নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

দরিদ্র দেশের জনসংখ্যা কে জনশক্তি তে পরিণত করতে হলে কর্মমুখী শিক্ষার বিকল্প নেই।

সৈয়দ কুতুব

নিজের অজ্ঞতা নিজের কাছে যতই ধরা পড়ছে প্রচলিত বিশ্বাসের প্রতি ততই অবিশ্বাস জন্মাছে!

সৈয়দ কুতুব › বিস্তারিত পোস্টঃ

শান্তার পারিবারের একদিন !

১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:৫২


সকালবেলা বাবার ডাকাডাকিতে ঘুম ভাঙে শান্তার। চোখ খুলে দেখে বাবা ফেইসবুকে পাওয়া একটি নিউজ শান্তাকে দেখানোর জন্য হাসি মুখে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। শান্তা আড়মোড়া ভেঙে বলে, "কি হয়েছে বাবা? সকাল বেলা কি শুরু করলা? বাবা বলেন, আরে ওঠ তাড়াতাড়ি! দেখ ফেইসবুকে কি লেখা রয়েছে"! শান্তা ফেইসবুকের নিউজ টি দেখে খুব হ্যাপী ফিল করতে শুরু করে। নিউজটি ছিলো বাংলাদেশ ব্যাংকে যারা চাকুরি করে তাদের লাঞ্চ ভাতা এখন থেকে ৪০০ টাকা। পূর্বে লাঞ্চ ভাতা ছিলো ২০০ টাকা। শান্তার খুশি হওয়ার কারণ হলো সে অতি সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারি পরিচালক হিসাবে সুপারিশ প্রাপ্ত হয়েছে। শান্তা জয়েন করার পূর্বেই লাঞ্চ ভাতা বাড়লো। শোনা যাচ্ছে সামনে নাকি মহার্ঘ ভাতাও দেয়া হবে। শান্তার জীবনে এখন শুধু খুশি আর খুশি।

শান্তা এবং তার পরিবার বাস করে ঢাকার নাখালপাড়াতে। শান্তারা ভাইবোন দুইজন। শান্তা পরিবারের বড়ো মেয়ে। শান্তার বাবা এক সময় প্রবাসে ছিলেন। বর্তমানে নিজের বাড়ির ভাড়া তুলে সংসার চালান। শান্তার মা একজন গৃহিনী এবং ছোট ভাই আজাদ সরকারি চাকুরিতে পরীক্ষা দিচ্ছে; এখন ও বেকার। আজাদের বেস্ট ফ্রেন্ড হচ্ছে সৈয়দ কুতুব । শান্তার বাবা মেয়েকে বললেন, " তাড়াতাড়ি হাত মুখ ধুয়ে নে, আজ তোমাদের আম্মু সকালের নাস্তায় খিচুড়ি রান্না করেছে। সাথে আছে হাঁসের মাংস ভুনা "! শান্তা ফ্রেশ হয়ে টেবিলে খাবার বেড়ে নিচ্ছিল সে সময় শান্তাদের বাসার কলিং বেল বেজে উঠলো। শান্তা দরজা খুলতেই দেখে তাদের ভাড়াটিয়া বৃষ্টির মা বাসার সামনে দাঁড়িয়ে আছেন৷ শান্তা জিজ্ঞাসা করলো, " কি ব্যাপার বৃষ্টির মা, সময় কই থেকে আসলেন? গার্মেন্টস যাও নাই আজকে"? " বৃষ্টির মা মুখ মলিন করে বলে, কাজ চইলা গেছে গা "। কেন চাকুরি গেল তোমার? পাল্টা প্রশ্ন করে শান্তা "। " বৃষ্টির মা বলে, আমাদের গার্মেন্টস বন্ধ হইয়া যাইবো। মালিক কে পুলিশ গ্রেফতার করসে"।

শান্তার মনে পড়ে পুরাতন কথা। বৃষ্টির মাকে রুম ভাড়া দেয়ার সময় শান্তা জিজ্ঞাসা করেছিল সে কোথায় কাজ করে। বৃষ্টির আম্মা বলেছিল তিনি বেক্সিমকো গ্রুপের পোশাক কারখানায় কাজ করেন। শান্তা বাস্তবে ফিরে এসে মোবাইল থেকে ডেইলি স্টার অনলাইন নিউজ দেখতে থাকে। একটি লেখায় তার চোখ আটকে যায়। অর্ডারের অভাবে বেক্সিমকো কোম্পানির ৪০ হাজার কর্মী নাকি ছাটাই হয়ে যাবে। তবে তাদের জন্য ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত বেতনের ব্যবস্থা করে দিয়েছে সরকার। এরপর শান্তা বৃষ্টির মাকে স্বান্তনা দেয়। শান্তা সকালে নাস্তা করে ফোন দেয় তার ছেলে বন্ধু আজগর কে। আজগর একজন ব্যাংকার। আজগর কে শান্তা বলে আগামীকাল শুক্রবার দেখা করার জন্য। আজগর রাজি হয়। শান্তার মন সারাদিন খুব ফুরফুরে থাকে এবং বৃষ্টির মা যে শান্তার মায়ের সাথে দেখা করতে চেয়েছিল সেই কথা শান্তা তার মাকে বলতে ভুলে যায়।

শান্তার ভাই আজাদ বিকালে একটু হাঁটাহাটির জন্য বের হয়। সে একটি চায়ের দোকানে ঢুকে এবং সিগারেট ধরায়। চায়ের দোকানে বসে থাকা লোকজন দেশের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করছে। দুইজন কলেজ ছাত্রকে সিগারেট হাতে বেশ চিন্তিত স্বরে কথা বলতে দেখে। ১ম জন বলছিল, " দোস্ত নিউজ দেখেছিস, জুলাই আন্দোলনের অনেকে ছাত্রদের উপর হামলা হইতাসে! আমার ভয় লাগতেসে। কয়েকজন কে মেরেও ফেলসে। আমাদের যে কি অবস্থা হয় কে জানে"। ২য় জন বলে, " হ রে ভাই! আমার ও ডর করতেসে। নাওয়া খাওয়া বাদ দিয়ে সারাদিন রাস্তায় ছিলাম আর আন্দোলন করেছিলাম। এখন বাসা থেকে বের হতে ভয় লাগে"। অন্যদিকে আজাদের কানে চায়ের দোকানের আরো কিছু কথা কানে ভেসে আসছিল। দুইজন মুরুব্বি নিজেদের মধ্যে কথা বলছিলেন। ১ম মুরুব্বি : নির্বাচন নাকি ২০২৬ সালে হবে। ২য় মুরুব্বি : বিম্পির লাইগা সরকার ঠিক ঠাক দেশ সংস্কার ও করতে পারছে না। বিম্পি খালি নির্বাচন চায়। মুরুব্বিদের কথার মাঝখানে যুবক করে একজন বলতে শুরু করে, " চাচা মিয়া, আপনারা খালি বিম্পির দোষ দেখেন কেন? সরকার যে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না এইটা আপনাদের চোখে পড়ে না "? " ইজতেমা তে হুজুররা মারামারি করছে। এসব চোখে পড়ে না? আবার সারাদেশে দিনে দুপুরে ছিনতাই হচ্ছে সেটাও আপনাদের চোখে পড়ে না। আপনারা দ্রুত কেন নির্বাচন দরকার সেটা বুঝেন না। আপনারা টাকার বিনিময়ে ভোট বিক্রি করেন "। এই কথা শুনে মুরুব্বি দুইজন রেগে গিয়ে চা দোকান থেকে বের হয়ে যায়।

আজাদ চায়ের দোকান থেকে বের হয়ে বাসার দিকে যাচ্ছিল। এমন সময়ে সে দেখে বৃষ্টির বাবার মাথায়, হাত ও পায়ে ব্যান্ডেজ। বৃষ্টির মা'র সাপোর্ট ছাড়া তিনি চলতে পারছেন না। আজাদ জিজ্ঞাসা করে, "কি হয়েছে বৃষ্টির আব্বুর "? বৃষ্টির মার জবাব থেকে আজাদ বুঝতে পারে সরকারের লোক এবং কতিপয় ছাত্ররা মিলে রাস্তার পাশের ফুটপাত দখলমুক্ত করতে গিয়ে ব্যবসায়ীদের সাথে সংঘর্ষ হয়। বৃষ্টির বাবার ও সেখানে ব্যবসা ছিলো। বৃষ্টির বাবা বলেন, " আজাদ ভাই ! আমাগো অন্য কোথাও ব্যবসা করার জায়গা না দিয়া উচ্ছেদ করলে আমরা কেমনে চলুম"? ১০ বছর ধরে ব্যবসা করি ঐহানে। এই জায়গা ছাড়বার পারমু না "। আজাদ এই কথা শুনে মন খারাপ করে বাসায় ঢুকে দেখে থমথমে পরিস্থিতি ! শান্তা কান্নাকাটি করছে এবং তার মা স্বান্তনা দিচ্ছে। শান্তার বাবা বারবার কাকে যেন ফোনে ট্রায় করছে কিন্তু পাচ্ছেন না। আজাদকে দেখে বাবা বলেন, " কিরে কই ছিলি এতক্ষণ? আজগর দের ব্যাংকে ডাকাত পড়েছে "। সবাইকে জিম্মি করে রেখেছে "। এই কথা শুনে আজাদ দ্রুত টিভির রুমে চলে যায় এবং টিভি দেখতে বসে যায়। বাসার পরিবারের সবার মানসিক অবস্থা নিয়ে চিন্তা করতে থাকে আজাদ। আজাদ ভুলে যায় চায়ের দোকানের কথোপকথন ও বৃষ্টির বাবার বুকভরা আর্তনাদ।

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৯

পদাতিক চৌধুরি বলেছেন: পরিবর্তন হয় উপরের। পদদলিত হয় সাধারণ মানুষ। শান্তারা খুঁজে পাক নুতন ঠিকানা নুতন...

১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:০৩

সৈয়দ কুতুব বলেছেন: আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

২| ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৪৬

শূন্য সারমর্ম বলেছেন:


সৈয়দ কুতুবের মন কাঁদে মানুষের জন্য?

২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:২৬

সৈয়দ কুতুব বলেছেন: না। সৈয়দ কুতুব খালি রাত দিন ঘুমায়।

৩| ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৪৮

শেরজা তপন বলেছেন: সব গল্প দেখি এক জায়গায় লইয়া আইছেন সৈয়দ কুতুব।

২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:২৭

সৈয়দ কুতুব বলেছেন: আমরা সবাই একসূত্রে গাঁথা।

৪| ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:০৯

রাজীব নুর বলেছেন: হ্যা এরকমই হয়।
দরিদ্র দেশে জন্ম নেওয়া একটা অপরাধ।

২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:১৫

সৈয়দ কুতুব বলেছেন: সেটাই!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.