![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি মদ এর বোতলে কোক ঢুকিয়ে পান করে/ সবার সম্মুখে মাতলামি করি/ আর কিছু উল্টা পাল্টা শব্দমালা ব্যবহার করে কবিতা লিখে/ নিজেকে নিয়ে আতলামি করি...
ইট কাঠের তৈরী এই ব্যস্ততার নগরীতে সবাই ব্যস্ত। সারাদিন গাধার মত খাটুনি খেটে বাসে উঠা ও যেন একটা যুদ্ধ। গ্লাডিয়েটর যুদ্ধেদের মত লড়তে হয় বাসে উঠার জন্য। যুদ্ধে জয়ী হলে ম্যাক্সিমাসের মত মুক্তি মিলে না। যা মিলে তা হচ্ছে একটা সিট!! গরমের মধ্যে প্রচন্ড ভীড় হওয়া বাসে একটা সিট পাওয়ার আনন্দ ঠিক তেমনি যেমন বাংলাদেশ বিশ্বকাপ জিতার আনন্দ! যদি কেউ বাসে একবার সিট পেয়ে যায় সে কখনইতা ছাড়তে চায় না। যত বৃদ্ধা মহিলাই দাড়িয়ে থাকুক না কেন কেউ সিট ছাড়তে নারাজ। কেউ যদি অতিরিক্ত ভদ্রতা করে সিট ছেড়েও দেয় বয়স্ক কাউকে,তখন বাসের প্রতিটি চোখ একবার পরখ করেতে থাকে এই অতি ভদ্র ব্যক্তিটিকে। কারো কারো চোখে থাকে "অতি ভদ্রতা যখন দেখাবি তখন অন্যবাসে উঠলেই পারতি! এই বাসে এসে মরলি কেন"!! সত্যি বলতে কি এই সব ভদ্রতার বিন্দুমাত্র লেশ আমার মধ্যে নেই। কখন যাতে সিট ছাড়তে না হয় তাই সব সময় আমি চেষ্টা করি জানালার দিকটার সিটে বসতে। বাসের মধ্য খানের সিটে যারা বসে তাদের খুব একটা সিট ছাড়তে হয় না। তাই অফিস শেষে বাসায় যাবার জন্য ঐ সিট গুলাই আমার ভালো লাগে।
আজ বাসটা খুব ফাঁকা। ঈদের অল্প কিছুদিন বাকি তাই ঢাকাশহর প্রায় ঘুমন্ত তেজহীন এক ঘোড়ার মত হয়ে গেছে। আমার অফিস মতিঝিল, রংধনু বাসে করে আসা যাওয়া করি প্রতিদিন। আজকে আমার ভাগ্য ভালো শহরে মানুষ নাই বিধায় প্রথম সারির সিটগুলি প্রায় খালি। সামনের একটা সিট পেয়েবসে পরলাম। আমার পাশের সিটের যাত্রী অল্প কিছু সময়পর নেমে পরলেন। বলতে গেলে এখন দুইটা সিটের মালিকই আমি! জানালা দিয়ে সন্ধ্যার জ্যামহীন আলো ঝলমলে ঢাকা শহর উপভোগ করছি। পরের কাউন্টার থেকে যাত্রী উঠলো একজন মাত্র। লম্বা লম্বা চুল,খোঁচা খোঁচা দাড়ি ও মোটা ফ্রেইমের চশমা পড়া একটি ছেলে। প্রথম দেখাতেই বুঝা যায় পাগলাটে ধরণের। ছেলেটি আমার পাশের সিটে বসেপড়ল। একবার তার দিকে তাকিয়েআবার জানালা দিয়ে রাতের ঢাকা দেখাতে আমি মননিবেশ করলাম। পরের কাউন্টারে এক বৃদ্ধা মহিলা উঠলেন। তাকে উঠিয়ে দিয়ে এক ১৪-১৫ বছরের ছেলে টুপ করে নেমে পড়ল। মহিলাটিকে দাড়ানো দেখে আমার পাশের ছেলে হুট করে দাড়িয়ে তার সিট ছেড়ে দিল। দেখে বুঝা যাচ্ছিল বৃদ্ধা চোখে খুব একটা দেখতে পান না। ছেলেটি এটা বুঝে বৃদ্ধাকে নিজ হাতে ধরে সিটে বসালো। দেখে নিজে একটু লজ্জিত হলাম! স্যুট টাই পড়েও আমার মধ্যে যে বিবেক জন্ম নিতে পারেনি তা এই ছেলেটির মধ্যে আছে। এসব ভেবে লাভ নেই তাই লজ্জা নিয়ে আবার জানালা দিয়ে বাইরে তাকালাম। হঠাত্ ছেলেটি বৃদ্ধাকে জিজ্ঞাসা করল
"দাদী কোথায় যাবেন"?
বৃদ্ধা তার শাড়ীর আচল থেকে এক টুকরা মলিন কাগজ বের করেছেলেটির হাতে দিলেন। ছেলেটি তা পড়ে বলল বাসটা সেই জায়গায় যাবে না। যেখানেবৃদ্ধা যেত চান। বাসটা ঐ রাস্তা ঘুরে যাবে। কিছু রাস্তা বৃদ্ধাকে হেটে যেতে হবে।
ছেলেটি জিজ্ঞাসা করল"দাদী আপনি একা যেতে পারবান"? বৃদ্ধা কোন উত্তর দিলেন না।আমি এবং ছেলেটি দুজনই বুঝতেপারছি যে একজন অন্ধের পক্ষেএত রাস্তা হেটে যাওয়া অসম্ভব। বৃদ্ধাকে চুপ দেখে আমি জিজ্ঞাসা করলাম এত যদি ঘুরতে বেড়নোর শখ তাহলে একা একা না বের হয়ে পরিবারের কাউকে নিয়ে বের হলেই পারতেন!
বৃদ্ধা কিছুক্ষন চুপ করে থাকলেন। দাঁত দিয়ে ঠোঁট কামড়ে ধরলেন। হয়তোবা কান্না আটকালেন!! আমার চোখের ভুল ও হতে পারে।
"বড় ছেলের কাছে ছিলাম। কিন্তু সে এখন আর আমাকে রাখতে পারবে না। ছোট ছেলের কাছে আমাকে পাঠাচ্ছে"।
এতটুকু বলার পর বৃদ্ধা একটুদম নেওয়ার জন্য থামলেন। হয়তোবা কান্না আটকাবার বৃথা চেষ্টা করছিলেন কিন্তু পারলেন না। ফুপিয়ে কেঁদে উঠলেন!
"বাবা আমার বয়স হয়েছে,চোখে ও ছানী পরেছে। তাই চোখে খুবএকটা দেখতে পারি না। তারা নাকি আমার চোখের অপারেশন করাতে পারবে না। তাদের বাবামারা যাওয়ার পর কত কষ্ট করেতাদের মানুষ করলাম। তাদের লেখা পড়া শিখালাম। এখন বড় বড় অফিসে চাকরী করেও মায়ের চিকিত্সার জন্য তাদের টাকা নেই! মাকে ঘরে রাখার জন্য তাদের জায়গা নেই। কিন্তু বউএর কুকুর রাখার জন্য ঠিকি জায়গা আছে! বাবা তোমরা বল মার চাইতে কি কুকুর দামি"!!
কিছু উত্তর দিলাম না। পাশেরছেলেটি ও কিছু বলল না। কিছুক্ষন পর ছেলটি আবার জিজ্ঞাসা করল
"দাদী আপনাকে কেউ কি নিতে আসবে"?
বৃদ্ধা বললেও হ্যা তার ছোট ছেলে আসবে। কিন্তু তার ছেলেকে ফোন দিতে হবে। পাশে বসা সেই পাগলাটে ছেলে বৃদ্ধার কাছ থেকে নাম্বার নিয়ে তার ছেলেকে ফোন দিল। যে জায়গা দিয়ে বাস যাবে সেখানে আসতে বলে ফোন রেখে দিল।
বৃদ্ধার ছেলে এসেছে তার মাকে নিতে। পাশের সেই পাগলাটে ছেলে বৃদ্ধাকে বাস থেকে নামিয়ে আমার পাশের সিটে এসে বসে পড়ল। বাস চলতে শুরু করেছে। হঠাত্ টায়ারে কর্কশ শব্দ ছাপিয়ে এক নারীর চিত্কার শুনা গেল। দেখলাম বৃদ্ধার ছোট ছেলে দৌড়ে যাচ্ছে। হয়তোবা বৃদ্ধার ছেলেদের জন্য আজ একটা খুশির সংবাদ অপেক্ষা করছে! একটা বোঝা কমে গেল। একটা ভাত খাওয়ার মুখ চলে গেল!! পাশের ছেলেটার দিকে তাকালাম। তার কোন ভাবান্তর নেই। শুধু চশমাটা খুলে একটু চোখ মুছল।হয়তোবা সে জানত বৃদ্ধার সাথে এমন কিছুই হবে। নতুবা তার রিয়েকশন শক্তিই নেই!!
ধূর আমি এসব নিয়ে ভাবছি কেন! আমার এসব ভেবে লাভ নেই।আমার নিজের সমস্যা নিয়েই বাঁচি না। তারাতারি বাসায় যেতে হবে। শ্যামা গত কিছুদিন থেকে বলছে যে সে আর আম্মা সাথে থাকে পারছে না। আজ অফিসে থাকার সময় ও ফোন দিয়ে ঝগড়া করেছে। এর একটা বিহিত করতে হবে আজি। দেখি ঈদের আগেই মাকে ওল্ড হোমে পাঠানো যায় কিনা!!! তাহলে মা ও খুশিতে থাকবেন আর আমি শান্তিতে।।
২| ২৯ শে জুলাই, ২০১৩ সকাল ১১:৫০
কাব্বিক্য বলেছেন: ধন্যবাদ...
©somewhere in net ltd.
১|
২৯ শে জুলাই, ২০১৩ সকাল ১০:১৫
ফারহান আহমেদ বলেছেন: খুব ভালো হয়েছে লিখাটা