নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
অবসরে আছি। কিছু কিছু লেখালেখির মাধ্যমে অবসর জীবনটাকে উপভোগ করার চেষ্টা করছি। কিছু সমাজকল্যানমূলক কর্মকান্ডেও জড়িত আছি। মাঝে মাঝে এদিক সেদিকে ভ্রমণেও বের হই। জীবনে কারো বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ করিনি, এখন তো করার প্রশ্নই আসে না। জীবন যা দিয়েছে, তার জন্য স্রষ্টার কাছে ভক্তিভরে কৃতজ্ঞতা জানাই। যা কিছু চেয়েও পাইনি, এখন বুঝি, তা পাবার কথা ছিলনা। তাই না পাওয়ার কোন বেদনা নেই।
ফুলি বেগম যেদিন বিয়ের পিঁড়িতে বসলো, সেদিন সে মনে মনে অনিশ্চয়তার দোলাচল আর কিছুটা চাপা উত্তেজনায় চঞ্চল ছিলো। বিয়ের আগে সে বাবুল মিঞাকে পরিবারের অন্যান্য সবার সামনে বসে চাক্ষুষ দেখার আর তার সাথে মাত্র দুই একটা কথা বলার সুযোগ পেয়েছিলো। দুই একটা কথা আর দুই একবার দৃষ্টি ও হাসি বিনিময় ছাড়া তেমন উল্লেখযোগ্য আর কিছুই ঘটেনি। কন্যা সম্প্রদানের সময় প্রথানুযায়ী বুকফাটা কান্নাকাটির পর সেই যে সে সোজা বাবুল মিঞার ঘরে চলে এলো, তার পর থেকে একবারের জন্যও তার কখনো মনে হয়নি যে সে ভুল ঘরে এসেছে।
ফুলি বেগমের দু’চোখ জুড়ে ছিল কতশত স্বপ্ন! বিধাতা তার অপার করুণায় তার প্রায় সব স্বপ্নই একে একে পূরণ করে দিয়েছেন, এজন্য ফুলি বেগম প্রায়ই একান্তে বিধাতার কাছে চোখের জল ফেলে কৃতজ্ঞতা জানায়। ধীরে ধীরে ফুলি বেগমের সংসারে এক এক করে কয়েকটা সন্তান এলো। ফুলি বেগম একান্ত নিষ্ঠায় হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসা দিয়ে সন্তানদের সুসন্তান হিসেবে গড়ে তোলায় ব্রতী হলো। টানাপোড়েনের সংসারটাকে সে পুষ্পকাননের ন্যায় সাজিয়ে রাখতো। সময়ের কাজ সময়মত করতে সে সদা ওষ্ঠাগতপ্রাণ ছিল। বাবুল মিঞাও তার ছোটখাট সখ আহ্লাদগুলোকে যথাসাধ্য মেটাতে কার্পণ্য করতো না।
ফুলি বেগম বিধাতার কাছে আরও কৃতজ্ঞ যে সে জীবনে খুব বেশী অসুখে বিসুখে ভোগেনি, তার স্বামী সন্তানেরাও না। মাঝে সাঝে জ্বর টর হলে সে যথাসাধ্য চেষ্টা করতো আক্রান্তকে কমফোর্ট দিতে। নিজের হলে সে তেমন কিছু চাইতো না। চাওয়ার আগেই সে কিছুটা আহ উহ করেই ভালো হয়ে যেত, আবার দ্রুত সচল হয়ে উঠতো। এমনকি সন্তান প্রসবের সপ্তাহান্তেই সে প্রতিদিনের রুটিন কাজগুলো নিজেই করা শুরু করতো। তার একটা বড় অসুবিধা ছিল যে রান্নাঘরে একাধারে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে কাজ করলে তার পায়ের পেশীগুলো শক্ত হয়ে যেত। সন্তানরা যখন ছোট ছিল, তখন পা টেপাটিপি করার জন্য তাদের ডাক পড়তো। বড় হয়ে যাবার পর আর তাদেরকে ডাকতো না।
একদিন রাতে ফুলি বেগমের পা দুটো ব্যথায় টনটন করছিলো। অগত্যা সে ঘুমকাতুরে বাবুল মিঞাকেই ঘুম থেকে ডেকে জানালো পা ব্যথার কথা। ঘুম ঘুম চোখে বাবুল মিঞা তার পায়ের কাছে বসে বললো “দাও”। এই বলে সে একটা পা তার কোলে নিয়ে টেপা শুরু করলো। আর নিমেষেই ফুলি বেগম নাক ডাকা শুরু করলো। বাবুল মিঞা আস্তে করে পাশে শুয়ে ফুলি বেগমের একটা হাত নিজের মুঠোবন্দী করে চোখ বন্ধ করলো। আর ভাবতে লাগলো, এই হাত সংসারের এত কাজ করে, তবুও কত নরম! এই হাতের কল্যানেই তার আর তার সন্তানদের মুখে ব্যত্যয়হীনভাবে ভাবে উঠে এসেছে অন্ন, বছরের পর বছর। এসব ভাবতে ভাবতে সে সিদ্ধান্ত নিল, পরের দিনই সে ফুলি বেগমকে একটা বড় সারপ্রাইজ দিবে। সে নিজ হাতে তাকে তার প্লেট থেকে তুলে কয়েক নলা অন্ন খাইয়ে দিবে।
এভাবেই দেখতে দেখতে বলতে গেলে প্রায় এক নিঃশ্বাসেই তারা তাদের জীবনের এতটা পথ পাড়ি দিয়ে এলো। আর সবার মতই তাদের মাঝেও টুকটাক ঝগড়াঝাটি হতো, মান অভিমান হতো, আবার অভিমানের ধনুর্ভঙ্গ পণও সামান্য একটু আদরেই ভেঙ্গে পড়তো। যে প্রথম নিজের ভুলটুকু বুঝতে পারতো, সেই অসন্তোষের কালো আঁধারটুকু অপসারণের উদ্যোগ নিত। আজ পরিণত বয়সে এসে ফুলি বেগম আর বাবুল মিঞা অতীতের দিকে তাকিয়ে মাঝে মাঝে একান্তে বিশ্লেষণ করে দেখে, তারা অতীতে বেশী সুখী ছিলো, না এখন! যাচাই করে দেখে, তারা সবার প্রতি এবং পরস্পরের প্রতি তাদের দায়িত্বটুকু ঠিকঠাক মত পালন করেছে তো?
জীবন সমুদ্র পাড়ি দিতে দিতে একান্তে তারা যখন পেছন ফিরে চায়, তারা আশ্বস্ত হয়। যখন সামনে তাকায়, এতদিনের অথৈ সাগরটাকে আর অন্তহীন মনে হয়না। তারা যেন সাগরের তীরটাকে দেখতে পায়। ধীরে ধীরে জীবনতরী এগিয়ে চলে, তারা দু’জনে নাওয়ের দু’প্রান্তে বসা। মাঝে মাঝে তারা প্রান্ত বদল করে দেখে নেয়, কার আসন থেকে সামনের তীরটাকে কেমন দেখা যায়। এতদিন তারা শুধু সামনের পানেই তাকিয়ে থাকতো, আর মাঝে মাঝে ভাবতো, তীর কত দূরে? এখন তীরটা দৃশ্যমান হবার পর পেছনে তাকিয়ে ভাবে, নামতেই কি হবে? পেছনে ফিরে যাওয়া যায়না, আবার একসাথে?
দূরমুঠ, মেলান্দহ, জামালপুর
০৬ জুন ২০১৫
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
২৮ শে অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ১০:১০
খায়রুল আহসান বলেছেন: লেখাটা পড়ে মন্তব্য করার জন্য অনেক ধন্যবাদ, সেলিম আনোয়ার। জীবনের মৃদু হিল্লোলে (Ripples of life) ভাসতে ভাসতে একসময় প্রবল ঝঞ্ঝায় বিচ্ছিন্ন...
২| ২৮ শে অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ১০:১২
খায়রুল আহসান বলেছেন: লেখাটা 'লাইক' করার জন্যও ধন্যবাদ, সেলিম আনোয়ার।
৩| ২৮ শে অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ১০:১৮
রহস্যময় ডিটেকটিভ ঈশান বলেছেন: পুরোটাই পড়লাম।বাস্তবতা সাপেক্ষে লেখা।ধন্যবাদ দাদু,এমন একটা গল্প উপহার দেওয়ার জন্য।
২৮ শে অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ১০:৩২
খায়রুল আহসান বলেছেন: আপনাকেও ধন্যবাদ, রহস্যময় ডিটেকটিভ ঈশান। প্রীত হ'লাম।
৪| ২৮ শে অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ১০:৩৩
গিয়াস উদ্দিন লিটন বলেছেন: লিখায় সুন্দর জীবন দর্শনের প্রতিফলন ঘটেছে । লাইক !
২৮ শে অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ১০:৩৬
খায়রুল আহসান বলেছেন: মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ, গিয়াস উদ্দিন লিটন। 'লাইক' এর জন্যও।
৫| ২৮ শে অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ২:৩২
শামছুল ইসলাম বলেছেন: দু'জন দু'জনার-আদর্শ জুটি।
শেষের লাইন গুলো খুব ভাল লেগেছেঃ
//এতদিন তারা শুধু সামনের পানেই তাকিয়ে থাকতো, আর মাঝে মাঝে ভাবতো, তীর কত দূরে? এখন তীরটা দৃশ্যমান হবার পর পেছনে তাকিয়ে ভাবে, নামতেই কি হবে? পেছনে ফিরে যাওয়া যায়না, আবার একসাথে?//
ভাল থাকুন। সবসময়।
২৮ শে অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ২:৩৫
খায়রুল আহসান বলেছেন: উদ্ধৃতিটুকুর জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ, শামছুল ইসলাম। মন্তব্যে প্রীত হ'লাম।
৬| ২৮ শে অক্টোবর, ২০১৫ বিকাল ৪:১৭
প্রামানিক বলেছেন: সুন্দর বাস্তবতার দর্শনে লেখা। শুভ্চেছা রইল।
২৮ শে অক্টোবর, ২০১৫ বিকাল ৪:২৮
খায়রুল আহসান বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ, প্রামানিক। শুভেচ্ছা জানবেন।
©somewhere in net ltd.
১| ২৮ শে অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ৯:৪৯
সেলিম আনোয়ার বলেছেন: অনেক বড় দর্শন ।সত্যি জীবনসঙ্গী কে নিয়ে মধুর অতীতে হারিয়ে যেতে চায় মানুষ ।সামনেই থাকে মৃত্যু এক চূড়ান্ত বিচ্ছেদ ।