তো জেলে ছিল সারা রাত। পুলিশের অপরাধ ছিল সে তাকে পাকিস্তানি বলেছে, আর বাঙালি সেই সম্বোধন সহ্য করতে না পেরে তাকে বেজন্মা গালি দিয়েছে।
লিবিয়ার কথা আরেকদিন লেখা যাবে। ১৯৯৪ সালে বাংলাদেশে ফিরে আসলাম। আর যাবো না লিবিয়ায়। গাদ্দাফির বিরুদ্ধে তখন লিবিয়ার মানুষ ফুসছিল। একথা বাঙ্গালিরা বিশ্বাস করে না।
যাহোক, বাংলাদেশে এসে তো আমার চোখ চড়ক গাছ। এই দেশের মানুষই কিনা পাকিস্তানের জন্য জান দিয়ে দিতে চায়। আরবী শিক্ষা করার জন্য আমার বাসায় এক হুজুর রাখা হলো। ভারত পাকিস্তান নিয়ে কথা উঠছিল, খেলা প্রসঙ্গে। আমার হুজুর পাকিস্তানের জানি সাপোর্টার। তিনি বললেন, জান দিয়ে হলেও মুসলমানকে সাপোর্ট করতে হবে।
আমি তখন ছোট। শুধু এইটুকু বুঝি পাকিস্তান আমাদেরকে অমানুষের মত হত্যা করেছে ১৯৭১ সালে। তাহলে এই দাড়িওয়ালা নেক বান্দা কেন এই বিভতস্য দেশটাকে সাপোর্ট করে? কোন অর্থে সাপোর্ট করে?
আমিও হুজুরকে জবাবে বলেছিলাম, আমি মরে গেলেও পাকিস্তানের পক্ষে যাবো না। বিষয়টাতে হুজুর যেন আকাশ থেকে পড়লেন। আমার বাবাকে বললেন, আমাকে নিয়ে মসজিদে যাবেন। সেখানে আমার আরবী শিক্ষা হবে, আর নৈতিক শিক্ষাও দেওয়া হবে। আমার বাবা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করেছিল, ছেলেকি বেশি ত্যাদড় নাকি, ত্যাদড়ামি বেশি করলে পিটান।
হুজুর বলেছিল, ছেলে অতিশয় ভদ্র কিন্তু পাকিস্তানকে সে সাপোর্ট করে না। সুতরাং তার হেদায়তের দরকার আছে। আমার বাবা তখন হুজুরের উপর চটেছিলেন। বললেন, আপনার কাজ ওরে আরবী শিক্ষা করানো, ও ইন্ডিয়া না পাকিস্তান সাপোর্ট করবে সেটা ঠি করার আপনি কে? ডু ইউর জব, আমার ছেলেকে এই চৌকাঠের বাইরে নেওয়ার চেষ্টাও করবেন না।
হুজুর তখন মাসে ৫০০ টাকা করে পায় আমাদের বাসা থেকে। আর শুক্রবারে পায় এক প্লেট পোলাও, তাই তিনি আমাকে আরবী শিক্ষা করানো বন্ধ করেন না। আমার সাথে আমার বোনও তখন আরবী শিক্ষা করত। হুজুর আমাকে আরেকটি (অ)শিক্ষাও দিয়ে গিয়েছিলেন। মেয়েদের ঋতুস্রাব হয়। তখন আমার বয়স ৮ কি ৯ বছর! কেন তিনি আমাকে এ কথা শিখিয়েছিলেন আজও বুঝতে পারি না।
সেই থেকেই নানা প্রশ্ন আমার মাথায় ঘুরপাক খেত। প্রথম প্রশ্নই হলো কেন? কেন একটা লোক হলোকাস্টকে সাপোর্ট করে?
তখন আসলো সেই বিখ্যাত থিওরি। "খেলার সাথে রাজনীতি মেশাবেন না"। তখন প্রশ্ন জাগলো, তাহলে ফুটবল খেলায় কেন মানুষ আমেরিকাকে সাপোর্ট করে না? নানা ভাবেই তো আমরা আমেরিকার উপর নির্ভরশীল। আবার ভিসার ডাক দিলে আমরা ছুটে যাই কাশিমপুরের কুঠিতে, আমারও ভিসা চাই।
আরেকটু বড় হলে ঘটে আরেকটি ঘটনা। যেটা আমাকে সম্পূর্ণ ধর্ম বিমুখ করে তোলে। আমি একটি ক্রিষ্টান মিশনারী স্কুলে পড়তাম। সে স্কুলের প্রতি ক্লাসে খ্রীষ্টান, হিন্দু আর মুসলমান ছিল। মুসলমানরাই সংখ্যাতে বেশি ছিল। যখন আমাদের ধর্ম ক্লাস হতো, তখন খ্রীষ্টানরা বেড়িয়ে যেত তাদের ধর্ম ক্লাস করতে, আর হিন্দুরা বেড়িয়ে যেত তাদের ধর্ম ক্লাস করতে। আর আমরা মুসলমানরা বসে থাকতাম আমাদের ধর্ম ক্লাস করতে।
তো একদিন কি হেতু জানি অন্যান্য ধর্মাবল্বিরাও আমাদের ক্লাসে থেকে গেল। পুরো ৩৫টি মিনিট তারা ইসলাম ধর্ম ক্লাসই করল। যিনি আমাদের হুজুর ছিলেন তিনি হিন্দু খ্রীষ্টানদের ভর্তসনা করে কথা ছেড়ে গেলেন। হিন্দুরা মূর্তি পূজারি তাই তারা খারাপ, খ্রীষ্টানরা শুয়োরের মাংসখেকো তাই তারাও খারাপ। ক্লাসের তাবৎ হিন্দু খ্রীষ্টানরা পুরো ক্লাস মাথা নিচু করে সহ্য করে গেল।
আমার খুব ভালো বন্ধু ছিল রিকি এন্থোনী নামের এক ছেলে। সে খ্রীষ্টান, আরবী স্যার ক্লাস থেকে চলে গেলেও আমরা বন্ধু ছিলাম। সে শুকুরের মাংস খায় বলে তাকে আমি ঘৃণা করব এমনটা আমার মনে সৃষ্টি হয়নি।
সেদিন ক্লাসে অন্যান্য ধর্মাবল্বিদের এই অপমান আমি মেনে নিতে পারছিলাম না। ভাবছিলাম যদি আমার ধর্ম নিয়ে কেউ এভাবে আমার সামনে বলত? কোন অধিকারে একজন শিক্ষক এমনভাবে ক্লাসে কথা বলবেন? কেন বলবেন?
আরও প্রশ্ন বাড়তে লাগল, উত্তর মিলে না। স্কুল কলেজের গন্ডি পার হয়ে পড়লাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গন্ডিতে। ভেবেছিলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে হয়ত ভালো কিছু মুক্তমনা পাবো। কিসের কি, কেউই মুক্তমনা নয়। উলটা। আমার এক বান্ধবী আমাকে বলল, হিন্দুদের সাথে এত মিশিশ কেন? ওরা কি খায় না খায়, নাপাক থাকে সারাক্ষণ!
এসবই আকাশ থেকে পড়া কথাবার্তা। কারণ ছোটবেলা থেকে মানুষে মানুষে ধর্মের ভেদাভেদ করতে চাইতাম না। ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে আমরা সকলেই মানুষ সেই শিক্ষার কোন প্রতিফলনই পড়তে দেখলাম না ভার্সিটিতে পড়ুয়া আমার বন্ধুদের গায়ে। তারা সকলেই হয় মেয়ে মানুষ নয় হিন্দু খ্রীষ্টানদের জাত ধৌত কাজে ব্যস্ত থাকত।
বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শেষভাগে হলো রামুতে বৌদ্ধ মন্দিরে আক্রমণ। কেউই কোন কথা বলল না। ভাবটা এমন যে বৌদ্ধরা তো কুকুর বিড়াল, ওরা মরলে আমাদের মাথা ঘামাতে হবে কেন?
তখন আমি এক সূত্র ধরে আগালাম। ভাবলাম ধর্ম তো মানুষ ইনহেরিট করে। কাউকে জন্মের সময় অপসন দেওয়া হয় না তুমি কোন ঘরে যাবা, হিন্দুর ঘরে নাকি মুসলিমের ঘরে। তাহলে কেন ধর্ম নিয়ে মানুষের মধ্যে এত বিভেদ ছড়ানো হয়।
তা যাহোক, এখন দেখছি মুসলিমদের সেই দ্বৈত চেহারা দিনকে দিন আরও ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। আইসিস যখন নবী ইউনূস (আঃ) এর স্মৃতিবিজড়িত মসজিদ উড়ায় দেয় তখন তারা নিশ্চুপ থাকে। কিন্তু হিন্দুরা যদি বাবড়ি মসজিদের কথা শুধু মুখে বলে, তাহলে এই দেশে সব হিন্দু কতল করতে বের হয়ে যায়!
বর্তমানে ইসরায়েল গাজায় যে মানুষ হত্যা করছে, এটা মুসলমানরাও চায়। কেননা এই ইস্যুকে কেন্দ্র করে অনেক অনেক জঙ্গি বানানো যাবে, আর বিধর্মীদের উপর ঝাপিয়ে পড়ার কাজেও একে ব্যবহার করা যাবে। মসজিদে মসজিদে যেভাবে সাম্প্রদায়িকতার বিষ ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে ইসরাইল আর গাজার নামে, মনে হয় একেকটা মুসল্লি একটি মানব বোমায় পরিণত হচ্ছে। এরা যেকোন সময় ফেটে পড়বে।
ক্রমেই বাংলাদেশ সহ বিশ্বের অন্যান্য মুসলমান দেশগুলোকেও দেখা যাচ্ছে একই রাস্তায় হাটতে। তারা ইসলামি জঙ্গিদের টেরোরিজমকে চোখে দেখাও দেখে না, কিন্তু ইসরায়েলের হামলায় কত মানুষ মরল তা মুখস্থ করে রেখেছে।
আরও অনেক অবাক করা বিষয়ই লক্ষ্য করছি। ১৯৭১ সালে আমাদের সাহাযার্থে কোন মুসলিম রাষ্ট্রকে এগিয়ে আসতে দেখা যায়নি। কারণ মুসলমানরা যখন মুসলমানদের হত্যা করে, সে কি শিশু মারছে নাকি নারী মারছে তা অন্য মুসলমানদের কাছে জায়েজ। ১৯৭১ সালে যেহেতু পাকিস্তান আমাদেরকে হত্যা করেছে, তাতে কোন মুসলিম রাষ্ট্রের কোন মাথাব্যাথা ছিল না। মাথা ব্যাথা ছিল ভারতের আর রাশিয়ার! কি অদ্ভূত!
আর এখন যখন ঐ ১৯৭১ সালের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করার কথা বলা হয়, তখন সবার আগে মুসলিম দেশগুলাই এর বিরোধিতা করতে শুরু করে!
২৭ শে জুলাই, ২০১৪ দুপুর ২:৩২
হমপগ্র বলেছেন: সৈয়দ ওয়ালিউল্লাহর লাল সালুর একটা ঘটনা মনে পড়ল। গ্রামে এক শিক্ষিত ছেলে স্কুল বানাবে। স্কুল বানাতে গেলে তো মোল্লাদের ধর্ম ব্যবসা শেষ হয়ে যাবে। তাই সব মোল্লারা সালিশে বসল।
সালিশে ঐ শিক্ষিত ছেলেটাকেও ডাকা হলো। সবাই এই কথা ঐ কথা বলছে। আর গল্পের নায়ক শিক্ষিত ছেলেটাকে দেখছে। তারপর যখন তার কথা বলার সময় আসল, সে বলল, ঐ মিয়া তুমার দাড়ি কই? দাড়ি না রাইখ্যা তুমি বচসা করতে আসছো? মুরুব্বিদের সম্মান করতে জান ইত্যাদি ইত্যাদি।
আপনারাও তেমন আরকি। কোন পয়েন্ট মিথ্যা বা বানানো প্রমাণ করতে পারবেন না জানেন। তাই আমার দাড়ি ধরে টানাটানি করছেন!
২| ২৮ শে জুলাই, ২০১৪ দুপুর ২:১২
ডক্টর লেকটার বলেছেন: উপরে ধর্মের (aka ইসলামের) অনেকগুলো খারাপ দিক নিয়ে ব্যাফক আলোচনা দিলেন। ভাইডি - বুকে হাত দিয়া একটা কথা কনতো। উপরে যেই কয়টা পয়েন্ট তুললেন ইসলামরে সাইজ দিতে - এগুলার কয়টার জন্য 'ধর্ম' ইসলাম দায়ী? দায়ী কি ইসলাম - নাকি কিছু আবালের লোভ/বেশি বোঝা/ভুল বোঝা?
টেসটোস্টেরনের ঠেলায় আপনার মেয়ে মানুষ দেখলেই ছুইতে মনচায়- এই যুক্তিতে আপনি কি আপনার balls কেটে ফেলবেন? নাকি নিজেকে সামলাবেন?
Let me guess something, আপনি সম্ভবত আর্টস এর ছাত্র। বিজনেস এর ছাত্র হলে root causeনিয়া মাথা ঘামাইতেন -পাবলিকের দোষ ধর্মের ঘাড়ে চাপাইতেন না। আর সাইন্সের ছাত্র হইলে কমু wikiতে টিউমার/ক্যান্সারের পেইজগুলা একটু পড়েন -এইসব এথিষ্টগিরি রাতারাতি ছুইটা যাইবো
২৮ শে জুলাই, ২০১৪ রাত ১০:১৫
হমপগ্র বলেছেন: মানুষের দোষ আমি ধর্মের উপরে চাপাইলাম কোন লাইনে? একটু কন দেখি!
৩| ২৯ শে জুলাই, ২০১৪ দুপুর ১২:১৫
ডক্টর লেকটার বলেছেন: আপনার পোস্টের হেডলাইন কি কয়?
©somewhere in net ltd.
১|
২৭ শে জুলাই, ২০১৪ দুপুর ২:১২
কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েসন বলেছেন: দাদা কত রুপি খাইছেন?