নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

দরিদ্র দেশের জনসংখ্যা কে জনশক্তি তে পরিণত করতে হলে কর্মমুখী শিক্ষার বিকল্প নেই।

সৈয়দ কুতুব

নিজের অজ্ঞতা নিজের কাছে যতই ধরা পড়ছে প্রচলিত বিশ্বাসের প্রতি ততই অবিশ্বাস জন্মাছে!

সৈয়দ কুতুব › বিস্তারিত পোস্টঃ

ইসার দিনে ইসা, মুসার দিনে মুসা: মাহমুদুর রহমানের ক্ষেত্রে এই নীতি কতটা যুক্তিসঙ্গত ?

১৫ ই মার্চ, ২০২৫ রাত ১০:৪৫


রাজনীতির ইতিহাসে কিছু চরিত্র থাকে, যাদের অবস্থান পরিবর্তন কোনো যুক্তি দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায় না—অন্তত নীতি ও আদর্শের পরিপ্রেক্ষিতে নয়। তাদের বক্তব্য, বিশ্বাস ও অবস্থান বদলায় সময়ের স্রোতে, ক্ষমতার পালাবদলে, পরিস্থিতির প্রয়োজনে নয়, বরং ব্যক্তিগত সুবিধার খাতিরে। মাহমুদুর রহমান সেই তালিকারই এক চমকপ্রদ নাম।

এক সময় তিনি ছিলেন ভারত-বান্ধব, ভারতের সঙ্গে অর্থনৈতিক ও কৌশলগত সম্পর্কের পক্ষে একনিষ্ঠ সমর্থক। ২০০১-২০০৬ সালে বিএনপি-জামায়াত সরকারের সময় তিনি ছিলেন ভারতের প্রতি উদার। ২০০৫ সালে ভারত-বাংলাদেশ বিদ্যুৎ আমদানি চুক্তির পক্ষে সাফাই গেয়ে বলেছিলেন, “বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়নের জন্য ভারতের সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারিত্ব অপরিহার্য। এছাড়াও, বিএনপি সরকারের সময় তিনি ভারত-বাংলাদেশ ট্রানজিট চুক্তিকে উন্নয়নের অংশ হিসেবে দেখেছিলেন। কিন্তু ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর মাহমুদুর রহমান যেন অন্য এক মানুষ হয়ে উঠলেন ! ভারতের বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ তুলতে লাগলেন। ২০১৩ সালে তার সম্পাদিত আমার দেশ পত্রিকায় প্রকাশিত এক সম্পাদকীয়তে তিনি লিখলেন, “ভারত বাংলাদেশের স্বার্থ ধ্বংস করছে, আধিপত্যবাদী নীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোই প্রকৃত দেশপ্রেম।”

একই মানুষ, দুই ভিন্ন সময়, দুই বিপরীতমুখী বক্তব্য। সময়ের সঙ্গে মত বদলানো দোষের কিছু নয়, যদি তা বাস্তবতার নিরিখে, বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর স্বার্থে হয়। কিন্তু মাহমুদুর রহমানের এই পরিবর্তনের পেছনে কোনো আদর্শিক উপলব্ধি কাজ করেনি, বরং স্পষ্ট ছিল সুবিধাবাদী রাজনীতির ছায়া।

এই দ্বিচারিতার ব্যাখ্যা দিতে গেলে মনে পড়ে শেরে বাংলা একে ফজলুল হকের সেই বিখ্যাত উক্তি—"ইসার দিনে ইসা, মুসার দিনে মুসা !" একসময় তিনি মুসলিমদের স্বতন্ত্র ভোটাধিকারের পক্ষে ছিলেন, কারণ উপনিবেশিক ভারতে মুসলমানদের রাজনৈতিক পরিচিতি টিকিয়ে রাখাই তখন ছিল সময়ের দাবি। কিন্তু যখন বৃহত্তর স্বার্থে একক নির্বাচনের প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হলো, তখন তিনি সেই অবস্থান নিলেন। তার এই পরিবর্তন ছিল সময়ের বাস্তবতা ও জনগণের কল্যাণের স্বার্থে।

কিন্তু মাহমুদুর রহমানের ক্ষেত্রে এই উক্তি প্রয়োগ করা কি ন্যায্য ? শেরে বাংলা রাজনৈতিক কৌশলের অংশ হিসেবে অবস্থান বদলেছিলেন, কিন্তু তার সিদ্ধান্তের মূলে ছিল জনস্বার্থ। মাহমুদুর রহমানের অবস্থান পরিবর্তনের পেছনে কোনো বৃহত্তর রাজনৈতিক দর্শন ছিল না, বরং ছিল ক্ষমতার ভারসাম্য বদলের সঙ্গে সঙ্গে সুবিধা লুটার প্রবণতা।

রাজনীতিতে নীতি পরিবর্তন নতুন কিছু নয়। ইতিহাস বলে, বহু বড় নেতা, বহু তাত্ত্বিক, বহু রাষ্ট্রনায়ক সময়ের প্রয়োজনে নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গি শাণিত করেছেন, বদলেছেন, নতুন বাস্তবতাকে স্বীকৃতি দিয়েছেন। কিন্তু পরিবর্তন তখনই গ্রহণযোগ্য হয়, যখন তার পেছনে থাকে গভীর আত্মবিশ্বাস ও নীতিগত সততা। যারা পরিবর্তিত হন শুধু পরিস্থিতির চাপে, তাদের ইতিহাস মনে রাখে না। আর যারা বদলায় শুধুই সুবিধার খাতিরে, ইতিহাস তাদের চিহ্নিত করে সুযোগসন্ধানী হিসেবে।

সময়ের প্রয়োজন বুঝে অবস্থান বদল করা এক ধরনের দূরদর্শিতা, কিন্তু যখন পরিবর্তন হয়ে দাঁড়ায় ক্ষমতা ও স্বার্থের সঙ্গে তাল মেলানোর খেলা, তখন সেটি হয়ে যায় এক রঙ বদলের নাটক। মাহমুদুর রহমানের অবস্থান বদল ঠিক সেই ধরনেরই এক পরিবর্তন—যেখানে আদর্শের চেয়ে প্রাধান্য পেয়েছে সুবিধাবাদ। ইতিহাসের শিক্ষাই হলো, ক্ষমতার পালা বদল হয়, মানুষ আসে যায়, কিন্তু সত্যের জায়গা কখনো পাল্টায় না। মানুষ কখনো কখনো ভুলে যেতে পারে, কিন্তু ইতিহাস কখনো ভোলে না।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.