![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ফরাসি বিপ্লব এর মাধ্যমে অষ্টাদশ শতকে ফ্রান্সের গণতন্ত্রের সূচনা হয়েছিল। স্বাধীনতা, সাম্য ও মৈত্রী এই স্লোগানটি সামনে রেখেই তারা গণতন্ত্রের পথে হাঁটা শুরু করে। এই বিপ্লব ছিল মূলত স্বৈরশাসক লুই সরকারের বিরুদ্ধে। তৎকালীন ফ্রান্সের সাধারণ জনগণ বছরের পর বছর ধরে লুই সরকারের নির্যাতনের শিকার হন। এই নির্যাতিত ও বঞ্চিত মানুষের পুঞ্জিভূত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ছিল এই ফরাসি বিপ্লব কারণ সমগ্র ফ্রান্সের ৯৫ শতাংশ সম্পত্তির মালিক ছিল মাত্র পাঁচ ভাগ মানুষ অথচ সেই পাঁচ ভাগ মানুষই কর ফাঁকি দিত এবং এর ফলে বেড়েছিল সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্য, সাথে ছিল রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক অব্যবস্থাপনা, নিয়ন্ত্রণহীন জাতীয় ঋণ, উচ্চ বেকারত্ব, উচ্চ মূল্যস্ফীতি এবং খাদ্য সংকট। লুই সরকারের সাথে ছিল অসৎ মন্ত্রিসভা (যেমন অর্থ মন্ত্রণালয় দায়িত্বে ছিল জ্যাক ন্যাকার) তারা আবার নিজেদেরকে জাতীয় অভিভাবক জ্ঞান মনে করতেন এবং কিছু জেনারেল ও রক্ষীবাহিনী যারা সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলে বাস্তিল দুর্গের বন্দী করে নির্যাতন করত। বাস্তিল দুর্গ ছিল স্বৈরাচারী লুই সরকারের নির্যাতন এবং জুলুমের প্রতিক । একবার কোন বন্দী সেখানে প্রবেশ করলে আর জীবন নিয়ে ফিরে আসার সম্ভাবনা থাকতো না।
২০০ বছর পরে এসোও লুই সরকারের সাথে হাসিনা সরকারের চরিত্রের কোন অমিল খুঁজে পাওয়া যায় না। অদক্ষ ও ক্ষমতা লিপ্সু মন্ত্রিসভা, দলকানা মিডিয়া, পা চাটা প্রশাসন ও পুলিশ বাহিনী, মেরুদণ্ডহীন নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতিবাজ গভর্নর এবং ব্যাংক লুটপাট, চরম দুর্নীতি ও অর্থপাচার, নির্যাতন, আয়নাঘর ......…বলে শেষ করা যাবে না।
১৭৭৯ সালের বাস্তিল দুর্গ গত ১৫ বছরে আয়নাঘরে রূপ নিয়েছিল। বাস্তিল দুর্গের সেই অত্যাচারী প্রেতাত্মারা ভর করেছিল বাংলাদেশের বিভিন্ন গোয়েন্দা বাহিনীর উপর। গত ১৫ বছর ধরে দেখলাম সরকারের এক দানবীয় রূপ যেখানে গণহত্যা, ভিন্নমত অবলম্বীদের গলা চিপে ধরা, গণতান্ত্রিক সব প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে দিয়ে স্বৈরতন্ত্র কায়েম করেছিল। কে বানাল এই দানবীয় সরকার? একসময় যিনি গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলন করেছিলেন কেন তিনি পথ হারালেন?
জেনারেল এরশাদের নয় বছর স্বৈরশাসন, স্বৈরাচারী মনোভাব নিয়ে খালেদার ১৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৬ সালে প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন, প্রধান বিচারপতি কে এম হাসানকে বয়স বাড়িয়ে প্রধান উপদেষ্টা বানানোর চেষ্টা, সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার, মাইনাস টু ফর্মুলা, ২০০৮ নির্বাচনে হাসিনা সরকারের জয়, তত্ত্বাবধায় সরকারের আইন বাতিল, বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার, যুদ্ধ অপরাধীদের ফাঁসি কার্যকর, ভারত প্রীতি , স্বৈরাচারী মনোভাব....... এ যেন স্বৈরাচারের দুষ্টচক্র।
এই দুষ্টু চক্র থেকে বের হওয়ার উপায় কি? পলিটিক্যাল পার্টি অ্যাক্টের কনসেপ্ট কি এর সমাধান দিতে পারে? যে দেশে ৭২ এর সংবিধান এত কাটাছেঁড়া হয়েছে যে তা আবার পুনরাই লেখার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে, সেখানে পলিটিক্যাল পার্টি এক্টও অকার্যকর করতে কোন দল কি বিন্দুমাত্র দ্বিধাবোধ করবে?
এর সমাধান কি? ইতিমধ্যে দলীয় লোকদের ভিসি বা প্রশাসনে বসানোর তোর জোর, চাঁদাবাজি-দখলদারিত্ব শুরু হয়ে গেছে বলে শোনা যাচ্ছে বিভিন্ন গণমাধ্যমে। আমরা যতই বলি সংস্কার! সংস্কার! বা কবে নির্বাচন ? দেশ সংস্কার করতে সময় লাগবে, সব সময় দিতে হবে। এই সংস্কার কি রাজনৈতিক দলগুলো দেশের স্বার্থে ধরে রাখবে নাকি নিজেদের স্বার্থে নিজেরাই পুনরায় সংস্কার করে নিবে?
©somewhere in net ltd.