নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
নিজের অজ্ঞতা নিজের কাছে যতই ধরা পড়ছে প্রচলিত বিশ্বাসের প্রতি ততই অবিশ্বাস জন্মাছে!
মনোযোগ ভিন্নদিকে ঘুরিয়ে দেওয়া : জনসাধারণের মন ও মগজ নিয়ন্ত্রণের একটি মৌলিক কৌশল হল বিভ্রান্তির কৌশল বা মানুষের মনোযোগ ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার কৌশল।তুচ্ছ বিষয় নিয়ে অনবরত সংবাদ প্রকাশ করে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু এবং রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অভিজাতরা নিজেদের স্বার্থে যেসব পরিবর্তন ঘটাচ্ছে, সেগুলি থেকে জনগণের নজর ভিন্নদিকে ঘুরিয়ে দেওয়া হয় এই কৌশল।বিজ্ঞান, অর্থনীতি, মনোবিজ্ঞান, স্নায়ুবিজ্ঞান এবং সাইবারনেটিক্সের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় জ্ঞানের প্রতি জনগণের আগ্রহ প্রতিরোধ করার জন্যও মনোযোগ বিক্ষিপ্ত করার এই কৌশল ব্যবহার করা হয়।“জনসাধারণের মনোযোগ সত্যিকারের সামাজিক সমস্যা থেকে দূরে সরে গেছে, প্রকৃতপক্ষে কোনো গুরুত্ব নাই এমন জিনিস নিয়ে তাদেরকে ব্যস্ত রাখা হয়েছে। জনসাধারণকে ব্যস্ত, ব্যস্ত, ব্যস্ত, ভাবার সময় নাই, খামার এবং অন্যান্য প্রাণীদের কাছে ফিরে যাও এমন ভাবে রাখতে হবে।” (Silent Weapons for Quiet War বইয়ের একটি উদ্ধৃতি)।
সমস্যা সৃষ্টি করে সমাধান প্রস্তাব করা: এই পদ্ধতিকে ‘সমস্যা-প্রতিক্রিয়া-সমাধান’ পদ্ধতিও বলা হয়।এই পদ্ধতিতে একটি সমস্যা তৈরি করা হয় এমন একটা ‘পরিস্থিতি’ তৈরি করে, যা জনসাধারণের মধ্যে কিছু প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে, সুতরাং আপনি যে পদক্ষেপগুলি গ্রহণ করতে চান সেসবের মধ্যে এটিই প্রধান। উদাহরণস্বরূপ: শহরে সহিংসতা ছড়িয়ে যেতে ও তা তীব্রতর হতে দেওয়া বা রক্তাক্ত হামলার ব্যবস্থা করা, যাতে জনগণ নিজেরাই তাদের স্বাধীনতা খর্ব করে নিরাপত্তা আইন এবং নীতি বাস্তবায়নের আবেদন জানায়। অথবা, অর্থনৈতিক সংকট সৃষ্টি করে দরকারি মন্দকাজ হিসেবে সামাজিক অধিকার এবং সরকারের জনসেবামূলক কর্মসূচী স্থগিত করার প্রেক্ষাপট তৈরি করা।
ধীরে ধীরে গ্রহণ করানোর কৌশল : অগ্রহণযোগ্য জিনিসকে গ্রহণযোগ্য করে তুলতে সেটি ধীরে ধীরে একটানা কয়েক বছর ধরে প্রয়োগ করা। এই কৌশলেই মূলত ১৯৮০ এবং ১৯৯০-এর দশকে নতুন আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থা (নিওলিবারেলিজম) আরোপ করা হয়েছিল, যার বৈশিষ্ট্যগুলি হলো—রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ শিথিল, বেসরকারিকরণ, অনিশ্চয়তা, নমনীয়তা, ব্যাপক বেকারত্ব, কম মজুরি এবং ভাল আয়ের গ্যারান্টি না থাকা।ধীরে ধীরে এতগুলি পরিবর্তন নিয়ে আসা হয়েছিল বলে আমাদের চোখে লাগে নি। কিন্তু সেগুলি যদি একবারে প্রয়োগ করা হতো, তাহলে তা একটি বিপ্লব হিসেবে গণ্য হত।
সময়ক্ষেপণ কৌশল: কোনো অজনপ্রিয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করানোর আরেকটি উপায় হলো সেটিকে সঙ্গে সঙ্গে বাস্তবায়ন না করে ভবিষ্যতে বাস্তবায়নের কথা বলা এবং ভবিষ্যতের জন্য ‘বেদনাদায়ক ও প্রয়োজনীয়’ হিসাবে উপস্থাপন করা।তাৎক্ষণিক ভাবে জবাই হওয়া থেকে রেহাই পাওয়ার বদলে ভবিষ্যতের উৎসর্গ মেনে নেওয়া সহজ।প্রথমত, কারণ তাৎক্ষণিকভাবে তা ব্যবহার করা হয় নি। তারপরে, জনসাধারণ, জনগণের মধ্যে সবসময় নির্লিপ্ত ভাবে এই প্রত্যাশা করার প্রবণতা আছে যে, ‘আগামিকাল সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে’ এবং যে ক্ষতি প্রয়োজন, তা হয়তো এড়ানো যাবে।এই কৌশলের মাধ্যমে জনসাধারণকে পরিবর্তনের ধারণায় অভ্যস্ত হওয়ার জন্য পর্যাপ্ত সময় দেয়া হয় এবং যখন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের সময় আসে, তখন বিনা প্রতিরোধে গ্রহণ করার জন্য মানসিকভাবে তৈরি করা হয়।
অবুঝ শিশু হিসেবে জনসাধারণের কাছে যাওয়া : সাধারণ মানুষের প্রতি বেশির ভাগ বিজ্ঞাপনে বক্তৃতা, যুক্তি, মানুষ এবং বিশেষত বাচ্চাদের স্বরভঙ্গি ব্যবহার করা হয়। প্রায়শই দুর্বলতার কাছাকাছি, যেন দর্শক এক ছোট বাচ্চা বা তার মানসিক ভাবে ঘাটতি রয়েছে।দর্শককে প্রতারিত করার জন্য একজন যতই বেশি চেষ্টা করে, ততই সে তাকে শিশু হিসেবে উপস্থাপন করার পদ্ধতি অবলম্বন করে।
কেন? “যদি কোনো ব্যক্তি কারো কাছে গিয়ে তাকে মাত্র ১২ বছর বয়সী বা তার চেয়ে ছোট শিশু গণ্য করার ভাব দেখায়, তখন যার কাছে যাওয়া হয়েছে সেই মানুষটিও নিজের অজান্তেই নিজেকে শিশুই ভাবা শুরু করে এবং কোনো বিচার-বিবেচনামূলক প্রতিক্রিয়া জানাতে ব্যর্থ হয়।” (Silent Weapons for Quiet War বইয়ের একটি উদ্ধৃতি)।
বুদ্ধির চেয়ে আবেগের দিকটি বেশি ব্যবহার করা: যুক্তিসঙ্গত বিশ্লেষণে শর্ট সার্কিট তৈরির জন্য আবেগের অস্ত্র ব্যবহার করা একটি ক্ল্যাসিক কৌশল। যার মাধ্যমে ব্যক্তির সমালোচনামূলক বোধকেও দাবিয়ে দেওয়া যায়। এছাড়া আবেগের ব্যবহার করে অবচেতন মনের দরজা খুলে তাতে নানা ধারণা, আকাঙ্ক্ষা, ভয় এবং উদ্বেগ, অযৌক্তিক আচরণের তাড়না বা প্ররোচনার বীজ বপণ করে দেওয়া হয়।
জনগণকে অজ্ঞ ও জ্ঞানগতভাবে অবিকশিত অবস্থায় রাখা : নিয়ন্ত্রণ ও দাসত্বের জন্য ব্যবহৃত প্রযুক্তি ও পদ্ধতির বুঝ সম্পর্কে জনসাধারণকে অজ্ঞ করে রাখা। “সমাজের নিচুতলার মানুষদেরকে দেওয়া শিক্ষার মানও নিচু করে রাখা, যাতে নিম্নবিত্ত এবং উচ্চবিত্ত শ্রেণির মধ্যে জ্ঞানের যে পার্থক্য আছে, তা অতিক্রম করা নিম্ন শ্রেণীর পক্ষে সবসময়ই অসম্ভব হয়েই থাকে।” (Silent Weapons for Quiet War বইয়ের একটি উদ্ধৃতি)।
মাঝারি মান নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে জনগণকে উৎসাহিত করা : জনগণকে বিশ্বাস করতে প্ররোচিত করা যে, সত্য হলো বোকা, অশ্লীল এবং অশিক্ষিত…।
নিজেকে দোষ দেয়ার প্রবণতাকে শক্তিশালী করা: জনগণের মধ্যে তাদের দুর্ভাগ্যের জন্য তাদের নিজেদের বুদ্ধিমত্তার ব্যর্থতাকে, তাদের সক্ষমতা এবং তাদের প্রচেষ্টাকে দোষ দেওয়ার প্রবণতাকে শক্তিশালী করা। সুতরাং, অর্থনৈতিক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার পরিবর্তে জনসাধারণ অসহায়ত্ব এবং অপরাধবোধে নিমজ্জিত হয়ে যায়, যা হতাশার সৃষ্টি করে, যার প্রভাবগুলির মধ্যে একটি হল তার মধ্যে নিষ্ক্রিয়তা সৃষ্টি করা। আর সক্রিয়তা ছাড়া কোনো বিপ্লব হয় না!
লোকে নিজেকে যতটা জানে, তার চেয়েও তাকে বেশি জানা: গত ৫০ বছরে অ্যাকসিলারেটেড সায়েন্সে যে অগ্রগতি সাধিত হয়েছে, তার ফলে জনসাধারণের জ্ঞান এবং ক্ষমতাবান অভিজাতদের জ্ঞানের মধ্যে এমন এক ফারাক তৈরি হয়েছে, যা উত্তোরত্তর বেড়ে চলেছে। জীববিজ্ঞান, স্নায়ুজীববিজ্ঞান এবং প্রায়োগিক মনোবিজ্ঞানের দরুন এই সিস্টেম শারীরিক এবং মানসিক উভয় দিক থেকে মানবসত্তার এক দারুণ এবং উন্নত বুঝ অর্জন করেছে। এই সিস্টেম সাধারণ মানুষকে তাদের নিজেদের চেয়ে বেশি চেনে, বোঝে এবং জানে।
এর অর্থ হলো, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই, সিস্টেমটি ব্যক্তির ওপর ব্যক্তির নিজের চেয়ে বেশি নিয়ন্ত্রণ এবং ক্ষমতা প্রয়োগ করে।- চমস্কি
©somewhere in net ltd.
১| ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:২৯
মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:
যেখানে মিডিয়া নিজেই নিয়ন্ত্রিত সেখানে সে মানুষকে কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করবে?