নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

স্রোতের বিপরীতে নৌকা ভাসানো এক বোকা মাঝি!

আহাম্মেদ সকাল জিকু

আহাম্মেদ সকাল জিকু › বিস্তারিত পোস্টঃ

নারী ট্রাভেলার- (ছোট গল্প)

১৪ ই জুলাই, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:২৯

কলাবাগানের শান্তি কাউন্টারে আসছি, এক ঘন্টা হয়ে এলো প্রায়! অথচ নাফিজা ও তাঁর বান্ধবীদের কোন খবর নেই। দেরি দেখে আধা ঘন্টা আগে ফোন করে জানতে পারলাম, উবারে আছেন তাঁরা ঢাকা কলেজ এরিয়ায় জ্যামে।
আজ বৃহস্পতিবার হওয়ায় আজিমপুর থেকে কলাবাগান পর্যন্ত প্রচন্ড জ্যাম!
জানিনা আজ কপালে কি আছে...।

রাত সাড়ে দশটায় আমাদের বাস। গত পরশু গ্রুপ চ্যাটবক্সে আমাদের ট্যুর প্ল্যান বিস্তারিত জানানো হয়েছিলো...
বারবার বলা হয়েছিলো, কমপক্ষে আধাঘন্টা আগে যেন সকলেই বাস কাউন্টারে হাজির থাকে! যদিও সবাই এক বাক্যে রাজি হয়েছিলো। কথা দিয়েছিলো উপস্থিত থাকবে সময়মতো। কিন্তু সেটা আর হলো কোথায়....

নাফিজা। পুরো নাম-নাফিজা আহাম্মেদ। সরকারী আমলা বাবার একমাত্র কন্যা। কয়েকজন বান্ধবী সহ থাকেন, আজিমপুরের একটা ছাত্রী হোষ্টেলে। ইডেন থেকে গতবছরই অনার্স শেষ করলেন। কথা প্রসঙ্গে জানতে পারি, আমাদের ট্রাভেলিং গ্রুপে আছেন অনেকদিন হয়। কিন্ত কখনো আমাদের সাথে ট্যুরে যান নি। মানে, সাহস করেন নি বলে যাওয়া হয়ে উঠেনি। গত বছরের শেষ দিকে রাতারগুলে ক্যাম্পিং করে আসার পর থেকে নাকি, তারা বান্ধবীরা মিলে প্ল্যানিং করছেন। বিশেষ করে ঐ ক্যাম্পিং এ বেশ কিছু নারী ট্রাভেলার ছিলেন জেনে উৎসাহ এবং সাহস দু'টোই বেড়েছে। পরীক্ষা শেষ হলেই তারা সাজেক ভ্যালী যেতে চান, আমাদের সাথে।

ক্লায়েন্টরা ক'জন যাবেন? ক'দিন থাকবেন? খাবার ও থাকা নিয়ে আলাদা কোন পছন্দ আছে কি না?? এইসব জেনেই আমরা সাধারনত প্যাকেজ নির্ধারণ করে দেই এবং এইসব বিষয়েই সাধারণত ক্লায়েন্টের সাথে কথা হয়ে থাকে।
এর বাইরে ক্লায়েন্টের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে ভাবনাটা আমাদের পলিসির মধ্যে পড়েনা। তথাপী নাফিজার ট্যুর প্ল্যানের সাথে ড্রিংক করার বিষয়ে জানতে চাওয়াটা আমাকে ভাবাচ্ছে ভীষন রকম।
যদিও ড্রিংক এর কোন ব্যবস্থা আমাদের গ্রুপে নাই এবং আমরা এসব সমর্থন করি না বলে জানিয়েছি তাঁকে।
এও জানিয়েছি, সাজেকে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ভালোরকম নিরাপত্তা বলয়ে থাকতে হয়, ট্রাভেলারদের।
সেখানে এসব...একেবারেই সম্ভব নয়!
সব শুনে শুরুতেই একটু নাখোশ হলেও, পরে রাজি হলো এবং জানালো মোট কত খরচ হবে তা জানাতে।
পরদিন হিসেব জানাতেই। একবাক্যে সবাই রাজি। মোটামুটি সব কিছু ফাইনাল। নাফিজা ও তার সাত বান্ধবী যাচ্ছেন আমাদের সঙ্গে। সেই হিসেবে আজকেই আমাদের যাত্রার ক্ষন নির্ধারিত হলো।

সোয়া দশটার দিকে দুইটা আলাদা আলাদা প্রাইভেট গাড়ীতে এসে তারা পৌঁছাল। যদিও কাউকেই চিনি না, আমি।
নাফিজা কে একটু একটু আঁচ করতে পারলাম, ফেসবুকে ছবি দেখেছিলাম বলে। ছবিটে যতোটা আধুনিক সাজে দেখেছিলাম, বাস্তবে তারচেয়ে একটু বেশিই আধুনিক মনে হলো নাফিজা কে।
গাড়ী থেকে নেমেই এদিক ওদিক করছিলো তারা। আমিই এগিয়ে গেলাম। দূর থেকেই হাত তুলে ইশারা দিতেই নাফিজাও এগিয়ে এলো। সবার সাথে পরিচয়ের পর্ব শেষ করেই দ্রুত সবাই কে বাসে উঠার তাড়া দিলাম।

রাত প্রায় ২টা। ইতিমধ্যে বাস কুমিল্লা ছেড়ে এসেছে।
কুমিল্লায় হোটেল বিরতিতে সবাই নামলেও নাফিজা কেন যেন নামেনি। জিজ্ঞেস করতে তেমন কিছু বললো না....
শুধু ইশারায় জানালো, তিনি নামবেন না।
নাফিজা কে দেখার পর থেকেই কেমন যেন অবাক হচ্ছিলাম! আচরনগুলো কেমন যেন অদ্ভূতুরে মেয়েটির.....
ঠিক ভোর সাড়ে সাতটায় শাপলা চত্বরে নামিয়ে দিলো আমাদের বহনকারী শান্তি পরিবহনের বাসটি।
দ্রুত গিয়ে চাঁন্দের গাড়ী ঠিক করলাম একরাত দুইদিনের জন্য। এরপর একটা রেষ্টুরেন্টে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে সকালের নাস্তা সেরে নিলাম। এখন পরবর্তী কাজ আর্মি ক্যাম্পে রিপোর্ট করে স্কর্টে যুক্ত হওয়া! ইতিমধ্যে সবাই কে আরও একবার নিরাপত্তা দিকগুলো এবং সকলের করনীয় বিষয়গুলো ব্রিফ করে সাড়ে ন'টার স্কটে আমরা রওয়ানা হলাম। সাজেকে ডুকতে ডুকতে প্রায় একটা বেজে গেল।

নাফিজাদের জন্য রুললুই পাড়াতেই পাশাপাশি দু'টো রুম বুক করা ছিলো। সবাই কে ফ্রেশ হতে বলে আমি চললাম দুপুরের খাবার অর্ডার করতে। এখানকার হোটেলগুলোতে অগ্রীম অর্ডার না করলে খাবার পাওয়াটা বেশ মুস্কিল হয়ে পড়ে!
খাবার শেষে খানিক্ষন বিশ্রাম নিয়ে বিকালে সবাই কে নিয়ে চললাম, কংলাক পাড়ায়। পাড়া ঘুরে যখন হ্যালিপেড দুই-এ পৌছলাম, সূর্য মামা তার আধাঘন্টা আগেই বিদায় নিয়েছিলো।
রাত প্রায় আট টা পর্যন্ত হ্যালিপেডেই কাটালাম সবাই।

নাফিজার বান্ধবী নীরার গান শুনে বিমোহিত হওয়ার মতোই। মেয়েটা সত্যিই খালিকন্ঠেও দারুন গায়! বাকি সময়টা কাটলো গানের ফাঁকে ফাঁকে অন্যদের মজার মজার কৌতুক শুনে! যদিও কৌতুকের বেশিরভাগ অংশজুড়েই ছিলো তাঁদের হোস্টেল লাইফ আর বয়ফ্রেন্ড নামক ছেলেদের নাকে দড়ি দিয়ে ঘুরানোর।
এই প্রথম টিমে সবাই নারী ট্রাভেলার! আর আমি একাই পুরুষ। তাঁদের আড্ডায় মেয়েলি কথাবার্তার মাঝে থাকতে কিছুতা ইতস্তত করতেই নীরা এগিয়ে এসে জানালো, আপনি আমাদের সাথেই থাকুন, ভাইয়া। একা একা সময় কাটাতে বোরিং লাগবে।
তারচেয়ে আসুন সবাই মিলে একসাথে আড্ডা দেই।

টিমে এই নীরা মেয়েটিকেই আমার যথেষ্ট ভদ্রও ও সভ্য বলে মনে হয়েছে। বাকিরাও ভদ্র, তবে তুলনামূলক অনেকটা কম এই আর কি...
রাত- ন'টার দিকে রাতের খাবার শেষ করে সবাইকে কটেজে পৌঁছে দিলাম। আর ভোর সাড়ে পাঁচটায় তৈরি থাকার বিষয়ে বলে, আমার রুমের দিকে হাঁঠা দিলাম। ফেরার সময় নাফিজা কে একটু অন্যমনস্ক মনে হলো। যদিও পুরো জার্নিতেই তাঁর কোন উচ্ছলতা দেখিনি। সারাক্ষণই যেন নিজেকে খোলশের ভেতর ডুকিয়ে রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছিলো! হয়তো শরীর খারাপ লাগছে, অথবা মন!

ক্লান্তিতে বিছানায় শরীর টা এলিয়ে দিতেই যেন দু' চোখ জুড়ে রাজ্যের ঘুম নেমে এলো। এভাবে কতোক্ষন হলো ঠিক জানা নেই। হঠাৎ করেই দরজায় নক করার শব্দে ঘুমটা ছুটে গেল। বাইরে বেশ কিছু মানুষের কথার আওয়াজ শুনা যাচ্ছে!
সাথে দরজায় ধাক্কার আওয়াজের পরিমানটাও বাড়ছে পাল্লা দিয়ে। ঘড়িতে চোখ বুলাতেই দেখি রাত তিনটা বাজে প্রায়।
এই সময়ে দরজায় আওয়াজ শুনেই বুকের ভেতরে খচ করে উঠলো। নাফিজাদের কটেজে কোন দূর্ঘটনা ঘটেনি তো..???
দ্রুত দরজা খুলে বেরিয়ে আসতেই দেখি, কটেজের ম্যানেজার সহ নীরা ও তার এক বান্ধবী দরজার বাইরে দাঁড়ানো। ওদের দেখেই অজানা আশঙ্কায় পেয়ে বসলো আমায়। জিজ্ঞেস করতেই জানলাম, নাফিজা বেশ অসুস্থ।
এর বেশি তাঁরা বলতে পারলো না।

জ্যাকেট টা গায়ে দিয়েই রুম থেকে বের হলাম।
দ্রুত পা চালালাম ওদের কটেজের দিকে।
যদিও দুই কটেজের দূরত্ব তেমন নয়, মাঝে একটি কটেজের পরেই তাদের কটেজটির অবস্থান।
নাফিজাদের কটেজের রুমে যখন প্রবেশ করলাম, বিছানায় তখনো শুয়ে আছে নাফিজা, অচেতন হয়ে।
অন্যরা তাঁর মাথায় পানি দিচ্ছে, কেউ বা হাত পায়ের তালু ম্যাসেজ করে দিচ্ছে!
কি হয়েছে জিজ্ঞেস করতেই যা জানলাম, ওদের কে বিদায় দিয়ে চলে আসার পর সবাই কটেজে এসে আড্ডা মারছিলো।
এর কোন ফাঁকে নাফিজা বের হয় রুম থেকে।
হাতে একটা বোতল সহ ফিরে আধা ঘন্টা পর।
কোন এক আধিবাসী তরুন থেকে নাকি সংগ্রহ করেছে পাহাড়ি চোলাই মদ!!! ওটা খেয়েই এই অবস্থা!!
প্রায় একঘন্টা ধরে হুঁশ নাই।
সবাই মিলে চেষ্টা করেও যখন হুঁশ ফিরাতে পারলো না, তখনই আমাকে ডেকে আনলো।

নাফিজার এই কন্ডিশন দেখে, আমারও হাও-পা শীতল হয়ে আসলো মুহুর্তে। কখনো এমন পরিস্থিতিতে পড়বো ভাবিনি। এই মুহুর্তে পাহাড়ের এই দূর্গম এরিয়ায় ডাক্তারই বা কোথায় পাবো??? স্কট নিয়েও এই রাতে খাগড়াছড়ি পৌঁছানো বেশ ঝুঁকিপূর্ণ!! সকাল ছাড়া কিছু করা যাবে বলেও মনে হয় না। মনে মনে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইলাম। যেভাবে হোক মাথা ঠান্ডা রেখে কাজ করতে হবে আমায়।
নীরা কে নিয়ে কটেজের বারান্দায় এলাম। মাথায় কিছুই ধরছে না। কি করবো বুঝে উঠতে পারছি না।
কয়েকজন ডাক্তার বন্ধুকে ফোন দিলাম। এতোরাতে কাউকেই ফোনে না পেয়ে টেনশন আরও বেড়ে গেল।
অনুভব করলাম, শীতের এই রাতেও বেশ ঘামছি আমি!

-স্যার! স্যার কি ঘুমাচ্ছেন??
চোখ মেলতেই দেখি, মুখের উপর রাজ্যের বিস্ময় নিয়ে বয়স্ক সুপারভাইজার আমার দিকেই তাকিয়ে...
-ঘুমিয়ে পড়েছিলেন বুঝি?? অনেকক্ষণ ধরেই ডাকছিলাম, আপনাকে। আপনাদের টিকেটগুলো দিন!
এতোক্ষণে টিকেট চেক!
তার মানে বাস এখনো দাউদকান্দিই পার হয়নি!!!
বাইরে তাকাতেই ঘুটঘুটে অন্ধকারে কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। হয়তো, কাঁচপুর আর মেঘনার কাছাকাছি কোথাও হবে....তার মানে এতোক্ষণ স্বপ্ন দেখছিলাম আমি!
সামনে চোখ রাখতেই বাসের নিয়ন আলোয় দেখতে পেলাম, নাফিজা-রা তখন মুঠোফোন নিয়ে প্রায় ব্যস্ত সবাই!
কেউ চ্যাট করছে, কেউ বা কথা বলছে মুঠোফোনে।
সব কিছু ঠিক আছে দেখে স্বস্তির নিশ্বাস ফেললাম। সুপারভাইজার চলে যেতে, কালকের প্লানগুলো নিয়ে ভাবতে ভাবতে আবার সীটে গা এলিয়ে দিলাম।
বুঝতে পারছি, ধীরে ধীরে আবার ঘুমের রাজ্যে হারিয়ে যাচ্ছি.....

#ছোট_গল্পঃ
#নারী_ট্রভেলার।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.