![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি মদ এর বোতলে কোক ঢুকিয়ে পান করে/ সবার সম্মুখে মাতলামি করি/ আর কিছু উল্টা পাল্টা শব্দমালা ব্যবহার করে কবিতা লিখে/ নিজেকে নিয়ে আতলামি করি...
রাহাত তুখর ছাত্র। পড়া লিখায় যেমন ভালো। ঠিক তেমনি খেলাধুলায়। স্কুল ও কলেজ টিমের ক্রিকেট দলের ক্যাপ্টিন ছিলো সে। তার হাতে ধরে তার কলেজ আন্তঃজেলা কলেজ র্টুনামেন্টে প্রথম স্থান দখল করে। সে এস.এস.সি পরীক্ষায় গোল্ডেন A+ পেয়ে পাশ করেছিল। এইচ.এস.সি তেও সবাই ভেবেছিল সে A+ পাবে। কিন্তু বিধিভাম! অল্পের জন্য A+ মিস। বন্ধুদের সবার উচ্ছ্বাস দেখে যখন ভগ্ন হৃদয় নিয়ে বাসায় ফিরে...তখন আত্বীয়-স্বজনদেরকটাক্ষের তীর থেকে বাঁচার পথ তার কাছে একটাই ছিল। Quite করা! পৃথিবী থেকে...
জানতে চান রাহাতের জিপিএ কতছিলো?মাত্র-৪.৮০!
মিতু প্রচন্ড লক্ষী মেয়ে। মাকে প্রায় ঘরের কাজে সাহায্য করত। পড়ালিখায় অনেক ভালো ছিলো। কিন্তু এইচ.এস.সিতে রিজাল্টে ভালো না করায় তার মায়ের চোখে জল সহ্য করতে পারে নি। এই তরল পর্দাথটি সহ্য করার চাইতে তার কাছে মনে হয়েছে ফ্যানেরসাথে ওড়না পেঁচিয়ে ঝুলে পড়াঅনেক সহজ।
জানতে চান তার জিপিএ কত? মাত্র ৩.৯০!
আকলিমা বাবার প্রচন্ড আদরের মেয়ে। মা মারা যাবার পর তার বাবা তাকে কোলে পিঠেকরে মানুষ করেছেন। পরিবারের হাজার চাপ দেওয়া সত্ত্বেও আকলিমার বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করেননি। শুধু মাত্র আকলিমার মুখের দিকে চেয়ে। কিন্তু সেই আকলিমা এস.এস.সি তে অকৃতকার্য হয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিল। একবার ভাবতেও চাইলো না যে বাবা এত ত্যাগ স্বীকার করেছেন তার কাছে এই রিজাল্টমেয়ের জীবন থেকে ও বেশি গুরুত্বপূর্ণ কি না!!
নাসিম চঞ্চল একটি ছেলে। পাড়ায়,স্কুলে সবার প্রিয় সে। ইচ্ছা ছিলো বড় হয়ে সে পাইলট হবে। এই স্বর্প্নপূরণের পথে তার প্রথম ধাপ ছিলো এস.এস.সি পরীক্ষা। বন্ধুরা সবাই জানতো নাসিম A+ পাবে কিন্তু তা হয় নি। সে জানতে পারে বন্ধুর কাছে সে ফেইল করেছে! এই লজ্জ্বিত মুখ বাসার কাউকে দেখতে না পেরে ঘুমের ঔষধ খেয়ে সে মুক্তি খোঁজে নেয়। কিন্তু সে ফেইল করেনি। ৪.৫৬ পেয়ে সে এস.এস.সি পাশ করেছিল। বন্ধুর সামান্য রসিকতা তার জীবন কেড়ে নিলো!!
ইলমা শান্ত শিষ্ট একটি মেয়ে। একটু ইন্ট্রোর্ভাট। বন্ধু খুব একটা নেই বললেই চলে। পড়া লিখায় প্রচুর ভালোছিলো। কিন্তু হঠাত্ কেন যেনএস.এস.সি রিজাল্টের আগের রাতে সে আত্মহত্যা করে। মারা যাওয়ার পূর্বে একটা চিরকুটে লিখে যায়। সে জানে যে, সে ফেইল করবে তাই সে এই গ্লানি থেকে মুক্তি পেতে আত্মহত্যা করছে! কিন্তু বোকা মেয়েটা জানতে ও পারলো না সে এস.এস.সি তে A+ পেয়েছে...
রাশেদ জে.এস.সি পরীক্ষার্থীছিলো। পরীক্ষা খারাপ দিয়ে ফেইল করার ভয়ে সে ঘরে রাখা কীটনাশক খেয়ে আত্মহত্যা করে!!
গত পাচঁ বছরে একটা হিসাবে দেখা গেছে যে এস.এস.সি এবং এইচ.এস.সি মিলিয়ে অকৃতকার্যহয়ে, আশানুরূপ ফল না পেয়ে, বা অকৃতকার্য হবার ভয়ে প্রায় ১৭২০ জন ছাত্র-ছাত্রী আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে। যাদের মধ্যে অনেকে প্রচুর ভালো শিক্ষার্থী ছিলো। এই মৃত্যু মিছিলে নতুন যুক্ত হয়েছে জে.এস.সির এক ছাত্র। সবচাইতে আশ্চর্যে বিষয় কি জানেন? গ্রেডিং সিস্টেম যখন ছিলো না মানে যখন ডিভিশন সিস্টেম ছিলো তখন ও ছাত্র-ছাত্রীরা আত্মহত্যা করেছে। কিন্তু তা ১০-১২ বছরের হিসাব ঘাটিয়ে স্বর্ব সাকুল্যে মাত্র ৫০০ এর কাছাকাছিও যাবে না!! তার মানে বলা যায় গ্রেডিং সিস্টেম অভিশাপ হিসাবে দেখা দিয়েছে আমাদের সমাজে!!
আমি এস.এস.সি তে গ্রেড পয়েন্ট পাই ৩.৫৬। ঠিক সেই সময়ে আমার বয়সী আমার আত্বীয়যারা পরীক্ষা দিয়েছিল তাদের সবার চাইতে আমার গ্রেড পয়েন্ট কম ছিলো। আমি ও যে মৃত্যুর কথা ভাবিনি তাকিন্তু না। ঐ বয়সটাই এমন। ঘুমের ঔষধ হাতে নিয়েও রেখে দিয়েছিলাম কারণ আমার বাবা-মা আমাকে নিয়ে অন্যরকম স্বপ্ন দেখেন বলে। তাদের স্বপ্ন পূরণের জন্য দিনরাত কষ্ট করে এইচএসসি তেভালো রিজাল্ট করি।।
জীবনটা একটা রেইসের ঘোড়ার মত। একবার এগুবে তো একবার পিছাবে । তাই বলে ঘোড়াটির রেইসে পার্টিসিপেশন করার বয়স শেষ হবার পূর্বে তাকে আস্তাবলে নিক্ষেপ করা উচিত নয়। বলা তো যায় না জীবনের কোন সন্ধিক্ষণে ঘোড়াটি তার সবচাইতে ভালো দৌড়টি দিয়ে দেয়!!
মৃত্যু সবকিছুর নির্ধারক হতে পারে না। আশা রাখি আমারফেন্ডলিস্টে যারা আছেন তারা তাদের আত্বীয়দের বুঝাবেন। ফেইল, পাশ, বেশি জিপিএ, কম জিপিএ পৃথিবীতে মূখ্য নয়। মূখ্য হচ্ছে মানুষ মত মানুষ হয়ে বেঁচে থাকতে পারা-টা!!
©somewhere in net ltd.