নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
অবসরে আছি। কিছু কিছু লেখালেখির মাধ্যমে অবসর জীবনটাকে উপভোগ করার চেষ্টা করছি। কিছু সমাজকল্যানমূলক কর্মকান্ডেও জড়িত আছি। মাঝে মাঝে এদিক সেদিকে ভ্রমণেও বের হই। জীবনে কারো বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ করিনি, এখন তো করার প্রশ্নই আসে না। জীবন যা দিয়েছে, তার জন্য স্রষ্টার কাছে ভক্তিভরে কৃতজ্ঞতা জানাই। যা কিছু চেয়েও পাইনি, এখন বুঝি, তা পাবার কথা ছিলনা। তাই না পাওয়ার কোন বেদনা নেই।
গতকাল ০১ ফেব্রুয়ারী ২০১৬ তারিখে এ বছরের একুশে বইমেলার উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধন করেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আগের রাতে আমি আমার প্রকাশকের সনির্বন্ধ অনুরোধে রাজী হয়েছিলাম, সকালে বাঙলাবাজারে তার অফিসে গিয়ে আমার প্রকাশিতব্য বই “জীবনের জার্নাল” এর চূড়ান্ত প্রুফ দেখে অনুমোদন দিয়ে আসবো। ছোটবেলায় স্কুলছাত্র থাকার সময়ে বাঙলাবাজারে বহুবার গিয়েছিলাম। দেশ স্বাধীন হবার পর মাত্র দু’বার বরিশাল যাবার সময় সদরঘাট যেতে ঐ পথে গিয়েছি। তখন যে ড্রাইভার ছিলো, সে পথ ঘাট ভালোই চিনতো, আমি নিশ্চিন্তে গাড়ীতে বসেছিলাম, সে নিরাপদে দক্ষতার সাথে দ্রুততম সময়ে গন্তব্যে পৌঁছে দিয়েছিলো। এবারে আমার ড্রাইভার নতুন, পথঘাট তেমন চেনে না। তাই আমাকেই দিক নির্দেশনা দিয়ে নিয়ে যেতে হচ্ছিলো। যদিও ঢাকাতেই মানুষ হয়েছি, তথাপি ঐ অঞ্চলে আমার যাতায়াত একদম কম ছিলো বিধায় পথঘাট ঠিকমত চিনতে পারবো কিনা, সে ব্যাপারে একটু সন্দিগ্ধ ছিলাম। আর তা ছাড়া যে জ্যাম! এখন আবার হঠাৎ হঠাৎ করে মাঝে মাঝে কোন কোন রাস্তাকে ওয়ান ওয়ে ঘোষণা করা হয়, সেটা নিয়েও একটা চিন্তা ছিলো। যাই হোক, গোলাপ শাহ মাজার পর্যন্ত ঠিকমতই গাইড করে নিয়ে গেলাম। তারপর গাড়ীর কাঁচ নামিয়ে এক রিক্সাওয়ালাকে জিজ্ঞেস করে নিলাম, ঠিক রাস্তায় আছি কিনা। সে জানালো ঠিকই আছি, কিন্তু চলতে চলতে সে আরও কিছু বললো যা ঠিকমত শুনতে পারিনি, তাই বুঝতেও পারিনি।
একটু পেছনে তাকিয়ে এক সময় লক্ষ্য করলাম, এক চিকণ চাকণ ভ্যানওয়ালা যুবক তার খালি ভ্যানটাকে জ্যামের মধ্যেও সাপের মত আঁকাবাকা পথে দ্রুত চালিয়ে পরম দক্ষতার সাথে জ্যাম মোকাবিলা করে এগিয়ে আসছে। আমার পাশ দিয়ে যাবার সময় আমি তার দৃষ্টি আকর্ষণ করলাম। একটু বিরক্তির সাথে সে কিছুটা শ্লথ হয়ে চোখের ইশারায় জিজ্ঞাসা করলো, “কী অইছে?” আমি তাকে বললাম, “বাঙলাবাজারে যাবো। কিভাবে কোন পথে যাবো?” সে এক নিঃশ্বাসে অনেক কথা বলে গেল, যার অর্ধেক আমি স্মরণে রাখলাম আর এগোতে থাকলাম। মনে মনে সাব্যস্ত করলাম, বাকী অর্ধেকটা পরে আবার কাউকে জিজ্ঞাসা করে জেনে নিব। আমার ড্রাইভারের একটা মুদ্রা দোষ হলো, রাস্তায় কখনো যদি কেউ তাকে বলে, একটু সামনে গিয়ে বামে যাবেন বা ডানে যাবেন, সে এগিয়ে যেতে যেতে ডান বা বামের রাস্তাটা পার হয়ে যাবার পরেই বলবে, মনে হয় ডানে (বা বামে) যাওয়া দরকার ছিল। অর্থাৎ হয় তখন চরম রিস্ক নিয়ে পেছনে গাড়ী চালানো, নইলে বহুদূরে গিয়ে ডবল ইউ টার্ন নিয়ে ফিরে আসা, যার মানে অন্ততঃপক্ষে আধা ঘন্টা সময়ের অপচয়। এদিকে প্রকাশক বারে বারে ফোন করে খোঁজ নিচ্ছিলেন আমি কতদূরে আছি, কেননা আমার কাছ থেকে কাজটা বুঝে নিয়ে তাকে আবার এই পথেই বইমেলায় আসতে হবে, প্রধানমন্ত্রী আসার অন্ততঃ দুই ঘন্টা আগে। এই টেনশনে ড্রাইভার যাতে কোনমতেই পথ ফেলে না যায় সে ব্যাপারে আমি তাকে সতর্ক করছিলাম, আর নিজেও সতর্ক ছিলাম। পরের সিগনাল বাতি একটু দূরে থাকতেই আমি আবার কাঁচ নামিয়ে আরেকজন রিক্সাওয়ালা্র কাছে পথের নির্দেশনা চাইলাম। হঠাৎ শুনি সেই ভ্যানওয়ালা কানের কাছে এসে বলছে, “আবার জিগায়! য্যামনে কইয়া দিলাম, ত্যামনেই তো যাইবার পারতেন”! এর পরে সে ভ্যানটাকে সুকৌশলে আমার গাড়ীর সামনে নিয়ে এলো আর নির্দেশ দিলো, “আমার পিছে আহেন”! বাকী পথটুকু সে আমাকে প্রায় সেভাবেই এস্কর্ট করে নিয়ে এলো, যেভাবে রাষ্ট্রপতির মটরকেড পাইলট ভেহিক্যাল এস্কর্ট করে নিয়ে যায়। অনেক ডান বামের পর সে একটু সাইড হয়ে বললো, “এ্যলা নাক বরাবর যান। সামনে একটা চৌ্রাস্তায় ওভারব্রীজ পাইবেন, ঐহানে কাউরে জিগাইয়া লইয়েন। ভালা থাইক্যেন”। এই বলে সে একটা গলিতে ঢুকে গেলো, আমাকে ধন্যবাদ জ্ঞাপনের কোন অবকাশ না দিয়েই।
কাজ সেরে ফেরার পথে শহীদ মিনারের উল্টোদিকে ইউনিভার্সিটি মেডিকেল সেন্টারে গিয়ে একজনের সাথে দেখা করার কথা ছিল, তাই দেখা করলাম। কিন্তু ততক্ষণে ঐ এলাকায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বইমেলায় আগমন উপলক্ষে ভীষণ অরাজক অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে, কেউ কোন নিয়ম শৃঙ্খ্লা না মানায় ভয়ঙ্কর জ্যামের সৃষ্টি হয়। একটু বেখেয়াল হয়েছিলাম, এর মধ্যে দেখি ড্রাইভার জানি কোন এক অচেনা রাস্তায় নিয়ে এসেছে। পথে দন্ডায়মান এক বন্দুকধারী পুলিশকে জিজ্ঞেস করলাম নীলক্ষেত ফাঁড়িটা ঐ পথে পড়বে কিনা। নীলক্ষেত ফাঁড়ি পর্যন্ত যেতে পারলে বাকী পথটা আমার ড্রাইভারের চেনা। কিন্তু পুলিশের কথা শুনে মনে হলো, সে সেখানে আগন্তুক, পথ ঘাট মোটেই চেনেনা। অগত্যা এগোতে থাকলাম। কিছুদূর এগিয়ে ফুটপাথ ধরে হাঁটতে থাকা এক বয়স্ক ব্যক্তিকে দেখে গাড়ী থামাতে বললাম। সাফারী পরিহিত মেহেদী রাঙানো লাল শ্মশ্রুধারী ঐ ব্যক্তিকে সালাম জানিয়ে একই কথা জিজ্ঞস করলাম। উনি একগাল হেসে জানালেন, আমরা উল্টো পথে চলছিলাম। তারপর উনি এমন সুন্দর করে বলে দিলেন যে আমি নিমেষেই পথ চিনে গেলাম। তবু উনি নিশ্চিত হবার জন্য আমাকে বলতে বললেন, আমি কী বুঝেছি। তাড়াহুড়া থাকলেও, আমি তাঁর আগ্রহ দেখে পথের বয়ান দিলাম, তিনি পুনরায় এক গাল হেসে বললেন, “হ্যাঁ, আপনি ঠিকই বুঝেছেন। আপনি লক্ষ্যস্থলে পৌঁছতে না পারলে আমি সওয়াব থেকে বঞ্চিত হ’তাম। পথহারা পথিককে পথ দেখানো ভীষণ সওয়াবের কাজ”।
ফেরার পথে ভাবছিলাম, এরাই আমাদের আমজনতা, এরা আমাদের চেয়ে অনেক ভালো মানুষ। আর এরা, অর্থাৎ দেশের এই গড় মানুষগুলো এত ভালো বলেই দেশটা এত প্রতিকূলতার মাঝ দিয়েও এগিয়ে যাচ্ছে। এদের কারণেই দেশটা এত দ্রুত স্বাধীন হতে পেরেছিলো। দেশের এই সহজ সরল আমজনতাকে নিয়ে আমি অত্যন্ত গর্ব বোধ করি।
ঢাকা
০২ ফেব্রুয়ারী ২০১৬
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
২| ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ভোর ৪:৪১
ফেরদৌসা রুহী বলেছেন: ফেরার পথে ভাবছিলাম, এরাই আমাদের আমজনতা, এরা আমাদের চেয়ে অনেক ভালো মানুষ। আর এরা, অর্থাৎ দেশের এই গড় মানুষগুলো এত ভালো বলেই দেশটা এত প্রতিকূলতার মাঝ দিয়েও এগিয়ে যাচ্ছে। এদের কারণেই দেশটা এত দ্রুত স্বাধীন হতে পেরেছিলো। দেশের এই সহজ সরল আমজনতাকে নিয়ে আমি অত্যন্ত গর্ব বোধ করি।
হুম। আমজতাই আমাদের কাজে লাগে।
২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:০৭
খায়রুল আহসান বলেছেন: ঠিকই বলেছেন, ফেরদৌসা রুহী।
মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ।
৩| ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১০:৫৩
মোঃ সাইফুল্লাহ শামীম বলেছেন: শেষের কথাগুলো বেশ ভালো লাগলো। নিরন্তর শুভকামনা।
২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:০৮
খায়রুল আহসান বলেছেন: মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ, মোঃ সাইফুল্লাহ শামীম। আপনার জন্যেও রইলো অনেক শুভেচ্ছা......
৪| ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১১:৫৭
ডি মুন বলেছেন: আমাদের দেশের সাধারণ জনগণের মন-মানসিকতা এখনও মোটামুটি ভালোই আছে। তারা একে অপরের বিপদের সাহায্য করে কিংবা সাহায্য করার চেষ্টাটুকু করে। আমরা শিক্ষিত ভদ্রলোকরা যেখানে কাউকে সাহায্য করার আগে সাতপাঁচ ভাবি, নিজের কোনো স্বার্থ আছে কিনা দেখি - সেখানে তারা ব্যতিক্রম।
২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:১০
খায়রুল আহসান বলেছেন: শতভাগ সহমত, ডি মুন। ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা......
৫| ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১:৩৯
প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: সত্যি বলেছেন।
২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:৪১
খায়রুল আহসান বলেছেন: মন্তব্যে প্রীত হ'লাম। অনেক ধন্যবাদ আর শুভেচ্ছা, প্রফেসর শঙ্কু।
৬| ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৩:৪৮
কল্লোল পথিক বলেছেন: ফেরার পথে ভাবছিলাম, এরাই আমাদের আমজনতা, এরা আমাদের চেয়ে অনেক ভালো মানুষ। আর এরা, অর্থাৎ দেশের এই গড় মানুষগুলো এত ভালো বলেই দেশটা এত প্রতিকূলতার মাঝ দিয়েও এগিয়ে যাচ্ছে। এদের কারণেই দেশটা এত দ্রুত স্বাধীন হতে পেরেছিলো। দেশের এই সহজ সরল আমজনতাকে নিয়ে আমি অত্যন্ত গর্ব বোধ করি।
কথাগুলো বেশ ভালো লাগলো।
২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:৪৩
খায়রুল আহসান বলেছেন: এ কথাগুলোই লেখাটার সারসংক্ষেপ। আপনার ভালো লেগেছে জেনে খুব খুশী হ'লাম।
ধন্যবাদ আর শুভেচ্ছা, কল্লোল পথিক।
৭| ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:২৪
শাহাদাত হোসেন বলেছেন: এত এত খারাপ মানুষের মাঝে কিছু ভালো মানুষ থাকার কারণে দুনিয়া এখনো ঠিকে আছে ।
২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:৪৫
খায়রুল আহসান বলেছেন: আমার মনে হয়, ভালো মানুষের সংখ্যা 'কিছু' নয়, তার চেয়ে অনেক বেশী।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ, shahadath hossain। ভালো থাকুন।
৮| ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:২৬
এম.এ.জি তালুকদার বলেছেন: কী দেখার কথা কী দেখছি,
কী শোনার কথা কী শুনছি,
ত্রিশ বছর পরেও মোরা স্বাধীনতাটাকে খুজছি।-
প্রিয় সিনিয়র,ছালাম নিবেন। দয়া করে আমার গরীবী ব্লগের আঙ্গিনায় একটি বারের জন্য এলে খুশি হবো। কিছুদিন ব্লগে অনুসন্ধান চালিয়ে হয়তো আপনার মতো কিছু লোককে বিরক্ত করেছি, সে জন্য আন্তরিকভাবে দু:খিত। আমি ব্লগে লিখতে আসি নাই,একটা ট্রেড প্রতিষ্ঠা করতে এসেছি। নিজস্ব ঠিকানার অবকাঠামোগত ভিত্তি প্রায় দাঁড় করিয়েছি। যেখানে বসে আমি বিনামুল্যে এক্সপোর্ট-ইমপোর্টের কারবার করবো। প্লিজ, আমার এই বিনামুল্যের তেজারতী কারবারটা আপনি একটু অডিট করে আমাকে রিপোর্ট দিয়ে বাধিত করবেন। আপনার শুভকামনায়।- ইতি
০১ লা মার্চ, ২০১৬ রাত ১০:০৪
খায়রুল আহসান বলেছেন: আপনার কথাটা আমি ঠিক বুঝতে পারিনি বলে দুঃখিত।
৯| ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১০:২১
অলওয়েজ ড্রিম বলেছেন: এই সহজ সরল জনতাই বাংলাদেশের শক্তি।
০১ লা মার্চ, ২০১৬ রাত ১১:০৪
খায়রুল আহসান বলেছেন: আপনি ঠিক বলেছেন। মন্তব্যের জন্যে ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা।
আপনার পুরনো লেখা "আগের গানই গাই" পড়ে এলাম। দেখে নেবেন।
১০| ০২ রা মার্চ, ২০১৬ ভোর ৫:২১
এম.এ.জি তালুকদার বলেছেন: কথাটি হলো- আমি আমার ব্লগে তুলে আনবো তাদের কথা যারা পরিচিত মানুষের ভীরে হারিয়ে গেছেন। সেই সমস্ত মেধা যাদের অনেক সম্ভাবনা ছিল,কিন্ত অজানা কারণে তাঁরা মানব সমাজে নিখোঁজ। আমার ব্লগ হতে যে কেউ এই হারিয়ে যাওয়া মানুষদের বিনামুল্যে জানতে পারবেন। এই আমার বিনামুল্যের তেজারতি।
০২ রা মার্চ, ২০১৬ সকাল ৯:৫৪
খায়রুল আহসান বলেছেন: ও আচ্ছা, ঠিক আছে। জেনে ভালো লাগলো। ব্যাখ্যার জন্য ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১| ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১:৪১
চাঁদগাজী বলেছেন:
জানা ব্যাপার স্যাপার, আপনি দেরীতে বুঝতেছেন।