![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
খাগড়াছড়িতে চমৎকার ঝর্ণা আছে জানেন? রছিং ঝর্ণা। খুব বেশি পরিচিত না ঝর্ণাটা ওখানে। বছর খানেক আগে গিয়েছিলাম যখন, শুনেছিলাম প্রশাসনও তেমন কিছু জানে না ঝর্ণাটা সম্পর্কে। ওদের দর্শনীয় স্থানের তালিকায়ও নাম খুজে পাইনি ঝর্ণার, সেই ঝর্ণার গল্পই বলছি।
খাগড়াছড়িতে আমার খুব চমৎকার একটা সুবিধা আছে। ওখানে গেলে ঘুরে বেড়ানোর একটা সুবিধাজনক বাহন পাই আমি, একটা মটর সাইকেল। আর পাহারী পথে ওটা চালানোর মতো মজা আমি ইদানীং আর কোথাও পাইনি, সে গল্প অন্যদিন, আজ ঝর্ণার গল্প বলি।
তো, সেই ঘুরে বেড়ানোর সুবাদেই পথে অথবা বেপথে যাবার বেশ কিছু অভিজ্ঞতা হয়েছিলো আমার। শহর থেকে আলুটিলা পেরিয়ে আর খানিকটা সামনে গেলেই বাঁয়ে চলে গেছে ইট বিছানো একটা পথ। পথের দুপাশে যথারীতি ঝোপের জঙ্গল। শুরুতে কোন সাইনবোর্ড নেই। ছিলো আর্মিদের একটা পরিত্যাক্ত চেকপোস্ট, আর তার দেয়ালে ইটের টুকরা দিয়ে ঘসে ঘসে লেখা 'রাছিং ঝর্না'।
আমার সাথে তখন ফেরদৌস, ক্যাম্পাসের ছোটভাই, মটর সাইকেলে আমার পেছনে। এগিয়ে গেলাম পথ ধরে নানা অজানা আশংকা বুকে। যেতে যেতে দেখলাম পথের দুপাশে গড়ে উঠছে ছড়ানো ছিটানো পাহারী বসতি। আমরা এগুতে থাকলাম, খানিক পরে পরে কাওকে পথ জিজ্ঞাসা করে। একসময় পৌছে গেলাম বসতির শেষ বাড়িটার সামনে। তখনো খুঁজে পাইনি ঝর্ণার দিশা। কথা হলো বাড়ির মালিক রবীন্দ্র'দার সঙ্গে। আমাদের জানালো এই পাহাড় ধরে নেমে গেলে ঝর্ণা পাওয়া যাবে। সে আমাদের একটা পাহাড়ী পায়ে চলা পথও দেখিয়ে দিলো এগিয়ে যাবার। আমরা এগুতে থাকলাম, আর খানিকটা পরেই শুনতে পেলাম ঝর্ণার রুমঝুম শব্দ। তখনও আমরা পাহাড় বেয়ে নামছি, কখনো পড়তে পড়তে সামলে নিচ্ছি নিজেকে। ঝোপ জঙ্গল পেরুচ্ছি আর শুনছি ঝর্ণার গান তীব্র নীরবতা ছাড়িয়ে,এগিয়ে যাচ্ছি সে গানকে কেন্দ্র করে আমরা দুজন। অদ্ভুদ সে সময়, অদ্ভুদ সে নীরবতা, অদ্ভুদ সে অজানা পথ চলা ঝর্ণার তৃষ্ণা নিয়ে।
চলতে চলতেই পেয়ে গেলাম সেই খাল (বা নদী,একে কি নামে ডাকা যায় বুঝতে পারছি না), যেটা ঝর্ণা হয়ে নেমে গেছে পাহাড় বেয়ে। আমরাও এগিয়ে গেলাম স্রোতের সাথে সাথে। এবং প্রথমে পৌছালাম সেখানটায়, ঠিক যেখানটায় স্রোত লাফিয়ে পড়েছে ঝর্না হয়ে। আশপাশে কিছু পাহাড়ী ফুল, ফুটে আছে ঝোপে ঝোপে, পাহাড়ের গায়ে, ঝর্ণার পাশে পাশে। আমার তর সইছিলোনা মোটেও। আমারও ইচ্ছে হচ্ছিলো ঝর্ণা হতে, ছুটে যেতে শূণ্যে।
নিচে, পানি যেখানে আছড়ে পড়ছে তীব্রতায়, সেখানে বিশাল একটা পাথরের চাতাল। আমরা যে পথ ধরে ঝর্ণার নিচে নেমেছি, বোঝা যায় এই পথটা একসময় ঐ নদীর মতই নদী ছিলো, অথবা বর্ষায় নদীর রুপ নেয়। এ চাতালটাও ঐ নদীরই একটা অংশ, শুকনা। আমরা প্রচুর ক্লান্তিতে শুয়ে পড়লাম ঐ চাতালে। ফেরদৌস লাজলজ্জার বালাই না করে শুধু আন্ডারওয়ার পড়ে দাড়িয়ে পড়লো ঝর্ণার নীচে। লজ্জার বালাই করারও কিছু ছিলো না। আমরা তখন পৃথিবী থেকে আলাদা, কেউই ছিলো না আশপাশে। আমিও ছোঁয়ালাম সে স্রোত চোখে, মুখে। কি অসম্ভব তৃপ্তি, কি অসম্ভব আনন্দ সে জলে!
ফিরতে গিয়ে বুঝলাম কতটা নিচে নেমেছিলাম আমরা। মটর সাইকেল রেখে এসেছি রবীন্দ্র'দার বাসার সামনে, পায়ে চলা পথের শুরুতে। আমাদের তো ফিরতেই হবে ঐ পথে। আমর উঠছি আর উঠছি খাড়া পাহাড় বেয়ে বেয়ে। নামার সময় ভয় ছিলো হঠাৎ পড়ে যাওয়ার, আর এখন আরও যুক্ত হলো দমের। উঠছি তো উঠছি, পথ যেন আর শেষ হয় না। যখন রবীন্দ্র'দার বাড়িতে পৌছালাম, আমার দাড়িয়ে থাকার আর কোন শক্তি ছিলো না। রবীন্দ্র'দাও বুঝেছিলেন বোধহয়, আমাদের ঘরে বসিয়ে গেলেন গরম পানি(!)র ব্যবস্থা করতে। গরম পানি খেলাম, সাথে ঐ নদীতে ধরা ছোট্ট মাছ ভাজা। চমৎকার!
ঐ গরমপানি খেয়েও চমৎকারভাবে মটরসাইকেল চালিয়ে আমি ফিরে এসেছিলাম। ফেরদৌস পেছনে বসে বলছিলো, 'আরে, আপনি তো যাবার সময়ও এতো ভালো চালাননি!'
বিঃ দ্রঃ ছবি আগামীকাল যুক্ত করে দেবো।
২| ০৬ ই জুলাই, ২০০৮ দুপুর ১২:২৮
মেহরাব শাহরিয়ার বলেছেন: ঝর্নাটা সম্ভবত আমরা দেখে এসেছি , ১০ মাস আগে । বিশাল একটা হেলানো পাথরের চাঁই এর উপর পানি এসে পড়ছে ? ওখানে যাবার জায়গাটা এত খাড়া যে উপর থেকে বুঝার উপায় নেই নিচে ঝর্ণা আছে । আমরা গিয়েছিলাম ভরা বর্ষা মৌসুমে , বেশ খানিকটা সময় কাটিয়েছিলাম ।
এরপর উঠে এসেছি শহরে ফিরে যাবো বলে , কিন্তু তখনও বিস্ময়ের শেষ হয়নি । পেটানো শরীরের খাটো এক টিপরা উপজাতির লোকের সাথে দেখা হল । জায়গাটা জনশূন্য , একটাই ঘর । বুঝলাম তিনি জানতে চাইছেন কোন ঝর্নায় আমরা গিয়েছি , বুঝালেন আসলটাই আমরা দেখিনি । সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে , তবুও ঠিক করলাম যাবোই । একদম গাছপালায় ঢাকা , পাহাড়ের অনেক নিচে ঝর্নাটা , চেনা না থাকলে কারও সাধ্য ছিল না খুঁজে বের করার । জোঁক ধরলো দু'জনের , তারপর যখন পৌছেছি অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে থেকে অনেকটা সময় পেরিয়ে গেলো । তীব্রবেগে উপর থেকে পানি পড়ছে , অনন্য , বর্ণনাতীত । পানির ঠিক নিচে দাঁড়ালাম , প্রচন্ড শব্দ , আর পানির শরীরে যেন লোহার মত আঘাত করছে । আঁধার ঘনিয়ে আসা পর্যন্ত ওখানে ছিলাম । বাংলাদেশে প্রায় সবক'টি প্রসিদ্ধ জায়গায় ঘুরেছি , কিন্তু এতটা ভালো লাগা আর কখনো লাগেনি
০৬ ই জুলাই, ২০০৮ দুপুর ১২:৪৮
যীশূ বলেছেন: আমি গিয়েছিলাম ২০০৫ এর শেষে বা ২০০৬ এর শুরুতে। তখন প্রকৃত ঝর্নার আসল মজাটা পেয়ে ছিলাম। জানিনা এখন কি অবস্থা!
০৬ ই জুলাই, ২০০৮ দুপুর ২:৪১
যীশূ বলেছেন: পেটানো শরীরের খাটো এক টিপরা উপজাতির লোকের সাথে দেখা হল ।
লোকটার নাম শুনেছিলেন? রবীনদা না তো?
৩| ০৬ ই জুলাই, ২০০৮ দুপুর ২:৩৮
যীশূ বলেছেন: লেখাটার পরেরদিন আর ছবি দেয়া হয়নি, সে প্রযুক্তিও ছিলো না তখন। আজ দিয়ে দিলাম।
৪| ০৬ ই জুলাই, ২০০৮ দুপুর ২:৪৪
মেহরাব শাহরিয়ার বলেছেন: ছবি দিবো পরে, দেখলে শিওর হতে পারবেন
০৬ ই জুলাই, ২০০৮ বিকাল ৪:৫৪
যীশূ বলেছেন: ঠিক আছে।
০৬ ই জুলাই, ২০০৮ বিকাল ৪:৫৮
যীশূ বলেছেন: আমার দেয়া ছবিগুলো দেখে কি মনে হয়? এটাই?
৫| ০৬ ই জুলাই, ২০০৮ রাত ৯:০৫
স্বাক্ষর শতাব্দ বলেছেন: নামটা মনে হয় রিছাং হবে
০৭ ই জুলাই, ২০০৮ বিকাল ৪:২৩
যীশূ বলেছেন: কেমনে বলি। তখন খাগরাছড়ি প্রশাসনের কাছ থেকেও এ ঝর্নার কোন নাম পাইনি। ঝর্ননা যাবার পথে পেয়েছি আর্মিদের একটা পরিত্যাক্ত চেকপোস্টের দেয়ালে ইটের টুকরা দিয়ে ঘসে ঘসে লেখা 'রাছিং ঝর্না'। আমি সে নামটাই এখানে লিখে দিয়েছি।
৬| ১২ ই জুলাই, ২০০৮ দুপুর ২:০৯
সবুজ বলেছেন:
প্রিয়তে রাখলাম।
যাব শিঘ্রই।
আমার ব্লগটা দেখতে পারেন।
১৬ ই জুলাই, ২০০৮ দুপুর ১২:৩২
যীশূ বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে। এখন ওখানে কেমন লাগবে বুঝতে পারছি না। পর্যটকদের ভীড়ে প্রকৃত প্রকৃতি টিকে আছে আর কতটুকু জানি না। তবু যাবেন। ফিরে এসে পোস্ট দিয়েন।
৭| ০১ লা মার্চ, ২০১১ বিকাল ৩:৩০
ধুসর সময় বলেছেন: ভাই আমি এই ঝর্নাতে মাত্র এক মাস আগেই গিয়েছি, ঝরনাটার নাম 'রেসাং ঝর্না', 'রাসিং' না, হেলানো একটা পাথরের উপরে পানি পড়ছে, আমরা বন্ধুরা সবাই ওই হেলানো পাথরের উপরে স্লিপ করলাম, সোজা ঠান্ডা পানিতে, খুবই সুন্দর জায়গা
০২ রা মার্চ, ২০১১ দুপুর ১২:৫৩
যীশূ বলেছেন: আমি গিয়েছিলাম অনেক আগে ২০০৫ বা ২০০৬ এ। ঝর্ণাটার নাম জানতাম না, কোথাও লেখাও ছিলো না। পথের পাশের দেয়ালে ইটঘসে লেখা ছিলো রাসিং ঝর্ণা। আমি সেই নামটাই ব্যবহার করেছি।
©somewhere in net ltd.
১|
১০ ই এপ্রিল, ২০০৭ সকাল ১০:২৩
যীশূ বলেছেন: এ গল্প আরও বছর দেড়েক আগের। এরপর আবার গিয়েছিলাম। কিন্তু রবীন্দ্রদাকে পাইনি। ঐ ঝর্ণাটায় তখন কিছু পর্যটক আসা শুরু করেছে। আমরা আরও সামনে গিয়ে আরও বড় নতুন আরেকটা ঝর্ণা দেখেছিলাম, সে গল্প অন্য একদিন বলবো না হয়, যদি শুনতে চান।