নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

করুণাধারা

করুণাধারা

জীবন যখন শুকাইয়া যায় করুণাধায় এসো

করুণাধারা › বিস্তারিত পোস্টঃ

চাঁদের চিঠি

০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৪৭



চিঠির আবার দিবস হয়! কত অজানাকে জানা হলো!!

এই চিঠি দিবস প্রসঙ্গে মনে পড়লো একটা সিরিজ চিঠির কথা। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন সময়ে একবার চিঠি দিয়ে আমাদের এক বেয়াড়া সহপাঠীকে শায়েস্তা করা হয়েছিল। সহপাঠীর নাম চাঁদ, সত্যিকার নাম! যারা শায়েস্তা করেছিল তাদের নামগুলো কাল্পনিক, ধরা যাক ফাহিম, মুনির ইত্যাদি। এরা সবাই একই হলে থাকতো। চাঁদের নাকি চুরি করার স্বভাব ছিল, প্রায়ই এর তার ছোটখাটো জিনিস চুরি করত এবং মাঝে মাঝে হাতেনাতে ধরাও পড়তো। একদিন চুরি করল মুনিরের ডেক সেট (এই জিনিসকে বোধ হয় স্টেরিও সিস্টেম বলা হতো)। কেউ অবশ্য চাঁদকে চুরি করতে দেখেনি, কিন্তু ওকে একটা বড় ব্যাগ নিয়ে বের হতে দেখেছে হলের অনেকেই। আরো অন্য কিছু লক্ষণ দেখে মুনির নিশ্চিত হলো, চাঁদই চুরি করেছে। সে চাঁদকে গিয়ে বলল ওর জিনিস ফিরিয়ে দিতে। কিন্তু চাঁদ ভয়ানক ক্ষেপে গেল এ কথা শুনে, বলল এভাবে অপমান করলে ও ব্যবস্থা করবে। অগত্যা মুনির, ফাহিম ওরাও ব্যবস্থা করল চাঁদকে শিক্ষা দেবার।

কয়দিন পর চাঁদ একটা চিঠি পেল, চিঠির লেখিকা বদরুন্নেছা কলেজের সুমনা। চিঠিতে সুমনা লিখেছে, সে চাঁদকে ইউসুফ সাহেবের বাসায় দেখেছে, দেখার পর থেকেই সে চাঁদকে ভুলতে পারছে না, তাই অনেক কষ্ট করে হলের ঠিকানা যোগাড় করে চিঠি লিখছে! ইউসুফ সাহেব চাঁদের গ্রাম সম্পর্কিত চাচা, চাঁদের সহপাঠীরা চাঁদের মুখে এই চাচার নাম শুনেছিল।

যেদিন চাঁদ এই চিঠি পেল, সেদিন সে সারাক্ষণ হাসিমুখে চঞ্চল পায়ে হলে ঘুরে বেড়াতে লাগলো। ফাহিম, পিন্টু এরা ওর অবস্থা দেখে জিজ্ঞেস করল, "কি ভাই, তুই এত খুশি কেন? কে চিঠি লিখছে?" চাঁদ কিছু উত্তর দিল না, খালি হাসতে লাগলো। রুমমেট দেখলো, রাত জেগে পড়ার টেবিলে বসে চাঁদ কাকে চিঠি লিখছে...

কদিন পর চাঁদ দেখা গেল আরো খুশি... সবাইকে জানালো একটা মেয়ে তার প্রেমে পড়ে হাবুডুবু খাচ্ছে, ছবিও পাঠিয়েছে। সেই ছবি সবাই দেখলো, একেবারে সিনেমার নায়িকার মত সুন্দরী মেয়ে! দেখে শুনে বন্ধুরা বিমোহিত, ঈর্ষান্বিত! সবাই চাঁদকে অভিনন্দিত করল, চাঁদ সবাইকে মিষ্টি খাওয়ালো। তারপর চলল সুমনা চাঁদের চিঠি চালাচালি।

এবার বলি মেয়েরা কিভাবে চাঁদের কাহিনী জানলাম। আমাদের ক্লাসের মেয়েরা সবসময় দলবেঁধে থাকতাম, আমাদের দলের মাঝে কখনো কোনো ছেলে ঢুকতে পারতো, যদি তার গল্প শোনাবার দক্ষতা থাকতো। মুনিরের ছিল এই দক্ষতা। একদিন সে বলল, চাঁদের গল্প শোনো। কতগুলা চিঠির ফটোকপি আমাদের হাতে ধরিয়ে দিল, এক দুই তিন চার এরকম নাম্বার দেওয়া চিঠি আর তার উত্তর। সুমনা চাঁদকে যে চিঠি লিখেছিল সেগুলো আর চাঁদের লেখা চিঠি। চিঠিতে চাঁদ নিজের কত গুণ বর্ণনা যে করেছে, তার ক্লাসের মেয়েরা তার জন্য কত পাগল হয়ে আছে তার সবিস্তার বর্ণনা। মিথ্যা কথার জাহাজ। পড়ে আমরা হেসে কুটিপাটি । মুনির বলল, চাঁদকে শায়েস্তা করার জন্য ওই এই চিঠির ব্যবস্থা করেছে, সুমনা কাল্পনিক চরিত্র। সুমনার ঠিকানা হিসেবে যে বাসার ঠিকানা দেয়া হয়েছে, সেটা মুনিরের খালার বাসা। যখন চাঁদের চিঠি আসতো, তখন ওর খালাতো বোন মিলি সেই চিঠি নিয়ে ওর কাছে রাখতো আর মুনির সেটা নিয়ে আসতো, তারপর কয়েকজন মিলে সেটার উত্তর লিখে সুমনার নাম দিয়ে চাঁদের কাছে পোস্ট করতো। সুমনার ছবি বলে যে ছবি দিয়েছিল সেটা আসলে নিউমার্কেটের আকস স্টুডিও থেকে এনেছিল।

যখন দেখলাম চাঁদ তার চিঠিতে আমাদের উল্লেখ করেছে, তখন আমরাও চাঁদের সাথে কথা বলতে লাগলাম। একে তো ওকে দেখেই হাসি আটকানো দায় হয়ে যায়, বহু কষ্টে হাসি আটকে জিজ্ঞেস করতাম, "কী ব্যাপার? তোমাকে আজকে এতো হ্যান্ডসাম দেখাচ্ছে কেন চাঁদ।" এরপরে দেখা যেত এই কথাটাকেই চাঁদ বহুগুণ বাড়িয়ে সুমনাকে চিঠিতে লিখেছে। সেই চিঠির ফটোকপি আবার মুনির আমাদের পড়তে দিতো। আবারো হাসি...

বেশ আনন্দে আমাদের দিন কাটছিল। চাঁদের আনন্দ দেখে বন্ধুরা মাঝে মাঝেই ওকে খাওয়াতে বলত, সেও মহানন্দে সা সপ সমুসা খাওয়াতো। এই সবের মাঝেই মুনির কখনো বলতো, "ভাই আমার স্টেরিওটা দিয়ে দে নাইলে কিন্তু তোর খবর আছে!" কিন্তু চাঁদ মুনিরকে একদম পাত্তা দিত না। একদিন মুনির বলল, "দিবি না! দেখ কালকে কি করি!"

পরদিন ছুটির দিনে হলের ছেলেরা দেখলো, হলের দেয়ালে চিঠি সাঁটানো। এক জায়গায় এক নম্বর চিঠি আর তার উত্তর, অন্য অনেক জায়গায় বাকি চিঠি আর তার উত্তর সবাই ছুটোছুটি করে চিঠি পড়তে লাগলো। বিরাট আমোদের ব্যবস্থা হল। চাঁদের মুখ চুন, মুনিরের মুখ চাঁদের মতো উজ্জ্বল! প্রতিশোধ নেয়ার আনন্দে! চড় থাপ্পড় মারামারি কিছু না করে চিঠি লিখে দারুন শোধ তুলল মুনির।









মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.