নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ফিনিক্স : মানুষের সৃষ্টিশীলতার সর্বোত্তম নজির

Man has no wing but can fly higher

খোশনবীশ

বিদ্যুত খোশনবীশ

খোশনবীশ › বিস্তারিত পোস্টঃ

নির্বাচনী ট্রেন বনাম গণতন্ত্রের অভিযাত্রা

২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ সকাল ১১:৪১





নির্বাচনী ট্রেন বনাম গণতন্ত্রের অভিযাত্রা

বিদ্যুত খোশনবীশ



১.

স্পষ্টতই নির্বাচন নামক একটি তামাশার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে সরকার। অপ্রত্যাশিত কোন রাজনৈতিক পরিবর্তন না ঘটলে আগামী ৫ জানুয়ারিতেই অনুষ্ঠিত হবে এই কথিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন দায়িত্বশীল মহল থেকে এই নির্বাচনকে গণতন্ত্রের জন্য হুমকী হিসেবে চিহ্নিত করা হলেও সরকার ও নির্বাচন কমিশনের মনোভাব ও তৎপরতা দেখে বুঝাই যাচ্ছে যে, ঘোষিত তারিখে নির্বাচন সম্পন্ন করার জন্য তারা প্রস্তুত। এই প্রস্তুতিতে দৃশ্যত যে শক্তি কাজ করছে তাকে ‘রাজনৈতিক দৃঢ়তা’ না বলে গোয়ার্তুমি বলাই শ্রেয়। গোয়ার্তুমি শব্দটা শ্র“তিমধুর নয় বটে কিন্তু একটি বিতর্কিত, স্পষ্টতই নিষ্ফল ও প্রহসনের নির্বাচনকে জায়েজ করতে সরকার নির্বাচনকালীন প্রশাসনকে ব্যবহার করে যেভাবে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের হাস্যকর মামলায় গ্রেফতার করছে, জাতীয় পার্টিকে নিয়ে যে নির্লজ্জ খেলা চালিয়ে যাচ্ছে, নির্বাচন কমিশনকে যেভাবে ক্রিড়ানকে পরিণত করে রেখেছে, পুলিশ ও র‌্যাবকে যেভাবে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে তাতে এই শব্দটিই উপযুক্ত বলে মনে হয়েছে। তাছাড়া ‘নির্বাচনের’ দিকে রাষ্ট্রযন্ত্রের এই একতরফা এগিয়ে যাওয়াকে সরকারী দল আওয়ামী লীগ অভিহিত করেছে ‘নির্বাচনী ট্রেন’ হিসেবে। তাদের ভাষায়, ট্রেন চলছে এবং বিএনপি সেই ট্রেন মিস করেছে।

ট্রেন চলছে তাতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু এই ট্রেন যে নির্বাচনের নয় বোধকরি আওয়ামী লীগ ছাড়া বাকি সবার কাছেই তা দিবালোকের মত স্পষ্ট। বাংলাদেশে তো নয়ই, আধুনিক বিশ্বে গণতান্ত্রিক কোন রাষ্ট্রে এমন নির্বাচন বা কথিত নির্বাচনী ট্রেন কেউ চলতে দেখেছে কিনা তা নিয়েও সন্দেহ আছে। তাছাড়া এমন হাস্যকর একটি নির্বাচনকে বৈধতা দেবার জন্য যেসব উক্তি শাসক দলের কাছ থেকে শোনা যাচ্ছে তাও কম হাস্যকর নয়। মাত্র কয়েকদিন আগে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মন্তব্য করেছেন, বিরোধী দল না আসলে ফাঁকা মাঠেই গোল হবে। গণতন্ত্রের মানসকন্যা হিসেবে যিনি যৌক্তিক খ্যাতি অর্জন করেছেন তার কাছ থেকে এমন উক্তি কেউ প্রত্যাশা করেছিল বলে মনে হয় না। প্রধানমন্ত্রী হয়তো ভুলেই গেছেন, গণতন্ত্রে ফাঁকা মাঠে গোল দেওয়া কোন কৃতিত্বের কাজ নয় বরং চরম রাজনৈতিক ব্যর্থতা।

নানান রাজনৈতিক কূটচালে জাতীয় পার্টির একটি অংশকে নির্বাচনে নিয়ে আসা সম্ভব হলেও প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ উল্লেখযোগ্য সংখ্যক রাজনৈতিক দলকে এই নির্বাচনী ট্রেনের যাত্রী হিসেবে পাওয়া সম্ভব হয়নি। ফলে নির্বাচন সম্পন্ন হবার আগেই ১৫৪ জন প্রার্থী বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বীতায় নির্বাচিত হয়ে ‘নির্বাচনকালীন সরকারকে’-ই পুুনারায় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হবার পথ সুগম করে দিয়েছে। অর্থাৎ যে কোন ধরনের রাজনৈতিক সহিংসতা বা প্রতিবন্ধকতা সত্বেও কিংবা ভোটারদের অংশগ্রহণ ছাড়াই যেনতেনভাবে একটি নির্বাচন সম্পন্ন করতে পারলেই বর্তমান শাসকদল আওয়ামী লীগের জন্য সরকার গঠন করতে আর কোন বাধাই থাকবে না। তাই এখনই ধরে নেওয়া যায়, আওয়ামী লীগই আগামী দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী দল।

এই নজিরবিহীন প্রতিদ্বন্দ্বীতাহীন নির্বাচনকে আওয়ামী লীগ বরাবরই সংবিধান রক্ষার নির্বাচন হিসেবে দেখাবার চেষ্টা করেছে। তারা এমন এক সংবিধানের ধারাবাহিকতা রক্ষার কথা বলছে যে সংবিধান একটি ইলেকশনকে সিলেকশনে পরিণত করেছে এবং যে সংবিধানকে আওয়ামী লীগ নিজ হাতে একতরফাভাবে পরিবর্তিত করেছে। সংবিধানের এই পরিবর্তনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের বাইরে আর কোন রাজনৈতিক দলেরই সমর্থন ছিল না।

সংবিধানের এই পঞ্চদশ সংশোধনী পাশ হবার পর বিরোধী রাজনৈতিক জোট ও বিভিন্ন নাগরিক মহল থেকে এর উদ্দেশ্য নিয়ে আশংকা প্রকাশ করা হলেও তা অনেকেই আমলে নেননি। বরং উল্টো সেই আশংকাকেই নানাভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করার জোর চেষ্টা ছিল। কিন্তু তথাকথিত নির্বাচনের ঠিক প্রাক্কালে এসে সেই প্রশ্নবিদ্ধ আশংকাগুলোই আজ সত্যে পরিণত হয়েছে। সেই সত্যের সারমর্ম হলো: যে কোন উপায়ে ক্ষমতা আকড়ে থাকা।

কিন্তু ক্ষমতা আকড়ে থাকার এই নীতি থেকে আওয়ামী লীগের প্রাপ্তি কতটুকু? প্রশ্নটা যদি ঘুরিয়ে বলা হয় তবে জবাব খুঁজে পেতে একটু সহজ হবে। অর্থাৎ আওয়ামী লীগের এই নীতি থেকে বিএনপি’র কোন প্রাপ্তি আছে কী? হ্যাঁ, দারুণ একটা প্রাপ্তি আছে। বাংলাদেশের দুর্বল গণতন্ত্রের ইতিহাসে ভোটাধিকার হরণের (১৫ ফেব্র“য়ারি ১৯৯৬ এর নির্বাচন) কলঙ্ক এতদিন শুধু বিএনপির ঘাড়েই ছিল। কিন্তু ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ সেই কলঙ্কের সবচেয়ে বড় ও ভারি অংশটুকুই নিজ ঘাড়ে নিতে যাচ্ছে। অর্থাৎ আগামী ৫ জানুয়ারি কোন গণতান্ত্রিক নির্বাচনের দিন নয়। এটি বিএনপির জন্য ভোটাধিকার হরণের কলঙ্ক মোচনের দিন এবং আওয়ামী লীগের জন্য ভোটাধিকার হরণের কলঙ্ক কাঁধে নেবার দিন।



২.

এমনই এক বাস্তবতায় গত ২৪ ডিসেম্বর বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া সংবাদ সম্মেলন করে ২৯ ডিসেম্বর ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ নামক ঢাকা অভিমুখে লংমার্চ কর্মসূচী ঘোষণা করেছেন। বেগম খালেদা জিয়ার ভাষায়, গণতন্ত্র রক্ষার জন্যই এই অভিযাত্রা। বলাবাহুল্য, আমাদের গণতন্ত্র এখন চরম অস্তিত্ব সংকটের সম্মুখীন হলেও এই সংকটের ইতিহাস অনেক পুরনো। এই সংকটাপন্ন গণতন্ত্রকে রক্ষার নাম করে গত তিন দশকে এদেশের প্রতিটি বিরোধী দলই আন্দোলন-সংগ্রাম করেছে। এই সব কথিত আন্দোলন-সংগ্রামে দিনের পর দিন হরতাল-অবরোধ হয়েছে, শত শত মানুষ নিহত হয়েছে, জাতীয় অর্থনীতি চরমভাবে বিপর্যস্ত হয়েছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় গণতন্ত্রের অস্তিত্ব সংকট আজো কাটেনি। বিরোধী দল থেকে সরকারী দলে প্রমোশন পাওয়া ছাড়া এই সব আন্দোলন থেকে আর কোন প্রাপ্তি আছে বলে মনে হয় না। এরই ধারাবাহিকতায় গত এক মাসে বিএনপি ৫ দফায় ৫০১ ঘন্টা অবরোধ কর্মসূচী পালন করেছে। এই অবরোধে সারা দেশে নজিরবিহীন সহিংসতা হয়েছে, গণপরিবহন আগুনে পুড়েছে, দগ্ধ হয়ে মৃত্যু বরণ করেছে সাধারণ মানুষ, ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে দেশের অর্থনীতি ও শিক্ষা ব্যবস্থা। কিন্তু যে উদ্দেশ্যে এই সহিংস আন্দোলন সে উদ্দেশ্য কি সফল হয়েছে? গণতন্ত্রের প্রাথমিক শর্ত জনগণের ভোটাধিকার হরণ করে যে ট্রেন ৫ জানুয়ারির দিকে ছুটে চলছে তার গতিরোধ করা কি সম্ভব হয়েছে? আমরা এখন এমন এক সময় অতিক্রম করছি যখন এইসব প্রশ্নের উত্তরের জন্য আর রাজনীতিবিদদের দ্বারস্থ হবার সুযোগ নেই। কারণ আমরা জনগণই এই প্রশ্নগুলোর উত্তর জানি।

বিএনপির চলমান আন্দোলন গণতন্ত্র রক্ষায় কোন কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেনি। আগামীতেও উল্লেখযোগ্য কোন ভূমিকা রাখতে পারবে কিনা তা নিয়েও সন্দেহের যথেষ্ট অবকাশ আছে। কারণ রাজনৈতিক কর্মসূচী চলমান থাকা অবস্থাতে যে দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ আত্মগোপনে থেকে গা বাঁচিয়ে চলেন তারা আর যাই হোন গণতন্ত্রের প্রতি প্রতিশ্র“তিশীল নন। তাছাড়া ‘গণতন্ত্রের অভিযাত্রা’ নামক যে কর্মসূচী ঘোষিত হয়েছে তারই বা উদ্দেশ্য কী? এই অভিযাত্রা কি গণতন্ত্রকে সুসংহত করতে পারবে? বিএনপির এই আন্দোলনের ফলে প্রহসনের দশম সংসদ নির্বাচন যদি স্থগিতও হয়ে যায়, তারপরও কী গণতন্ত্র সুসংহত হবে? এই সব পলায়নপর নেতৃবৃন্দকে নিয়ে বিএনপি কি পারবে আগামীতে জাতিকে একটি পরিপূর্ণ গণতন্ত্র উপহার দিতে? বিএনপির অতীত যদিও নেতিবাচক তবুও এই প্রশ্নের জবাব পেতে অপেক্ষা করা ছাড়া আর কোন উপায় জনগণের আছে বলে মনে হয় না।



৩.

‘নির্বাচনী ট্রেন’ আর ‘গণতন্ত্রের অভিযাত্রা’ চলমান বাস্তবতায় দুটি বিবদমান পক্ষের পরস্পর বিরোধী কর্মসূচী। কিন্তু গণতন্ত্রের মানদন্ডে এই দুই কর্মসূচী এক ও অভিন্ন; এ দুয়ের মধ্যে কোন সংঘর্ষ নেই। এই দুই কর্মসূচী আজ যে বিপরীত স্রোতে প্রবাহিত হচ্ছে দুঃখের বিষয় তা শুধুমাত্র আমাদের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলের পরস্পর বিরোধী অবস্থানের কারণেই। কিন্তু আমরা জনগণ এই ক্ষমতা দখল কেন্দ্রিক সাংঘর্ষিক অবস্থা আর দেখতে চাই না। আমরা এদেশে এমন একটি স্থায়ী ব্যবস্থা দেখতে চাই যে ব্যবস্থায় ‘নির্বাচনের ট্রেন’ এবং ‘গণতন্ত্রের অভিযাত্রা’ একই পথে, একই গতিতে চলবে। আর সেটাই প্রকৃত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা।

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ সকাল ১১:৪৭

পাঠক১৯৭১ বলেছেন: খালেদা বেগম যাতে আর গ্রেনেড মারতে না পারে, ও হাওয়া ভবন খুলতে না পারে, এবং ট্যাক্স দিতে শিখে, সেজন্য এ ধরণের নির্বাচন দরকার।

দেশ বিদেশের কারো ক্ষতি হচ্ছে না: খালেদা বেগম যে ৩০ বছর বিএনপি'র সভাপতি তাতে আপনার বলার কি আছে?

লেখার আগে ভাববেন, কি লিখছেন!

২| ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১:০৩

মেনন আহমেদ বলেছেন: @পাঠক ১৯৭১

আপনি কি এমন বালের সবজান্তা হয়েছেন???
যে কোন পোষ্টে আপনি যে ছাগল মার্কা কমেন্ট করেন, তো এই ছাগলামিটা নিজের ভিতরেই রাখেন কারো পোষ্টে যেয়ে করবেন না।

খালেদা যদি গ্রেনেড মেরে থাকে তাহলে তারে আইনের আওতায় নিয়ে আসছেনা কেন হাছিনা???
মামলাবাজ হাছিনা কি এই মামলাটার কথা ভুলে গেছে? আপনি তো সব জায়গাতে বাম হাত চালানোতে অভ্যস্ত, ভুলে গেলে মনে করিয়ে দেন।

বর্তমান সময়ে হাছিনা ছাত্রলীগ দিয়ে যে অপকর্ম করিয়ে তা বি এন পি এর ঘাড়ে ফেলছে এটা আমাদের মতো সাধারন নাগরিকরা এখন চোখ বন্ধ করেও বুঝতে পারে,আশা করি এই ব্যপারটাতেও একটু বাম চালাবেন,আপনার তো আবার বাম চালানোর জন্য গুড়া কৃমি কূটকূট করে।

৩| ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৫:২৫

সালটু বলেছেন: পাঠক১৯৭১ রের একটু চুলকানি আছে, উনি সব জায়গাতেই ওইটা করে। আমি জানতে চাই দাদা পাঠক১৯৭১, আপনি কি কাটা না আকাটা?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.