নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি রিক্ত হয়েছি, সিক্ত করেছি, ধরেছি ধ্বংসের গতি আমি আপন হস্তেই করিয়াছি বিনাশ, নিজের সর্বস্তুতি।
[ছবি গুগল থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে]
আজ থেকে কলেজের ক্লাস শুরু হবে। সকাল সকাল নিজেকে প্রস্তুত করে নিলাম। কলেজের প্রথম দিন বলে কথা...
আমি পড়া-লেখা করেছি আলেয়া মাদ্রাসায় সাইন্স নিয়ে, ভালো নম্বর করায় স্যারের পরামর্শে কলেজে ভর্তি হই, না ঠিক ভর্তি হইনি স্যার নিজেই ভর্তি করিয়েছেন। তাই নার্ভাস হয়ে আছি সম্পূর্ণ আলাদা এক পরিবেশ। সকাল সাড়ে ন’টা নাগাদ কলেজে পৌঁছে গেলাম। তারপর একা একা কলেজ ক্যাম্পাসের জরিপ করতে লাগলাম, দেখলাম বেশিরভাগ ছাত্র-ছাত্রীদের গ্রুপ আছে তারা দাড়িয়ে বসে হেঁটে হেঁটে গল্প করছে লুটোপুটি খাচ্ছে, হাসছে। তবে কিছু ছাত্র-ছাত্রী একাও আছে।
ক্লাস শুরু হওয়ার আর পাঁচ-ছয় মিনিট বাকি, ক্লাসে গেলাম (এক বড় ভাই দেখিয়ে দিলেন এটাই হবে আমাদের ক্লাস।) দেখলাম প্রায় ২০,২৫ জন মেয়ে বসে পরস্পরে গল্প করছে কোন ছেলে নেই। ভাবলাম ভাইয়া আমার সাথে মজা করেছে, ছেলেদের ক্লাস অন্য কোথাও। তাই ক্লাস থেকে বের হয়ে যেতে উদ্যত হলাম, কিন্তু একটা মেয়ে আর আমি মুখোমুখি সংঘর্ষের সম্মুখীন হলাম যদিও ধাক্কা খাওয়া থেকে বেঁচে গেলাম।
আমিঃ দুঃখিত আপনাকে দেখতে পাইনি...
মেয়েঃ না ভুল আমারই ছিল।
আমিঃ আসলে আমি নতুন ভুল করে এখানে চলে এসেছি।
মেয়েঃ ও আচ্ছা তো আপনি কোন বিভাগের???
আমিঃ বিজ্ঞান...।
মেয়েঃ তাহলে তো আপনি ভুল করেন নি এটাই আমাদের ক্লাস।
আমিঃ ও.... কিন্তু এখানে তো কোন ছেলে নেই তাই ভাবলাম...
মেয়েঃ বসেন সমস্যা নেই।
আমিঃ ধন্যবাদ
মেয়েটি একটা হাসি দিয়ে নিজের জায়গায় চলে গেল....
স্যার এলেন মিনিট দশেক পরে আর ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজন ছেলে ক্লাসে চলে এসেছে...
এভাবেই কেটে গেল মাসখানেক...
আমার রুটিন সময় যাচ্ছিল ক্লাস, লাইব্রেরি, কোচিং আর বাসায়। আমাদের বিভাগের দুয়েক জনের সাথে কেমন আছেন??? ভালো আছি পর্যায়ের সম্পর্ক আছে। তা ছাড়া আর কিছু নয়, কিন্তু তখন কলেজে চলছে পুরোদমে প্রপোজ উৎসব, অবশ্য স্যার মেডামের অগোচরে। তবু ইতিমধ্যেই কয়েক জন খেয়েছে প্রিন্সিপাল স্যারের ওয়ার্নিং, কয়েকজন সম্ভ্রান্ত পরিবারের মেয়ের ভাইয়ের ক্যালানী, আর দুয়েক জন তো রীতিমতো মেয়েদের পেদানী খেল।
শাহীন স্যার (আমাদের বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান।) ক্লাসে ঘোষণা দিলেন ক্লাসে দুজন দায়িত্বশীল student দরকার একজন ছেলে একজন মেয়ে...
স্যারঃ কে? কে? হলে তোমাদের ভালো হয়???
বিভিন্ন জন বিভিন্ন জনের নাম বললো। একটা হাবাগোবা ছেলে আমার নামও বললো বরং আমাকে দেখিয়ে দিলো।
স্যারঃ silent এই যে চুপচাপ ছেলেটা (আমার দিকে ইশারা করে), আর ঐ মেয়েটা ঐ যে মাথা নিচু করে বসে আছে, লাল ওড়না এরা দুজন হলে কেমন হয়???
সবাই সমস্বরে ভালো....
স্যারঃ আগামী সপ্তাহে আমাদের কলেজ পিকনিকে যাবে তোমারা দুজন আগ্রহীদের তালিকা তৈরি করে আমার কাছে জমা দিবে দুদিনের মধ্যে....
আমিঃ ঠিক আছে স্যার
স্যারঃ তুমি বুঝতে পারছো? (মেয়েটির দিকে ইঙ্গিত করে)
মেয়েঃ মাথা নেড়ে সায় জানালো।
এই মেয়েটি সেই মেয়ে যার সাথে প্রথম দিন ধাক্কা খেতে খেতে বেঁচে গেছি।
দুদিন পর মেয়েটি লিষ্ট দিলো কিন্তু নিজের নাম নেই, আর মেয়েটি যদি না বলতো আমি যাব না তাই আমার নাম লিখিনি আমি বুঝতেও পারতাম না। কারন আমি তার নাম জানি না।
আমিঃ কেন জানতে পারি???
মেয়েঃ সব কেন এর উত্তর হয় না...
আমিঃ তবু.... (শেষ করতে পারিনি।)
মেয়েঃ ঐ দিন না আপনি কাকে যেন বলছিলেন "চাঁদ কারো জন্য জোছনার উৎস, কারো কাছে ক্ষুধার্ত নয়নের জ্বালা....। বলেই চলে যেতে উদ্যোগ নিলো
আমিঃ আপনার নামটা জানতে পারি???
মেয়েঃ জেনে কি হবে সব নাম তো আর মনে রাখার মত হয় না...
আমিঃ হয়তো আমার মনে থাকবে...
মেয়েঃ সুলতানা পারভীন শিমুল সবাই শিমু বলে ডাকে।
চলে গেলো মেয়েটি আর আমি কিছুক্ষণ নির্বাক দাড়িয়ে থাকলাম।
জানি না কি ভেবে যেন আমি নিজেই মেয়েটির নাম তালিকাভুক্ত করে দিলাম। স্যার কে সব বললাম আর এটাও বললাম যে আমি মেয়েটির পিকনিক ফি দিতে চাই, কারণ যে নিজে মানুষের নাম তালিকাভুক্ত করলো পিকনিকের জন্য সে নিজে যাবে না দেখতে খারাপ লাগে।
স্যারঃ সত্যি তোমাকে দেখে অবাক হই, আর স্যারদের.... থাক, মেয়েটিকে বলো তোমাদের দুজনকেই যেতে হবে আর তোমাদের দুজনের পিকনিক আমার পক্ষ থেকে ট্রিট...।
আমি কিছু বলতে চাচ্ছিলাম স্যার বললেন কোন কথা নয় যাও
আমি মেয়েটির কাছে গিয়ে তাকে ডাকলাম।
আমিঃ কিছুটা সংকোচ নিয়ে সুলতানা পারভীন শিমুল...!!!
সেঃ বলুন আর আমার নাম মনে রাখার জন্য ধন্যবাদ
আমিঃ স্যার বলেছেন আপনাকে যেতে হবে। আপনি আর আমি স্যারের পক্ষ থেকে যাচ্ছি।
সেঃ সত্যি??? (কিছুটা সামলে নিয়ে) না আমি কি ভাবে যাবো??? আমার তো অনেক সমস্যা আছে...
আমিঃ পিকনিকে আপনাকে আসতেই হবে।
সেঃ কেন???
আমিঃ আমি যদিও মধ্যবিত্ত পরিবারের সাধারণ একজন ছেলে কারো চোখের ভাষা বুঝি না... অতশত বুঝতে পারি না। কিন্তু আপনার ছলছলে চোখ যে (দ্রুত চোখ ওড়না দিয়ে মুছে নিলো) একটা রহস্য গল্পের দিকে ইঙ্গিত করছে সেটা বুঝতে বাকী নেই। তাই আমি আপনার সে রহস্য গল্পের শ্রোতা হতে চাই, এই গল্পের সবটুকু কষ্ট অনুভব করতে চাই বরং নিজের করে নিতে চাই। কিছুক্ষণের জন্য আপনার সব কষ্ট গুলো আমাকে দিয়ে দিবেন আর বিনিময়ে আমি আপনাকে কিছু খুশি দিতে চেষ্টা করবো..... বলে পিছনে ফিরে চলতে শুরু করলাম, দু'কদম যাওয়ার আগেই.......
সেঃ শুনছেন.....
ঘুরে দাড়ালাম দেখি আবার ওড়না দিয়ে চোখ মুছে নিচ্ছে।
আমিঃ (কিছুটা চমকে উঠে) হুমম বলেন।
সেঃ আপনি আমাকে শিমু ডাকতে পারেন, আমি বলেছি আমার নাম মনে থাকবে না... তাই বলে কি পুরো নাম ধরে ডাকতে হবে??? হুম আমি পিকনিকে যাবো, আপনি জানেন আজ পর্যন্ত কেউ আমার সাথে... (চোখের জলের বাধ ভেঙে যেন জলোচ্ছ্বাস এসেছে।)
আমি ভেবে পাচ্ছি না কি করবো ভাবছি আমার প্রিয় রুমাল টা দিয়ে বলি "কাঁদবেন না লোকে অন্য কিছু ভাবতে পারে"। ততক্ষণে সে ছুটে পালালো ডেকে থামানো উচিৎ হবে কি না ভাবতে ভাবতে সে অদৃশ্য হয়ে গেল। ভাবলাম হয়তো ওর মনের কোন গভীর ক্ষতে আমি আবার নতুন করে আঘাত করেছি। কাল যখন কলেজে আসবে ক্ষমা চেয়ে নিবো।
একে একে তিন দিন চলে গেল কিন্তু শিমু এলো না, নিজেকে খুব অপরাধী মনে হচ্ছিল, আমার জন্য একটা মেয়ে কলেজে আসা বন্ধ করে দিয়েছে। এক ক্লাসমেটকে জিজ্ঞেস করলাম সুলতানা পারভীন শিমুলকে চিনে কি না বললো চিনে না। কিন্তু পিছন থেকে একটা পরিচিত মেয়েলি কন্ঠস্বর শুনতে পেলাম "আমি চিনি"
আমিঃ এ তিন দিন কোথায় ছিলেন???
সেঃ কিছু না একটু অসুস্থ ছিলাম। কেন খুঁজছেন???
আমিঃ পিকনিকের প্রস্তুতি শেষ কি না... সেটাই জানতে চাচ্ছিলাম
সেঃ ও আচ্ছা.....??? ঠিক আছে ক্লাসের সময় হয়ে যাচ্ছে চলুন ক্লাসে যাই।
পরের দিন সকালে পিকনিকের জন্য বাসে উঠলাম। স্যার বললেন মেয়েরা সামনে বসবে আর ছেলেরা পিছনের দিকে। আমি মধ্যের একটা সিটের জানালার পাশে বসে পরলাম। বাস ছাড়তে অনেক সময় বাকি, তাই কবি মাহবুব রহমানের "কিন্তু গল্প নয় " উপন্যাস পড়তে শুরু করলাম। একটা ছেলে আমার পাশে বসলো, জিজ্ঞেস করলাম কেমন আছে... বললো ভালো।
আমি আবার পড়তে শুরু করলাম, বাস যে কোন সময় চলতে শুরু করেছে বুঝলাম না।
এই যে আমি কি জানালার পাশে বসতে পারি??? (সেই পরিচিত মেয়েলি কন্ঠস্বর) চমকে উঠে বললাম আপনি কখ..
সেঃ অনেকক্ষণ আগেই এখানে বসেছি আপনাকে গল্প শুনাবো বলে। কিন্তু আপনি তো অন্য গল্প নিয়ে ব্যস্ত....
আমিঃ দুঃখিত আমি খেয়াল করিনি। এটা আপনার জন্য (বইটা এগিয়ে দিয়ে)
সেঃ ধন্যবাদ কিন্তু আপনি তো এটা পড়ছেন...
আমিঃ আমার ইতিমধ্যেই দু বার পড়া শেষ।
সেঃ কিন্তু আমি তো আপনার জন্য কিছু আনতে পারি নি।
আমিঃ আপনি যে এসেছন এটাই তো অনেক।
এমন সময় গাড়ি যেন কন্ট্রোলহীন হয়ে গেল। পরক্ষণেই থেমে গেল, চাকা পাঞ্চার হয়ে গেছে।
আমরা সবাই বাস থেকে নেমে এলাম।
গাড়ি যেখানে পাঞ্চার হয়েছে সেখানে, রাস্তার ওপাশে একটা কাশবন আছে। খুব ইচ্ছা করছে কাশবনে যেতে কাশফুল ছুঁয়ে দেখতে। যখন কাশফুলের আলতো স্পর্শ চেহারায় লাগে তখন যে অনুভূতির সৃষ্টি হয় তা বলে বোঝাতে পারবো না। তাই লোভ সামলাতে পারলাম না, তদুপরি চাকার পাঞ্চার সারাতে সময় লাগবে। একবার ভাবলাম শিমুকে জিজ্ঞেস করি আমার সাথে যাবে কি না, কিন্তু সমুচিত মনে হলো না। আমি বললাম শিমু আমি কাশবন থেকে একটু ঘুরে আসি স্যার বা কেউ খুজলে বলবেন কাশবনে আছি, জলদি চলে আসবো।
শিমুঃ কাশফুল আনবেন???
আমিঃ আপনার পছন্দ? লাগবে???
শিমুঃ ফুল আর তার সুভাষ কে পছন্দ করে না?
আমিঃ কিন্তু কাশফুলের তো সুভাষ নেই স্পর্শ আছে, আলতো স্পর্শ...
শিমুঃ মানে আপনি আনবেন না???
আমিঃ কখন বললাম???
শিমুঃ আচ্ছা আপনি কাশফুল দিয়ে কি করবেন?
আমিঃ কাশফুলের আলতো স্পর্শ আমার খুব ভালো লাগে...
শিমুঃ তো আমি যদি কাশফুলের স্পর্শ নেই দোষ হবে?
আমিঃ কাশবনে গিয়ে যে অনুভূতি হয় তা কি এখানে পাবেন???
শিমুঃ আপনি কাশফুল আনবেন কি না বলেন?
আমিঃ আনবো সমস্যা নেই।
শিমুঃ ধন্যবাদ
আমিঃ অনুমতি দিলে এখন যেতে পারি।
শিমুঃ আপনাকে অনুমতি দেওয়া বা নিষেধ করার অধিকার কি আছে আমার???
আমি কিছু বলতে যাচ্ছিলাম এমনি...
শিমুঃ শুধু কি ঝগড়াই করবেন না কাশবনে ও যাবেন???
কথা না বাড়িয়ে কাশবনে রওয়ানা হলাম। আমি শুধু রাস্তার ওপারে পৌঁছেছি, পিছন থেকে শিমুর (সুলতানা পারভীন শিমুল) কন্ঠস্বর দাঁড়ান আমিও আসছি একা কেন যাবেন বাচ্চা ছেলে যদি ভয় পান। বলেই সে ছুটলো আমার দিকে। হয়তো ওর চোখ দুটো আমার মাঝেই সীমাবদ্ধ ছিল। আর তাই দ্রুতগতিতে ছুটে আসা হবিগঞ্জ এক্সপ্রেস টা দেখতে পায়নি। মুহূর্তেই ঘটে গেল ঘটনাটা শিমুকে হবিগঞ্জ এক্সপ্রেসের ধাক্কা......
আমি তখনো দাড়িয়ে আছি রাস্তার ওপাশে শুধু দাড়িয়ে ছিলাম, আর সেই ছলছলে চোখের কথা মনে পড়ছিল। হয়তোবা হারিয়ে গেছিলাম ঐ ছলছলে চোখের ভাবনায়। স্যার যখন আমার কাঁধে হাত রাখলেন তখন ইচ্ছা করছিল স্যারকে জড়িয়ে ধরতে হয়তো কাঁদতামও।
সবাই যখন শিমুর ছিন্ন দেহ দেখা দেখি করছে আমি তখন শিমুর ছলছলে চোখের অসমাপ্ত রহস্য নিয়ে ভাবছি। যে রহস্য আর কখনো উন্মোচন হবে না, রহস্যই রয়ে যাবে। আমি কিন্তু শিমুকে (আসলে শিমুর ছিন্ন দেহকে) শেষ পর্যন্ত দেখতে যাইনি.....
০২ রা নভেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৩:১৪
কালো_পালকের_কলম বলেছেন: দোয়া করবেন যেন ভালো লিখতে পারি
২| ০২ রা নভেম্বর, ২০১৮ সকাল ১০:৩৯
Sujon Mahmud বলেছেন: ভালো লিখছেন।
০২ রা নভেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৩:১৪
কালো_পালকের_কলম বলেছেন: ধন্যবাদ... দোয়া করবেন যেন ভালো লিখতে পারি
৩| ০২ রা নভেম্বর, ২০১৮ সকাল ১১:৫৬
রাজীব নুর বলেছেন: এটা অবশ্যই বাস্তব। তাই না?
০২ রা নভেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৩:১৫
কালো_পালকের_কলম বলেছেন: কল্পনা ধরতে পারেন...
৪| ০২ রা নভেম্বর, ২০১৮ সকাল ১১:৫৬
রাজীব নুর বলেছেন: এটা অবশ্যই বাস্তব। তাই না?
©somewhere in net ltd.
১| ০২ রা নভেম্বর, ২০১৮ সকাল ৯:৪০
ওমেরা বলেছেন: অনেক মুগ্ধতা নিয়ে লিখাটা পড়তে ছিলাম কত ভাল লাগতেছিল, কিন্ত শেষ মূহুর্তে খুব কষ্ট লাগল। তবু অনেক ভাল লাগা লিখায়।