নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

করুণাধারা

করুণাধারা

জীবন যখন শুকাইয়া যায় করুণাধায় এসো

করুণাধারা › বিস্তারিত পোস্টঃ

ম্যায়াছেলের জীবন

২৬ শে নভেম্বর, ২০১৬ দুপুর ২:২২




চড়টা এত জোরে গালে নেমে এল যে মিতা কিছুক্ষণ স্থানকালপাত্র সব ভুলে দাঁড়িয়ে রইল। গালে ব্যথা বোধের সাথে সাথে তার চেতনা ফিরে এলেও ঠিক বুঝতে পারছিল না কি ঘটে গেল। চোখ ফেরাতেই চোখ পড়ল সাজেদের চোখে - দুচোখে রাজ্যের রাগ আর অবিশ্বাস নিয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে সাজেদ। সেই সাজেদ, যার সাথে মিতার ছয় বছরের পরিচয় । মাত্র পনেরো দিন আগে যাকে বিয়ে করেছে আর কিছুক্ষণ আগেই মাত্র যার সাথে ঘরে ফিরেছে হানিমুন করে। হানিমুনের আনন্দের রেশ এখনো মনে রয়ে গেছে - এরমধ্যে এই চড়!

-তুমি আমাকে চড় মারলে? চড়! তুমি?

-;মারবোনা,নষ্টা মেয়ে কোথাকার! সারা পথ ড্রাইভারের সাথে কি কথা হচ্ছিল? মিতার মনে হচ্ছিল এসব যেন দুঃস্বপ্নের মধ্যে ঘটছে।

-কোন বাস ড্রাইভার! কি কথা?

-৭ন্যাকামি কোর না। সারা রাত তুমি বাস ড্রাইভারের দিকে তাকিয়ে ছিলে, আর ড্রাইভারটাও রিয়ার ভিউ মিরর দিয়ে তোমার দিকে তাকিয়ে চোখে চোখে কথা বলছিল!

-আরে, তুমি কি পাগল হয়ে গেলে! রাতের বাসে ড্রাইভার ঘুমিয়ে যায় কিনা দেখার জন্য আমি নজর রাখছিলাম।

-হ্যা, আমি তো পাগল। আমার সাথে থাকার তোমার দরকার কি! চলে যাও তোমার ড্রাইভারের কাছে । বলে ঝড়ের বেগে বেড়িয়ে গেল সাজেদ। মিতার পা অসাড় হয়ে আসছিল, ধপ করে বিছানায় বসে পড়ল। কষ্টের সাথে সাথে ভীষণ অপমান আচ্ছন্ন করে ফেলছিল তাকে। দীর্ঘ দিনের পরিচিত সাজেদকে এমন অপরিচিত লাগছে কেন? বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বছরেই দুবছরের সিনিয়র সাজেদের সাথে পরিচয়। আলাদা ডিপার্টমেন্ট, মিতা ইলেক্ট্রিকাল আর সাজেদ সিভিল,তবু মাঝে মাঝেই দেখা হত আর কথা বলতে ভাল লাগতো । পাশ করার পর একবছর কোন যোগাযোগ ছিল না, হঠাত একদিন ইস্পাহানী বিল্ডিংএর সামনে দেখা। মিতা তখন মাত্র পিডিবিতে জয়েন করেছে আর সাজেদ দিলকুশার এক কন্সাল্টিং ফারমে দুবছর হয় চাকরি করছে। পরদিনই সাজেদ এসে হাজির ওয়াপদা বিল্ডিংএর পাঁচতালায় মিতার অফিসে। তারপর কিছুদিন কেমন ঝড়ো হাওয়ার মত উড়ে গেল, আটমাসের মাথায় এনগেজমেন্ট আর তার চারমাস পর বিয়ে। বিয়ের পর কক্সবাজারে হানিমুনটাও ছিল স্বপ্নের মত -গতরাত পর্যন্ত। কিন্তু সকাল বেলায় এ কি হল! মিতা কিছু ভাবতে পারছিল না। খুব অবসন্ন লাগতে লাগল তার - পা গুটিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ল। একটা ঝাঁকুনিতে মিতার ঘুম ভাংল। চোখ মেলতেই দেখল সাজেদের উদ্বিগ্ন মুখ। তার চিরচেনা সাজেদ।

-এভাবে ঘুমাচ্ছিলে কেন, কি হয়েছে? সাজেদের উদ্বিগ্ন গলা শুনে মিতার মনে হল ও বোধহয় ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে দুঃস্বপ্ন দেখছিল।




পরদিন সকালে দুজনের অফিস- বিয়ের ছুটি কাটানোর পর প্রথম অফিস। কলাবাগানের এই দুই বেডরুমের বাসাটা দুজনে মিলে পছন্দ করে বিয়ের একমাস আগে ভাড়া নিয়ে একটু একটু করে সাজিয়েছে। বিয়ের পর মিতা মিরপুরে তার বাপের বাড়ি আর সাজেদ আরামবাগের মেস ছেড়ে এখানে এসে উঠবে বলে। ঘুম ভেংগে মিতা দেখল সাজেদ টেবিলে নাস্তা সাজিয়ে রেখেছে।

-খুব লেগেছে না, সরি, আমাকে মাপ করে দাও। রাত থেকে নিয়ে অন্তত দশবার এই কথা বল্ল সাজেদ।

-আরে বাবা আমি তো কবেই ভুলে গেছি। ঝরঝর করে হেসে উঠল মিতা।



কিন্তু এই বিস্মৃতি একমাসও থাকল না। বিশ/পঁচিশ দিন পর এক ছুটির সকালে মিতা সবজি ভাজছে আর সাজেদ রান্নাঘরের দরজার কাছে খাবার টেবিলে চা খেতে খেতে তার প্রথম সাঁতার শেখার গল্প করছিল। হঠাত কথা বন্ধ করে ঠক করে চায়ের কাপ নামিয়ে তাড়াতাড়ি বেডরুমে গিয়ে মানিব্যাগ নিয়ে বের হয়ে গেল।

-কি হল, কোথায় যাচ্ছ, বলতে বলতে মিতা দরজা পর্যন্ত ছুটে গেল কিন্তু সাজেদ কিছু না বলেই বেড়িয়ে গেল। ফিরল সন্ধ্যায়। মিতা দরজা খুলে দেবার সাথে সাথে ঘরে ঢুকেই দরজা বন্ধ করল - তারপরই দুহাতে মিতার গলা টিপে ধরল।

-মেরেই ফেলব আজকে, বাড়ীওয়ালার ছেলে সিঁড়ী দিয়ে উঠতে উঠতে কি বলছিল যে সবজি নাড়া বন্ধ করে কথা শুনছিলে ! তলে তলে সম্পর্ক! ছেনাল! মাগী কোথাকার! গলা ছেড়ে দিয়ে জোরে একটা ধাক্কা দিল মিতাকে তারপর পাশের ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিল।

অনেকক্ষণ পর মিতার খেয়াল হল সে অন্ধকার ঘরে বসে আছে। উঠে আলো জ্বালানো দরকার কিন্তু সেই আলোয় তো মনের অন্ধকার কাটবে না। এ কোন সাজেদ! যে সাজেদকে ভালবেসে সে বিয়ে করেছিল সেই সাজেদ তো এ না! বিয়ের দুই মাসও হয় নি এরমধ্যে সাজেদ দুই বার ওর গায়ে হাত তুলেছে, একেবারে অমূলক সন্দেহ করে - খুব খারাপ সন্দেহ । মা বাবাকে কি কথাটা বলবে! গলা টেপার কথা শুনলে ওরা আর একদিনও সাজেদের সাথে থাকতে দেবেন না। ওরা হয়ত বুঝবেনা যে এই দুটা ঘটনা বাদে সাজেদের সাথে বাকি সবই মধুর স্মৃতি। সাজেদ যেন ছোট বেলায় পড়া ডঃ জেকিল আর মিঃ হাইড -কখনো মহান কখনো শয়তান ! এটা হয়ত কোন মানসিক রোগ। চোখ মুছে মিতা উঠে দাঁড়াল । কালকেই ডি এম সি তে বান্ধবী তামান্নার কাছে যেতে হবে। সাজেদকে ভাল করে তুলতে যা যা করা দরকার সে করবেই।



তামান্না নিয়ে গেল সাইকিয়াট্রির অধ্যাপক ডাঃ আহমদ শহিদের কাছে। সব শুনে উনি বললেন সাজেদের সাথে কথা বলে কনফার্ম হতে হবে কিন্তু সাজেদের আচরণ সিজোফ্রেনিয়ার রোগীর মত। এটা একটা জটিল মানসিক রোগ,চিকিৎসা না করালে এই রোগ মনের ভেতর বাড়তেই থাকে। প্রথমে সন্দেহ বাতিকতা দিয়ে শুরু হলেও পরে এটা বিপজ্জনক পর্যায়ে চলে যায় যখন রোগী অদৃশ্য কন্ঠ শুনতে পায়। এই কন্ঠের নির্দেশে রোগী যেমন নিজেকে হত্যা করতে পারে তেমনি অন্য কাউকেও হত্যা করতে পারে নির্বিকারভাবে, এমনকি মা তার সন্তানকেও অবলীলায় হত্যা করতে পারে। এটা নিরাময়যোগ্য না - ঔষধ দিয়ে সুস্থ রাখা যাবে কিন্তু তার জন্য আজীবন ঔষধ খেয়ে যেতে হবে। সিজোফ্রেনিয়ার রোগীকে সুস্থ রাখতে নিয়মিত দেখভাল করা দরকার আর এই কাজ করতে গিয়ে দেখভালকারীর নিজের জীবনের স্বস্থি আর আর আনন্দ প্রায় পুরোপুরি বিদায় নিতে পারে।

-আপনার স্বামীকে চিকিৎসা করাতে রাজী করানোটাই আপনার জন্য সব চে বড় চ্যালেঞ্জ - কারণ সিজোফ্রেনিয়ার রোগী কখনোই নিজেকে অসুস্থ বলে মনে করে না। ডাঃ শহিদ তার দীর্ঘ বক্তব্যের শেষে বললেন।

-কি ভাবছিস?

-ভাবছি

-দ্যাখ, বুঝতেই তো পারছিস সাজেদ ভাইএর মানসিক রোগের ধরণ জটিল। আজীবন ঔষধ খেয়ে গেলে হয়ত স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারবেন, কিন্তু তার জন্য তোকে উনার পাশে থাকতে হবে, উনার সব উদ্ভট, কখনো বিপদজনক আচরণকে অসীম ধৈরয ধরে মোকাবিলা করতে হবে।ভেবে দ্যাখ। তুই তোর জীবনটা এভাবে নষ্ট করবি কিনা! মা বাবার সাথে কথা বল। কি জানি একটা আইন আছে, পাগল স্বামীর থেকে সহজেই ডিভোর্স পাওয়া যায়।

-তুই ঠিক বলছিস। কিন্তু একটা অসুস্থ মানুষকে কি করে ফেলে আসব! মুখ ফেরাল মিতা। তামান্না দেখল মিতার দুচোখ টলমল করছে। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ও মিতার হাত ধরল।

-তোর জীবনের সিদ্ধান্ত তো তুইই নিবি, শুধু এমন কিছু করিস না যেন পরে আফসোস করতে হয়।




সাজেদের চিকিৎসা শুরু করতে হবে - কিন্তু ওকে ডাক্তারের কাছে নিতে মিতার কারো সাহায্য দরকার। বাবা-মাকে বলা যাবে না, সাজেদ গায়ে হাত তুলেছে জানলে ওরা কিছুতেই মেয়েকে ওর সাথে থাকতে দেবেন না। অবশেষে সাজেদের সমবয়সী খালাতো ভাই দুলালকে সব খুলে বল্ল, অনুরোধ করল দুলাল যেন সাজেদকে চিকিৎসায় রাজি করায়। দুলালের কাছে ব্যাপারটা অবিশ্বাস্য মনে হল -সাজেদের মত ভদ্র, শান্ত মেধাবী ছেলে কি করে এমন করতে পারে। কিন্তু মিতার চোখের নীচের কালি আর ক্লান্ত চেহারাই বলে দিচ্ছে ও মিথ্যা বলছে না।

-ঠিক আছে মিতা, আমি সাজেদকে ডাঃ শহিদের কাছে নেব, প্রমিস।

-দেখবেন, কিছুতেই যেন না বুঝতে পারে আমি আপনার কাছে এসেছিলাম, ও সবকিছুতেই আমাকে সন্দেহ করে।


- তাহলে সাজেদসাহেব,বলুন, আপনার সমস্যা কি?

-ডাক্তার সাহেব, আমি সারা রাত ঘুমাতে পারি না, মাথায় খুব কষ্ট হয়।

-ঘুমান না কেন?

- আমার স্ত্রীর বিশ্বাসঘাতকতার কথা ভেবে ঘুমাতে পারি না। ও এমন যে, যে কোন পুরুষমানুষ দেখলেই তার সাথে প্রেম করতে শুরু করে, এমনকি টিভি দেখতে বসলে টিভিতে হয়ত কাউকে পছন্দ হল, সাথে সাথেই টিভির মধ্য দিয়ে তার সাথে প্রেম শুরু করে।

- তাহলে উনাকে ডিভোর্স দিচ্ছেন না কেন?

- আসলে ও আমাকে খুব ভালবাসে, অনেকদিন ধরে। কিন্তু ইদানীং একটা খারাপ আত্মা ওর দখল নিয়েছে তাই ও এমন খারাপ হয়ে গেছে।

-ঠিক আছে। উনাকে একবার নিয়ে আসুন। ওই খারাপ আত্মাটাকে তাড়ানো দরকার। আর আপনি আজ রাত থেকেই এই ওষুধগুলো খাবেন।




এন্টিসাইকোটিক ওষুধ খেলে প্রথম কদিন দিনরাত ঘুম হয়। সাজেদ কদিন নিঃসাড়ে খুব ঘুমাল। সাজেদের প্রাইভেট ফারমের চাকরী - অনুপস্থিতির জন্য ছুটি নিতে হবে কিন্তু কি বলে ছুটি নেবে? মানসিক রোগ হয়েছে শুনলে হয়ত চাকরীটাই থাকবে না। এছাড়া আড়ালে হয়ত সহকর্মীরা পাগল বলে ডাকতে পারে। মিতা পড়ল মহা ফাপরে। শেষতক প্রচণ্ড জ্বর বলে সাতদিনের ছুটির দরখাস্ত জমা দিল। মিথ্যা কথা বলার খচখচানী মন থেকে কিছুতেই যায় না।
রাতে সাজেদ মড়ার মত ঘুমায় আর মিতা জেগে থাকে। নানা ভাবনায় মন উথালপাতাল হয়।



বৈবাহিক বিপর্যয়ের কথা খুব ঘনিষ্ঠ দু তিনজন ছাড়া কাউকে মিতা বলতে পারেনি। কাকেই বা বলবে! এমনিতেইতো সবাই কেমন কৌতুহলী চোখে তাকায়। সেদিন বেলায়েতভাই বলছিলেন, কি ব্যাপার, তোমার মধ্যে নতুন বিয়ের ঝলমলা ভাব নেই কেন? সহকর্মী নাইম আজকাল কেমন চোখে তাকিয়ে থাকে। এই নাইম কিছুদিন আগেও যখনতখন এসে সামনে বসে হাবিজাবি গল্প করত। একদিন বসে খুব মনোযোগ দিয়ে এক পাতা জুড়ে বারবার লিখল - je t'aime. মিতা খুব অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করেছিল,

-কি লিখেছ এসব?

-এটা ফ্রেঞ্চ শব্দ, এর অর্থ আই লাভ ইউ। মিতার প্রচণ্ড রাগ লাগছিল। বল্ল, কথাটা যদি আমাকে বলে থাক তবে বলি, আই ডোন্ট লাভ ইউ। কথাটা মনে রেখো আর দয়া করে আমাকে আর বিরক্ত কোরো না। এই পাণিপ্রার্থীদের জ্বালায় মিতার মাঝেমাঝে মনে হত ও বোধহয় রাস্তার পাশের বড়ইগাছ, প্রত্যেক পথচারীই যাকে একবার ঝাঁকি দিয়ে দেখে। সে অবিবাহিতা এবং ভাল সরকারী চাকুরে - তাই চেনা অচেনা অনেক অবিবাহিত পুরুষেরই তাকে সম্ভাব্য পাত্রী হিসাবে মনে ধরেছিল। মিতার কাউকেই পছন্দ হত না, কেউ মুখে পাউডার মাখে আবার কারো হামবড়া ভাব বেশি ! শেষ প্রস্তাব এনেছিল সহকর্মী বারীভাই, ঘোড়াশাল পাওয়ার প্ল্যান্ট এর প্রকৌশলী শামিম ভাইয়ের জন্য।

-শামিম ভাইটা কে? ওই সবসময় কমলা আর কাল চেক সার্ট পরে থাকেন যিনি? আচ্ছা, উনি সবসময় একটাই সার্ট পড়েন কেন? খুব কিপটা নাকি?

কথাটা শুনে বারীভাই খুব বিরক্ত হলেন।

-কিপটা কেন হবেন, আসলে উনার উপর অনেক দায়িত্ব ছোট তিনটা বোন, মা আর অসুস্থ বাবা। এতটা দায়িত্ব একা সামলাতে পারছেন না দেখেই তোমাকে বিয়ের কথা ভেবেছেন। নাহলে তো উনি ঘরোয়া, ভাল একটা মেয়েকেই বিয়ে করতেন ।

-তাই নাকি! নিজের মা বাবার কথা ভেবে উনি আমাকে বিয়ে করতে চাচ্ছেন? তো আমার রোজগার আমি তার মা বাবাকে দেব কেন, আমি তো আমার মা বাবাকে দেব।

-তুমি দেখছি খুব স্বার্থপর মেয়ে! আরে বিয়ের পর শ্বশুর - শাশুড়িই তো মেয়েদের মা বাবা হয়ে যায়!

মিতার মনটা সেদিন তিক্ততায় ভরে গিয়েছিল। সেদিনই ঠিক করেছিল, এসব ঝামেলা থেকে মুক্তি পাবার একটাই পথ, তাড়াতাড়ি বিয়ে করে ফেলা। দুমাসের মধ্যেই সাজেদকে বিয়ের সিদ্ধান্ত আর একটু গুছিয়ে উঠেই বিয়ে। মাঝখানের দিনগুলো ভরে ছিল রঙিন স্বপ্নে। সেই স্বপ্ন মুছে গিয়ে দুর্ভাবনা আর অনিশ্চয়তায় এখন জীবন ভরে উঠেছে।



প্রায় চারমাস হল সাজেদ এন্টিসাইকোটিক ওষুধ খাচ্ছে, এখন সন্দেহবাতিকতা কমে আসলেও কেমন জানি দম দেওয়া পুতুলের মত হয়ে গেছে। কথাবার্তা একদম কম বলে, কেমন ভাবলেশহীন ভাবে তাকিয়ে থাকে। অফিসে কাজ ঠিকমত করতে পারে না তাই তিন মাসের লিভ উইদাউট পে নিতে হয়েছে। ডাক্তার বলেছেন কিছুদিন পর ও স্বাভাবিক হয়ে আসবে, কিন্তু এই সময়টা ওকে কাজে ব্যস্ত রাখতে হবে। তাই ছুটি নেয়া সত্বেও এম ডিকে বলে মিতা ব্যবস্থা করেছে যেন সাজেদ মাঝেমাঝে নিজের অফিসে গিয়ে কাজকর্ম দেখতে পারে। মিতা প্রাণপণ চেষ্টা করে তার নিজের অফিসের কেউ যেন তার মনের বিপর্যস্ত অবস্থা টের না পায়। সাজেদের কি হয়েছে তা কেউ ঠিক জানে না কিন্তু কিছু যে একটা হয়েছে সেটা আন্দাজ করে। একেকজন একেকভাবে চেষ্টা করে মিতার পেট থেকে কথা বের করতে । অফিসে প্রতিদিন এদের প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে মিতা অবসন্ন বোধ করে। ঘরে ফিরেও রেহাই নেই - বাজার, রান্না সব করতে হয়, ক্লান্তিতে শরীর ভেংগে আসলেও। বিয়ের আগে মিতা রান্না বান্না কিছুই জানত না। যখন বুয়েটে পড়ত তখন একদিন নানী বলেছিলেন, মেয়েমানুষ হয়ে জন্মেছ অথচ রান্না বান্না কিছুই শিখলে না, বিয়ের পর কি করবে? হাসতে হাসতে মিতা বলেছিল, নানী, আমার জীবন তো মেয়েমানুষের মত রান্নাঘরময় হবে না, আমি তো ইঞ্জিনিয়ার হব, ছেলেদের মত রোজগার করব, ভাল বাবুর্চি রাখব - রান্নাঘরে ঢুকতেই হবে না। অথচ কি হল তার জীবনে! শিক্ষায় সাজেদের সমান, চাকরী সাজেদের চাইতে ভাল তবু মেয়েমানুষ হয়ে জন্মেছে বলেই হয়ত তার এত দুর্ভোগ ! অফিসে সহকর্মী তকি ভাই মেয়েমানুষ পর্যন্ত বলেন না। উনি খুব তাচ্ছিল্য করে বলেন, ম্যায়াছেলে মানুষ। এই যেমন, তুমি ম্যায়াছেলে মানুষ, তুমি এই কাজ করবা কি কইরা? সবাই অবশ্য তকিভাইএর মানসিকতা ধারণ করেন না। একদিন যখন তকিভাই এভাবে ম্যায়াছেলে ম্যায়াছেলে করছেন তখন আরেক সহকর্মী ফুয়াদ হাসতে হাসতে বলে উঠেছিল, তকিভাই, মহিলাদের সম্মান করে কথা বলেন - কারণ তারা মায়ের জাত। তকি ভাই আর কিছু বলেন নি কিন্তু তারপর থেকে মাঝেমাঝেই মিতা হীনমন্যতা বোধে আক্রান্ত হলেই নিজেকে মনে হয় ম্যায়াছেলে মানুষ ।
১০

আজ প্রথম বিবাহ বার্ষিকী । এই এক বছরে জীবনে অনেকরকম অভিজ্ঞতা জমা হয়েছে, ক্রমাগত একাকী লড়ে যেতে যেতে কখনো মিতাকে গভীর শুন্যতা গ্রাস করেছে।মানসিক, শারীরিক, আর্থিক, সামাজিক, পারিবারিক - সবরকম চাপ তাকে বিপর্যস্ত করে তুলেছে। তব্র তার লড়াকু মন সবসময় তাকে লড়ে যেতে সাহস যুগিয়েছে। সাজেদ বেশ কয়েকমাস বিনাবেতনে ছিল, সে সময় একার রোজগারে সংসারের সমস্ত খরচ আর সাজেদের ব্যয়বহুল চিকিৎসার খরচ যোগাতে মিতাকে কিছু গয়নাও বিক্রি করে দিতে হয়েছে। এই দুর্দিনে নিজের বাবা মার বা শ্বশুরবাড়ীর কোন সাপোর্টই মিতা পায় নি। শ্বশুর শাশুড়ি মিতার সাথে খারাপ আচরণ করেছেন এই বলে যে বিয়ের আগ পর্যন্ত সম্পূর্ণ সুস্থ সাজেদ যখন বিয়ের পর পর অসুস্থ হয় তখন তার দায় পুরোপুরি মিতাকেই নিতে হবে । ওর বাবা মা সাজেদের অসুখের কথা শোনার পর ওকে খুব জোরাজুরি করেছেন সাজেদকে ছেড়ে দেবার জন্য। মিতা সাজেদকে ছেড়ে যাবার চিন্তা মাথায় আনেই নি। সাজেদকে ও সত্যিই ভালবাসে, এছাড়াও নিজের সামাজিক নিরাপত্তার জন্যও সাজেদকে প্রয়োজন । যে সমাজে সে রয়েছে সেখানে অবিবাহিতা নারীকে পুরুষেরা বড়ইগাছ ভাবলেও ডিভোর্সি নারীকে মালিকহীন মুরগী মনে করে। কবির ভাইএর ঘটনা মিতার জন্য একটা শিক্ষা ছিল। কবিরভাই ছিলেন ওর সিনিওর, শ্রদ্ধেয় সহকর্মী, নানাসময়ে উনি মিতাকে সাহায্য করছেন। একদিন মিতার তেমন কাজ ছিল না। অফিসের পাশেই মধুমিতা সিনেমা হলে একটা ভাল সিনেমা চলছিল। মিতা ভাবল দুপুরের শোতে যাবে। টিকেট কেটে এনে কবিরভাইকে বল্ল - আজকে আমি দুপুরে সিনেমা দেখতে যাব, তাই আমার জন্য আবার গাড়ী অপেক্ষায় রাখবেন না,আপনারা গাড়ী নিয়ে চলে যাবেন। দুপুরে হলের সামনে গিয়ে দেখে কবিরভাই। আপনি এখানে কি করছেন? মেয়েদের সিনেমাহলে একা যাওয়া ঠিক না, তাই আমি তোমার সাথে যাচ্ছি। কবিরভাই অযাচিত ভাবে মিতার সংগী হলেন। সিনেমা দেখতে দেখতে উনি বারবার মিতার বন্ধু হবার প্রস্তাব করছিলেন । শেষ পর্যন্ত হাফ টাইমের ব্রেকে মিতা সিনেমা না দেখেই বের হয়ে আসে। ওর চোখে শুধু ভাসছিল কবিরভাইএর স্ত্রী মলিভাবীর ভদ্র, শান্ত, হাসিখুশি মুখ।

এই এক বছরের বিবাহিত জীবনের শুরু হয়েছিল ভয়ংকর অভিজ্ঞতা দিয়ে, মাঝখানের দিনগুলো ছিল সংগ্রাম ও তিতিক্ষার আর এখন জীবন বলা চলে শান্তিময়। এখন সাজেদকে নিয়মিত ওষুধ খেতে হয়, আজীবন খেয়ে যেতে হবে কিন্তু সাজেদ এখন আবারো আগের মত সহজসরল, হাসিখুশি আর উদ্যমী হয়ে উঠেছে । দুজনেই নিয়মিত অফিসে যাচ্ছে, সামাজিকতা করছে - জীবন ফিরেছে স্বাভাবিক ছন্দে। বিয়ের প্রথম বার্ষিকীতে কোন অনুষ্ঠান নয়, ঠিক করেছে দুজন কেবল দুজনের সাথেই সময় কাটাবে।

১১
মিতা এখন সাত মাসের অন্তঃসত্বা। ছটফটে একটি ছোট্ট মেয়ে তার কোলে ঝাঁপিয়ে পড়ছে এ স্বপ্ন মিতা অনেক দিন ধরে দেখত। তাই বিয়ের আড়াই বছর পর যখন গর্ভধারণের ব্যাপারে নিশ্চিত হয় তখন প্রবল আনন্দে মন ভেসে গিয়েছিল। কিন্তু যতই দিন যাচ্ছে ততই আনন্দ ফিকে হয়ে আসছে। কাজের শেষে যখন ঘরে ফেরে তখন হাঁটু থেকে পায়ের পাতা পর্যন্ত টনটন করে। তাই নিয়েই রাতের খাবার আর ঘরের টুকটাক অন্যান্য কাজ করে। রাতে ঠিকমত ঘুমাতে পারেনা - তলপেট এত ভারী হয়ে থাকে যে পাশ ফিরতে গেলে উঠে বসে তারপর অন্যপাশ ফিরে শুতে হয়। সেইসময় পরম আরামে ঘুমিয়ে থাকে বলে সাজেদ মিতার কষ্ট দেখতে পায় না, কিন্তু জেগে থাকলেও সাজেদ কি কখনো বুঝতে পারে কতটা যাতনা সয়ে মিতা তাদের সন্তানকে পৃথিবীতে আনছে? আজকাল মাঝেমাঝেই তকি ভাইয়ের ম্যায়াছেলে মানুষ কথাটা নিয়ে মিতা খুব ভাবে। আজকাল ওর মনে হয় পুরুষ আর নারী কখনোই পরষ্পরের পরিপূরক নয় বরং নারীর পরিচয় কেবলই ম্যায়াছেলে, যার ভূমিকা অনেকটা ঝিনুকের মত

- ঝিনুক নীরবে সহ, ঝিনুক নীরবে সহে যাও, ভিতরে বিষের বালি তবু মুখ বুজে মুক্তা ফলাও।

যখন কিশোরী ছিল তখন খুব অাবৃওি করত

-নারীরে আপন ভাগ্য জয় করিবার
কেন নাহি দিবে অধিকার, হে বিধাতা!

আপন ভাগ্য জয় করার আকাঙ্ক্ষা থেকেই যেদিন প্রকৌশলী হয়েছিল সেদিন ভেবেছিল সে পুরুষালী পেশা বেছে নিয়েছে, তার জীবন তার নানী কিংবা মায়ের জীবনের মত গন্ডিবদ্ধ হবে না। এখন মনে হচ্ছে তার জীবনও এক গণ্ডির মধ্যেই আবর্তিত হচ্ছে, কেবল তার গন্ডির সীমানাটা বড় কারণ নিজে রোজগেরে হওয়ায় মা বা নানীর চেয়ে তার স্বাধীনতা কিছু বেশি। ব্যস, এটুকুই, এইটুকু প্রাপ্তি বাদে সে শুধুই এক ম্যায়াছেলে মানুষ, এক ঊনমানুষ।

১২

অসহ্য যন্ত্রণাটা মনে হচ্ছে শরীরের সমস্ত কোষে কোষে বেড়েই যাচ্ছে। বিছানায় আছাড়ি পিছাড়ি খেলে হয়ত যন্ত্রণা একটু কম হত কিন্তু হাতে স্যালাইন লাগানো থাকায় তাও করা যাচ্ছে না। বুকফেটে আর্তনাদ বের হয়ে আসতে চাচ্ছে, সেটা চাপা দেবার চেষ্টায় কষ্ট আরো বেড়ে যাচ্ছে। মা, মাগো মা, একটা বাচ্চাকে দুনিয়ায় আনতে এত কষ্ট করতে হয়! তুমি, তোমার মা, তার মা - পৃথিবীর সব মাই এমন কষ্ট সহ্য করে বাচ্চা হতে! আমার যদি মেয়ে হয়, তাকেও সইতে হবে এই যন্ত্রণা, জীবনে যত বড়ই হোক না কেন সে!

-সিস্টার, আমি আর পারছি না। প্লিজ, ডাক্তারকে বলুন আমার সিজারিয়ান করতে।

-আপনি সবচাইতে নরমাল, আপনার বাচ্চাও নরমাল। এখানে একজনের উলটা বাচ্চা, একজনের যমজ আর একজনের stillborn. এদের আগে সিজারিয়ান করতে হবে। আপনার ডেলিভারি নরমালি হবে।

-আপনি ঠিকমত প্রেশার দিচ্ছেন না। এতে বাচ্চার ক্ষতি হচ্ছে। আপনার এপিসিওটোমি করতে হবে।

মিতার যোনীপথ যখন তীক্ষ্ণধার ছুরি দিয়ে কেটে বড় করছিল তখন প্রচণ্ড যন্ত্রণায় মিতার সমস্ত চেতনা অবলুপ্ত হতে হতে শুধু মনে হচ্ছিল কোন পুরুষ যদি এই যন্ত্রণার কিছুটাও বুঝত তাহলে কি সে মায়ের জাত বলে নারীকে সম্মান করত নাকি তখনো তাচ্ছিল্য করে ম্যায়াছেলে বলত!


১৩
যন্ত্রণা চরমে পৌঁছালে সমস্ত অনুভূতি চলে যায়। এখন মিতার তেমন কষ্ট হচ্ছে না, শুনতে পাচ্ছে দূর থেকে কেউ যেন চিৎকার করে বলছে চাপ দিন, চাপ দিন। মনে হচ্ছে সময় স্থির হয়ে গেছে। একসময় হঠাত মনে হল পেট থেকে নাড়ী ভুঁড়ি কলজে কে টান দিয়ে বের করে নিল। পরমুহূর্তেই শুনতে পেল নবজাতকের কান্না। নার্স এর গলা শুনতে পেল - মেয়ে হয়েছে। গাঢ় অবসাদে তলিয়ে যেতে যেতে মিতার মনে হল - তাহলে পৃথিবীতে আরেকটি ম্যায়াছেলের জীবন শুরু হল!

মন্তব্য ১৮ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (১৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে নভেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৩:৩৭

দৃষ্টিসীমানা বলেছেন: ঝিনুক নীরবে সহ, ঝিনুক নীরবে সয়ে যাও
ভিতরে বিষের কালি তবু মুখ বুজে মুক্তা ফলাও ।
ম্যায়াছেলে আর ব্যাটাছেলের মধ্যে আমি তেমন সুখময় পার্থক্য দেখিনা , অনেক সময় ছেলেরা যেমন বাজে কাজ করে থাকে কোন কোন সময় মেয়েরাও
বাজে হয়ে থাকে তবে এটা বলতে পারি সংসার জীবনে মেয়েদের অবদান অসীম । তবে আমাকে বলতেই হবে আপনার গল্পের চুম্বক শক্তি অনেক বেশী ।
আপনার ব্লগ বাড়িতে সময় করে আসব , সব লেখাগুল পড়ার চেষ্টা করব । ভাল থাকুন সারাক্ষন সারাবেলা । :)

২৬ শে নভেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৩:৫৭

করুণাধারা বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্যের জন্য। অপেক্ষায় থাকবো আমার ব্লগ বাড়িতে আপনার আগমনের।।

তিনজন নারীর আভিজ্ঞতা নিয়ে আমার এ লেখা - এখানের প্রতিটা চরিত্র বাস্তব শুধু চরিত্রের নাম বদলে দিয়েছি। গল্প লেখার ক্ষমতা আমার নেই। আমি শুধু কিছু শোনা কাহিনী, কিছু নিজের অভিজ্ঞতা মিশিয়ে বলতে চেয়েছি সমস্ত নারীকেই দুর্বল (তকিভাই), স্বার্থপর (বারী ভাই) বা ভোগের বস্তু (কবিরভাই) না ভাবলে জীবনটা অনেক সহজ হয়।

কৃতজ্ঞতা আবার, প্রথম মন্তব্যের জন্য।

২| ২৬ শে নভেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৪:৫০

কানিজ রিনা বলেছেন: করুনা তুমি যতই করুনা নিয়ে বলনা কেন
এমহান সৃষ্টির শক্তির দায়ীত্ব্য সৃষ্টি কর্তা নারীর
উপর দিয়েছে এতবড় মহান দায়ীত্ব্য পুরুষতো
পায়নাই,তাইতো মায়ের শ্রেষ্ঠত্ব সর্ব সাধারনে।
ধন্যবাদ

২৬ শে নভেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৪:৫৬

করুণাধারা বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে।

৩| ১৪ ই মার্চ, ২০১৭ রাত ১২:০৭

মানবী বলেছেন: অসাধারন! দীর্ঘ গল্প, উঠে যাবার তাগিদ সত্ত্বেও গল্প শেয না করে চলা যাওয়া সম্ভব হলোনা!

"অবশেষে সাজেদের সমবয়সী খালাতো ভাই দুলালকে সব খুলে বল্ল, অনুরোধ করল দুলাল যেন সাজেদকে চিকিৎসায় রাজি করায়।"
- ভয় পেয়েছিলাম, মনে হয়েছিলো সাজেদ জানলে মিতাকে হত্যা করবে নিশ্চিত।

"মিতা এখন সাত মাসের অন্তঃসত্বা।"
- এটা পড়ার সাথে সাথে শিরদাঁড়া দিয়ে শীতল স্রোত নেমে যায়! এই দূর্বিসহ জীবনের মাঝে অসহায় নিষ্পাপ আরেকটি প্রাণ নিয়ে আসা এবং যার নিজের সিজোফ্রেনিক হয়ে উঠার প্রবল সম্ভাবনাও আছে!

মিতাদের গল্পটাই এমন। বিয়ের সাথে সাথে মোহভঙ্গ হলেও চুপচাপ সব সয়ে যায় সমাজের "পাছে লোকে কিছু বলে"র ভয়ে!

চমৎকার গল্পের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ করুণাধারা।

১৫ ই মার্চ, ২০১৭ রাত ১২:২৬

করুণাধারা বলেছেন:
ধন্যবাদ, আপনি জানেন না আপনি আমাকে কতখানি অনুপ্রেরণা দিয়েছেন।

আসলেই তাই- আত্মনির্ভর, স্বাধীনচেতা মিতারা বিয়ের পর শুধুই প্রতিকূল পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে চলে। তারপর একসময় সাজেদ তাকে ছেড়ে চলে যায়, মিতার ক্যান্সার ধরা পরে।

৪| ১৫ ই মার্চ, ২০১৭ ভোর ৬:০৮

মানবী বলেছেন: আমার সাধারন মন্তব্যে আপনার মতো লেখক/লেখিকা এতোটুকু অনুপ্রানিত হলে ধন্য হবো।

সাজেদের এই ছেড়ে যাওয়াটা তারপরও কেনো যেনো হাঁফ ছেড়ে বাঁচার মতো মনে হলো। সাজেদের সাথে বসবাসে মানসিক নির্যাতনের চেয়ে ক্যান্সারের সাথে বসবাসটা সহজ মনে হচ্ছে এসময়। নিতান্তই সন্তান ছোট হলে তার শূণ্যতা বা বাবার জন্য হাহাকারটা কষ্টকর এছাড়া পুরোটাই মুক্তি! তাই না?

ক্যান্সারকে হারিয়ে সংগ্রামী মিতারা জীবন যুদ্ধে জয়ী হোক এই প্রার্থনা।
অনেক অনেক ভালো থাকুন করুণাধারা।

১৫ ই মার্চ, ২০১৭ বিকাল ৪:৩৫

করুণাধারা বলেছেন: আপনার মন্তব্যে অনুপ্রাণিত হয়েছি কারণ আমি যে একটি মেয়ের ঘরে বাইরের যন্ত্রণার যে গল্প আমি বলতে চেয়েছি সেই গল্প শুনতে তেমন কেউ আগ্রহী হয় নি। কিন্তু আপনি আগ্রহী  হয়েছেন। আমি অনুপ্রাণিত হলাম এবার একটি অটিস্টিক  মেয়ের মায়ের গল্প বলতে- আশা করি সেই গল্পের শ্রোতা  হিসাবে আপনাকে পাব।

শুভকামনা সবসময়।

৫| ০৩ রা জুন, ২০১৭ দুপুর ২:৪২

আমি ইহতিব বলেছেন: আপনার অসাধারণ সহজ সাবলীল লেখায় মুগ্ধ হয়ে আপনাকে অনুসরণ করতে বাধ্য হচ্ছি।

মেয়েদের জীবন যুদ্ধের মর্ম কেউ বুঝেনা, কি ঘরে কি বাহিরে। মেয়ে মানেই সব সহ্য করে যাও। প্রতিবাদ করলে বা কোন কিছু আশা করলেই তুমি খারাপ।

অটিস্টিক মেয়ের মায়ের গল্প শুনতে আগ্রহী হলাম। দেখি এতদিনে পোস্ট দিয়েছেন নাকি। খুঁজে না পেলে আবার আসছি সাহায্য চাইতে।

০৪ ঠা জুন, ২০১৭ রাত ৯:০৬

করুণাধারা বলেছেন: প্রথমেই ধন্যবাদ আমি ইহতিব, আমাকে অনুপ্রেরণা দেবার জন্য।

জীবনের অভিজ্ঞতাগুলো শেয়ার করার জন্য ব্লগে লেখা শুরু করেছিলাম। আপনি যা বলেছেন, মেয়েদের জীবন যুদ্ধের মর্ম কেউ বোঝে না, আমি ঠিক এই কথাটাই এই গল্পে বলতে চেয়েছি - গল্প না, এটা আমার আর আমার তিন বন্ধুর নানা অভিজ্ঞতার মিশেল। জানি না এখন কর্মক্ষেত্রে মেয়েদের মানুষ হিসাবে দেখে নাকি কেবল মেয়েমানুষ হিসাবে দেখে। তবে এদেশের কর্মজীবী মেয়েদের ঘরের জীবন তিন দশক আগেও যা ছিল এখনো তাই আছে, ঘরের কাজে স্ত্রীকে সাহায্য করার মত স্বামী কি খুব বেশি দেখা যায়?

আপনার আগ্রহ আমাকে অটিস্টিক মেয়ের গল্প লিখতে অনুপ্রেরণা দিল। নিশ্চয় লিখব আগামীতে।

ভাল থাকুন।

৬| ২২ শে আগস্ট, ২০১৭ রাত ৮:৫৮

খায়রুল আহসান বলেছেন: জীবন থেকে নেয়া গল্প, অসাধারণ দক্ষতায় বিবৃত। + +
নারীর পরিচয় কেবলই ম্যায়াছেলে, যার ভূমিকা অনেকটা ঝিনুকের মত -- গভীর পর্যবেক্ষণ প্রসূত উপমা।
ব্যস, এটুকুই, এইটুকু প্রাপ্তি বাদে সে শুধুই এক ম্যায়াছেলে মানুষ, এক ঊনমানুষ -- দুঃখজনক!
তাহলে পৃথিবীতে আরেকটি ম্যায়াছেলের জীবন শুরু হল! - সুদক্ষ এবং কুশলী গল্পকারের মত সমাপ্তি টেনেছেন।
আপনার এর আগের পোস্ট আজ শনিবার পড়ে একটা মন্তব্য রেখে এসেছি।
এই ম্যায়াছেলেরাই মানবজাতির ধারক ও বাহক, তাদের গর্ভ eternal cradle of mankind। নারীদের এই মাতৃগর্ভকে সম্মান জানিয়ে একজন অখ্যাত পুরুষ কবির নিবেদনঃ

Womb

You nurture seeds of mankind,
Nurture it with love and passion,
Hold it within your confines, and
Provide it with a safe sanctuary.

Afloat on a fluid chamber, you're
A perfect bed for a human fetus.
Dark, warm, soft and shockproof.
Solidly protected even on move.

Carrying a fetus for forty weeks,
You deliver it as a human being.
Whether conceived in love or not,
Equally you see their well being.

Oh the eternal cradle of mankind,
How can we be enough grateful!
To you and to your age old carrier,
The womenfolk, mothers for ever!

২৬ শে আগস্ট, ২০১৭ বিকাল ৩:৪৩

করুণাধারা বলেছেন: অজস্র ধন্যবাদ, আপনার মন্তব্য এবং এই চমৎকার কবিতাটার জন্য। জানি না কবি কে, তবে আমার আন্তরিক শ্রদ্ধা জানাই কবিকে তার উপলব্ধির জন্য, এবং আপনাকে এমন কবিতা চয়ন করার জন্য। আমাদের দেশের অধিকাংশ মেয়েদের জীবনটা এমন যে তারা একমাত্র যে পুরুষমানুষের কাছে ভালবাসা, শ্রদ্ধা, সম্মান, সহায়তা পাবেন বলে নিশ্চিত তিনি তার বাবা। এই বাবাই কিন্তু তার সন্তানদের মায়ের প্রতি যথেষ্ট সম্মান করেন না,কর্মক্ষেত্রে মহিলা সহকর্মীদের সহায়তা বা সম্মান করেন না। জানি না এটা কেন হয়- তবে আমার মনে হয় নারীকে সম্মান ও সহায়তা করলে অনেক কিছু শান্তিময় হয়ে উঠত।

এই পোস্টে পঠনের সংখ্যা ছিল ৪০/৪২, সম্ভবত শিরোনাম দেখেই এটা পড়ার আগ্রহ কেউ বোধ করেন নি! আপনি এতদিন পর ব্লগে এসে পড়েছেন এবং মন্তব্য করেছেন তাই অশেষ কৃতজ্ঞতা। প্রতিমন্তব্যে দেরী করার জন্য খুব দুঃখিত - আজকাল অনেক কিছুতে উৎসাহ হারিয়ে ফেলছি, একারণে এই দেরী। শুভেচ্ছা।

৭| ২৬ শে আগস্ট, ২০১৭ বিকাল ৪:১৯

খায়রুল আহসান বলেছেন: জানি না কবি কে, তবে আমার আন্তরিক শ্রদ্ধা জানাই কবিকে তার উপলব্ধির জন্য, এবং আপনাকে এমন কবিতা চয়ন করার জন্য। -- আপনার আন্তরিক শ্রদ্ধা গ্রহণ করলাম, কেননা কবিতাটা এ অধমেরই লেখা।
Womb

২৬ শে আগস্ট, ২০১৭ বিকাল ৫:৩৪

করুণাধারা বলেছেন: অভিনন্দন চমৎকার কবিতার জন্য। এর একটি বাংলা অনুবাদ যদি দিতেন, আমার ধারনা অন্তত কিছু মানুষের নারীদের সম্পরকে দৃষ্টিভংগি বদলে যেত।

প্রার্থনা করি আপনার এ উপলব্ধি যেন আপনার পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যেও অক্ষুন্ন থাকে।

ধন্যবাদ, আবারো মন্তব্য করার জন্য।

৮| ২৬ শে আগস্ট, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:২২

মানিজার বলেছেন: এই টাইপ লোকের সাথে ঘর করার সিদ্ধান্ত নেবার অধিকার আছে তার সাথে থাকা সুস্থ মানুষের । ভালবাসা/মানবিক কারণে কেউ দুঃসাহসী সিদ্ধান্ত নিলে সেটা শ্রদ্ধা করার মতো কাজ। আর নিজের নিরাপত্তার কথা ভেবে সরে গেলে সেইটাও খারাপ সিদ্ধান্ত না ।

৩০ শে আগস্ট, ২০১৭ রাত ৯:৪৩

করুণাধারা বলেছেন: ধন্যবাদ মানিজার- আমার ব্লগে স্বাগতম।

অল্পবয়সী মেয়েটা বাস্তবতার চেয়ে আবেগকে প্রাধান্য দিয়েছিল। তাই সে সিজোফ্রেনিয়া আক্রান্ত স্বামীকে ছেড়ে যায় নি। আমি অবশ্য তার এ মানসিকতার প্রশংসা করি।

ভাল থাকুন, ব্লগে থাকুন।

৯| ১৬ ই জানুয়ারি, ২০২১ সকাল ১০:৩৯

সোহানী বলেছেন: সরি আপু, অনিয়মিত বলে উত্তর দেখিনি। তাই এ লিখাটিও পড়া হয়নি।

জাফরুল মবীন ভাইএর এ নিয়ে চমৎকার একটা লিখা আছে।

আসলে আমার অভিজ্ঞতায় বলে ইনফেরিয়ার কমপ্লেক্স থেকে এ ধরনে সমস্যা তৈরী হয়। বিয়ের ক্ষেত্রে পাত্র-পাত্রী উভয়ের অসম যোগ্যতায় এ ধরনের কমপ্লেক্স এর মূল কারন। সেটা ছেলে মেয়ে সবার জন্যই প্রযোজ্য। অনেক মেয়েও কিন্তু স্বামীকে মারাত্বক সন্দেহ করে, স্বাভাবিক জীবন থেকে সরিয়ে নেয়। তবে সত্যিকারের চিকিৎসা নিতে কাউকে তেমন দেখিনি।

গল্পে ভালোলাগা।

২৭ শে জানুয়ারি, ২০২১ রাত ৯:৪০

করুণাধারা বলেছেন: আমিও উত্তর দিতে দেরি করে ফেললাম...

এটা ইনফেরিয়ার কমপ্লেক্স থেকে সৃষ্ট না, প্যারানয়েড স্কিজোফ্রেনিয়া একধরনের জটিল মানসিক রোগ যাতে রোগী কোন বিশেষ মানুষকে মিথ্যা সন্দেহ করে। এই গল্পে যার কথা বলেছি তার থেকে প্রথম এ রোগের কথা জানি, তারপর দেখলাম অনেকেই নানারকম মানসিক সমস্যায় ভুলেও সেসব গোপন করেন। এই মেয়েটা স্বামীকে ডিভোর্স দিয়েছিল তিন বছর পর, কিন্তু অনেক মেয়েকেই দেখি স্বামীর সন্দেহ বাতিকতা মেনে নিয়ে সংসার করছে... শারীরিক রোগের মতো মানসিক রোগের চিকিৎসাও যে দরকার এই কথাটাই অনেকে জানে না।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.