নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

একজন সুখী মানুষ, স্রষ্টার অপার ক্ষমা ও করুণাধন্য, তাই স্রষ্টার প্রতি শ্রদ্ধাবনত।

খায়রুল আহসান

অবসরে আছি। কিছু কিছু লেখালেখির মাধ্যমে অবসর জীবনটাকে উপভোগ করার চেষ্টা করছি। কিছু সমাজকল্যানমূলক কর্মকান্ডেও জড়িত আছি। মাঝে মাঝে এদিক সেদিকে ভ্রমণেও বের হই। জীবনে কারো বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ করিনি, এখন তো করার প্রশ্নই আসে না। জীবন যা দিয়েছে, তার জন্য স্রষ্টার কাছে ভক্তিভরে কৃতজ্ঞতা জানাই। যা কিছু চেয়েও পাইনি, এখন বুঝি, তা পাবার কথা ছিলনা। তাই না পাওয়ার কোন বেদনা নেই।

খায়রুল আহসান › বিস্তারিত পোস্টঃ

স্মৃতিময় পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫ (১)

২৬ শে আগস্ট, ২০২৫ সকাল ৭:৪৯

আমার স্ত্রী গত বছর থেকে বেশ কিছুদিন ধরে পবিত্র হজ্জ্ব অথবা উমরাহ পালনের ইচ্ছে প্রকাশ করে আসছিলেন। জানুয়ারি’২৫ এর শেষ সপ্তাহে এক রাতে আমাদের ছোট ছেলে তার অফিসের কলীগদের সাথে এক সমাবেশ শেষে বাড়ি ফিরে ওর মাকে জানালো যে তাদের একজন কলীগ সম্প্রতি উমরাহ পালন করে এসেছেন। তিনি যে এজেন্সি’র মাধ্যমে গিয়েছিলেন, তাদের কথা খুব ভালো বলেছেন। সে জানালো যে সেও তার মায়ের সাথে উমরাহ পালন করতে যেতে ইচ্ছুক। এই বলে সে সেই এজেন্সী’র কন্ট্যাক্ট নম্বরটা তার মাকে দেয়। আমার স্ত্রী পরেরদিন সেই এজেন্সীর সাথে কন্ট্যাক্ট করেন। এজেন্সীর নাম ছিল “স্কাই গেস্ট ট্রাভেলস” এবং কন্ট্যাক্ট পার্সন এর নাম আবদুল্লাহ আল মাহবুব শাহিন।

জনাব শাহিন জানালেন যে আর কিছুদিন পরে রামাদান শুরু হবে, সে কারণে খরচ স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি পড়বে। তাই আমরা ঈদের পরে উমরাহ পালনের কথা চিন্তা করে দেখতে পারি। তাতে আর্থিক কিছু সাশ্রয় হবে। সেন্সিবল প্রস্তাব, তাই আমরা ‘তথাস্তু’ বলে তাতেই রাজী হয়ে গেলাম। তার কিছুদিন পরে হঠাৎ করেই জনাব শাহিন একদিন ফোন করে জানতে চাইলেন যে আমরা কয়জন যাবো। আমরা জানালাম তিনজন (আমি সহ)। তিনি জানালেন যে পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫ পালনের জন্য তার কাছে ঠিক তিন জনের একটি স্লট খালি আছে। অস্ট্রেলিয়া থেকে তিনজনের একটি দল কোন কারণে আসতে পারছে না। আমরা উমরাহ এর পরিবর্তে হজ্জ্ব পালনের জন্য প্রস্তুত কিনা। মনের মাঝে একটি ঐশ্বরিক আশ্বস্ততা অনুভব করতে শুরু করলাম, “বান্দা চাইলে আমি তার কাজ অনেক সহজ করে দেই!” এই বাণীর অনুরণনে আমরা মুহূর্তমাত্র দেরি না করে, দ্বিতীয়বার চিন্তা না করেই ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি। আমরা প্রস্তুত বলে পরেরদিন তাকে জানালাম। নিয়্যত ও কথাবার্তা পাকাপাকি করে আমরা আল্লাহ রাব্বুল ‘আ-লামীন এর ইচ্ছের কাছে নিজেদেরকে সোপর্দ করলাম। মনে স্থির বিশ্বাস জন্মালো, এর পরে আর কোথাও ঠেকতে হবে না।

হলোও ঠিক তাই। ত্বরিত গতিতে হজ্জ্ব সংক্রান্ত সব কাজ বিনা বাধায় সম্পন্ন হতে থাকলো। ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ তারিখে সন্ধ্যার পর আমরা মিরপুরস্থ এজেন্সী অফিসে উপস্থিত হয়ে জনাব শাহিন এর সাথে দেখা করলাম। প্রথম সাক্ষাতেই তাকে ভালো লাগল এবং খুব সহায়ক মনে হলো। উনি আমাদেরকে ২৪ মে ২০২৫ থেকে ২৩ জুন ২০২৫ পর্যন্ত ৩০ দিনের একটি প্যাকেজ প্রোগ্রাম সম্পর্কে মোটামুটি একটা ধারণা দিলেন। আমাদের ছেলে একসাথে এতদিন ছুটি পাবে না, তবে ঈদের ছুটি মিলিয়ে ১৪ জুন পর্যন্ত ছুটি পাবে। তাই তাকে আমাদের চেয়ে ৯ দিন আগে ফিরে আসতে হবে। ফলে তার জন্য রিটার্ন টিকেটটা প্যাকেজের বাইরে আলাদা করে করতে হবে। হাতে সময় কম ছিল বলে ঐ রাতেই জনাব শাহিন এর অফিসে বসে ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটে তার রিটার্ন টিকেট ক্রয় করা হলো। তিনি “Hajj-2025 WhatsApp Group” এ আমাদেরকে অন্তর্ভুক্ত করে নিলেন। এতে কানেক্টিভিটি বেড়ে গেল, ইন্সট্রাকশনস অনুসরণ করা সহজ হয়ে গেল এবং সেই সাথে পারস্পরিক আস্থাও বাড়তে থাকলো।

০৬ মার্চ ২০২৫ তারিখে আমরা জনাব শাহিন এর নিকট আমাদের পাসপোর্টগুলো হস্তান্তর করলাম। টাকা পয়সার লেনদেনও অনতিবিলম্বে পরিশোধ করলাম। বায়োমেট্রিক্স আপলোড করা হলো। অন্যান্য ডকুমেন্টস গোছানো শুরু করলাম। সবকিছু সুষ্ঠুভাবে এগোতে থাকলো। আল্লাহ রাব্বুল ‘আ-লামীন এর দয়া ও রহমত কামনার্থে আমি রমজানের শেষ দশদিন আমাদের এলাকার মাসজিদে ই’তিক্বাফ এ বসে গেলাম। ঈদুল ফিতর এর পর থেকে বাকি প্রস্তুতিগুলো দ্রুত সম্পন্ন করতে থাকলাম। আমরা দু’জন এপ্রিলের মাঝামাঝি এবং আমাদের ছেলে এপ্রিলের ২৭ তারিখে হজ্জ্ব ভ্যাক্সিনেশন সম্পন্ন করার পর আমরা সনদপত্র আপলোড করে ফেললাম। নানাদিক থেকে বিভিন্ন সমাজসেবী ও ধর্মীয় সংগঠন সুষ্ঠুভাবে হজ্জ্ব সম্পন্ন করার নিমিত্ত ব্রীফিং অনুষ্ঠানে আমাদেরকে আমন্ত্রণ জানাতে থাকলো। সেখানে বিনামূল্যে প্রয়োজনীয় কিছু বুকলেট এবং নিত্য ব্যবহার্য সামগ্রী দেয়া হলো। আমাদের এজেন্সীও বারিধারা ডিওএইচএস এর কনভেনশন হলে “360 Degree Support” নামের একটি সংগঠন কর্তৃক আয়োজিত দিনব্যাপী সেমিনারে (অন পেমেন্ট লাঞ্চ এর ব্যবস্থাসহ) আমাদেরকে WhatsApp মেসেজ এর মাধ্যমে আমন্ত্রণ জানালো। আমরা তিনজনই সেদিন সেখানে উপস্থিত থেকে মূল্যবান আলোচনা থেকে উপকৃ্ত হয়েছিলাম।

০৯ মে ২০২৫ তারিখ অপরাহ্নে মিরপুর ডিওএইচএস এ আমাদের একজন সহযাত্রীর বাসার বেজমেন্টে জনাব শাহিন কর্তৃক তার মাধ্যমে হজ্জ্ব গমনেচ্ছু সহযাত্রীদের জন্য একটি মিলনমেলা-কাম- আনুষ্ঠানিক ব্রীফিং অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সেখানে সকল হজ্জ্বযাত্রীকে একটি করে স্যুটকেস (লাগেজ) এবং কিছু প্রয়োজনীয় গিফট আইটেম প্রদান করা হয় (যেমন হাল্কা ব্যাকপ্যাক, ছাতা, বুকলেটস ইত্যাদি)। সেদিন যাদের সাথে পরিচিত হয়েছিলাম বলে মনে পড়ে, তাদের মধ্যে রয়েছে জনাব ফুয়াদ তানভির, জনাব তাজ, জনাব সরোয়ার (খুব সম্ভবতঃ) এবং দূর থেকে দেখা জনাব মাহবুব ও মিসেস মাহবুব। সেদিন আমাদের হাতে টিকেট ও ভিসাসহ পাসপোর্টও দিয়ে দেয়া হয়।

অবশেষে দেখতে দেখতে চলে এলো সেই কাঙ্খিত মুহূর্তটি। ২৪ মে ২০২৫ তারিখে বাসায় আউয়াল ওয়াক্তে ফজরের নামায পড়েই আমরা হজ্জ্ব ক্যাম্পের উদ্দেশ্যে রওনা হ’লাম। সেখানে পৌঁছেই আমি জনাব শাহিনকে ফোন দিলাম। উনি সাথে সাথেই ছুটে এলেন। তাকে দেখে মনে হলো যে তিনি খুবই পেরেশানিতে আছেন। কন্টিনুয়াস ফোন এ্যাটেন্ড করছেন। এমতাবস্থায় আমাদেরকে মৌখিকভাবে কিছু করণীয় সম্পর্কে বলে তিনি আমাদেরকে বললেন তাকে অনুসরণ করতে। আমরা ট্রলীতে মালপত্র তুলে তার পিছে পিছে গেলাম। প্রবেশ পথে কিছু তরুণ ছাত্র ছাত্রী হজ্জ্ব ভলান্টিয়ার আমাদের ফোন নিয়ে তাতে একটি অতি প্রয়োজনীয় এ্যাপ আপলোড করে দিল। তারা অত্যন্ত আন্তরিক ছিল এবং তাদের কাজ সম্বন্ধে ভালো জানতো। আমি তাদের কাজ দেখে ইমপ্রেসড হ’লাম। এ্যাপটি খুবই দরকারি ও উপকারী ছিল।

এর পর হজ্জ্ব ক্যাম্পেই শুরু হলো চেক-ইন এবং ইমিগ্রেশন এর কাজ। সব ব্যবস্থাবলী হাজ্জ্বীবান্ধব ছিল, ফলে কোথাও কোন অসুবিধে হয় নাই। এজন্য আমাদের হজ্জ্ব মন্ত্রণালয় অবশ্যই সাধুবাদ প্রাপ্য। চেক ইন এর সময় লাইনে দাঁড়ানো থাকা কালে জনাব ফুয়াদ তানভির, জনাব সরোয়ার, জনাব নুরুজ্জামান প্রমুখের সাথে টুকটাক আলাপচারিতা হয়। চেক ইন এর পর বাসে করে আমাদেরকে বিমানবন্দর লাউঞ্জে নেয়া হলো। সেখানেই সম্পন্ন করা হলো জেদ্দা বিমান বন্দরের ইমিগ্রেশন এর কাজ। বাসে ওঠার সময় লাইনে আমার সামনে ছিলেন জনাব সরোয়ার এবং তার স্ত্রী জেনি। বাসে প্রবেশের সময় জেনি’র হাত থেকে তার সেলফোনটি নিচে পড়ে যায়। আমি তার দৃষ্টি আকর্ষণ করে ফোনটি তুলে তার হাতে দিলাম। তার স্বামী তার দিকে তাকিয়ে একটি মুচকি হাসি দিলেন।

জেদ্দা বিমান বন্দরের ইমিগ্রেশন এর কাজটি ঢাকা বিমান বন্দরে করে ফেলার কারণে হাজ্জ্বীদের অনেক কষ্টের লাঘব হয়ে যায়। এটাও বাংলাদেশ এবং সৌদি সরকারের একটি প্রশংসনীয় কাজ। প্রায় সময়মতই সৌদিয়া এয়ারলাইন্সের বিমানটি আকাশে পাখা মেলে ওড়ার পর আমি গভীর প্রশান্তির একটি শ্বাস নিয়ে আল্লাহতা’লার শুকর গুজার করতে করতে চোখ বুঁজলাম। কিছুক্ষণ পরেই একজন কেবিন ক্রু'র ডাকাডাকিতে ঘুম ভাঙলো।


ঢাকা
২৫ অগাস্ট ২০২৫
শব্দ সংখ্যাঃ ৯৭১

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে আগস্ট, ২০২৫ সকাল ৮:৫৫

জেনারেশন একাত্তর বলেছেন:



করতে চেয়েছিলেন ওমরাহ; কিন্তু আপনাদের জন্য আল্লাহের প্ল্যান ছিলো হজ্জ্ব। আল্লাহ উনার ভালো বান্দাদের জন্য বিশেষ ব্যবস্হা নেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.