নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি মানুষটার পরিচয় নিয়ে বলার খুব বেশী কিছু নেই। পরিবারের জন্যে উৎসর্গীত বড়ো ছেলে। একজন প্রবাসী।
আসুন রাতের এই শুনশান নিরব পরিবেশে অর্ধেক পৃথিবী যখন ঘুম মগ্ন তখন কিছু টুকরো গল্প শোনাই আপনাদের।
গল্পটা অবশ্যই আমার।
উহু!আমার নয় আসলে!ঘনিষ্ঠ একসময়ের কিছু বন্ধুদের নিয়ে এই গল্প।টুকরো টুকরো কিছু বন্ধুত্বের প্রহেলিকা নিয়ে বলবো আজ আপনাদের।
সত্যিকার বন্ধুত্বটা অনেক ভাগ্য করে পেতে হয়।যার তার ভাগ্যে সেটা জুটেনা!
আর যার ভাগ্যে জুটেনা তার মতো দুর্ভাগা তো জগৎ সংসারেই নেই!
অনেকদিন পর গল্প বলতে এসেছি আপনাদের মাঝে!
আগে আমার পরিচয়টা বলে দিই আপনাদের!নইলে আবার কনফিউজড হয়ে যাবেন!
নিজেই মাঝে মাঝে কনফিউজড হয়ে যায় এসব গোলমেলে ব্যাপার নিয়ে ভাবতে ভাবতে!
আমার নাম.......থাক!
সত্যিকার নাম নাই বলি!
ধরুন আমার নাম তরু!
স্কুলজীবনে আমার দুইজন খুব ঘনিষ্ঠ এবং কাছের বন্ধু ছিলো।একজনের নাম ছিলো শ্যামা এবং আরেকজনের নাম ছিলো বেলা!আমরা এতোটাই ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলাম যে পরষ্পরের সাথে ঝগড়া হলেই খাওয়া বন্ধ করে দেওয়া থেকে শুরু করে হাত পর্যন্ত কাটতাম!
একসাথে স্কুলে যাওয়া আবার স্কুল থেকে আসা সব হতো।এমনকি পরীক্ষার হলে পর্যন্ত কেউ কাউকে ছাড়া যেতাম না!
আর পরীক্ষা শেষেও ফিরতাম একসাথে।কারো পরীক্ষা আগে শেষ হলেও বাকি দুইজনের জন্যে অপেক্ষা করতাম ঘন্টার পর ঘন্টা!
তখন মনে হতো এরাই আমার কলিজার টুকরো।
জীবনটা আনন্দেই কাটছিলো।
স্কুলজীবনের ফাইনাল পরীক্ষাটা দিয়ে আসার দুইদিনের মাথায় শ্যামা হঠাৎ যোগাযোগ বন্ধ করে দিলো।
অনেক চেষ্টা করলাম যোগাযোগ করার তার সাথে।কিন্তু সব চেষ্টা বেকার। হঠাৎ করেই যেনো শ্যামা জীবন থেকে নেই হয়ে গেলো।
আমি শ্যামার সাথে যোগাযোগ করার জন্যে চেষ্টার কোনো কমতি রাখিনি।
কিন্তু সব চেষ্টায় বিফল!
ধীরে ধীরে বেলাও দূরত্ব বাড়াতে লাগলো।
এর ফাকেই আমার সাথে একটা পিকনিকে দেখা হলো আমার স্কুলজীবনের দুই সহপাঠী নীরু আর পেরুর সাথে।
পিকনিকের আনন্দ আর উচ্ছ্বাসে মনে হয়নি আমার যে তাদের সাথে সেদিনই আমার ঘনিষ্ঠ পরিচয়।
সেই থেকে পথচলা শুরু আমাদের বন্ধুত্বের।
একসময় নীরু আর পেরু পাড়ি জমালো অন্য একটা দেশে।
দূরত্ব বেড়ে গেলো।কিন্তু যোগাযোগ অটুট ছিলো।শেয়ারিং আর কেয়ারিংও ছিলো।
সময় চলে যায় সময়ের নিয়মে।
একসময় জানলাম নীরু আক্রান্ত ভয়ানক একটা রোগে।যে রোগ শুষে নিচ্ছে ওর প্রাণশক্তি।
যখুনি ওর খবর শুনতাম নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারতাম না।নিজে হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করছি অথচ বন্ধুর কথা ভেবে কষ্ট পেতাম।দোয়া করতাম বন্ধুর জন্যে।যথাসাধ্য দান করতাম তার রোগমুক্তির জন্যে।
নিজের পরিবারের মানুষকে পর্যন্ত বলতাম আমার বন্ধুটির রোগমুক্তির জন্যে যেনো দোয়া করে সবসময়।
এমনও দিন গেছে আমার যে পায়ে পেরেক ঢুকে পা ফুলে দশগুণ অথচ তাও নামাজে দাড়িয়েছিলাম বন্ধুটির রোগমুক্তির জন্যে।
একদিন খবর পেলাম পেরুর বাবা মারা গেছে রোগে আক্রান্ত হয়ে।কষ্ট পেতাম বাবাহীন বন্ধুটার কথা ভেবে।
কিন্তু নিয়তির শিকলে বন্দি আমরা সবাই।
মাঝখানে কেটে গেলো ৮টি বছর।
ততোদিনে যোগাযোগহীনতায় শ্যামা আর বেলার অস্তিত্ব বিষ্মৃতপ্রায়।
আমার জীবনে তখন প্রেরণা হিসেবে ছিলো ৮ বছরের ঝিলমিলে বন্ধুত্ব।
প্ল্যানিং হচ্ছিলো পেরু আর নীরু দেশে ফিরলে কোথায় যাবো!কি করবো!!
কার বিয়েতে কে স্টেজ নাঁচাবে!
প্ল্যানিংয়ের অন্ত ছিলোনা।
আমার তো মনে মনে কতো প্ল্যানিং ছিলো যে কিভাবে পেরু আর নিরুকে দেশে ফিরলেই সারপ্রাইজ দেওয়া যায়!
তাদের নিয়ে আমার প্ল্যানিংয়ের অন্ত ছিলোনা।
এর ফাকেই হঠাৎ একদিন আবার শ্যামার উদয় হলো আমাদের জীবনে।
৮ বছর পর।
সে কেনো এভাবে হারিয়ে গেলো!কিভাবে হারিয়ে গেলো!কেনোই বা ৮ বছর স্মৃতির আড়ালে থেকে আবার উদয় হলে তার কোনো কিছু বুঝার আগেই আবিস্কার করলাম যে আমি একটা ইমোশনাল ফুল!!!
আবেগসর্বস্ব একটা গর্দভ বলতে পারেন!
৮ বছরের লম্বা সময় ধরে যারা ছিলো আমার কাছে বন্ধুত্বের হাজারো তামাশার মাঝে সত্যিকার ভরসা তারাই দেখলাম রাতারাতি আমাকে পর করে দিলো!
এমন একটা অবস্থা যে রাতারাতি আমি যেনো তাদের জীবনে একটা এলিয়েনে পরিণত হলাম।
তারা যেনো আমাকে চিনেই না!
স্কুলজীবনের একদা কথিত বেষ্টফ্রেন্ড শ্যামার কথা বলুন কিংবা ৮ বছরের দীর্ঘ বন্ধুত্বের নজির পেরু আর নীরুর কথায় বলুন;৩ জনই যেনো আমার অস্তিত্ব বিস্মৃত হলো।
কেউ যেনো আমাকে চিনেই না এমন একটা ভাব!
হাহ!
তাদের কথা কি আর বলবো!!নিজেরি নিজেকে অচেনা মনে হয় আজকাল!
এই হলো আমার বোগাস বন্ধুত্বের ইমোশনাল কাহিনী!
পরিশেষে কিছু কথা বলি!
যাদের আমি বেষ্টফ্রেন্ড ভাবি তারা আমাকে বেষ্টফ্রেন্ড না ভাবতেই পারে!
তাদের জীবনেও থাকতে পারে একের অধিক বেষ্টফ্রেন্ড!
তাতে কি?
তাকে পর করে দিবেন যে দীর্ঘসময় ধরে প্রতিক্ষায় আছে আপনাদের সাথে একবার ট্যুরে যাওয়ার জন্যে!অদেখা জায়গা দেখার জন্যে।
যে আপনাদের সাথে যেতে চাই পাহাড়ে!
দেখতে চায় অদেখা জীবনের আনন্দ!
যার ভ্রমণ পরিকল্পনার বিরাট অংশ জুড়ে থাকেন আপনারা!আপনাদের পরিকল্পনায় সে থাকুক বা না থাকুক!
তাকে হঠাৎ করে যেভাবে পর করে দিলেন তার কি পুড়বেনা?
ভাইরে মানুষ ব্রেকাপেও অতোটা কষ্ট পাইনা যতোটা কষ্ট পাই বেষ্টফ্রেন্ডের মর্যাদা দেওয়া মানুষগুলো যখন হঠাৎ করে পর হয়ে যায়!
হতে পারে আমি ইমোশনাল ফুল বলেই হয়তো!
হতে পারে!
তবুও ভালো থাকুক বন্ধুগুলো।
অটুট থাকুক পৃথিবীর সব বন্ধুত্ব।
১০ ই ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ৮:৪২
আংশিক ভগ্নাংশ জামান বলেছেন: আর কিছু অস্থায়ী হওয়ায় আমাদের জন্যে মঙ্গলজনক!
২| ১০ ই ডিসেম্বর, ২০২০ বিকাল ৩:০১
রাজীব নুর বলেছেন: চাঁদগাজীর মন্তব্য আশা করছেন। তাই আমি মন্তব্য করলাম না।
১০ ই ডিসেম্বর, ২০২০ বিকাল ৫:১৭
আংশিক ভগ্নাংশ জামান বলেছেন: আপনি এই ব্লগ পরিবারের সিনিয়র সদস্য ভাইয়া।আপনার মন্তব্য আমার জন্যে অনেক মূল্যবান।
©somewhere in net ltd.
১| ১০ ই ডিসেম্বর, ২০২০ দুপুর ২:৪৮
মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন:
নিজের জীবনের ঘটনা শেয়ারে ধন্যবাদ।
এইতো কদিন আগে আমার এক বন্ধু বেড়াতে এলো স্বপরিবারে। অথচ ১৯৯৭ সালের পর আর যোগাযোগ ছিলনা।২০২০ সালে দেখা হলো। বন্ধুত্ব কোনটা হয় স্থায়ী, কোনটা অস্থায়ী, কোনটা চিরস্থায়ী।