নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আবহমান

খুরশীদ আলম

আইনবিদ ও রাজনীতিক

খুরশীদ আলম › বিস্তারিত পোস্টঃ

বঙ্গবন্ধুর ফিরে আসা

১০ ই জানুয়ারি, ২০২৩ রাত ১২:২২



বঙ্গবন্ধু ফিরে এসেছিলেন বাংলার মানুষের স্বাধীনতা নিয়ে, কেননা বঙ্গবন্ধু ছাড়া এই স্বাধীনতা ছিল অসম্পূর্ণ। তাইতো ফিরেই তিনি লক্ষ মানুষের সামনে উচ্চারিত করেছিলেন- ‘ভাইয়েরা আমার লক্ষ মানুষের প্রাণদানের পর আজ আমার দেশ স্বাধীন হয়েছে। আজ আমার জীবনের সাধ পূর্ণ হয়েছে। বাংলাদেশ আজ স্বাধীন।’

বঙ্গবন্ধু ফিরে এসেছিলেন বাংলার পথে প্রান্তরে দীর্ঘ পথ অতিক্রমের মধ্য দিয়ে পরাধীন অত্যাচারিত একটি জাতির হতাশা, দীর্ঘশ্বাস, বেদনা ধারণ করেছিলেন তা মুছে দিয়ে স্বাধীন বাঙালি জাতির গৌরবময় ইতিহাস লিখতে। স্বাধীন দেশের প্রথম ভাষণে আত্মত্যাগী মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে শহীদদের জন্য শ্রদ্ধা নিবেদনে বলেছেন- ‘আমার বাংলায় আজ এক বিরাট ত্যাগের বিনিময়ে স্বাধীনতা এসেছে। তিরিশ লক্ষ লোক মারা গেছে। আপনারা জীবন দিয়েছেন, কষ্ট করেছেন। বাংলার মানুষ মুক্ত হাওয়ায় বাস করবে, খেয়ে-পরে সুখে থাকবে, এটাই ছিল আমার সাধনা।’

বঙ্গবন্ধু ফিরে আসার সময়ে বিমানটি যখন স্বদেশের মাটি স্পর্শ করছিল, তখন জনতার সাগরের ঢেউ দেখে তিনি বলেছিলেন- ‘আমার দেশের মানুষ আমাকে এত ভালোবাসে। আমি এদেরকে খাওয়াবো কীভাবে?’ পাকিস্তানের কারাগারে মৃত্যুর জন্য্ অপেক্ষমান বঙ্গবন্ধু সেলের সামনে কবর খুড়তে দেখেছেন কিন্তু আপোস করে দেশে ফেরার চিন্তাই করেননি। তবে, বিশ্ব নেতাদের চাপ ও ইন্দিরা গান্ধীর প্রচেষ্টার কারণে পাকিস্তান মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার পরিকল্পনা সফল করতে পারেনি। জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পরই লন্ডন পৌছেই পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও রাজাকার-আলবদর-আলশামসের অত্যাচারের এবং মুক্তিযুদ্ধের কথা শুনেছিলেন। তাই তিনি বক্তৃতায় পাক হানাদার বাহিনীর বাংলাকে শশ্মান বানানোর কথা বলেছেন। একাত্তরে হত্যাযজ্ঞের শিকার বাংলার মানুষের আত্মীয়-স্বজনের হাহাকার, নিরাশ্রয় আর খাদ্যহীন পরিস্থিতির কথা বিশ্ববাসীর সম্মুখে তুলে ধরলেন, জানালেন পাকিস্তানীদের বীভৎস অত্যাচার হত্যাযজ্ঞের করুণ চিত্র।

বঙ্গবন্ধু ভাষনেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ঘোষণা দিয়ে বলেন- ‘অনেকেই আমার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছে আমি তাদের জানি। ইয়াহিয়া সরকারের সাথে যারা সক্রিয়ভাবে সহযোগিতা করেছে তাদের বিরুদ্ধে যথাসময়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’ আরও বলেছিলেন- ‘২৫ মার্চ থেকে এ পর্যন্ত ৯ মাসে বর্বর পাকিস্তানি সেনাবাহিনী এদেশের প্রায় সব বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করেছে। তারা আমার মানুষকে হত্যা করেছে। হাজার হাজার মা-বোনের সম্ভ্রম নষ্ট করেছে।’

বঙ্গবন্ধু ফিরেছিলেন বাঙলার দুঃখী মানুষের যে স্বপ্ন নিজ বুকে ধারণ করেছিলেন তার বাস্তবায়নের আকাঙ্খা নিয়ে। ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত স্বদেশে ফিরেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ ফেরা ছিল সদ্য মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী বাংলাদেশকে মজবুত ভিতের উপর দাড় করিয়ে দেয়া, আর বঙ্গবন্ধুই সেই ভিত্তি যার উপর দাড়িয়ে সবেগে বৈশ্বিক উন্নয়নের সিড়ি টপকে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধু না ফিরলে কি হত? বঙ্গবন্ধু ফিরে বাংলাদেশকে বিশ্বের মানিচিত্রে স্বাধীন দেশের মর্যাদা দিতে যে সব পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন সেসব কারও পক্ষে সম্ভব ছিল না। কেননা মুক্তিযুদ্ধে আওয়ামী লীগের উপকোন্দল ও অন্যান্য সংগঠনের ক্ষমতার দ্বন্দে শুরু হত সশস্ত্র সংঘাত যা অবশ্যম্ভাবী রূপ নিত গৃহযুদ্ধে যাতে মদদ দিত বাংলাদেশের স্বাধীনতার শত্রুরা।

বঙ্গবন্ধু তিন মাসের মধ্যে ভারতীয় সেনাবাহিনী ফিরিয়ে দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব সুরক্ষিত করেছিলেন। স্বল্পতম সময়ের মধ্যে সংবিধান প্রণয়ন করে দেশকে সাংবিধানিক কাঠামোর মধ্যে নিয়ে এসেছিলেন। মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্র সমর্পণ ও পুনর্বাসন, যুদ্ধ-বিধ্বস্ত দেশের অর্থনীতির পুনর্গঠন, আইনশৃঙ্খলা পুনরুদ্ধার এবং দেশের প্রতিটি ক্ষেত্রে নতুন করে পুনর্গঠন করে প্রাণসঞ্চার করেন। যুক্তরাষ্ট্র, চীন, সৌদী আরব ও পাকিস্তান সহ কয়েকটি দেশের বিরোধিতা সত্ত্বেও বিশ্বের ১৪০টি দেশের বাংলাদেশকে স্বাধীন রাষ্ট্রের এবং ১৯৭৪ সালে জাতিসংঘের স্বীকৃতি আদায় করেছিলেন বঙ্গবন্ধু যার প্রধান ভিত্তি ছিল "সবার সাথে বন্ধুত্ব"। জনগণের অর্থনৈতিক বৈষম্য দূরীকরনার্থে শিল্পবাণিজ্যের রাষ্ট্রীয়করণ, কৃষিখাতে সমবায় পদ্ধতি। এতে নয়া উপনিবেশবাদীদের গাত্রদাহের কারণ দাড়াল বঙ্গবন্ধু । শুরু হয় ষড়যন্ত্র। ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগষ্ট নির্মমভাবে হত্যা করা হয় বঙ্গবন্ধু, তাঁর পরিবার ও সহকর্মীদের। বঙ্গবন্ধু চলে যান না ফেরার দেশে।

ঘৃণ্য হত্যাকান্ডের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধুর সাথে বাংলাদেশের অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ককে ছিন্ন করা যায়নি তাই ঘাতকরা পরবর্তীতে আঘাত হেনেছিল মুক্তিযুদ্ধের চেতনার উপর। বঙ্গবন্ধুর অর্জিত জাতীয়তাবাদকে করা হলো বির্তকিত; ধর্মনিরপেক্ষতা, সমাজতন্ত্র হলো পরিত্যাজ্য ও গণতন্ত্র হলো সামরিকতন্ত্র। ঘৃণ্য হত্যাকান্ডকে বৈধতা দিতে হলো ইন্ডেমনিটি, অবৈধভাবে সংবিধান পরিবর্তন। বঙ্গবন্ধুকে বাংলাদেশের স্থপতিরূপে অস্বীকারের ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র, তাঁর নির্মিত বাংলাদেশের আদর্শকে কলুষিত করার প্রচেষ্টা। নিষিদ্ধ করা হলো বঙ্গবন্ধুকে রাষ্ট্রীয় ও বেসরকারী গণমাধ্যমে। সংঘবদ্ধভাবে বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে মিথ্যে অপবাদ দিয়ে অপপ্রচার চালানো হলো প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে। বিস্মৃতির অতলে বঙ্গবন্ধুকে ঠেলে দিতে ইতিহাস থেকে মুছে ফেলার হীন প্রচেষ্টা। বাংলাদেশকে পিছিয়ে দিতে ষড়যন্ত্রকারীদের উল্লসিত নারকীয় যজ্ঞের মাঝে বঙ্গবন্ধুর ছায়া প্রলম্বিত হতে থাকে। বিফলে যায় কুচক্রীদের হীন প্রচেষ্টা, কেননা অর্বাচীনরা বোঝেনি হত্যা করে মৃত্যুঞ্জয়ী বঙ্গবন্ধুকে বাংলাদেশ খেকে মুছে ফেলা যাবেনা। কেননা বঙ্গবন্ধুই হলো বাংলাদেশ। রেসকোর্স ময়দানের পাশে দিয়ে হেটে যেতে কবি শোনেন বঙ্গবন্ধুর বজ্রকন্ঠের অনুরণণ- "এবারের স্বাধীনতার সংগ্রাম"। ছোট্টবেলায় পিতার কাঁধে চড়ে বালকের দেখা মুজিব কোট পরিহিত দীর্ঘকায় বঙ্গবন্ধুকে আরও বেশী দীর্ঘকায় আকাশ ছোঁয়া মনে হয়। সবুঝ মাঠে কৃষকের কানে ভেসে আসা প্রতিধ্বনি ছড়িয়ে যায় বাংলা জুড়ে - শোনো, একটি মুজিবরের থেকে লক্ষ মুজিবরের কন্ঠস্বরের ধ্বনি, প্রতিধ্বনি আকাশে বাতাসে ওঠে রণি। বাংলাদেশ আমার বাংলাদেশ।।

বঙ্গবন্ধু একজন দূরদর্শী মহান নেতা ও স্বপ্নদ্রষ্টা, যে জানত তাঁর স্বপ্নের বাস্তবায়ন। বঙ্গবন্ধুর প্রতিটি কর্ম বাক্যই আজকের বাংলাদেশের বাস্তবতা। বাংলাদেশের রাজনীতিতে বঙ্গবন্ধু দীর্ঘ সাত দশক যেমন কেন্দ্রীয় চরিত্রে বিদ্যমান তেমনি হাজার বছর বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করবে।

বঙ্গবন্ধু ১০ জানুয়ারী তারই স্বাধীন স্বদেশে চিরকালের জন্য ফিরে এসেছিলেন মৃত্যুকে জয় করে। কবি শামসুর রাহমানের অসাধারণ পঙক্তিগুচ্ছতে (গাছ, কফিন এবং নৌকা) বঙ্গবন্ধুর ফিরে আসা মহিমাময় হয়ে উঠেছে :

কফিনে পুরল ওরা, ঘাতকেরা, তাঁকে
অবহেলা আর অশ্রদ্ধায়,
অথচ মহত্ত্ব আর অমরত্ব, তাঁর দুই সহচর, তাঁর উদ্দেশে
করল নিবেদন অপরূপ শ্রদ্ধাঞ্জলি।
ঘাতকেরা সে কফিনটিকে
নিষিদ্ধ দ্রব্যের মতো পাচার করতে চেয়েছিল
বিস্মৃতির বিয়াবানে আর সে কফিন
অলৌকিক প্রক্রিয়ায় একটি বিশাল
সন্তরণশীল নৌকা হয়ে ভাসমান সবখানে।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই জানুয়ারি, ২০২৩ রাত ১২:৩৭

সোনাগাজী বলেছেন:



লেখাটা ভালো লাগেনি, উনার ফিরে আসাকে সঠিকভাবে তুলে ধরতে পারেননি।

১০ ই জানুয়ারি, ২০২৩ রাত ১২:৪৪

খুরশীদ আলম বলেছেন: আপনার মূল্যবান সময় নষ্ট করে পড়েছেন এতেই আমি কৃতজ্ঞ । আশাকরি আপনি এবিষয়ে সঠিকভাবে লিখে তুলে ধরবেন।

২| ১০ ই জানুয়ারি, ২০২৩ রাত ২:৪৭

অনল চৌধুরী বলেছেন: ৭২-৭৫ পর্যন্ত কতোজন যুদ্ধাপরাধীর বিচার বা ফাসী হয়েছে ?

৩| ১০ ই জানুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ১:১৪

রাজীব নুর বলেছেন: শেখ মুজিব ফিরে এসেছেন। এটা আমাদের ভাগ্য। পাকিস্তানীরা পিশাচ। ওরা শেখ মুজিবকে মেরে ফেলতে পারতো।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.