![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমার জন্মদিন একটা বিশেষ দিনে। যেদিন পৃথিবীতে দিনের ভাগ দীর্ঘস্থায়ী হয়। ছোটবেলা থেকে কমবেশি সবারই জন্মদিন উদযাপন করেন বাবামায়েরা। আমার প্রথম জন্মদিনও জাঁকজমকভাবে পালন করা হয় যা আমি ছবিতে দেখি বুঝার বয়স হওয়ার পর। ছোটবেলা থেকেই আমি চাইতাম আমার জন্মদিন প্রতিবছরই উদযাপন করা হোক যেখানে আমি আমার বন্ধুদের আসতে বলব। কিন্তু বাবা মা দুজনই চাকুরী করায় সেই সুযোগ হয়ে উঠতোনা। এভাবেই চলতে লাগলো বছরের পর বছর। পঞ্চম শ্রেণীতে আমি এলাকার সেরা বিদ্যালয়ে ভর্তি হই। ১ম সাময়িক পরীক্ষায় ২য় স্থান অধিকার করায় আমার কয়েকজন ভালো বন্ধু হয়। বাবা মাকে বলি সেবার আমার বন্ধুদের দাওয়াত করবো। বাবা মাও সায় দেন। আমার খুব ভালো ৬ জন বন্ধুকে দাওয়াত দেই। আমার জন্মদিনের দিন যখন তাদের আসতে বললাম তখন তারা অজুহাত দেখাল তাদের বাবা মা বলেছে তারা তখন ছোট, তাই অত দূরে না যেতে। এদিকে আমার মা বাসায় বিরিয়ানি রান্না করলো, আব্বা কেক,মিষ্টি চকলেট এনে রেখেছিল। বাধ্য হয়ে আমাদের এলাকার কাছের এক প্রিয় বন্ধুকে জোর করায় ও আসে। এমনিতেও ও আমার জন্য কত বিদেশী কলম এনেছিল। ওর প্রতি আমি খুবই কৃতজ্ঞ কারণ সে একটু হলেও আমার কথার সন্মান রেখেছিল আমার সাথে বাসায় এসে। ওর সাথেই আমাদের বাসার সবাই কেক কেটে খেলাম। ও চলে যাওয়ার পর আব্বু আম্মু আমায় খুব বকা দিলো এজন্য যে কেন যারা আসবেনা তাদের দাওয়াত করলাম আর এতো কিছু আনতে হল ও রান্না করতে হল? আমায় বলে দেওয়া হয় পরবর্তীতে কখনও যেন জন্মদিন উদযাপনের কথা না বলি এবং বন্ধুদের দাওয়াত দেওয়ার ইচ্ছে মনে না আনি। বন্ধুদের জন্মদিনের দাওয়াতেও যেতে মানা করা হয়। আমার যে বন্ধুটি এসেছিল তার সাথে এটা বলি। ও আবার এই কাহিনী বাকীদের বলে দেয়। তখন থেকে আমার বন্ধুরা আমার আব্বুকে চরম ভয় পায় এবং কোন দরকারে আমাদের বাসায় এরপর এলেও আব্বু বাসায় আছে শুনলে ভয়ে চলে যেত। যদিও আমার আব্বু ভয় পাওয়ার মত মানুষ না।
আমি এমন ছিলাম যে আমার বাবা মা কোন কিছু মানা করলে কখনও সেটা করতামনা। আমারও সেদিন বন্ধুদের উপর অনেক অভিমান করেছিলাম। এরপর থেকে আমি কোন বন্ধুদের জন্মদিনে যাইনি মাধ্যমিক পরীক্ষা পর্যন্ত। কোন বন্ধু আমার জন্মদিন কবে জিজ্ঞেস করলেও বলতাম না কবে। আমার বাবা মাও অনেকসময় ব্যস্ততায় ভুলে যেত আমার জন্মদিন কবে। আমি কাওকেই মনে করিয়ে দিতাম না। মাঝেমধ্যে আমার ছোটভাই আব্বু আম্মুকে মনে করিয়ে দিলে বাসার আমার পছন্দের ভুনা খিচুড়ি রান্না করতো আম্মু। এস এস সি পরীক্ষার ফলাফল দেওয়ার আগের দিন আমার জন্মদিন ছিল। আমার নতুন এক বন্ধু খুব জোর ধরে আমার সাথে দেখা করে আমায় শুভেচ্ছা উপহার দিবে। আমি আমার মা ও ছোট ভাইকে এই কথা বলে যাই যে আমার দুজন বন্ধু আমাদের এলাকায় আসবে। কিন্তু আম্মুর মনে ছিলোনা ঐদিন আমার জন্মদিন ছিল। আমিও বলিনা। হঠাৎ ছোটভাই আম্মুকে মনে করিয়ে দেয়। আম্মু আমাকে বলে তাদের বাসায় নিয়ে আসতে এবং আব্বু ফোন করে কেক মিষ্টি নিয়ে আসতে বলে। আমিও আমার ঐ দুই বন্ধুকে বাসায় আনি। আব্বু আম্মুর সাথে তাদের পরিচয় করিয়ে দেই। বন্ধুটি আমায় একটা হেয়ার জেল উপহার দেয় আমার চুল স্পাইক করা থাকে বলে। যদিও এরআগে আমি চুলে কখনও জেল ব্যাবহার করিনি। এটি বলায় বন্ধুটি খুব লজ্জা পায়। আমি তাকে বলি আমি চুল অনেক ছোট করে কাটাই কিন্তু সাম্নের চুল একটু বড় থাকে, যখন আমি ওযু করে টুপি পরি তখন চাপে আমার চুল দাঁড়িয়ে স্পাইকের মত দেখাত। তবে তখনকার সময়ে আমি কোন উপহার পেতামনা বলে ঐ উপহার পেয়ে আমি খুবই খুশি হই। দিনটি এখনো আমার কাছে স্মরণীয়।
এরপর কলেজ জীবন গেল। কলেজ জীবনেও সবাই ভুলে গেল আমার জন্মদিন কবে ছিল! আমিও কাউকে মনে করিয়ে দিতামনা। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে এসে সবার মত আমিও ফেসবুক ব্যাবহার শুরু করি কিন্তু এখানেও আমার জন্মদিন টাইমলাইনে হাইড করা থাকতো। বন্ধুরা কেও জিজ্ঞেস করলে বলতাম দিন যেদিন দীর্ঘতম হয় সেদিন। এই প্রশ্নটি তখন অনেকে বলতে পারলেও জন্মদিন আসতে আসতে সবাই ভুলে যেত। এভাবে বছরের পর বছর আমার জন্মদিনটি আসে আর যায় কেও মনেও রাখেনা। বিশ্ববিদ্যালয়ে উঠে টিওশনি করাতাম বলে আমার জন্মদিনে বন্ধুদের আমি এমনি বেতন পেয়েছি খাওয়াতে ইচ্ছে করলো বলে খাইয়েছি। কেউ বুঝতও না। তাই আমি কোন উপহারও পেতামনা। কিন্তু আমায় কোন বন্ধু তাদের জন্মদিনে দাওয়াত করলে সাধ্যমত ও বন্ধুর পছন্দমত উপহার কিনে দিতাম। সামনে আবারও সেইদিনটি আসছে। জানিনা কি হয়!
আমার ছোটভাইটি আমার জন্মদিনে এখনো ভুলেনা। এখনো প্রতিবছর আমি যেখানেই থাকিনা কেন আমায় ফোন করে / ম্যাসেজ পাঠিয়ে শুভেচ্ছা জানায়। তাই আমিও তার জন্মদিনটি ভুলিনা। আমি যেখানেই থাকিনা কেন ঐদিন আমি সব কাজকে ছুটি দিয়ে ছোটভাইয়ের জন্য ওর পছন্দমত উপহার এবং ওর পছন্দের খাবার যেমন কেক,মিষ্টি,চকলেট,রসমালাই কিনে নিয়ে বাসায় যাই ও ছোটভাইকেও বাসায় থাকতে বলি। বাসার সবাইকে নিয়ে ওর জন্মদিন উদযাপন করি। একদিকদিয়ে ওর বন্ধুরা ভালো আছে। ওর বন্ধুদের দাওয়াত দিলে কেউ বাদ যেতনা।
আমি জানি এখন আমার বন্ধুরা আমার জন্মদিনে দাওয়াত দিলে এখন আসবে, উপহার দিবে। কিন্তু ছোটবেলার জেদটা এখন একগুঁয়েমিতে পরিণত হয়েছে। তাই কেও না জানুক এটাই ভালো। যে দুতিনজন বন্ধুর সাথে আমি এখন প্রতিনিয়ত চলি, তারা আমার স্বভাব জানে বলে মোবাইল এ রিমাইন্ডার দিয়ে মনে রাখার চেষ্টা করে ও শুভেচ্ছা জানায়। কারণ ফেসবুক এ আমার জন্মদিন লুকোনো বলে জন্মদিনে কারো কাছে নটিফিকেশান পৌঁছায় না। আমি এতটুকুতেই সন্তুষ্ট। যেসব বন্ধুরা মনে করে আমি না খাওয়ানোর জন্য জন্মদিন জানাইনা তাদের জন্য আজ একথাগুলো বললাম।
২| ২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১০:৩৫
নীরব স্বপ্ন বলেছেন: ধন্যবাদ উৎসাহিত করার জন্য
©somewhere in net ltd.
১|
২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ২:০৩
দেবজ্যোতিকাজল বলেছেন: ভাল লিখেছ