| নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কলমের তুলি আমার প্রতিবাদের হাতিয়ার
কোন মায়ার জালে। ( ছোট গল্প )
শান্ত চৌধুরী
** বৈশাখের পরন্ত বেলায় সবুজের বুকে মায়া জাগ্রত জারুলের ফুল গুলো বিকেলের শেষ আলোয় উজ্জ্বল,দৃষ্টি নন্দন চোখ ফেরানো দায় । এমন সুন্দর সোনালী বিকেল কার না ভাল লাগে । অপূবর্ গৌধূলীর শেষ রঙ টুকুও আপন আলোয় দিসেহারা । বিকেলের শেষ আলো টুকো এখনই হারিয়ে যাবে । আধারে মিলিয়ে যাবে পুরো দিগন্ত ।
অনবরত হেটে চল্লাম। প্রতিদিনের মতো বন্ধুদের আড্ডায় মিলিয়ে যাব । একটু একটু করে শেষ আলোও হাড়ালো তার রূপ । আঁধারে মিশে অনবরত হাটছি আমি,উদ্দেশ্যহীন পথের শেষ কোথায় জানা নেই।
** প্রতিদিনের মতো কালামের চায়ের দোকানে এসে হাজির - নীলয়,আবীর,রাফসান আরো অনেকে ।অপেক্ষার প্রহর শেষ আড্ডার আসর এলোমেলো গল্পে সাজানো । কখনও ক্রিকেট-ফুটবল-বান্ধুবী-বড় ভাই-কলেজ,স্যার এইতো । গল্পে আড্ডায় সন্ধ্যা গরিয়ে রাত ।
** শরীর টা ভাল নেই । কেহ আসেনি এখনও একাই বসে ওদের কথা ভাবছি,এমন সময় নীলয় এসে হাজির ।
নীলয় বল্ল কিরে বন্ধু একাই চা খাবি আমার টা কোথায় ।
চা খাবি তো খা আমার সংক্ষিপ্ত উওর ।
একে একে সবাই এসে হাজির।
এইচএসসি পরিক্ষার রেজাল্ট দিবে কয়েক দিনের মধ্যে,মাথায় অনেক চাপ ।
অনেক ভয় হচ্ছে কি জানি কি রেজাল্ট করি । রেজাল্ট দিলেই মুক্তি,ঘোরে ডুবে আছি । নীলয় অনেক কাছের বন্ধু,ছোট বেলা থেকেই এক সাথে খেলাধুলা করে বড় হয়েছি । অনেক সুখ দুঃখের গল্প হয় দু বন্ধুর মাঝে । নীলয় বল্ল কিরে কিছু বল ।আমার ঘোর কাটে।
ও তোকে তো বলাই হয়নি সিলার কথা ।বলিস ঃ নি এখন বল নীলয়ের উওর ।
সিলার বিয়ে হয়ে যাচ্ছে শুনলাম আমার প্রশ্ন । হ্যা মেয়ে মানুষ বিয়ে তো হবেই তাতে তোর গাবরানোর কি আছে নীলয়ের উওর ।
তুই জানস না আমি সিলার জন্য কি করতে পারি । আমার জীবনের সুখের নাম যেমন সিলা,দুঃখের সাগরে ভাসার নাম ও সিলা ।
নীলয় আমার কথা গুলো শুনে বল্লো ঃআরে বোকা এমন কি যে ওর জন্য তোকে সুখ-দুঃখে হাবু-ডুবো খেতে হবে । দেশে কি মেয়ের অভাব আছে । একটা গেলে হাজার টা আছে বাদ দেতো এসব।
আমি কিছু না বলে চুপচাপ বসে ভাবতে লাগলাম পেলে আসা দিন গুলোর কথা।
** আজ মে মাসের ১৭ তারিখ, সিলার বিয়ে । আমাকে ও সব বন্ধুদের দাওয়াত করেছে । আমি সাবাবিক থাকার চেষ্টা করছি ।নীলয়,রাফসান,আবীর,অপর্া,রাহী সব বন্ধুরা এক সাথে হলাম ।
তিনটা রিকসা নিয়ে রওয়ানা হলাম সিলাদের বাড়ীর উদ্দেশ্যে । অল্পক্ষনের মধে্যই আমরা এসে পৌছলাম ।রিকসা ভাড়া চুকিয়ে চলে গেলাম ভিতর বাড়ি ।আমাদের এসে এগিয়ে নিল সিলার বড় ভাই । বিয়ে বাড়ী সাজ,সাজ,হৈছৈ,আনন্দ ।
সিলার মাকে সালাম দিয়ে রুমে প্রবেশ,আমাদের শরবত দিয়ে বসতে বল্লেন,খালাম্মা খুব ব্যস্ত মেহমানের ভিড়ে ।
কিছুক্ষন পর সবাই সিলার রুমে গেলাম,অপলক তাকিয়ে দেখেছি শেষ দেখা । রূপের রানী,রূপবতী কোন উপমাই আজ মানাবেনা রূপের হাট যেন সিলার মাঝে ।এতো রূপে আগে কখনও দেখিনি ।
সিলা আমার দিকে তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নিল । আস্তে করে বল্লঃ কেমন আছ । আমি নিরব দর্শক হয়ে দাড়িয়ে আছি । আমি বোবা হয়ে গেছি কিছু বলার ভাষা আমার জানানেই ।
রাফসান,নীলয়,আবীর,অর্পা,রাহী সবার সাথে কথা বলছে সিলা,আমি কিছু না বলে বাহীরে চলে আসলাম । ওরা সবাই সিলার সাথে গল্প করছে । আমি নীলয় কে বলে সিলাদের বাড়ী থেকে চলে আসলাম । আসার সময় নীলয়ের কাছে সিলা কে দেয়ার জন্য ছোট্র কাগজে কবিতার দুটো লাইন লিখে দিলাম।
"কতটা ভালবাসলে,ভালবাসা বলে।
কতটা রক্ত ক্ষরন হলে ভালবাসা হয়।
জীবনের অণু অধ্যায়,প্রান্তের শেষ
বেলায়ও ভালবাসার মাপকাঠি"।
সিলা লিখাটা বার বার পড়লো নিরবে আশ্রু ঝড়ালো।
এ আর আগের মতো সিলার কথা তেমন মনে পড়েনা,প্রথম দিকে খুব কষ্ট হতো ।নিজেকে খুব একা অসহায় মনে হতো । এখন নিজেকে সিলার কথা ভেবে কষ্ট দেইনা । সত্যিকার আর্থে একেবারেই ভূলে যেতে পাড়িনি মাঝে স্মৃতির রাজ্যে হাড়িয়ে সুখের দিন গুলো খুজি।
** এইচএসসির রেজাল্ট দিল মোটামুটি,নীলয়,রাফসানের রেজাল্ট আসেনি,আবীর,অর্পা ভাল রেজাল্ট করেছে,রাহীর রেজাল্ট ভাল হয়নি । অপর্া রাহীকে বিদায় দিয়ে,আমি, আবির, নীলয়,রাফসান নদীর পাড়ে এসে বসলাম।আমার মনটাও ভাল নেই,রাফসান,নীলয় নিস্তব্দ,কারো মুখে কোন কথা নেই । আবীর ভাল রেজাল্ট করেও মন ভাল নেই ।অন্য বন্ধুদের রেজাল্ট ভাল হয়নি বলে ।আবীর সবাইকে সান্তনা দিয়ে চল্ল । বিকেলের শেষ আলো এখনি নদীর গর্ভে বিলিন হয়ে আধারে নিমজর্িত হবে।
** সবাই এখন ব্যস্ত,ত্রক বন্ধুর সাথে আরেক বন্ধুর দেখা হয় খুব কম । আবীর ভাল রেজাল্ট করে বুয়েটে ভতর্ি হয়েছে,অপর্া জেলা শহরের কলেজে অনর্াসে,আমি একটি প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে,নীলয়,রাহী পরের বারের পরিক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।রাফসান ইংলিশ মিডিমায়ে ভর্তি হয়।
** একে একেসবাই সোনালী দিন গুলো কে পেছনে পেলে কর্মব্যস্ত জীবনে পদরপন করে । আবীর বুয়েট থেকে পাশ করে সরকারী চাকুরী করে । নীলয় পড়ালেখা শেষ করে প্রাইভেট চাকুরী করে । রাফসান লন্ডনে বেরিস্টারী পড়া শেষ করে ওখানেই সেটেল । অর্পা সরকারী প্রাইমারি স্কুলে চাকুরী করে।রাহীর সাথে যোগাযোগ নেই অনেক দিন । শুনেছি বিয়ে হয়েছে জামাই ঢাকায় চাকুরী করার সুবাদে ঢাকায় থাকে ।আবীর,নীলয়ের সাথে মাঝে মাঝে দেখা হয়।যোগাযোগ টাও ভাল,রাফসান মাঝে মাঝে ফোন করে,রাহী,অর্পার সাথে যোগাযোগ নেই । সিলার কথা মাঝে মাঝে মনে পড়ে । আমি আমার মতোই আছি।
শুধু স্মৃতির ডাইরিতে জমা পড়া ফেলে আশা সেই সব সোনালী দিন গুলোর মায়ায় মাঝে মাঝে কাদী ।অশ্্রুফেলি নিরবে ।বুকের মাঝে চাপা ব্যাথা অনুভব করি । সবার ছবি গুলো মনের পটে একে চলি,নিরবে আনমনে।জানিনা কোন মায়া জালে,আমি জড়িয়ে পড়েছি ।কেন যেন দিন দিন ফেলে আশা সোনালী দিন গুলোকে কাছে টানছি । পরন্ত বিকেলে ধানমন্ডি লেকের জলে এক টুকরো পাথর ছুড়ে দিয়ে যেমন ঢেউ খেলে আবার মিলিয়ে যায়, জীবনের সুখ স্মৃতি গুলো তেমন করে আমাকে উকি দিয়ে আবার চলে যায়। 
©somewhere in net ltd.