নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সম্প্রতি পূর্ব আফ্রিকান দেশ রুয়াণ্ডার সরকার ত্বক ফর্সাকারী ক্রিমসহ এ জাতীয় সব প্রসাধনী সামগ্রী নিষিদ্ধ করেছে। আল জাজিরার বরাতে বাংলাদেশের কিছু পত্রিকায় সংবাদটি ছাপা হয়েছে। রুয়াণ্ডা সরকার কেন এ কাজটি করেছে তার কোন ব্যাখ্যা সে সংবাদে নেই। মজার বিষয় হলো রুয়াণ্ডা সরকারের এ কাজটিকে সমালোচনা করা হয়েছে কায়দা করে। সংবাদে বলা হয়েছে এর ফলে রুয়াণ্ডার নারীরা মাননিয়ন্ত্রণহীন ত্বক ফর্সাকারী প্রসাধনী ব্যবহার করে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়বেন। আমাদের কাগজে একধাপ এগিয়ে লেখা হয়েছে রুয়াণ্ডার নারীরা নাকি এর ফলে বিপাকে পড়েছে। তার আগে সেখানে এ সব পন্য ব্যবহারের পক্ষে নিজ দায়িত্বে কিছু যুক্তিও তুলে ধরা হয়েছে (বাংলাদেশ প্রতিদিন দ্রঃ)। ত্বক ফর্সা করার যে বর্ণবাদী ও সাম্রাজ্যবাদী রোগ ছড়ানো হচ্ছে সাবেক উপনিবেশগুলোতে আমরাও যে তার শিকার সেটা বলাই বাহুল্য। ২০১০ সালে বাংলাদেশে ইউরিলিভারের বর্ণবাদী ও সাম্রাজ্যবাদী ব্যবসার সমালোচনা করে আমি সামুতে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। রুয়াণ্ডার এই খবর দেখে সেই পোস্টের কথা মনে পড়ে গেলো।
সেটা এখানে তুলে ধরার লোভ সামলাতে পারছি না-
ইউনিলিভারের বর্ণবাদ আর সাম্রাজ্যবাদ
ইউনিলিভার বহু বছর ধরে মেয়েদের ত্বক ফর্সা করার নানা রকমের কসমেটিকস বিক্রি করে প্রতারণা করে চলেছে। সম্প্রতি শুরু করেছে ছেলেদের ত্বক ফর্সা করার চালিয়াতি। স্পষ্টত:ই এসব বর্ণবাদী ও সাম্রাজ্যবাদী ধারণা। কারণ কোন বিশেষ গাত্রবর্ণ অন্য গাত্রবর্ণ থেকে উন্নত বা শ্রেয় হতে পারে না। সাদা চামড়ার পশ্চিমারা অত্যন্ত অন্যায়ভাবে বিভিন্ন দেশ দখল করে উপনিবেশ স্থাপন করে। মানবতার বিরুদ্ধে এর চেয়ে বড়ো কোন অপরাধ আর সংঘটিত হয় নি।
ইউনিলিভার সরাসরি বিতাড়িত সাম্রাজ্যবাদের পক্ষে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। সেই প্রতারণার মাধ্যমে ব্যবসা করে চলেছে। তাদের প্রতারণার সব চেয়ে বড়ো মাধ্যম বিজ্ঞাপন।
প্রতারণার কয়েকটি নজির দেয়া যাক-
ক) কোন কেমিক্যাল দিয়ে ত্বক ফর্সা করা যায় না।
খ)ত্বক ফর্সা হলেই সব দক্ষতা আপনা আপনি চলে আসে না। দক্ষতা অর্জন করতে হয়। যেমন একটা বিজ্ঞাপনে বলা হয়, সুন্দর মুখ আর একটু এক্সপ্রেশন বাস বাজিমাত। সে-ই কালো নায়িকা বলে নাটকে দর্শক হচ্ছিলো না। এখন তারকা , সবাই আঙুলের ইশায়ায় তার পিছু পিছু ছুটছে থিয়েটারের ভেতর। (বিশেষ কোন চতুষ্পদী প্রাণীর মতো ?) অভিনয়কলা শুধু প্রাচ্যে নয় ইউনিলিভারের পাশ্চাত্যেও বহু সাধনার বিষয়। রঙের নাম করে সে সাধনাকে অপমান করা হয়েছে।
গ) বিশেষ ধরনের পোষাক ( পাশ্চাত্যের) পরাকে সফলতার পূর্বশর্ত বলে তুলে ধরা হচ্ছে।
ঘ) ফর্সা হলেই আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায় না। ভাবখানা এমন, চেহারার ফর্সা ভাব দেখেই ইন্টারভিউ বোর্ডের কর্তারা আত্মবিশ্বাস আবিষ্কার করে ফেলে।
ঙ) এতোদিন ফেয়ারনেস বিক্রি করে এখন বলছে শুধু ফেয়ারনেসই যথেষ্ট নয়। তার মানে নতুন পন্য গছানোর নতুন ফাঁদ।
এইসব প্রতারণার সাথে আঘাত করতে শুরু করেছে সংস্কৃতি আর মূল্যবোধের ওপরও। আশির দশক পর্যন্ত ইউনিলিভারের বিজ্ঞাপনে মডেল থাকতো আমাদের তারকারা। ধীরে ধীরে আমাদের তারকাদের বাদ দিয়ে বাইরের সাদা চামড়ার তারকাদের দিয়ে তৈরি বিজ্ঞাপন প্রচার শুরু করে। এর ভেতর দিয়ে আমাদের তারকা হবার যোগ্যতাকেও খাটো করা হলো। তাদের মাপে আমাদের তারকারা বড়ো তারকা বা আন্তর্জাতিক মানের তারকা হবার যোগ্য নয়।
আগে বিদেশী তারকার বিজ্ঞাপনে বাংলা ডাবিং থাকতো। এখন বাংলাকেও বিসর্জন দিয়ে সোজা ইংরেজীতে বিজ্ঞাপন দেখানো শুরু হয়েছে। আমার ভাষাকেও ব্রাত্য করে ফেলা হচ্ছে। অথচ এই ভাষার জন্য রক্ত দিয়ে সেই পথ ধরেই আমাদের স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে। বাংলা ভাষা আর সংস্কৃতির টিকে থাকা এবং আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার মধ্যেই নিহিত আমাদের অনেক রক্তে পাওয়া স্বাধীনতার সার্থকতা।
ইউনিলিভার বিজ্ঞাপন আর বানিজ্যের ভেতর দিয়ে আমাদের স্বাধীনতাকে পরিহাসে পরিণত করার চেষ্টা করে চলেছে। ইউনিলিভার ব্যবসা করুক আপত্তি নেই। কিন্তু ব্যবসার ভেতর দিয়ে অগোচরে তিলে তিলে একটি জাতির মর্যাদাবোধকে নষ্ট করে আবার নব্য সাম্রাজ্যবাদের ভিত্তি তৈরির চেষ্টা প্রতিহত করতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে প্রতিটি সাম্রাজ্যবাদের ভিত্তি তৈরি করা হয়েছে ব্যবসার ছল ধরেই।
পুনশ্চ: আগে নাম ছিলো লিভার ব্রাদার্স (বাংলাদেশ) লিমিটেড। এখন ইউনিলিভার নাম দিয়ে একত্রিত করা হয়েছে। এটাও একটা বড়ো সঙ্কেত।
আফ্রিকার দেশগুলোতে গণতন্ত্র, মানবাধিকার বলে কিছু আছে মর্মে আফ্রিকার ঘোর শত্রুরাও সে অপবাদ দেবে না। সাম্রাজ্যবাদের ক্যান্সার আফ্রিকাতে ভয়াবহরূপেই রয়ে গেছে। কারণ সাম্রাজ্যবাদীরা আফ্রিকাতে তাদের লুণ্ঠন এখনো জারি রেখেছে। সে জন্য তাদের শিখণ্ডীরাই ক্ষমতায় বসে মানবতার ওপর স্টিম রোলার চালিয়ে যাচ্ছে। রুয়াণ্ডাও সেই ঝাঁকেরই ছোট্ট একটা কই। রুয়াণ্ডার একনায়কত্ববাদী সরকার হঠাৎ কেন এমন একটা সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী পদক্ষেপ কেমন করে নিলো সেটাই মহাবিস্ময়ের !
আমি এ নিয়ে একটি মিনিপ্যাক গল্পও পোস্ট করেছিলাম।
(বি.দ্র.-প্রাসঙ্গিক লিঙ্ক কমেন্টে দিলাম)
২| ০৯ ই জানুয়ারি, ২০১৯ সকাল ১০:২৩
৩| ০৯ ই জানুয়ারি, ২০১৯ সকাল ১০:২৪
৪| ০৯ ই জানুয়ারি, ২০১৯ সকাল ১০:২৬
৫| ০৯ ই জানুয়ারি, ২০১৯ সকাল ১০:২৬
এ.টি.এম.মোস্তফা কামাল বলেছেন: https://en.wikipedia.org/wiki/Rwanda
৬| ০৯ ই জানুয়ারি, ২০১৯ সকাল ১০:৩৬
৭| ০৯ ই জানুয়ারি, ২০১৯ সকাল ১০:৪৮
ম্যাড ফর সামু বলেছেন: এ সংক্রান্ত আপনার কিছু কিছু পোষ্ট পড়েছিলাম, আমার অনেক ভালো লাগল। এ পোষ্টটিও সমসাময়িক ও সচেতনতামূলক একটি পোষ্ট। এখন উচিত আমাদের দেশে এ জাতীয় কিছু পণ্য নিষিদ্ধ করে দেওয়া। প্রতি বছর হাজার কোটি টাকারো বেশি এই সকল আজেবাজে পণ্যের মোড়ক বিক্রি করে তারা এ দেশ থেকে লুটে নিয়ে যায়। যা বন্ধ হওয়া উচিত, কিন্তু সরকার কি এ দিকে দৃষ্টি দিবে, মনে হয় না, কারণ তারা বলবে তারা আমাদের এত এত রাজস্ব দেয় তাহলে কেন তাদের ব্যবসা আমরা বন্ধ করব। দেশে তারা এত বেকারের চাকুরীর ব্যবস্থা করেছে ইত্যাদি ইত্যাদি।
০৯ ই জানুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ২:৪০
এ.টি.এম.মোস্তফা কামাল বলেছেন: আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। তবে এটা জনগণের বিষয়। জনগণ চাইলে হবে, না হলে এই রোগ চলতেই থাকবে।
৮| ০৯ ই জানুয়ারি, ২০১৯ সকাল ১১:৩৩
পাঠকের প্রতিক্রিয়া ! বলেছেন: ঠিক কাজ করেছে।
আমাদের ম খ রা কী করে??
০৯ ই জানুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ২:৪১
এ.টি.এম.মোস্তফা কামাল বলেছেন: মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।
৯| ০৯ ই জানুয়ারি, ২০১৯ বিকাল ৩:৩৯
রাজীব নুর বলেছেন: আমাদের দেশেও নিষিদ্ধ হওয়া উচিত।
০৯ ই জানুয়ারি, ২০১৯ বিকাল ৪:২০
এ.টি.এম.মোস্তফা কামাল বলেছেন: সহমত। অর্থহীন অপব্যয় চলছে।
১০| ০৯ ই জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ৯:১০
সুমন কর বলেছেন: ভালো লিখেছেন। বাতিল করে দেয়া উচিত।
১০ ই জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ১২:১৫
এ.টি.এম.মোস্তফা কামাল বলেছেন: সহমত। অর্থহীন অপব্যয় চলছে।
ভালো থাকবেন।
©somewhere in net ltd.
১| ০৯ ই জানুয়ারি, ২০১৯ সকাল ১০:২২
এ.টি.এম.মোস্তফা কামাল বলেছেন: Click This Link