নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

দরিদ্র দেশের জনসংখ্যা কে জনশক্তি তে পরিণত করতে হলে কর্মমুখী শিক্ষার বিকল্প নেই।

সৈয়দ কুতুব

নিজের অজ্ঞতা নিজের কাছে যতই ধরা পড়ছে প্রচলিত বিশ্বাসের প্রতি ততই অবিশ্বাস জন্মাছে!

সৈয়দ কুতুব › বিস্তারিত পোস্টঃ

ব্লগার নাহল তরকারি হতে অনুপ্রাণিত : একজন সফল ফ্রিলান্সারের গল্প !

২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:০৯


আমাদের সামু ব্লগে একজন নির্ভেজাল ও শান্তিবাদী ব্লগার রয়েছেন যিনি ' নাহল তরকারি' নামে পরিচিত। তিনি খুব সম্ভবত একজন ভবিষ্যৎ ফ্রিলান্সার হওয়ার পথে অগ্রসর হয়েছেন। তিনি বর্তমানে ফ্রিলান্সিং করে স্বাবলম্বী হচ্ছে এমন যুবক দের নিয়ে লিখতে ভালোবাসেন । তরুণেরা দ্রুত কাজ শিখে কর্ম করে পরিবার ও দেশের সম্পদ হবেন এমন প্রত্যাশা সবার। তবে ফ্রিলান্সিং জিনিস টা মোটেও সহজ ছিলো না বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে। আমি নিজেই ফ্রিলান্সিং শিখতে গিয়ে পরিবারের প্রবল চাপের মুখে পড়েছি। তবে নিজে না হতে পারলেও একজন দরিদ্র কিশোরকে আমি অর্থ দিয়ে, বুদ্ধি দিয়ে ও গাইডলাইন দিয়ে তার পরিবারের দারিদ্র্যতা দূরীকরণে সহায়তা করেছিলাম। আজকে সে ঘটনা ব্লগে শেয়ার করছি।

তখন ২০১৬-১৭ সালের দিকে হবে। আমাদের মিরপুরে নিজের জায়গা তখনও আওয়ামী লীগের এমপি পুরোপুরি দখল করতে পারেনি। মামলা-মোকদ্দমা, হুমকি ও হয়রানি চলছে। এই সমস্যার কারণে আমরা দালান তুলতে পারছিলাম না। দেয়াল পাকা, ছাদ টিনশেড করে এক সাইডে আমরা থাকতাম এবং অন্য সাইডে ৮/১০ টি রুম ভাড়ার জন্য তুলে দিয়েছিলাম। নিম্নবিত্ত পরিবার যেমন: শ্রমিক, ভিক্ষুক, কাজের বুয়া সহ বিভিন্ন শ্রমজীবী মানুষ সে সব রুম ভাড়া নিয়েছিল। তো একবার এক ৪৫/৫০ বছরের মহিলা ও তার নাতি আমাদের রুম ভাড়া নেয়। মহিলা মানুষের বাসায় কাজ করতো এবং তার নাতি একটি সরকারি মাধ্যমিক স্কুলে ক্লাস ৭/৮ এ পড়তো; ছেলেটার নাম ছিলো জাকির। একবার আমাদের বাসায় যিনি কাজ করতেন তার বাচ্চা গ্রামে পানিতে পড়ে মারা যাওয়ার শোকে কাজ ছেড়ে দিয়ে চলে যান। তখন জাকিরের নানী আমাদের বাসায় কাজ শুরু করে। তখন আমরা আস্তে আস্তে জানতে পারি জাকিরের বাবা ও মা লঞ্চ এক্সিডেন্টে মারা গেছে। এই কথা শুনে জাকিরের প্রতি আমার মায়া অনুভব হয়।

২০১৮ সালে আমি ভার্সিটিতে ভর্তি হই। এরপর শুরু হয় নতুন জীবন। আগে পরিবার থেকে তেমন টাকা পয়সা পেতাম না। তবে অনার্সে ওঠার পর আমি ভরপুর টিউশন পাইতে শুরু করি। কোচিং সেন্টারে ক্লাস নিতাম। অনার্স পাশ করে চাকুরি খুঁজবো এমন ইচ্ছা ছিলো না। ইচ্ছা ছিলো হয় ব্যবসা করবো না হয় ফ্রিলান্সার হবো। এদিকে পরিচিতি পাওয়ায় আস্তে আস্তে স্টুডেন্টদের অভিভাবকরা ব্যাচ খোলার অনুরোধ করে। আমিও তখন ভার্সিটির ক্লাস শেষ করে রাত ৮ টার পর সপ্তাহে তিনদিন করে ২ টা ব্যাচ পড়াই। যাই হউক টাকা আসতে থাকে ভালোই। এরমধ্যে ল্যাপটপ কিনি এবং পরিকল্পনা করতে থাকি একটা ব্যাচ ছেড়ে দিবো এবং সে সময়ে কোর্স করে ফ্রিলান্সার হবো, ডলার কামাবো, বাড়ি গাড়ি করবো। কিন্তু সৃষ্টিকর্তা আমার ভাগ্যে অন্য কিছু রেখেছেন। আমার দুই বন্ধু আমাকে প্রস্তাব দেয় একটি রেস্টুরেন্ট খোলার জন্য। একজন ঢাবির women and gender স্টাডিজ বিভাগে পড়তো এবং অন্য জন ঢাকা কলেজে ম্যানেজমেন্টে পড়তো। রেস্টুরেন্ট ব্যবসায় লাভ বেশি এমন ভুল বুঝিয়ে আমাকে তারা পার্টনার করে। ল্যাপটপ আর তেমন ব্যবহার করা হয় না ভার্সিটির প্রজেক্ট এবং প্রেজেন্টেশন ছাড়া। রেস্টুরেন্টের পিছনে সময় দিতে গিয়ে ব্যাচের স্টুডেন্টদের রেজাল্ট খারাপ হয় এবং নিজের সিজিও ডাউন হতে থাকে।

জাকির ক্লাস নাইনে উঠার পর আমার কাছে আসে কোন গ্রুপ নিবে তার পরামর্শ নেয়ার জন্য। বলে রাখা ভালো জাকির মেধাবী ছাত্র হলেও তার আলুর দোষ আছে। তার মধ্যে ফুটানি দেখানোর প্রবণতা আছে। সে বাড়িওয়ালার মেয়েদের সাথে প্রেম করতো। হাতে নাতে ধরা পড়ায় অনেকবার মাইর খাইসে। তবে আমরাও বাড়িওয়ালা ছিলাম দেখে বিষয় টি ম্যানেজ করে দিতাম। জাকির কে আমি কমার্স নিতে বলি । জাকির জিপিএ ফাইভ পেয়ে এসএসসি পাশ করে। অন্যদিকে আমি আছি আমার রেস্টুরেন্ট ব্যবসা নিয়ে। জাকির মেট্রিক পাশ করার পর তার নানী আমাকে অনুরোধ করে আমাদের রেস্টুরেন্টে যাতে তার নাতিকে কাজ দেই। ব্যবসা শিখলে পড়ে নিজে ছোট কিছু করে খেতে পারবে কিন্তু আমাদের ব্যবসার অবস্থা বেশি ভালো ছিলো না। আমার পরিবার জাকিরের মাধ্যমে ব্যবসার আসল পরিস্থিতি জেনে যেতে পারে এই ভয়ে আমি জাকির কে রেস্টুরেন্টে কাজ দেই না। আমি তার নানী কে চিন্তা করতে মানা করি এবং জাকির কে নিজের বন্ধুর একটি কম্পিউটার সেন্টারে বেসিক কম্পিউটার এবং গ্রাফিক্স ডিজাইন শেখার ব্যবস্থা করে দেই। জাকিরের নানী এবং জাকির শুরুতে রাজি ছিলো না। কারণ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে কাজ করলেই মাস শেষে বেতন কিন্তু কাজ শিখে কবে কাজ পাবে, আবার নাকি ইংরেজি স্পোকেন শেখা লাগবে এসব তো অনেক সময়ের ব্যাপার। আমি ৩ হাজার টাকা দিয়ে স্পোকেন ইংরেজি শিক্ষার ব্যবস্থা করে দেই। বেসিক কম্পিউটার শেখার পর জাকির আমার বন্ধুর প্রতিষ্ঠানে ট্রেইনারের সহকারি হিসাবে কাজ করতে শুরু করে। পাশাপাশি সে অবসর সময়ে প্রাকটিস করতো।

২০১৯ সালের শেষ দিকে আমরা জমির মামলায় হেরে যাই। এতে আমাদের বাড়িঘর ভেঙে ফেলা হয়। জাকির এবং তার নানী আমাদের বাড়ি ছেড়ে চলে যায় কিন্তু আমাদের যোগাযোগ থাকে। জাকিরের নানী মেসে রান্নার কাজ নেয় এবং আমরা ভাড়া বাসায় উঠি। ২০২০ সালের মার্চ মাসে করোনা বাংলাদেশে আসে। তার ২/৩ মাস পর আমরা রেস্টুরেন্ট বন্ধ করে দিতে বাধ্য হই। আমাদের ভার্সিটির ক্লাস অনলাইনে চালু করা হয়। জাকিরের নানীর মেসের রান্না বন্ধ হয়ে যায়। জাকির আমার কাছ থেকে একটি ভ্যান ও কিছু টাকা ধার নিয়ে সবজি বিক্রি শুরু করে। পাশাপাশি রাতের দিকে গিয়ে আমার বন্ধুর প্রতিষ্ঠানে প্রাকটিস করে। বন্ধুর প্রতিষ্ঠানে তখন ছাত্র ছাত্রী ছিলো না বললেই চলে। তবুও সে প্রতিষ্ঠান বন্ধ করার পক্ষপাতী ছিলো না। এখনো তার প্রতিষ্ঠান চালু আছে। অন্যদিকে জাকির কে আমার বন্ধু ফাইভারে একাউন্ট খুলে দেয়। জাকির দিনে সবজি বিক্রি করে এবং বাকি সময় কম্পিউটার নিয়ে বসে থাকে। সমস্যা হয় রাতের বেলায় আমার বন্ধুর প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার ফলে সে একটিভ থাকতে পারতো না। আমার কাছে এসে নিজের সমস্যার কথা জানায়। আমি তখন তাকে বুদ্ধি দেই অনলাইন সার্ভে করার জন্য। জাকিরের নানী একটা ওয়ালটন স্মার্ট ফোন কিনেছিল ৫/৬ হাজার টাকায়। আমি জাকির কে ১০০০ টাকা দিয়ে আইপি কিনে দেই যাতে মোবাইলে সে সার্ভে করতে পারে। ইংরেজি কোর্স করা থাকায় এবং বুদ্ধিজ্ঞান থাকায় সে ৩/৪ মাসে ভালো টাকা ইনকাম করে। অনলাইন সার্ভে মূলত একধরণের স্ক্যাম কাজ যা বিদেশের ওয়েবসাইটে বাংলাদেশ থেকে করা হয়। ! তবে বাংলাদেশের অনেক পোলাপান এসব কাজ করে বহু টাকা কামাইসে। বিদেশিদের ডলার লুটতে মজাই আলাদা। জাকির ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর বা অক্টোবর মাসে পিসি বিল্ডআপ করে। এখন নিজের বাসায় বসে সে অর্ডারের জন্য অনলাইনে সময় দিতে থাকে। পাশাপাশি সার্ভে কাজ করে নিজের ও পরিবারের হাত খরচ চালায়। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে জাকির প্রথম অর্ডার পায়। এরপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয় নি। এখন সে লেভেল ২ সেলার, একাউন্ট আছে তিনটি ! জাকির বিয়ে করেছে একটা বাচ্চাও আছে।

জাকির লেভেল ওয়ান সেলার হওয়ার পর থেকে তার সাথে যোগাযোগ কম হয়। বিয়ে করেছে জানায় নি, নানী মারা গেছে তাও জানায় নি। এখন সে ভালো পরিবেশে থাকে। একবার আমি ফোন দিয়েছিলাম কেমন আছে জানার জন্য খুব ব্যস্ততা দেখিয়ে ফোন রেখে দেয়। আমিও বিজি হয়ে পড়ি নিজের রিজিকের সন্ধানে। জাকিরের সাথে দেখা -সাক্ষাৎ হওয়ার ভবিষ্যতে কোন সম্ভাবনা নেই।

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:৪৪

শূন্য সারমর্ম বলেছেন:


ট্যাক্টরের কালার লাল থেকে নীল হলো; জাকির হচ্ছে ইন্ডিভিউজুয়াল সাকসেস স্টোরী,যা আপনার কাছে হাতে খড়ি হয়েছিলো,তবে ফ্রিলান্সিং এ বাঙালাীদের অবস্থা ভালো না।

ডাটা ঘাটলে ব্যাপারগুলো পরিস্কার হবে আরও।

২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:৫৩

সৈয়দ কুতুব বলেছেন: আরেকজনের ট্রাক্টর কিভাবে রঙ না করে আপনি জমিতে ব্যবহার করবেন? কেনু খাবেন তো। :P। ব্লগার নাহল তরকারির এমন সাকসেস স্টোরি আমরা শুনবো ব্লগে।

২| ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:৫৮

শূন্য সারমর্ম বলেছেন:


সবাই ভালো করুক,উনি উনার নামের জোরেই সাকসেস বয়ে আনবে। ঢাকায় কোথায় থাকেন আপনি?

২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:০৪

সৈয়দ কুতুব বলেছেন: এখন ঢাকায় থাকা হয় না।

৩| ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:১৪

আঁধারের যুবরাজ বলেছেন: মিরপুরের কোথায় থাকতেন ?

২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:২৪

সৈয়দ কুতুব বলেছেন: মিরপুর ১২ নম্বর!

৪| ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:৩৭

আঁধারের যুবরাজ বলেছেন: লেখক বলেছেন: মিরপুর ১২ নম্বর!

- ওই এলাকার এমপি অনেক প্রভাবশালী ছিল। আর একজন ছিল আসলাম এমপি ,সেও আওয়ামীলীগের ছিল। ভূমি দস্যু হিসেবে কুখ্যাত ছিল।

২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:৪৮

সৈয়দ কুতুব বলেছেন: অনেক যুদ্ধ করেছি আমরা ! এরপর ঢাকা ছেড়েছি। এখন শুনছি আবার নাকি জায়গা ফেরত পাইতে পারি। এমপি সাহেব পলায়ছেন। আমাদের ভাগ্য এতই খারাপ যে গ্রামের জায়গাও সেইম ভাবে দখল করে সে এলাকার এমপি আমাদের চাপ দিয়ে জমি বিক্রি করায়। পরে জমির বর্তমান বাজার মূল্যের চার ভাগের এক ভাগ দিয়ে আমাদের থেকে নিয়ে নিয়েছে। আওয়ামী লীগের ১৫ বছর কাম ছিল এটাই।

৫| ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:৫৪

আঁধারের যুবরাজ বলেছেন: দেখুন যদি মিরপুরের জমিটি উদ্ধার করতে পারেন।

২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:৫৮

সৈয়দ কুতুব বলেছেন: ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.