নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শুধু দেখি আর লিখি, কী আছে আর জীবনে!

জেডিপি

লিখতে ভালোবাসি, প্রকৃতি ও প্রাণীপ্রেমী।

জেডিপি › বিস্তারিত পোস্টঃ

১০১, ক্রিসেন্ট রোড

২৯ শে নভেম্বর, ২০২০ রাত ২:১৫

ভূমিকা

জীবনে প্রথম আমার কোন গল্প সংকলন তৈরি করতে যাচ্ছি। কটি গল্প এখানে থাকবে এখনও জানি না, তবে সবগুলো গল্প কোন না কোনভাবে এক সূত্রে গাঁথা হতে পারে। কয়েকটি গল্পে প্রিয় লেখকদের প্রভাব থাকতে পারে, আবার নাও পারে। কোন ধরণের নিয়ম কানুনের তোয়াক্কা না করে নিজেকে পূর্ণভাবে যা খুশি লেখার স্বাধীনতা দিচ্ছি এই প্রথম। দেখা যাক কী হয়! '১০১, ক্রিসেন্ট রোড' গল্প সংকলনের প্রথম গল্প আজ প্রকাশিত হল। গল্প লিখে আমি আশ্চর্য শান্তি পাই, মূলত এই শান্তির খোঁজেই লেখা। কারও ভাল লাগলে সেটা বাড়তি পাওয়া।


দিনকাল

ষাটোর্ধ্ব ডাক্তার মহসিন তালুকদারের ক্রিসেন্ট রোডের বাড়ির ছাদবাগানে প্রতিদিন অনেক পাখির আনাগোনা হয়। এই পাখিদের আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে রয়েছে পাখি সমাজের অন্যতম সদস্য কাক। কে বা কারা তাদের এই দায়িত্ব দিয়েছে তা জানা যায় না। পাশের বিল্ডিংয়ের কবুতররা বলে, ‘আমরা তো এসেছি বেশিদিন হয়নি, আসার পর থেকেই দেখছি এনারা তদারকি করছেন’। এর চেয়ে বাড়তি কিছু বলতে সেদিন রাজি হয়নি ধূসর রঙের যুবক কবুতরটি, কারণ কিছুদিন আগেই অসামাজিক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত অবস্থায় সে কাক দলের এক সদস্যের হাতে ধরা পড়েছিল। এ নিয়ে এলাকায় ছিঃ ছিঃ পড়ে যায়। ক্রিসেন্ট রোড, ভূতের গলি, পুকুর না থাকা পুকুর পাড়, নর্থ রোড থেকে শুরু করে ছিঃ ছিঃর প্রতিধ্বনি ছড়িয়ে যায় ইস্টার্ন প্লাজার ছাদের ফোঁকরে। কাঁঠালবাগানের এইচএসবিসি ব্যাংকের সামনে দাঁড়ানো বরই গাছটায় সেদিন গোধূলি বেলায় একটু বেশিই জোরে শোনা গিয়েছিল চড়ুইদের কিচিরমিচির। যাবেই বা না কেন? পাখি সমাজের ভদ্র ছেলে বলেই পরিচিত ছিল ক্রিসেন্ট রোডের সেই বাড়ির ছাদের কবুতরছানাগুলো, বড় হয়ে যে এমন হবে কে ভেবেছিল!
যদিও ছুঁচালো ঠোঁটের কালো মৌটুসিটা গম্ভীর হয়ে বলেছিল, ঘটনা তেমন কিছুই নয়। জবা ফুলের মধু খেতে খেতে সে দেখেছিল পুরো ঘটনাটি। সেদিন সকালবেলা কার্নিশে বসে যুবক কবুতরটি তার পরিবারে আসা নতুন সাদার মধ্যে কালো ছিটেফোঁটাওয়ালা সুন্দরী কবুতর যুবতিটির সাথে প্রেম করতে চেয়েছিল। পাশে ওর ছোট বেলার বান্ধবী, যার সঙ্গে ও সেদিন মাত্র ঠোঁটে ঠোঁট মিলিয়ে বিয়ে করেছে, সেই ধূসর যুবতি কবুতর হতভম্ব হয়ে দেখছিল আর ভাবছিল, কাল আমি প্রেম করতে রাজি হইনি বলে তুমি আজ ছিটেফোঁটাকে বেছে নিলে? এত সহজেই আমার জন্য মরে গেল তোমার ভালোবাসা? এলোমেলোভাবে ছোট্ট কার্নিশে সে হেঁটে বেড়াচ্ছিল তার ছোটবোনকে নিয়ে, পাশেই ছিটেফোঁটার সঙ্গে তার সাবেক স্বামীর ঠোঁট বিনিময় চলছে। কবুতররা কাঁদলে চোখ দিয়ে পানি পড়ে না, তাই যুবতির কান্না কেউ দেখেনি সেদিন। তবে তার হৃদয়ের হায় লেগেছিল।

ছিটেফোঁটা পুরুষ নিয়ে খেলা করতে অভ্যস্ত, সে তার ভালোবাসার খুনসুটি চালিয়ে যাচ্ছিল। এদিকে যুবক তখন ছিটেফোঁটার প্রেমে এতোটাই মগ্ন যে সে ভুলে গিয়েছিল পাখি সমাজে তার পরিবারের নামডাকের কথা, ভদ্র ছেলে হিসেবে তার পরিচিতির কথা। তাকে মনে করিয়ে দিতে চলে এল কাক। মুহূর্তের মধ্যে উড়ে এসে এক লাফে ছত্রভঙ্গ করে দিল অসামাজিক এই লীলাখেলা।
এরপর থেকে ছিটেফোঁটাকে আর দেখা যায় না। শোনা যায়, ছিটেফোঁটার চঞ্চল মন আবার উড়াল দিয়েছে। একদিন বিকেলে বেড়াতে বের হওয়ার পর সে আর বাড়ি ফেরেনি, আজকাল ধূসর যুবক কবুতরও খুব একটা বসে না কার্নিশে। তার হৃদয় ভাঙ্গা যুবতী স্ত্রীকে মাঝে মাঝে এলোমেলোভাবে হেঁটে বেড়াতে দেখা যায় এদিক ওদিক। তবে বিপত্নীক কালো মৌটুসির মতে, এই বয়সে এমনটা হতেই পারে। সবাই জানে, কবুতররা একবার বিয়ে করলে তার সঙ্গেই সারাজীবন কাটায়। সেদিন ডুমুর খেতে আসা বুলবুলি দম্পতির সাথে এ নিয়ে আলাপ করছিল মৌটুসিটি। লাল পাছা দুলিয়ে যখন ছেলে বুলবুলি তার কথায় সায় জানালো, ঠিক তখনই চোখ গরম করে তাকালো তার বউ। সেদিন আর বউয়ের সঙ্গে ভরদুপুরে ডুমুর খাওয়া হল না ছেলে বুলবুলির। ষাটোর্ধ্ব ডাক্তার মহসিন তালুকদারের ক্রিসেন্ট রোডের বাসার ছাদবাগানে আধখাওয়া ডুমুর পড়ে রইল।
বিকালে ভাতঘুম দিয়ে উঠে চোখমুখ ফুলিয়ে ঝাড়ু হাতে বাগানে এল লালমনিরহাট থেকে সদ্য আসা দারোয়ান-কাম কেয়ারটেকার আয়নাল। বাগানে এত্তগুলো আধখাওয়া ডুমুর পড়ে থাকতে দেখে একা একা চুকচুক শব্দ তুলে আফসোস করল আর ভাবল, এত বড় বাগান! কত জায়গা! তাকে সুযোগ দিলে সে পুরা বাগানে সবজি গাছ লাগাইয়া সবজি বেইচা এতদিনে একটা বাড়ি কইরা ফেলতে পারতো। স্যারের (মহসিন তালুকদার) কেন ফুল গাছ এত পছন্দ সে এখনও বুঝতে পারলো না, তাও গোলাপের চাষ করলে স্যারের কত আয় ইনকাম হইত তা ভাবতে ভাবতে সে আধখাওয়া ডুমুরগুলো ঝাড়ু দিয়ে তুলতে থাকল।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে নভেম্বর, ২০২০ বিকাল ৩:২০

মূর্ধণ্য ষ বলেছেন: আপনার লিখার হাত ভালো। আরো লিখুন। ভালো লাগলো পড়ে। :)

৩০ শে নভেম্বর, ২০২০ রাত ৯:৪৩

জেডিপি বলেছেন: ধন্যবাদ 'মূর্ধণ্য ষ' সাহেব! :#)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.