নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
অবসরে আছি। কিছু কিছু লেখালেখির মাধ্যমে অবসর জীবনটাকে উপভোগ করার চেষ্টা করছি। কিছু সমাজকল্যানমূলক কর্মকান্ডেও জড়িত আছি। মাঝে মাঝে এদিক সেদিকে ভ্রমণেও বের হই। জীবনে কারো বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ করিনি, এখন তো করার প্রশ্নই আসে না। জীবন যা দিয়েছে, তার জন্য স্রষ্টার কাছে ভক্তিভরে কৃতজ্ঞতা জানাই। যা কিছু চেয়েও পাইনি, এখন বুঝি, তা পাবার কথা ছিলনা। তাই না পাওয়ার কোন বেদনা নেই।
আমার আগের অভিজ্ঞতার সূত্র ধরে আজ আরেকজন সম্পর্কে একটা শোনা গল্প বলবো। যাকে নিয়ে এ গল্প, সে এবং যে আমাকে গল্পটা শুনিয়েছে, তারা উভয়ে আমার অনুজপ্রতিম। বয়সে আমার চেয়ে প্রায় ৮/৯ বছরের ছোট।
ধরা যাক, যার কথা বলছি, তার নাম আনন্দ। আনন্দ যেদিন বিএমএতে গেলো, সেদিন ওর চোখে আর সবার মত অনেক আনন্দ ছিলো, স্বপ্ন ছিলো। সদা হাসিখুশী, পরোপকারী এই ছেলেটি শুরু থেকেই প্রশিক্ষণটাকে খুব সিরিয়াসলী নিয়েছিলো। সবার আগে দৌড়ে আসার চেষ্টা করতো, নিষ্ঠার সাথে প্রশিক্ষকদের সব হুকুম পালন করার চেষ্টা করতো, যদিও শরীর কিছুটা ভারী হবার কারণে ঠিকমত পারতোনা। ড্রিলেও খুব আন্তরিক ছিল। ধুপধাপ পা মেড়ে ড্রিল করতো, ফাঁকি দিতনা। কয়েক সপ্তাহ নিয়মিত ড্রিল করার পর নিয়মানুযায়ী স্যালুটিং টেস্ট এর পালা এলো। ড্রিলে তার আন্তরিকতা দেখে সবাই ভাবতো, ও সবার আগে প্রথম ব্যাচেই পাশ করে যাবে। কিন্তু বিধি বাম! তা হলোনা।
এর পর পালাক্রমে মাসে মাসে পুনরায় স্যালুটিং টেস্ট এর বৈতরণী সামনে আসতে থাকলো। তার ব্যাচের বাকীরা সবাই একে একে সে বৈতরণী পার হয়ে যেতে থাকলো। তার ভাগ্যে আর শিকে ছিঁড়েনা! একদিন ব্যাচের 'মকড়া মাস্টার' ক্যাডেটটিও শেষ পর্যন্ত পার হয়ে গেলো সে বৈতরণী। শুধু আনন্দ বাকী রয়ে গেলো।
এতটুকু শোনার পর আমি প্রশ্ন করলাম, “কেন সে পাশ করতে পারছিল না, কোথায় তার দোষ ছিলো”? উত্তর শুনে আমি স্তম্ভিত হয়ে গেলাম! আনন্দের ড্রিলের সবকিছুই ঠিক ছিলো, তবে…
আনন্দ যখন অক্লান্ত উদ্দীপনা নিয়ে যথাযথ পা মেড়ে রিভিউইং অফিসারের সামনে এসে স্যালুট দিয়ে তার হাত কপালে ঠেকাতো, তখন অনিয়ন্ত্রিতভাবে তার ঘর্মাক্ত মুখেও ঠোঁটের কোণা থেকে এক টুকরো হাসি বেরিয়ে পড়তো। অভিব্যক্তিটা এমনই ছিল যে ও না হাসলেও সবাই মনে করতো ও হাসছে! রিভিউইং অফিসার এটাকে তাচ্ছিল্য মনে করতেন আর তাকে ক্রমাগতভাবে ফেল করাতেন। এ ভাবেই আস্তে আস্তে আনন্দের আনন্দ দুঃখে পরিণত হতে থাকলো!
মাটির এ পৃথিবীতে কিছু কিছু অভাগাকে এমনিভাবে কত তুচ্ছ ভুলের কারণে কত বড় মূল্য দিতে হয়! আনন্দের এই শাস্তির তুলনায় আমার সেই “LOV” এর ব্যাপারটা তো ছিল নস্যি মাত্র, যদিও দুটোই ছিল হাসির কারণে....
ঢাকা
২৮ অগাস্ট ২০১৫
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
৩১ শে অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ৮:৩৩
খায়রুল আহসান বলেছেন: ভালো লেগেছে জেনে খুশী হ'লাম, নাবিক সিনবাদ। আপনাকে ধন্যবাদ, লেখাটা পড়ে মন্তব্য রেখে যাবার জন্য।
আশাকরি 'হাসির মূল্য-১' টাও পড়েছেন?
২| ৩১ শে অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ১০:০৪
নাসিব আখতার বলেছেন: আনন্দের দুঃখ প্রকাশের জন্য ধন্যবাদ! মৃত্যুর একদিন মৃত্যু হবে কথাটি যেমন তেমনি আনন্দের দুঃখ! মৃত্যু জন্মেছে, মৃত্যু মরবে!
৩১ শে অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ১০:১৯
খায়রুল আহসান বলেছেন: মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ, নাসিব আখতার।
৩| ৩১ শে অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ১১:০৯
টেক সমাধান বলেছেন: ক্যাডেট কলেজ ব্লগে আপনার লেখা নিয়মিত পড়লেও (কিছু 'টেক সমাধান' সেখানে প্রকাশের খুব ইচ্ছে থাকলেও ক্যাডেট না হওয়ায় পারিনি) কখনও কথা হয়নি... এখানে পেয়ে ভালো লাগলো।
৩১ শে অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ২:৪০
খায়রুল আহসান বলেছেন: মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ, টেক সমাধান। আশাকরি এখানে পাবো আপনাকে নিয়মিত আমার লেখায়।
৪| ৩১ শে অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ১১:৪৪
মানবী বলেছেন: সমস্যাটা কোথায় তা জানলে শুধরে নেয়া সম্ভব ছিলো না আনন্দর চেহারাটাই এমন হাসিমাখা ছিলো বুঝতে পারছিনা।
হাসির মূল্য শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।
৩১ শে অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ২:৪৪
খায়রুল আহসান বলেছেন: আনন্দ যখন কারো দিকে চোখ তুলে তাকাতো, তখন স্বয়ংক্রিয়ভাবে তার মুখে একটা হাসি ফুটে উঠতো। সে ভাব গাম্ভীর্য নিয়ে কারো দিকে তাকাতে পারতো না। এটাই ছিলো তার মূল সমস্যা, যা তার নিয়ন্ত্রণে ছিলনা।
লেখাটা লাইক করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি, মানবী।
৫| ৩১ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৯:১১
শামছুল ইসলাম বলেছেন: মানবীর কথার প্রতি উত্তরে আপনার মন্তব্য শুনে মনটা খারাপ হলেঃ
//আনন্দ যখন কারো দিকে চোখ তুলে তাকাতো, তখন স্বয়ংক্রিয়ভাবে তার মুখে একটা হাসি ফুটে উঠতো। সে ভাব গাম্ভীর্য নিয়ে কারো দিকে তাকাতে পারতো না। এটাই ছিলো তার মূল সমস্যা, যা তার নিয়ন্ত্রণে ছিলনা। //
৩১ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৯:২১
খায়রুল আহসান বলেছেন: আনন্দ'র এই ব্যাপারটা আসলেই খুব দূর্ভাগ্যজনক ছিল।
সমব্যথী মন্তব্যের জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ, শামছুল ইসলাম।
৬| ০২ রা নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:৪৯
মাঈনউদ্দিন মইনুল বলেছেন:
বিদ্রোহ করতে ইচ্ছে হয় মাঝে মাঝে। হাসির জন্য, যদি তা হয়েও থাকে, এভাবে শাস্তি পেতে হবে তা মানতে পারি না।
তবে শৃঙ্খলা একটি গাম্ভীর্য্যের বিষয় বটে। তা অমান্য করতে পারি না।
আপনার অভিজ্ঞতাগুলো অমূল্য। অনেক ইনসাইট আছে তাতে।
০২ রা নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:১৬
খায়রুল আহসান বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ, মাঈনউদ্দিন মইনুল। আপনার শেষ কথাটা আমার মত নবীন ব্লগারদের জন্য একটা বিরাট উপহার। তাই, বলাই বাহুল্য, মন্তব্যটা 'লাইক' করলাম।
©somewhere in net ltd.
১| ৩১ শে অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ৮:২৮
নাবিক সিনবাদ বলেছেন: ধন্যবাদ, ভালো লাগলো।