![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সূত্র:যুগান্তর
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগ থেকে মাস্টার্স করেছেন ছাত্রী মৌটুসী। তিন বছর আগে দেশের সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠান থেকে ডিগ্রি নিয়ে বের হওয়ার পর এ যাবত অন্তত ডজনখানেক চাকরির পরীক্ষা দিয়েছেন। এর মধ্যে একবার বিসিএসের ভাইভাও দিয়েছেন। কিন্তু ‘চাকরি’ নামক ‘সোনার হরিণ’টির দেখা মেলেনি। একই বিভাগ থেকে অনার্স শেষ করে মাস্টার্স দ্বিতীয় সেমিস্টার করছেন আকলিমা বেগম। কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে তার চোখে-মুখে গভীর হতাশা। সর্বোচ্চ ডিগ্রি শেষ করে চাকরি পাবেন তো- এ প্রশ্ন সব সময় তাকে তাড়া করে ফিরছে। তাই শিক্ষা সমাপনীর আনন্দের পরিবর্তে সর্বদা টেনশনেই দিন কাটছে তার।
শুধু মৌটুসী আর আকলিমাই নন, দেশের প্রায় ৩৫ লাখ শিক্ষিত বেকারের দিন কাটছে গভীর হতাশায়। শিক্ষাজীবন শেষে যেখানে তাদের কর্মজীবনে প্রবেশের কথা, সেখানে একের পর এক চাকরির পরীক্ষা দিয়েও সফলতার মুখ দেখছেন না অনেকে। বিসিএসসহ বিভিন্ন চাকরিতে অধিক হারে অযৌক্তিক কোটা ব্যবস্থার কারণে উপেক্ষিত মেধা। এ কারণে একদিকে যেমন ভালো করেও চাকরি নামক সোনার হরিণটির দেখা মিলছে না। অন্যদিকে তাদের সামনে দিয়েই কম মেধাবীরা বিভিন্ন কোটার জোরে বাগিয়ে নিচ্ছেন চাকরি। এর ফলে হতাশা থেকেই সৃষ্টি হচ্ছে ক্ষোভ আর অসন্তোষ। বিষয়টি কেবল রাজপথের আন্দোলনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই, ভার্চুয়াল জগৎ তথা ইন্টারনেটে ফেসবুক, টুইটার, ব্লগে এ নিয়ে তুমুল আলোচনা-পর্যালোচনা চলছে। বেশির ভাগ লেখাই কোটার বিরুদ্ধে এবং বৃহস্পতিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলার নিন্দা জানিয়ে।
গত কয়েকদিন ধরে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠেছে চাকরিতে কোটাবিরোধী আন্দোলন। ঢাকায় ওই আন্দোলনে যোগদানকারী কয়েকজনের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে তাদের ক্ষোভের কথা। সংশ্লিষ্টরা জানান, একাডেমিক লেখাপড়ার জন্য তারা দিনে যে ক’ঘণ্টা লেখাপড়া করেছেন, তার চেয়েও দ্বিগুণ সময় বর্তমানে কাটে ইন্টারভিউ’র পড়ালেখার পেছনে। কিন্তু এরপরও তাদের চাকরি জুটছে না। এজন্য তারা শুধু কোটাকেই দায়ী করছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগ থেকে পাস করে ছাত্র উৎপল দাশগুপ্ত জানান, ২০০২ সালে পাস করার পর তিনি হন্যে হয়ে চাকরি খোঁজেন। একটি পরীক্ষার নাম উল্লেখ করে তিনি বলেন, ২০০৪ সালে পিএসসির অধীন নন-ক্যাডার প্রথম শ্রেণীর একটি চাকরির পরীক্ষায় অংশও নেন তিনি। প্রায় ৮৫টি প্রশ্ন সঠিক উত্তর দেয়ার পরও তার চাকরি হয়নি। অথচ তারই রাষ্ট্রবিজ্ঞানে পড়–য়া আরেক বন্ধু ৬৫টি প্রশ্ন সঠিক উত্তর দিয়েই চাকরি বাগিয়ে নেন। তিনি বলেন, এরপর ওই বছর কোটাবিরোধী আন্দোলন গড়ে উঠলে তাতে অংশ নেন তিনিসহ অনেকে। কিন্তু সেই বছরও তাদের আন্দোলনকে জামায়াত-শিবিরের আন্দোলন বলে চিহ্নিত করা হয়েছিল। সাজ্জাদ মাহমুদ নামে একজন সরকারি কর্মকর্তা টেলিফোনে জানান, চলমান কোটাবিরোধী আন্দোলনের প্রতি তার ও তাদের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। কেননা, তিনি বর্তমানে যে ক্যাডারে চাকরি করছেন, তার চেয়েও কম নম্বর পেয়ে অনেক লোভনীয় ক্যাডারে চাকরি করছেন তার বন্ধুরা। তারিকুল ইসলাম নামে কোটাবিরোধী এক আন্দোলনকারী জানান, তাদের আন্দোলনকে শিবিরের আন্দোলন বলে চালিয়ে মূলত শিবিরকেই শক্তিশালী হিসেবে প্রমাণিত করা হচ্ছে। এটা শিবিরের পক্ষে এক মারাÍক প্রচারণা। তিনি বলেন, যদি এত মেধাবী শিক্ষার্থী শিবিরের সমর্থক হয়ে থাকে, তাহলে অন্য সংগঠনের ভবিষ্যৎ তো হুমকির মুখে পড়ার কথা। আর নাম প্রকাশ না করে একাধিক ছাত্র জানিয়েছেন, তারা মুক্তিযোদ্ধা কোটার বিপক্ষে নন। কিন্তু এই কোটা ব্যবস্থা কতদিন থাকবে, সেটা সরকারের নিশ্চিত করা দরকার। কেননা, প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের সন্তানের ব্যাপারে রাষ্ট্রের দায়িত্ব থাকতে পারে। সেখানে নাতি-নাতনিদের টেনে মূলত নবীন প্রজন্মের মধ্যে স্পষ্ট বিভাজন করা হয়েছে। এর ফলে সরকার যা পাবে তা হচ্ছে, বঞ্চিতদের ভোট হারাবে। কেননা, তরুণ শ্রেণী যার কারণে বেকারত্বের অভিশাপের ঘানি টানবে, তারা তাকে ভোট দেবে কীভাবে- এ প্রশ্নটি সরকারের নীতিনির্ধারকদের ভেবে দেখা উচিত।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা কোটাবিরোধী আন্দোলনে সম্পৃক্ত রয়েছেন, তাদের বেশির ভাগই সাধারণ শিক্ষার্থী। এমনকি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটাবিরোধী আন্দোলনে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিভিন্ন হলের বেশির ভাগ নেতাকর্মী যুক্ত রয়েছেন। বৃহস্পতিবার আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা করেছে ছাত্রলীগের একটি অংশ। এরা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক ওমর শরীফের গ্র“পের কর্মী ও ক্যাডার হিসেবে পরিচিত বলে জানা গেছে।
কোটাবিরোধী আন্দোলন সম্পর্কে আন্দোলনকারী আলী আকবর শেখ স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, নিয়মবহির্ভূতভাবে কোটা নির্ধারণ করে পিএসসি ৮ জুলাই ৩৪তম বিসিএসের প্রিলিমিনারির ফল প্রকাশ করেছে। এ আন্দোলন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছড়িয়ে পড়েছে। কিন্তু শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশ ও ছাত্রলীগের একটি অংশ হামলা চালায়। এতে ৬ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। সরকারদলীয় অতি উৎসাহী একটি পক্ষের হামলায় ২৫ জন আহত হয়। বিবৃতিতে পুলিশ ও ছাত্রলীগের হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানোর পাশাপাশি দু’দফা দাবি মেনে নেয়ার আহ্বান জানানো হয়। দাবিগুলো হচ্ছে- আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে পূর্ব নিয়মে মেধার ভিত্তিতে ফল পুনঃপ্রকাশ করা। এক্ষেত্রে অবশ্যই ওয়েবসাইটে প্রত্যেক প্রার্থীর নম্বর ও সর্বনিম্ন কাট নম্বর এবং প্রশ্নের সঠিক সমাধান স্বচ্ছতার সঙ্গে নিশ্চিত করতে হবে। দেশের বর্তমান বাস্তবতায় অবশ্যই সরকারকে কোটা পদ্ধতি বাতিল বা খুব সীমিত করার ঘোষণা দিতে হবে। ওই সময়ের মধ্যে দাবি বাস্তবায়ন না হলে ফের আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণার কথাও ওই বিবৃতিতে বলা হয়।
©somewhere in net ltd.