নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ফিনিক্স : মানুষের সৃষ্টিশীলতার সর্বোত্তম নজির

Man has no wing but can fly higher

খোশনবীশ

বিদ্যুত খোশনবীশ

খোশনবীশ › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিএনপি’র জামায়াত-নীতি ও গণতন্ত্রের শবযাত্রা

২৮ শে জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ১২:১৮

বিএনপি’র জামায়াত-নীতি ও গণতন্ত্রের শবযাত্রা

বিদ্যুত খোশনবীশ



বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-- বিএনপির রাজনীতিতে সম্প্রতি লক্ষ্যণীয় পরিবর্তন ঘটতে শুরু করেছে। গত ১৯ জানুয়ারি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত নির্বাচনউত্তর প্রথম জনসমাবেশে ১৮ দলীয় জোটের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত থাকলেও দেখা যায়নি জামায়াতে ইসলামীর কাউকেই। বিএনপির সমাবেশে দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি সময় পর জামায়াতে ইসলামীর এই অনুপস্থিতি বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নিঃসন্দেহে একটি তাৎপর্যপূর্ণ ও ইতিবাচক ঘটনা। তাৎপর্যপূর্ণ এই অর্থে যে বেশ কিছু দিন ধরেই মানবতা বিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত জামায়াতে ইসলামীকে সাথে রাখা না রাখা নিয়ে বিএনপির উপর দেশী-বিদেশী চাপ প্রকাশ্য রূপ নিয়েছে। বিশেষ করে সম্প্রতি ইউরোপিও পার্লামেন্টে জামায়াতে ইসলামীকে সন্ত্রাসী দল হিসেবে আখ্যা দিয়ে প্রস্তাব পাশ হবার পর বিএনপি-জামায়াতের এই দূরত্ব যথেষ্ট আগ্রহ সৃষ্টি করেছে। আর এই তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনাটি ইতিবাচ মূলত দুটি কারণে-- বিএনপির ইতিহাস ও জামায়াতে ইসলামীর ইতিহাস।

বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামীর জন্মের ইতিহাস সম্পূর্ণ ভিন্ন হলেও স্বাধীন বাংলাদেশে এই দুটি দলের মূল্যায়ন কিংবা গ্রহণযোগ্যতার প্রশ্নে বরাবরই সামনে চলে আসে অভিন্ন প্রেক্ষাপট। এই প্রেক্ষাপট বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের-- যে মুক্তিযুদ্ধ আমাদের ইতিহাসের শ্রেষ্ঠতম অধ্যায়। বিএনপির জন্ম মুক্তিযুদ্ধের বহু বছর পরে হলেও এই দলটির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ছিলেন একজন মুক্তিযোদ্ধা এবং অন্যতম সেক্টর কমান্ডার। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে জিয়াউর রহমানের অবদান ও পরবর্তীতে তার দেশপ্রেম বহুলাংশেই প্রশ্নাতীত ও পরীক্ষিত। জিয়াউর রহামান স্বাধীনতার ঘোষক না পাঠক সে ইস্যুতে জাতীয় রাজনীতিতে বিতর্ক থাকলেও ব্যক্তি জিয়াউর রহমান বরাবরই এদেশের সাধারণ মানুষের কাছে নন্দিত এবং মুক্তিযুদ্ধের বীর সেনানী হিসেবেই পরিচিত। তাছাড়া ১৯৭৮ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে তার দল বিএনপি মুক্তিযোদ্ধাদের দল হিসেবেই পরিচিতি লাভ করেছে। অর্থাৎ রাজনৈতিক মতাদর্শ বিবেচনায় বিএনপি ও মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগ উল্টো পথের যাত্রী হলেও শুধুমাত্র এই কারণে বিএনপিকে স্বাধীনতা বিরোধী দল হিসেবে চিহ্নিত করার কোন যুক্তিসংগত কারণ কখনো ছিলও না এবং আজও নেই। বর্তমানে বিএনপিকে কেন্দ্র করে স্বাধীনতার পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি বলে যে বিতর্ক হয় বা হচ্ছে তা নিছক ক্ষমতা দখল কেন্দ্রিক রাজনীতির বাহাস।

কিন্তু জামায়াতে ইসলামীর প্রসঙ্গটি একেবারেই ভিন্ন। যে স্বাধীনতা আমাদের শ্রেষ্ঠ সম্পদ সেই স্বাধীনতা অর্জনের মহান সংগ্রামে এই জামায়াতে ইসলামীর ভূমিকা এখন আর যুক্তি-তর্ক বা আইন-আদালত দিয়ে প্রমাণ করার কোন বিষয় নয়। কারণ যা দিবালোকের মত স্পষ্ট, যা ঐতিহাসিকভাবে সত্য হিসেবে উদ্ভাসিত তা নিয়ে তর্ক-বিতর্ক করার তেমন কোন প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না। অর্থাৎ জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের বিরোধীতাকারী প্রধান রাজনৈতিক শক্তি এবং পাকিস্তান সেনাবাহিনীর এদেশীয় সহচর। আর তাই ঐতিহাসিকভাবেই এই দলটি একাত্তরের পরাজিত শক্তি। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পরও জামায়াত তাদের অতীত ভূমিকার জন্য আজ অবধি আনুষ্ঠানিকভাবে এদেশের জনগণের কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করা তো দূরের কথা সামান্যতম দুঃখও প্রকাশ করেনি। অথচ দুর্ভাগ্যজনকভাবে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধীতাকারী এই দলটিই স্বাধীন বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষশক্তির ধারাবাহিক সহচর হিসেবে দোর্দন্ড প্রতাপে রাজনীতি করে যাচ্ছে, ক্ষমতার অংশীদার হয়েছে এবং এদেশের জনগণের ভাগ্য বিধাতা হবার তৎপরতাও অব্যাহত রেখেছে। আর এই প্রক্রিয়ার সর্বশেষ ধাপটিই হলো ২০০১ সালে চারদলীয় জোট গঠনের মধ্য দিয়ে বিএনপি-জামায়াতের ঐক্য। তার পরের ইতিহাস বলাবাহুল্য। অর্থাৎ বিএনপির সাথে জোটগতভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ, ক্ষমতায় আরোহন ও বিএনপির রাজনীতিকে গ্রাস করে দলটির উপর নিজের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করা-- এ সবই এদেশের জনগণ খুব ভালভাবেই জানে এবং উপলব্ধিও করে।

জামায়াতের সাথে এই ঐক্য বিএনপিকে কতটুকু লাভবান করেছে তা নিয়ে বিতর্ক বহুদিনের। শুধু রাজনীতি সচেতন ব্যক্তিরাই নন, এই সম্পর্কের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে এ দেশের জনগণ এবং এমনকি বিএনপির কর্মী-সমর্থকরাও। জামায়াতকে নিয়ে বিএনপির অভ্যন্তরে যে প্রচন্ড মতবিরোধ রয়েছে তাও বিভিন্ন সময় দৃশ্যমান হয়েছে নানা অপ্রীতিকর ঘটনার মধ্য দিয়ে। কিন্তু বিএনপির নীতিনির্ধারকরা নাগরিক সমাজ কিংবা দলের কর্মী-সমর্থক-- কারো মতামতকেই কখনো গুরুত্ব দেননি। ফলে এই ইস্যুতে একদিকে একটা চাপা ক্ষোভ দলীয় নেতাকর্মীদের যেমন বহন করতে হয়েছে দীর্ঘ দিন ধরে তেমনি অপরদিকে ‘জামাত-শাসিত’ দলের অপবাদটিও পাকাপোক্ত হয়েছে বিএনপির ললাটে। তবে এখন বলতেই হচ্ছে, শেষ পর্যন্ত বিএনপির বোধোদয় হয়েছে। আর এই বিলম্বিত বোধোদয়ের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে গত ১৯ জানুয়ারি সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে। বিএনপিকে সাধুবাদ।

তবে এই বোধোদয় সবকিছুর শেষ নয় বরং শুরু। কারণ বিএনপির সাথে জামায়াতের এই প্রাথমিক দূরত্ব শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে ঠেকে সেটাও দেখার বিষয়। গৃহবন্দী থাকা অবস্থায় বেগম খালেদা জিয়া বিবিসি বাংলা সার্ভিসকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, জামায়াতে ইসলামীর সাথে বিএনপির সম্পর্ক শুধুই কৌশলগত। অর্থাৎ বেগম খালেদা জিয়ার ভাষ্যমতে জামায়াতের সাথে বিএনপির আদর্শিক কোন ঐক্য নেই। না থাকাটাই স্বাভাবিক ও প্রত্যাশিত। কারণটা আগেই বলেছি অর্থাৎ ইতিহাস-- বিএনপি ও জামায়াতের স্বতন্ত্র ইতিহাস। পশ্চিমা বিশ্বের চাপের প্রেক্ষিতে বিএনপি চেয়ারপার্সনের ঐ বক্তব্য একদিকে ইতিবাচক এবং অন্যদিকে সন্দেহজনকও বটে। কারণ বেগম জিয়ার এমন বক্তব্যের পর প্রশ্ন উঠেছে-- তবে বিএনপি-জামায়াতের এই দৃশ্যমান ছাড়াছাড়িটাও কি কৌশলগত কারণেই! এই বিচ্ছেদ কি শুধুই লোক দেখানো! নির্বাচন ঠেকাবার আন্দোলনে ব্যর্থতার পর সরকার, জনগণ, দলীয় নেতা-কর্মী ও বহির্বিশ্বের চাপ মোকাবেলার জন্যই কি বিএনপির এই কৌশল! এই জিজ্ঞাসাগুলোর জবাব সময়ই বলে দেবে।

কিন্তু এই মুহূর্তে বিএনপিকে বিশেষকরে বেগম খালেদা জিয়াকে মনে রাখতে হবে, জামায়াতের সাথে একটি বাস্তবসম্মত দূরত্ব সৃষ্টি করা এবং সে দূরত্ব বজায় রাখা সময়ের দাবি। এ দাবিকে শুধু পশ্চিমা বিশ্বের দাবি মনে করলে ভুল হবে। এই দাবি দেশের মধ্যপন্থী জনগণের এবং বিএনপির নেতা-কর্মীদেরও। ভুলে গেলে চলবে না, সরকার পতন ও নির্বাচন ঠেকাবার যে আন্দোলন বিএনপি শুরু করেছিল তা মোটা দাগে ব্যর্থ হয়েছে। সাফল্য শুধু এটুকুই যে, তথাকথিত নির্বাচনে ভোটারের উপস্থিতি ছিল নগন্য। বাস্তবতা হলো, যেনতেনভাবে ৫ জানুয়ারিতে একটি নির্বাচন হয়েছে, নির্বাচিত-অনির্বাচিত এমপিরা শপথ নিয়েছেন, সরকার গঠন হয়েছে এবং মন্ত্রণালয়ও ভাগাভাগি হয়ে গেছে। যে আওয়ামী লীগ এতদিন বলে আসছিল, ৫ জানুয়ারির নির্বাচন শুধুই নিয়মরক্ষার নির্বাচন সেই আওয়ামী লীগই এখন বলছে আগাম নির্বাচন নিয়ে আলোচনা করার ইচ্ছা তাদের নেই এবং বর্তমান সরকার পূর্ণ মেয়াদেই ক্ষমতায় থাকবে। এ সবকিছুই হচ্ছে বিনা বাধায়। অর্থাৎ বিএনপি তার কথিত আন্দোলনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের উপর এমন কোন চাপ সৃষ্টি করতে পারেনি যা আওয়ামী লীগকে আগাম নির্বাচন দিতে বাধ্য করবে। বরং আন্দোলনে ব্যর্থতার পর দলটি নিজেই এখন আত্মরক্ষামূলক অবস্থানে। বিএনপির এই ব্যর্থতার মূল কারণই হলো জামায়াতে ইসলামীর সহিংসতা। বিএনপির নির্বাচন ঠেকাবার আন্দোলনের সুযোগে জামায়াত শুধুমাত্র দলীয় লক্ষ্য হাসিলের জন্য যেভাবে সারা দেশে সহিংস কার্যক্রম চালিয়েছে, যেভাবে দেশে পেট্রল-বোমা সংস্কৃতি চালু করেছে তার নজির আমাদের রাজনৈতিক ইতিহাসে নেই। আর নিয়ন্ত্রনহীন জামায়াতের নজিরবিহীন সহিংসতা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করেছে বিএনপিকে। শুধুমাত্র জামায়াতের কারণেই বিএনপির ‘গণআন্দোলন’ গণবিরোধী আন্দোলনে পরিণত হয়েছে। আর যে আন্দোলনে জনসম্পৃক্ততা কিংবা জনস্বার্থ থাকে না সে আন্দোলন ফলপ্রসুও হয় না। সুতরাং এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, বাংলাদেশের বহুদলীয় গণতন্ত্র রক্ষার যে দায়িত্ব বিএনপির কাঁধে অর্পিত হয়েছিল সে দায়িত্ব পালন করতে দলটি ব্যর্থ হয়েছে। আর এই ব্যর্থতার ফলেই বাংলাদেশ আজ একটি একদলীয় সরকারের হাতে বন্দী এবং স্বভাবতই আমাদের গণতন্ত্রও মৃত্যু পথযাত্রী।

অথচ গণতন্ত্রের এই পরিণতি আমাদের কারোরি কাম্য নয়। দল হিসেবে আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রের প্রতিনিধিত্ব করার যোগ্যতা হারিয়েছে আর জামায়াতে ইসলামীর সাথে স্বাধীন বাংলাদেশের মানুষের আশা-আকাক্সক্ষা ও আস্থার কোন সম্পর্ক নেই। তাই এই সময় বিএনপির সময়। বিএনপিকে আত্মমূল্যায়নের পথে হাঁটতে হবে। খুব বেশি কালক্ষেপন না করে নিজের ত্র“টিগুলো খুঁজে বের করতে হবে, আন্দোলনের ব্যর্থতার কারণগুলো চুলচেরা বিশ্লেষণ করতে হবে এবং সেই সাথে জনগণ ও নেতা-কর্মীদের মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে জামায়াতের সাথে সম্পর্ককে পুনর্মূল্যায়ন করতে হবে। মৃতপ্রায় গণতন্ত্রকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য সব ব্যর্থতাকে জয় করে জনগণকে সাথে নিয়ে নিজ শক্তিতেই নিয়মতান্ত্রিক পথে এগিয়ে যেতে হবে। আর এর কোন বিকল্প নেই। কারণ আমরা জনগণ গণতন্ত্রের শবযাত্রা দেখতে চাই না।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ১২:২০

পাঠক১৯৭১ বলেছেন: বিএনপি'র এ অবস্হা হওয়ার কথা ছিল ১৯৮২ সালে।

২| ২৮ শে জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ২:৩৫

রাফা বলেছেন: বিশ্লেষন ভালো হোয়েছে।গণতন্ত্রের সঠিক চর্চার জন্য বিএনপিকে ঘুরে দড়াতেই হবে।
আর বিএনপি যদি এরপরও কোন হঠকারি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে তাহোলে নিজে বিলুপ্ত হওয়ার সাথে সাথে আঃ লীগ পরিনত হবে স্বৈর সাশকে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.