নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

এই নশ্বর পৃথিবীতে একটি ফিনিক্স পাখি!

জীর্ণ বাস্তবতা

আমার মনে হয় মানুষ হিসেবে আমি খুব সাধারণ। সাধারণ একটি মেয়ের যে সকল গুণাবলী থাকে আমি মনে করি আমার সেগুলো আছে। অতিরিক্ত চাকচিক্য আমার পছন্দ নয়।এককালে নিয়ম ভেঙে কোন কিছু করার অদম্য ইচ্ছে ছিলো। সময়ের সাথে সাথে তা মাটি চাপা দিয়েছি।অদ্ভুত সব কিছুই আমাকে টানে।

জীর্ণ বাস্তবতা › বিস্তারিত পোস্টঃ

স্মৃতিতে সমাপ্তি (নিষ্প্রভ এক গোধূলি বেলার তৃতীয় পর্ব)

৩১ শে অক্টোবর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:০৯

স্মৃতি যে ভীষণ খারাপ জিনিস তন্দ্রা তা জানে ………।ডায়েরীর পাতা উল্টাতে গিয়ে এতো কিছু দেখে ফেলবে সে ভাবেনি………

অল্প কিছু পাতা কতো ভারী জিনিস গুলোকে ধরে রেখেছে!তন্দ্রা অবাক হয়,আজ সে অনিরুদ্ধকে প্রথম বারের মতো দেখার চেষ্টা করেছিলো,পারেনি মনে হয়েছে চোখে ভীষণ ভারী একটা পর্দা পড়ে আছে তার………ফিরেও একবার দেখার চেষ্টা করেনি ছেলেটা তাকিয়ে ছিলো নাকি!



ধীরে ধীরে হলদে পাতায় লিখতে শুরু করে,আরো ভারী করে নির্লিপ্ত পাতাকে……



“অনিরুদ্ধ সবে মাত্র একুশ।কাকতালীয় হলেও ওনার নামটা শুনলেই আমার মনে পড়ে যায় আরতী মুখার্জীর “তখন তোমার একুশ বছর বোধ হয়,আমি তখন অষ্টাদশের ছোঁয়ার” গানটা।ইশ! একদমই মিলে যায়।আমি লোকটাকে বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করেছি।লোকটা সরল সোজ়া,সোজা কথায় ভালো মানুষ।বই পড়ুয়া মানুষ।অ্যাডভেঞ্চারাস মানুষ।ঘুরে বেড়াতে পছন্দ করে,আর ভালোবাসে বিতর্ক।প্রথম কথাতেই আমার মনে হয়েছে লোকটা অহংকারী।অহংকারে মাটিতে পা পড়েনা!......পরে বুঝলাম লোকটা হতাশ।কোথাও গড়মিল আছে।যোগ বিয়োগের ভুল,হিসেবের ভুল।বুদ্ধিমান এবং বেশ ধার আছে ব্রেইনে।কথায় বাকপটু।

বিভ্রান্ত করাতে অসাধারন নৈপুণ্য,

ভালো অভিনেতা,

সব কিছুর ভেতর তবু কী যেন নেই,

হ্যা নেই।

জানতে পারলাম তীক্ষ্ণ এবং চৌকস লোকটির নির্লিপ্ততার কাহিনী”।



ছোট বেলা থেকেই পড়ালেখায় বেশ তুখর অনিরুদ্ধ।বই ছাড়া কিছুই বোঝেনা ।দাদীর বিশাল সংগ্রহ সাথে নিজের সঞ্চয়,যেখানের বই দিয়েই বেশ বড় একটা লাইব্রেরী করা যাবে!বড় হবার সাথে সাথে সাফল্যের ঘরে আরো পালক যুক্ত হয়,

পঞ্চম শ্রেণির বৃত্তি,

অষ্টম শ্রেণির বৃত্তি,

এরপরে আরো অনেক সম্মাননা,

অনিরুদ্ধ এগিয়ে যায়।

হঠাৎ এক দমকা হাওয়া তাকে থামিয়ে দেয়।ভর্তি যুদ্ধের ব্যস্ত সময়ে কী একটা জিনিস যেন তার হাত পা মস্তিষ্ককে জমিয়ে ফেলে।পড়ালেখা স্বর্গে ভ্রমণ করে.........

সেখানে জায়গা করে নেয় “ভালোবাসা”

প্রথম ভালোবাসা

প্রথম শিহরণ

প্রথম আবেগ

প্রথম সব কিছুই অবশ্য চমকপ্রদ !

‘অদ্বিতী’ ,এই মেয়েটা

-ক... কথা বলতে পারি?

-হ্যাঁ বলো

-না কিছুনা



বলতে গিয়েও বলা হয়না।অনিরুদ্ধ স্বপ্নবোনে।আশার স্বপ্ন।কাওকে ভালোবাসার স্বপ্ন।কাওকে আলিঙ্গন করার স্বপ্ন।কাওকে নিজের বলার স্পৃহা।

-এই শোন তুই এমন ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে থাকবিনা

-আচ্ছা

-কী আচ্ছা? গাধা একটা!

-হ্যাঁ আমি তাই

-মানুষ হ

-ভালোবাসি

-কী ?

-হুম,আমি তোমাকে ভালোবাসি

-যাহ পাগলামি করিস না।পড় কদিন বাদে পরীক্ষা।



বেশ কিছুদিন পরের ঘটানা.........

-শোনো

-উ? হুম বলো

-তোর কাছে টাকা হবে?

-হবে......কিন্তু কেনো?

-একটু দরকার! মেডিকেলের কোচিং এ ভর্তি হতে চাই একসাথে দুটোই করবো ভালো হবেনা বলো ?

-আচ্ছা



বেশ কষ্ট করে টাকাটা অনিরুদ্ধ জুটিয়ে ফেলে বাবার কাছ থেকেই।এসব অনিরুদ্ধের মাথায় আসেনা।তার মাথায় কেবল অদ্বিতী আসে।পড়ার যে বই একমাত্র বন্ধু ছিলো তার সে শত্রু হয়ে যায়,আগে যেখানে বিছানায় গা এলিয়ে দিলে ঘুমাতো তখন সেখানে জায়গা হয় স্বপ্নের জাগ্রত স্বপ্ন,মোহের স্বপ্ন।



-শোনো

-হ্যাঁ?

-সত্যি ভালোবাসো?

-হুম

-বিয়ে করতে পারবে?

-হুম

-যোগ্যতা আছে?

-একটা সমস্যা আছে।

-কী?

-আমার কী যেন একটা সমস্যা আছে।

-কী সমস্যা?

-শারীরিক।

-এমা!

-দেখো ধরে!

অদ্বিতীর হাতটা মাথায় নিয়ে রাখে অনিরুদ্ধ।অদ্বিতী আঁতকে ওঠে।

-টিউমার!

-মনে হয়!

-অসম্ভব ! ইউ গো টু হেল!

-সম্ভব না? আমি কী মরে যাবো?

-ভালো থাকবে।খবরদার আমাকে জ্বালাবেনা।

বহুদিনের গাঁথা স্বপ্নের সুতোয় টান পড়ে,গিট বাধে,জট পাকায়,খোলা যায়না,শেষমেশ অনিরুদ্ধ স্বপ্নের সুতোই ছিড়ে ফেলে।জট পাকানো স্বপ্ন দেখার থেকে শূন্য মাথা অনেক পরিচ্ছন্ন।

ভর্তি পরীক্ষার রেজাল্ট বের হয়।কোথাও সুযোগ পায়না অনিরুদ্ধ।সে পরাজিত।

জীবন যুদ্ধে,

প্রেমের উপন্যাসে,

সে পরাজিত।

ফোনের ড্রিম ড্রিম শ্বব্দ হয়।তন্দ্রা লেখা বন্ধ করে।

-হ্যালো?

-জ্বী বলেন?

-কী করছিলে?

-না তেমন কিছু না।আপনার মন খারাপ?

-হ্যাঁ

-কেনো?

-মায়ের কথা মনে পড়ছে,একা থাকি।কেউ নেই জীবনে।খেলেও কেউ জিজ্ঞাসা করেনা না খেলেও না।

-আপনি একটা ঘোড়ার ডীম।খেয়ে আসেন,বকবক পরে শুনবো।

-আচ্ছা

-আর শুনুন,অদ্বিতী এখন কোথায়?

-ইউএসএ

-কথা হয়?

-না

-যান খেয়ে আসেন

-আচ্ছা...শোনো............

-জ্বী?

-ভালোবাসি

-ধন্যবাদ

-একটা কথা বলি?

-হুম?

-না থাক।

-আচ্ছা!

মুখের উপর ফোন কেটে যায়।ধরা গলায় অনিরুদ্ধ টেক্সট লিখতে থাকে.........



“তন্দ্রা আমি খুব অসহায় একটা মানুষ।ভর্তিযুদ্ধে ব্যর্থ হয়ে আমি পুরোই ডুবে গিয়েছিলাম।জীবনের যাবতীয় অঙ্গনে আমি ব্যররথ।ঢাকায় এসেছি তারপরে।বাড়ি থেকে একটাকাও দেয়নি,আমি নেই ও নি!নিজের টাকায় চলেছি।সে টাকা উড়ে আসেনি।পত্রিকায় কলাম লিখেছি।তার থেকে দু পয়সা পেয়েছি।দু চার জায়গায় ডিবেট আর ট্রেনিং করিয়ে যা পেয়েছি তার থেকে খেয়ে না খেয়ে চলেছে।তিন বছর যাবৎ নিজের ওষ্ঠ্যের সাথে কপালটাকেও ঠকাচ্ছি !পোড়াচ্ছি.........তন্দ্রা! আমি অযোগ্য।সব কিছুর।এমন কী তোমার ও! তোমাকে ভালোবাসাটাই একমাত্র পুণ্য আমার আর কিছু চাইনা ।আমি বেশীদিন বাঁচবো নামার একটা বিশেষ জিনিস তোমায় দেখাবো ,তুমি দেখবে।শোনার থেকে বোধ হয় বাস্তবে দেখে উপলব্ধি করা অনেক বড়।তুমি শুধু বন্ধু হয়ে থেকো,তাও থেকো।

ভালোবাসি” !



প্রায় সাথে সাথে তন্দ্রা ফোন দেয়।

-আপনার সমস্যা কী?

-কিছুনা

-সিগারেট তো বন্ধ করিয়েছি এবার অনিয়ম ও বন্ধ করাবো

-আচ্ছা

-আর আপনি বাঁচবেন না কেন?হয়েছে কী?

-কিছু না

-তাড়াতাড়ি বলেন,নয়তো......

-টিউমার

-কোথায় মাথায়?

-হ্যাঁ!

-ডাক্তার দেখাবেন ,সময় ১৫ দিন

-আচ্ছা

-আর কিছু?

-না

-বিদায়

-তন্দ্রা তুমি এতো ভালো কেনো?

-আপনার ভ্রান্ত ধারণা।



ফোন কেটে যায়।অনিরুদ্ধ ভাত নিয়ে বসে।বাসি ভাত।সকালে রান্নাকে বাসি ই বলা যায়।কাজের বুয়ার রান্না যে জঘন্য হয় এটা নিশ্চয় ই নতুন কিছুনা ।তবু আজ তার জঘন্য রান্নাও অমৃত লাগে।এক গাদা হলুদ দেয়া ডালের ভেতরে সে স্বপ্নালু চোখে তাকায়,একটা মুখ দেখতে পায়,গোগ্রাসে গিলে খায়,হালকা অশ্রুও মিলে যায় ভাতে,বাসি ইলিশে সে ভালোবাসার গন্ধ পায়,তার মনে হতে থাকে এই পৃথিবীর সব থেকে সুখী মানুষটা সে।

যে ভালোবাসে নিজেকে,

প্রকৃতিকে,জীবন কে,

আর আর......

তন্দ্রাকে।



২৫/০৯/১৪

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ৩১ শে অক্টোবর, ২০১৪ রাত ১০:২৯

মামুন রশিদ বলেছেন: বাহ, বেশ লাগলো জিতে যাওয়ার গল্প!

২০ শে নভেম্বর, ২০১৪ রাত ৩:০১

জীর্ণ বাস্তবতা বলেছেন: ধন্যবাদ :)

২| ৩১ শে অক্টোবর, ২০১৪ রাত ১১:৩৭

রাব্বি রহমান বলেছেন: জিতে যাওয়ার গল্প!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.