"অতঃপর বাঁশ"

১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ সকাল ৭:২৭

মেয়েদের জ্বালা-যন্ত্রণা আর ভালো লাগে না। তারা কি করে পারে একটা ছেলেকে এতো ডিস্টার্ব করতে! মেয়েদের জ্বালায় কত সিম-কার্ড যে পরিবর্তন করেছি, তা আর কে জানে! এরকম ঘনঘন সিম পরিবর্তন কোনো মেয়েরাও করে না।
.
নাহ, একজন ছেলে মানুষ হয়ে কাপুরুষদের মতো বারংবার সিম পরিবর্তন করাটা মোটেও ঠিক হচ্ছে না। আর কত সহ্য করব মেয়েদের অত্যাচার ! এদের থেকে মুক্তির পথ বের করতেই হবে।
.
এক পর্যায়ে এসব কথা আম্মুর কাছে শেয়ার করলাম। ব্যস, লও ঠেলা! তেলে আর বেগুনে আপন শক্তিতে জ্বলে উঠলো, "হারামি, তাই জইন্যে তোরে ফোন কিইন্না দিছি! সারাদিন মাইয়্যাদের লগে কথা বলছ, ফ্রেম করছ? আহুক তোর বাপ দেখামু মজা! আজ তোর প্রেমের চৌদ্দ ঘুষ্ঠি ছাপ কইরা ছাড়মু।"
— আম্মু প্লিজ আমার কথাটা ভালো করে একবার শুনবে তো!
— চুপ কর শয়তানের হাড্ডি! কত কষ্ট করে ল্যাহা পড়া শিখাচ্ছি! আর তুই প্রেম করছ? আইজক্যায় তোর বাপরে কয়য়া একটা মাইয়্যার সাথে বিয়া দিমু। তহন বুঝবি কত ধানে কত তুষ!
— আম্মু...! একবার বিশ্বাস করো। ঐ মেয়েগুলোই আমাকে বরাবর ফোন দিয়ে বিরক্ত করে। এই দেখো ওদের জ্বালায় কতগুলো সিম পরিবর্তন করেছি। তবু কেমনে যে আমার নাম্বার তারা পায়!!
— আমাকে বোকা ভাবতেছিস। মনে করছিস তোর আম্মু পাগলী, কিছু বুঝে না। একটা কথা.....
.
এই দেখো আম্মু, আবার অপরিচিত একটা নাম্বার থেকে কল এসেছে।
— কই দে আমাকে ফোনটা দে দেখি।।
.
অ্যাকশন শুর...
ফোন রিসিভ করেই আম্মু বলতেছে, “তো বউমা সারাক্ষণ বাপের বাড়িতে থাকলে সংসার চলবে? নাকি বাড়িতে আসা লাগবে না? আমি একায় একায় কাজ করতে করতে মরতাছি আর তুমি বাপের বাড়িতে বসে বসে 'ইন্ডিয়ান সিরিয়াল' দেখতেছো।”
— আন্টি আপনি কিসব উল্টা-পাল্টা কথাবার্তা বলতেছেন? কে আপনার বউমা?
— ঐ মাইয়্যা এতো নাটক করছ কিল্লাইগ্যা? আমি তোর আন্টি না, শাশুড়ীমা হই।
— Sorry Aunt, এটা রং নাম্বার! টুঁ টুঁ টুঁ...
.
[আম্মু, মাইয়্যার অবস্থা কাহেল কইরা দিয়েছে। ঐ মেয়ে আর দ্বিতীয়বার কল দিবে বলে মনে হয় না।]
.
আমি আম্মুর থেকে ভয়ে ভয়ে ফোনটা নিয়ে আমার রুমে আসতে যাবো ঠিক ঐ সময় আম্মু বলতাছে, এই থাম!
— জি আম্মু।
— এই বদ বিষয় নিয়ে এরকম কথাবার্তা আমার কানে আর একবার আসলে, তোর এই বাড়িতে স্থান নাই।
.
যাহ শালার কপাল রে! একটা বিপদ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আম্মুর কাছে গেলাম। কিন্তু সেখান থেকেও একটা বিপদ ঘারে করে নিয়ে আসতে হলো।
.
তা যাইহোক তবুও দুই-তিন থেকে কেউ আমাকে আর ফোন দিয়ে বিরক্ত করছে না। আহা, শান্তিরে! এখন থেকে আরামচ্ছে 'লুডু স্টার' গেমটা খেলতে পারবো।
.
সন্ধার পর স্কুলের পড়া পড়তে বসেছি। হঠাৎ ফোনটা বেঁজে উঠলো। কলটা রিসিভ করেই আম্মুর মতো করে কিছুটা আবাল মার্কা কথা কইলাম, "আচ্ছা আপনি আজকে কয় কেজি গান্জা খাইছেন। বর্তমানের মাইয়্যারাও যে নেশারু, তা আপনারাই প্রমাণ করে দিচ্ছেন। যতসব।
— এই যে ছেলে কথাবর্তা ঠিক করে বলবে। কিসব আবোল-তাবোল কথা বলতেছো!
— আমি কেমন করে কথা বলব না বলব এটা আপনার দেখার বিষয় নয়।
— আচ্ছা তুমি নাঈম না?
— আমি কে, কি? এটা আপনার জেনে কি হপে?
— আচ্ছা ঠিক আছে। তবে শুনে রেখো আমি তোমার স্কুলের তানিয়া ম্যাডাম বলছি।
— কি! ম্যাডাম...!
— টুঁ টুঁ টুঁ...!
.
যাহ শালা আবার একটা বাঁশ। একটার পর একটা বাঁশ। এখন কি হবে আমার! এই তানিয়া ম্যাডাম আমার নাম্বার কোথায় পেয়েছে! আর তিনি কল দিবেই বা কেন? হতে পারে কোনো গুরুত্বপূর্ণ কারণে কল দিয়েছিল। আর আমি কি করলাম? গরুর মতো আচারণ করলাম। যে ম্যাডাম আমাকে এতো স্নেহ করতো আর আজ তাকে এত অকট্য ভাষায় কথা বললাম! এখন আমার কি হবে রে!!
.
নাহ, এটা হতে পারে না। তার থেকে ক্ষমা চেয়ে নিতে হবে। ম্যাডামকে বুঝিয়ে বলতে হবে যে, আসলেই কাহিনীটা কি? ম্যাডামের ফোনে কল দিলাম। কিন্তু এ কি! সুইচ অফ করে রেখেছে।
.
একটার পর আর একটা বাঁশ। আর টেনশন তো বৃদ্ধি হতেই আছে। ম্যাডাম যদি আম্মুকে বলে দেয়, "আমি তার সাথে খারাপ আচারণ করেছি। তাহলে আমার অবস্থা কি হবে আল্লাহই ভালো জানে।"
.
কি আর অবস্থা হবে! ঐযে বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতে কইছিল....
.
লেখাঃ কাওছার আজাদ (নাঈম)

২ টি +১/-০