নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নাস্তিক ও রাজাকার মুক্ত ব্লগ

আমি তুমি আমরা

লেখার সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।আমার অনুমতি ছাড়া এই ব্লগের লেখা কোথাও প্রকাশ করা যাবে না।

আমি তুমি আমরা › বিস্তারিত পোস্টঃ

ছোটগল্পঃ ধোঁয়াটে শহরে একদল ঘোলাটে মানুষ

১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ সকাল ৯:৪৩

বাস থেকে নামলাম মাত্র।
আমি খুব ছোট একটা চাকরী করি। স্বাভাবিকভাবেই যে বেতন পাই তাতে শহরের প্রাণকেন্দ্রে কোন বাসা নিয়ে থাকা আমার পক্ষে সম্ভব না। তাই বাধ্য হয়েই শহরের একেবারে শেষ প্রান্তের এলাকায় একটা বাসা ভাড়া নিয়েছি। এলাকাটা ঘিঞ্জি আর নোংরা। আরেকটু নোংরা হলে বস্তি বলা ছাড়া উপায় থাকত না।
আমাদের অফিস ট্রান্সপোর্ট দেয় না। আবার নিজের গাড়ি মেইনটেইন করার সামর্থ্যও নেই। তাই প্রতিদিন অফিসে যাওয়া আসার উপায় একটাই-লোকাল বাস।
লোকাল বাসে প্রতিদিন এই বিশাল পথ পাড়ি দিতে গিয়ে ঘেমে নেয়ে একেবারে একাকার হয়ে যাই। তবুও উপায় নেই, প্রতিদিন সকালে উঠেই সেই পুরনো সংগ্রাম।

তো, যা বলছিলাম। মাত্র বাস থেকে নামলাম।
আমার বাসাটা মেইনরোড থেকে একটু দূরে।ডানে একটা সরু রাস্তা ধরে এগুতে হয়, তারপর আসে আমাদের গলি। সেই গলির শেষ মাথায় আমি থাকি।
ঘামে ভেজা শরীর আর কাপড় নিয়ে আমি খুব অস্বস্তিতে থাকি। তাই বাস থেকে নেমে কোনদিকে না তাকিয়ে সোজা বাসার দিকে হাটা দেই। গোসল না করলে শান্তি পাওয়া যায় না।

আজকেও সেরকমই ইচ্ছা ছিল। কিন্তু ঘরে বউ অসুস্থ। তাই বাস থেকে নেমে দাঁড়াতে হল ফার্মেসীর সামনে।
প্রেসক্রিপশন দেখে কম্পাউন্ডার ভেতরে চলে গেল। এই ওষুধ নাকি ওরা সেলফে রাখে না, ফ্রীজে রাখে। আর ফ্রীজটা ভেতরে থাকে।
কাজ না থাকলে আশেপাশে তাকানোটা আমার অভ্যাস না, নিজের মোবাইলে ডুবে থাকি। ইদানীং মোবাইলটারও চার্জ থাকছে না, অফিস থেকে বাসায় ফিরতে ফিরতেই শেষ হয়ে যায়।
আজকেও একই ঘটনা। তাই বাধ্য হয়েই তাকালাম রাস্তার দিকে। আর তখনই চোখে পড়ল দৃশ্যটা।
চার পাঁচটা ছেলে মিলে সমানে পেটাচ্ছে আরেকটা ছেলেকে। মার দেয়া ছেলেগুলোর বয়স বেশি হবে না, সতের আঠার। আর যে ছেলেটাকে পেটাচ্ছে তার বয়স একটু বেশি হবে। একুশ বাইশ।অন্যদের চাইতে একটু লম্বা।
চেহারা আর পোশাক দেখে বোঝা যাচ্ছে প্রতিটা ছেলেই নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে এসেছে।
দুটো ছেলে কোনরকমে লম্বুর দুই হাত ধরে রেখেছে, আর একজন ধরে রেখেছে পেছন থেকে। শেষের ছেলেটা, সে-ই সম্ভবত গ্রুপের লিডার, সমানে ঘুষি চালিয়ে যাচ্ছে লম্বুর পেটে।
ইতিমধ্যেই ছেলেগুলোকে ঘিরে উৎসুক জনতার ভীড় তৈরি হয়ে গেছে, অনেকের পকেট থেকে ক্যামেরা বের হয়ে এসেছে, স্টীল ইমেজ আর ভিডিও রোল করা শুরু করেছে।ভীড়ের মধ্যে কে যেন চিৎকার করে উঠল, মার, আরো জোরে।
অদ্ভুত, কোন পক্ষকেই হয়ত ভীড়ের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকা লোকগুলো চেনে না, অথচ ঠিকই পেটানোর জন্য উৎসাহিত করছে। কি লাইফলেস একটা জাতি।
গিয়ে থামাব নাকি?
-ভাই আপনার ওষুধ।
ভাবছিলাম ছেলেগুলোকে কিছু বলব, কম্পাউন্ডারের কন্ঠে সৎবিৎ ফিরল।
-বাসায় গিয়েই ফ্রীজে ঢুকায় রাখবেন। বাইরে নরমালে একদম রাখবেন না।
-ঠিক আছে।আস্তে করে জবাব দিয়ে পকেট থেকে টাকা বের করলাম। নেন।
কম্পাউন্ডার দাম রেখে বাকি টাকাটা ফেরত দেয়। আমি সেটা পকেটে ঢোকাতে ঢোকাতে আরেকবার ভীড়ের দিকে তাকাই। ছেলেটা মাটিতে লুটিয়ে পড়েছে, চারজন মিলে এখন সমানে লাথি মারছে। তাদের ঘিরে এখনও উৎসুক জনতা দাঁড়িয়ে আছে, সমানে চলছে তাদের ক্যামেরা।
যাব?
নাহ থাক। ছেলে চারটার মধ্যে একজনকে চিনতে পেরেছি, আমাদের গলিতেই থাকে। এসব ছেলের সাথে ঝামেলা করতে যাওয়ার কোন মানে হয় না।
-ধর, ধর।
বাসার দিকে পা বাড়াব, তখনই হঠাৎ সমস্বরে উত্তেজিত জনতার চিৎকার শুনতে পাই।লম্বুটা দৌড়াতে শুরু করেছে, আর তার পিছু নিয়েছে একদল উন্মত্ত মানুষ।
-কি হল আবার? কম্পাউন্ডারের কাছে জানতে চাই।
-দেখেন নাই?
আমি না-সূচক মাথা নাড়ি।
-লম্বুটা ক্যামনে জানি উইঠা দাঁড়াইছিল, চাইরজনের মধ্যে একজনরে ছুরির পোচ দিয়া ভাগছে।
বলে কি?
আমি আবার রাস্তার দিকে ফিরি। লম্বুটা বহুদূর চলে গেছে, কিছু অতিউৎসাহী লোক এখনো তাকে ধাওয়া করছে।
আর আমার একটু সামনে শুয়ে আছে একটা ছুরিকাহত ছেলে, দুহাত দিয়ে নিজের পেট চেপে ধরেছে। তাতে কোন লাভ হচ্ছে বলে মনে হয় না, পীচঢালা রাস্তা এরই মধ্যে লাল হতে শুরু করেছে।
আমি ভালমত চেহারার দিকে তাকাই। হ্যা, আমাদের গলির ছেলেটাই ছুরিকাহত হয়েছে।
আশেপাশে দুয়েকটা লোক এখনও দেখা যাচ্ছে। এম্বুলেন্স ম্যানেজ করার চেষ্টা করছে হয়ত।
ছেলেটাকে সাহায্য করা দরকার। যাব?
নাহ, থাক। ওকে সাহায্য করার জন্য অনেকেই আছে। আমার বাসায় যাওয়া দরকার। অসুস্থ বউটা অপেক্ষা করছে।
অন্তত ৯৯৯-এ একটা কল করব নাকি?
সেটাই-বা কিভাবে করব? আমার মোবাইলেতো চার্জ-ই নেই।

-আমি তুমি আমরা
১১.০৯.২০২১

মন্তব্য ১৬ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (১৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ দুপুর ১২:৩১

আমারে স্যার ডাকবা বলেছেন: একা হলে টিনেজ পোলাপানের মারামারি থামাতে যাওয়া ঠিক না। এই বয়সের যেসব পোলাপান মারামারি করে বেড়ায় এরা কেউ সুস্থ মস্তিস্কের মানুষ না। সবাই উগ্র স্বভাবের হয়। #:-S

ঢাকার এই যাতায়াত সমস্যা সমাধান করলেই সাথে আরো দশটা সমস্যা নিজে নিজেই সমাধান হয়ে যেতো... :|

লেখা ভালো হয়েছে, বাস্তব বলেই মনে হয়। শিরোনামে ছোটগল্প না লিখলে মনে করতাম আপনার নিজের কাহিনী।

১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ দুপুর ১২:৪০

আমি তুমি আমরা বলেছেন: ঠিকই বলেছেন। একা হলে টিনেজ ছেলেপেলের মারামারি থামাতে যাওয়ার রিস্ক নেওয়া একদ্ম উচিত নয়, ছেলেগুলা অপমান করে বসতে পারে, ভাগ্য খারাপ হলে মারধোরও জুটতে পারে। এই বয়সের ছেলেপেলের মধ্যে বড় হয়ে গেছি, মুই কি হনুরে টাইপ ব্যাপার স্যাপার থাকে-সমস্যা।

ঢাকা শহরের যাতায়াত আসলেই একটা বিশাল সমস্যা। মেট্রোরেলের কাজ শুরুর পর সেটা আরো ভয়াবহ পর্যায়ে গিয়ে ঠেকেছে। :(

লেখাটা আপনার ভাল লেগেছে জেনে আনন্দিত হলাম।

ভাল থাকুন। শুভকামনা রইল। :)

২| ১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ বিকাল ৩:০১

ভুয়া মফিজ বলেছেন: অনিয়ম দেখতে দেখতে দেশের সাধারন মানুষের এক রকম গা সওয়া অবস্থা হয়ে গিয়েছে। এরা কোন কিছুতেই আজকাল খুব একটা রিয়্যাক্ট করে না। অথচ অন্যায়কে সম্মিলিতভাবে প্রতিবাদ, প্রতিরোধ করলে সমাজ থেকে অনেক অনাচারই দুর করা সম্ভব।

বিষয়টা আপনার গল্পে চমৎকারভাবে এসেছে। খুব সাধারনভাবে, সাধারন ভাষায় অসাধারন করে একটা গল্প বললেন। শিরোনামটাও হয়েছে জু্ৎসই। খুবই ভালো লাগলো। :)

১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:০৫

আমি তুমি আমরা বলেছেন: আমিও ঠিক এই জিনিসটাই বোঝাতে চেয়েছি। অন্যায় এখন আমাদের এতটাই গা সওয়া হয়ে গেছে, আশেপাশে এগুলো ঘটতে দেখলে আমরা আর আলাদাভাবে কোনকিছু অনুভব করি না। এমনকি অনেকক্ষেত্রে আমরা ভেবে নেই, যা হয়েছে, ঠিকই হয়েছে, এমনই হওয়ার কথা।অথচ আমাদের করার কথা ছিল প্রতিবাদ, প্রতিরোধ।

মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। ভাল থাকুন।

৩| ১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:০৬

আহমেদ জী এস বলেছেন: আমি তুমি আমরা,




আমাদের ইচ্ছে অনিচ্ছেরা এভাবেই ঘোলাটে হয়ে যাচ্ছে দিনে দিনে। "পাছে লোকে কিছু বলে" র ভাবনায় "নন্দলাল" হয়ে উঠছি
যেন আমরা ক্রমে ক্রমে। "স্বদেশের তরে যে করেই হোক, রাখিবেই সে জীবন...." নন্দলালের মতো ভেতরে ভেতরে এমন পণ করলেও আসল যুদ্ধে প্রানখানা হারানোর ভয় বড় বেশী। তাই ঠ্যাঙ ভাঙার ভয়ে নন্দলাল সাজতে হয় আমাদের।

সুন্দর গল্প , মানুষের মনের ভেতরের গল্প।

১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:১২

আমি তুমি আমরা বলেছেন: চমৎকার মন্তবের জন্য ধন্যবাদ প্রিয় ব্লগার।আমাদের গালভরা নীতিবাক্য, অথচ নিজের কোন ক্ষতি বা হারানোর শংকা দেখা দিলেই আমরা সব সব নীতি বিসর্জন দিয়ে আপোষ করে বসে থাকি :(

৪| ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ বিকাল ৫:০০

ফয়সাল রকি বলেছেন: বেশ মিলে গেছে দেখছি। আমারো একটা অনুগল্প আছে যেটার নাম ও প্লট খুব কাছাকাছি। অনুগল্প: ধোঁয়াটে শহরে অসহায় মানুষ
সম্ভবতঃ কাছাকাছি চিন্তা ভাবনা থেকে লেখা হয়েছে গল্প দুটো।
তবে আপনারটা বেশি ভালো হয়েছে। +++

১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:২০

আমি তুমি আমরা বলেছেন: আমি মূলত গল্পটা লিখতে চেয়েছিলাম বিশ্বজিত হত্যাকান্ড থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে। দিনে দুপুরে ভরা রাস্তায় একটা মানুষকে কুপিয়ে মেরে ফেলল, অথচ সব দেখেও দাঁড়িয়ে থাকা বা ছবি তোলা কেউ কিছু করল না। এমনকি স্বাক্ষীর অভাবে আদালত শেষ পর্যন্ত আসামীদের খালাস দিয়ে দিল। বিচারহীনতা, প্রতিবাধীনতার কি অপসংস্কৃতি!

লিংক ধরে আপনার গল্পটা পড়ে এলাম। পড়তে গিয়েই মনে হচ্ছিল লেখাটা হয়ত আগেও পড়েছি, মন্তব্যের ঘরে নিজের উপস্থিতি দেখে নিশ্চিত হলাম। এখন মনে হচ্ছে, আপনার গল্পটা হয়ত অবচেতনে আমার মস্তিষ্কে রয়ে গিয়েছিল, হয়তবা গতকাল লিখতে গিয়ে সেটা থেকে আমি অনুপ্রাণিত হয়েছি।

লিংকের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ দিতে চাই।

ভাল থাকুন। শুভকামনা রইল।

৫| ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:৩৫

আখেনাটেন বলেছেন: জীবন জীবিকার যাঁতাকলে পড়ে আমরা ধীরে ধীরে শুষ্ক কাঠ হয়ে যাচ্ছি। সাথে যোগ হয়েছে বিচারহীনতার সংস্কৃতি, ফলে ঝামেলা থেকে সাধারণ মানুষ যতটা সম্ভব দূরে থাকার চেষ্টা করে।

১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ রাত ৯:৫০

আমি তুমি আমরা বলেছেন: বিচারহীনতার সংস্কৃতি একদিকে যেমন অপরাধীদের অপরাধপ্রবণতা বাড়াচ্ছে, তেমনি অন্যদিকে সাধারণ মানুষকে সবরকম ঝামেলা থেকে দূরে থাকতে উৎসাহিত করে।এ এক অদ্ভুত দুষ্টচক্র :(

৬| ১৬ ই অক্টোবর, ২০২১ দুপুর ১২:৩৪

মুহাম্মদ জহিরুল ইসলাম বলেছেন: হুমম... :|

২০ শে নভেম্বর, ২০২১ রাত ১০:৪৭

আমি তুমি আমরা বলেছেন: অনেকদিন পর আমার ব্লগে দেখলাম আপনাকে। অবশ্য আমি নিজে অনিয়মিত। কেমন আছেন?

৭| ২১ শে অক্টোবর, ২০২১ রাত ১১:৩৬

অচেনা রাজ্যের রাজা বলেছেন: :|

২০ শে নভেম্বর, ২০২১ রাত ১০:৪৮

আমি তুমি আমরা বলেছেন: :(

৮| ২০ শে নভেম্বর, ২০২১ রাত ১০:৫৬

রাহাত আরা স্বর্ণা বলেছেন: আমার প্রায় এরকম এক অভিজ্ঞতা হয়েছিল। স্মৃতিটা বেশ ভয়ংকর হিসেবেই মাথায় গেঁথে আছে। যাইহোক, আপনার লেখার জন্যে শুভকামনা!

২০ শে নভেম্বর, ২০২১ রাত ১১:০৪

আমি তুমি আমরা বলেছেন: দুঃসহ স্মৃতিগুলো জীবন থেকে মুছে যাক, জীবন ভরে উঠুক আনন্দময় স্মৃতি আর অভিজ্ঞতায়-এই কামনাই করি।

মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.