নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
গ্রীষ্মকালের রাত্রি – মনোরম এবং স্বচ্ছ… মধ্য পোল্যান্ডের সীমানা যেখানে সোভিয়েত ইউনিয়নের নতুন সীমানা (অর্থাৎ ১৯৩৯ সালের সেপ্টেম্বরে পোল্যান্ড পার্টিশনের পর) সঙ্গে মিলেছে, সেখানে বুগ নদী ও বিখ্যাত ব্রেস্টলিটোভস্ক দুর্গের অদূরে পাইন গাছের বনের মধ্যে নিঃশব্দে অপেক্ষা করছে জার্মান সৈন্যরা… গত কয়েকদিন ধরে তারা গোপনে এখানে এসে জড়ো হয়েছে… কোনও সাড়াশব্দ করা নিষেধ… শত্রুপক্ষ যেন কোনোভাবেই টের না পায়… রাশিয়ানদের যেন কোনও সন্দেহ না জাগে… জার্মান কমান্ডারদের কড়া হুকুম… দিনের বেলা চুপচাপ… কোনও শব্দ করা যাবে না… খালি সন্ধ্যা নামলে বনের গভীরে কোনও জলাভূমিতে গিয়ে তারা গোসল করে পরিচ্ছন্ন হতে পারে… রুশ-জার্মান সীমান্তের (নতুন সীমান্তের) ৯৩০ মাইল দীর্ঘ সীমানার জঙ্গলে, শস্যক্ষেত্রে, মাঠে, গাছগাছড়ার আড়ালে লক্ষ লক্ষ জার্মান সৈন্য জমায়েত হয়েছে … গোপনে… মধ্যবর্তী রণাঙ্গনে রুশ-পোলিশ সীমানায় বুগ নদীর ৩ মাইল দূরে প্রাতুলিনের জঙ্গলে হিটলারি সৈন্যরা রুদ্ধ নিঃশ্বাসে অপেক্ষা করছে।
রাত ২টা… সমস্ত পৃথিবী শান্ত, নিস্তব্ধ… কিছুক্ষণের মধ্যে সেই নিঃশব্দতা খান খান করে রাশিয়ার একটি শস্যবাহী ট্রেন ঝুস ঝুস ঘুশ ঘুশ করে জার্মানির সীমানার দিকে চলে গেলো (রুশ-জার্মান অর্থনৈতিক চুক্তি অনুযায়ী) … কোথাও রাশিয়ার মনে, সীমান্তরক্ষী রুশ সৈন্যদের মনে সন্দেহ তৈরি হলো না… ২১-২২ শে জুন রাত ২ টা।… প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণ থেকে পাওয়া সূত্রে জার্মান ঐতিহাসিক পল ক্যারল লিখেছেন যে, বুগ নদীর ধারে সেই রাত্রি তখনো নিঃশব্দ অন্ধকারে নিমজ্জিত… তবে সেই রাত্রিতে যে সমস্ত জার্মান সৈন্যরা ওঁত পেতে ছিল, তারা কিছুতেই সেই রাতের জঙ্গল আর ঘাসের মধ্যে সেই অবিস্মরণীয় ব্যাঙের ডাক ভুলতে পারবে না… সেই ডাক ছিল “দাম্পত্য মিলনের”!!!
বুগ নদীর ওপারে বিখ্যাত ব্রেস্ট দুর্গ… বিপরীত দিকের পোল্যান্ড সীমান্তে জার্মান জেনারেল হান্স গুডেরিয়ানের অবজারভেশন পোস্ট… পোলিশ যুদ্ধের অভিজ্ঞতা থেকে তার কাছে এই অঞ্চলের পথঘাট অত্যন্ত পরিচিত… এই পর্যবেক্ষণ ঘাঁটি থেকে দিনের বেলা জার্মান অফিসাররা ইচ্ছে করলেই বাইনোকুলারে দেখতে পেতেন যে, ব্রেস্ট দুর্গের রাশিয়ান সৈন্যদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা কেমন চলছে… তারা ড্রিল করছে, খেলাধুলা করছে বা সন্ধ্যাবেলা ব্যান্ডের বাজনা শুনছে।
অফিসাররা তাদের হাতঘড়ি দেখছে… সময় যেন কতো মূল্যবান… ঘড়ির কাঁটাগুলি অন্ধকারেও জ্বলজ্বল করছে… রাত ৩ টা ১২… এখনো কি সময় আছে শান্তিরক্ষার? রুশ-জার্মান চুক্তি পালনের? চারিদিক নিস্তব্ধ… এই নিস্তব্ধতা ভয়ঙ্কর… সবার দৃষ্টি ঘড়ির কাঁটার দিকে… নিঃশ্বাস যেন রোধ হয়ে আসছে…
রাত্রি ৩ টা ১৩… চতুর্দিক কি প্রশান্তি!!! না, প্রশান্তি নয়…… মৃত্যু, ভয়ঙ্কর মৃত্যু আসছে…
ঘড়ির কাঁটা ঠিক ৩ টা ১৫ তে এসে দাঁড়ালো……
হঠাৎ সেই মুহূর্তে জার্মান কম্যান্ডারদের মুখ থেকে শোনা গেলো “ফয়ার” (Feur) {ফায়ার}!
একসাথে সমগ্র সীমানা জুড়ে ৬ হাজার কামান গর্জন করে উঠলো… উত্তরে মেরু সাগর থেকে ফিন উপসাগর পর্যন্ত ৭৫০ মাইল এবং তারপরে বাল্টিক সাগরের মেমেল বন্দর থেকে রোমানিয়ার দানিউব নদীর মুখ পর্যন্ত ১২৫০ মাইল … বলা যায়, মেরুসাগর থেকে কৃষ্ণসাগর পর্যন্ত দুই হাজার মাইল দীর্ঘ রণাঙ্গনে হিটলারের আক্রমণ শুরু হল ২২ শে জুন ভোর রাত্রে… …৬ হাজার কামানের মুখ থেকে যেন আগ্নেয়গিরির মতো আগুনের গোলা উৎক্ষিপ্ত হতে লাগলো… নারকীয় তাণ্ডবে পৃথিবী যেন দুলে উঠলো… ধোঁয়ায় ও আগুনে বুগ নদী আচ্ছন্ন হয়ে গেলো… সোভিয়েত সীমানায় রুশ সৈন্যরা বিস্ময়ে বিমুঢ় হয়ে গেলো… তারা বুঝে উঠতে পারছিলো না ব্যাপারটা কি…ট্যাঙ্কের গোলাগুলির আওয়াজে চমকিত হয়ে যেই তারা ব্যারাকের বাইরে আসলো অমনি তারা গোলার আঘাতে মাটিতে আছড়ে পড়তে লাগলো… অনেকে জামাকাপড় অর্ধেক পরা অবস্থায় ধোঁয়ার কুণ্ডলীর মধ্যে এদিক সেদিক ছোটাছুটি করতে লাগলো… হতবাক, স্তম্ভিত সৈন্যরা সদর দপ্তরে বার্তা পাঠাচ্ছিল
– “we are being fired on what shall we do?”
রুশ সদর দপ্তর থেকে উত্তর এলো – “You must be insane… and why is your signal not in code? “
শুরু হল হিটলারের সেই “অপারেশন বারবারোসা” … ব্রিটিশ ঐতিহাসিক অ্যালান ক্লার্ক নিরপেক্ষভাবে স্বীকার করে নিয়ছেন যে, এতো বড় যুদ্ধ মানুষের ইতিহাসে আর কখনো হয় নি… পৃথিবীতে আজ পর্যন্ত এতো বড় ভয়ঙ্কর আক্রমণ আর কখনো অনুষ্ঠিত হয় নি… ১৯৪১ সালের ২২ শে জুনের মতো ভয়ঙ্কর রাত আর কখনো মানুষের ইতিহাসে আসে নি… মহাযুদ্ধের মহাভারত তার মহাসর্বনাশা মূর্তি নিয়ে দুই হাজার মাইল দীর্ঘ রণাঙ্গনে দেখা দিলো।
(সুত্র: দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের ইতিহাস - বিবেকানন্দ মুখোপাধ্যায়)
২| ২৩ শে জুন, ২০২২ সকাল ৯:৫৬
সৈয়দ মশিউর রহমান বলেছেন: সব বড় যুদ্ধ করেছে পশ্চিমারা অথচ তারাই মানবাধিকারের ছবক দেয়।
©somewhere in net ltd.
১| ২৩ শে জুন, ২০২২ রাত ১:৫৪
রাজীব নুর বলেছেন: যুদ্ধের কাহিনী আমাকে যন্ত্রনা দেয়।