![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
তার পুরো নাম ভাসিলি গ্রিগোরাইভিচ জেইতসিভ। বিশ্বযুদ্ধে তাঁর কৃতিত্বপূর্ণ কর্মকাণ্ডের মাধ্যমেই তিনি মানব ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে আছেন। বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে ১০ নভেম্বর থেকে ১৭ ডিসেম্বর, ১৯৪২ সালের মধ্যে স্তালিনগ্রাদের যুদ্ধে প্রত্যক্ষভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন। এ সময়ে তিনি নাৎসী জার্মানীর একীভূত সামরিক বাহিনী ওয়েহমাস এবং অক্ষশক্তির ২২৫জন সাধারণ সৈনিককে হত্যা করেছিলেন। তাঁর এ সফলতায় শত্রুপক্ষের ১১জন গুপ্তঘাতকও অন্তর্ভুক্ত ছিল।
১০ নভেম্বরের পূর্বেই তিনি ৩২ জন অক্ষশক্তি দলের সৈনিককে তাঁর সাধারণ মানের মোসিন-নাগান্ত রাইফেল দিয়ে প্রারম্ভিক সফলতা দেখিয়েছেন। অক্টোবর ১৯৪২ থেকে জানুয়ারি, ১৯৪৩-এর মধ্যকার সময়কালে ২৪২ জনকে হত্যা করেন। কিন্তু প্রকৃত সংখ্যা আরো অনেক বেশি বলে ধারনা করা হয়। কেউ কেউ ধারণা করেন যে এ সংখ্যা পাঁচশয়েরও বেশি হতে পারে। এ সময় তার সামরিক পদবী ছিল জুনিয়র ল্যাফটেন্যান্ট।
প্রারম্ভিক জীবন:
ভাসিলি জেইতসিভ সোভিয়েত ইয়েলেনিনস্কোয়ে এলাকায় এক কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। বেড়ে উঠেন ওরাল পর্বতমালার পাদদেশে। সেখানে তিনি তাঁর ছোট ভাই এবং দাদার সাথে হরিণ এবং নেকড়ে শিকারে লক্ষ্যভেদ করে নৈপুণ্যতা দেখান। তাঁর ডাক নাম রুশ শব্দ জায়াতস থেকে এসেছে যার অর্থ দাঁড়ায় খরগোশ।
২য় বিশ্বযুদ্ধ :
১৯৩৭ সালে জেইতসিভ রেড আর্মিতে নিযুক্তি লাভ করেন। কিন্তু ছোট্ট কোঠায় আবদ্ধ থাকতে আগ্রহী বিধায় ভ্লাদিভস্তকের কাছাকাছি প্রশান্ত মহাসাগরে সোভিয়েত নৌবাহিনীতে কেরানি হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। সোভিয়েত ইউনিয়নে জার্মানির আগ্রাসনের প্রেক্ষাপটে অন্যান্য অনেক কমরেডের ন্যায় জেইতসিভও স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে সম্মুখ সমরে স্থানান্তরিত হন। এ সময়ে তিনি ইতোমধ্যেই সার্জেন্ট মেজর পদবীধারী হয়েছিলেন। নাৎসি হিটলারের আক্রমণের মুখে স্তালিনগ্রাদ রক্ষায় অন্য সবার মত ভাসিলিকেও ছুটে যেতে হয়। কিন্তু সবাইকে রাইফেল দেয়া যায় নি। এত বেশি সংখ্যক কমরেড সে তুলনায় রাইফেল অপ্রতুল। কাউকে শুধু রাইফেল, কাউকে কাউকে শুধু গুলি নিয়ে যুদ্ধের ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়তে হয়। কমরেড ভাসিলিকেও রাইফেল ছাড়াই খালি হাতে শত্রুর দিকে ছুটে যেতে হয়। রাইফেলধারী কমরেড মারা পড়লে, সেই রাইফেল আরেকজন তুলে নিচ্ছে। এভাবেই রেড আর্মির বীর সৈনিকেরা নাৎসি শত্রুর দিকে এগিয়ে যায়। অসংখ্য হতাহত হয়। শহর জুড়ে লাশের স্তূপ! লাশের স্তূপে পড়ে থাকে কমরেড ভাসিলি। নাৎসি জার্মানরা যখন রিলাসক্সড মুডে ঠিক সেই সময়েই কমরেড ভাসিলি সহযোদ্ধার রাইফেল দিয়ে একে একে ঘায়েল করে পাঁচজন শত্রুকে।
ভাসিলির এই সাহসিকতার খবর ছড়িয়ে পড়ে। তার সাহসিকতার উপর নির্ভর করে গঠন করা হয় স্নাইপার ব্রিগেড, ব্রিগেডের অন্যতম প্রধান করা হয় ভাসিলিকে। প্রচলিত আরবান যুদ্ধের বাইরে, রেড আর্মির এই স্নাইপারদের মোকাবিলায় জার্মান বাহিনী নাস্তানুবাদ হতে থাকে। ফলে জার্মান বাহিনীও অনুরূপ স্নাইপার বাহিনী গড়ে তুলে। ভাসিলিকে মারার বিশেষ মিশন দেয়া হয় একজনকে। শুরু হয় খোলা ময়দানের লাশের স্তূপে, ইট সুরকির ধ্বংস স্তূপে বা ভাঙ্গা ধ্বসে পড়া ইমারতের মধ্যে লুকিয়ে থেকে, টম এন্ড জেরি কার্টুনের মত কে কাকে মারতে পারে?
২২ সেপ্টেম্বর, ১৯৪২ সালে তিনি ভলগা নদী অতিক্রম করেন ও ১০৪৭তম রাইফেল রেজিমেন্টে যোগ দেন। রেজিমেন্টটি ছিল ৬২তম সেনাবাহিনীর ২৮৪তম রাইফেল ডিভিশনের অধীনে এবং এর নেতৃত্বে ছিলেন জেনারেল নিকোলাই বেতিয়ুক নামীয় একজন সেনা কর্মকর্তা। একদিন কমান্ডিং অফিসার তাঁকে জানালা দিয়ে ৮০০ মিটার দূরবর্তী এক শত্রু সেনাকে গুলি করার নির্দেশ দেন। জেইতসেভ নির্দেশ প্রতিপালনে সাধারণমানের মোসিন-নাগান্ত রাইফেল তাক করেন। একটিমাত্র গুলিতেই ঐ সৈনিক মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। অল্প কিছুক্ষণ পর আরো দু'জন জার্মান সৈনিককে জানালা দিয়ে দেখা গেল। তারা তাদের সেনা কর্মকর্তার মাটিতে লুটিয়ে পড়ার কারণ অনুসন্ধান করতে লাগলেন। ভাসিলি আরো দু'টো গুলি খরচ করলেন। বলাবাহুল্য ঐ দুই গুলিতে তারা নিহত হলেন। এ কারণে তিনি বীরত্বে সাহসিকতাপূর্ণ পদক লাভের পাশাপাশি স্নাইপার রাইফেলও পুরস্কার হিসেবে লাভ করেন।
(বিশ্বযুদ্ধের রণাঙ্গনে ভাসিলি)
সফলভাবে বিশ্বযুদ্ধ সমাপনের পর জেইতসেভ কিয়েভে বসবাস করতে থাকে। ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কর্মরত হবার পূর্বে এখানেই তিনি টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছিলেন। পরবর্তীকালে টেক্সটাইল কারখানার পরিচালকরূপে নিযুক্ত হন। ৭৬ বছর বয়সে মৃত্যুর পূর্বে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত এ শহরেই অবস্থান করেন তিনি। তাঁর মৃত্যুর মাত্র ১০দিন পরেই সোভিয়েত ইউনিয়নের বিলুপ্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে। কিয়েভে তাঁকে সমাহিত করা হয়; যদিও তাঁর ইচ্ছে ছিল স্তালিনগ্রাদে সমাহিত হবার।
রাষ্ট্রীয় বীরের মর্যাদা দেয়া তাকে। ভাসিলির বীরত্বের প্রতীক স্বরূপ তার রাইফেলটি এখনও রাখা আছে স্টালিনগ্রাদের ঐতিহাসিক জাদুঘরে।
ভাসিলিকে নিয়ে সিনেমা:
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে শত্রু সেনা নিধনে ভাসিলি জেইতসিভের অনন্য সাধারণ পারদর্শীতার প্রেক্ষাপটে নির্মিত হয় এনিমি অ্যাট দ্য গেটস নামের চলচ্চিত্রটি।
( Enemy at the gate সিনেমার পোস্টার)
ভাসিলির সম্মাননা:
*হিরো অব দ্য সোভিয়েত ইউনিয়ন
*অর্ডার অব লেনিন
*অর্ডার অব দ্য রেড ব্যানার (দুইবার)
*অর্ডার অব দ্য প্যাট্রিয়টিক ওয়ার, ১ম শ্রেণী
*মেডেল ফর দ্য ডিফেন্স অব স্তালিনগ্রাদ
*জার্মানির বিরুদ্ধে বিজয়ের পদক
*বীরত্বে সাহসিকতাপূর্ণ পদক
*ভলগোগ্রাদের সম্মানসূচক নাগরিক
( তথ্য সূত্র: উইকিপিডিয়া)
১১ ই জানুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ১২:০৪
কলম চোর বলেছেন: এই বীরের সম্পর্কে আমি আগে জানতাম না। বছর ৩ আগে Enemy at the gate সিনেমা দেখার মাধ্যমে উনার সম্পর্কে জেনেছি । সিনেমাটা সুন্দর, দেখতে পারেন। ট্রেইলার দিলাম https://m.youtube.com/watch?v=4O-sMh_DO6I
ধৈর্য নিয়ে পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
২| ১১ ই জানুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ১২:১৯
জাহাজী বলেছেন: IMDb 7.6/10
Rotten Tomatoes 54%
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পটভূমিতে নির্মিত "এনিমি অ্যাট দ্য গেটস" অসাধারণ একটি সিনেমা। মুভি লাভারদের জন্য মাস্ট ওয়াচ। সিনেমাটি অনেক আগে দেখা হয়েছে। আপনার লেখা পড়ে অজানা কিছু জানতে পারলাম।
ধন্যবাদ জানাবেন।
১১ ই জানুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ১:৩৭
কলম চোর বলেছেন: ২য় বিশ্বযুদ্ধের ইতিহাস সর্বদাই আমাকে টানে, এবং এর পেছনে আমাদের পারিবারিক সম্পৃক্তা রয়েছে। ২য় বিশ্বযুদ্ধে আমার দাদু সরাসরি অংশগগ্রহণ করেছিলেন। তিনি সে সময় ব্রিটিশ বাহিনী ব্রিটিশ হোমগার্ডের ডিস্ট্রিক্ট এডজ্যুটেন্ট ছিলেন এবং বার্মা ফ্রন্টে জাপানী বাহিনীর সাথে যুদ্ধ করেছিলেন। ( মহান মুক্তিযুদ্ধেও আমার পরিবার অংশগ্রহণ করেছিল এবং ৪ঠা এপ্রিল ১৯৭১'এ যশোরে ৫ জন শাহাদাতের পেয়ালা পান করেন, আল্লাহ তাদের জান্নাতুল ফেরদৌস দান করুন, আমিন। আমি নিজেও অবশ্য দেশের রিজার্ভ আর্মির গর্বিত সদস্য )
বিশ্বযুদ্ধ কেন্দ্রীক সিনেমা দেখা থেকে আমি বিরত হই না। "এনিমি অ্যাট দ্য গেটস" সিনেমাটা খুবই সুন্দর। অবশ্য "সেভিং প্রায়ভেট রায়ান" & "ফিউরে" সিনেমা আমার আবেগ আপ্লুত করে দিয়েছিল।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
৩| ১১ ই জানুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৫:১৬
রাতুল_শাহ বলেছেন: Enemy at the gate
কখনও দেখা হয় নি। দেখি আজকে দেখার চেষ্টা করবো।
এই বিষয়ের পোস্ট পড়তে অনেক ভালো লাগে।
১১ ই জানুয়ারি, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:২৪
কলম চোর বলেছেন: Enemy at the gates সিমেমাটা অনেক সুন্দর। দেখে ভাল লাগবে। মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
৪| ১১ ই জানুয়ারি, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:১০
জাহাজী বলেছেন: ওয়াও, আপনি তো দেখি "ফরেস্ট গাম্প" সিনেমার Lieutenant Dan Taylor. আইয়াম অলসো বিলং টু ডিফেন্স ফ্যামিলি। এটা সত্যি গর্ব করার মতো একটা বিষয়।
কথাচ্ছলে আরও দুটি সিনেমা সম্পর্কে জানতে পারলাম। সময় করে অবশ্যই দেখব। ইতিহাস নিয়ে সিনেমা, মিস করা যাবে না
১২ ই জানুয়ারি, ২০১৭ সকাল ১০:৫৫
কলম চোর বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই। ইতিহাস নিয়ে সিনেমা অবশ্যই মিস করা যাবে না
৫| ১১ ই জানুয়ারি, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৫৮
কালীদাস বলেছেন: আচ্ছা, এই তাহলে সেই ভাসিলি। এনিমি এট দ্যা গেটস মুভিটা দেখতে ইচ্ছা করেনি জুড ল আছে বলে, আজকে মনে হচ্ছে দেখতে হবে থ্যাংকস পোস্টের জন্য।
১২ ই জানুয়ারি, ২০১৭ সকাল ১০:৫৭
কলম চোর বলেছেন: ধৈর্য নিয়ে পড়ার জন্য ধন্যবাদ ভাই
©somewhere in net ltd.
১|
১১ ই জানুয়ারি, ২০১৭ সকাল ১১:০৭
শাহাদাৎ হোসাইন (সত্যের ছায়া) বলেছেন: এই বীর সম্পর্কে নতুন করে জানলাম।
তাকে “মরোনোত্তর সালাম”