![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
নিজের অজ্ঞতা নিজের কাছে যতই ধরা পড়ছে প্রচলিত বিশ্বাসের প্রতি ততই অবিশ্বাস জন্মাছে!
প্রাপ্তবয়স্ক হয়েও দায়িত্ব নিতে না চাওয়া, বাস্তবতা এড়িয়ে চলা এবং জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত থেকে পালিয়ে যাওয়ার প্রবণতা অনেকের মাঝেই দেখা যায়। তারা শৈশবের মতো স্বাধীন, নিরুদ্বেগ জীবন কাটাতে চায়, যেখানে কোনো দায়িত্ব নেই, বাধ্যবাধকতা নেই। এই মানসিক অবস্থাকেই বলা হয় "পিটার প্যান সিনড্রোম"। এটি কোনো স্বীকৃত মানসিক রোগ নয়, তবে ব্যক্তি ও সমাজের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা।
পিটার প্যান সিনড্রোমে আক্রান্ত ব্যক্তিরা শৈশব বা কৈশোরের জীবনযাত্রার প্রতি অতিরিক্ত আসক্ত থাকে এবং প্রাপ্তবয়স্ক জীবনের দায়িত্ব ও চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে চায় না। তারা কর্মজীবন, সম্পর্ক এবং সামাজিক দায়িত্ব পালনে অনাগ্রহী হয়। এই সমস্যাটির নামকরণ করা হয়েছে "পিটার প্যান" চরিত্রের নামে, যা মূলত জেমস ব্যারি রচিত "Peter Pan" গল্প থেকে এসেছে। গল্পের পিটার প্যান ছিল এক চিরসবুজ কিশোর, যে কখনোই বড় হতে চায়নি। পিটার প্যান সিনড্রোমের কিছু সাধারণ লক্ষণ দেখা যায়, যা ব্যক্তির ব্যক্তিগত জীবন, ক্যারিয়ার এবং মানসিকতার ওপর প্রভাব ফেলে :
১. ক্যারিয়ার গঠনে ব্যর্থতা : এ ধরনের ব্যক্তিরা সাধারণত কোনো চাকরিতে স্থায়ী হতে পারে না। তারা অল্পতেই ধৈর্য হারায় এবং হঠাৎ করেই সিদ্ধান্ত নিয়ে চাকরি ছেড়ে দেয়। অন্যদের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা কম থাকে, তাই এক জায়গায় বেশিদিন কাজ করতে পারে না। ফলে অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা লেগেই থাকে।
২. অর্থনৈতিক দায়িত্বশীলতার অভাব : স্থায়ী কর্মসংস্থান না থাকার কারণে এদের প্রায়ই আর্থিক সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। অনেকেই অর্থ সঞ্চয়ের ব্যাপারে উদাসীন থাকে এবং ভবিষ্যতের জন্য বিনিয়োগ বা পরিকল্পনা করতে চায় না। তারা দায়িত্ব এড়িয়ে চলে এবং সহজে উপার্জনের পথ খোঁজে, যা তাদের আরও অস্থিতিশীলতার দিকে ঠেলে দেয়।
৩. সম্পর্ক ও পরিবার গঠনে অনাগ্রহ : দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্কের প্রতি আগ্রহ কম থাকে, কারণ সম্পর্ক মানেই দায়িত্ব ও প্রতিশ্রুতি। তারা সাধারণত বিয়ে করতে চায় না, বা করলেও সংসারের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়। অনেকেই সন্তান নেওয়ার ব্যাপারে ভয় পায়, কারণ সেটাও একধরনের দায়বদ্ধতা সৃষ্টি করে।
৪. বাস্তবতা এড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতা : এদের মধ্যে অনেকেই বাস্তবতা থেকে পালানোর জন্য নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। মাদক সেবন, অতিরিক্ত ভিডিও গেম খেলা, অলস সময় কাটানো বা অবাস্তব স্বপ্ন দেখা—এসব তাদের সাধারণ বৈশিষ্ট্য। তারা জীবনকে উপভোগ করতে চায়, কিন্তু জীবনের চ্যালেঞ্জগুলোকে গ্রহণ করতে চায় না।
৫. অন্যদের দোষারোপ করা : পিটার প্যান সিনড্রোমে আক্রান্ত ব্যক্তিরা নিজেদের ব্যর্থতার জন্য অন্যদের দায়ী করে। তারা মনে করে যে তাদের জীবনের প্রতিটি সমস্যা বাবা-মা, পরিবার, সমাজ বা ভাগ্যের কারণে হচ্ছে। আত্মসমালোচনা বা আত্মউন্নতির কোনো চেষ্টাই তারা করে না।
৬. অতীতের প্রতি আসক্তি ও ভবিষ্যৎ নিয়ে ভয় : তারা অতীত স্মৃতির মধ্যে বাঁচতে ভালোবাসে এবং ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা নিয়ে আতঙ্কিত থাকে। বাস্তবতা তাদের কাছে কঠিন মনে হয়, তাই তারা শৈশবের নিরুদ্বেগ সময়কে বেশি ভালোবাসে এবং সেটিই ফিরে পেতে চায়।
গবেষণায় দেখা গেছে, পুরুষদের মধ্যে পিটার প্যান সিনড্রোমের প্রবণতা বেশি । এর কারণ হিসেবে মনোবিজ্ঞানীরা কয়েকটি বিষয় চিহ্নিত করেছেন—
✔ অতিরিক্ত পারিবারিক নির্ভরতা – ছোটবেলায় বাবা-মায়ের বেশি যত্ন ও সুরক্ষা পেলে অনেকে স্বাবলম্বী হতে পারে না।
✔ পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা – সমাজে পুরুষদের দায়িত্ব বেশি, কিন্তু মানসিকভাবে প্রস্তুতি ছাড়া দায়িত্ব নিলে তা বোঝা হয়ে দাঁড়ায়।
✔ নারীদের মানসিক পরিপক্বতা বেশি – নারীরা সাধারণত পুরুষদের চেয়ে দ্রুত পরিণত হয়, তাই এ সমস্যা তাদের মধ্যে কম দেখা যায়।
পিটার প্যান সিনড্রোমের মূল কারণ নির্দিষ্ট নয়, তবে মনোবিজ্ঞানীরা কিছু সাধারণ কারণ চিহ্নিত করেছেন—
১. শৈশবের অতিরিক্ত শাসন বা আদর : যেসব শিশুকে বাবা-মা অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রণ করে, তারা নিজে থেকে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে শেখে না। ফলে বড় হয়ে স্বাধীনভাবে দায়িত্ব গ্রহণ করতে পারে না।
২. একাকীত্বপূর্ণ শৈশব : যেসব শিশুর শৈশবে পর্যাপ্ত বন্ধু বা সামাজিক সংযোগ ছিল না, তারা নিজেদের কল্পনার জগতে বেশি সময় কাটায়। বড় হওয়ার পরও তারা বাস্তব দুনিয়ার সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারে না।
৩. মানসিক আঘাত (Trauma) : যেসব শিশু ছোটবেলায় বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ, পারিবারিক কলহ বা যৌন হয়রানির শিকার হয়, তারা অনেক সময় বাস্তবতা এড়াতে কল্পনার জগতে আশ্রয় নেয়। ফলে তারা দায়িত্বশীল প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে উঠতে পারে না।
যদি মনে হয় আপনি বা আপনার পরিচিত কেউ পিটার প্যান সিনড্রোমে আক্রান্ত, তাহলে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে—
✔ মনোচিকিৎসকের পরামর্শ নিন – পিটার প্যান সিনড্রোম থেকে বেরিয়ে আসতে একজন থেরাপিস্টের সাহায্য নেওয়া দরকার।
✔ স্বল্প পরিসরে দায়িত্ব নেওয়া শুরু করুন – ছোটখাট কাজের দায়িত্ব নেওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন, যেমন ঘরের কাজ করা, বিল দেওয়া ইত্যাদি।
✔ ক্যারিয়ারের প্রতি সিরিয়াস হন – এক জায়গায় বেশি সময় থাকা, ধৈর্য ধরা ও দীর্ঘমেয়াদি ক্যারিয়ার পরিকল্পনা করা জরুরি।
✔ অতীতের স্মৃতি ভুলে ভবিষ্যতের দিকে তাকান – অতীতের চেয়ে বর্তমানকে মূল্য দিন এবং ভবিষ্যতের জন্য পরিকল্পনা করুন।
✔ সমাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত হোন – পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটান, দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের সঙ্গে মেলামেশা করুন।
পিটার প্যান সিনড্রোম কোনো আনুষ্ঠানিক মানসিক রোগ না হলেও, এটি ব্যক্তির জীবন ও সমাজের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। কেউ যদি দায়িত্ব এড়িয়ে চলে, বাস্তবতা থেকে পালানোর চেষ্টা করে এবং শৈশবের জীবনযাত্রায় আটকে থাকে, তবে তার জন্য সময়মতো সাহায্য নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। নিজেকে গড়ে তোলা, বাস্তবতাকে মেনে নেওয়া এবং দায়িত্ব গ্রহণের মানসিকতা তৈরি করাই এই সমস্যা থেকে মুক্তির পথ।
০২ রা এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১২:৫৩
সৈয়দ কুতুব বলেছেন: বিপ্লবী !
২| ০২ রা এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ১০:৩১
নতুন বলেছেন: বাবা মায়েরা বাচ্চাদের দায়িত্ব পালন করা শেখায় না। তারা নিজেরাই সবকিছু করে দেয়।
ফলে ছেলে মেয়েরা বড় হলেও অন্যের উপরে নির্ভরশীল হয়ে থাকে।
যখন বাবা মা চলে যায় তখন এ বাচ্চারা হঠাত করে মাথার উপরে থাকা বটগাছটি হারায় এবং সমাজের বাস্তব সমস্যাগুলির মোকাবেলা করে।
আমিও দেশের বাইরে থাকার ফলে অনেক কিছু থেকে দুরে ছিলাম, বাবা মারা যাবার পরে পরিবারের বড় আমি, সিদ্ধান্ত আমাকেই নিতে হবে। বড় একটা চাপ চলে এসেছিলো মাথার উপরে।
০২ রা এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ১০:৩৫
সৈয়দ কুতুব বলেছেন: সকল চাপ সামলিয়ে আপনি আজ সাক্সসেসফুল !
৩| ০২ রা এপ্রিল, ২০২৫ বিকাল ৫:৩৪
রিফাত হোসেন বলেছেন: লীগের পেইড খেলোয়াড়েরা অরাজনৈতিক আলোচনাকে টেনে তাদের কোর্টেরই নিয়ে যাবে!
অনটপিক: এ সমস্যায় আক্রান্ত কম-বেশি সবাই। ছেলেবেলার প্রভাব থেকে যায় কিছুটা।
০২ রা এপ্রিল, ২০২৫ বিকাল ৫:৪৬
সৈয়দ কুতুব বলেছেন: ধন্যবাদ।
৪| ০৩ রা এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১২:১৫
নকল কাক বলেছেন: আমার লেখা সাইফাই এ্যকশন গল্প "ক্যু-২" পড়ার জন্য আপনাকে আমন্ত্রন।
০৩ রা এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১২:৩৩
সৈয়দ কুতুব বলেছেন: আচ্ছা।
©somewhere in net ltd.
১|
০২ রা এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১২:৪১
কামাল১৮ বলেছেন: যারা সমাজ পরিবর্তন করতে চায় তাদের কি বলে?