নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আরেফিন যখন আমাকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিল তখন আমি ভেবে দেখার জন্য দুদিন সময় নিয়েছিলাম। জীবনের এতগুলো বছর আমি অনেক কিছু নিয়ে ভেবেছি, অনেক কিছু করেওছি কিন্তু বিয়ে শাদী নিয়ে কখনোই ভাবি নি, তাই ভেবে দেখবার জন্য আমার একটু সময় দরকার ছিল। দুদিন আমি খুব ভাবলাম- আমার জীবনদর্শন, আমার জীবন, আমার কাজ আর আরেফিনকে নিয়ে। আমার জীবনদর্শন বলে নিজের জীবনে নিজের ভাললাগার বিষয়গুলোই মুখ্য- অন্যকে ভাললাগানোর দায়িত্ব আমার না। অন্যের চোখে আমাকে ভাল দেখাবে, তাই নিজেকে সুন্দর করার জন্য নানাভাবে আমাকে কেন চেষ্টা করতে হবে, নিজের সময় নষ্ট করে! বরং এই সময়টা আমি কিছু শেখার বা কিছু গড়ার কাজ করতে পারি। আমি সুদর্শনা নই। আমার গায়ের রঙ কালো, নাক বোঁচা, চোখ দুটো ছোট ছোট। কিন্তু এই নিয়ে আমার মনে বিন্দুমাত্র খেদ নেই। বরং আমি খুশি এই ভেবে যে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আমার নিজেকে সুন্দর দেখাবার চেষ্টায় সময় ব্যয় করতে হয় না!
আমার বয়স আটাশ বছর। জীবনে আমি খুব বেশি কিছু চাইনি তাই মনে হয় অপ্রাপ্তির চেয়ে আমার জীবনে প্রাপ্তিই বেশি। তিনবছর আগে স্নাতকোত্তর শেয করি। আমার রেজাল্ট খুবই ভাল ছিল, বিশ্ববিদ্যালয়েই যোগ দিতে পারতাম কিন্তু আমার আরো বড় পরিসরে কাজ করার ইচ্ছা ছিল তাই একটা আন্তর্জাতিক সংস্থায় যোগ দিলাম। আরেফিনের সাথে আমার পরিচয় ছবি তুলতে গিয়ে। আমি যে ফটোগ্রাফি ক্লাবের মেম্বার আরেফিনও সেটার মেম্বার। ছবি তোলার হাত আমার বেশ ভাল। আমি নানারকম ছবি তুলি, নিজের ছবিও তুলি যাকে আমি সেলফি না বলে বলি সেল্ফ পোরট্রেট। আলো-আঁধার আর নানা রঙের মিশেলে আমার তোলা ছবিগুলো হয় চমৎকার - অনেকেই দেখে মুগ্ধ হয়। মুগ্ধ হয়েছিল আরেফিনও। ছবি নিয়ে আলোচনা দিয়ে আমাদের কথা শুরু- তারপর দিনে দিনে আমরা আরো নানা বিষয়ে কথা বলতে লাগলাম, দেখা গেল অনেক বিষয়েই আমাদের আগ্রহ মিলে যায়। আমার দিক থেকে এটা শুধুই ভাল বন্ধুত্ব ছিল- কোনদিনও আরেফিনকে বিয়ের কথা ভাবিনি। হয়তবা অবচেতনে ভয় ছিল প্রত্যাখ্যাত হবার। তাই যখন আরেফিন প্রস্তাব দিল তখন আমি এই সবকিছু গভীর ভাবে ভাবলাম। ভেবে স্থির করলাম ওকে বিয়ে করলে মনেহয় ভালই হবে। বাবা মাকে কথাটা জানাতেই তারা খুব খুশি। মা অবশ্য একবার বলে উঠেছিলেন,'ও যে বড্ড বেঁটে- লম্বায় তোর সমান হবে তো! '
তারপর জোরে শোরে বিয়ের তোড়জোড় চলতে লাগল। আমাদের বাড়িতে বেশি কারণ আমি বাবা মায়ের একমাত্র মেয়ে। বিয়ের কদিন আগে একদিন দুজনে নানা রকম কথা বলছি, এর মধ্যে বিয়ের শাড়ীর প্রসংগ এল। আমি বললাম,
-আমার পছন্দ অপরাজিতার মত নীল- আমি সেরকম নীল শাড়ি পড়ব।
- ওই রঙে তোমাকে আরো কালো দেখাবে। আরেফিন বলে উঠল।
কথাটা খারাপ লাগলেও আমি হাসলাম,
- বেশ তাহলে তুমিই বল আমি কোন রঙের শাড়ী পড়ব!
-তোমাকে তো সব রঙেই কালো দেখায়- আচ্ছা ম্যাজেন্টা পড়তে পার।
আরেফিন আর ওর পরিবারের কয়েকজনের সাথে গিয়ে ম্যাজেন্টা বেনারসি কেনা হল বসুন্ধরা সিটি থেকে। ওর মা আর অন্যরা চলে যাবার পর আমরা দুজন কফি খেতে গেলাম। আরেফিন বল্ল,
-এই তুমি কিন্তু বিয়ের দিন ফেমিনা থেকে সাজবে।
-আচ্ছা বাবা সাজব, কিন্তু ফেমিনা থেকেই কেন? আমি তো ভেবেছিলাম আমাদের পাড়ার বিউটি পার্লার থেকেই সাজব। যদিও সাজতে আমার ভাল লাগে না, তবুও।
-ফেমিনার কানিজ ভিনাস খুব ভাল বউ সাজান, একেবারে চেহারা বদলে ফেলেন। চোখে বড় বড় আইল্যাশ লাগিয়ে মুখে এমনভাবে রঙ লাগাবেন যে বোঝাই যাবে না তুমি এত কালো, তোমার চোখ বড় বড় দেখাবে-এমনকি তোমার নাকটাও খাড়া দেখাবে। কেউ তোমার আসল চেহারাটা বুঝতেই পারবে না
উত্তেজনায় আরেফিনের চোখ জ্বল জ্বল করে উঠল, কিন্তু আমার মনে হচ্ছিল আমার পা দুটো মাটির মধ্যে দেবে যাচ্ছে। অনেকক্ষন আমি কোন কথা বলতে পারলাম না।
-কি।হল,চুপ করে আছ কেন?
-একদিনের জন্য আমার অসুন্দর চেহারাকে সুন্দর করে কি হবে?পরদিন সকাল থেকেই তো আবার আমি চিরকাল যেমন তেমন হয়ে যাব- -
তুমি তো জানই আমি আমার চেহারা লুকাতে পছন্দ করি না!
-দেখ, আমার আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধবরা সবাই বিয়েতে আসবে, তোমাকে দেখবে। আমি চাই না কেউ তোমাকে দেখে খারাপ মন্তব্য করুক। বোঝার চেষ্টা কর, প্লিজ।
-কিন্তু আরেফিন, এটাতো একধরনের প্রতারণা। আমি দেখতে খারাপ অথচ আমাকে দেখাবে খুব সুন্দরী, পারলারের কয়েকজন বিউটিশিয়ান আর কিছু রঙের কারসাজিতে! আমি সুন্দরী বউ সেজে বসে থাকব, অতিথিদের সাথে কথা বলব আর সারাক্ষণ নিজের কাছে মনে হবে যারা আমাকে দেখে মুগ্ধ হচ্ছে তাদের আমি ঠকাচ্ছি! নিজের কাছে আমি খুব ছোট হয়ে যাব।
- খুব অদ্ভুত কথা বলছ! সব মেয়েই তো নিজেকে সুন্দর দেখাতে চায়।
-চাইতে পারে, কিন্তু তুমি তো জান আমি এসব পছন্দ করি না।তাছাড়া আরো কথা আছে। পারলারে সাজাবে সহকারীরা, কানিজ ভিনাস মাঝে মাঝে এসে কিছু টাচ দিয়ে যাবেন তার জন্য আমাকে দুপুর থেকে প্রায় চার পাঁচ ঘন্টা পারলারে থাকতে হবে, কানিজ রিনাসকে দিতে হবে ত্রিশ হাজার টাকা। এটা সময় এবং অর্থের অপচয়, আমি এটা কিছুতেই করব না।
- করবে না মানে,তুমি কি চাও সবাই আমাকে বলুক আমি একটা পেত্নী বিয়ে করেছি।
আরেফিন খুব রেগে গেল।আরেফিনের রাগ দেখেও আমি শান্ত থাকলাম।
-দেখ আরেফিন আমি যেমন আমি তেমনই থাকতে চাই। আমার হাইট পাঁচ ফিট তিন ইঞ্চি, তুমিও পাঁচ ফিট তিন ইঞ্চি। আমি কি তোমাকে বলেছি হিলওয়ালা জুতা পরতে?
-আমি বর, ছেলেদের চেহারা নিয়ে কেউ মাথা ঘামায় না।
-ঠিকই বলেছ তুমি, আরেফিন। নিজেকে সুন্দর দেখাবার কোন দায় নেই তোমার। কিন্তু আমাকে সুন্দর না দেখালে তুমি মুখ দেখতে পারবে না। ভারী মুশকিল হল দেখছি।
-সেজন্যেই তো বলছি, ভাল করে সাজগোজ কোর, কেউ যেন চিনতে না পারে।
-ঠিক আছে, আমাকে ভাববার জন্য একদিন সময় দাও।
সময় নিলাম, কিন্তু আসলে তো ভেবে দেখার আর কিছুই নেই। সিদ্ধান্ত তো নিয়েই ফেলেছি।
০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৭ সকাল ৭:১২
করুণাধারা বলেছেন:
তাই? আগে যদি বলতেন!
ভাল থাকুন। শুভকামনা।
২| ১১ ই এপ্রিল, ২০১৭ রাত ১:৩৭
সচেতনহ্যাপী বলেছেন: আটাশটি বছর যদি কাউকে ছাড়া পার করে আসতে পারি, তবে কেন....।!!
১৩ ই এপ্রিল, ২০১৭ বিকাল ৪:২২
করুণাধারা বলেছেন: ঠিক বলেছেন। তবে আটাশ বা ত্রিশ, বয়স যাই হোক না কেন জীবনসংগী হিসাবে তাকেই গ্রহন করা উচিত যে ভালমন্দ মিলায়ে সকলি আমাকে গ্রহন করতে পারে। আর ইদানীং কালের বউ সাজানোর নামে যে চেহারা পালটে দেয়া হয় সেটাও আমার পছন্দ নয়। একথাটাই বলতে চেয়েছি।
ধন্যবাদ সচেতন হ্যাপী, ভাল থাকুন।
৩| ১১ ই এপ্রিল, ২০১৭ বিকাল ৫:৩০
বিজন রয় বলেছেন: জীবন যেমন সহজ তেমন কঠিন। তাই অত ভাববার দরকার নেই।
১৩ ই এপ্রিল, ২০১৭ বিকাল ৪:২৩
করুণাধারা বলেছেন:
নারে ভাই, জীবন সহজ নয়- বড় কঠিন। একটা কালো মেয়ে নিজের অধ্যবসায়ের জোরে একটা অবস্থানে পৌঁছেছে, বিয়েটা ভুল হলে তার অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে যে!
ভাল থাকুন, সবসময়।
৪| ১৩ ই এপ্রিল, ২০১৭ রাত ১২:৩২
প্রামানিক বলেছেন: চমৎকার গল্প। ধন্যবাদ
১৩ ই এপ্রিল, ২০১৭ বিকাল ৪:২০
করুণাধারা বলেছেন:
আমার গল্প আপনার ভাল লাগল প্রামাণিক ভাই? তবে লেখা সার্থক।
ধন্যবাদ গল্প পড়ার জন্য। ভাল থাকুন সবসময়।
৫| ১৬ ই এপ্রিল, ২০১৭ রাত ১২:৩৮
আরিয়ান রাইটিং বলেছেন: মনকে অজান্তেই ছুঁয়ে দিলো।অনেক সুন্দর।
১৬ ই এপ্রিল, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:১২
করুণাধারা বলেছেন:
কালো মেয়ের কষ্টের গল্প আপনার মনকে ছুঁয়ে দিল আরিয়ান রাইটিং! আপনার মনটা তবে সত্যি সুন্দর।
ভাল থাকুন। শুভকামনা।
৬| ২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ সকাল ৯:৩৪
খায়রুল আহসান বলেছেন: সময় নিলাম, কিন্তু আসলে তো ভেবে দেখার আর কিছুই নেই। সিদ্ধান্ত তো নিয়েই ফেলেছি - ভেবেছিলাম, এবং আশাও করেছিলাম, উনি ব্যতিক্রমী প্রতিবাদী হয়ে বিয়েটা ভেঙেই ফেলবেন। কিন্তু গল্পের শেষ বাক্য পড়ে বুঝলাম, আমাদের এ সমাজে এখনো এরকম ভাবাটা যত সহজ, করাটা ততই কঠিন।
একটি ডিলেমার সুন্দর উপস্থাপনা। + +
০৭ ই অক্টোবর, ২০১৭ সকাল ৮:১৯
করুণাধারা বলেছেন: দুঃখিত, খুব দেরি করে ফেললাম। আপনি একটা বিশাল অনুপ্রেরণাদায়ক কাজ করেছেন, আমার প্রতি পোস্ট পড়ে মন্তব্য করেছেন। অজস্র ধন্যবাদ। ভাল থাকুন।
সামাজিক এই প্রথা আমার ভাল লাগে না। তাই এই গল্প। শেষটায় পাঠককে ভেবে নেবার অবকাশ দিয়েছি। কিন্তু আমি বিয়ে ভেংগেই শেষ করতাম। গল্পটা লেখার কিছুদিন পর দেখলাম সত্যি এমন ঘটনা ঘটে। Click This Link
৭| ১১ ই নভেম্বর, ২০১৭ রাত ৩:২৮
ফাহমিদা বারী বলেছেন: ভালো লাগছিলো পড়তে। ছেলেদের এমন মানসিকতা বিরল নয়।
শেষ যেখানে করেছেন, আমি তাতে সন্তুষ্ট। ঠিক জায়গাতেই শেষ হয়েছে। সব মেয়ের মধ্যেই এমন জোর থাকলে মানসিকতা পালটানো না গেলেও কিছু সামাজিক বোধ পাল্টাতে পারে।
শুভকামনা।
১১ ই নভেম্বর, ২০১৭ সকাল ৯:১৪
করুণাধারা বলেছেন: ধন্যবাদ, মন্তব্য করে অনুপ্রেরণা দেবার জন্য। এটা লিখেছিলাম একটা মেসেজ দেবার জন্য। আমি গল্প লিখতে পারিনা তবুও এই চেষ্টা করতে হয় যখন কিছু বলার জন্য আর কোন উপায় পাই না। আমার এরকম আরেকটি গল্প আছে, যেটা আমি লিখেছিলাম আশির দশকে চাকরি করা অবিবাহিতা মেয়েদের অফিসের অবস্থা নিয়ে। আমি আসলে জানতে চেয়েছিলাম এতগুলো দশক পার হবার পর মেয়েরা অফিসে মানুষ নাকি মেয়েমানুষ হিসাবে ট্রিটেড হয়। এটা কিন্তু গল্প নয়, চরিত্রগুলো বাস্তব। জানতে পারিনি, কারণ পঠিত হয়েছিল মাত্র চল্লিশবার আর মন্তব্য ছিল একটি। আপনাকে অনুরোধ করছি এটা সময় করে পড়তে, আর জানাতে যে উপযাচক ধরনের পুরুষদের উল্লেখ করেছি তারা কি আজো আছে? আপনি তো চাকরিজীবী, ভাল বলতে পারবেন। লিংক দিলাম।
ভাল থাকুন। Click This Link
©somewhere in net ltd.
১| ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৭ রাত ১২:২১
সুমন কর বলেছেন: আরো একটু হলে মন্দ হতো না....
+।