নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
(ছবি-ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত)
বাংলা নববর্ষ বরণ এখন বড়ো উৎসবে পরিণত হয়েছে। দিনদিন তার উজ্জ্বলতা বাড়ছে। বড়ো ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো এর পৃষ্ঠপোষকতাও করছে। বর্তমানে যে ধারায় বাংলা নববর্ষ পালিত হচ্ছে তার সূচনা খুব বেশী আগে হয়নি। ১৯৬৭ সাল থেকে ছায়ানট রমনার বটমূলে বর্ষবরণের অনুষ্ঠানটি করছে। আর চারুকলার শোভাযাত্রাটি শুরু হয়েছে ১৯৮৯ সাল থেকে। এই কয় বছরেই তা এভাবে বেড়ে উঠেছে। এই উদযাপনের রীতিটি একেবারেই নাগরিক। পান্তা-ইলিশ খেয়ে একটা গ্রামীন ভাব আনার চেষ্টা থাকলেও তার সাথে গ্রামের কোন সংযোগ নেই। গ্রামের লোকেরা নতুন বছরে ভালো খাবার খান। তাঁরা মনে করেন, নববর্ষের দিনে ভালো খেলে সারা বছর ভালো ভালো খাবার খাওয়া যাবে। শহরের বর্ষবরণে পাশ্চাত্য ধারার নববর্ষ উদযাপনের অনুকরণই বেশি চোখে পড়ে।
গ্রামে গ্রামে চৈত্রসংক্রান্তির মেলা হতো। আর হতো বৈশাখী মেলা। বাজারের দোকানগুলোতে হতো হালখাতা অনুষ্ঠান। শৈশবকালে বাবা চাচার হাত ধরে দোকানে যেতাম। প্রথমেই মিস্টিমুখ করানো হতো। বড়োরা পান মুখে দিয়ে কিছু টাকা দিতেন। সেই টাকার অংক নতুন খাতায় তুলে নতুন হিসাব নিকাশ শুরু হতো।এটাই হালখাতা নামে পরিচিত।এছাড়া চৈত্র সংক্রান্তিতে হিন্দু পরিবারগুলোতে বিশেষ ধরণের খাবার তৈরী হতো। কোনো কোনো মুসলমান বাড়িতেও তার কিছু ছাপ দেখতাম। বিশেষ করে তিতা আইটেম থাকতো। গাছভরা ছোট ছোট আম থাকলেও চৈত্র সংক্রান্তি পার না হলে আমরা সে পিচ্চি আম খাওয়া শুরু করতাম না।
মেলাগুলো বসতো মাঠের মাঝে কোন বড়ো গাছের নীচে। কোন কোনটা বসতো বাজারের অদূরে খোলা জায়গায়। বড়োদের হাত ধরে অনেক মেলায় গেছি। মূলত: গ্রামে উৎপাদিত ফসল আর ঘরে তৈরী নানা জিনিস মিলতো সেখানে। অনেক ধরনের মিষ্টি. জিলাপী, বাতাসা, মুড়ি, মুড়কি, খই ইত্যাদি পাওয়া যেতো। পাওয়া যেত অনেক রকমের খেলনা, বাঁশি, বেলুন, শাড়ী চুড়ি, লেইস ফিতা, আলতা সাবান ইত্যাদি। নানা রকমের খেলার আয়োজন হতো। ছিলো লোকগানের আয়োজন। দোলনা আর চরকী চড়ার প্রতি ছোটদের সবার ছিলো অনেক আকর্ষণ। সবার সাথে ভাববিনিময়ের পাশাপাশি ব্যবসাবাণিজ্য ছিলো মূল লক্ষ্য। কিছুটা বদলে গেলেও গ্রামীণ মেলাগুলোর বেশীরভাগ এখনো চালু আছে। নানা উপলক্ষে তার আয়োজন চলে। কিছু কিছু মেলা এক/দুই সপ্তাহ ধরে চলে।
বর্ষবরণ দেশে দেশে
জীবনের এক পর্যায় থেকে অন্য পর্যায়ে উত্তরণের সাথে নববর্ষের উৎসব জড়িত। বহু আগে থেকেই নানা জাতিগোষ্ঠী নববর্ষ পালন করছে। প্রথম নববর্ষ উদযাপনের খবর পাওয়া যায় মেসোপোটেমিয়ায়। খৃষ্টপূর্ব ২০০০ সালে। তখন কখনো মার্চ, কখনো সেপ্টেম্বর, কখনো ডিসেম্বর থেকে নববর্ষ গণনা করা হতো। খৃষ্টপূর্ব ৪৬ সালে জুলিয়াস সিজার কর্তৃক ক্যালেন্ডার সংস্কার করে (জুলিয়ান ক্যালেন্ডার) জানুয়ারি মাসে বছর গণনা শুরু করার পর থেকেই পহেলা জানুয়ারিতে জাঁকজমক আর আনন্দ উল্লাসের সাথে নববর্ষ পালন আরম্ভ হয়। পৃথিবীর বিভিন্ন জাতি বিভিন্ন সময়ে নববর্ষ পালন করতেন। এখনো এই ভিন্নতা বিদ্যমান। প্রাচীন মিশরীয়, ফিনিশীয় আর ইরানীগণ নববর্ষ উদযাপন করতেন শারদীয় বিষুব-দিনে (Autumnal Equinox) ২১শে সেপ্টেম্বর; প্রাচীন গ্রীক ও রোমকগণ খৃষ্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দী পর্যন্ত এ উৎসব পালন করতেন সূর্যের দক্ষিণ অয়নান্ত দিনে (Winter Solstice) ২১শে ডিসেম্বর; প্রাচীন ইহুদীগণ নববর্ষ পালন করতেন বাসন্ত বিষুব-দিনে (Vernal Equinox) ২১শে মার্চে; ইংল্যান্ডের এঙ্গলো-সেক্সনগণ সূর্যের দক্ষিণ অয়নান্ত দিনে (Winter Solstice) ২৫শে ডিসেম্বর নববর্ষ পালন করতেন। তিব্বত, শ্যাম (থাইল্যান্ড) ও ভিয়েৎনামে চান্দ্র মাসের সাথে মিলিয়ে ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথমে, মাঝে বা শেষে নববর্ষ পালন করতেন। প্রাচীন আরবগণ চান্দ্র বছরের প্রথম মাস মহরমে উকাজের মেলায় যোগ দিয়ে খেলাধুলা পানাহারে মেতে নববর্ষের উৎসব পালন করতেন। প্রাচীন ইরান আর ভারতের আর্যরা সৌরমাস সমন্বিত চান্দ্র মাসের হিসাবে নববর্ষ উৎসব পালন করতেন। ইরানে ছয়দিন ব্যাপী ’নওরোজ’ আর ভারতে তিনদিন ধরে ’দোল’ উৎসবের মাধ্যমে নববর্ষ পালন করা হতো।
আমাদের নববর্ষ পালন কবে থেকে
বাংলা নববর্ষ কবে থেকে পালন শুরু হয়েছে তার কোন হদিশ নেই। কারণ বাংলা সন কবে থেকে চালু হয়েছে সেটারই প্রকৃত খবর কেউ জানেন না। নানা পরোক্ষ প্রমানের ভিত্তিতে এ নিয়ে চারটি মত চালু আছে। যাঁদেরকে বাংলা সনের প্রবর্তক হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে তাঁরা হলেন মুঘল সম্রাট মহামতি আকবর (১৫৪২-১৬০৫), রাজা শশাঙ্ক (৭ম শতাব্দী), সুলতান হোসেন শাহ (১৪৯৩-১৫২৫) এবং তিব্বতি রাজা স্রংসন (আনুমানিক ৬০০ খৃস্টাব্দ)। প্রখ্যাত ঐতিহাসিক আর পণ্ডিতগণের বেশিরভাগের মতে আকবরই বাংলা সনের প্রবর্তক। এ দলে আছেন অক্সফোর্ড থেকে ইতিহাসে এম.এ ডিগ্রীধারী কাশিপ্রসাদ জয়সোয়াল (১৮৮১-১৯৩৭,( ইনিই প্রথম আকবরকে বাংলা সন প্রবর্তক বলে উল্লেখ করেন), প্রত্নতত্ত্ববিদ অমিতাভ ভট্টাচার্য, কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাচীন ভারতীয় ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ভূতপূর্ব কারমাইকেল অধ্যাপক ব্রতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়, ভারতীয় ক্যালেন্ডার সংস্কার কমিটির সভাপতি ও বিশ্বখ্যাত জ্যোতির্পদার্থ বিজ্ঞানী ড.মেঘনাদ সাহা, নোবেল পুরস্কার বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. অমর্ত্য সেন প্রমুখ।
ইরানের অনুসরণে উত্তরভারতে ’নওরোজ’ পালনের সূচনা করেন মুঘল সম্রাট হুমায়ুন। তাঁর পুত্র আকবরের রাজত্বকালেও সেটা অব্যহত ছিলো। নওরোজ উৎসবের অংশ হিসাবে হেরেমবাসিনী নারীগণ শখের দোকান সাজিয়ে ’মীনা-বাজার’ বা আনন্দ মেলা বসাতেন। মুনসী সলিমুল্লাহ রচিত ’তারিখ-ই-বাঙ্গালা’ (১৭৬৩ খৃ.) বইতে উল্লেখ করা কিছু তথ্যের আলোকে শামসুজ্জামান খান অনুমান করেন, মুর্শিদাবাদের নবাবরা অষ্টাদশ শতকের প্রথম দিকে পূণ্যাহ প্রবর্তনের মাধ্যমে বাংলা সন ও নববর্ষ পালনের সূচনা করেছেন। তখনই ব্যবসায়ীরা হালখাতা উৎসব চালু করেন। কিন্তু এটার ভিত্তি অনুমান নির্ভর। জনাব খানও জোর দিয়ে তা বলেননি। কারণ রাজপূণ্যাহ চালুর কথা থাকলেও বাংলা সন বা নববর্ষ নিয়ে কোন স্পষ্ট কথা নেই।
ইতিহাসে বাংলা সন চালুকরণ বা নববর্ষ পালন নিয়ে তেমন কোন সূচনা চিহ্ন মেলে না। বাংলা সাহিত্যের প্রাচীণতম নিদর্শন চর্যগীতিকায় বাঙ্গালীর কথা থাকলেও বাংলা সনের কোন কথা নেই। মূলত: স্বাধীন সুলতানী আমলে বিপুল রাজকীয় পৃষ্ঠপোষকতার ভেতর দিয়ে বাংলা সাহিত্য আর সংস্কৃতির বিকাশ ঘটে। মধ্যযুগের সাহিত্যে কদাচিৎ বাংলা সনের উল্লেখ থাকলেও বর্ষবরণের কথা নেই, বরং বছরের সূচনাকাল নিয়েই দেখা যায় বিভ্রান্তি। কিছু কিছু সাহিত্য পাঠে অস্পষ্ট একটা ধারণা করা যায় অগ্রহায়ণ মাসে বছর আরম্ভ হতো। অগ্রহায়ণ শব্দের মধ্যেই বছর শুরুর একটা আভাস আছে। অগ্র মানে প্রথম, আর হায়ন মানে বছর। মধ্যযুগের বারমাসীতে এর সমর্থন মেলে। সিলেট থেকে সংগৃহীত আবিরার বারমাসীতে বলা হয়েছে,”পরথমে আগন মাস ঘরে ঘরে ধান/ তুমি নি আইছরে বন্ধু এমন পাষাণ/ কার্তিক মাসের দিনে বছরের শেষ।/ না আইলা আবিরার সাধু ছাড়িয়া বৈদেশ।” প্রাক-আধুনিক যুগের কবি ভারত চন্দ্র রায়গুণাকরের ’অন্নদা মঙ্গল’ কাব্যে লেখা হয়েছে,”হায়নের অগ্র অগ্রহায়ণ জানিয়া/শুভ দিনে পুণ্যাহ করিলা বিচারিয়া।” ভারত চন্দ্রের এ বই লেখার আগেই মুর্শিদাবাদে বৈশাখ মাসে পুণ্যাহ চালু হয়ে গেছে। অন্যদিকে এ সময়ের আগের কবির রচনায় বৈশাখে বারমাসী শুরুর কথা আছে। বিজয়গুপ্তের ’পদ্মপুরাণ’-এ বেহুলার বারমাসী বৈশাখে আরম্ভ হয়ে চৈত্রে শেষ হয়েছে। ষোড়শ শতকের কবি মুকুন্দরামের চণ্ডী মঙ্গলে ফুল্লরার বারমাসীও বৈশাখে আরম্ভ হয়ে চৈত্রে শেষ হয়েছে। রংপুরের অজ্ঞাতনামা কবির রচিত কমলার বারমাসীও বৈশাখে শুরু। কিন্তু শাহ মোহাম্মদ সগীরের ইউসুফ জুলেখা কাব্যে জুলেখার বারমাসী মাঘ মাসে শুরু হয়ে পৌষে শেষ হয়েছে। অন্য দিকে দৌলত কাজীর সতী ময়না ও লোরচন্দ্রানী কাব্যে এবং মহাকবি আলাওলের পদ্মবতী মহাকাব্যে ময়নামতি ও নাগমতির বারমাসী আষাঢ় মাসে শুরু হয়ে জ্যৈষ্ঠে শেষ হয়েছে। পুরো বিষয়টিই গোলকধাঁধায় ভরা। কবে থেকে বাংলা সন চালু হয়েছে তার যেমন কূলকিনারা মেলে না, তেমনি কবে থেকে বৈশাখে বাংলা নববর্ষ শুরু তারও হদিস মেলে না।
কবে থেকে শুরু তা নিয়ে বিাবদ থাকলেও মধ্যযুগ থেকে নববর্ষ পালনের চিহ্ন পাওয়া যাচ্ছে। মুর্শিদাবাদে পাচ্ছি পুণ্যাহ আর হালখাতার কথা। জমিদারী উচ্ছেদের সাথে পুণ্যাহ বিদায় নিয়েছে। শুধু তিন পার্বত্য জেলায় এখনো টিকে আছে রাজপুণ্যাহ। নানা সূত্র থেকে আবহমান বাংলার নববর্ষ উৎসবে যে সব অনুষ্ঠানের প্রচলনের কথা জানা যায় সেগুলো হচ্ছে-বার্ষিক মেলা, পুণ্যাহ, হালখাতা, আমানি, গম্ভীরা (এখনো চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রচলিত আছে), বলী খেলা (চট্টগ্রাম এলাকায়। এখনো চালু আছে। জব্বরের বলী খেলা সব চেয়ে বিখ্যাত), লাঠি খেলা বা কাঠি নাচ (কুষ্টিয়া,নড়াইল,কিশোরগঞ্জ), ষাঁড়ের লাড়াই(কেন্দুয়া,নেত্রকোণার ভাটি অঞ্চল), মোরগের লড়াই (ব্রাহ্মণবাড়িয়া), গরুর দৌড় (মুন্সিগঞ্জ), হাডুডু খেলা (মানিকগঞ্জসহ অন্যান্য এলাকায়) ইত্যাদি।
ড. আশরাফ সিদ্দিকী প্রাক-পাকিস্তান যুগে অঞ্চলভেদে যে সব উৎসব চালু ছিলো বলে উল্লেখ করেছেন এর মধ্যে রয়েছে পুণ্যাহ, হালখাতা, গাজনের গান (যার বিবর্তিত রূপ গম্ভীরা), ঢোপবাড়ি খেলা (বাঁশের দন্ডে দড়ি পেঁচিয়ে হকি খেলার আদলে প্রচলিত গ্রামীন খেলা), ভাড়া-ভুঁড়া খেলা (টাঙ্গাইল এলাকায় পাটখড়ি একত্রে বেঁধে মশালের মতো আগুন জ্বালিয়ে গ্রাম প্রদক্ষিণ), নববর্ষের পূর্ব রাত্রে ¯স্নান, গ্রাম্য মেলায় সং সেজে আনন্দ করা, ঘোড়দৌড়, নতুন চালের ভাত, পিঠা বা ক্ষীর ভোজন, বারোয়ারী জারীগানের উৎসব, ভূমি কর্ষণ বা তরকারি লাগানো ইত্যাদি। এ সব উৎসবে আনন্দের পাশাপাশি অর্থনৈতিক বিষয়ও জড়িয়ে ছিলো। যেমন পুণ্যাহর উদ্দেশ্য ছিলো নতুন ফসল তোলার পর তা বিক্রি করে জমিদারের খাজনা পরিশোধ করা, মেলায় নিজেদের উৎপাদিত ফসল বা পণ্য বিক্রি করে দরকারি জিনিস কেনা, ধার শোধ ইত্যাদি এবং হালখাতা ছিলো ব্যবসায়ীদের বাকি টাকা আদায়ের সুরুচিপূর্ণ পন্থা (মিষ্টি খাইয়ে, সমাদর করে)। মেলাগুলো ছিলো বাড়ির শিশু আর মহিলাদের সারা বছর মনে মনে জমিয়ে রাখা শখের জিনিস কেনার মাধ্যম। আমাদের লোক সাহিত্য আর গানে এর চিহ্ন আছে। মেলা থেকে কেনা তালপাতার বাঁশিতো কিংবদন্তি হয়ে গেছে। মেলা থেকে বউ এনে দেবার জন্য দাদার কাছে বায়নার খবরও আমাদের জানা আছে।
উদযাপনের বর্তমান ধারা
বর্তমানে নববর্ষের সব বড় আয়োজনই নগরকেন্দ্রিক। এর সূচনা পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার কিছু পরে। মুঘলদের অনুকরণে ঢাকায় কয়েক বছর অভিজাত পরিবারের মহিলাদের উদ্যোগে মিনা-বাজার বসানোর চেষ্টা চলে। কিন্তু অচিরেই তার ইতি ঘটে। ভাষা আন্দোলনকে ঘিরে এ অঞ্চলে নতুন ভাষাভিত্তিক জাতীয়তাবাদী ধারণার উন্মেষ ঘটে। আইউব খানের সামরিক শাসন আমলে নতুন ধারার এ সংস্কৃতি চর্চায় বাধার সৃষ্টি হয়। ১৯৬১ সালে রবীন্দ্র জন্মশতবর্ষ পালনে বাধা দান, রবীন্দ্র সঙ্গীত প্রচারে নিষেধাজ্ঞাকে কেন্দ্র করে বাঙালী সমাজে আধুনিক সংস্কৃতি চর্চার একটা সংগঠিত প্রয়াস চালু হয়। জনদাবীর মুখে ১৯৬৪ সালে পূর্ব-পাকিস্তান প্রাদেশিক সরকার বাংলা নববর্ষে ছুটি ঘোষণা করে। বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন নববর্ষে অনুষ্ঠাদির আয়োজন শুরু করে। বাংলা একাডেমিতে আয়োজিত নববর্ষের অনুষ্ঠানে মানুষের ঢল নামে। ১৯৬৭ সালে রমনার বটমূলের খোলা মঞ্চে ভোর বেলা নববর্ষ বরণের যে সঙ্গীতানুষ্ঠানের সূচনা হয় তা আজ আমাদের ঐতিহ্যের প্রতীকে পরিণত হয়েছে। ১৯৮৯ থেকে চারুকলার শোভাযাত্রা চলছে। যত দিন গড়িয়েছে নানা আয়োজনে নববর্ষ বরণ জাতীয় উৎসবে পরিণত হয়েছে। এখন ঢাকাসহ সব শহরে শোভাযাত্রা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, পিঠা উৎসব, মেলা, বই মেলা ইত্যাদি আয়োজন করা হচ্ছে। সরকারি বেসরকারি টিভি চ্যানেল বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে, বিভিন্ন অনুষ্ঠান সরাসরি সম্প্রচার করে, মোবাইল কোম্পানীসহ বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আর্থিক পৃষ্ঠপোষকতা করে। পত্রিকায় বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হয়। শিল্পী-কলাকুশলীরা বৈশাখী অনুষ্ঠানে অংশ নেবার জন্য পথ চেয়ে থাকেন। এসব অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের আবহমান সংস্কৃতির সাথে কিছু মিল রাখার চেষ্টা থাকলেও পাশ্চাত্যের খৃস্টীয় নববর্ষ পালনের নানা প্রভাব এতে সহজেই চোখে পড়ে।
সমাপনী
রবীন্দ্রনাথ শান্তি নিকেতনে ঘটা করে নববর্ষ উদযাপন করতেন। রবীন্দ্রনাথ, নজরুলসহ বাংলা সাহিত্যের সব প্রধান অপ্রধান কবি বৈশাখকে নিয়ে কবিতা,গান রচনা করেছেন। বাংলা সনের ইতিহাস আর নববর্ষ পালনের বিষয়ে পণ্ডিতগণ প্রচুর গবেষণামূলক রচনা প্রকাশ করছেন। সব কিছুতে গণমানুষ বিপুল উৎসাহে অংশ নিচ্ছেন। নতুন বছরকে বরণ করছেন পরম মমতায় আর বিপুল আনন্দে। মানুষজন নববর্ষ পালনের জন্য বিশেষ ধরণের নতুন পোষাকও পরছেন। বৈশাখের তীব্র দাবদাহকে উপেক্ষা করে সবাই পথে নেমে আসেন। নতুন বছরকে বরণের আনন্দে মানুষের যে মিলন মেলা বসে সেটাই বাংলা নববর্ষকে জাতীয় উৎসবে পরিণত করেছে। বাংলা নববর্ষ উদযাপন বিবর্তনের দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে আমাদের ঐতিহ্যে নতুন পালক যুক্ত করেছে। বাংলাদেশের জাতীয় ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে বাংলা নববর্ষ এক অপরিহার্য অংশ।
কৃতজ্ঞতা স্বীকার:
১. নববর্ষের উৎসব ও অনুষ্ঠান-ড.আশরাফ সিদ্দিকী
২. বাংলা নববর্ষ বা পয়লা বৈশাখ-মুহম্মদ এনামুল হক
৩. বাংলা সনের ইতিহাস অনুসন্ধান ও নববর্ষ উদযাপনের রূপান্তর কথা-শামসুজ্জামান খান
৪. নববর্ষ : আমাদের জন্য-সৈয়দ আলী আহসান
৫. বাংলা সন ও পঞ্জিকার বৈশিষ্ট্য-শামসুজ্জামান খান
১৩ ই এপ্রিল, ২০১৭ দুপুর ১২:১০
এ.টি.এম.মোস্তফা কামাল বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ। আপনাকেও নববর্ষের শুভেচ্ছা।
২| ১৩ ই এপ্রিল, ২০১৭ দুপুর ১২:০০
অতঃপর হৃদয় বলেছেন: অনেক ইতিহাস!!!!!!!! শুভ নববর্ষ
১৩ ই এপ্রিল, ২০১৭ দুপুর ১২:১১
এ.টি.এম.মোস্তফা কামাল বলেছেন: হা হা হা ! অনেক ধন্যবাদ। আপনাকেও নববর্ষের শুভেচ্ছা।
৩| ১৩ ই এপ্রিল, ২০১৭ দুপুর ১২:৩৯
আহমেদ জী এস বলেছেন: এ.টি.এম.মোস্তফা কামাল ,
উপলক্ষ্য যা - ই থাক , এসব দিনগুলোকে বরণের মধ্যে দিয়ে মানুষের বৃহত্তর অংশের ভেতরে সম্প্রীতি, সৌহার্দ্য, ভ্রাতৃত্ববোধ ইত্যাদি মানবিক মূল্যবোধগুলির সম্মিলন ঘটে ।
কালোর অমোঘ নিয়মে বিবর্তন একটি প্রক্রিয়া , যা উন্নততর জীবনের দিকেই মানব কল্যানে ধাবমান । সে বিবর্তন গুটিকয়েক মানুষের হঠকারীতা হয়ে উঠলে , সংস্কৃতি আর সংস্কৃতি থাকেনা । পণ্যে পরিনত হয় । বর্তমানে যা নববর্ষ পালনের মূল আকর্ষণ "পান্তা-ইলিশ" এ বানিজ্যিকীকরণ করা হয়েছে ।
আপনি লিখেছেন, পান্তা-ইলিশ খেয়ে একটা গ্রামীন ভাব আনার চেষ্টা থাকলেও তার সাথে গ্রামের কোন সংযোগ নেই। এর মানে বৃহত্তর মানুষের সাথে এর কোনও আত্মার টান নেই । এটা নগরকেন্দ্রিক । এটা থেকে সরে এসে মানুষের কাছাকাছি আসা যায় এমন ভাবে বাঙালীর এই উৎসবকে ঢেলে সাজানো উচিৎ । এ নগর উৎসবকে গ্রামীন পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে । ক্ষেত্র প্রস্তুত, শুধু প্রয়োজন বিশুদ্ধ কিছু মানুষের ভাবনা চিন্তা । বর্তমানের তরুন প্রজন্ম এর দিশারী হতে পারেন । যে মঙ্গল শোভা যাত্রা তারা শুরু করেছেন তা যেন বাঙলার পথে প্রান্তরেও আত্মিক বন্ধনের মঙ্গলআলোকে ভাস্বর হয়ে ওঠে ।
তরুন প্রজন্মের কাছে এটুকু আশা করাই যায় , এক সময়ের গ্রামে গ্রামে চৈত্রসংক্রান্তির মেলার মতো আগামী দিনগুলোতেও যেন
নতুন বর্ষ পালন আত্মার মেলবন্ধনের মেলা হয়ে ওঠে ।
সবাইকে নববর্ষের শুভেচ্ছা ।
( আপনার মূল বক্তব্যের বাইরে গিয়ে লিখলুম প্রানের টানে, দুঃখিত । )
১৩ ই এপ্রিল, ২০১৭ দুপুর ১২:৫২
এ.টি.এম.মোস্তফা কামাল বলেছেন: আপনার সুচিন্তিত ও সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। আমার লেখার মূল সুরটাইতো নববর্ষ পালনে যে পালাবদল ঘটছে সেটাই। নগরায়নের সম্প্রসারনের ফলে গ্রামের জীবনে বদল এসেছে। মিডিয়ার কল্যাণে নাগরিক বিষয়গুলো গ্রামেও চালু হচ্ছে। নববর্ষের ক্ষেত্রেও তার প্রভাব পড়বে।
৪| ১৩ ই এপ্রিল, ২০১৭ দুপুর ২:২০
সুমন কর বলেছেন: নববর্ষের শুভেচ্ছা.....
১৩ ই এপ্রিল, ২০১৭ দুপুর ২:২৮
এ.টি.এম.মোস্তফা কামাল বলেছেন: আপনাকেও নববর্ষের শুভেচ্ছা।
৫| ১৩ ই এপ্রিল, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:১৬
ধ্রুবক আলো বলেছেন: নববর্ষের শুভেচ্ছা রইলো ভাই
১৪ ই এপ্রিল, ২০১৭ বিকাল ৩:৫৪
এ.টি.এম.মোস্তফা কামাল বলেছেন: আপনাকেও নববর্ষের শুভেচ্ছা।
©somewhere in net ltd.
১| ১৩ ই এপ্রিল, ২০১৭ সকাল ১১:৪৯
মোস্তফা সোহেল বলেছেন: আপনাকে নববর্ষের শুভেচ্ছা ভাইয়া।