![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
স্বপ্নবাজ। একটা রাতের রংধনুর স্বপ্ন দেখি...। -কিঙ্কর আহ্সান (http://www.facebook.com/kingkor1)
কষ্ট নিয়ে ফেলানী
কিঙ্কর আহ্সান
১.
২০১১ সালের ০৭ জানুয়ারি।
ভরদুপুর। মাথার ঠিক ওপরেই ঠায় দাড়িয়ে মস্ত সূযর্টা। বিএসএফ ১৮১ ব্যাটালিয়নের চৌধুরীহাট ক্যাম্পের জওয়ানরা কান্ত খুব। একটু আগেই ভরপেট খাওয়া হয়েছে। আজকের আয়োজন ছিলো মাটন বিরিয়ানি। মাঝে মাঝে এমন হয়। ভালো খাওয়া দাওয়ার পর গেলা হয় একটু মদও। রান্নাটা ভালো ছিলো আজ। খাসীর মাংসটা নরম, পিচ্ছিল আর দারুন স্বাদের। মুখের ভেতর দিলেই কেমন যেন গলে যায়। জওয়ান অমিত দেখতে পায় একটা শকুন চক্কর দিচ্ছে আকাশটায়। তার খুব ইচ্ছে করে গুলি করতে। কিন্তু জওয়ানদের পাখি মারা নিষেধ। কাজকর্ম না থাকলে কান্তি বেড়ে যায় আরও। ঘুম পায়। ঘুমে ঢুলু ঢুলু চোখ নিয়েই সে দেখতে পায় দুরে সীমান্ত দিয়ে হেটে যাচ্ছে দুটো মানুষ। অমিতের ঘুম ছুটে যায়। বন্দুক তাক করেই ট্রিগার চেঁপে দেয় সে। তারা বড় গনতন্ত্রের দেশ। ‘ট্রিগার হ্যাপি’ পরিচয়টি তাদের শক্তির জানান দেয়। গড়ে প্রতিবছর ১০০ জন করে বাংলাদেশী মারতে হয়। ছোট্ট দেশ। এসব দেশের মানুষ মারতে ক্ষতি নেই। নিশানায় গুলি লাগতে দেখে ভালো লাগে অমিতের। একটা অম্লস্বাদের ঢেকুর তুলে ঘুমানোর চেষ্টা করে এরপর এই বীর জওয়ান। আজ আর কোন ঝামেলা হবেনা। এখন ঘুমানো জায়েজ। সে যখন ঘুমায় তখন কুড়িগ্রামের অনন্তপুর সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়ায় ঝুলে থাকে নিশানা লাশটি। সূর্য ধীরে ধীরে যেন নেমে আসে ভূমির কাছাকাছি। হলুদ রোদ। কাঁটাতারে চুইয়ে পড়ে রক্ত। সে রক্তে হলুদ রোদের মাখামাখি। সে রক্তের তাপ সূর্যের আলোর চেয়েও বেশি কিছুটা।
২.
নাগেশ্বরী উপজেলার রামখানা ইউনিয়নের বানার ভিটা গ্রাম। এ গ্রামেরই এক বাড়ির পেছনে ছোট্ট একটি সুপুরি বাগানের শেষপ্রান্তে ঝোপে ঢাকা কবরটি। ভেঙে গেছে কবরের বেড়া। চারপাশে জমেছে আগাছা। মাটি ফুড়ে বেরিয়েছে কয়েকটা বুনো নীল ফুল। কে যেন লাগিয়েছে গাদা ফুলের গাছ। যতেœর অভাবে গাছগুলো মরো মরো। দিনের অনেকটা সময় এখানে কাটার মা জাহানারা বেগম। ‘মাগো, কই গেলি, ক্যান গেলি? ’ বলে সুর করে কাঁদেন। সবসময়ই তার হাতে থাকে তসবিহ। তিনি করুনাময়কে ডাকেন। মেয়ের জন্যে দোয়া করেন। পিতা-মাতার আগে সন্তানের পৃথিবী ছেড়ে চলে যাওয়াটা নাকি কষ্টের। তার কপালে এই কষ্ট আছে। স্বামী নুরুল ইসলাম বলেন, মেয়েটা মারা যাবার পর তার মাথায় সমস্যা দেখা দিয়েছে। তিনি বউকে কবরের দিকে যেতে নিষেধ করেন। মা’কি আর নিষেধ শোনে! জাহানারা বেগমের মনে হয় মেয়ে কবর থেকে তাকে ‘মা’ বলে ডাকে। মেয়ের মরা মুখ দেখতে পাননি। শোনেননি শান্তিেত শেষবারের মতন ‘মা’ ডাক। এখন তাই কবরের কাছে এসে কান পেতে বসে থাকেন। মেয়ে তাকে ডাকেন এ কথা কাউকে বলেননি তিনি। স্বামীকেও না। মা-মেয়ের কিছুটা সময় না হয় একান্তেই কাটুক। তাছাড়া এই কথা জানলে সবাই তাকে পাগল ঠাওরাবে। তখন আর কেউ আসতে দেবেনা এদিকে। তার চেয়ে সব গোপন থাকুক। গভীর গোপন।
৩.
‘ঢাকায় ইন্ডিয়ান হাই কমিশনের সামনের রাস্তার নাম ফেলানী রোড করা হোক’ নামের একটা পেইজ দেখলাম। দুই দিনেই পেইজের সদস্য সংখ্যা ১৯ হাজার পেরিয়েছে। ভালো কথা। দেখে ভালো লাগে। কোথাও আন্দোলন হচ্ছে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা হচ্ছে শুনলে কৈাতুহল হয়। কারা করছে এসব? আমি ধীরগতির ভীরু মানুষ। তবুও এর আগে একটা আন্দোলনে তাল মেলাতে গিয়েছিলাম। হয়ে উঠেছিলাম আশাবাদী। কিন্তু আমার আশায় গুড়ে বালি! এ দেশের সবকিছুতেই একটা সময় প্রবেশ করে রাজনীতি। সবার আড়ালে ঢুকে যায় স্বার্থপরতা। যে স্বপ্ন নিয়ে একদল তরুনকে দেখেছিলাম নতুন কিছু করার জন্যে ছুটতে সেই তাদেরকে আড়াল করেই বসেছে মাটন বিরিয়ানির আসর। পোলাওয়ের ভেতর হাত চুবিয়ে বের করে আনা দেশী মুরগীর পাখনা কুড়মুড় করে চাবাতে চাবাতে শেষ হয়েছে আন্দোলন। আশাহত হয়েছি। হতাশ হয়েছি একটা লাখো মানুষের ভীড় আচমকা উধাও হয়ে যেতে। তবে ভালো কিছুও হয়েছে। বুঝেছি আমরা ফুরিয়ে যাইনি। সবার অল্েয ঠিকই তৈরি হচ্ছে একদল আগুন তরুন। প্রার্থনা করি, সফল হোক এই পেইজের উদ্দেশ্য। যা চাইলাম তাই’ই পেতে হবে এমনতো কোন কথা নেই। আশার কথা হবে যদি এখান থেকে আরও দশটি, একশটি, এক লাখ, এক কোটি তরুনের ভেতর দেশের জন্যে ভালোবাসা তৈরি হয়। তারা বুঝতে পারুক আমাদের সাথে অন্যায় করা হচ্ছে। প্রার্থনা করি, নোংরা রাজনীতি যেন প্রবেশ না করে আর। যে লাশটি দীর্ঘ সময় ধরে কাঁটাতারে ঝুলে ছিলো সে লাশের রোদে মাখা গরম রক্ত বরং প্রবেশ করুক আমাদের শরীরে। বুঝি, সামান্য শকুনের চেয়েও তুচ্ছ হওয়ার কষ্ট। এখনই যদি না হয় প্রতিবাদ তবে হয়ত জাহানারা বেগমের মতন মায়েরা সব লুকিয়ে কষ্ট নিয়ে কবরের কাছে গিয়ে চুপিসারে শুনবে ‘মা’ ডাক। সে দিন যেন না আসে। করুনাময়, সেদিন যেন না আসে। অনুরোধ।
©somewhere in net ltd.
১|
১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১:২৭
ভোরের সূর্য বলেছেন: সুন্দর লেখা লিখেছেন।তবে আপনাকে ধন্যবাদ দেব সমপুর্ন অন্য কারনে। কয়েকদিন আগে আমি একটা লেখা লিখেছিলাম অনুরোধ করে জানিনা আপনি লেখাটা পড়েছিলেন কিনা।তারকাটার তারে ঝুলানো ফেলানীর অমানবিক,পৈশাচিক ছবিটা বার বার ব্যবহার না করে কোন প্রতিকী ছবি ব্যবহার করার জন্য।আপনি সেটাই করেছেন।ধন্যবাদ।