নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
অবসরে আছি। কিছু কিছু লেখালেখির মাধ্যমে অবসর জীবনটাকে উপভোগ করার চেষ্টা করছি। কিছু সমাজকল্যানমূলক কর্মকান্ডেও জড়িত আছি। মাঝে মাঝে এদিক সেদিকে ভ্রমণেও বের হই। জীবনে কারো বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ করিনি, এখন তো করার প্রশ্নই আসে না। জীবন যা দিয়েছে, তার জন্য স্রষ্টার কাছে ভক্তিভরে কৃতজ্ঞতা জানাই। যা কিছু চেয়েও পাইনি, এখন বুঝি, তা পাবার কথা ছিলনা। তাই না পাওয়ার কোন বেদনা নেই।
আমি আজ অত্যন্ত ভারাক্রান্ত হৃদয়ে আমার এই লেখার পাঠকদের জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি যে লেঃ কর্নেল এস এম আবু রেজা (অবঃ), আজ দুপুর ০১-৪০ ঘটিকায় ইন্তেকাল করেছেন। আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের দরবারে আরজ করছি, তিনি যেন মরহুমের জীবনের ছোট বড় সকল গুনাহ মাফ করে দেন, তার জীবনের সকল নেক আমল এবং নেক নিয়তসমূহকে কবুল করে নেন, তার শোক সন্তপ্ত পরিবারের সহায় হন এবং তাকে জান্নাত নসীব করেন। তার পুরনো একটি ও সাম্প্রতিক দুটো ছবি সংযোগ করলাম। সাম্প্রতিক ছবি দুটো সিএমএইচে গত ১০-৩-২০১৬ তারিখে তোলা।
মৃত্যুর ঠিক ৪৮ ঘন্টা আগেও আমি কিছুক্ষণ তার হাত ধরে তার শয্যাপাশে দাঁড়িয়ে ছিলাম। উনি তখন ঘুমের ঔষধের প্রভাবে আধো ঘুমে ছিলেন। তার চুলগুলো পরিপাটি করে আঁচড়ানো ছিলো। ফর্সা মুখটিতে তার দু’দিন আগে ঘটে যাওয়া হার্ট এটাকের কষ্টের কোন ছাপ ছিলনা, ছিলো একটা প্রশান্তির ছায়া। তিনি কয়েকবার চোখ দুটো খুলে আমার দিকে তাকিয়ে কিছু একটা বলার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তার কথা বলার শক্তিও ছিলনা, আবার নিষেধও ছিল। তাই আমি তাকে আর কিছু জিজ্ঞেস না করে ইশারায় ঘুমাতে বললাম। উনি চোখ বন্ধ করছিলেন, আবার খুলছিলেন। তার এক্সপ্রেশন দেখে বুঝলাম, তিনি আমাকে ‘থ্যাঙ্ক ইউ’ বলতে চাচ্ছেন। ইতোমধ্যে তার লাঞ্চ আসায় তাকে লাঞ্চ করার সুযোগ দিয়ে আমি আস্তে আস্তে তার কাছ থেকে বিদায় না নিয়েই চলে এলাম। হায়, তখন কে জানতো যে এটাই হবে আমাদের শেষ চাক্ষুষ দেখা! এখন সেটা ভেবে আফসোস হচ্ছে। আমি জানি তার কাছে বিদায় নিতে চাইলে তিনি বলতেন, “স্যার, দোয়া করবেন”। এর আগের দু’বারে তাকে দেখে চলে আসার সময় তার কাছ থেকে বিদায় নিয়েই এসেছিলাম। তখন তিনি একথাই বলেছিলেন।
আজ বিকেল সাড়ে তিনটার সময় সেলফোনে এক ক্ষুদে বার্তায় তার মৃত্যু সংবাদ পেয়ে চমকে উঠলাম। কারণ গত পরশুদিনও তাকে দেখে আমার একবারও মনে হয়নি যে তিনি মৃত্যুপথযাত্রী। বার্তায় বলা হয়েছে তার জানাজার নামায অনুষ্ঠিত হবে আজই বাদ আসর এবং দাফন হবে তার পরপরই। বুঝলাম, তার অন্তিম যাত্রার সব আয়োজন খুব দ্রুতই সম্পন্ন করা হয়েছে/হচ্ছে। আমাকেও এই দুই অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার জন্য খুব দ্রুতই তৈ্রী হতে হলো। জানাযায় তার অনেক বন্ধু ও শুভানুধ্যায়ীর সাথে দেখা হলো। সবাই শোকাহত। মাত্র ৫৮ বছর বয়সে তিনি চলে গেলেন। জানাজার আগে তার ছেলে শোকের প্রতীক একটা কালো পাঞ্জাবী পরিহিত মেজর এস এম হাসিব আজিজ অতি সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখলেন। তাকে খুব শান্ত ও সৌ্ম্য (কাম এন্ড কম্পোজড) দেখাচ্ছিলো। নামাজ শেষে বনানী কবরস্থানের দিকে রওনা হলাম। জ্যাম ঠেলে কোন রকমে সেখানে পৌঁছলাম। তার ছেলে সবার আগে কবরে নেমে গেলেন, তারপর তার দুইজন বন্ধু। একটি চৌকষ ক্ষুদ্র সামরিক দল তাকে ‘মরণোত্তর সশস্ত্র সালাম’ বা ‘গার্ড অব অনার’ দিল। যারা কবরে নেমেছিলেন, তারা উঠে এলেন। এবারে গোর খোদকগণের পালা। তারা একে একে বাঁশদন্ড আর চাটাই বিছাতে লাগলো। তারপর আমরা একে একে মাটির গুড়া ও দলা হাতে নিয়ে ভালোবাসা ও শ্রদ্ধাভরে তার কবর ঢেকে দিলাম আর মাওলানা সাহেবের সাথে সুর মিলিয়ে বলতে থাকলাম, “মিনহা খালাক নাকুম, ওয়া ফিহা নুয়িদুকুম, ওয়া মিনহা নুখরিজুকুম, তা’রাতান উখরা” - "মাটি দিয়ে আমি সৃষ্টি করেছি, এই মাটিতেই আবার ফিরিয়ে নেব, এই মাটি থেকেই আবার আমি তুলে আনব।“ (সূরা ত্বাহা :২০ :৫৫)
মেজর হাসিবের জন্য খুব ব্যথিত বোধ করছি। তিনিও তার পিতার মত অত্যন্ত সুদর্শন। বিষন্নতার ছায়া যদিও তার সুন্দর মুখটাকে মলিন করে দিয়েছিল, যা খুবই স্বাভাবিক, এর মাঝেও তিনি নিজেকে অত্যন্ত কম্পোজড রেখেছিলেন। আমি যে ক'দিন সিএমএইচে তার বাবাকে দেখতে গিয়েছি, তাকে দেখেছি অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে তার অসুস্থ বাবার সেবা শুশ্রূষা করতে। আল্লাহ তাকে উত্তম বিনিময় দান করুন!
মাত্র পরশুদিন যার শয্যাপাশে হাত ধরে দাঁড়িয়েছিলাম, তিনি এখন কবরস্থ- এক নবযাত্রার মোসাফির।
ঢাকা
১২ এপ্রিল ২০১৬
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
সার্ভিসে থাকাকালীন লেঃ কর্নেল এস এম আবু রেজা
লেখকের সাথে লেঃ কর্নেল এস এম আবু রেজা (অবঃ)। ছবিটি গত ১০-৩-২০১৬ তারিখে তার হাসপাতাল শয্যায় বসে তোলা হয়।
লেখকের সাথে লেঃ কর্নেল এস এম আবু রেজা (অবঃ) এবং তার একমাত্র ছেলে মেজর এস এম হাসিব আজিজ।
১৩ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১:০৭
খায়রুল আহসান বলেছেন: সমবেদনার জন্য ধন্যবাদ। শুভেচ্ছা জানবেন, সচেতনহ্যাপী।
২| ১৩ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১:০৭
প্রামানিক বলেছেন: তার আত্মার মাগফেরাত কামনা করি।
১৩ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১:০৯
খায়রুল আহসান বলেছেন: ধন্যবাদ প্রামানিক, শুভেচ্ছা নেবেন। বিশ্বাসই হতে চাচ্ছেনা এমন জলজ্যান্ত মানুষটা চলে গেছেন।
৩| ১৩ ই এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ৯:৩৬
কল্লোল আবেদীন বলেছেন: ইনলিল্লাহি ওয়া ইন্না রাজিয়ূন।
১৩ ই এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ৯:৪৪
খায়রুল আহসান বলেছেন: মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ, কল্লোল আবেদীন।
৪| ১৩ ই এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ১২:০৯
মানবী বলেছেন: ইন্নালিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাই হেরাজে'উন।
জীবনের শেষ প্রান্তে এসে ভদ্রলোক যে শারিরিক ও মানসিক কষ্টএর মাঝে ছিলেন তা থকে চিরতরে মুক্তি।
মহান সৃষ্টি কর্তা কর্নেল রেজার এই অনন্ত যাত্রা শান্তিময় করুন এই প্রার্থনা।
আপনার জন্য আন্তরিক সমবেদনা খায়রুল আহসান।
১৩ ই এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ১২:৫৮
খায়রুল আহসান বলেছেন: মরহুমের প্রতি আপনার এই আন্তরিক দোয়া এবং আমার প্রতি সমবেদনার জন্য আপনাকে জানাচ্ছি অনেক অনেক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা, মানবী।
দুঃখ লাগছে, শেষ সাক্ষাতের দিনে উনি আমাকে কী বলতে চাচ্ছিলেন, সেটা সম্পর্কে স্পষ্ট ও নিশ্চিত হতে না পারার জন্য। গতকাল ওনার ছেলে বললেন, উনি দোওয়া চাচ্ছিলেন। যদি তাই হয় তবে আমি সন্তুষ্ট। উনি আমার এবং আরও অনেক মানুষের দোওয়া নিয়ে গেছেন।
৫| ১৩ ই এপ্রিল, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:০৩
মাহমুদ০০৭ বলেছেন: ফেবুতে ছবি দেখেছিলাম । তখন জানতাম না মৃত্যুসংবাদ শুনতে হবে ।
আল্লাহ উনাকে জান্নাত নসীব করুক ।
১৩ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ৯:৩৬
খায়রুল আহসান বলেছেন: লেখাটা পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ, মাহমুদ০০৭। দুনিয়া থেকে একজন ভালো মানুষ চলে গেলেন।
আল্লাহ আপনার দোয়া কবুল করুন!
৬| ১৬ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ৯:২১
শামছুল ইসলাম বলেছেন: ইন্নালিল্লাহি ওইন্না ইলাইহি রাজিউন।
আপনি উনার জন্য যে দোওয়া করেছেন, তা যেন আল্লাহ কবুল করেন। আমীন।
কুরআন থেকে আমাদের অনেক কিছু শেখার আছেঃ
//"মাটি দিয়ে আমি সৃষ্টি করেছি, এই মাটিতেই আবার ফিরিয়ে নেব, এই মাটি থেকেই আবার আমি তুলে আনব।“ (সূরা ত্বাহা :২০ :৫৫)//
১৬ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ৯:৪৮
খায়রুল আহসান বলেছেন: লেখাটা পড়ে মন্তব্য করার জন্য অনেক ধন্যবাদ, শামছুল ইসলাম।
ভালো থাকুন, সব সময়।
©somewhere in net ltd.
১| ১৩ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১:০৫
সচেতনহ্যাপী বলেছেন: ইনলিল্লাহি ওয়া ইন্না রাজিয়ূন।। সমবেদনা রইলো।।