নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অপ্রিয়বক্তা।

অন্তর্জাল পরিব্রাজক

অসাধারণ নই, সাধারণ এক মানুষ।

অন্তর্জাল পরিব্রাজক › বিস্তারিত পোস্টঃ

ব্রাজিলের ইতিকথা

০৪ ঠা জুন, ২০১৭ রাত ৮:১৫


ব্রাজিল। দক্ষিণ আমেরিকার সর্ববৃহৎ দেশ। ফুটবল খেলার সুবাদে আমরা দেশটির সাথে বেশ পরিচিত। আসুন, ব্রাজিল সম্পর্কে আরও কিছু জেনে নি আমরা।
ব্রাজিলের মোট আয়তন ৮৫,১৫,৭৬৭ বর্গ কিলোমিটার। জনসংখ্যা ২০ কোটি ৬৪ লক্ষ ৪০ হাজার ৮৫০ জন (২০১৬ সালের হিসাব অনুযায়ী)। ব্রাজিল বিশ্বের ৫ম বৃহত্তম দেশ। রাশিয়া, কানাডা, চীন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরই ব্রাজিলের স্থান। অফিশিয়াল নাম ‘ফেদারেটিভ রিপাবলিক অব ব্রাজিল’ (পর্তুগীজে - রিপুবলিকা ফেদারাতিভা দো ব্রাজিল)। পর্তুগীজ হচ্ছে ব্রাজিলের অফিশিয়াল বা সরকারী ভাষা এবং ব্রাজিল হচ্ছে বিশ্বের সর্ববৃহৎ পর্তুগীজভাষী দেশ। কারণ ব্রাজিল ছিল ইউরোপের পর্তুগালের কলোনি বা উপনিবেশ এবং এদেশের জনসংখ্যার বেশিরভাগেরই পূর্ব-পুরুষ এসেছে পর্তুগাল থেকে। এটি একটি বহুজাতিবহুল দেশ। এখানে আদিবাসী আমেরিকান, পর্তুগীজ এবং আফ্রিকান ছাড়াও বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মানুষ রয়ে গেছে। তাছাড়া ইউরোপের বিভিন্ন দেশের লোকেরাও এখানে এসেছিলো। বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী ব্রাজিল একটি যুক্তরাষ্ট্রীয় প্রজাতন্ত্র, যার একটি ফেডারেল ডিসট্রিক্ট, ২৬ টি প্রদেশ এবং ৫,৫৬৪ টি মিউনিসিপালিটি রয়েছে।
ব্রাজিল স্বাধীনতা ঘোষণা করে ১৮২২ সালের ৭ই সেপ্টেম্বর এবং তারপরে এক স্বাধীনতা যুদ্ধের পর ১৮২৫ সালের ২৯শে আগস্ট পর্তুগালের কাছ থেকে স্বাধীন দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পায়।

ব্রাজিলে প্রথম মানুষের পা পড়ে প্রায় ১১ হাজার বছর আগে, অর্থাৎ কলম্বাসের আমেরিকা আবিস্কারের বহু বহু বছর পূর্বে। পর্তুগীজদের আগমনের পূর্বে ব্রাজিলে আদিবাসীদের সংখ্যা ছিল প্রায় ৭০ লক্ষের মতো এবং এরা অসংখ্য জাতিগোষ্ঠীতে বিভক্ত ছিল। বলাবাহুল্য, পর্তুগীজদের আগমনের পরে বিভিন্ন যুদ্ধ-বিগ্রহে ব্রাজিলের আদিবাসীদের ব্যাপক হারে নির্মূল করা হয়। অসংখ্য গনহত্যা চালানো হয় আদিবাসীদের উপরে এবং এতে করে এদের জনসংখ্যা ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে।

পোরতো সেগুরোয় পেদ্রো আলভারেস কাব্রালের আগমন (১৫০০ খ্রিষ্টাব্দ)

পর্তুগীজ অভিযাত্রী পেদ্রো আলভারেস কাব্রালের অভিযানের পর পর ১৫০০ খ্রিষ্টাব্দের ২২ শে এপ্রিল ব্রাজিল পর্তুগীজ সাম্রাজ্যের অধিভুক্ত হয়। পর্তুগীজ সম্রাট তৃতীয় জনের আমলে ১৫৩৪ খ্রিষ্টাব্দে ব্রাজিলকে পর্তুগালের উপনিবেশিকরণ করা শুরু হয়। ষোড়শ খ্রিষ্টাব্দের মাঝামাঝিতে আখ থেকে উৎপাদিত চিনি ব্রাজিলের প্রধান রপ্তানি দ্রব্যে পরিণত হয় এবং আখ চাষের জন্য ক্রীতদাস আনা হতো আফ্রিকা থেকে। ১৬৯০ খ্রিষ্টাব্দে ব্রাজিলে স্বর্ণ আবিষ্কৃত হয় এবং তারপরে স্বর্ণের খোঁজে পর্তুগাল তো বটেই, ইউরোপ থেকে বহু মানুষ ব্রাজিলমুখী হয়। ইতিহাসে এটা ‘ব্রাজিলিয়ান গোল্ড রাশ’ নামে খ্যাত। বলাবাহুল্য, স্বর্ণ আবিস্কার ব্রাজিলীয় উপনিবেশের অর্থনীতির চেহারা পাল্টে দেয়।
পর্তুগীজ অভিযান যেটা “বান্দেইরাস” নামে খ্যাত সেটায় পর্তুগীজ সাম্রাজ্যের সীমানা বর্তমান ব্রাজিলের সীমানা যেরকমভাবে রয়েছে সে পর্যায়ে নিয়ে আসে। এসময় অন্যান্য ইউরোপীয় সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলো ব্রাজিলের বিভিন্ন অংশ দখলের প্রচেষ্টা চালায় যেগুলোতে পর্তুগীজরা যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে তাদের সাথে। বিশেষ করে ফরাসী এবং ডাচদের সাথে তাদের সংঘর্ষ বাঁধে। পরবর্তীতে ‘পর্তুগাল, ব্রাজিল এবং আলগার্ভেস যুক্তরাজ্য’ নামে গঠিত হয় একটি আন্তঃমহাদেশীয় যুক্তরাজ্য যার কর্ণধার ছিলেন সম্রাজ্ঞী প্রথম মারিয়া ( Queen Maria I) এবং তার পরে সম্রাট ষষ্ঠ জন ( King John VI) , তবে এটি বেশীদিন টেকেনি। সম্রাট ষষ্ঠ জন তাঁর পুত্র পেদ্রোর হাতে শাসনের দায়িত্ব তুলে দিয়ে পর্তুগাল চলে যান। শাসক পেদ্রো প্রতিনিধিত্ব করতেন পর্তুগালের। ব্রাজিলীয় অধিবাসী এবং পর্তুগীজদের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয় ১৮২০ এর ‘লিবারাল রেভলুশন’ এর সময় থেকে এবং পেদ্রো ব্রাজিলীয়দের সাথে থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এর পরে ১৮২২ সালের ৭ সেপ্টেম্বর তিনি পর্তুগালের থেকে আলাদা হয়ে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। ব্রাজিলের স্বাধীনতা যুদ্ধ অবশ্য এর মধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছিল এবং তা ছড়িয়ে পড়ে উত্তর এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে। যুদ্ধের পরে ১৮২৪ সালের ৮ ই মার্চ পর্তুগিজরা আত্মসমর্পণ করে। পরবর্তীতে ২৯ শে আগস্ট ১৮২৫ সালে পর্তুগাল ব্রাজিলকে সরকারীভাবে স্বীকৃতি দেয়। গঠিত হয় ব্রাজিল সাম্রাজ্য। সম্রাট হলেন প্রথম পেদ্রো।

রাজকুমার পেদ্রো কর্তৃক ব্রাজিলের স্বাধীনতা ঘোষণা (৭ সেপ্টেম্বর ১৮২২)।

বছরের পর বছর ধরে রাজনৈতিক ঝড় – ঝঞ্ঝায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে ব্রাজিল। ইতিমধ্যে পর্তুগালে ক্ষমতায় আসলেন সম্রাট ষষ্ঠ জন। সম্রাট প্রথম পেদ্রো ব্রাজিলের সিংহাসন তাঁর ৫ বছর বয়সী পুত্রের (যিনি পরে হয়েছিলেন সম্রাট দ্বিতীয় পেদ্রো) জন্য রেখে পর্তুগাল গেলেন পর্তুগালের সিংহাসন তাঁর কন্যার জন্য রেখে দেয়ার দাবি নিয়ে। কিন্ত দ্বিতীয় পেদ্রো তখনও নাবালক। যেহেতু তিনি তাঁর সাবালকত্ব প্রাপ্তির আগে তাঁর রাজশাসনের ক্ষমতা প্রয়োগ করার সুযোগ ছিল না সেহেতু সেই অন্তর্বর্তীকালে তাঁর পক্ষ হয়ে রাজ্য শাসন করার জন্য গঠন করা হয় রাজপ্রতিনিধি। তাঁর সাবালকত্ব প্রাপ্তির আগের এই সময়টুকু বিভিন্ন বিদ্রোহ এবং অশান্তিতে ভরপুর ছিল। বাস্তবিকপক্ষে জেনারেল এসেম্বলি কর্তৃক তাঁকে ১৪ বছর বয়সে নাবালক অবস্থাতেই সম্রাট হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিলো।
তাঁর রাজত্বের সময় দাসতন্ত্রের ব্যাপারে বিতর্ক জোরালো হয়ে ওঠে। ১৮৫০ খ্রিষ্টাব্দে রদ করা হয় ‘আটলান্টিক দাস বাণিজ্য’। এর পর ব্রাজিল ধীরে ধীরে দাস প্রথা বিলোপের দিকে এগিয়ে যায়। ১৮৮৮ সালে ব্রাজিলে দাস প্রথার সম্পূর্ণভাবে বিলোপ সাধিত হয়।
সম্রাট দ্বিতীয় পেদ্রোর ৫৮ বছরের শাসনামলে ব্রাজিলীয় সাম্রাজ্য তিনটি বড় যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে যার সবকয়টিতেই বিজয় এসেছিলো। এই তিনটি হচ্ছে প্লাতিন যুদ্ধ, উরুগুয়ের যুদ্ধ ও প্যারাগুয়ের যুদ্ধ।
বছরের পর বছর ধরে বিরাজমান থাকা দুঃসহ অর্থনৈতিক অচলাবস্থার পরে ১৮৮৯ খ্রিষ্টাব্দে এক সামরিক অভ্যুত্থানে পতন হয় ব্রাজিলীয় সাম্রাজ্যের।
ব্রাজিলের প্রথম রিপাব্লিকান সরকার বাস্তবিকপক্ষে সামরিক স্বৈরশাসনের চেয়ে বেশী কিছু ছিল না। রিও ডি জেনেরিও এবং অন্যান্য রাজ্যগুলোতে সবখানেই ছিল সামরিক বাহিনীর আধিপত্য। সংবাদমাধ্যমের কোনও স্বাধীনতা ছিল না এবং এই সবই নিয়ন্ত্রিত হতো ক্ষমতাসীনদের দ্বারা। পরবর্তীতে দুটো গভীর সংকটের পর (যার একটি ছিল অর্থনৈতিক এবং অন্যটি সামরিক) রিপাব্লিকান সিভিলিয়ানরা ক্ষমতায় আসে ১৮৯৪ সালে।
রিপাব্লিকান আমলে ব্রাজিল প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে সীমানা বিরোধ মিটিয়ে বৈদেশিক নীতির ভারসাম্য বজায় রাখে। কিন্তু ভারসাম্য নষ্ট হয়েছিলো এক্র যুদ্ধ (১৮৯৯-১৯০২) এবং পরে ১ম বিশ্বযুদ্ধে জড়িয়ে পড়া নিয়ে। লীগ অব নেশন্সে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখতে গিয়েও ব্যর্থ হয় ব্রাজিল। অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে এন্সিলামেনতো সঙ্কট, আর্মাডা বিদ্রোহ এবং অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক বিভিন্ন অস্থিতিশীলতা এবং নানা বিক্ষোভ- বিদ্রোহের এক চক্রে আটকে থাকে ব্রাজিল ১৯২০ এর দশক পর্যন্ত। ধীরে ধীরে এই অস্থিতিশীলতার চক্রের সাথে নানামুখী সঙ্কট ক্ষমতাসীনদের শক্তি এতোটাই খর্ব করে যে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর খুন হওয়ার পর পরাজিত প্রেসিডেন্ট প্রার্থী গেতুলিও ভারগাস এবং সামরিক বাহিনীর আঁতাতে ব্রাজিলে রীতিমতো এক সামরিক অভ্যুত্থানের জন্ম দেয় যা ১৯৩০ এর অক্টোবর অভ্যুত্থান নামে পরিচিত। অভ্যুত্থানে প্রেসিডেন্ট ওয়াশিংটন লুই উৎখাত হন, নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জুলিও প্রেস্তেস এর ক্ষমতায় আরোহণ বন্ধ হয় এবং পুরাতন রিপাব্লিকের সমাপ্তি রচনা হয়। সংবিধান স্থগিত হয়। ক্ষমতায় বসেন ভারগাস।
১৯৩০ এর দশকে ভারগাস এবং তার সমর্থকদের ক্ষমতা থেকে উৎখাতের তিনটি প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। প্রথমটি ছিল ১৯৩২ সালে সংবিধানবাদীদের বিদ্রোহ, দ্বিতীয়টি ছিল ১৯৩৫ এর কমিউনিস্ট উত্থান এবং তৃতীয় প্রচেষ্টাটি সংঘটিত হয়েছিলো ফ্যাশিষ্টদের দ্বারা। ১৯৩৭ সালের কুদেতার পরিণতিতে এসেছিলো ১৯৩৮ এর নির্বাচন বর্জন এবং তখন ভারগাস স্বৈরশাসক হয়ে বসেন। শুরু হয় ‘এস্তাদো নভো’ যুগ, যেটা সরকারী জুলুম এবং সংবাদমাধ্যমের উপর সেন্সরশিপ আরোপের জন্য কুখ্যাত।

গেতুলিও ভারগাস

ভারগাসের আমলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সংঘটিত হয়, যাতে ব্রাজিল ১৯৪২ সাল পর্যন্ত নিরপেক্ষতা অবলম্বন করে, তবে পরে দক্ষিণ আটলান্টিক মহাসাগরে নাৎসি জার্মানি ও ফ্যাশিষ্ট ইতালির সাথে বিরোধের জের ধরে ব্রাজিল মিত্রশক্তির পক্ষে যোগদান করে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির পরাজয় এবং মিত্রশক্তির বিজয়ের পর ভারগাসের অবস্থান টলে উঠে এবং আরেকটি সামরিক অভ্যুত্থানের পর তিনি উৎখাত হন। তবে তিনি আবার ক্ষমতায় এসেছিলেন ১৯৫০ এর নির্বাচনে। ১৯৫৪ সালে এক রাজনৈতিক সংকটকালে ভারগাস আত্মহত্যা করেন।

ব্রাজিলের নতুন রাজধানী ব্রাসিলিয়ার নির্মাণকাজ চলছে (১৯৫৯)।


ভারগাসের আত্মহত্যার পর বেশকিছু অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশ শাসন করে। জুসসেলিনো কুবিতসেক ১৯৫৬ সালে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট হন। তিনি বড় কোনও সঙ্কট ছাড়াই দেশ শাসন করেন। তাঁর সময় দেশের অর্থনীতি এবং শিল্পখাত উল্লেখযোগ্যভাবে বিকশিত হয়েছিলো। তাঁর আমলে ব্রাজিলের নতুন রাজধানী ব্রাসিলিয়ার নির্মাণকাজ শুরু হয়, যার উদ্বোধন হয়েছিলো ১৯৬০ সালে। তাঁর পরের প্রেসিডেন্ট জানিও কুয়াদ্রোস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার এক বছরের কম সময় শাসন করে প্রেসিডেন্সী ছেড়ে দেন। ক্ষমতায় আসেন ভাইস-প্রেসিডেন্ট জোয়াও গোউলার্ট । কিন্ত তিনি আবার ১৯৬৪ সালে এক সামরিক অভ্যুত্থানে উৎখাত হন। দেশ চলে যায় সামরিক সরকারের হাতে। এই সরকারের ক্ষমতায় থাকার কথা ছিল স্বল্পকালীন মেয়াদের জন্য কিন্ত তারা শেষপর্যন্ত পূর্ণ সামরিক স্বৈরতন্ত্রের দিকে যায় এবং দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকে। ১৯৬৮ সালে ঘোষিত হয় ফিফথ ইন্সটিটিউশনাল অ্যাকট। গেরিলা যুদ্ধ চলতে থাকে এ সরকারের বিরুদ্ধে। এই গেরিলাদের অনেকেই ছিল বামপন্থী। এর সাথে সামরিক সরকারের দমন-পীড়নও শুরু হয়। এ দমন পীড়ন দেশের বিশিষ্ট শিল্পী- সাহিত্যিক- সাংবাদিকদের ওপরও চলে। কিন্তু সরকারী এসব বর্বরতা এবং দমন পীড়ন সত্বেও অর্থনৈতিক উন্নতির কারণে এই সরকারের জনপ্রিয়তা বজায় ছিল ১৯৭০ এর দশক পর্যন্ত।
পরবর্তীতে গেরিলাদের পরাস্ত হবার পরও সরকারী দমন পীড়ন কমছিল না। এর সাথে যোগ হল সেসময়ের অর্থনৈতিক সঙ্কট মোকাবেলা করার অক্ষমতা। ১৯৭৯ সালে অ্যামনেস্টি আইন পাশের পর ব্রাজিল ধীরে ধীরে গণতন্ত্রের পথে ফিরতে শুরু করে। যাই হোক, ১৯৮৫ সালে ব্রাজিলে দীর্ঘ ২১ বছরের সামরিক শাসনের অবসান হয় এবং সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হন জোসে সারনে। ১৯৮৮ সালে গৃহীত হয় ব্রাজিলের নতুন সংবিধান।
১৯৮৯ সালে নতুন সংবিধানের আওতায় ব্রাজিলে প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় এবং ফার্নান্দো কলোর প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হন। সেই থেকে কোনওরকম ব্যাঘ্যাত ছাড়াই ব্রাজিলের সংবিধানের নীতিমালা পালিত হয়ে আসছে। ফার্নান্দো কলোর ১৯৯২ সালে দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত হন এবং প্রেসিডেন্ট হিসেবে পদত্যাগ করেন। ভাইস প্রেসিডেন্ট ফ্রাংকো প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেন। প্রেসিডেন্ট ফ্রাংকো অর্থমন্ত্রী হিসেবে ফার্নান্দো হেনরিক করদোসো কে নিয়োগ দেন যিনি “প্লানো রিয়াল” বাস্তবায়ন করেন। “প্লানো রিয়াল” ছিল ব্রাজিলীয় অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করার লক্ষ্যে গৃহীত একগুচ্ছ পদক্ষেপ বা কার্যক্রম, যার বিশেষ লক্ষ্য ছিল অতিমাত্রার মূল্যস্ফীতিকে দমন করা। ইনি পরে ব্রাজিলের ৩৪তম প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন (১৯৯৫-২০০২)। পরবর্তী প্রেসিডেন্ট লুলা দা সিলভার (২০০৩-২০০১১) কাছে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরকে দেখা হচ্ছিল ব্রাজিলের দীর্ঘ আকাঙ্ক্ষিত রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা হিসেবে। তাঁর পরবর্তী প্রেসিডেন্ট দিলমা রোউসেফ হচ্ছেন ব্রাজিলের প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট, যাকে ২০১৬ সালে ব্রাজিলীয় কংগ্রেস কর্তৃক অভিশংসন এবং প্রেসিডেন্ট পদ থেকে বিতাড়ন করা হয়। ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইকেল তেমার পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন।
ব্রাজিলের সরকারব্যবস্থা প্রেসিডেন্সিয়াল ব্যাবস্থায় চলে। এখানে প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন রাষ্ট্রের এবং সরকারের প্রধান ব্যাক্তি। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন চার বছর মেয়াদের জন্য। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি মন্ত্রীদের নির্বাচিত করেন। ১৮২৪ সালে প্রথম সংবিধান পাশ হওয়ার পর থেকে ব্রাজিলে দুই কক্ষ বিশিষ্ট সরকার ব্যবস্থা চলে আসছে যা বর্তমানে কংগ্রেস নামে পরিচিত। অন্যকথায়, ব্রাজিলের জাতীয় কংগ্রেস হচ্ছে একটি দুই কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা, যা ফেডারেল সেনেট এবং ডেপুটিদের চেম্বারের সমন্বয়ে গঠিত। ব্রাজিলের ফেডারেশনটি যেসব মৌলিক ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত সেগুলো হল – সার্বভৌমত্ব, নাগরিকত্ব, মানবিক মর্যাদা, শ্রমের সামাজিক মুল্য এবং বহুদলীয় গণতন্ত্র ও কর্মোদ্যোগের স্বাধীনতা। ব্রাজিলীয় সরকার সংবিধান মোতাবেক তিনটি শাখায় (নির্বাহী, বিচারিক ও আইন প্রণয়নকারী) প্রতিষ্ঠিত। ব্রাজিলের আইন রোমান-জার্মানিক ট্র্যাডিশনের উপর প্রতিষ্ঠিত।
ব্রাজিলের অর্থনীতি একটি মিশ্র অর্থনীতি। ব্রাজিলীয় অর্থনীতি লাতিন আমেরিকা তথা দক্ষিণ আমেরিকার বৃহত্তম অর্থনীতি। এটা বিশ্বের অষ্টম বৃহত্তম অর্থনীতি এবং ক্রয়ক্ষমতার সাম্যের ভিত্তিতে বিশ্বের সপ্তম বৃহত্তম অর্থনীতি। ব্রাজিলের প্রচুর পরিমাণে প্রাকৃতিক ও খনিজ সম্পদ রয়েছে। ব্রাজিলের কৃষিব্যবস্থা খুব উন্নত। তেমনই উন্নত এর খনিজ সম্পদ আহরণ। এর জি.ডি.পি পার ক্যাপিটা ১৫,০৪৮ ডলার (২০১৬) যা আই এম এফ এর হিসেব অনুযায়ী বিশ্বে ৭৭ তম। ১৯৯৪ সাল থেকে ব্রাজিলের মুদ্রা হিসেবে ‘রিয়াল’ ব্যবহৃত হয়ে আসছে। প্রধান রপ্তানি দ্রব্যসমূহ হচ্ছে আকরিক লৌহ, লৌহজাত দ্রব্য, কফি, সয়াবিন, পোশাকসামগ্রী, ইথানল, টিনজাত মাংস, গাড়ি, বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ও উড়োজাহাজ। ব্রাজিল বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম বিমান উৎপাদনকারী দেশ।
( তথ্য এবং ছবির সুত্রঃ উইকিপিডিয়া)

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা জুন, ২০১৭ রাত ৯:১৩

চাঁদগাজী বলেছেন:


লুলা কি ধরণের অর্থনীতির প্রচলন করেছিলেন?

০৪ ঠা জুন, ২০১৭ রাত ৯:৫৭

অন্তর্জাল পরিব্রাজক বলেছেন: প্রেসিডেন্ট লুলা দা সিলভার সময় ব্রাজিলের বেশ অর্থনৈতিক উন্নতি হয়। তিনি মূলত ব্রাজিলের জীর্ণ-দীর্ণ পুঁজিবাদী অর্থনীতিকে সংস্কার করেন। তিনি আই এম এফ এর সাথে সমস্ত চুক্তি নতুন করে সাজান, মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করে অর্থনীতি স্থিতিশীল রাখেন, রাস্তাঘাট ও রেলওয়েকে সংস্কার করেন, ট্যাক্স ব্যাবস্থাকে সহজতর করেন ও ট্যাক্সের পরিমাণ কমান ও দেশের জ্বালানী উৎপাদনকে সংস্কার করেন। লুলার অর্থনৈতিক পলিসিগুলোর কারণে ব্রাজিলের জীবন যাত্রার মান বেড়ে যায়। প্রায় ২ কোটি মানুষ অতি দরিদ্র অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসে এবং ব্রাজিল বিশ্বের অষ্টম বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত হয়। তিনি ব্রাজিলের অর্থনীতিতে খুব গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। তাছাড়া রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও তাঁর সময় বড় কোনও সংকট দেখা দেয়নি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.