![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কেজিবি’সংস্থাটি সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা হিসেবে পরিচিত ছিল। ১৩ মার্চ, ১৯৫৪ থেকে ৬ নভেম্বর, ১৯৯১ সালে কেজিবি সোভিয়েত নিরাপত্তা সংস্থা, সোভিয়েত গোয়েন্দা সংস্থা কিংবা সোভিয়েত নিরাপত্তা পুলিশ সংস্থা হিসেবে সমগ্র বিশ্বে চিহ্নিত হয়ে আছে।
অক্টোবর বিপ্লবের মাধ্যমে সোভিয়েত ইউনিয়নে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার দুই মাস পর ১৯১৭ সালের ২০ ডিসেম্বর রাশিয়ার চেকা (Cheka) ভেঙ্গে কেজিবি গঠন করা হয়। রুশ ভাষায় একে Komityet Gosudarstvennoy Bezopasnosti (KGB) বলা হয়। ইংরেজিতে এর অনুবাদ হচ্ছে Committee for State Security. কেজিবি’র প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বীতা ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিকিউরিটি এজেন্সি সিআইএ’র সাথে। তবে প্রাথমিক দিকে যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীন সিকিউরিটি এজেন্সি এফবিআই, ন্যাশনাল সিকিউরিটি এজেন্সি, ফেডারেল প্রোটেকটিভ সার্ভিস ও সেক্রেট সার্ভিস ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের যৌথ গোয়েন্দা সংস্থা এমআই ফাইভ এবং যুক্তরাজ্যের গোয়েন্দা সংস্থা এমআই সিক্স-এর অভ্যন্তরে কেজিবি পরোক্ষভাবে তার গেয়েন্দা কার্যক্রম পরিচালনা করত। আফগানিস্তানের বিদ্রোহ দমনে এ সংস্থা সরাসরি অংশ নেয়। প্রতিষ্ঠাকালীন কেজিবি’র চেয়ারম্যান ছিলেন ফিলিক্স এডমাউন্ডভিচ জারসিংকি।
( ফেলিক্স জারঝিনস্কিকে কেজিবি'র জনক )
সোভিয়েত ইউনিয়ন বিলুপ্তি ঘোষণার পূর্ব পর্যন্ত ২০ জন চেয়ারম্যান এটির দায়িত্বে ছিলেন। এর সর্বশেষ চেয়ারম্যান ছিলেন ভাডিম ভিক্টোরোভিচ বাকাটিন (Vadim Viktorovich Bakatin)। ১৯৯১ সালের ২৩ আগস্ট কেজিবি’র ১৯তম চেয়ারম্যান কর্নেল জেনারেল ক্রাইচকভকে (কৎুঁপযশড়া) ব্যার্থতার দায়ে গ্রেফতার করে ভাডিম ভিক্টোরোভিচ বাকাটিনকে চেয়ারম্যান করা হয়। ভাডিম ভিক্টোরোভিচ বাকাটিনকে কেজিবি’র কার্যক্রম গুটিয়ে আনতে বলা হয়। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর কেজিবি’র কার্যক্রম স্তিমিত হয়ে আসে। ওই বছর ৬ নভেম্বর অফিসিয়ালি কেজিবি’র কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়। ১৯৯৫ সালের ২১ ডিসেম্বর রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট বরিস ইয়েলৎসিন রাশিয়ার নিরাপত্তার জন্য এফএসবি নামে গোয়েন্দা সংস্থা গঠন করেন। অবশ্য কেজিবি’র কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর থেকেই এফএসবি’র কার্যক্রম শুরু হয়েছিল। কেজিবিকে কমিউনিস্ট পার্টি অব সোভিয়েত ইউনিয়নের KGB ‘সোর্ড অব শিলড’ বলা হতো।
কেজিবি গঠনের পর এর মাতৃসংগঠন চেকা’র সাংগঠনিক বিভিন্ন পরিবর্তন হয়। ১৯২৩ সালে স্টেট পলিটিক্যাল ডিরেক্টরেট (OGPU), ১৯৪১ সালে পিপল’স কমিসারিয়্যাট ফর স্টেট সিকিউরিটি (MGB) এবং ১৯৪৬ সালে মিনিস্ট্রি অব স্টেট সিকিউরিটি (MVD) চেকা থেকেই করা হয়। অবশ্য এসব সংস্থাও কেজিবি’র সংগঠন নামেই বেশি পরিচিত ছিল। কেজিবি’র কার্যক্রমই এরা বাস্তবায়ন করতো।
(কেজিবির লোগো )
কর্মকৌশলঃ
প্রতিষ্ঠার অল্প কিছুদিনের মধ্যে কেজিবি বিশ্বের বৃহৎ ক্ষমতাসম্পন্ন ও কার্যকর গোয়েন্দা সংস্থায় পরিণত হয়। বিশ্বের অপরাপর গোয়েন্দা সংস্থার মতো কেজিবিও তার টার্গেট দেশে বৈধ ও অবৈধ সবধরণের কার্যক্রম শুরু করেছিল। উদ্দেশ্য ছিল সোভিয়েত ইউনিয়নসহ অন্য সমাজান্ত্রিক দেশের নিরাপত্তা সুসংহত রাখা। এজন্য কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ হস্তক্ষেপ করতে দ্বিধা করতো না কেজিবি।
কেজিবি’র গোয়েন্দাগিরির জন্য বিদেশে সোভিয়েতের দূতাবাসকে দায়িত্ব দেয়া হতো। তারা টার্গেট দেশে বিশ্বস্ত গোয়েন্দা বাছাই করতো। এজন্য ওই দেশে সমাজতান্ত্রিক আদর্শ প্রচার করতো। যারা কমিউনিস্ট বা সমাজতান্ত্রিক আদর্শে বিশ্বাসী হতো তাদের বুদ্ধিবৃত্তিক উন্নয়নে প্রশিক্ষণ দিত। সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে এদের বসানোর চেষ্টা থাকতো কেজিবি’র। তাদের বিভিন্নভাবে অর্থিক সহায়তা ছাড়াও প্রযুক্তিগত সহযোগিতাও করতো এই কেজিবি। এভাবে তারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উচ্চ পর্যায়ের স্পাই তৈরি করতে পেরেছিল। সমাজতান্ত্রিক লোক তৈরির কারণে সোভিয়েত ইউনিয়ন ১৯৪৯ সালের ২৩ আগস্ট দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শুরুতে জার্মানী ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে Molotov-Ribbentrop চুক্তি করেছিল।
কোল্ড ওয়ারের পর টার্গেট দেশের বৈধ অধিবাসীদের দিয়ে চারটি ভিন্ন বিভাগে অপারেসন চালাতো কেজিবি। এগুলো হলো রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামরিক কৌশল ও তথ্যের বাইরে থেকে যায় এমন সব কাজের বিভাগ। এসব বিভাগের বিভিন্ন কাজকে কেজিবি পিআর লাইন, কেআর লাইন, এক্স লাইন, এন লাইন, ইএম লাইন নাম দেয়েছিল। কেজিবি কখনো টার্গেট দেশে অবৈধ অধিবাসীদের এক কেন্দ্রের অধীনে রাখেনি। বৈধ অধিবাসীদের সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমে একত্রিত রাখতো।
পশ্চিমা দেশগুলোতে কেজিবি স্পাইদের এজেন্টদের অধীনে কাজ করাতো। স্পাইরা এজেন্টদের কাছে রাষ্ট্রীয় গোপন তথ্য সরবরাহ করতো। এরকম একটি গুরুত্বপূর্ণ এজেন্টের নাম ছিল ক্যামব্রিজ ফাইভ। অবশ্য এরা কেউই কেজিবির কর্মকর্তা নয়। এই গ্রুপের একজন কিম ফিলবি নিজেকে কেজিবি’র কর্মকর্তা দাবি করে প্রতিদ্বন্দ্বী গোয়েন্দা সংস্থার কাছে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেয়ায় কেজিবি’র হেড কেয়ার্টারে তাকে নিষিদ্ধ করা হয়। কোনো এজেন্ট বা স্পাই বিশ্বাস ভঙ্গ করলে কেজিবি তাকে ব্লাকমেইল করতো।
তথ্য সংগ্রহঃ
সিআইএ’র মতো কেজিবি’রও তথ্য সংগ্রহের বড় একটি মাধ্যম ছিল মিডিয়া বা সংবাদমাধ্যম। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পত্রপত্রিকা, টিভিচ্যানেল, সরকারি প্রকাশনা, পরিসংখ্যান, সরকারি কর্মকর্তা ও রাজনীতিবিদদের বক্তৃতা-বিবৃতি থেকে এরা তথ্য সংগ্রহ করতো। তবে সমাজতান্ত্রিক আদর্শে বিশ্বাসী ছাড়া কেজিবি অন্যদের এজেন্ট হিসেবে খুব কমই নিয়োগ দিত। অবশ্য সমাজতান্ত্রিক আদর্শের বাইরে ঘনিষ্ঠ ও বিশ্বস্তদের স্পাই করা হতো। সব দেশের বড় বড় রাজনীতিকদের সাথে কেজিবি গোপনে যোগাযোগ রাখতো। তাদের টাকা ও বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা দিয়ে সময়মত ব্যবহার করতো।
কোল্ড ওয়ারের আগেঃ
কোল্ড ওয়ারের আগে কেজিবি যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে বৃটেন ও ইউরোপের অন্যান্য দেশগুলোকে বেশি গুরুত্ব দিত। ১৯৩৫ সালের পর যুক্তরাষ্ট্রের স্থায়ী নাগরিকদের বরিস বাজারভ ও অস্থায়ী নাগরিকদের ইসখাখ আখমেরভের অধীনে কেজিবি’র স্পাই হিসেবে সাংগঠিত কাজ শুরু করে। তখন কেজিবিতে স্পাই নিয়োগের জন্য প্রাথমিক বাছাইয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের কমিউনিস্ট পার্টির জেনারেল সেক্রেটারি র্আল ব্রাইডারকে। ওই সময়ে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নেতা ও কর্মকর্তা, সেনা ও প্রযুক্তিগত বিষয়ে গোয়েন্দা তৎপরতা চালানো হতো। তবে রাজনৈতিক ব্যক্তিদের উপর কেজিবি’র নজরদারি ছিল বেশি। এ সময়ের মধ্যে কেজিবি প্রযুক্তিগত বিষয়ে উল্লেখযোগ্য সফলতা অর্জন করে। ১৯৪১ সালে বৃটিশ পদার্থ বিজ্ঞানী Klaus Fuch কে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম আণবিক বোমা তৈরির প্রজেক্ট ম্যানহাটন প্রজেক্টের দায়িত্ব দেয়। এই Klaus Fuch ছিলেন কেজিবি’র বিশ্বস্ত স্পাই। তার তত্ত্বাবধানে ম্যানহাটন প্রজেক্টে কেজিবি’র অনেক স্পাই নিয়োগ পায়। তাকে জুলিয়াস এবং ইথেল রোজেনবার্গ নামে কেজেবি’র দুই এজেন্ট নিয়ন্ত্রণ করতেন। ১৯৪৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের আণবিক গবেষণার গুরুত্বপূর্ণ দলিল সোভিয়েত ইউনিয়নে পাচার হয়ে যায়। যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ প্রতিষ্ঠার পাঁচ বছর পর পর্যন্ত কেজিবি দাপটের সাথে যুক্তরাষ্ট্রে তার গোয়েন্দা তৎপরতা পরিচালনা করে।
কোল্ড ওয়ারের সময়ঃ
কোল্ড ওয়ারকালিন কেজিবি’র প্রতিদ্বন্দ্বী গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ব্যাপক তৎপরতা শুরু করলে কেজিবি অনেক ক্ষেত্রেই সফল হতে পারেনি। এ সময়ে টার্গেট দেশের স্থায়ী নাগরিকরা বেশি সফল হয়েছে। কেজিবি’র ব্যয় এ সময় অনেক বেড়ে যায়।
সোভিয়েত ব্লোকে কেজিবিঃ
কোল্ড ওয়ারকালিন সোভিয়েত ইউনিয়ন নিয়ন্ত্রিত দেশগুলোতে কেজিবি অনেক নির্মম ছিল। সমাজতান্ত্রিক ভাবধারা থেকে যে সব দেশ বেরিয়ে যেতে চেয়েছিল কিংবা সমাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে যারা আন্দোলন শুরু করেছিল তাদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র দমনমূলক তৎপরতা চালায় কেজিবি। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে যাওয়ার আগ পর্যন্ত এ তৎপরতা অব্যাহত থাকে। এর একটি হাঙ্গেরিয়ান রিভলুশন অব ১৯৫৬ নামে পরিচিত। সোভিয়েত ইউনিয়নের নিয়ন্ত্রণের বাইরে এককভাবে হাঙ্গেরির অগ্রগতি বন্ধে কেজিবি সরাসরি সশস্ত্র শক্তি প্রয়োগ করে। তখন কেজিবি’র তৎকালীন চেয়ারম্যান ইভান সেরভ ব্যক্তিগতভাবে হাঙ্গেরিতে সফর করে সোভিয়েত রেড আর্মিকে হাঙ্গেরির বিরুদ্ধে দমন নীতি চালানোর নির্দেশ দেন। একইভাবে চেকোস্লোভাকিয়ায় কেজিবি ১৯৬৮ সালে হার্ড লাইনে গিয়ে রেড আর্মি দিয়ে আপারেশন পরিচালনা করে। চেকোস্লোভাকিয়ায় সোভিয়েত ইউনিয়ন তার সহযোগি কমিউনিস্ট পার্টি অব চেকোস্লোভাকিয়া’র মাধ্যমে সমঝোতার নাটকও করে। সমঝোতা নাটকের দায়িত্বে ছিলেন কমিউনিস্ট পার্টি অব চেকোস্লোভাকিয়া’র সদস্য এলোইস ইন্দ্রা ও ভাসিল বিলাক। তবে চেকোস্লোভাকিয়া’র অভিজ্ঞতা দিয়ে কেজিবি ১৯৮০ সালে সলিডারিটি মুভমেন্ট অব পোল্যান্ড-এর মাধ্যমে পোল্যান্ডে সফল হয়। এর পর একক দল গঠন করে সাধারণ নির্বচনের মাধ্যমে পোলিশ ইউনাইটেড ওয়ার্কাস পার্টিকে ক্ষমতায় আনে কেজিবি।
ভিন্নমত দমনঃ
কেজিবি ভিন্নমতের লোকদের দমন করেছে সর্বত্মকভাবে। এজন্য দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল সোভিয়েত ইউনিয়নের কমিউনিস্ট পার্টির প্রথম সেক্রেটারি Nikita Khrushchev কে। ১৯৫৩ থেকে ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত তিনি পার্টির জেনারেল সেক্রেটারি এবং ১৯৫৮ সাল থেকে ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী অবস্থায় তিনি একই সাথে পার্টির সেক্রেটারির দায়িত্বও পালন করেন। সোভিয়েত ইউনিয়নের অ-সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোকে নিয়ন্ত্রণের জন্য সোভিয়েত ইউনিয়নসহ সমাজতান্ত্রিক সমাজে তার বেশ সুনাম ছিল। তবে অ-সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোর ছিল ভিন্নমত। তিনি ভিন্নমতাবলম্বীদের দমনে অন্যদের চেয়ে অনেক বেশি কঠোর ও নির্দয় ছিলেন। এজন্য তিনি প্রকাশ্যে এক কথা বললেও গোপনে অনুসারীদের বলতেন ভিন্ন কাজ করতে। Nikita Khrushchev ক্ষমতাচ্যুত হলে সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং কেজিবি ভিন্নমতাবলম্বীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে খোঁজা শুরু করে। নানা অজুহাতে তাদের গ্রেফতার ও নির্যাতনও করে। ওই সময়ে ভিন্নমতের আন্দোলনের অবস্থা জানা এবং তাদের কর্মীদের খোঁজ-খবর নেয়া ছিল কেজিবি’র অন্যতম একটি রুটিন কাজ।
কেজিবি’র অপকর্ম নিয়ে কেউ গবেষণা করলে কিংবা কোনো গবেষণা প্রতিবেদন বা বই প্রকাশ করলে অথবা পত্রিকায় এ ধরণের কোনো রিপোর্ট প্রকাশ করলে বা রিপোর্ট প্রকাশে সহযোগিতা করলে তাকে কঠোর শাস্তি দিত। ১৯৬৫ সালে Andrei Sinyavsky ও Yuli Daniel নামের মস্কোর দুই লেখক ছদ্মনামে সোভিয়েতের বিরুদ্ধে দেশের বাইরে প্রতিবেদন প্রকাশ করলে তাদের গ্রেফতারের পর বিচারের সম্মুখীন করে কেজিবি। এরা দু’জনই সোভিয়েত সমাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে আনেকগুলো প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এই প্রক্রিয়ায় সফল হলে ১৯৬৮ সালের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত চেকোশ্লোভাকিয়াকে কমিউনিস্ট রাষ্ট্র হিসেবে গঠন করা হয়। যাকে Prague Spring বলা হয়। এসময়ে কেজিবি’র চেয়ারম্যানের দায়িত্বে ছিলেন সোভিয়েত কমিউনিস্ট পার্টির জেনারেল সেক্রেটারি এন্ড্রোপভ। তিনি ১৯৬৭ সাল থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন।
ইরাকে কেজিবির ব্যর্থতাঃ
বাথ পার্টির মাধ্যমে ইরাকে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আশা করা হলেও কার্যত ইরাকে কেজিবি প্রভাব সৃষ্টি করতে পারেনি। ইরাক ক্রমেই যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে চলে গেলে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সোভিয়েত ইউনিয়নের সম্পর্কের পূনর্মূল্যায়ন শুরু করে কেজিবি। ১৯৮০ সালে কেজিবি চেয়ারম্যান এক গোপন সম্মেলনে ঘোষণা দিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্র সোভিয়েত ইউনিয়নে পারমানবিক বোমা হামলা করবে। এরই প্রেক্ষিতে সোভিয়েত সৈন্যদের যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য প্রস্তুত রাখা হয় এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যানের গোপন পরিকল্পনার উপর গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়িয়ে দেয়া হয়। এক পর্যায়ে কেজিবি পারমানবিক বোমা হামলার কথা নিশ্চিত করে। কিন্তু দেখা যায় কেজিবি’র এ রিপোর্টটি ছিল ভুল। এরকম অনেক ভুল তথ্য সোভিয়েত ইউনিয়নকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে দেয় কেজিবি।
আফগানিস্তানে কেজিবিঃ
আফগানিস্তান ছিল কেজিবির বিষফোড়া। কেজিবি আফগানিস্তানে সর্বশক্তি প্রয়োগ করে মুসলমানদের দমনের চেষ্টা করে। বলতে গেলে কেজিবি’র তৎপরতার কেন্দ্রবিন্দু ছিল আফগানিস্তান। অন্যদিকে সিআইএ আফগানিস্তানের কিছু জঙ্গী গ্রুপকে অস্ত্র ও অর্থ সহায়তা দিয়ে সোভিয়েত বিরোধিতায় উস্কে দেয়। এ সময়ে সিআইএ ওসামা বিন লাদেন ও তালেবান তৈরি করে। শেষ পর্যন্ত আফগানিস্তান থেকে সোভিয়েত ইউনিয়নকে বিদায় নিতে হয়। এর পর থেকে শুরু হয় সোভিয়েত নিয়ন্ত্রিত অন্য দেশগুলোতে সমাজতন্ত্র বিরোধী ব্যাপক গণআন্দোলন। এক পর্যায়ে ১৯৯১ সালে ভেঙ্গে যায় সোভিয়েত ইউনিয়ন।
কেজিবি’র জনবল ও বাজেটঃ
বিশ্বের সব গোয়েন্দা সংস্থাই প্রকৃত জনবল ও বাজেট গোপন রাখে। কেজিবি’র বেলায়ও এর ব্যতিক্রম ছিল না। সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রতিরক্ষা বাজেট প্রকাশ করা হলেও কেজিবি’র বাজেট ও জনবল ছিল অপ্রকাশিত। তবে ১৯৯০ সালে কেজিবি’র নিরাপত্তা বাহিনীর জনবল ৪০ হাজার ছিল বলে প্রমাণ পাওয়া যায়।
বিশেষ উদ্দেশ্যের ইউনিটঃ
তথ্য সংগ্রহের সুবিধার্থে কেজিবি স্মল, এলিট ও স্পেটনাজ নামের বিভিন্ন ইউনিটে বিভক্ত হয়ে কাজ করতো। এই ইউনিটের অন্তর্ভূক্ত ছিল অনেকগুলো গ্রুপ। গ্রুপগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি পরিচিত ছিল আলফা গ্রুপ। এটি ১৯৭৪ সালে গঠন করা হয়। এই আলফা গ্রুপ প্রধানত আফগানিস্তান ও চেচনিয়ায় অপারেশন চালাতো। কেজিবি’র আর একটি গ্রুপ ছিল ভেম্পল নামে। এটিকে পেনান্টও বলা হতো। এটি প্রতিষ্ঠা করা হয় ১৯৮১ সালে। এই গ্রুপের স্পাইরা কাজ করতো যুদ্ধরত সৈন্যদের মধ্যে। এছাড়াও কাসকাড, জেনিট, গ্রুম ও স্পেটসগ্রুপ্পা বি নামে আরো কয়েকটি গ্রুপ ছিল। ভৌগলিক ভিত্তিতে কেজিবিকে ১১টি বিভাগে ভাগ করে পরিচালনা করা হতো। ভৌগলিক এ ভাগগুলো ছিল- যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা; ল্যাটিন আমেরিকা; যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ও স্ক্যান্ডেনিভিয়া; পশ্চিম জার্মানি ও অস্ট্রিয়া; ফ্রান্স, ইতালী, স্পেন, নেদারল্যান্ড, বেলজিয়াম, লুক্সেমবার্গ ও আয়ারল্যান্ড; চিন, ভিয়েতনাম, কোরিয়া ও কম্পুচিয়া; জাপান, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, থাইল্যান্ড ও সিঙ্গাপুর; আরব বিশ্ব, তুর্কি, গ্রিস, ইরাণ, আফানিস্তান ও আলবেনিয়া; ফরাসি ভাষা প্রধান আফ্রিকান দেশ, ইংরেজি ভাষা প্রধান আফ্রিকান দেশ এবং ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও শীলঙ্কা।
সূত্র: বিবিসি, রয়টার্স, উইকিপিডিয়া
https://en.wikipedia.org/wiki/KGB
http://www.topspysecrets.com/kgb-history.html
https://cryptome.org/kgb-afghan.htm
http://www.coldwar.org/articles/50s/kgb.asp
http://www.newworldencyclopedia.org/entry/KGB
২৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৩:১৫
কলম চোর বলেছেন: "পুটিনই এখন উহার আসল মাথা", ধন্যবাদ চাঁদগাজী ভাই
২| ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:২৮
শাইয়্যানের টিউশন (Shaiyan\'s Tuition) বলেছেন: ধন্যবাদ। অনেক তথ্য জানতে পারলাম।
একটা প্রশ্ন, রাশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট মিখাইল গরবাচেভ কি মুসলিম ছিলেন?
২৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৩:১৯
কলম চোর বলেছেন: ধৈর্যনিয়ে পরার জন্য ধন্যাবাদ।
মিখাইল গর্বাচেভ মুসলিম ছিলেন না, তিনি খৃষ্টান । সূত্রঃ Click This Link
৩| ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৫৪
আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: তথ্যবহুল ও শ্রমসাধ্য পোস্ট।
ধন্যবাদ কলম চোর।
২৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৩:২০
কলম চোর বলেছেন: ধৈর্যনিয়ে পরার জন্য ধন্যাবাদ জনাব আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম
সাথে থাকবেন।
৪| ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ৯:০৮
শাহাদাৎ হোসাইন (সত্যের ছায়া) বলেছেন: আফগানিস্তান ছিল কেজিবির বিষফোড়া। কেজিবি আফগানিস্তানে সর্বশক্তি প্রয়োগ করে মুসলমানদের দমনের চেষ্টা করে। বলতে গেলে কেজিবি’র তৎপরতার কেন্দ্রবিন্দু ছিল আফগানিস্তান। অন্যদিকে সিআইএ আফগানিস্তানের কিছু জঙ্গী গ্রুপকে অস্ত্র ও অর্থ সহায়তা দিয়ে সোভিয়েত বিরোধিতায় উস্কে দেয়। এ সময়ে সিআইএ ওসামা বিন লাদেন ও তালেবান তৈরি করে।
মানে- সিআইএ এবং কেজিবি সুন্নি মাথা মোটাদের গিনিপিগ বানিয়ে ছিলেন যেটি এখনও চলমান।
ভালো কিছু শেয়ার করলেন।
২৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৩:২১
কলম চোর বলেছেন: আপনার সাথে সম্পূর্ণ সহমত। ধৈর্যনিয়ে পড়ার জন্য ধন্যাবাদ জনাব
সাথে থাকবেন।
৫| ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ১০:০৯
প্রশ্নবোধক (?) বলেছেন: এগুলোই সত্য। যাকে আমরা "behind the scene" বলে থাকি। মানুষ সত্যকে হজম করতে পারেনা। তার যা ভালো লাগে তাই শুনতে চায়। "অমুক দেশ আমাদের বন্ধু অমুক দেশ আমাদের শত্রু" এই টাইপের কথাবার্তাই মানুষ গিলে বেশি।
কেউ ভালবাসে নারে মনু কেউ ভালবাসে না। সবাই সুযোগ বুঝে বিছানায় নিতে চায়।
২৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৩:২২
কলম চোর বলেছেন: ধৈর্যনিয়ে পড়ার জন্য ধন্যাবাদ
সাথে থাকবেন।
©somewhere in net ltd.
১|
২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:২২
চাঁদগাজী বলেছেন:
পুটিনই এখন উহার আসল মাথা; ভালো তথ্য দিয়েছেন।