নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

রাত নিরবতায় নির্ঘূম আমি এক যুবক বসে আছি ঘুম হীন কেন তার উত্তর খুজছি

খালেদ সময়

আমি তোমার মত আপন করে আর কারে পাই বল

খালেদ সময় › বিস্তারিত পোস্টঃ

মৃত্যুই কি মুক্তির সমাধান? ...কখনো নয়

১৭ ই জানুয়ারি, ২০১০ রাত ৯:৩৭

[মৃত্যু কখনও মানুষকে মুক্তির সমাধান দিতে পারে না। দুঃখ, হতাশা, জরাজীর্ণতা আর বিষন্নতার ক্লেদ পেড়িয়েই জীবনকে জয় করতে হবে। সবশেষ দেখার সহ্য ক্ষমতা রাখতে হবে। আর যে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে নিজেই মৃত্যুর কারণ হয় সে কখনো জয়ী হয়না। ভীরু, কাপুরুষ হীনমন্যতায় ভুগে বিষন্ন বেদনায় ধুকে ধুকে মৃত্যুকে আলিঙ্গণ করে নেয়। এপথ অন্ধকারের পথ। গত ১২জানুয়ারী কুমিল্লার রূপসী বাংলায় প্রকাশিত এম.এইচ মনিরের একটি উজ্জল সম্ভাবনার অপমৃত্যু শিরোনামের লেখাটি যেভাবে পাঠকের হৃদয় ছুয়েছে তার পরিপ্রেক্ষিতে কিছু লিখার ভাবনা থেকে প্রবন্ধটি রচিত]



টিপরাবাজারে এসে রিক্সাচালককে বললাম যাবেন ওয়ার সিমেট্রি গেটে ফরিজপুর। সে বললো ওঠেন। যেতে যেতে ফোন করলাম বেশ কয়েকজনকে। সে ফোনের কথা শুনে পিছন ফিরে একবার তাকিয়ে বললো ভাই আপনি ওই বাড়ীতে যাচ্ছেন যে মেয়েটা গতকাল মারা গেছে। বললাম হ্যা, চিনেন বাড়ীটা? সে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো, চিনবোনা! এতো আমাদের গ্রামের মেয়ে। আহ! বড্ড ভালো মেয়ে ছিল। কেন যে এই কাজ করলো বুঝলাম না। জানেন সে সবসময় আমাদের সাথে হাসি দিয়ে কথা বলতো। ভাড়া দেবার সময় কখনও দামদর করতো না বরং কখনো দু’চারটাকা পাওনা থাকলে সে বলতো রেখে দেন চাচা। মোহাম্মদ আলীর রিক্সায় রোকসানা বহুবার যাত্রী হয়েছে। যেতে যেতে রাস্তার দুই সারিতে স্কুল ও কলেজ ড্রেস পড়া মেয়েছেলেদের দেখে বুঝলাম সবাই রোকসানাকে বিদায় দিতে এসেছে। কেউবা তার বান্ধবীকে জড়িয়ে বিলাপ করছে রাস্তায়। বেদনাহত হয়ে এই দৃশ্য দেখছিলাম।

রোকসানার চোঁখ ধাঁধানো পারফরমেন্স নিয়ে এখনও মুখরোচক আড্ডায় মেতে উঠে ক্যান্টনমেন্ট কলেজের তার সহপাঠী বন্ধুরা। সবাই তাকে বলতো তুই একাই মাত করে দিলি পুরো অডিয়েন্স, আর আমরা ফ্লপ। রোকসানাকে নিয়ে একথা বাড়িয়ে বলা নয়। ক্যান্টনমেন্ট কলেজের একাদশ শ্রেণীর ছাত্রী রোকসানা শারমিনের মধ্যে তার বয়সের ছাপ যতটুকু পড়েছে তার চেয়ে তার অর্জন অনেক বেশি। আর তা বুঝতে পারলাম যখন তার শোকেসে রক্ষিত ক্রেস্ট, সার্টিফিকেট আর বিভিন্ন রকম পুরস্কারগুলো দেখলাম তখন। ২৭ডিসেম্বর’০৯ ছিল তার সর্বশেষ ষ্টেজ প্রোগ্রাম। কুমিল্লা সেনানিবাসের জিওসির বিদায় উপলক্ষ্যে ক্যান্টনমেন্ট গার্লস স্কুল প্রাঙ্গণের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানটির আমেজ এখনো কাটেনি। আর এরই মাঝে সবাইকে কাঁদিয়ে হতবাক করে গত ১১জানুয়ারী’১০ পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করলো রোকসানা। এভাবে চোখের সামনে দুরন্ত প্রাণোচ্ছল তরুনীটি অকালেই ঝরে যাবে তা কি কেউ ভাবতে পারে। রোকসানার মৃত্যু স্বাভাবিক নয়। কি এমন যন্ত্রনা আর মানসিক বেদনায় তার জীবন বিপন্ন হয়েছিল তাই এখন সবার জানার আগ্রহ। কিশোরী রোকসানা মৃত্যুকেই মুক্তির পথ হিসেবে বেছে নেয়, যা কারো কাছে কামনা হতে পারে না।

কুমিল্লা সেনানিবাসের উত্তরে কমনওয়েলথ সমাধিস্থলের পাশে ফরিজপুর গ্রামে মা আর দু’ভাই শামীম- সাব্বিরের সাথে তার জীবনের পথচলা। বাবা অবসরপ্রাপ্ত সেনা সার্জেন্ট বর্তমানে সৌদি প্রবাসী। ক্যান্টনমেন্ট গার্লস স্কুল থেকে এসএসসি পাশ করে রোকসানা ভর্তি হয় কোটবাড়ীস্থ ক্যান্টনমেন্ট কলেজে। রোকসানা ছিল আর দশজন বন্ধুর চেয়ে আলাদা, সংগীত আর নৃত্যে তার দখল ছিল ছোটবেলা থেকে। অর্ধশতাধিক ক্রেস্ট আর সার্টিফিকেট সে কথারই প্রমাণ করে।। প্রচন্ড অভিমানিও ছিল সে। তার অভিমানের রহস্যে ঘুরপাক খাচ্ছে নানা প্রশ্ন। সে যে দিনটিতে মৃত্যুর পথ বেছে নেয় সেদিন ছিল তার বড় ভাইয়ের বিয়ে। তার বাবা প্রবাসে যাবার পূর্বে এখানে বাড়ি করেন ছেলেমেয়েদের জন্য। তাদের মূল বাড়ী সিলেটের জাফলংয়ে। আর তাই কুমিল্লায় তাদের নিকটাত্মীয় বলতে খুব একটা নেই।





ক্যাপসন-ছবিতে তিন বন্ধুর মাঝে হাস্যোজ্জল রোকসানা। সবার হাসি আজ মিলিয়ে গেছে বিস্মৃতির মাঝে।



রোকসানা কেন মৃত্যুকে মুক্তির সমাধান মনে করলো?

রোকসানার কি এমন দূঃখ ছিল যা সে কাউকে বলতে পারেনি। যা সে সহ্য করতে পারেনি এবং যা কেউই বুঝতে পারেনি। কোন অভিমানে তার এই চলে যাওয়া। রূপসী বাংলার সহকর্মী মনির ভাইয়ের রিপোর্ট আর সহপাঠীদের বক্তব্য অনুযায়ী তার পরিবারের সদস্যদের সাথে তার দূরত্ব বেড়ে গিয়েছিল অনেক। আর তাইতো বড় ভাই শামীমের বিয়ের সময় নিজের ঘরে পায়ে কলেজের স্কার্ফ বেধে সিলিং ফ্যানে ওড়না পেচিয়ে সে মৃত্যুর পথ বেছে নেয়। বড় মর্মান্তিক পথে তার পা বাড়ানো। তার পরিবার জানায়, বিয়ের বরযাত্রীতে যাবার সময় তাকে অনেক বলার পরও সে রাজী হয়নি, এবং সে তার ভাইকে বর সাজিয়ে বিদায় দিয়েছিল অনেক আনন্দ করে। তাহলে কোন রহস্যে জড়িয়ে গেল রোকসানার মৃত্যু? তবে তার সহপাঠীরা জানায় সে বেশ কিছুদিন যাবৎ কলেজে অনিয়মিত ছিল। তার পরিবারে তার দু’ভাই তাকে মানসিক যন্ত্রনায় রাখতো বলে তারা জানায়। সব জিজ্ঞাসার কোন সঠিক জবাব দিতে পারেনি তার পরিবার। মানুষ কখন এই পাপের পথ বেছে নেয়- যখন ভেতরে চেপে রাখা যন্ত্রণাগুলো হতাশায় নিমজ্জিত করে ফেলে। যখন তার স্বাভাবিক জীবনের সব পথ রুদ্ধ হয়ে যায়। যখন সমাজ থেকে সে নিগৃহীত হয়। যখন বিষন্নতার আধার তার স্বপ্নীল ভবিষ্যতকে ঢেকে ফেলে। চরম অবহেলিত হয়ে না পাওয়ার বেদনা থেকেই মানুষ এই বিপন্ন অন্ধকার মৃত্যুর পাপের পথে ধাবিত হয়।



রোকসানার মৃত্যুর সংবাদ যেভাবে পেলাম?

সোমবার অফিসের কিছু এ্যাসাইনমেন্টের কাজ শেষ করে বিকেলে প্রচন্ড মাথা ব্যাথা করছিল। সেদিন বিকেল থেকে প্রচন্ড শীতও পড়েছিল। তাছাড়া মাথাটাও ভীষণ ব্যাথা করছে। বাসায় এসেই বিছানায় গা এলিয়ে দেই। আম্মা মাথায় হাত দিয়ে বলেন, তোর তো ভীষণ জ্বর। গলাও ব্যাথা করছে খুব। তারপর ওষুধ খেয়ে বিছানায় পড়ে থাকা। প্রচন্ড শীতে কম্বল মুড়ি দিয়েও যেন জমাট হয়ে যাচ্ছিলাম। এরই মাঝে বার্ডেরই এক ছোট বোন নিলীমা জলির বারবার মিসড কল। কল ব্যাক করলে প্রথমেই কাপা ও বিষন্ন কন্ঠে সে স্যরি জানালো মিসডকল ব্যালেন্সের জন্য। সে বললো ভাইয়া একটা সেড নিউজ; বলেই ফুপিয়ে কাঁদতে লাগলো। বুঝতে পারছিলামনা কি হয়েছে। বললাম কি হয়েছে- বিদ্যুৎ চমকানোর মতো সে বললো, রোকসানা নেই। আমি বললাম কি বলছো, কান্না জড়িত অষ্পষ্ট শব্দে সে জানালো আজ বিকেলে সে মারা গেছে। শুধু বললাম- ভুল করছো নাতো, এতো অবিশ্বাস্য কোথায় তুমি? সে জানালো বাসায়। আমি দ্রুত বেরিয়ে গেলাম বাসা হতে। আর ভাবছিলাম হয়তো কোন বড় রোগ ছিল তার। গত কিছুদিন আগে সে কলেজে হঠাৎ জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিল। তারপর তাকে মেডিকেল কলেজে ভর্তি করানো হয়। ঐদিনই সে সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরে। এবং পরে সে কলেজেও আসে। এই খবরটি আমি জানতাম। জলিদের বাসার সামনে এসে দেখি রোকসানার সহপাঠী কয়েকজন জমে গেছে সেখানে। আমি পৌছতেই এগিয়ে আসে রোকসানার খুব কাছের বন্ধু পূজা। ঢুকরে কেঁদে উঠে পুজা বললো ভাইয়া, এ কি হলো! রোকসানা আমাদের ছেড়ে চলে গেছে। আমি বললাম খবরটা নিশ্চিত হও। কান্না থামাও। পূজা বললো বোর্ড মার্কেট থেকে কিছুক্ষণ আগে তার ছোট ভাই পার্থ এই খবর শুনে এসে তাদের জানিয়েছে। তাদের দুই বান্ধবীর কান্না দেখে রাস্তায় যারাই যাচ্ছিলেন সবাই দাড়িয়ে যাচ্ছেন। কি হয়েছে? পূজাকে বললাম তার বাসার কাছে কারও নাম্বার আছে? বললো না। বললাম কলেজের টিচারের নাম্বার থাকলে জিজ্ঞেস করো, তারা কি জানে! জলিকে মোবাইলটা দিলাম ফোন করো। সে এক টিচারকে ফোন করলে টিচার জানালো হ্যা, ঘটনা সত্য। তিনি রোকসানার বাসায় আছেন। কিভাবে মারা গেলা সে জানতে চাইলে তিনি জানালেন, ষ্ট্রোক করেছে। আমাদের মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো। জলি ফোন রেখে যখন তার মৃত্যুর কারণ বলল। তারা ঢুকরে কেঁদে বললো, গত কয়েকদিন যাবৎ সে কলেজে কারও সাথে কথা বলছেনা, হাঁসছে না, তার বাসায় তাকে বন্দী করে রাখা হয়, আর তাকে কারো সাথে যোগাযোগ করতে দেয়া হয় না। তার বড় ভাই এবং ছোট ভাই প্রতিনিয়ত তাকে শারিরীক নির্যাতন করে। তার বাবা দেশে না থাকায় তার ভাইয়েরা মায়ের শাসন মানেনা। ষ্ট্রোক করে এই কিশোরী মেয়ে মারা গেছে। বিষয়টা মানতে পারলাম না। বললাম অন্যদের ফোন কর। হ্যাপী এবং রূপা জানালো তাদের বন্ধুটি গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছে। ততক্ষণে এখানে আমাদের ঘিরে দাড়িয়ে আছে, রাশেদ, আলম, নাদিয়ুল, শাওন, শিশির, পিংকু, আকিব, আমির, খান, সাগর এবং বেশ কয়েকজন খালাম্মাসহ আরো অনেকে। জলিকে বললাম আবার টিচারকে ফোন করো। হয়তো সামাজিকভাবে হেয় হবার বিষয় চিন্তা করে টিচার সেসময় একথা বলেছেন। জলি টিচারের সাথে ফোনে কথা বলে এবার নিশ্চিত হলো সে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। বিষন্ন মনকে শান্তনা দিয়ে খবরটি জানালাম বার্ড এমসিসি ক্লাবের সভাপতি ও বার্ডের সহকারি পরিচালক আবদুল মান্নান ও ক্লাব সহকর্মী শেখ শাহরিয়ার আহমেদ, নাদিম ও রানাকে। সুইসাইডে রোকসানার মৃত্যুর খবর তাদের বলিনি। বলেছি সে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। রাতে প্রচন্ড শীতে রাস্তায় দাড়িয়ে সবাই পরামর্শ করছিলাম আমরা এখন কি করতে পারি। মান্নান চাচা আমাকে জানিয়েছেন ক্লাবের পক্ষে কিছু ছেলেদের সেখানে পাঠানোর জন্য। আসলে কি রোকসানা বার্ড এমসিসি ক্লাবের সাথে একটি প্রোগ্রাম করে সবাইকে যেমন আপন করে নিয়েছে তাতে সবাই তার মৃত্যুর খবরে ব্যথিত এবং মর্মাহত। আর প্রোগ্রামের একজন সংগঠক হিসেবে আমি ভাবতে পারছিলামনা মেয়েটি এতো দ্রুত এই লোকালয় থেকে সবাইকে ছেড়ে চলে গেছে না ফেরার দেশে।



শেষ কথা রেখেছিলাম;

১৮ডিসেম্বর’০৯ বার্ডের এমসিসি ক্লাবের প্রোগ্রাম শেষে পরদিন আমরা আয়োজন করি ডিনার পার্টির। সেদিনও দাওয়াত ছিল আমাদের অতিথিদের। সন্ধ্যার পর হ্যাপী ও রোকসানা আসছে কিনা তা জানতে ফোন করে পূজা। রোকসানা বিষন্ন মনে পূজাকে বললো, আমি রেডি হয়ে আছি, কিন্তু মা আজ আমার সাথে আসছে না। আর ভাইয়ারাও কেউ আসতে দিচ্ছে না। পূজা বললো দেখ চেষ্টা করে আসতে পারিস কিনা। সেদিন সে আসতে পারেনি। পরদিন পূজা ও জলি কলেজ থেকে আমাকে ফোন করে বললো ভাইয়া কাল রাতে রোকসানা আসতে পারেনি বলে সে খুব মন খারাপ করে আছে। সে অনেক কেঁদেছে। তারা বললো একটু রোকসানার সাথে কথা বলেন, আমি তাকে দুষ্টসূরে বললাম কি রুকসো মন খারাপ কেন? ভারী গলায় বললো কই নাতো। তারপর তার খোজ খবর নিলাম। সবশেষে বললাম, ভাইয়া মন খারাপ করোনা, আমরা খুব শীগ্রই আবার কোন এক বিকেলে একসাথে মিলিত হবো। আর সেটা ২৭তারিখ তোমাদের প্রোগ্রাম শেষ করার পর। সেনানিবাসের জিওসির বিদায় উপলক্ষে গার্লস স্কুলে তাদের একটি কালচারাল প্রোগ্রাম ছিল। আর এই প্রোগ্রামই ছিল রোকসানার শেষ প্রোগ্রাম। নতুন বছরের প্রথম দিন আমরা চা-আড্ডার আয়োজন করবো আর সবাই একত্রিত হবো ভেবেছিলাম কিন্তু ব্যস্ততার কারণে পারিনি। ১১জানুয়ারী রোকসানার মৃত্যুর পরদিন আমরা সবাই তার বাড়ীতে ছুটে গিয়েছিলাম তাকে বিদায় জানাতে। সেদিন তার বন্ধু সহপাঠীদের চিৎকারের শব্দটা আজও কানে ভাসছে।

রুকসো তোকে বলেছি আমরা খুব শিগগিরই সবাই একসাথে মিলবো। হ্যা তুই দেখ, তোর কতো বোন, ভাই, বন্ধু, আপনজন দেখতে এসেছে কিন্তু তুই মুখ গোমরা করে আছিস। আজ আমরা তোর বাড়ীর আঙ্গিনায় কিন্তু তোর হাসিমাখা আতিথেয়তা না দেখে দেখছি সবার চোখে অশ্র“।



ক্যাপসন- বিদায়ের কিছুদিন পূর্বে বার্ডের দুই ঘনিষ্ট বান্ধবী পূজা ও জলিকে পিছন থেকে জড়িয়ে আছে রোকসানা

যেভাবে চিনি রোকসানাকে...

বার্ড এমসিসি ক্লাবের ১১তম বর্ষপূর্তি উদযাপনে আমরা এবার একটা সাদামাটা সাংস্কৃতিক প্রোগ্রামের প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। সাদামাটা বললাম কেননা আমাদের এবার প্রস্তুতিটাও ছিল খুব হালকা। সিনিয়র সদস্যরা কেউই সময় দিতে পারছিলাম না। সবাই মিলে যখন পরামর্শ করছিলাম তখন বললাম, গেলো বছর তো লাক্স সুপারষ্টার মিম আমাদের অতিথি হয়েছিল, এবার কাকে আনা যায়। আমার উপর কালচারাল প্রোগ্রামের দায়িত্ব দিয়ে শাহরিয়া ভাই বললেন তুমি যেভাবে সাজাবে সেভাবে হবে। আমিও বললাম ঠিক আছে এবার কোন সেলিব্রেটি আনবো না তবে সেলিব্রেটি তৈরী করবো। পুজা, জলি, সখী ও প্রীতিকে বলি তোমরা এই এলাকার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ২/৩ জনকে খুজে বের করো যাদের প্রেজেন্টেশন দেখে দর্শক মুগ্ধ হবে। পূজা তার কলেজের প্রোগ্রামে নৃত্যে ও মডেলিংয়ে ভালো পারফর্ম করা দুই জনকে নিয়ে আসার কথা বললো। সবাই তাদের প্রশংসা করলো, বললো হ্যা হতে পারে। তারা খুব ভালো আর্টিষ্ট। প্রোগ্রামের ২দিন পূর্বে রোকসানা আসলো আমাদের মাঝে। রোকসানা আমাদের শিখিয়ে দিলো খুব অল্প সময়ে কিভাবে মানুষকে আপন করে নিতে হয়। অনুষ্ঠানের প্রস্তুতিতে সময় দিতে পারিনি বলে আমরা শংকিত ছিলাম এবারের সাংস্কৃতিক প্রোগ্রাম আমরা খুব খারাপ করবো। কিন্তু হাল ছাড়িনি। আমাদের প্রতিটি ছেলে মেয়ে প্রোগ্রামের সবকটি সেগমেন্টে যা করলো দর্শকদের উচ্ছাস দেখে আমরা অভিভূত হয়ে গেলাম। সেদিন আমাদের প্রোগ্রাম শেষ হয়েছিল রাত ১১টায় তবুও দর্শকরা যেন গ্রোগ্রাসে গিলছিল আমাদের যত আয়োজন। অতিথি বন্ধু এরশাদ তার অভিনয়, চ্যানেল আই সেরাকন্ঠের টপ টুয়েন্টির শিল্পী মামুন আর রোকসানা ও হ্যাপীর কাছে আমরা সেদিন অনেক ঋণী। তাদের পারফরমেন্সের কারণেই মাত্র দু’দিনের প্রিপারেশনে আমরা ষ্টেজে উঠতে সাহস পেয়েছি।



মৃত্যু কি কোন সমাধান হতে পারে?

চোখ ফেটে অশ্রু ঝরে তোর জন্য। দিন যায় রাত যায়, ঘড়ির কাটা টিকটিক শুধু ঘুরছে। কিন্তু তোর অভিমানি সুরে ভাইয়া সম্বোধনটি কি আর শুনতে পাবো না। সেদিন বার্ডের মঞ্চে তোর প্রথম পারফরমেন্সের শেষ দিকে যখন টেকনিক্যাল প্রবলেমের কারণে মিউজিকটি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল তখন মঞ্চ থেকে নেমে তোর চেহারায় যে অভিমানী ঝরের পূর্ভাবাস দেখেছি তাতে মনে হয়েছিল তুই হয়তো এখনই কতক্ষণ ঝগড়া করবি আমাদের সাথে। কিন্তু ছোট বোনটিকে যখন স্নেহের শান্তনা বুলি দিয়ে আবার মঞ্চে যাওয়ার আহবান করলাম তখন অভিমান ঝেড়ে তোর মুখ থেকে ঝরে পড়লো মুক্তোর হাসি। হ্যা, সেদিন আমাদের মঞ্চটা যে প্রাণের আনন্দে দুলে উঠেছিল সেতো তোর জন্যে। ত্ইু কেন এমন পথ বেছে নিলি, বল।

বছর শুরুর দিনটাতে আশা করেছিলাম বছরটা খুব ভালো যাবে। কিন্তু শুরুতেই তোর চলে যাওয়া আমরা মেনে নিতে পারছি না। বাসায় পিসিতে আমাদের ছবিগুলো বারবার দেখে বলি একি সত্য, সবার মুখের হাসির আভাটা ছড়িয়ে আছে আমাদের তারুণ্যের মাঝে। কিন্তু হাসিটা মিলিয়ে গেছে স্মৃতির আয়নায়। আর বাতাসের ইথারে শুধুই আমাদের সব সহকর্মীদের ঢুকরে কেঁদে উঠার শব্দ আমাকেও যেন পরাজিত করছে বিস্মৃতির মাঝে। আমরা কি পারবো তোকে ছাড়া মঞ্চে উঠতে। এই মঞ্চ তো তোর জন্য। তোর শূন্যতায় আমাদের ক্লাবের সকল সহকর্মী আর তোর ভক্ত সূধীদের মাঝে বইয়ে দিচ্ছে বেদনার মরুঝড়। তোর এই অন্ধকার পথে আর যেন কেউ যাত্রী না হয় এই কামনা আমার এবং আমাদের সকলের। মহান আল্লাহর কাছে এটাই প্রার্থনা, তোর ভূল যেন তিনি ক্ষমা করে দেন।









মন্তব্য ১০ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই জানুয়ারি, ২০১০ রাত ৯:৪৪

সেলিমস বলেছেন: কষ্ট পেলাম :( :( :(

২| ১৭ ই জানুয়ারি, ২০১০ রাত ১০:০০

ডঃ জেকিল বলেছেন:

মৃত্যুই কি মুক্তির সমাধান? ...কখনো নয়



কখনো নয়

৩| ১৭ ই জানুয়ারি, ২০১০ রাত ১০:১০

তায়েফ আহমাদ বলেছেন: দুঃখজনক।

৪| ১৭ ই জানুয়ারি, ২০১০ রাত ১০:৩২

অলস ছেলে বলেছেন: বেচারী বুঝলো না, মৃত্যু কোন সমাধান না। দু:খজনক সত্যিই।

৫| ১৭ ই জানুয়ারি, ২০১০ রাত ১০:৩৩

মেঘকন্যা বলেছেন: khub kharap laglo

৬| ১৭ ই জানুয়ারি, ২০১০ রাত ১১:০১

ক্ষত্রিয় বলেছেন: ভাই আপনার পোষ্ট পইড়া আমি হাসতে হাসতে শেষ......হা হা পে গে...ব্যাপক বিনোদন মুলক পোষ্ট B-)

১৮ ই জানুয়ারি, ২০১০ দুপুর ২:৩৬

খালেদ সময় বলেছেন: আপনি ভালো লিখতে জানেন। হয়তো সে যোগ্যতা হয়নি তাই বলে মানুষের মৃত্যু কখনো বিনোদন হতে পারে না।

আর মানুষকে এভাবে উপহাস করে নয় যদি আমাকে কিছু শিখাতে চান তবে পরামর্শ দিলে ভালো হতো।

৭| ১৮ ই জানুয়ারি, ২০১০ রাত ১২:৫৫

ভাঙ্গন বলেছেন: দু:খজনক।

৮| ১৮ ই জানুয়ারি, ২০১০ দুপুর ২:৩৩

খালেদ সময় বলেছেন: তার মৃত্যু আমাদের কামনা ছিল না। যারা তার মৃত্যুতে আবেগ দিয়ে সহমর্মিতা প্রকাশ করেছেন তাদের সবাইকে ধন্যবাদ। ভালো থাকুন। আর এমন যেন আর কোন বোন ভাই না ঝরে যায় এটাই হোক আমাদের কামনা।

৯| ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১০ রাত ৮:৫৭

নিউটন বলেছেন: comment by: ক্ষত্রিয় বলেছেন: ভাই আপনার পোষ্ট পইড়া আমি হাসতে হাসতে শেষ......হা হা পে গে...ব্যাপক বিনোদন মুলক পোষ্ট B-)


খবরটা নিশ্চই হোহো করে হাসবার জন্য নয়

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.