নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ইভান অরক্ষিত

"মানুষ মানুষের কাছে শ্রেষ্ঠ সমুন্নত জীব , ধ্বংশ ও উৎখাত করো অতীতের সেই সব সম্পর্ক - যেখানে মানুষ হয়ে আছে হেয় ঘৃণিত এবং দাসে পরিণত "

"ইভান অরক্ষিত"

বাবা করতেন কম্যুনিস্ট পার্টি আর আমার মা ছিলেন সরল বিশ্বাসী মুসলমান পরিবারের মেয়ে । অতো কিছু বুঝতেন না, সেই সময় বাবাও যে খুব ভালো বুঝতেন তা নয় , একটা দর্শন, চিন্তা এবং কিছু বোধ তার মধ্যে আস্তে আস্তে পরিপক্ক হচ্ছিল । সেই সময় বিয়ে করেছিলেন , আমার এখন যা বয়স তারো আগে । বাবা মাকে দাকতেন সাথী বলে আজো তাই করেন । নিজের পছন্দকে গুরুত্ব দেবার মত আমার মা বাবা দুজনেই সাহসী ছিলেন কিন্তু কোনো পরিবারেরই সেটা শ্রদ্ধা করার মত নৈতিক শিক্ষা কি সুরুচি কিছুই ছিল না, আজো খুব একটা আছে বলে মনে করি না , মানুষগুলো আজো জীবিত আছে। আমার মা হলেন এই মুর্খ অস্বীকৃতির বেশি অংশের ভুক্তভোগী তার পর আমি। মা চেয়েছিলেন মুসলমানের ছেলের মুসলমান নাম হবে তাই দাদী যখন নাম রাখলেন মোহাম্মদ মোস্তাকিম আজিজ - মা কোনো আপত্তি করলেন না , বাবাও না কিন্তু ডকনাম রাখলেন ইভান , সেই নিকোলাই অস্ত্রভস্কির ইভান কোর্চাগিন হয়ত তার মনে ছিলো । আমার নাম হলো মোহাম্মদ মোস্তাকিম আজিজ ইভান । আমাকে মা শেখালেন কোরান , হাদিস । বাবা পড়ালেন দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদ । আমি পড়লাম বেদ , বাইবেল , সমরেশ , হুমায়ুন , চটি বই যখন যা পেলাম । এই নামটা ২ রকম চিন্তার দ্বন্দ্বের সাক্ষী । রাজনীতি আর চিন্তার বিশুদ্ধু চর্চাটি আমার বাবা করেছিলেন , তিনি সৎ ছিলেন এখন আছেন । আমার মা সৎ অসৎ , জ্ঞানী অজ্ঞান কিছুই হলেন না । তিনি ধীরে ধীরে যেমন কামারশালায় লোহা পিটিয়ে এক্সময় হাতিয়ার হয় তেমন কস্ট ,অপমান, দারিদ্র এইসবের বিরুদ্ধে লড়তে লড়তে শেষপর্যন্ত যা হলেন তা হল একজন মা । আমার মা কেবল একজন মা । মায়েরা গণ্ড বামরাজনীতিকের সংজ্ঞায় কেমন হয় জানি না কিন্তু আমার সংজ্ঞায় তিনি একজন মা বৈ আর কিছু নন। আর কয়জন হতে পেরেছেন জানিনা। আমার দেখা একটা মানুষ আছেন তিনি। ছেলেবেলা কেটেছে হীনমন্যতায় , আমি তখন বুঝতেই পারিনি নিতান্ত সস্তা কিছু মানুষের বৈভব দেখে আমি নিজেকে তুচ্ছজ্ঞান করছি , আমার চারপাশে কীটের মত আমার অজস্র আত্নীয় , প্রতিবেশী , বন্ধুরা তখন আমার হিসেবে ছিলেন এক আশ্চর্য জগতের বাসিন্দা । আমি যেখানে শুদ্র তারা মহান ব্রাহ্মন ! পড়াশোনার বারোটা বাজিয়েছি বামদল করে । তখন এই সস্টা দল্টিতে ততোধিক সস্তা অকাট মুর্খরা বেশিদিন প্রশ্নের উত্তর দিতে সক্ষম হয়নি , আমি যে তাদের হিসেবে সুস্থ সেটা বুঝতে আমার সময় লেগেছিল ৬ টি বছর । এই শেষ , এই ফাকে বন্ধুরা সরকারী আমলা পর্যন্ত হয়ে গেল । আমি বুঝতে পারলাম আমার পরিপার্শ্ব যা ধারণ করে তাতে আমি অরক্ষিত বটে । এই কারণে যে কিছু বোধ আর একটা ছোটখাটো হৃদয় ততদিনে আমার তৈরী হয়ে গেছে । কবিতার মত আনপ্রোডাক্টিভ জিনিসের সাথে ততদিনে উঠাবসা । মাঝে মধ্যে গলা জড়িয়ে কান্নাকাটিও ! আজ অনেকদিন হল এখানে আছি , সাথে একটি পরিবার , চারপাশে একটা এমন রাস্ট্র যা পুঁজির প্রহরায় বাধ্য কুত্তার সততায় নিয়োজিত , অজস্র নিষ্ঠুর মানুষ । আমি ভালো নেই , আর কোনোদিনো ভালো থাকব সেটা আশা করি না, অন্তত আর বড়জোর ৩০ বছর থাকব এখানে , এই সময়ে তো হবার নয় । একা যে ভালো থাকা যায় না সেটা নয় , কেউ কেউ শুধু থাকতে পারে না । আমি তাদের একজন ।

"ইভান অরক্ষিত" › বিস্তারিত পোস্টঃ

হা য়া রো গ্লি ফি ক্স

১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৫:১২

বুলুর মাকে সবাই বুলুর মা কেনো বলে আসলে কেউ জানে না । মচনা বুড়ি জানতো , মচনা বুড়ি বুড়া হইতে হইতে মোরসে । তখন কেউ তাকে এই প্রশ্নটি করেনি কে জানতো যে কেউই জানে না , সব সময় এই ৬ জন মহিলা দলবেধে ভিক্ষা করতেন । অর্থাৎ একদম সকল হিসাবে প্রলেতারিয়েত । কিন্তু এইখানে একটা বিরাট সমস্যা আছে , সমস্যাটা হল ... আচ্ছা থাক ওইটা অন্যত্র আলোচিত হবার বিষয় ।



তো বলছিলাম ... হ্যাঁ , আসল কথাটিতো বলাই হয়নি , সেটা হল বুলুর মা কিন্তু বোবা । পড়ালেখাও জানে না । তো মচনা বুড়ি মরার পর আজ প্রায় ৬ মাস হল । সকলেই এই বিষয়ে একটা খুত খুত নিয়ে আছেন সারাক্ষন । এর মধ্যে ভিক্ষা টিক্ষার তেমন সমস্যাও নেই । এইখানে তারা বেশ পরিচিতও বটে । ফিরোজের মা , আনোয়ারার মা ... আরেকটা কথা ... এখানে সকলেই কারো না কারো মা । এবং ৬ জনের মধ্যে ফিরোজের মা ফিরোজের ভাড়া বাসায় থাকে , আগে ভিক্ষা করতো , এখনো বিকালে একটা ময়লা শাড়ি পড়ে চুপ করে বেরিয়ে আসে , অনেকদিনের অভ্যাস । একদিন ফিরোজের মা ধরা খেলো , ফিরোজ রাগ করে না , স্নেহভরে মায়ের দিকে একবার তাকায় -



এই আম্মা তুমি ভিক্ষা কর ক্যা , আম্মা আমি আসি না । এমন কইর না আম্মা , মাইন্সে কি বলবে



আমি ভিক্ষা না করলে কি মাইন্সে আমারে জমিদারনী কবে ?



না তা কবে ক্যা , কিন্তু এইডা স্বীকার কইরবে যে এখন আর ভিক্ষা কর না ।



বাবা , ভিক্ষা করলে মাইন্সের অহংকার কমে , মাইন্সের দোয়ারে গেলে তাগো দূর দূর শুনলে গুনা মাফ হয় , তুই জানস বায়জীদ বোস্তামিরে তার পীর কয় বছর ভিক্ষা করাইসিল ?



এই গল্পটি ফিরোজের জানা আছে , রোড ডিভাইডারে মায়ের কাছে শুয়ে শুয়ে ছোটবেলা অনেক গল্প শুনেছে । তখন থেকেই সে তার এই সম্প্রদায়টিকে বেশ সমীহ করে , এমনকি রাবেয়াকেও যে আসলে খোড়া না , ইস্মাইল বুড়া কেও যে আসলে অন্ধ না ।



রোড ডিভাইডারের দুপাশ দিয়ে শাই শাই করে গাড়ি যেত , নীল , লাল , সাদা ও আবার একটু একটু হলুদো এই রকম রঙ এর একটা গাড়ি ... ফিরোজ গাড়ি দেখলেই তাকায় , গ্যারাজের মালিক চেচিয়ে বলে কি রে ব্যটা সবগুলান গাড়ি গেলে খালি তাকাস ক্যা ? তরেদেখছি বহুতদ্দিন ধইরা এই কামডা করস । বিশয়ডা কি ? একটা মিথ্যা বলে ফিরোজ - মালিক আশ্রাফ জহুরী কে বুঝাতে পারে ।



একদিন ঘটেছিল এক মারাত্মক কাণ্ড , আসা যাওয়া গাড়ীগুলোর জানলা দিয়ে কেউ একটা বাচ্চাদের ডাইপার ছুড়ে মারলো । পড়লো এসে সুজা ফিরোজের মুখে । ফিরোজের মা অনেক কস্টে আবার রাস্তাটি পেরিয়ে অনেকদূরে মুনিসিপালের পুকুরে ওর মুখটা খুয়ে দিল । এসে দেখে ঘুমানোর ছালার বস্তাটা নেই ।



ফিরোজ মাঝে মাঝে ওয়েল্ড নস্ট করে ফেলে , গেস কাটারের কাটিং টর্চ চালু রেখে দিয়ে বিড়ি টান্তে থাকে , গ্যারাজের মালিক এখন আর তেমন কিছু বলে না , ফিরোজ তার সন্তানেরো অধিক এখন , ১৫ টি বছর তার হাতে মার খেয়েছে , এখনো যদি আশরাফ জহুরী তাকে সোজা বুকে লাথি মারে সে জানে তাও ফিরোজ কিছু বলবে না । শহরে ফিরোজের মতো আরেকটা মেকানিক্স নাই , আশ্রাফ জহুরী ও এই বয়সে এখনো খালি মাটিতে রড ফেলে সোজা আর্ক ওয়েল্ডিং করে যেতে পারবে এখনো তার হাত পাকা , যদিও ফিরোজ থাকতে তার পক্ষে এইটা অসম্ভবের পর্যায়ে । এই মমতাটা তিনি খোব অনুভব করেন । মাঝে মাঝে দূর থেকে দুপুরের নাস্তা খেয়ে ফিরোজ তার খাবার নিয়ে আসার ফাকে আশ্রাফ জহুরী একটা পান মুখে পুরে দিয়ে নিজের গাজার কল্কি , সাইকেল এর টিউব এর একটি কালো টুকরো , একটা ছুট্ট ন্যাকড়া ইত্যাদি গাজা খাওয়ার প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম নিয়ে ভেতরে একটা ঘরে চলে যায় । সব কাজ শেষ হলে নারকেলের ছোলা দিয়ে বানানো টিক্কাটা ( গোল করে বানানো ছোলার বল বিশেষ যা পুড়িয়ে আংটা করে দীর্ঘস্থায়ী আগুনের উৎস হিসেবে কল্কের মাথায় দেয়া হয় ) রেখে দেয়া হয় ফিরোজের জন্য , ঐটা জ্বালানো তার কাজ , গত ১৫ বছর যাবৎ কাজটা ফিরোজই করছে ।



তো বুলুর মায়ের কথায় ফিরে আসা যাক , আজ একটা জরুরী বৈঠক বসেছে বৈঠকের একপর্যায়ে বুলুর মা চিৎকার চেচামেছি শুরু করে দেয় , সে কিছুতেই বোঝাতে পারছে না তার অতীত জীবন্টি । সে বোবা । ঘন্টা খানেক চেচামেচির পর পুলিশ এসে জরুরী সভাটি মাটি করে দেয় । বুলুর মা হাটতে থাকে , সকলেই পেছন পেছন যেতে থাকে । একজন একটু এগিয়ে এসে বুলুর মাকে জড়িয়ে ধরে , এর নাম শেফালি একটা শিশু গাছের নীচে থামায় বুলুর মাকে ।



কাইন্দ না তো খালা , কওন এর কি আছে , আমরা কি রাজা বাসসা নি । রাজা বাসসা গো কাহিনি থাকে । আমাগো আর কাহিনি কি । আমাগো কাহিনি অইল পেডের ভুখ ।



এই দর্শনে বুলুর মা বিশ্বাসী নয় , সে তার ইতিহাস্টি ব্যক্ত করতে চায় । তার হয়তো অন্য দর্শন আছে সেটাও সে বলতে পারে না । সে বোবা ।



লাভ রোডের ভেতর একপাশে দুই তিন ট্রাক বালু ফেলে কে ঢিবি করে রেখেছে , সন্ধ্যার পর এইদিক্টা তেমন লোকের আনাগোনা থাকে না , দুই একটা ছেলে বসে মদ টদ খায় । এখন বিকাল । বিকালে একটা কুকুর এসে ঘুমিয়ে থাকে । রোজ চতপটিওয়া মিলন চলে গেলেই একটু পরে কুকুরটা আসে । বুলুর মা শেফালীকে নিয়ে সেই ঢিবিটার পাশে চলে আসে । অন্যরা যার যার মতো করে ভিক্ষায় লিপ্ত , এরা আবার রাত্রে ধরবে । আজ শরীফের মাও আসেনি । দুপুরের চা খাওয়া বাদ । যদি নিজের টাকা না থাকে । কাজে ভিক্ষা পাওয়ার আপেক্ষিক গুরুত্বটা বুলু রহস্য উদ্ঘাটনের চেয়ে বেশি ।



বুলুর মা বালু এনে রাস্তার পাশে ড্রেন এর স্ল্যাব এর উপর রাখে । হাত দিয়ে বেশ খানিক্টা যায়গা সমান করে , এরপর কেবল ৬ টি সরল রেখা আর একটি বৃত্ত দিয়ে একটি মানুষ আকে , তারপর তাকায় শেফালির দিকে ...



বুলু ?



মাথা দোলায় বুলুর মা ...



তোমার জামাই ?



আবার মাথা দোলায় ।



তোমার বাপ ?



এইবার থিক হয়েছে । বাপের পাশে অনেকগুলো ছোট বৃত্ত আকে বুলুর মা , কতগুলো আয়তক্ষেত্র আকে ...



টেকা ?



হ্যাঁ সুচক মাথা দোলায় ।



তোমার বাপের অনেক টেকা আসিল ?



এক্তা হ্যাঁ সুচক ইশারা করে এইবার বুলুর মা তার চারপাশে আক্তে থাকে একটি বাড়ি , কইয়েকটা গরু , একটা নৌকা ...

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.