নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

একজন সুখী মানুষ, স্রষ্টার অপার ক্ষমা ও করুণাধন্য, তাই স্রষ্টার প্রতি শ্রদ্ধাবনত।

খায়রুল আহসান

অবসরে আছি। কিছু কিছু লেখালেখির মাধ্যমে অবসর জীবনটাকে উপভোগ করার চেষ্টা করছি। কিছু সমাজকল্যানমূলক কর্মকান্ডেও জড়িত আছি। মাঝে মাঝে এদিক সেদিকে ভ্রমণেও বের হই। জীবনে কারো বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ করিনি, এখন তো করার প্রশ্নই আসে না। জীবন যা দিয়েছে, তার জন্য স্রষ্টার কাছে ভক্তিভরে কৃতজ্ঞতা জানাই। যা কিছু চেয়েও পাইনি, এখন বুঝি, তা পাবার কথা ছিলনা। তাই না পাওয়ার কোন বেদনা নেই।

খায়রুল আহসান › বিস্তারিত পোস্টঃ

মায়ের কাছে প্রথম চিঠি

১৩ ই এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১২:০৪

Ex-Cadets Literary Society নামে একটি ফেসবুক গ্রুপ আছে, আমি যার সদস্য। এই গ্রুপে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারপ্রাপ্ত স্বনামধন্য লেখক ও এক্স-ক্যাডেট শাকুর মজিদ একটি পোস্টের মাধ্যমে জানিয়েছেন যে ক্যাডেট কলেজ ক্লাব লিঃ এবারের ‘মা দিবস’ উপলক্ষ্যে একটি ব্যতিক্রমী প্রকাশনার উদ্যোগ নিয়েছে। ‘মায়ের কাছে প্রথম চিঠি’ শীর্ষক এই সংকলনে ১৯৫৮ সাল থেকে শুরু করে চলতি সময় পর্যন্ত সকল স্তরের প্রতিনিধিত্বমূলক ক্যাডেটদের লেখা ‘মায়ের কাছে প্রথম চিঠি’ এ সংকলনে প্রকাশ হবে। তবে চিঠিটি সবাই লিখবে বর্তমান সময়ে, তাঁর স্মৃতি থেকে যে চিঠিটি লেখা হয়েছিল, বা লেখাই হয়নি, কিন্তু লেখা হতে পারতো, তা নিয়ে। প্রতিটি চিঠিতেই প্রত্যেক ক্যাডেট তাঁর পরিপ্রেক্ষিত থেকে প্রথম দিন কলেজে এসে তাঁর কী অনুভূতি হয়েছিলো, কিরূপ পরিস্থিতির শিকার হয়েছিলো এবং তাঁর ফেলে আসা গ্রাম বা শহরের পারিপার্শিকতা নিয়ে সে কী ভেবেছিলো তা প্রকাশ করবে।

উদ্যোগটি প্রশংসনীয়। ইচ্ছে হলো, আমিও একটি চিঠি লিখে পাঠিয়ে দেই। সে ইচ্ছে থেকেই আয়োজকদের সকল নিয়ম মেনে এ চিঠিটি লিখলাম।



মায়ের কাছে প্রথম চিঠি

০৮ জুলাই ১৯৬৭
রাত নয়টা
ফজলুল হক হাউস
এমসিসি

শ্রদ্ধেয়া আম্মা,

আমার সালাম নিবেন। আশাকরি আব্বা গতকাল আমাকে এখানে পৌঁছে দিয়ে ভালোভাবে বাসায় পৌঁছেছেন। আব্বা যখন গতকাল পড়ন্ত বিকেলে আমাদের কলেজ অডিটোরিয়ামে আমাকে রেখে ঢাকা ফিরে যাবার জন্য ধীর পদক্ষেপে কলেজের মেইন গেটের দিকে অগ্রসর হচ্ছিলেন, তখন পেছন থেকে ওনাকে দেখে আমার কান্না পাচ্ছিল। এমনিতেই আপনাদের সবাইকে রেখে এখানে আসার সময় অনেক কষ্টে কান্না চেপে রেখেছিলাম। কারণ তখন আমার সামনে আপনারা সবাই ছিলেন। কিন্তু গতকাল আব্বা যখন ফিরে যান, তখন আমার আশে পাশে চেনা পরিচিত কেউ ছিল না, যারা ছিল তারা সবাই অপরিচিত। তাই কান্না রোধ করার কোন চেষ্টাই করিনি।

একটু আগে ডিনার করে আসলাম। এখানে খাওয়া দাওয়া খুব ভালো, এ নিয়ে আপনি মোটেই চিন্তা করবেন না। একটু পরেই, দশটার সময় “লাইটস আউট” হবে। তখন সব লাইট নিভিয়ে দিয়ে সবাইকে ঘুমিয়ে পড়তে হবে। আমি আমাদের হাউসের দোতলায় একটি রুম পেয়েছি। এখানে আমরা এক রুমে মোট দশ জন থাকি। তার মধ্যে আটজন আমরা নতুন ক্যাডেট, আর দু’জন আমাদের দু’বছরের বড়, সিনিয়র ক্যাডেট। ওনাদের মধ্যে একজন রুম ক্যাপ্টেন, অপরজন এসিস্ট্যান্ট রুম ক্যাপ্টেন। ওনারা দু’জনই খুব ভালো, দু’জনের বাড়িই সিলেট জেলায়। গতকাল ওনারা আমাদেরকে এখানকার অনেক নিয়ম কানুন শিখিয়ে দিয়েছেন।

নতুন আটজনের মধ্যে পাঁচজন আমরা বাংলা মিডিয়াম থেকে এসেছি, তিনজন ইংলিশ মিডিয়ামে পড়তো। ঐ তিনজন অনেক বড়লোক, ওদের সবার গাড়ি আছে। ওরা যখন নিজেদের মধ্যে কথা বলে, তখন অনর্গল ইংরেজিতে বলে, যা আমি পারি না। তবে ওদের সব কথা আমি বুঝি। আশাকরি আমিও কিছুদিনের মধ্যেই ওদের মত ইংরেজিতে কথা বলতে পারবো, কারণ এখানে ক্লাসে পাঠদান হবে ইংরেজি ভাষায়। ইতোমধ্যে পাঠ্যবই পেয়ে গেছি, বাংলা ছাড়া সব বই ইংরেজিতে লেখা। কয়েকটা বই এর কিছু পৃষ্ঠা উল্টিয়ে দেখেছি, আমার বুঝতে কোন অসুবিধা হয় নাই। ইংরেজি পড়ুয়া আমার বন্ধুরাও খুব ভালো। ওদেরই একজন গতকাল আমাকে টাই এর নট বাঁধা শিখিয়েছে, যা আমি আগে পারতাম না। আজ টেইলর এসে আমাদেরকে খাকি ইউনিফর্ম এবং অন্যান্য কিছু পোশাক দিয়ে গেছে, যা আগামিকাল থেকে আমাদের পরতে হবে।

গতকাল দুপুরে আপনি আমার জন্য পোলাও কোর্মা রেঁধেছিলেন। আমার আর যা যা প্রিয় খাবার, তার অধিকাংশই মেন্যুতে ছিল। টেবিলে খাবারগুলো দেখে আমি খুব খুশি হয়েছিলাম। কিন্তু খেতে বসে দেখি, আমার সে পছন্দের খাবারগুলো কিছুতেই গলা দিয়ে নামছে না। ঢোক গিলে গিলে আর পানি খেয়ে খেয়ে কোনরকমে খাওয়া শেষ করেছিলাম। আমার খুব খারাপ লাগছিল আপনাদের জন্য। এখন আষাঢ় মাস, এখানে মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে। একটু আগে আমার জানালার খুব কাছে একটা শিয়াল এসে ‘হুক্কাহুয়া’ ডাকছিল। এখানে রাত হলেই অনেক শিয়াল ডাকাডাকি করে। একটু পরেই সব লাইট নিভিয়ে শুয়ে পড়তে হবে। তাই আজকের মত এখানেই শেষ করছি। আমার জন্য দোয়া করবেন। আব্বাকে আমার সালাম জানাবেন।


ইতি,
আপনার স্নেহের, …..
(পুনর্লিখিত, ১৩ এপ্রিল ২০২৫)

মন্তব্য ১৮ টি রেটিং +১১/-০

মন্তব্য (১৮) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৩

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:



এমসিসি দিয়ে কি মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজকে বুঝানো হয়েছে?

১৩ ই এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪

খায়রুল আহসান বলেছেন: জ্বী।

২| ১৩ ই এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৫

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:



আপনাকে র‌্যাগ করে ডলা দেয়া হয়নি?

১৩ ই এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১২:৫০

খায়রুল আহসান বলেছেন: ওটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া, অসুবিধা হয়নি। তখন র‍্যাগিংটা অনেকটাই শিক্ষামূলক ছিল, অমানবিক পর্যায়ে যায়নি।

৩| ১৩ ই এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ২:৩১

মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন:
দারুণ স্মৃতিচারণমূলক লিখা। +++

১৩ ই এপ্রিল, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৩৮

খায়রুল আহসান বলেছেন: মন্তব্য এবং পোস্ট 'লাইক' করার জন্য অনেক ধন্যবাদ।

৪| ১৩ ই এপ্রিল, ২০২৫ বিকাল ৫:৩৫

জুল ভার্ন বলেছেন: চমৎকার! ❤️

১৪ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১২:০৯

খায়রুল আহসান বলেছেন: মন্তব্য এবং পোস্ট 'লাইক' করার জন্য অশেষ ধন্যবাদ।

৫| ১৩ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১০:৪৩

ঢাবিয়ান বলেছেন: খুব ভাল লাগল চিঠি পড়ে। আমার মায়ের কাছে আমার প্রথম চিঠি লেখা বিদেশে এসে। যে সময়ে এসেছিলাম তখন ইন্টারনেটের যুগ ছিল না।দশ ডলারের কলিং কার্ডে কয়েক মিনিট কথা বলা যেত। কেমন আছে বা আমি কেমন আছি এসব জিজ্ঞাশা করতেই সময় ফুরিয়ে যেত। তাই চিঠি লিখতাম। আপনার চিঠি পড়ে সেই সময়ের কথা মনে পড়ে গেল।

১৪ ই এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ৮:২২

খায়রুল আহসান বলেছেন: আমি এ যুগেও মনে করি, চিঠিই হচ্ছে বেস্ট কমিউনিকেশন মাধ্যম। মনের কথা একটি চিঠিতে যেভাবে মেলে ধরা যায়, আর কোন মাধ্যমে তেমন নয়। আর হাতে লেখা চিঠি হলে তো কোন কথাই নেই। পরিচিত হাতের লেখার সাথে পরিচিতজনের অদৃশ্য মুখাবয়ব ভেসে ওঠে।
মন্তব্য এবং পোস্ট 'লাইক' করার জন্য অনেক ধন্যবাদ।

৬| ১৪ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১২:৪৬

নীল-দর্পণ বলেছেন: খুব সুন্দর চিঠি। একটা বোকা বোকা প্রশ্ন করতে চাই (আশা করি কেউ দেখবে না :P ) , এই চিঠিটা কি সত্যিই ক্যাডেট কলেজে যাবার পরদিন লিখেছিলেন নাকি সেইদিনের স্মৃতি মনে করে লিখেছেন ?

নতুন বছরের শুভেচ্ছা । :)

১৪ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১০:৪৪

খায়রুল আহসান বলেছেন: আপনার উল্থাপিত প্রশ্নটি মোটেই "বোকা বোকা প্রশ্ন" নয়। অন্যত্র প্রকাশিত আমার এ পোস্টটা পড়ে অনেকেই মৌখিকভাবে আপনার মত আমাকে একই প্রশ্ন করেছেন। তার মানে এই যে প্রশ্নটি প্রাসঙ্গিক এবং স্বাভাবিক। তবে এর উত্তর হচ্ছেঃ

না, এই চিঠিটা সত্যি সত্যিই ক্যাডেট কলেজে যাবার পরদিনই লিখি নাই, তবে ছয়/সাতদিন পরে (প্রথম সপ্তাহান্তে) লিখেছিলাম। চিঠির কনটেন্ট এখানে যা যা উল্লেখিত হয়েছে, তার সবই ছিল। উপরন্তু আরও কিছু বিষয় ছিল, যেমন ভাইবোনদের খবর জানতে চেয়েছিলাম। পড়াশুনা সম্পর্কে আরও কিছু কথা উল্লেখ করেছিলাম, যেমন ক্লাসগুলো খুব এনজয় করছিলাম, সে কথা লিখেছিলাম। আয়োজকগণ যেহেতু কিছু কিছু নিয়ম বা শর্ত বেঁধে দিয়েছেন, সেগুলো মেনেই পোস্টটা লিখেছি এবং তা পোস্টে উল্লেখও করেছি। আয়োজকদের নির্দেশ ছিল, চিঠিটা আসলে যেদিনই লিখা হোক না কেন, তারিখটা যেন যোগদানের পরেরদিনেরটা হয়। হয়তো প্রথম দু'দিনের অনুভূতি অভিজ্ঞতাগুলো যেন মৌলিকভাবে ফুটে ওঠে, সেটাই তাদের উদ্দেশ্য ছিল। তাই আমিও এখানে প্রথম দুই/তিনদিনের স্মৃতি স্মরণ করেই পোস্টটা লিখেছি। তাছাড়া আয়োজকদের আরও নির্দেশ ছিল যে চিঠিটা এ-৪ সাইজের এক পৃষ্ঠায় স্বহস্তে লিখিত হতে হবে। কাজেই, পুরো মৌ্লিক কন্টেন্ট স্বাভাবিকভাবেই এ চিঠিতে স্থান পায় নাই।
আপনার প্রশ্নটির জন্য ধন্যবাদ। কারণ, আপনার এ প্রশ্নের কারণেই হয়তো আরও কিছু জিজ্ঞাসু পাঠক তাদের মনে জেগে ওঠা প্রশ্নের জবাব পেয়ে যাবেন।

৭| ১৪ ই এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ৯:১৫

রাজীব নুর বলেছেন: সেদিন ক্যাডেট কলেজ ক্লাবে গিয়েছিলাম।
দুপুরবেলা। দারুন খানাপিনার আয়োজন ছিলো।

১৫ ই এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ৮:৩১

খায়রুল আহসান বলেছেন: ধন্যবাদ।

৮| ১৪ ই এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ৯:১৯

সোনালি কাবিন বলেছেন: বাহ! কী মায়াময় চিঠি।

১৫ ই এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ১০:১০

খায়রুল আহসান বলেছেন: মন্তব্য এবং পোস্ট 'লাইক' করার জন্য অশেষ ধন্যবাদ। মন্তব্যে প্রীত ও প্রাণিত।

৯| ১৪ ই এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ১০:০৪

নতুন নকিব বলেছেন:



এই চিঠিটা শুধু একটা লেখা নয়, এটা সময়ের ভিতর দিয়ে হেঁটে আসা এক কিশোর হৃদয়ের কান্নাভেজা স্মৃতিচিহ্ন।
চোখ বুজলেই যেন দেখতে পাই—আধো আলোয় ডুবে থাকা কলেজ ভবনের বারান্দা, দূরে চলে যাওয়া বাবার ধীরে ধীরে হারিয়ে যাওয়া অবয়ব, আর একাকীত্বে মায়ের কথা মনে পড়ে যাওয়া সেই প্রথম রাত। আপনার শব্দচয়ন এতটা আন্তরিক ও জীবন্ত যে, মনে হয় যেন আমরাও সেই ফজলুল হক হাউসের রুমে ঢুকে পড়েছি।

বাংলা মিডিয়াম আর ইংরেজি মিডিয়ামের মাঝে দূরত্ব, টিফিন টেবিলে বসেও না খেতে পারা, টাই বাঁধতে না জানা ছোট ছোট অসহায় মুহূর্তগুলো এমনভাবে উঠে এসেছে, যা হয়তো প্রত্যেক বোর্ডিং স্কুলে পড়া সন্তানের হৃদয়ে আলোড়ন তোলে। তবু সবকিছুর মধ্যেও ফুটে উঠেছে শেখা, মানিয়ে নেওয়া, বড় হয়ে ওঠার যাত্রার সূচনাবিন্দু।

এই লেখা ‘মা’ শব্দটির সঙ্গে যুক্ত আত্মিক সংযোগের এক অনন্য দলিল। ক্যাডেট কলেজ ক্লাবের এই প্রয়াস শুধু ব্যতিক্রমী নয়, সংরক্ষণযোগ্যও। আপনাকে কৃতজ্ঞতা জানাই এমন একটি হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া চিঠি আমাদের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়ার জন্য।

১০| ১৪ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১১:০৯

মনিরা সুলতানা বলেছেন: কী আকুলতা লেখায় !!!
একটা সদ্য কৈশোর পেরুনো ছেলে যে কিনা পরিবারের সবাইকে ছেড়ে অন্য রকম নতুন এক পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়াতে যাচ্ছে। তার যে পরিবারের সবার কে ছেড়ে যেতে কষ্ট হচ্ছে সেটুকু উঠে এসছে।

চমৎকার ++

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.