নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

এই নশ্বর পৃথিবীতে একটি ফিনিক্স পাখি!

জীর্ণ বাস্তবতা

আমার মনে হয় মানুষ হিসেবে আমি খুব সাধারণ। সাধারণ একটি মেয়ের যে সকল গুণাবলী থাকে আমি মনে করি আমার সেগুলো আছে। অতিরিক্ত চাকচিক্য আমার পছন্দ নয়।এককালে নিয়ম ভেঙে কোন কিছু করার অদম্য ইচ্ছে ছিলো। সময়ের সাথে সাথে তা মাটি চাপা দিয়েছি।অদ্ভুত সব কিছুই আমাকে টানে।

জীর্ণ বাস্তবতা › বিস্তারিত পোস্টঃ

তাহাদের জীবনালেখ্যর আনুরক্তি (দ্বিতীয় পর্ব)

২৪ শে নভেম্বর, ২০১৪ দুপুর ২:২০

১।

............

রাত্রি তখন বেশ গভীর। পূর্বের দিকে ফকফকা চাঁদেও যেনও আজ একরাশ গম্ভীরতা ভর করেছে,চারিদিকে ঝি ঝি পোকার ঘুম পাড়ানি শব্দ,অদূরে কোথাও নির্ঘুম প্যাঁচার ভয় ধরানো ডাক,শীতের উত্তরীয় বাতাস সকলের চোখে ঘুম পাড়িয়ে নিশ্চিন্তে নেঁচে কুদে ঘুরছে,শুধু একজোড়া প্রাণ মাঝরাতেও ভেবে চলছে,কল্পনার ডানার পালক গুজছে,স্বপ্নের পালক, নিরঙ্কুশ পালক। হঠাৎ কড়া নাড়ার শব্দ ওঠে দরজায়।



-পাগলী, এই , ঘুমোলি?

দক্ষিণের জানালা খুলে মুখ খানা ঝামটিয়ে কটমট দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মাধবী......

-অতুল তুই!

-ঘুম আসছেনা , চল না নদী তীরে যাই

-পাগল হলি নাকি?

-তুই আসলে আয়



নিতান্ত শখের বশে হলদে রঙা শাড়ি পড়ে বশে ছিলো মাধবী। বেশ লজ্জা পাচ্ছে সে যাবে কী যাবেনা ভাবতে ভাবতে পেছনের দরজা দিয়ে পা টিপে টিপে বেড়িয়ে আসে।এদিকে হালকা অন্ধকার।পেছনের ঝোপঝাড় পেড়োনো রাস্তায় ঠিক মাথায় তাদের নয়নাভিরাম নদী।আধারে অতুল একবার তার মুখে চেয়েও দেখেনি,অতুল সামনে যাচ্ছে ,মাধবী ঠিক পেছনে,মাঝে মাঝে মাধবীর দিকে তাকচ্ছে তবু অন্ধকারে কেও কারো ছায়াবৃত দেহ ছাড়া কিছু বুঝতে পারছে্না।



হঠাৎ একটা গাছের নিচে আসে , লেবু গাছ , ভীষণ কাটা । মাধবী অভ্যাসবশত সেই গগনের দিকে তাকিয়ে হাটছে,সামনে পেছনে দেখার ব্যস্ততা নেই।অতুল দ্রুত পায়ে হাত ধরে হ্যাঁচকা টান দিলো ,তবদা খেয়ে মাধবী প্রায় হা করে তাকিয়ে আছে, খেয়াল হলো একটুর জন্য হাতটা গাছে বিধেনি ,অনেকটা আচ্ছন্ন্যতার ভেতর থাকতে থাকতেই মাধবী বলে ওঠে,



-বলিহারি চোখ তোমার

-চুপ একটাও কথা বলবিনা ,এভাবে কেউ হাঁটে?

-বাহরে! কে কীভাবে হাঁটে তাতে আমার কী?

-মাঝ রাত্রিতে তোর পাগলামী না বাধালে শখ মেটেনা তাইনা?

-হাহাহা

-পেত্নীর মতো হাসবি না



গাছের ফাঁকের থেকে চন্দ্রালু তরল আলো যেন একরাশ মধু ছুড়ে মেরেছে অতুলের গায়ে।হালকা আলোতে এই প্রথম মাধবীকে দেখে প্রায় দিকবিদিক জ্ঞান শূন্য হয়ে পড়লো। মাধবী শাড়ি পড়েছে!......খোপায় বেলী! এই অভিপ্রায় একবারও তার মস্তিষ্কে কড়া নাড়লো না! সে প্রায় ভুলেই গেলো তারা যে নদী দর্শনের অভিলাষে এখানে এসেছে । অগত্যা মাধবী ই ঘোর ভাঙালো ......



-কচ্ছপ ব্যাথা পাচ্ছি,চুলে টান লাগছে !

-আ ...হা আচ্ছা যা যা দ্রুত হাঁটবি

-হাহাহাহা



এবার কোনো প্রতি উত্তর দিতে পারেনা অতুল। মাধবী এবার আগে হাঁটতে থাকে , তন্দ্রাচ্ছন্ন্যের মতো সামনে হেঁটে যাওয়া অপ্সরাকে প্রদক্ষিণ করে , অনুকৃত করতে করতে নদীর ধারে চলে আসে, নদীর ধারে অতুলের বাবা বিশাল একটা ঘাটের ব্যবস্থা করেছেন, শান বাধানো ঘাট কেবল পুকুরে হয়না এমন একটা নামডাক কুড়োতেই যেন এই ব্যবস্থা! মাধবী তার টিংটিঙে হ্যাংলা শরীর নিয়ে শিড়ির একেবারে শেষ মাথায় নেমে যায়, অতুল বাধা দেয়না , পানিতে পা ঝুলিয়ে বসবে , ওকে কেউ আটকাতে পারে এমন সাধ্য হয়নি এখনো।



-বুড়ি আর নামিস না , পানিতে শয়তান আছে কিন্তু, টান দিয়ে নিয়ে যাবে।

-দিক না তোর কী তাতে?

-সব সময় তর্ক বাধানো প্রশ্ন করিস কেনো?

-তুই বাধা দেয়ার ই বা কে?

-বাধা দিতে কেউ হতে হয় বুঝি?

-বোসো বলছি......

-তোর মতো ঢঙ্গ করে বসতে হবে?

-কথা বাড়িও না

-আচ্ছা



২।

.........

-এমন মাঝারাতে ডেকে আনলি যে?

-তোকে দেখতে ইচ্ছে হলো

-এই ...মরেছে!

-কী মরেছে?

-ভূতে

-কার ভূত?

-তোর পাগলামির ভুত, রাত বিরাতেও নৃত্য করে!

-তুই বা কম কীসে?

-আচ্ছা একটা কথা বল তো

-হু?

-এই ক মাসে তোকে কোনো ভূতে ধরেছিলো?

-নাতো ! কেনো?

-এতো চিঠি পাঠালে যে?

- তা সাড়া না পেলে প্রেরক আর পাঠাতো না

-তাতে প্রাপকের বয়েই গেলো

-তোর তো সব কিছুতে বয়েই যায়। আমরা ভব ঘুরে মানুষ , পরিবার ছেড়ে দূরে গিয়ে জ্ঞান চর্চা করি,আমাদের খবর লোকে রাখবেই বা কেনো!

-অতুল!

-হু বল

-চাঁদটা অনেক সুন্দর আজ!

-মাত্র দেখলে?

-হু

-আমি কিন্তু আগে দেখেছি,আজ অবশ্য মর্ত্যে দুটো চাঁদ!

-একটা আকাশে আরেকটা?

-আমার পাশে!



হুহু করা বাতাসে মাধবীর চুল উড়তে থাকে।সে লজ্জা পেয়েছে তবু তা মুখে আনছে না.........।চুপচাপ বশে আকাশের দিকে মুখ করে আছে হয়তো কল্পনাও করেনি অতুল ওর চুলের মাঝে মুখ গুজবে,ঠিক কী সম্পর্কে! কী উদ্দেশ্যে!



-বেলী ফুল কোথায় পেলিরে বুড়ি?

-তোমাদের বাড়ির পেছনে

-আমার গাছই তবে?

-হুম

-তা আজ এমন সেজে আমায় পাগল না করলেও পারতিস!

-এই দোষ তবে আমার?

-নাহ বিধাতার

-তোমার বিধাতাকে বলো যেন একটা চাঁদ তুলে নেয়

-সে কী কথা!

-বাড়ি থেকে বিদায় করার জন্য সবাই বেশ ব্যতিব্যস্ত

-এগুলো আর এমন কী

-তুমি থাকো ঐ স্বর্গে ,নরকের আগুন ওখানে পৌছে?



মাধবী উঠে যাচ্ছিলো,একটা বল্ পূর্বক টানে তার ডান হাত বরাবর লাগে,ওঠার চেষ্টা বাহুল্য, ঐ শক্তির কাছে সে নতজানু।



-সব রাগ আমার উপর?

-তোর বিধাতার উপর

-কী করেছে সে?

-জন্মই আমার আজন্ম পাপ, সে তো নির্দোষ!

-পাগলী



এরপরের দৃশ্য অবশ্য মাধবী স্বপ্নেও ভাবেনি।অতুল তার চুল গুলো সরিয়ে তাকে কাছে টেনে কপালে আলতো চুমু একে দিলো।দু হাতে মাধবীর ডান হাতটা শক্ত করে ধরে নিজের বুকের বা পাশটায় ছুঁয়ে রাখলো,দু হাতে তার আরেকটা হাত জড়াবার কতো আয়োজন!, অবাক চোখে দেখছিলো সব মাধবী......



-তুই আমার হৈম , কেবল আমার

-বস্তা পঁচা,বাসি জিনিস

-তবুও আমার,তুই বলার কে?

-কেউ না

-হাত ছাড়

-তুই আমার মাধবীলতা,আমার সেই লতা যার বাহির টা শক্ত,ভেতর টা নরম,তুই হৈমন্তী,তুই আমার একটা অলেখা কবিতা, একটা না পড়া উপন্যাস,তোকে আমি আমার ভেতরে নিয়ে বেঁচে থাকবো,সেই অনুমতিটুকু দে?



ছলছলে অতুলের চোখ দেখে মাধবী খুব আশ্চর্য বোধ করছে,এতো নরম এতো আবেগী অতুলকে সে দেখেনি,কে জানে এই হয়তো আসল অতুল,দ্বৈত সত্তা কার নেই? শুধু আসলটা খুঁজে নিতে জানতে হয়।

-তুই কী তবে বোকা অপু কিংবা অনিমেষ হয়েই কাটিয়ে দিবি?

-তুই বললে তাই দেবো

-তা আপাতত নেশা ছাড়ো ! কী বিচ্ছিরি জিনিস পুড়িয়ে খাও! ঠোট পুড়িয়ে কী লাভ?

-কেউ বাড়ণ করেনা যে!

-আমি করে দিলাম



দূর থেকে ধীরলয়ে আজানের শব্দ ভেসে আসে......

মাধবী মুখ ঘুরিয়ে একবার অতুলকে দেখে...



-কী হলো?

-মাথায় কাপড় টা একটু দিবি ? দেখবো

-এসবে আমি বিশ্বাস করিনা,শখ ও দেখাই না

-তবু একটু দে আমি দেখবো

-জোর কোরো না



মাধবী হঠাৎ উঠে যায়,কোমড় অবধি চুল গুলো নেশা গ্রস্তের মতো অতুলকে ও টেনে উঠিয়ে আনে।কী এক প্রবঞ্চনা পা সচল করে দেয় ,উঠে দ্রুত পারে হাটতে শুরু করে।

কাছাকাছি হতেই মাধবীর হাত ধরে ফেলে,হাতে হালকা চাপ দেয়,

এটাও যেন এক নিঃস্তব্দ রাতে একে অন্যের ভালোবাসা জানান দেয়ার রীতি।



এই মাত্র যে শিহরণ ধারা অতুলের কাঁধ বেয়ে মহাশূন্যে হারিয়ে গেলো......, সে ভেবেছে এমন এক অনুভূতির জন্য সে হাজার বার মরতেও রাজি.........



সকাল হচ্ছে......

নতুন একটা সকাল,

কোথাও এই গ্রহের দুটো মানুষ চন্দ্র স্নানে একনিষ্ঠ ।



২৪/১০/১৪

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে নভেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৫:৪৯

এম হাবিব আহসান বলেছেন: চমৎকার

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.