নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

“কলিমদ্দিকে আবার দেখা যায় ষোলই ডিসেম্বর সন্ধ্যায় বাজারের চা স্টলে। তার সঙ্গীরা সবাই মুক্তি, সে-ই শুধু তার পুরনো সরকারি পোশাকে সকলের পরিচিত কলিমদ্দি দফাদার।”

কলিমুদ্দি দফাদার

“ঘুরছি আমি কোন প্রেমের ই ঘুর্নিপাকে, ইশারাতে শিষ দিয়ে কে ডাকে যে আমাকে”

কলিমুদ্দি দফাদার › বিস্তারিত পোস্টঃ

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক কিছুই এখনো নতুনের মতো পড়ে আছে।

ভাবিকে ফোন দিলাম—কি দেওয়া যায়? ভাবি জানালেন,
“তোমার ভাইয়ার নাকি অনেকদিন ধরে কাঁসার প্লেট আর পানির গ্লাসের শখ! সময় পাচ্ছে না কিনে নেওয়ার।”
আমি একটু “থো” হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, Are you sure? কাঁসার থালা?

কাঁসা যে চিনি না বা নাম শুনিনি—এমন না। তবে জানতাম এটা সনাতনী প্রতীক! অনেক হিন্দু সিরিয়ালে কাঁসার জিনিসপত্র দেখেছি। হুমায়ূন আহমেদের ছবি ঘেটুপুত্র কমলা কাঁসার তৈজসপত্র উপস্থিতি দেখছি। তাই মুসলমান ঘরে কাঁসার থালা–বাটি—কেমন জানি অচেনা মনে হলো। যাই হোক, ভাবি কথা শেষ করার পুর্বে বললেন,
“এগুলোর ভালোই দাম, সাথে ক্যাশ নিয়ে যাইয়ো।”

১) কাঁসার প্লেট–গ্লাস ব্যবহার নাকি স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ভালো।
– এতে নাকি হার্টের সমস্যা কমে।
– গ্যাস্ট্রিক বা অ্যাসিডিটিও নাকি হয় না।
– তাছাড়া কাঁসার তৈজসপত্র বেশ ভারী ও টেকসই।

২) এসব উপকারিতা অবশ্য আমার কাছে গুজব মনে হয়নি। অনেক ধাতু, পদার্থ বা পাথরেই ব্যবহারিক গুণ থাকে। তবে বিক্রেতারা অবশ্যই একটু অতিরঞ্জিত করে বলে—এটাও সত্য।

উপহার হিসেবে কিনবো আবার দামি জিনিস তাই ইউটিউব ঘাঁটাঘাঁটি শুরু করলাম। প্রথমেই পেলাম জামালপুরে নির্মিত কাঁসার জিনিসপত্রের বিখ্যাত একটা পেইজ—দাম বেশ চড়া। এত দামি জিনিস অনলাইনে অর্ডার করা ঠিক হবে না। এরপর পেলাম নিউমার্কেটের কিছু দোকানদারের ভিডিও তে বলছে—গুজরাটি চকচকে পালিশ করা কাঁসার থালা–বাটি। কিন্তু নিউমার্কেট মানেই টাউট–বাটপারের স্বর্গ! যে দোকানদার কথা বলছিল, তার বাবড়ি চুল ও লুক দেখে মনে হলো—পুরাই ব্লগার চাঁদাগাজীর মতো টা**! তাই এখান থেকে ভুলে ও কেনা যাবে না। কিনতে হবে আদি কোন স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান থেকে।


ঘাঁটাঘাঁটি করে প্রাপ্ত জ্ঞান থেকে আসল কাঁসা চিনার উপায় জানলাম-
“কোনো লোহার দণ্ড দিয়ে কাঁসায় আঘাত করলে তরঙ্গ বেশ কিছুক্ষণ থাকে। লোহার বেলায় তা হয় না।”
এই জ্ঞান পকেটে নিয়ে বের হলাম শাঁখারি বাজারের উদ্দেশ্যে।

অর্ধেক ঢাকা পাড়ি দিয়ে সন্ধ্যায় পৌঁছালাম। শাঁখারি বাজারে এর আগে এসেছিলাম ২০১৩-১৪ সালে, হলি উৎসবে। ঢাকার সেরা হলি হয় এখানেই—বন্ধু–বান্ধব নিয়ে রং–হইচই, নাচানাচি! ফেরার পথে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে দেখেছিলাম সাদা কবুতরের মতো জামা পরা দুই সুন্দরী মেয়ে—রং লাগানোর ভয়ে সেখান দিয়ে যেতে সংকোচ বোধ করছিল। তখন ছিলাম বেশ পোংটা-
সুন্দর করে বলেছিলাম—“Holy is for celebration! অসভ্যতামি করবো না, রং কিন্তু লাগাবোই।”
দেখতে শুনতে খারাপ আর ভালো অ্যাপ্রোচে দেখে তারা ও মুচকি হেসে নিষেধ করেনি।
দিলাম গালে রং লাগিয়ে.....

পুরো শাঁখারি বাজার হয়তো আধা কিলোমিটার। শাঁখারি বাজার—এক আলাদা জগত ঢাকার ভেতর এমন জায়গা আর নেই যেখানে সনাতনী আচার–আচরণ, রীতিনীতি আর বাঙালি সংস্কৃতির মিলন এত স্পষ্ট। বাদ্যযন্ত্র, তৈজসপত্র, মিষ্টান্ন–ভাজাপোড়া, কসমেটিক—কি নেই!

মোট চারটি মন্দির চোখে পড়লো—প্রথমেই জগন্নাথ পুরীর মন্দির, এরপর রামকৃষ্ণ মন্দির (সবচেয়ে কোলাহলপূর্ণ), একটি কালী মন্দির, আরেকটি নাম মনে পড়ছে না....

এবার আসল কাজ—কাঁসার থালা কেনা। দাম—কেজি ৩০০০ টাকা।
প্লেট–গ্লাস ওজন করে বিক্রি করা হয়।

যেই দোকান থেকে কিনবো, সেই প্রবীণ দোকানদার লোকটির আচরণে আমি কিছুটা মুগ্ধ। কথা শুনেই তিনি বুঝে ফেললেন—আমি আসল–নকল নিয়ে দ্বিধায় আছি। দু’ধরনের প্লেট দেখিয়ে জিজ্ঞেস করলেন,
“দেখেন কোনটা আসল কাঁসা? আমরা না বললে আপনে চিনতে পারবেন না!”
সত্যিই—শব্দ তরঙ্গ দুটোরই প্রায় একই লাগলো।
পুরোটা সময় জুড়েই মনে হলো তিনি আমার সাইকোলজি নিয়ে খেলছেন।

শেষে হাতে পেটানো একটি কাঁসার প্লেট নিলাম- ১২০০ গ্রামের মতো ওজন হবে
আর পানির গ্লাস—৭৫০ গ্রামের মতো। কোন দামাদামি নাই—ফিক্সড।
কইলো লাইফটাইম কালার গ্যারান্টি। স্লিপ দিয়া দিবো কিছু হইলে নিয়া আসতে____

আর ইনস্ট্রাকশন দিল
“ভিম বা লিকুইড দিয়ে ভুলেও না; তেঁতুল আর লেবুর রস দিয়ে বাসায় গিয়ে মাজবেন—সোনার মতো চকচকে হবে।”

যাক কথাবার্তা আর ব্যবহার দিয়ে খুব আপ্যায়ন করলো তারাও শুনে কিছুটা আশ্চর্য—ঢাকার আরেকপ্রান্ত থেকে এসেছি! তাই আমি ও তাঁদের একটি খুশি করে দিলাম-
“আপনাদের সম্প্রদায়ের আদি প্রতিষ্ঠানের লোকেরা তুলনামূলক সৎ। তাই এতদূর থেকে আসা।”
উফffff… খুশির ঠেলায় কি হাসি দিলো সবাই! :p

ফিরার পথে হাতে রাখা পেপারে মুড়ানো পলিথিনে সাড়ে পাঁচ হাজার টাকার কাঁসার থালা আর গ্লাসের দিকে তাকালাম।
ভাবলাম—এই জিনিস যদি এলিফ্যান্ট রোড, গুলশান–২, বা ধানমন্ডির কোনো সিরামিক দোকান থেকে কিনতাম—তাহলে কেমন প্যাকেজিং আর আপ্যায়ন পেতাম?

পক্ষান্তরে মনে হলো—
এটাই হয়তো একটি আদি প্রতিষ্ঠানের মাহাত্ম্য; খাঁটি জিনিসই আসল, দৃষ্টিনন্দন চকচকে মোড়ক নয়


আমার লিখার স্পেলিং, সেন্টেস ফ্রেমিং নিয়ে অনেক ব্লগার অভিযোগ করেছেন-
তাই এখন এআই দিয়ে শুদ্ধে নিয়েছি। আমি এখন এআই সাহিত্যক :p

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১০:০৪

সৈয়দ কুতুব বলেছেন: আমিও তো এআই ইউজ করি ....। ;)

আপনার লেখার ভালো দিক হলো ইউনিক বি্ষয় নিয়ে লিখতে পারেন। ইউনিক experience share করেন ।

তবে জলে এবং থ হলো সঠিক বানান । সেটা চাইলে ঠিক করতে পারেন ।

জলে ফেলা হবে হয়তো ।

০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১০:৩৮

কলিমুদ্দি দফাদার বলেছেন:

আপনার লেখার ভালো দিক হলো ইউনিক বি্ষয় নিয়ে লিখতে পারেন। উফফফ!!! কুতুব সাহেব এভাবে বলিয়েন‌ নি...
আচ্ছা শাইয়্যান ভাইয়ের সাথে যোগাযোগ করি। আসছে বই মেলায় বই বের করমু। :p

তবে জলে এবং থ হলো সঠিক বানান । এইসব জ্বল-পানি এখন আর আমার ঘাড়ে চাপায়ে লাভ নাই;
ইহা সবই এআইয়ের তেলেসমাতি। কয়েকদিন বাদে ব্লগে লিখার মতো মন্তব্যে এআই দিয়ে ফ্রেমিং করে দিবো।

আমিও তো এআই ইউজ করি তবে একটা জিনিস কি?? বানান ভুল সেন্টেস ফ্রেমিং অসুন্দর হইলে ও আমার লেখাগুলো যখন পুনরায় পড়তাম একটা আবেগ আর মায়া কাজ করতো কিন্তু এই লিখাটা এআই ঠিক করে দেওয়ার পর ঠিক তেমন টা লাগে নাই। যাক তারপর ও পাঠকরা খুশি থাকে........

২| ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১০:১৯

গোবিন্দলগোবেচারা বলেছেন: কাঁসার মূল আবেদন বন্ধক রাখা যায়।
এই কারণে নিম্ন মধ্যবিত্তের ঘরে কাঁসার অনেক ডিমান্ড ছিল।
কাঁসার পাত্র হার্টের সমস্যা, গ্যাসের সমস্যা দূর করে এরকম কোন বৈজ্ঞানিক কারণ মনে হয় নাই। তবে এর ন্যাচারাল মাইক্রোব রেজিস্ট্যান্স ক্ষমতা আছে শুনেছি। আর কাঁসার পাত্রে অনেকক্ষণ টমেটো দিয়ে রান্না করা খাবার বা যে কোন এসিডিক খাবার লেবুর রস লবণ ইত্যাদি অনেকক্ষণ রাখলে পাত্র থেকে কপার লিচ হয়ে শরীরে ঢুকতে পারে। কপার শরীরের জন্য খুব বেশি ভালো না। তবে যদি কপার লিচ হয় ও ,এত সামান্য পরিমাণ কপার শরীরে ঢুকবে যেটা কোন খারাপ কিছু ঘটাতে পারে বলে মনে হয় না।
সনাতন ধর্মলম্বীদের সততার ঘটনা ডিবেটেবল। পশ্চিমবঙ্গের ইউটিউব চ্যানেলের ভিডিও দেখেছি, বিহারে মাস স্কেলে নকল কাঁসার বাসন কোসন তৈরি করা হয়। কপালের বদলে লোহার বাসন তৈরি করে গিলটি করা হয়। চুম্বক দিয়ে সহজে এই চুরি ধরা যায়।

বানানের মায়ের বাপ। এআই সাহিত্যিক! কারে কোনখানে কি ভরে দিলেন বুঝলাম না

০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১০:৫৪

কলিমুদ্দি দফাদার বলেছেন:
সচরাচর ব্লগে যেমন মন্তব্য করেন তার থেকে একদম ভিন্ন ধর্মী তথ্যবহুল অতিসুন্দর একটি মন্তব্য করলেন। খুবই ভালো লাগলো পড়ে। কাসার ব্যবহার এবং উপকারিতা নিয়ে আসলে আমি অতোটা ঘাঁটাঘাঁটি করিনি; তাই বিস্তারিত অতো জানি না।‌তবে আপনার মন্তব্য বেশ যুক্তিযুক্ত মনে হলো। যেমন দোকানীরা একটু অতিরঞ্জিত করে বলে বিক্রির জন্যে..... কিন্তু পাথর এবং ধাতুর উপকারিতা এবং প্রভাব আমি বিশ্বাস করি। আমাদের রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আকিদ পাথর ব্যবহার করতেন।

কাঁসার মূল আবেদন বন্ধক রাখা যায়। ইহার কারন কি হতে পারে? কাসা কি মুল্যবান কোন ধাতু স্বর্নের মতো? আবার হলে ও হতে পারে! প্রাচীনকালে কোন ক্রাইসিস থেকে হয়তো ইহা অভ্যাস পরিনত হইছে। আর কাসার-পিতলের বড় পাতিলের বিয়ে সহ অনন্যা অনুষ্ঠানের রান্না নাকি খুবই সুস্বাদু। তারা তো ইহা এভাবে ব্যাখা করে।

সনাতন ধর্মলম্বীদের সততার ঘটনা ডিবেটেবল। আরে টাউট বাটপার তো সবখানেই আছে। আমার অবজারভ করা কিছু স্বনামধন্য আদি প্রতিষ্ঠান দেখছি হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা পরিচালনা করে। এটা হতে পারে মিষ্টির দোকান, স্বর্নের দোকান কসমেটিকস বা অন্যান্য যে কোন কিছু। ওনারা তুলনামূলক ভালো বা খাঁটি জিনিসটা দিয়ে ব্যবসা করে। এজন্য অনেক নাম-ডাক আর সুনাম।‌

বানান ভরাভরি ইহা সবই এখন এআইয়ের হাতে। :p

৩| ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৩৬

কামাল১৮ বলেছেন: সব থেকে ভালো উপহার হলো গিফট কার্ড বা নগদ টাকা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.